প্রিয়তম,
লাল শাড়িতে নিজেকে আবৃত করে তোমার সংসারে যখন পা রেখেছিলাম, তখন আমি সবে ১৮বছরের এক তরুণী। রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে হওয়ায় বিয়ের আগে কারো সাথে প্রেমময় সম্পর্কে জড়ানোরও সুযোগ হয়নি। তাই সবটুকু ভালবাসা তোমার জন্যই তোলা ছিল-অবশ্য পরবর্তীতে সেগুলো গ্রহন করার আগ্রহ তুমি দেখাওনি।
ছোটবেলায় পুতুলের সংসার সাজিয়ে দিতে দিতে কখন যে নিজের একটা সংসারের স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলাম তা আমার জানা নেই।
সংসার একদিন আমারও হয়েছিল, তবে সেটা আমার স্বপ্নের সংসারটা নয়।
.
অপ্সরা না হলেও, দেখতে নিতান্ত সাদামাটাও ছিলামনা। কিন্তু তুমি কখনো আমার দিকে ভালো করে তাকিয়ে আমার সৌন্দর্য দেখার অবকাশটুকুও পাওনি। নাকি ইচ্ছাকৃতই এড়িয়ে যেতে সে তুমিই জানো।
আচ্ছা, তোমার কি মনে আছে আমাদের বাসর রাতটার কথা? হয়ত তোমার কাছে সে রাতটাও অন্য রাতগুলোর মতোই সাধারন ছিল, কিন্তু আমার স্মৃতিপটে সে দিনটা আলাদা করে আঁকা রয়েছে।
ভেবেছিলাম তুমি এসে প্রথমে ঘোমটা তুলে দেখবে আমায়। এরপর তোমাকে সালাম করে তোমার দোয়া নিয়ে শুরু করব নতুন জীবন।
কিন্তু না, সেসব কিছুই ঘটেনি। তুমি এসে বলেছিলে, "বাসর রাতের চিরাচরিত নিয়মগুলো বাদ। আমার কিছু বলার আছে তোমাকে.. "
যদিও আমি তখন অধীর আগ্রহে তোমার সুমিষ্ট কণ্ঠস্বর শুনতেই বিভোর ছিলাম, তাও একটু একটু মনে আছে তোমার বলা কথাগুলো। তুমি বলেছিলে, তোমার কাছে ভালবাসা মানে শুধুই দায়িত্বপালন। আরো বলেছিলে তুমি আমাকে তেমন একটা সময় দিতে পারবেনা।
.
এ কথাগুলোর ভিত্তিতে তোমার দূরে দূরে থাকাটাকে আমি ব্যস্ততা বলে ভেবেছিলাম। কিন্তু পরে কোনো একদিন জানতে পারলাম তুমি ইচ্ছে করেই নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে, কারণ তুমি তোমার অমূল্য সময়গুলো অন্য কাউকে দিতে চেয়েছিলে।
.
শুধুমাত্র চোখে কাজল পরার মাধ্যমেই নাকি একটা সাধারন মেয়েকেও মায়াবতী মনে হয় -এ কথার সত্যতা যাচাই করা আমার পক্ষে কখনোই সম্ভব হয়নি। কারন তুমি কখনো আমার কাজল পরা চোখের দিকে তাকিয়ে দেখোইনি, মন্তব্য করা তো বহু দূরের ব্যাপার!
রাতে আমি যখন চোখে মায়া করে কাজল পরে তোমার মনোযোগ পাওয়ার চেষ্টা করতাম, তুমি তখন মগ্ন থাকতে তোমার প্রিয়াকে নিয়ে সাহিত্য রচনায়। আমার দিকে তাকাবার মত সময় কোথায় তোমার!
প্রিয়,
নিতান্ত অবহেলায়ও কি আমাকে নিয়ে দু লাইন লিখতে পারতেনা? প্রশ্ন রেখে গেলাম তোমার কাছে...
না হয় উপন্যাসের পার্শ্বচরিত্র-ই বানাতে আমাকে, যা পাঠক সমাজের কাছে তুচ্ছ বলেই গন্য হয়। তোমার লেখা কবিতাগুলোর একটা লাইন কি আমাকে নিয়ে হতে পারতনা?
.
দামী শাড়ি, নতুন ডিজাইনের অলংকার, অর্থের প্রাচুর্যতা এসব তো আমার চাওয়া ছিলোনা প্রিয়- যেগুলো তুমি আমাকে না চাইতেই দিতে। আমি তো অন্যকিছু পাওয়ার অপেক্ষায় থাকতাম।
খুব সামান্য কিছুই চাওয়া ছিল আমার।
তোমার হাতের মুঠোয় হাত রেখে ভিজতে চেয়েছিলাম এক বৃষ্টিমুখর বিকেলে। কিন্তু তাতে তোমার দিক থেকে একটুও সাড়া মেলেনি। বৃষ্টিতে ভিজলে আমার শরীর খারাপ হয়ে যায় -তোমার সাড়া না দেওয়ার কারন এটা ছিলোনা। তোমার কাঙ্খিত নারীর জায়গায় আমি ছিলাম বলেই সেদিন প্রচন্ড বিরক্তিতে তুমি আমাকে প্রত্যাখান করেছিলে।
.
একবেলা নিজের হাতে আমাকে মুখে তুলে খাইয়ে দেওয়াটা কি খুব অসম্ভব কাজ ছিল? যদি অসম্ভব না-ই হয় তবে কেন আমাকে বঞ্চিত করেছিলে? তোমার অতীতে কি ঘটেছিল তার দায় তো আমার নয়।
.
কত রাত নির্ঘুম কাটিয়েছি তোমার আদরমাখা হাতের স্পর্শের অভাবে সে কি তোমার জানা আছে আদৌ? খুব কি বিরক্তি আসত আমার চুলে বিলি কেটে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়ার কথা ভাবতে?
জানি আমার মত তুমিও নির্ঘুম রাত কাটাতে। তবে তোমার আর আমার মধ্যে পার্থক্য কি ছিল জানো? তুমি রাত জাগতে তোমার প্রেমিকাকে না পাওয়ার কষ্টে, আর আমি জেগে থাকতাম পাশাপাশি শুয়ে থেকেও আমার প্রতি তোমার নির্লিপ্ততাকে অতিক্রম না করতে পারার ব্যর্থতায়।
.
তোমার তো ফ্যান্টাসী ছিল প্রেয়সীকে মুখে তুলে খাইয়ে দিবে, বুকে নিয়ে চুলে বিলি কেটে ঘুম পাড়াবে। তাহলে সেসব করোনি কেন? তবে কি তোমার ব্যক্তিগত ডায়রিতে মিথ্যে করে এসব লিখেছিলে? নাকি আমি তোমার কাঙ্খিত মায়াবতী না হওয়ায় এমন অবহেলা?
.
আমাদের একান্ত মুহূর্তগুলো খুব আকাঙ্খিত ছিল আমার কাছে। মুহূর্তগুলো খুব অল্পই আসত হয়ত এটা ছিল কারন। মাঝে মাঝেই আমার ইচ্ছা হত ওই মুহূর্তগুলোয় তোমাকে দেখতে। কিন্তু তুমি কখনো রাজি হওনি তখন আলো জ্বালিয়ে রাখতে। আমি ভাবতাম এটা তোমার সংকোচের জন্য। কিন্তু একদিন যখন তুমি আমাদের একান্ত মুহূর্তে তোমার প্রাক্তন প্রেমিকার নাম ধরে ডেকে আমাকে আদর করছিলে, সেদিন আমি বুঝে গিয়েছিলাম ঘর অন্ধকার রাখার কারন।
প্রচন্ড অভিমান আর অপমানে একটু একটু করে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলাম ধীরে ধীরে। এরপর তুমি কাছে আসলেও আমার শরীর জাগতোনা আর। কিন্তু সেসব বুঝেও তুমি না বুঝার ভান করেছিলে।
কি এমন ক্ষতি হত আমাকে 'আমি' ভেবেই কাছে আসলে? কিন্তু তুমি তো আমাকে নিজের প্রাক্তন প্রেমিকা ভেবে কাছে আসতে নিতান্ত শারীরিক চাহিদা মিটাতে।
.
প্রতি ঈদে আশেপাশের সবার হাতে মেহেদি পরিয়ে দিতাম আমি। তুমি কি কখনো খেয়াল করে দেখেছিলে প্রিয়, সবার হাত মেহেদিতে রাঙিয়ে আমি নিজের হাতই রং হীন রাখতাম?
তুমি কখনো আমার রাঙা হাত দেখার আবদার করোনি তাই অভিমানে আমিও মেহেদি পরিনি কখনো।
.
তুচ্ছ কারন নিয়ে তুমি আমার সাথে বাজে ব্যবহার করতে। অশ্রাব্য গালি আর সম্ভোধনগুলো কি আমার প্রাপ্য ছিলো?
এতকিছুর পরও তোমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবতে পারিনি তাই আমি ছিলাম তোমার কাছে খুবই সস্তা। কিন্তু আমি ভেবেছিলাম তোমার ভালো মন্দ সবকিছু নিয়েই তোমাকে ভালবাসব। ভালবাসা দিয়ে তোমার খারাপ দিকগুলোকে দূর করতে চেয়েছিলাম -তুমি সেটা বোঝোনি কখনো।
.
সবাই বলে সন্তানের মুখ দেখলে নাকি পাষাণও নরম হয়। তাই আমাদের ৫বছরের দাম্পত্য জীবনে ৩বছরের পরীটার আগমন। কখনো কি তাকিয়ে দেখেছিলে আমাদের মেয়েটার দিকে? তুমি যখন আমার সাথে চিৎকার করে কথা বলতে তখন আমাদের মেয়েটা ভয়ে কেঁদে উঠত। আমরা কি পারতামনা একটা সুস্থ দাম্পত্য জীবন কাটাতে?
আমাদের পরীটার জন্য অন্তত ভালো বাবা হওয়ার চেষ্টা করো।
.
একজনকে ভালবেসে সারাজীবন কাটিয়ে দিতে সবাই পারেনা। তুমি সেটা পেরেছিলে তাই সবার কাছে তোমার জয়জয়কার। আমি যে আমার প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হলাম তা নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই।
না, তোমার দোষ দিচ্ছিনা। আমি ব্যর্থ হয়েছি তোমার মনে একটু স্থান নিতে। পৃথিবী ব্যর্থদের চায়না। নিজের নারীত্বের ব্যর্থতা নিয়ে আমিই চলে যাচ্ছি তোমাকে মুক্তি দিয়ে। আজ আর তোমার উপর কোনো রাগ নেই, শুধু প্রচন্ড অভিমান আছে। আমার বাবা মাকে নিয়ে আপত্তিকর কথা বলায় আজ এই অন্তিম ক্ষণেও তোমাকে ক্ষমা করতে পারলামনা প্রিয়।
.
মৃত্যুর পর যদি আবার জন্ম দেওয়ার সুযোগ থাকত, তবে আমি তোমার প্রাক্তন প্রেমিকা হতে চাইতাম। মাঝপথে তোমার হাত ছেড়ে দেওয়ার জন্য হয়ত তখন সবাই আমাকে বিশ্বাসঘাতক, প্রতারক বলত। কিন্তু তাতে কি! তখন তো তোমার অমূল্য ভালবাসাটুকু আমার জন্যই থাকত -যা আমি তোমার পাশে থেকেও পাইনি এ জীবনে।
বলো প্রিয় তখন আমাকে ভালবাসতে তো??
ইতি
তোমার কেউ না..
.
গল্প :-- "শেষ চিঠি"
লেখা:-- মুমতাহিনা মেহ্জাবিন
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ