āĻļāύিāĻŦাāϰ, ā§Ģ āφāĻ—āϏ্āϟ, ⧍ā§Ļā§§ā§­

657 {1}

অতঃপর বৃষ্টিদিন..  (প্রথম পর্ব)

by- সায়মা মাহমুদা রিমি

তিনবছর পর তন্ময়ের সাথে ঠিক এভাবে দেখা হবে ভাবিনি।প্রচন্ড চমকে গিয়েছিলাম আমি।ওকে প্রথম দেখি কোচিং ক্লাসে,সবে এসএসসি দেব তখন।
আমাদের স্কুলে একজন নামকরা ম্যাথ টিচার ছিল যার কাছে আশেপাশের অনেক স্কুলের ছেলেমেয়েরা পড়তে আসত।তন্ময় ছিল আমাদের স্কুলের কম্পিটিটর বয়েজ স্কুলের টপার।
ভালো ছাত্র বলে স্যারের মুখে ওর নাম আগেই শুনেছিলাম সত্যি বলতে স্যারের কাছে বারবার ওর মতো হবার উপদেশ শুনতে শুনতে একরকম বিরক্তই ছিলাম ওর ওপর।
পরীক্ষা তখন বেশ কাছে,একদিন স্যার ঘোষনা দিলেন যে তিনি তার কোচিং এর সব স্টুডেন্টের একটা ক্লাসটেস্ট নেবেন আর তার মধ্যে সেরা বিশজনকে নিয়ে স্পেশাল ব্যাচ বানানো হবে।
আমি কোন কালেই এতটা আহামরি টাইপ ভালো স্টুডেন্ট ছিলামনা তাই সেরা হবার আকাশকুসুম চিন্তা বাদ দিয়ে কোনমতে পরীক্ষাটা দিলাম।ফার্স্ট যে হবার সেই হলো,তন্ময়!
ভ্রু কুচকে সেদিনই প্রথম তাকালাম মোটা ফ্রেমের চশমাপরা গোলগাল চেহারার ছেলেটার দিকে,বন্ধুরা ওর পিঠ চাপড়ে দিচ্ছিল আর ওর ঠোঁটের কোনে ছিল একচিলতে হাসি যেন আগ থেকেই সব জানত।আমি মুখ বাকালাম।
স্যার রেজাল্ট বলে যাচ্ছেন হঠাৎ স্যারের মুখে নিজের নামটা শুনে থমকে গেলাম।আমার হাঁ হয়ে যাওয়া চেহারা দেখে সবাই হো হো করে হাসতে লাগল আর সবকিছু দেখে আমিও বোকার মতো হেসে দিলাম।
সেদিন নিজের ভালো রেজাল্টে না যতটা খুশি হয়েছিলাম তার চেয়ে বেশি খুশি হয়েছিলাম প্রীতির সাথে একই ব্যাচে থাকতে পারব বলে কারন ওই পরীক্ষার দ্বিতীয় পজিশন ছিল প্রীতির দখলে।প্রীতি।

আমার মামাতো বোন আর সবচেয়ে কাছের বন্ধু।আমি মৌরি।ছোটবেলা থেকেই মামামামীর কাছে থাকি।আমার জন্মের ঘন্টাখানেক পর আমার মা মারা যান তাই অন্য সবার মতো আমার জন্ম কারো মধ্যে কোন আনন্দের সৃষ্টি তো করেইনি বরং সবাইকে চরম অস্বস্তিতে ফেলে দেয়।

সেই অস্বস্তি চূড়ান্ত আকার ধারন করে যখন আমার বাবা ঘোষনা দেন যে তিনি আমার মুখ দেখতে চাননা কারন মায়ের মৃত্যুর জন্য নাকি আমিই দায়ী।
সেটা আমার এমএ পাশ সরকারী কর্মকর্তা বাবার অন্ধবিশ্বাস নাকি ঠিক তার পনেরদিন পর তার দ্বিতীয়বিয়ের পূর্বপ্রস্তুতি ছিল সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে যাইনি কোনদিন।
সেদিনের সেই ছোট্ট অপয়া মেয়েটাকে পরম মমতায় যারা বুকে টেনে নিয়েছিল তারা আমার মামামামী।নিজেদের দুই মেয়ে কিংবা খুব সাধারন মধ্যবিত্ত জীবনযাপনের পরও তারা যে নিবিড় স্নেহে আমাকে বড় করে তুলেছেন সে ঋন শোধ করার কথা ভাবার যোগ্যতাও আমার নেই। সেই মামার ছোট মেয়ে প্রীতি।আমরা দুজন মোটামুটি জমজ বোনের মতো হেসে খেলে ঝগড়া করে বড় হয়েছি।

ওর থাকা না থাকা আমার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ন, তাইতো প্রীতিকে একই ব্যাচে পেয়ে সেদিন মনে হচ্ছিল আমি আকাশের চাঁদ হাতে পেলাম।
তো শুরু হলো স্পেশাল ব্যাচের ক্লাস।এত্তএত্ত ভালো স্টুডেন্টের মাঝে নিজেকে বড়ই অসহায় লাগত আর তার ওপর বোনাস অত্যাচারস্বরুপ স্যারের প্রত্যেকদিনের পরীক্ষা তো ছিলই।
কম্পিটিশন ছিল মূলত তন্ময় আর প্রীতির মধ্যে,ওরা দুজন পাল্লা দিয়ে ফার্স্ট সেকেন্ড হতো আর আমার টার্গেট ছিল কোনমতে স্যারের ঝাড়ি থেকে বেঁচে যাওয়া।একদিন স্যার নতুন বুদ্ধি করলেন,পরীক্ষার খাতা অদলবদল করে দিলেন।
দুজন করে জোড়া বানালেন যারা একজন অন্যজনের খাতা দেখবে কাটবে আবার নাম্বারও দেবে।শুনে আমিতো দোয়া দুরুদ পড়তে লাগলাম যেন আমার খাতা প্রীতির কাছে যায় কারন ওই পরীক্ষাটা আমার জঘন্য টাইপ খারাপ হয়েছিল।
কিন্তু আল্লাহ আমার কথা তো শুনলেনইনা বরং আমি যে ভয় পাচ্ছিলাম তাই হলো,আমার খাতা গিয়ে পড়ল তন্ময়ের কাছে।মুখ হাঁড়ি করে ওর খাতাটা নিয়ে বাসায় ফিরলাম।
রাতে ব্যাগ খুললে খাতাটা বের হতেই মেজাজটা দ্বিতীয় দফা খারাপ হলো তাই খাতাটা খুলেই বসলাম।যা ভেবেছিলাম তা ই,খাতায় একটা দাগ দেবার ও কোন উপায় নেই।সব ঠিকঠাক,৭০ এ ৭০ পাওয়ার মতো।

কিন্তু আমিও কম যাই কিসে,প্লাস মাইনাস এদিক সেদিক করে নাম্বার কমিয়ে ৪০ বানিয়ে দিলাম।যদিও জানতাম আমি নিজেও এর চেয়ে খারাপ নাম্বার পাবো কিন্তু ৪০ দেখে ওই ছেলের গোল হয়ে যাওয়া চেহারা কল্পনা করে আমার মুখে হাসি ফুটা উঠল।

পরেরদিন নাম্বার দেখার পালা আসল।তন্ময়ের নাম্বার দেখে স্যারের রিএকশনটা ছিল দেখার মতো কিন্তু আমি অপেক্ষায় ছিলাম ওর রিএকশন দেখার।ওর চেহারায় কোন ভাবান্তর না দেখে একটু অবাকই হলাম।আমার
বিস্মিত মুখের দিকে তাকিয়ে ও একটু হাসলো শুধু যেন এটাই স্বাভাবিক।আমি তখনো জানতামনা আমার অবাক হবার আরো বাকি।স্যার আমার দিকে খাতা বাড়িয়ে দিলেন,আমার মাথা ঘুরে গেল যখন দেখলাম নাম্বারের জায়গায় ৬০ লেখা।

যে পরীক্ষা দিয়েছিলাম তাতে ৩০ এর বেশি পাওয়া মোটামুটি অসম্ভব।এটা নিয়ে বেশি চিন্তা করার আগেই স্যার প্রথমবারের মতো আমার প্রশংসা করে বসলেন।
কি হলো কিভাবে হলো সে চিন্তা না করে আমি তখন স্যারের প্রশংসা আর মিস্টার ভাবিস্টকে হারানোর আনন্দে খুশি হয়ে গেলাম।খুশি ডাবল হয়ে গেল যখন স্যার প্রত্যেক জোড়ায় যারা বেশি নাম্বার পেয়েছিল তাদের কলম গিফট করলেন।

আমি তন্ময়ের হিংসায় জ্বলে পুড়ে যাওয়া চেহারা দেখার আশায় আড়চোখে ওর দিকে তাকালাম কিন্তু এমন আনপ্রেডিক্টেবল ক্যান ছেলেটা?আমাকে আবারো ভুল প্রমান করে দেখলাম ও হাসছে।

ওর সেই বিখ্যাত অহংকারী ওভারকনফিডেন্ট টাইপ হাসি নয়,মনখোলা সত্যিকারের হাসি যেন আমার আনন্দে সত্যি সেও আনন্দিত।আমি প্রথমবারের মতো খেয়াল করলাম ঠিকমতো হাসলে ভালোই তো লাগে ছেলেটাকে।
তবে শুধু হাসি দেখে গলে যাবার মতো মেয়ে আমি না।খাতায় কোন না কোন গড়বড় অবশ্যই আছে সে চিন্তা করে আমি বাড়ি ফিরে দেরি না করেই খাতাটা খুলে বসলাম।

আর মাথায় বাজ পড়ার মতো অবাক হয়ে আবিস্কার করলাম ওর খাতার মতো আমার খাতায়ও অনেক জায়গায় প্লাস মাইনাস এদিক সেদিক করা শুধু পার্থক্য এখানে উদ্দেশ্য নাম্বার বাড়ানো।ভুলগুলো আবার সুন্দরমত মার্কিং ও করা।
অনেক জায়গায় নিজের হাতে লিখে ভুলগুলো ঠিক করে রেখেছে।ও এমন কেন করেছে আমি যখন যখন সে প্রশ্নের উত্তর খুজতে ব্যস্ত ঠিক তখনি চোখ আটকে গেল খাতার শেষ পৃষ্ঠায় লেখা কিছু লাইনের দিকে।তন্ময়ের লেখা,পড়তে লাগলাম...

"মৌরি,ঠিকঠাক মত খাতা দেখলে তোমার নাম্বার হয় ৩২ কিন্তু আমি জানি তোমার ক্যাপাবিলিটি আরো অনেক বেশি।শুধু ম্যাথটাকে একটু ভালবেসো,তোমার ফোনের গেমসগুলোর মত..বেস্ট অব লাক.."

লেখাগুলো পড়ার সাথে সাথে কি ফিলিং হয়েছিল মনে নেই শুধু মনে আছে খাতাটা সামনে খুলে অনেকক্ষন বসে ছিলাম আমি,বোঝার চেষ্টা করছিলাম ও কি বলতে চেয়েছে আর আমি যে প্রায়ই ক্লাসের ফাঁকে ফোনে গেমস খেলতে থাকি তা ও কখন খেয়াল করল?

পরেরদিন সারা ক্লাসে শুধু ওকেই লক্ষ্য করতে লাগলাম।ওর ভাবসাব দেখে বোঝার কোন উপায় নেই যে কিছু হয়েছে,আমার দিকে একবার তাকালনা পর্যন্ত।আজব ছেলেতো!একবার ভাবলাম সরাসরি বলি কিন্তু আমাকে সে সুযোগ পর্যন্ত দিলনা।

সারা দিনরাত ঘটনাটা আমার মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগল।যে আমি ছেলে সম্পর্কিত গালগল্প থেকে মোটামুটি সবসময় দূরে থাকার চেষ্টা করি সেই আমি একটা বইপাগল এলিয়েনকে নিয়ে সারাক্ষন ভাবছি ভাবতেই নিজের ওপর মেজাজ খারাপ হলো,সামলালাম নিজেকে।

পরীক্ষার তখন সপ্তাহখানেক বাকি তাই ঘটনাটা নিয়ে আর বেশি চিন্তা করার সময় সুযোগ কোনটাই পেলামনা।তবে হ্যাঁ এর পরের পরীক্ষাগুলো নিঃসন্দেহে আগের চেয়ে সিরিয়াসলি দিয়েছিলাম।
এভাবেই দেখতে দেখতে একসময় শেষ হয়ে গেলো স্পেশাল ব্যাচের ক্লাস।আমার সবসময় মনে হতো ক্লাস শেষ হলে আমি সবচেয়ে বেশি খুশি হবো কিন্তু অবাক হয়ে দেখলাম আমার কেমন জানি খারাপ লাগছে।
শেষদিন স্যারের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সবাইকে বাই জানিয়ে বাসায় ফিরছিলাম।অন্যসবদিন আমি প্রীতি একসাথেই যেতাম কিন্তু ওইদিন ওর কি কাজ ছিল বলে ও আগেই চলে যায়।
আমি তখন রিকশার অপেক্ষায় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে,হঠাৎ শুনলাম আমার নাম ধরে কে যেন ডাকছে।আমি পিছন ফিরে চমকে গেলাম যখন দেখলাম তন্ময় ছুটতে ছুটতে আমার দিকে আসছে।
আমার তো তখন পা কাপাকাপি অবস্থা।ও হাঁপাতে হাঁপাতে আমার কাছে এসে থামল আর ধমকের সুরে বলল..
-আমাকে বাই বল্লানা যে?!
আমিতো পুরাই থতমত খেয়ে গেলাম।কি বলবো কিছু বুঝতে পারছিলামনা।
-তোমাকেও।
মুখে কোনমতে হাসি ফুটিয়ে বললাম।বলার জন্য আর কিছু খুঁজে পাচ্ছিলামনা তাই বাই বলে যখনই যাবার জন্য ঘুরব তখনই আবার তন্ময়ের ডাক..
-মৌরি!
আমি আবারো চমকালাম তাও আবার নিজের নাম শুনে।ডাকার কারন শোনার প্রতিক্ষায় আমি যখন ওর দিকে তাকিয়ে তখনই হঠাৎ ও বলে বসল..
-ওইদিন আমার একটা অংকও ভুল হয়নি,তাইনা?
ওর বলার ভঙ্গিতে আমি হেসে দিলাম আর অপরাধী কন্ঠে বললাম..
-হুমম স্যরি আসলে আমি..
ও আমাকে কথা শেষ করতে না দিয়ে জোরে জোরে হাসতে লাগল আর আমি
অস্বস্তিভরা চোখে ওর দিকে তাকালাম,এত সুন্দর করে হাসার দরকার কি ছেলেটার?!

সেইবারই শেষ দেখা ওর সাথে আর আজ দেখছি।মাঝখানে চলে বেশখানিকটা সময়।এইচএসসি শেষ করে আমি এখন একটা সরকারী ভার্সিটিতে পড়ছি।
তন্ময় এসএসসির পরপরই ঢাকা চলে যায়,শুনেছি ওদের পুরো পরিবারই ওখানে শিফট করে। তারপর অনেকদিন কোন যোগাযোগ হয়নি।

সেই ছোট্ট বয়সে ও আমার জন্য কি ফিল করেছে,আমি ওর জন্য কি ফিল করেছি অথবা আদৌ কেউ কিছু ফিল করেছিলাম কিনা জানিনা শুধু জানি ও আমার জীবনের খন্ড সুখস্মৃতির মধ্যে একটা ছিল।

আমার চিন্তা জুড়ে সবসময়ই যে ওর আনাগোনা ছিল তা না,সেই অল্প পরিচয় সল্প কথোপকথনকে কোন নাম দেবারও প্রয়োজন বোধ করিনি কোনদিন শুধু
মনে আছে ওর সাথে ঘটা ঘটনাগুলো হঠাৎ মনে পরলে  আমি নিজের অজান্তেই হেসে ফেলতাম,পরীক্ষার আগে মাঝে মাঝে মনে হতো কেউ যদি আমার ভুলগুলো ধরিয়ে দিয়ে সেদিনের মতো বেস্ট অব লাক বলত।ব্যস এতটুকুই।
বন্ধুদের কাছে ছেলেবিদ্বেষী ইমেজের জন্য আর ক্ষ্যাপানোর ভয়ে ওদের সাথে কখনো তন্ময়ের ব্যাপারটা শেয়ার করা হয়নি,প্রীতির সাথেও না পর্যন্ত।
আসলে ও আমার জন্য তখনো এতটা গুরুত্বপূর্ন হয়ে উঠেনি।
তবে হ্যাঁ একথা সত্যি যে কলেজে ওঠার পর থেকে ক্লাসমেট ছেলেদের নিয়ে পচানো টাইপ ছেলেমানুষীগুলো অসহ্য লাগত।নিজেকে কেমন জানি বড় বড় মনে হচ্ছিল।কেউ কি আসলেই আমাকে একটু ওলটপালট করে দিয়েছিল?
চলে গেল কলেজের দু বছর আর শুরু হলো ভর্তিপরীক্ষা নামক অমানষিক যুদ্ধ।ছোটবেলা থেকে মেডিকেলে পড়ার ইচ্ছা ছিল আর প্রীতির ছিল বুয়েটে। স্ব স্ব স্বপ্নে  বিভোর হয়ে আমরা যে কত রাত ভোর করেছি তার ইয়ত্তা নেই।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রীতির ঠিকই বুয়েটে চান্স হয়ে গেল আর আমি চোখের সামনে নিজের স্বপ্ন ভেঙ্গে যেতে দেখলাম।সেই সময়টা যে কতটা কঠিন ছিল বোঝানো যাবেনা।

পরিবারের সবার শত শত সাপোর্টের পরও নিজেকে বড়ই তুচ্ছ আর জীবনটাকে পুরোপুরি অর্থহীন মনে হচ্ছিল। মামামামী উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছিলেন যাতে আমি ভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষাটা দেই কিন্তু ততদিনে আমি প্রায় আশাহীন হয়ে পড়েছি। যদিও সবাই বলে যাচ্ছিল যে সব ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু আমার মনে হচ্ছিলনা কখনো কিছু ঠিক হবে।শেষ পর্যন্ত মামামামীর মুখের দিকে তাকিয়ে নিজেকে শক্ত করলাম আর পরীক্ষাটা দেবার সিদ্ধান্ত নিলাম।
পরীক্ষার তখন দশদিনের মতো বাকি একদিন ফেসবুকে দেখি এক আননোন মেসেজ। নামটা পড়ে চমকে উঠলাম,তন্ময়।সেই তন্ময়!!এত্তদিন পর!!
যদিও সেদিন ওর নামটা দেখে অবাকের চেয়ে বিরক্তই হয়েছিলাম বেশি কারন প্রীতির মুখে আগেই শুনেছিলাম যে ওর ও বুয়েটে চান্স হয়ে গেছে তাই আমি ধরেই নিয়েছিলাম ওর সেই মেসেজে নিশ্চই কিছু জ্ঞানগর্ভ লাইন থাকবে কারন মানুষ যা পার করে আসে তা তার কাছে সোজাই মনে হয় আর তখন বাকি সবাইকে তার উপদেশ দিতে ইচ্ছা করে।

আমার তখন উপদেশ শোনার মন মানসিকতা কিছু ছিলনা বলে মেসেজটা সেদিন না পড়েই রেখে দিই।তার একদিন পর হঠাৎ কি মনে করে পড়বোনা পড়বোনা করে পড়েই ফেললাম মেসেজটা।

"মৌরি,যা পাওনি হয়তো তা কখনোই মন থেকে চাওনি।ট্রাস্ট মি,তোমার জন্য সেরাটাই অপেক্ষা করছে।অল দ্য বেস্ট।
অফটপিক:তোমাকে সাদার চেয়ে কালোতে বেশি মানায়!"

পড়ে প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হয়েছিল আমার।ওই ছেলে কিছু না জেনে আন্দাজে কিভাবে বলে দিল আমি মন থেকে চাইনি! কড়া কিছু কথা লিখে যখনি রিপ্লাই দেব ভাবছি দেখলাম ওর মেসেজ অপশনটা ব্লক করা।রাগে ফেটে পড়লাম।কি ভাবে ছেলেটা নিজকে?যা খুশি তাই বলবে?আর সাদা কালো মানায় মানায়না এসব উদ্ভট কথা বলার মানে কি?
অনেককষ্টে নিজেকে শান্ত করলাম।জেদ চেপে বসেছিল খুব।মনের সব শক্তি একত্রিত করলাম।না এবার যাই হোকনা কেন কিছু আমাকে করে দেখাতেই হবে। জীবনে সেবারই মনে হয় সবচেয়ে সিরিয়াসলি পড়াশোনা করেছিলাম।অবশেষে পরীক্ষা হলো আর আল্লাহর অশেষ রহমতে আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে চান্স হয়ে গেল। সেদিন মামামামী,প্রীতি,আপু সবার মুখে যে খুশি দেখেছিলাম তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবেনা।

আমার প্রতিটা কষ্টের মুহুর্তের সাথে সাথে এ মানুষগুলোও যে কষ্টে পুড়েছে প্রতিনিয়ত সেদিনই প্রথম বুঝলাম। এসব যখন ভাবছি তখন আমার মনে পড়ল আরেকজনের কথা যার কথা ভোলা আমার পক্ষে সম্ভব ছিলনা।হুম তন্ময়।
অদ্ভুতভাবে এই ছেলেটা ঠিক সেই সেই সময় আমার জীবনে এসেছে যখন সত্যিই আমার কোন সার্পোটের দরকার ছিল। আর ওর সেই মেসেজটা যেটা দেখে প্রথমে মেজাজ খারাপ হয়েছিল সত্যি কিন্তু আমার এই রেজাল্ট যে অনেকটাই ওর উৎসাহের ফসল তা আমি অস্বীকার করতে পারবনা।

আমি দ্বিতীয়বারের মত ওর প্রতি কৃতজ্ঞ হয়ে গেলাম আমার ভেতরের আমাকে জাগানোর জন্য। সেদিন রাতে আবারও ওর মেসেজ পেলাম তবে এবার আর অন্যবারের মতো অবাক হলামনা কারন ততদিনে আমি ওর অদ্ভুত কর্মকান্ডের সাথে ভালোভাবেই পরিচিত হয়ে গেছি। আগ্রহ নিয়ে পড়তে লাগলাম..

"বলেছিলামনা সাদা আই মিন সাদা এপ্রনের চেয়ে লইয়ার্সদের কালো ইউনিফর্মে তোমাকে বেশি মানায়। তো মিস আমি কি এখন আপনাকে ফ্রেন্ড রিকয়েস্ট পাঠাতে পারি?"
"আর হ্যাঁ,রাগানোর জন্য স্যরি"

অজান্তেই ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠল,রিকয়েস্টটা আমিই পাঠিয়ে দিলাম।সেই থেকে শুরু ওর আর আমার বন্ধুত্বর যদিও এই বন্ধুত্বের পুরোটা কৃতিত্বই ওর।অল্প অল্প চ্যাট থেকে শুরু করা এই বন্ধুত্বের গভীরতায় একসময় আমরা তুমি থেকে তুই তে নেমে আসলাম।
অবশ্য এ বন্ধুত্বের আরেকটা কারন ছিল প্রীতি।একই জায়গায় পড়ার সুবাদে ওদের দুজনের সম্পকও অনেক ভালো হয়ে গিয়েছিল আর স্কুলের মতো ওদের সেই মজার খুটখাট কম্পিটিশন তাও যেন নতুন করে শুরু হয়ে গিয়েছিল।
যদিও শুধু প্রীতির না,তন্ময়ের সাথে আমার বন্ধুত্বও দিনদিন অনেক গুরুত্বপূর্ন হয়ে উঠছিল আমার জন্য।

রোজ চ্যাট হতো ওর সাথে।সারাদিনের ক্লাস পড়াশোনার পর আমার বিনোদন ছিল ব্যস এতটুকুই। প্রায় সবকিছুই শেয়ার করতাম আমরা আসলে একজন সত্যিকারের বন্ধুর মতো যেকোন পরিস্থিতিতে ও আমার পাশে ছিল সবসময়।
ওর প্রতি আমার মুগ্ধতা দিনদিন বেড়েই যাচ্ছিল কারন এতদিনের পরিচয়ে কখনো ওকে ওর লিমিট ক্রস করতে দেখিনি।
এমনকি আমি যখন ওর সাথে দেখা করার ব্যাপারে মানা করলাম ও একটুও জোর করলনা। কখন যে ও আমার জীবনের হাতেগোনা কিছু গুরুত্বপূর্ন মানুষের একজন হয়ে গিয়েছিল নিজেই বুঝিনি। ওর সাথে চ্যাটিং আমার রুটিন টাইপ হয়ে গিয়েছিল। কোন কারনে কথা না হলে কি যেন মিসিং মিসিং লাগত।
বুঝতে পারছিলাম আমি ক্রমশ ওর প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছি কিন্তু নিজের ওপর এই বিশ্বাসটুকু ছিল যে আমি এই বন্ধুত্বকে ঠিক ততটাই সম্মান দেব যতটুকু তন্ময় দিয়েছে। এভাবেই সময় এগিয়ে যাচ্ছিল আর তার সাথে এগিয়ে যাচ্ছিল আমাদের টক ঝাল মিষ্টি বন্ধুত্বের রসায়ন।

ওর অন্যতম প্রধান কাজ ছিল আমার পেছনে লাগা আর অদ্ভুতদর্শন সব ছেলেদের নিয়ে আমাকে ক্ষ্যাপানো। আমিও অবশ্য ছেড়ে দিতামনা তবে ওকে ক্ষ্যাপানো অতটা সহজ ছিলনা। একটা ক্ষেত্র ছাড়া।প্রীতি।
অদ্ভুতভাবে ওকে আর প্রীতিকে নিয়ে কিছু বললে ও চরম ক্ষেপে যেত আর গম্ভীর গলায় বলত,ও আমার শুধুই ভালো বন্ধু।
তো একদিন ও আমাকে কি নিয়ে জানি ক্ষ্যাপাচ্ছিল আর আমিও দেরি না করে আমার মোক্ষম হাতিয়ার প্রীতি প্রসঙ্গ টানলাম আর অবাক হয়ে দেখলাম ওতো ক্ষ্যাপলই না বরং কেমন উদাস উদাস হয়ে গেল।আমি আর কথা বাড়ালামনা।
কোন কারনে ওর মুড অফ মনে করে অফলাইনে চলে আসলাম আর প্রীতির সাথে ফোনে গল্প করা শুরু করলাম।
পথের দূরত্ব হয়ে গেলেও প্রীতির সাথে আমার মনের দুরত্ব কখনোই হয়নি।
দুজনের অনেক কমই কথা ছিল যা একে অন্যকে বলিনি তো সেদিনও দুজন বকবক করে যাচ্ছিলাম। কিন্তু কিছুক্ষন পর লক্ষ্য করলাম আমি একাই বকবক করে যাচ্ছি,প্রীতি একটু চুপচাপ।কারন জানতে চাইলাম বল্লো কিছুই হয়নি।
আমিতো এত সহজে মেনে যাবার মতো মানুষ না,চাপাচাপি শুরু করলাম।
কিছুক্ষন ভ্যানভ্যান করে অবশেষে ও বলল..

-মৌরি,আই এম ইন লাভ মে বি..
ওর কথা শুনে আমিতো হেসেই শেষ।ও যে ওদের এক বড় ভাইয়ের ওপর ক্রাশড সেটা আমি জানতাম তাও শিওর হবার জন্য বললাম..
-কে সে?
-তুই ওকে ভালোভাবেই চিনিস।কিছুক্ষন ইতস্তত করে ও জবাব দিল।
একটু খটকা লাগল আমার।ওর সেই বড়ভাইয়ের নাম আমি জানি ঠিকই তবে অবশ্যই ভালোমতে চিনিনা তাই শিওর হবার জন্য যখনি আবার ওকে প্রশ্ন করতে যাবো এক অজানা আশঙ্কা মনে উঁকি দিল।তাহলে কি...?
এক মুহুর্তের জন্য মনে হলো আমার পৃথিবী থমকে গেছে।মুহুর্তের মধ্যে উদয় হওয়া সব প্রশ্নের অবসান ঘটিয়ে প্রীতি অবশেষে বলল তন্ময়!
শুনে মনে হচ্ছিল আমি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিনা আর সাথে ভয়ানক কষ্ট।কিন্তু কেন?তন্ময় তো আমার শুধুই বন্ধু।তাহলে কি আমি ওকে...! তন্ময়ের প্রতি আমার ফিলিং কি শুধু বন্ধুত্বের ছিল না তার একটু বেশি তা কখনো অন্য কেউ তো দূরে থাক নিজের কাছেই স্বীকার করিনি।শুধু জানতাম আমার কাছে ছেলে মানে ছিল শুধুই ও আর তাইতো যেদিন আমাদের পাশের বাসার ছেলেটা একগাদা গোলাপ নিয়ে আমাকে প্রপোজ করে বসল আমার কোন ভাবান্তরই হলোনা। চিন্তার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছিলাম,ধ্যান ভাঙ্গল প্রীতির কন্ঠে..
-মৌরি,আছিস?
কেঁপে উঠলাম শুধু।অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে কন্ঠটাকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক রেখে বললাম-
-তাই? দারুন তো!তন্ময় জানে?
-ভাব দেখায় জানেনা কিন্তু আমার ধারনা সব ওর প্ল্যান। তোর কাজ হচ্ছে সত্য বের করা,বুঝলি?
লজ্জামাখা কন্ঠে প্রীতির উত্তর।আমার সাথে সাথে মনে পড়ে গেল তন্ময়ের সেই হঠাৎ চুপ হয়ে যাওয়ার কথা,কারনটা তাহলে এই ছিল! দাঁতে দাঁত চেপে কান্না থামিয়ে বললাম..
-দারুন তো!
-সত্যি!তুই খুশি হয়েছিস?
ছোট বাচ্চাদের মতো খুশি ঝরে পড়ল প্রীতির কন্ঠে।প্রশ্নটা আমিও নিজেকে করলাম।আসলেই কি আমি খুশি হয়েছি?প্রীতিতো আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু।ওর খুশিতে অখুশি হইনি কোনদিন।
ছোটবেলা থেকেই সবাই যখন পড়াশোনা কিংবা সৌন্দর্য যেকোন বিষয়ে ওর প্রশংসায় ব্যস্ত থাকত কখনো এক মুহুর্তের জন্যও মনে একথা আসতে দিইনি যে ওর জায়গায় আমি কেন না!সেই ওর আজকের খুশিতে আমি অখুশি হই কিকরে?
-হুম। ছোট্ট করে উত্তর দিলাম।
উচ্ছসিত হয়ে যখনই ও আরো কিছু বলতে যাবে ওর ফোন কেটে গেল।অন্য যেকোন সময় প্রীতির সাথে কথা বলা মানে আমার মুড অনেক ভালো হয়ে যাওয়া কিন্তু এই প্রথম আমি আকুল হয়ে কাঁদলাম।এভাবে কাঁদা আমার কাছে নতুন কিছুনা। ছোট্টবেলার সেই অসহায় আমার মুখ মনে করে আমি যে কত রাত কেঁদে ভোর করেছি তার হিসেব নেই।অদ্ভুত মায়া,নিজের জন্য নিজের!
তবে এইবার অবশ্য নিজের জন্য মায়া না বরং রাগ লাগছে।
আসলেই তো.তন্ময়ের জন্য আমার যে ফিলিং সেটা একান্তই আমার,ও সেখানে উধাও। ও এ পর্যন্ত আমার জন্য যা যা করেছে শুধু বন্ধু ভেবেই করেছে,হয়তো সব বন্ধুর বেলায়ই ও এতটাই উদার আর আমি গাধার মতো ওর উদারতাকে নিজের দুর্বলতা বানিয়ে নিয়েছি।
যে আমার গুরুত্ব ওর কাছে অনেকের চেয়ে কম তাকে কেন্দ্র করে আমি আমার পৃথিবী সাজাচ্ছি দিনের পর দিন কিছু না জেনে,না বুঝে।
বন্ধুত্বের রুপালি বলয়ে হাটতে হাটতে কখন যে ভালবাসার সোনালী বলয় ছুয়ে দিয়েছি নিজেই জানিনা।সারারাত কাদলাম। আমার এতদিনের শতরঙ্গের অনুভুতিগুলো যে অশ্রুর বর্নহীন রংএ বিবর্ন হয়ে যাবে ভাবিনি কোনদিন।থামালাম নিজেকে কারন ততক্ষনে আমি বুঝে গিয়েছিলাম যে আমার চোখের পানি মোছার জন্য আমার সবচেয়ে ভালো দুই বন্ধুর কাউকেই পাশে পাবোনা হয়তো আমি নিজেই কখনো ওদের সামনে কষ্টের ঝাঁপি খুলে বসবোনা।থাকনা ওরা ভালো।ভালোবাসা ভালো থাকুক।

....

(to be continued)

āĻ•োāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāχ:

āĻāĻ•āϟি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āϟ āĻ•āϰুāύ