গল্প-"পুতুল কন্যা"
(Polok Hossain)
.
Part-10
.
বয়সটা ওর এখনো কাচা সাথে উপমার মনটাও।প্রবন্ধর সামনে গেলে যে মনটা কেপে উঠতো।এখন সেই মনটা আর কাঁপে না।ওর সামনে যাওয়া মাত্রই অনুভূতির হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়।চোখে লজ্জার বাধা পেরিয়ে প্রবন্ধকে ঘোমটার আড়াল থেকে লুকিয়ে দেখে যায়।এতে যেন একধরনে মনের লুকোচুরি চলে।
উপমা নৌকা বেয়ে যাচ্ছে।প্রবন্ধর দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হাসে।প্রবন্ধ ওর এই হাসির ভাষা বুঝে না।ওর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে।চারিদিক নীরব শুধু পানির শব্দটাই কানে এসে বাজছে।নীরবতা ভেঙে প্রবন্ধ বলল-
- তুমি গান গাইতে পারো উপমা!
উপমা নিচে তাকিয়ে ধীর স্বরে জবাব দিল-
-জী না।
মেয়েটা তো জানে না যে ওর মিষ্টি আওয়াজ গান থেকে কম কিসের!তবে আজ থাক এই কথা!সময় হলে অনুভূতিগুলোই না হয় উপন্যাস বানিয়ে বলা যাবে...
প্রবন্ধ বলল-
-আমিও কিন্তু গাইতে পারি না।তবে একটা গান মনে মনে গেয়ে যাচ্ছি।কি গান জানো...! "একছিল সোনার কন্যা,মেঘবরণ কেশ"
উপমা মুখ টিপে টিপে হাসলো।নৌকাও ঘাটলার সামনে চলে এসেছে।সময় কখন পার হয়ে এসেছে বোঝা-ই গেল না।প্রবন্ধ নৌকা থেকে নেমে পরলো।কিন্তু উপমা নামলো না।শাড়িটাকে সামলিয়ে নেমে পরা ঝামেলা মনে হচ্ছে।তবুও শাড়ি সামলে নিয়ে এক পা নিচে নামাতে চেষ্টা করল।প্রবন্ধ একটু দূরে গিয়ে দাঁড়াতেই পেছনে ফিরে দেখলো উপমা নামে নি।বোকা মেয়েটা ডেকেও বলছে না ওকে ধরে নামাতে।নিজে নিজে চেষ্টা করছে।প্রবন্ধ সামনে গিয়ে হাত বাড়িয়ে বলল-
-আমাকে ধরে নামো।
প্রবন্ধ সামনে এসে হাত বাড়াতেই উপমা সাহায্যের আশ্রয় পেয়ে হাত কাঁপতে কাঁপতে প্রবন্ধর হাত ধরে নিলো।
ক্ষণিক সময়ের জন্য হাতের এই স্পর্শটাই যেন হাজারও ভাষার নীরব ইঙ্গিত। উপমা নেমে পরলো।কিন্তু আকস্মিক হাত ধরাটাই যেন ওর কাছে ভালো লাগার নানান সুর।উপমা হাটে আর মুচকি মুচকি হাসে।প্রবন্ধকে বুঝতে দিচ্ছে না যে ঘোমটার নিচেই সে মুচকি হাসির সমাগমে কতোটা গলে যাচ্ছে।এই পুরুষটা সত্যি-ই তো বন্ধুর মতো।ললিতা কাকিও না...মাঝে মাঝে যেই ভয় দেখায় যেন শ্বশুর বাড়িটাই একটা ভয়ানক স্থান।হিংস্র প্রাণীর মতো সবাই কেটে মেরে ফেলবে।কিন্তু এমন কোনো হিংস্র চরিত্রই যে যুবকটির মধ্যে নেই।তবে নাম টা যেন কি তার!!এই কঠিন নামটা উপমার মনেই থাকে না!প্রবদ্দ,প্রাদ্ধ কি যেন একটা!
উপমা হাটতে হাটতেই নিচু স্বরে প্রবন্ধকে বলল-
-আপনের নামটা যেন কি?
প্রবন্ধ আবারও অবাক হলো।মেয়েটা আবারও নাম জিজ্ঞাস করছে। একবার বলার পরও সে ভুলে গেল!নিজের স্বামীর নাম মেয়েটা মনে রাখতেই পারে না।দুনিয়াতে হয়তো উপমা-ই একমাত্র স্ত্রী যে কি না স্বামীর নাম জ্ঞানগর্ভে ভরে রাখতে পারে না।প্রবন্ধর কিছুটা হাসি পেল।
প্রবন্ধ বলল-
-তুমি আমার নাম ভুলে গেলে?ডাকনাম 'প্রবন্ধ' শুধু ডাকনামটা মনে রাখলেই চলবে।মনে থাকবে!
উপমা বলল-
-জী।বুঝসি।প্রবদ্দ।
-'প্রবদ্দ' না।বলো 'প্রবন্ধ'।আবার উচ্চারণ করো তো!
উপমা আবারও উচ্চরন করতে চেষ্টা করলো-
-প্রবদ্ধ।
-না হয় নি।আবার বলো।প্রথমে প্র,এরপর বন্ধ।ইকুয়েলটু প্রবন্ধ।
উপমা ধীরে ধীরে উচ্চারণ করতে চেষ্টা করলো -
-প্রবনধ।
প্রবন্ধ হো হো করে হেসে বলল-
-এই তো পেরেছ।গুড।
সঠিকভাবে উচ্চারণ করতে পেরে উপমাও নিচের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো।
হাটতে হাটতে ওরা বাড়ির সামনে এসে পরলো।সময়গুলো যেন হুট করেই কেটে গেল।তবে দারুম একটা সময় কাটিয়েছে দুইজন।যেই মেয়ে মুখ তুলে কথা বলতে পারে নি সে আজ কথাও বলেছে এমন কি মিষ্টি করে হেসেছেও।এই হাসিটাই হয়তো ওর নীরব মনের ভালো লাগার এক বহিঃপ্রকাশ।
হঠাৎ প্রবন্ধর ফোন বেজে উঠলো।ছন্দা আপু ফোন করলো হঠাৎ কি মনে করে!
-হ্যালো আপু..
-কি খবর তোদের!উপমা কোথায়! কেমন আছে সে?
-আমরা ঠিকাছি।তোমরা কেমন আছ?
-ভালো। কবে আসা হচ্ছে? বাবার রাগ কতো ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় চলে যাচ্ছে তার কি কোনো খেয়াল আছে!তুই যতো সময় নিয়ে বাবার বিজনেস সামলে যাচ্ছিস আর এই সময়ের পরিমাণ করতে গেলে বেশী দিন হবে না।এখন দায়িত্বে অবহেলা করাটা বাবা একদমই পছন্দ করছেন না।
বড় বোন ভালোর জন্য ন্যায়ের বাণী শুনিয়ে যাচ্ছে।কিন্তু আপুকে কি করে বোঝানো যায় যে এইখানে এসেও সে কি কি জয় করতে পেরেছে!কিন্তু মাতৃ-পিতৃ আজ্ঞাও তো আবশ্যক।
প্রবন্ধ বলল-
-আজকের দিনটাই শুধু থাকছি।কাল চলে আসবো আমি আর উপমা।
ছন্দা কিছু প্রশান্তির নি:শ্বাস ফেলে বলল-
-হুম।তাই যেন হয়। নয়তো বাবা রাগ হবেন।ফোন রেখে দিচ্ছি তাহলে।
ছন্দা ফোন কেটে দিল।তার খুব আদরের ভাই প্রবন্ধ।প্রবন্ধ ওকে এতোদিন আগলে না রাখলে হয়তো স্বামী ছাড়া এই বিবাহিত নারীর স্থান হতো না এই বাড়িতে।ছন্দারও নিজের একটা জীবন আছে।আছে শত দু:খ। কষ্ট কার মনে না থাকে!শত আঘাতের মাঝেও এই নারী উঠে দাঁড়িয়েছে।সাহসী মেয়ে।ওর ইতিহাসটুকু সংক্ষেপে উপলব্ধি করিয়ে দিলে ভাবটুকু আরেকটু ফুটে উঠবে।
ছন্দার বিয়েটা হয়েছিল লাভ মেরেজ।বাবা-মা এই বিয়েটাও মেনে নিতে পারে নি।পরিবারের বিপক্ষে গিয়ে বিয়েটা করেছিল সে।বিয়ের পাঁচ বছর পর ছন্দার কোলে দুলি আসে।দুলি আর স্বামীকে নিয়ে ভালোই কাটছিল তার।কিন্তু দু:র্ভাগ্যবশত তার সুখের সংসারে আগুনের উৎপত্তি হলো।তার নিষ্ঠুর স্বামী ছন্দার ভালোবাসা ত্যাগ করে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে ছন্দাকে প্রতারণার জালে ফেলে।ছোট দুলিকে নিয়ে দিনগুলো ছিল ওর শোকদায়ক।প্রবন্ধ আপন রক্তের অপমান সহ্য করতে না পেরে ওকে বাড়ি নিয়ে এলো।কিন্তু ততোক্ষনে মেয়েটি কলঙ্কীনী হয়ে উঠেছে সবার কাছে।আপনজনের বিরুদ্ধে বিয়ে করে বাবার চোখে সে এখনো অপরাধী আর তা-ই বড় বোনের দেখভাল এখন প্রবন্ধর আশ্রয়েই চলে।
.
প্রবন্ধ ফোন রাখা মাত্রই উপমা কাছে এসে দাঁড়ালো।যাওয়ার কথা বললে মেয়েটা কেমন অভিব্যক্তি প্রকাশ করবে।কে জানে!বোকা মেয়েটির মন খারাপ হবে না তো।প্রবন্ধ বলল-
-আমাদের কাল বাড়ি যেতে হবে উপমা।বাসা থেকে ফোন এসেছে।
মেয়েটার যেন এই বাক্যের সাথে কোনো দ্বন্দ্ব নেই।প্রবন্ধর কথায় কোনো দ্বিমত নেই তার।
উপমা বলল-
-বাসার সবাই কি রাগ করতাসে!
-এমন কিছু না উপমা।ছন্দা আপু ফোন করেছিল।সবার চিন্তা তো বুঝতেই পারো।
উপমা মাথা নিচু করে আঁচলের এক কোনো আঙুল দিয়ে ঘুরাতে ঘুরাতে বলল-
-বাসার সবাই ক্যামন আসে!
ওর এই কথাটা জানতে চাওয়াটা প্রবন্ধর ধারণার বাহিরে ছিল।নিজের বাড়িতে এসে পরবাড়ির খবরও জানতে চাচ্ছে সে।
প্রবন্ধ বলল-
-সবাই ভালো আছে।
.
দক্ষিণের জানালাটা দিয়ে কড়া বাতাস ঘরটাকে আরও শীতল করে তুলছে।উপমা উঠে গিয়ে ঘোমটার জেরটা আরেকটু টেনে জানালাটা আটকে দিল।থাকার প্রস্তুতি না নিয়ে আসায় চাদর সোয়েটার কিছুই আনা হয় নি বাসা থেকে।গ্রামাঞ্চলের শীত খুব তীক্ষ্ণ।প্রবন্ধ হঠাৎ খেয়াল করলো উপমা একটি চাদর নিয়ে এসেছে।চাদরটা প্রবন্ধর সামনে দিয়ে বলল-
-নেন।চাদ্দরটা গায়ে দেন।
বড্ড খেয়ালি মেয়ে।প্রবন্ধ চাদরটা হাতে নিলো।
প্রবন্ধ উপমার দিকে তাকিয়ে দেখলো উপমার কানে ফুলটার শোভা পাচ্ছে এখনো।উপমার কাজলে ঢেকে রাখা চোখ দুটো এখন প্রবন্ধকেই খুঁজে।
মেয়েটির কার্নিশ করা চোখে অদ্ভুত মহিমা।প্রবন্ধ একটু সরে বসলো। দাঁড়িয়ে থাকা উপমাকে বলল-
-দাঁড়িয়ে আছো কেন!বসো উপমা।
উপমা বিব্রত হলো না।চুপচাপ বসে পরলো।
প্রবন্ধ বলল-
-ঘোমটাতে কেন মুখ লুকিয়ে রাখো উপমা!তোমার লম্বা খোলা চুলে এই ফুলের শোভা পাওয়ার রহস্য জানার কি সৌভাগ্য হবে না আমার!
উপমা কোনো কথা না বলে ঘোমটা খুলে ফেলল।
প্রবন্ধ রোবটের মতো কিছুক্ষণ বসে রইলো।আর উপমার দিকে তাকিয়ে রইলো। পুতুল তার খুব মিষ্টি।এই মিষ্টত্ব মুখে যেন অন্যরকম এক মায়া জড়িয়ে আছে।এই মায়ার জ্বালে প্রবন্ধ বন্দি হয়ে আছে।
এতোদিন ঘোমটার আড়ালে যেই মুখ লুকিয়ে ছিল তা আজ উন্মুক্ত হওয়ায় উপমা লজ্জা পাচ্ছে।প্রবন্ধ ওর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকায় উপমার লাজুক মুখটা দেখার মতো।হঠাৎ ওর মা অন্যঘর থেকে 'উপমা' বলে ডাক দিতেই মেয়েটি যেন হাফ ছেড়ে বাচলো।লজ্জায় লাল করা মুখ তুলে প্রবন্ধর দিকে একটু মিষ্টি করে হেসে নিয়ে দৌড়ে অন্যঘরে চলে গেল।প্রবন্ধর মনে হচ্ছিল কিছুক্ষনের জন্য সে একটা সুন্দর স্বপ্নতে ডুবে আছে।সেই স্বপ্নতে পুতুলটাকে ইচ্ছে মতো দেখে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে।দেখেছে ওর রাঙা ঠোঁটের মিষ্টি হাসি,দেখেছে কানে ফুল পরা মুখটি,দেখেছে সেই লম্বা ঘন কুন্তল।
স্বপ্নের রেশ কাটিয়ে মেয়েটি যখন হাসি মুখে দৌড়ে গেল তখন এই ছটফট মনটা বুঝে নিয়েছে মেয়েটির মনে যত্ন করে লুকিয়ে রাখা অনেক কথা । এইটা কোনো স্বপ্ন নয়।এইটা বাস্তবতার ছোঁয়া।মেয়েটি ওর বন্ধুত্বের বাধনে প্রবন্ধকে বেধে নিয়েছে। ঘন পাপড়িযুক্ত মোটা কাজলে অংকিত কালো চোখগুলো এই ভাষাটা গুনগুন করে বলে গিয়েছে প্রবন্ধর চোখে।বিয়ের প্রথম দিন মেয়েটি যখন ভয়ে বিছানায় গুটিয়ে বসে রয়েছিল তখন মেয়েটির চোখে ছিল শুধু ভয়ের স্রোত।কিন্তু আজ সেই মেয়ে তার চোখে ভয়ের স্রোতকে বিদায় দিয়েছে।ওর চোখ মিষ্টভাষী।মিষ্টি কথা প্রবন্ধর কানে শুনিয়ে যাচ্ছে।
.
উপমা মায়ের সামনে গিয়ে মিটি মিটি হেসে বলল-
-মা... ডাকসো?
মা ওর বেশভূষা লক্ষ্য করলেন।কি আনন্দ মেয়ের মনে কে জানে!
তিনি ভ্রু কুঁচকে বললেন-
-হাসতাসোস ক্যান!কি হইসে!
উপমা একইরকম ভঙ্গিতে বলল-
-ওইডা বলা যাইবো না মা।তুমি ডাকসিলা ক্যান ওইটা বলো!
-কাম করতে ডাকসি।জামাই সাব কি খাইতে চায় জিগাইয়া আয়!
উপমা পিছনে ফিরতেই দেখলো তোড়া দাঁড়িয়ে আছে।উপমার কানে পরা ফুল সে লক্ষ্য করে বলল-
-আপা..আমারে ওই ফুলটা দিবা।আমিও কানে পইরা থাকমু।
-নাহ..এইটা দেওয়া যাইবো না।
-ক্যান!
উপমা অভিমানী চোখে বলল-
-এতো কিসু জিগায়তে হয় না।
এই বলে মুচকি মুচকি হেসে তোড়ার পাশ কেটে চলে গেল সে।
চলবে..
#পলক_হোসেন
āĻāϞ্āĻĒ āϏংāĻ্āϰāĻš āĻāϰা āĻāĻŽাāϰ āύেāĻļা। āϰোāĻŽাāύ্āĻিāĻ, āĻৌāϤিāĻ, āϰāĻŽ্āϝ, āĻৌāϤুāĻ āϏāĻš āĻšাāĻাāϰো āĻāϞ্āĻĒ āĻāĻে āĻāĻŽাāϰ āϏংāĻ্āϰāĻšে।
āĻŦুāϧāĻŦাāϰ, ⧝ āĻāĻāϏ্āĻ, ⧍ā§Ļā§§ā§
682{10}
āĻāϰ āĻĻ্āĻŦাāϰা āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰা
Rahathossain1010100@gmail.com
āĻāĻ āϏāĻŽā§ে
ā§:ā§Ēā§Ģ AM

āĻāϤে āϏāĻĻāϏ্āϝāϤা:
āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝāĻুāϞি āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ (Atom)
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ