#বাবার_বিয়ে
Jedny Hasan
-- স্যার ভিতরে আসবো?
- আরে বাবা কি বলো? অনুমতি নেবার কি আছে? একই রুমে থাকি এতদিন কিছু না আর আজ অনুমতি নিচ্ছো? আসো ভিতরে আসো?
-- ওইখানেই তো সমস্যা রে। ফ্ল্যাটটা তোর নামে কিনা। ফ্ল্যাটের সাইজ ও ১৬৫০ স্ক্যয়ার ফিট। ৫ টা কামরা। যার মাঝে ৪ টাই খালি পরে আছে। সব কামরা রেখে তুই আমার রুমে নিজের সংসার পেতেছিস।
- আমার ভুতের ভয় আছে রাতে।
-- পেত্নী ভয় নেই?
- পেত্নী বলতে কিছু আছে নাকি দুনিয়াতে?
-- আছে।
- আরে নাহ। নেই।
-- আছে। সেই পেত্নীর নাম রাইসা।
- ধুর কি বলো না বলো। যাও ঘুমাও।
-- ওইখানেই তো সমস্যা রে। তোর সামনে না পারি ফোনে কথা বলতে না পারি ঘুমাতে। সারারাত এইপাশ ওইপাশ করতে হয়।
- বাবা একটা গল্প বলি। তুমি খালি চোখ বন্ধ করে কল্পনা করো।
-- শুরু কর।
- মনে করো আগামীকাল আমার বিয়ে...
-- এই থাম!!! আগামীকাল কেন হবে? বল আগামী ৫ বছর পরে আমার বিয়ে।
- বাবা একটু সিরিয়াস হও প্লিজ।
-- কল্পনায় সিরিয়াস হতে পারবো না। ঘুমা। আমার ঘুম পাচ্ছে।
- আমি জানি বাবা তোমার ঘুম পায়নি। তুমি মিথ্যা বলে এড়িয়ে যেতে চাচ্ছো। যাক সেসব কথা। বাবা একটা কথা শুনে রাখো। আমি আর রাইসা মিলে সিদ্বান্ত নিয়েছি তোমাকে বিয়ে করাবো। স্ত্রী ছাড়া তোমার চলবে তবে মা ছাড়া আমাদের চলবে না।
-- আলহামদুলিল্লাহ কবুল!!! আমার কিন্তু লজ্জা করছে গালিব বলে দিলাম। এইভাবে কেউ বলে?? ছিঃ নির্লজ্জ ছেলে কোথাকার।
- বাবা ফাজলামি বন্ধ করবে প্লিজ? সবসময় ফানি মুডে থাকার দরকার নেই। প্রয়োজনের সময় সিরিয়াস কোনদিনও হওনি। মায়ের একটা অভ্যাস কি ছিলো তাতো তুমি জানতে?
-- হুম জানতাম। ডায়েরি লিখা।
- হুম। সেই ডায়েরি কার কাছে এখন সেটা জানো?
-- তোর কাছে।
- তুমি কিভাবে জানলে? তোমার তো জানার কথা না।
মুচকি হেসে দিলেন আকবর সাহেব। বাবারা অনেক কিছুই জানে। অনেক কিছুই বুঝে তবে সেই জানা বা বুঝা কখনো প্রকাশ করতে হয়না। পৃথিবীতে বাবাদের মত ভাল অভিনয় আর কেউ করতে পারবে না। ভাল অভিনেতা না হলে বাবা হওয়া যায়না।
- তোমার হাসি জানতে চাইনি। উত্তর চেয়েছি।
-- গালিব! কোন সন্তান যখন দোকানে গিয়ে কোন খেলনা দেখে হাউ মাউ করে কান্না করে সেটিকে হাসিলের জন্য তখন বাবাদের মনের ভিতরে তিন গুন বেশি হাউকাউ করে কান্না হয় সেটিকে বাচ্চার হাতে তুলে দেবার জন্য। কিন্তু তবুও দাতে দাত চেপে বাচ্চাদের ধমক দিতে হয়। আর এতেও না হলে হাত তুলে থাপ্পর দেয়। আসলে সেই ধমক বা থাপ্পর টা বাবারা তাদের নিজেদের কলিজায় দেয়। বাচ্চাটা না যতটা কষ্ট পায় তার থেকে ৩ গুন বেশি কষ্ট নিয়ে বাবারা বাসায় ফিরে। বাবারা বাচ্চাদের জন্ম দেয় আর হয়ে যায় পিতা। আর বাচ্চারা জন্ম নিয়ে হয়ে যায় পিতাদের অংশ। সেই অংশের প্রতিটা অনুভুতি,সুখ,দুঃখ,হাসি কান্না সব বাবাদের মাঝেও কেমন করে জানি চলে আসে। এমনকি বাচ্চাদের লুকানো কোন কথাও।
বারান্দায় এসে সিগারেটে লম্বা একটা টান দিলো গালিব। মাঝে মাঝে বাবাকে চিনতে ভিষন কষ্ট হয় গালিবের। সারাটাজীবন টেলি সামাদের মত জোকারি করে গেল। তাও কিভাবে যেন সংসারটাকে এক মুহুর্তের জন্যও এদিক ওদিক হতে দেয়নি। ৪ বছর বয়সে মায়ের মৃত্যুর পরে মৃত্যুর দিন হতে আজ পর্যন্ত বাবার চোখে জল বা ভরাট কন্ঠে মায়ের স্মৃতিচারন করতে দেখা যায়নি। কেউ মারা গেলে তার ছবি টাঙ্গিয়ে রাখে ঘরের দেয়ালে। কিন্তু বাবা সেটাও করেনি। তবে প্রতি মুহূর্তে যে মায়ের স্মৃতি আর মায়ের শুন্যতা বাবাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে তা জানার জন্য মনের অভ্যন্তরে যেতে হয়না।
-- কিরে আজ সিগারেট একাই খেয়ে শেষ করছিস যে। পুরোটা পেটে সইবে তো?
হঠাত বাবার কথায় সম্ভিত ফিরে পেল গালিব। বাবাদের চলাফেরা হয় বিড়ালের মত। কোন সাড়া শব্দ থাকে না। তবে সেই নিস্তব্ধতার মাঝেই তার উপস্থিতি জানান দেয় ভালো ভাবেই।
-- কিরে আর কত টানবি? বাকিটুকু আমাকে দে।
- সারাজীবন আমার সিগারেটে তুমি ভাগ বসাচ্ছো। কারন কি বাবা? পুরো একটা সিগারেট কোনদিন ও আমি শেষ করতে পারলাম না। যখনি সিগারেট ধরাই তখনি কোথা থেকে জানি তুমি হাজির হও।
-- এই বাসার মালিক কে?
- তুমি।
-- এই বাসায় কার হুকুম চলে?
- তোমার।
-- তোকে চালায় কে?
- তুমি।
-- যদি এই বাসাটাকে ধরা হয় একটা রাষ্ট্র তাহলে এই রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী কে?
- তুমি।
-- সবই যখন আমার তখন তুই কি?
- স্বাধীন নাগরিক।
-- রাষ্ট্রে বসবাস করতে হলে কিছু দায়িত্ব জনগনের থাকে কি না বল?
- তা থাকে। কিন্তু বুঝলাম না এর সাথে সিগারেটের ভাগের সম্পর্ক কি?
-- তুই স্বাধীনভাবে বসবাস করবি আর সরকারকে কর বা ভ্যাট দিবি না তা কি করে হয়?
- বাবা আমাকে মাফ করো। এত কথা আমি পারবো না তোমার সাথে।
-- আরে রাগিস কেন? প্রতিটা বাবারই ছেলেদের উপার্জিত টাকার উপর সিগারেট গ্রহনের অধিকার বিদ্যমান। ইহা সমগ্র পিতাসমাজ পুত্রের নিকট চাহিবা মাত্র পুত্রসমাজ দিতে বাধ্য থাকিবে। অন্যথায় পিতৃসমাজ রাগিয়া গিয়া যে কোন পদক্ষেপ নিলে তা অন্যায়স্বরুপ গৃহীত হইবে না।
- আর পুত্রসমাজ যদি উলটা কর্ম করে? মানে টাকা পয়সা না দেয় তাহলে?
-- তাহলে পিতৃসমাজ চাইলে পুত্রের নামে মামলা করিয়া দিতে পারিবে। আর এতে সর্বোচ্চ শাস্তি ১৪ বছরের সশ্রম কারাদন্ড অন্যথায় পুত্রকে আজীবন কুমার করে রাখা। মানে বিয়ে না দেয়া।
- এই বিধান কে লিখেছে?
-- জনাব হাজি মোহাম্মদ আকবর আলি বিন কাদেরি বিন...
- হইছে হইছে থামো বাবা। উলটা পালটা উপাধি লাগাতে হবে না।
মুচকি হেসে উঠলো আকবর আলি সাহেব। ছেলেটা হয়েছে একদম মায়ের মত। গোয়ারগোবিন্দ টাইপের। যতই মানা করা হোক সিগারেট না খাবার জন্য ততই সে বেশি বেশি করে খাবে। তাইতো জলির দেয়া শপথ উপেক্ষা করে ছেলের কাছ থেকে সিগারেট নিয়ে খাওয়া রীতিমত অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। নাহলে ছেলেটা যে অকালে রোগ বাধিয়ে বসবে।
এখন শুনো। তোমার পছন্দের কেউ আছে নাকি আমাদের মতামতেই তোমার মতামত?
-- যাহ কি বলিস না বলিস। আমার লজ্জা করে না বুঝি?
- রুমাল লাগবে? নাকি ফতুয়া দিয়েই কাজ হবে?
-- তোয়ালে নিয়ে আয়। এইসব ছোট খাটো কিছু দিয়ে হবে না।
- বাবা ফাজলামি রাখো। আগে বলো পছন্দের কেউ আছে?
-- আছে।
- মানে কি? এই বয়সে তোমার পছন্দের কেউ আছে বলতে কি বুঝাতে চাও?
-- আমার যখন বিয়ে হয় তখন আমার বয়স ২১ আর তোর মায়ের ১৭। এখন আমার বয়স ৪৭ আর তোর ২৫। হিসাবমত আমি আরো ৩ টা বিয়ে করতে পারব।
- বাবা মাথা কি খারাপ হয়ে গেল তোমার? কি সব বলছো?
-- কেন আমাকে দেখে কি দূর্বল মনে হয়???
- বাবা চুপ থাকো প্লিজ।
-- একটু আগে আমিও বলেছিলাম ট্র্যাকে থাক। তখন বারবার ট্র্যাক ছেড়ে এদিক ওদিক হয়েছিলি। মনে আছে?
- প্রতিশোধ নিচ্ছো?
-- মনে কর তাই।
- বাবা চলো ঘুমাতে যাই। তোমার আজ মাথার অবস্থা ভালো ঠেকতেছে না।
-- তুই যা। আমি একটু বারান্দায় থাকি। একটু হাওয়া বাতাস খেয়ে আসি।
খুব সন্তর্পনে ঘরের দিকে রওনা দিলো গালিব। গত ২১ টা বছর প্রতিদিন রাতে বারান্দায় দাড়িয়ে হাওয়া বাতাস খাওয়া একপ্রকার রুটিনের মত হয়ে গিয়েছে। আসলে হাওয়া বাতাসে যে জলি বেগমের প্রতিধ্বনি শুনতে পাওয়া যায়। আসলেই বাবাকে বিয়ে দিতে ঝামেলা পোহাতেই হবে। অবশ্য রাইসা থাকলে এত সমস্যা হবে না। হবার কথাও না।
চলবে...
দ্বিতীয় পর্ব
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ