637

সকাল ১০ টা।রুমের দরজা জানালা বন্ধ করে কয়েদির মত পড়ে আছি।ক্ষুদায় পেট চো চো করতেছে।মানিব্যাগে চিরুনি তল্লাসি করে মাএ ১৭ টাকা পেলাম।মাসের এখনো ৪ দিন বাকি।কি করে চলবে চিন্তায় ঘেমে যাচ্ছি।এক গ্লাস পানি খেয়ে লুঙ্গিটা একটু টাইট পরে নিলাম।যাতে ক্ষুদা টের না পাই।
হঠাৎ আমার ভাঙাচোরা নকিয়া ১২০০ মডেলের ফোন টা বেজে উঠলো।মেঘলা ফোন করছে।
..হ্যালো।(আমি)
..কি করো।
..শুয়ে আছি।তুমি ?
..আমিও।খাইছো সকালে?
..হুম ।তুমি?
..হুম।কি খাইলা বলো।
..পরাটা আর ডিম।
.. সত্যি তো?
..হুম।সত্যি।
তখন কার মত কেটে দিয়ে আবার শুয়ে আছি।দেখি ঘুমানো যায় কিনা।কিন্তু খালি পেটে কি আর ঘুম আসে।এপাশ ওপাশ করতে লাগলাম।প্রায় ২০ মিনিট পর আবার মেঘার ফোন।
.. ১০ মিনিটের মধ্যে দেখা করো।দেরি যেন না হয়।(রাগী মুডে)
হঠাৎ করে রেগে যাওয়ার কারণ বুঝলাম না।যাই হোক রেডি হয়ে চলে গেলাম।জায়গা টা বলে নি।তবুও জানি সে কোথায় যেতে বলছে।২০ মিনিটের মত লাগে হেটে যেতে।টাকা না থাকায় হাটা শুরু করলাম।হঠাৎ আবার ফোন দিল মেঘলা।
..এই তো চলে আসলাম প্রায়।তুমি বসো।
..তাড়াতাড়ি।
চৈত্রের নিরাক পড়া দুপুর।হাটছি ফুটপথ ধরে।

পৌছে দেখলাম মেঘলা বসে আছে।আমি সামনে যেতেই শার্টের কলার ধরে...
..তুই মিথ্যা বললি ক্যান?তুই তো কাল রাত থেকে না খেয়ে আছিস।তোর কাছে টাকা নাই খাওয়ার সেটা আমাকে একবারও বলার প্রয়োজন মনে করলি না?আমি কি তোর পর?(কেদে কেদে বলল মেঘলা)
..আরে কে বললো খাই নি ?খাইছি তো।(মিথ্যা বললাম)
..একদম চুপ।সোহেল আমাকে সব বলে দিছে।
হায় হায় শালা হারামি টা বলে দিল সব।এখন কি করি?
মেঘলা কেদেই চলেছে।চোখের পানিতে কাজল লেপ্টে গেছে।
হঠাৎ আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
..এই পাগল,আমাকে বললে কি হত যে টাকা নেই?আমি তোমার পর?
..না রে পাগলী।পর না।অনেক আপন তো তুমি।
..তাহলে লুকালে কেন?
..এমনি।
..আর কখনো লুকাবা না।কথা দাও।
..হুম দিলাম।
..এখন খেতে চলো লক্ষী ছেলের মত।
আর কিছু বলতে পারলাম না।অমত করলে আরো কাদবে।খেয়াল করলাম মেঘলার মত আমার চোখে জল জমে গেছে।এটা অকৃত্রিমতার জল।ভালবাসার জল।
.
.
খাওয়া শেষ করলাম।রেস্টুরেন্টের বাইরে এসে মেঘলা আমার দিকে আমার আগোছালো চুল গুলো ঠিক করে দিল।তারপর পার্স থেকে ২ টা ১০০০ টাকার নোট বের করে পকেটে ঢুকিয়ে দিল।কিছু বলতে যাব হঠাৎ তখনি ও মুখ চেপে ধরলো।ওর চোখ বলে দিচ্ছে এগুলো তোকে নিতেই হবে।আর কিছু বলতে পারলাম না।চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে এলো।

লেখক-নীল অরণ্যের মেঘ