গল্প- "পুতুল কন্যা"
(Polok Hossain)
.
Part -12
.
-মা..আমি গেলাম।তুমি পিউলি,
তোড়া আর বাবার প্রতি খেয়াল
রাইখো।আর সময় মতো একদিন আমারে
দেখতে যাইয়ো! যাইবা তো মা...!
মায়ের হাত দুটো ধরে কথাগুলো বলতে
বলতেই ভেতরটা কষ্টে ফেটে পরছিল
উপমার।চোখে বিন্দু বিন্দু পানি জমে
আছে।আজ ঠিক ওইদিনটির কথা মনে
পরে যাচ্ছে যেইদিনটায় উপমা বিয়ের
বিদায় দিয়েছিল সবাইকে।কিন্তু
বিয়ের সময়ের বিদায়টা ছিল আরও
কষ্টের।বাচ্চা মেয়েটা ঐদিন মায়ের
আচল ধরে কেঁদেছিল সারাক্ষণ,না
যাওয়ার জেদ ধরে। কিন্তু আজ ওই
মেয়েটিই বুঝে গিয়েছে ওকে আপন
জনের বন্ধন থেকে ছিন্ন হয়ে
শ্বশুরবাড়ির অপরিচিত সবার কাছে
ফিরে যেতে হবে।তা আজ হোক আর
কাল হোক,যেতে তাকে হবেই।
চোখ থেকে অনিচ্ছায় বেড়িয়ে আসা
পানিগুলোকে ঝেড়ে ফেলে মেয়ের
হাত ধরে মা বললেন-
-আসমু একদিন।জামাই বাবুরে খেয়াল
রাখিস।সবার কথা মতো চলিস।দেইখা
রাখবি সবাইরে।কান্দিস না মা।
যা...মা...স্বমীর বাড়ি যা।
'বিদায়' শব্দটাই দু:খের।বিদায় নামক
দু:খের সীমা পেরিয়ে প্রিয়জনের হাত
ধরে ফিরে যাবার সময় হয়েছে।প্রবন্ধ
গুরুজনদের পা ছুয়ে দোয়া চেয়ে
নিলো।এই বালকের প্রতিও কারো
কোনো অভিযোগ নেই।এতো দিনে
সবার কম বেশী ধারনা হয়েছে ওর প্রতি
,রক্তে রাগ জমা নেই তার।ঠাণ্ডা
মেজাজের হাসিমাখা সম্মানসূচক
চরিত্রে কার-ই বা প্রশ্ন করার ইচ্ছে
জাগে!!!
একটি গাড়ি ভাড়া করা হয়েছে।
সকালের সূর্য লাল হয়ে জেগে উঠতেই
গ্রামকে বিদায় দিয়ে নিলো ওরা।
উপমা আর প্রবন্ধ গাড়িতে উঠে বসলো
গাড়ি চলছে গ্রামের আকাবাকা
রাস্তা পেরিয়ে।উপমা কিছুক্ষণ পর পর
ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে।ওর অসহায়
চোখ দুটো কান্নার লোনা পানিগুলো
গড়িয়ে পরছে।এই মুহূর্তে কি কথা বললে,
কোন গান শুনালে, কোন কবিতা পাঠ
করলেই বা মেয়েটার কান্না থেমে
যাবে!নিজের মনের ভাষাকে কেন
যে লুকিয়ে রাখে!তবে মেয়েটার
হয়তো ওর সঙ্গ প্রয়োজন। কাল রাতে যখন
মেয়েটা এইভাবেই কেঁদেছিল তখন
প্রবন্ধ নিজের বাহুতে ওকে জড়িয়ে
নিতেই মেয়েটি তার অসহায় আত্মার
আশ্রয় পেয়ে প্রবন্ধর বুকে পরে রয়েছিল
আর মুখ গুঁজে কেঁদেছিল।তখন ওকে
সান্তনা দেওয়ার মতো প্রবন্ধর কোনো
শব্দ না থাকলেও নীরব অনুভূতিটুকু তখন
সে উপমার মনে ঢেলে দিয়েছিল।
প্রবন্ধর বুকে আশ্রয় পেয়ে উপমাও তখন
চোখের জল ভাসিয়ে কষ্ট কমতির
সাধনা করতে পেরেছিল প্রবন্ধকে
কাছে পেয়ে।
এখনো ঠিক ওইরকমভাবেই উপমা মুখ
চেপে কেঁদে যাচ্ছে।ওর কান্না
এতোটাই তীক্ষ্ণ যে ওর কান্নাগুলো
প্রবন্ধর মনে সূক্ষ শুলের ন্যায় বিধে যায়।
যেন ওর হৃদয়ের কান্নাটা প্রবন্ধ হৃদয় এসে
কড়া নেড়ে বলছে "তোমার বাহুতে
আজও কি আশ্রয় হবে আমার!"!
আর প্রবন্ধর হৃদয় আকুল হয়ে সেই জবাব
দিচ্ছে "হ্যা,পাগলী।এসো আমার
কাছে,মন জুড়িয়ে নিয়ে যাও তুমি।এই
মন তো তোমার-ই।কাছে আসতেও কি
অনুমিত চেয়ে নিতে হবে!"
মনের কথোপকথনগুলো প্রবন্ধ শুনে
যাচ্ছিল।মনের কর্ন দিয়ে।নিজের হাত
দিয়ে উপমার মুখ খানা তুলে নিয়ে
বলল-
-প্লিজ উপমা।কেদো না।তুমি একা নও।
তোমার পাশে আমিও আছি।তোমার
বন্ধু হয়ে।তোমাকে কাঁদতে দেখে
মোটেও ভালো লাগছে না।কান্না
থামাও বলছি।
উপমা অশ্রুশিক্ত চোখে তাকিয়ে ঘন
পাপড়িযুক্ত চোখের পাতাগুলোকে
নাড়িয়ে কষ্টের ভাষা বোঝায়।
প্রবন্ধ বলল-
-আমার কাধে মাথা রেখে কিছুক্ষণ
শুয়ে থাকো উপমা।কান্না করলে
মাথা ধরবে।
উপমাও তাই করলো।চোখের
কান্নাগুলোকে বাধা দিয়ে
অচেতনতা ঠেলে প্রবন্ধর কাধে মাথা
রাখলো।প্রবন্ধ ওর হাতে উপমাকে ধরে
নিয়ে বসলো।উপমা স্বস্তির নিশ্বাস
ফেলে চোখ বুঝে রইলো।
বাতাসে ওর ঘন চুলগুলো দুলে যাচ্ছে।
সুগন্ধিযুক্ত সেই চুলের ঘ্রানে কতো
স্নিগ্ধতা জড়ানো তা বলা যায় না।
অনুভব করে নিতে হয়।
মাঝ পথে গাড়ি আর থামবে না।আসার
সময় যেই নদীটা বেয়ে আসতে হয়েছিল
এখন আর তা বেয়ে যেতে হবে না।
কারন এই ভাড়া করা গাড়ি পুরো
এলাকা ঘুড়ে ঘন্টাখানের পাড় করে
সরাসরি বাড়ির গেটে গিয়ে থামবে।
মাঝ রাস্তায় হঠাৎ জ্যাম পরলো।
গাড়ির বরাবর গাড়ি।সামনে আরও
অনেকগুলো ট্রাক আটকে আছে।এই
জ্যামের গিট কেটে কখন বাড়ি
পৌছবে তা বলা মুশকিল।
উপমা এতোক্ষনে প্রবন্ধর কাধে মাথা
রেখে ঘুমিয়ে পরেছে।
এমন সময় এক বৃদ্ধা লাঠিতে ভর করতে
করতে গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো।
প্রবন্ধকে বলল-
-দুইটা ট্যাকা দেন না সার..
প্রবন্ধ পকেটে হাত দিয়ে দেখলো সব বড়
টাকার নোট।খুচরা ভাঙতি নেই এই
বৃদ্ধাকে সাহায্য করার মতো।
-মাফ করো দাদী।
বৃদ্ধা ক্লান্তির মুখ তুলে বলল-
-সারাদিনে কিচ্ছু খাই নাই।একটা
ট্যাকা দেন।
-দিচ্ছি দাদী।একটু দাঁড়াও।
প্রবন্ধর মায়া হলো। পকেট থেকে একশত
টাকার একটি নোট বের করে বৃদ্ধাকে
দেওয়া মাত্রই তার চোখে মুখে
আনন্দের বন্যা বইলো।পাশে উপমাকে
প্রবন্ধর কাধে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখে
তিনি খুশি মনে প্রবন্ধ কে বললেন-
-আল্লাহ আপনের ভালো করবো স্যার।
ওইটা কি আপনের বউ?
-জী।
-দোয়া করি, একটা ফুটফুটে বাচ্চা যেন
আল্লাহ আপনাগো দেয়।
প্রবন্ধ স্নেহময় চোখে বৃদ্ধার দিকে
তাকিয়ে বলল-
-যদি আমার দাদী আজ বেঁচে থাকতেন।
তোমাকে দেখে আমার দাদীর মতোই
লাগছে।
প্রবন্ধ পকেট থেকে আরও একশত টাকার
নোট বের করে বৃদ্ধার হাতে দিয়ে
বলল-
-এইটা রাখো।ভালো ফলফ্রুট কিনে
নিও।
বৃদ্ধা এইবার আরও খুশি হলো।খুশি মনে
ওদেরকে আরও দোয়া ঢেলে দিয়ে
গেল সে।
এখন সবাই হয়তো এই দোয়াটাই দিবে।
যে কেউ দেখলে ঠিক এই দোয়াটা
দিয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক।কিন্তু
মেয়েটার বয়স যে এখনও উপযুক্ত নয়।একটা
পরীকে উড়তে না দিয়ে ডানা কেটে
বসিয়ে রাখা অন্যায় হবে।ওর এখন
ডানা মেলে ওড়ার সময়।কিছুটা সময়
গেলে মেয়েটি নিজে নিজেই
সংসারের অভ্যন্তরীণ সব কিছুই বুঝে
উঠতে পারবে।এখন ওকে খাঁচার পাখি
না করে যত্নে গড়া ভালোবাসার পুতুল
করে রাখাই হবে আদর্শ স্বামীর করণীয়।
প্রবন্ধ ওর সব ভাবনাগুলোতে উপমাকে
জড়িয়ে নিলো।মনের কোণে এক নীরব
ভালোবাসা লুকিয়ে আছে ওর।
.
রাস্তায় ভিড় করা গাড়িগুলো এইবার
নিজ নিজ পথে চলতে শুরু করেছে।পথ
পেরিয়ে গাড়ি অনেকটা দূর চলে
এসেছে।উপমা একটু একটু করে চোখ খুলল।
কান্না করতে করতে প্রবন্ধর কাঁধে
মাথা রেখে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছিল
তা ওর নিজেরও জানা নেই।প্রবন্ধ
এখনো ওকে জড়িয়ে ধরে আছে।
এতোক্ষন যত্ন করে নিজের কাধে
উপমার মাথাটা বহন করে রেখেছিল
সে।আর তা খেয়াল হতেই উপমা উঠে
গিয়ে ধীরে ধীরে বলতে লাগলো -
-আপনের কোনো অসুবিধা হয় নাই তো!
-কিসের অসুবিধার কথা বলছো উপমা..
-মানে..
উপমার কথা শেষ না হতেই প্রবন্ধ
পানির বোতল উপমাকে দিয়ে বলল-
-পানি খেয়ে নেও।ফ্রেশ লাগবে
তোমার।
উপমা তা-ই করলো।
গাড়ি যেতে যেতে বাড়ির পথে এসে
গিয়েছে।দুইজনও ঠিক আগের মতো একজন
আরেকজনের গা ঘেষে নীরব হয়ে বসে
রয়েছে।
গাড়ি গিয়ে প্রবন্ধদের গেইটের
সামনে এসে পৌছুলো।
.
দরজায় কড়া নাড়তেই কাজের
মেয়েটা দরজা খুলল।দুলি চিৎকার করে
বলে উঠলো "আম্মু..মামা এসেছে..
মামা এসেছে..।" দুলির চিৎকার শুনে
ছন্দা এলো সাথে মাও ছুটে এলো।
উপমা বড় ঘোমটা টা টেনে নিয়ে নব
বধুর মতো মাথা ঝুঁকিয়ে আম্মার পা
ছুঁয়ে সালাম করে নিলো।
উপমাকে দেখে সবারই মনে তুষ্টি
হয়েছে।যেন ঘরের লক্ষী ঘরে ফিরে
এসেছে।
ছন্দা হাসিমুখে উপমাকে বলল-
-কেমন আছো উপমা!
উপমা মৃদু স্বরে বলল-
-জী,ভালো।
-আসতে কোনো অসুবিধে হয় নি তো!
উপমা মাথা নাড়ালো।কোনো
অসুবিধে হয় নি।
ছন্দা বলল-
-লং জার্নি করেছ।এখন রেস্ট নেও
গিয়ে।
ছন্দা দুলিকে নিয়ে নিজের রুমে চলে
গেল।
প্রবন্ধ আর উপমা ওদের রুমে গেল।এতো
দিন রুমটা খালি পরেছিল।রুমে ঢুকতেই
বন্ধ রুমের উগ্র গন্ধ বের হচ্ছে।মনে হচ্ছে
এতোদিনের ধুলো জমে ঘরে বিছিয়ে
আছে। উপমা বন্ধ থাকা জানালার
কপাটগুলো খুলে দিলো।উপমা খেয়াল
করলো প্রবন্ধকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে।হাত
মুখ না ধুয়েই ক্লান্ত শরীর নিয়ে প্রবন্ধ
বিছানায় শুয়ে পরেছে।উপমা প্রবন্ধকে
আর কিছু বলার প্রয়োজন বোধ করলো না।
প্রবন্ধকে দেখলে কেন যেন মনে একটা
প্রশান্তি চলে আসে ওর।আর প্রবন্ধ যখন
আগ্রহ নিয়ে উপমার সাথে কথা বলে
যায় তখন সেই মুহূর্তটা খুব মধুর হয়ে আটকে
থাকে উপমার ভেতর।ছেলেটা শুয়ে
আছে ক্লান্তির নিশ্বাস নিয়ে।এক
কাপ চায়ের ব্যবস্থা করলে হয়তো এই
ক্লান্তি কাটবে।উপমা রান্নাঘরে
ছুটে গেল চা বানিয়ে আনতে।
রান্নাঘরে কাজের মেয়েটা থাকা
সত্তেও নিজে নিজেই চা বানাতে
লাগলো।তখনকার কথা মনে পরছে ওর।
প্রবন্ধ যখন উপমার হাতে বানানো চা
খেতে চেয়েছিল।ঠিক ওইরকমভাবেই
উপমা দুই কাপ চা বানিয়ে নিলো।
ওইদিনের মতোই দুইজনে মিলে চা
খাবে আর গল্প জুড়ে দিবে।ওইদিনের
উত্তেজনা থেকেও আজ যেন ওর
উত্তেজনা আরো প্রখর। কেন যে এতো
ভালো লাগছে!! উপমা যত্ন করে দুই কাপ
চা বানিয়ে নিলো। চায়ের রঙটাও
ঠিক ওইদিনের মতোই হয়েছে।উপমা ট্রে
তে করে চা নিয়ে গেল রুমে।খুব খুশি
খুশি লাগছে ওর।ট্রে নিয়ে সামনে
যেতেই দেখলো প্রবন্ধ ঘুমোচ্ছে।
কিন্তু উপমা ডাকলো না।কিছুক্ষণ
তাকিয়ে রইলো চেনা এই মুখটির
দিকে।তাকিয়ে থাকতে খুব ভালো
লাগছে।এতো দিন ভয়ে যার দিকে
চোখ তুলে তাকানো হয়ে উঠে নি।আজ
সেই ভয় মনের মাঝে মিশে একাকার
হয়ে আছে।সত্যি-ই এই অসহায়ের
কপালে এক মহাপুরুষের আবির্ভাব
হয়েছে।জীবনে এই পুরুষটিই যেন সেরা।
গোপন এক প্রেম এই মনে লুকিয়ে আছে
উপমার।এই পুরুষটিকে আরও জানতে ইচ্ছে
হয় ওর..আরও.....
চলবে..
#পলক_হোসেন
āĻāϞ্āĻĒ āϏংāĻ্āϰāĻš āĻāϰা āĻāĻŽাāϰ āύেāĻļা। āϰোāĻŽাāύ্āĻিāĻ, āĻৌāϤিāĻ, āϰāĻŽ্āϝ, āĻৌāϤুāĻ āϏāĻš āĻšাāĻাāϰো āĻāϞ্āĻĒ āĻāĻে āĻāĻŽাāϰ āϏংāĻ্āϰāĻšে।
āĻŦুāϧāĻŦাāϰ, ⧝ āĻāĻāϏ্āĻ, ⧍ā§Ļā§§ā§
682{12}
āĻāϰ āĻĻ্āĻŦাāϰা āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰা
Rahathossain1010100@gmail.com
āĻāĻ āϏāĻŽā§ে
ā§:ā§Ēā§Ŧ AM

āĻāϤে āϏāĻĻāϏ্āϝāϤা:
āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝāĻুāϞি āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ (Atom)
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ