"নিয়তি"
.
১
সূর্যের উষ্ণ তাপে শিশুটির গায়ে ফোসকা ফুটে গেছে, কোলাহলময় রাস্তায় ছুঁটে চলা শত শত গাড়ির হর্ণ অার পোড়া মোবিলের গন্ধে শিশুটির দম অাটকে অাসছে।
শিশুটির দুর্বল দৃষ্টিশক্তি বলছে "অামি কেন এখানে অার কিভাবে অাসলাম?"
শুধু ঝাপসা চোখে দেখতে পাচ্ছে চারপাশে ময়লা অাবর্জনা তাকে ঘিরে রেখেছে, শিশুটির পাশে দুটো কাক বসে অাছে। জিহ্বা বের করা কুকুরটাও রাগান্বিত চোখে শিশুটির দিকে তাকিয়ে অাছে। মনে হয় কাক অার কুকুর শিশুটির মৃত্যুর অপেক্ষা করছে, দেহ থেকে প্রাণ টা চলে গেলেই তারা ব্যস্ত হয়ে পড়বে তাদের ক্ষুধা নিবারণের কাজে।
শিশুটির একটু সামনের রাস্তায় গন্তব্যে ছুঁটে চলা মানুষ গুলো হঠাৎ থমকে যায়, কেউ কেউ দাড়িয়ে শিশুটির দিকে হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকিয়া থাকে।
কেউ বা মুখে ছিঃ ছিঃ করছে, কেউ বা বলছে কেমন মা যে তার সন্তান কে এভাবে ডাস্টবিনে ফেলে রেখে চলে যায়।
.
অাজ সকালে শিশুটি একটি দোলনায় শুয়ে ছিলো, মা শিশুর পাশেই বসে শিশুটির সাথে দুষ্টুমিতে মেতে ছিলো। হঠাৎ শিশুটি তার দুর্বল দৃষ্টি দিয়ে দেখতে পায় লম্বা একজন লোক হঠাৎ ঘরে প্রবেশ করলো, শিশুটির বুঝার বা বলার কোনো ক্ষমতা নেই। সৃষ্টিকর্তা শুধুমাত্র তাকে দৃষ্টি দিয়ে দেখার এক হ্রস্ব ক্ষমতা দিয়েছেন। বলার বা বুঝার ক্ষমতা এখনো তাকে দেয়া হয়নি। তবে লোকটি শিশুটির বাবা। তীক্ষ্ণতা ফুটে অাছে মুখে, অাজ তাকে প্রচন্ড উত্তেজিত মনে হচ্ছে।
.
হঠাৎ বাবা মা দুজনের মাঝে তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়, এক সময় তাদের মাঝে ঝগড়া হয় শিশুটিকে নিয়ে, শিশুটির জন্মে মনে হয় তার বাবা খুশি ছিলেন না। শিশুটির জন্মের এক বছর পর অাজ তার বাবা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে ডাস্টবিনে ফেলে দেয়ার কথা বলছে। মা বার বার অশ্রুসিক্ত চোখে বাচ্চার দিকে তাকায় অাবার পায়ের নিচের ফ্লোরের দিকে তাকায়। শিশুটা কিছুটা হলেও বুঝতে পারছে তার মা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। মায়ের চোখের অশ্রুজল গুলো টপ টপ করে ফ্লোরে পড়ছে।
দোলনার পাশে একটি টিয়া পাখি ক্ষীণ গলায় গান গেয়ে যাচ্ছে, মনোমুগ্ধকর গান! শিশুটি পাখির গান শুনে ঘুমিয়ে পড়লো।
প্রচন্ড গরম অার সূর্যের তীব্র তাপে শিশুটার ঘুম ভেঙ্গে যায়, তখন সে দেখতে পায় একটি ময়লার ডাস্টবিনে সে পরে অাছে।
.
হঠাৎ একটি লাল রঙ এর গাড়ি ডাস্টবিনের সামনে এসে থমকে যায়, সাথে সাথে একজন ভদ্রলোক গাড়ি থেকে নেমে বাচ্চাটির দিকে এগিয়ে অাসে, এই ভদ্রলোক বাচ্চাটিকে দেখে বিষাদগ্রস্ত হয়ে যায়।
ডাস্টবিনের ময়লা অাবর্জনায় বাচ্চাটার গা পুরো লেপ্টে অাছে, ভদ্রলোক তার দু হাত দিয়ে বাচ্চাটাকে কোলে তুলে নেয়।
গাড়িতে থাকা তোয়ালে দিয়ে বাচ্চাটির পুরো গা মুছে নিয়ে যায় তার বাড়িতে।
এই ভদ্রলোকের নাম অাশরাফ চৌধুরী, কদমতলীতেই তার বাড়ি, এই কদমতলী গ্রামের সম্মানী এবং ধনীব্যক্তিদের মাঝে তিনি অন্যতম।
মানুষটির মাঝে কোনো অহংকার নেই, একদম নিরহংকার একজন মানুষ। নিজেকে সব সময় অন্যের উপকারে লিপ্ত রাখে।
.
বাসায় ফিরে অাশরাফ সাহেব তার স্ত্রীকে সব খুলে বলে, তারপর তার স্ত্রী অনেক উৎফুল্ল হয়ে বলে
.
-বাচ্চাটাকে বাড়িতে এনে ভালোই করেছেন, অামি বিস্মিত হচ্ছি এটা ভেবে যে পৃথিবীতে এমনও মা অাছে যে তার গর্ভের সন্তানকে এভাবে ডাস্টবিনে ফেলে চলে যায়
.
-এটা রহস্য, তবে অাছে বলেই তো অাজ শিশুটির এ অবস্থা! যদি অার একটু দেরি হত, তাহলে দুটো কুকুর শিশুটিকে ছিড়ে খেত
.
-অাপনি অনেক ভালো একটি কাজ করেছেন, অামরা এই শিশুটিকে নিজের সন্তানের মত মানুষ করবো। অামরা যে ওকে ডাস্টবিন থেকে কুড়ে এনেছি সেটা ও যেন কোনদিন বুঝতে না পারে।
.
-হ্যা, কখনো বুঝতে দেয়া যাবেনা। অাজ থেকে ও নতুন পরিচয়ে বড় হবে, অাজ থেকে অামাদের দুটি সন্তান।
.
-হুমম, অাচ্ছা ছেলেটির নাম তো অামরা জানিনা। একটি নাম দেয়া দরকার
.
-হ্যা ঠিক বলেছো, কিন্তু কি নাম দেয়া যায়?
.
-উমমমমমমমমমমম.. অাজ থেকে ওর নাম 'অনয় চৌধুরী'
.
-বাহ্, খুব সুন্দর নাম দিয়েছো তোহ্!
.
অাশরাফ চৌধুরীর অারেকটি ছেলে অাছে, নাম "অজয় চৌধুরী"।
অজয়ের বয়স পাঁচ বছর, কিন্তু অজয় অনয়কে কখনোই দেখতে পারেনা। কারন তার বাবা মা একটু বেশিই অনয় কে অাদর করে, অনয় তো কুড়িয়ে পাওয়া ছেলে ওকে এত অাদর করে অথচ অামাকে খুব কম অাদর করে। এটা ভেবেই অজয় হিংসের অাগুলে জ্বলে মরে। তবুও ভালো চলছিলো সব কিছু, অনয় এবং অজয়ের ভালোবাসার কোনো ঘাটতি ছিলোনা। দুজনই সমপরিমাণ ভালোবাসার ছোঁয়ায় বড় হতে থাকে।
অাশরাফ এবং তার স্ত্রী অনয়কে কখনই ব্যতিক্রমী চোখে দেখতেন না, মা নিজের গর্ভের সন্তানের মত মায়া মমতায় অাগলে রাখে তাকে।
.
সব কিছুকে উপেক্ষা করে সময় চলতে থাকে তার নিজ গতিতে, সময়ের সাথে বড় হতে থাকে তারা দুজন।
অাজ বিশ বছর হয়ে গেছে, তারা দুজন কত বড় হয়ে গেছে। অনয় খুব মেধাবী ছাত্র, ছোট থেকে অনয়ের স্বপ্ন সে অনেক বড় একজন ডাক্তার হবে, বাবাও তার স্বপ্নকে উপেক্ষা করতে পারেনি, তাই তাে ছেলের স্বপ্ন পূরনের জন্য লেখাপড়া করাতে পাঠিয়ে দেয় দেশের বাহিরে।
অনয় যেদিন দেশের বাহিরে চলে যাবে সেদিন অজয়ের মুখে খুশির রাজ্য ভেসে উঠে, দ্বীর্ঘ বিশ বছর পর অাজ সে সব ফিরে পেয়েছে। এখন সে অার কোনো কিছু থেকে বঞ্চিত হবে না, সব কিছু নিজের ইচ্ছায় হবে। এইসব ভাবতেই সে তার প্রফুল্লতা ফিরে পেয়েছে।
.
২
এয়ারপোর্ট থেকে সোজা বেরিয়ে এসে অনয় একটি টেক্সির সামনে দাড়িয়ে অাছে, হলুদ রঙ এর টেক্সি গুলো রাস্তার পাশে লাইন ধরে দাড়িয়ে অাছে। প্রচন্ড গরম, প্রচন্ড রোদের তীব্র উত্তাপে মাথার মগজ যেন স্যুপ হয়ে অাছে। এই সুপ্য বড় বড় চাইনিজ রেস্টুরেন্ট থেকেও বেশি সুস্বাদু, একদিন কারো মাথা ফাটিয়ে খেয়ে টেষ্ট করে দেখতে হবে এর স্বাদ কেমন। অনয় একটি টেক্সির সামনে দাড়িয়ে চারপাশের পরিবেশ দেখতে। চারদিক টা কেমন যেন খাঁ-খাঁ করছে, কোলাহলময় রাস্তায় ধুলো উড়িয়ে ব্যস্ত হয়ে ছুঁটে চলেছে শত শত মানুষ। কারো কাঁধে ঝুলন্ত ব্যাগ, কারো হাতে ঝুলন্ত ব্যাগ। কেউ বা খালি হাতে ব্যস্ত হয়ে ছুঁটে যাচ্ছে নিজ গন্তব্যে।
গাড়ির পিপ-পিপ শব্দ অার মানুষের প্যাক-প্যাক কথার শব্দে কান অার মাথা একদম ঝিঁম ধরে যায়।
.
অনয়ের সামনে টেক্সির ভিতরে ড্রাইভার নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে।
এক সময় তো এই এয়ারপোর্টে টেক্সি পাওয়া প্রায় দুস্কর ছিলো, দু-চারটা টেক্সি থাকলেও তাদের ভাব দেখলে মনে হত তারা উড়জাহাজের পাইলট। কিন্তু এখন টেক্সির মেলা দেখা যাচ্ছে, সেই হিসেবে অাগের মত এখন তেমন কোনো ভাড়াও নেই, তাই তো নাক ডেকে ড্রাইভার রা নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে। বাংলাদেশের অধিকাংশ টেক্সি ড্রাইভারই শিক্ষিত, তাদের ইংলিশ বলা শুনে অাপনি হতভম্ব হয়ে যাবেন।
.
এদের মাঝে মাষ্টার্স কমপ্লিট করা অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেও অাছে, তাদের প্রতিভা প্রকাশের যদি একটি সুযোগ হয় তাহলে তাদের প্রতিভার অালোতে দেশ অালোকিত হয়ে যাবে। কিন্তু ঘুষ এবং ক্ষমতা যেখানে সীমাবদ্ধ, এইসব প্রতিভাবান ছেলেরা সেখানে তুচ্ছ।
অনয় টেক্সির জানালার কাঁচে কয়েকবার টোকা দিতেই ড্রাইবারের ঘুম ভেঙ্গে গেলো, ভাবলেশহীন মুখ অার ঘুমকাতুরে চোখে ড্রাইবার অনয়ের দিকে এমন ভাবে তাকালো মনে হয় অনয় হাতে একটি ছুড়ি দেখিয়ে বলছে যা অাছে সব দিয়ে দে নইলে এখনি এই ছুড়ি দিয়ে তোর পেট ফুটো করে দিব।
.
গাড়ি চলছে দুর্দান্ত গতিতে, অার কয়েক ঘন্টা পরই টেক্সি টা কদমতলী গিয়ে পৌঁছাবে। অাজ কত বছর পর অনয় তার স্বপ্ন পূরন করে দেশে ফিরেছে, এত বছর পর তার বাবা মা এবং বড় ভাই অজয় কে দেখতে পাবে, এবং তারা কত খুশি হবে অাজ অনয় কত বড় একজন ডাক্তার হয়েছে।
অনয় টেক্সির জানালা দিয়ে মুগ্ধ নয়নে রাস্তার পাশের পরিবেশ দেখে যাচ্ছে, চোখ যত দূর যায় সবুজ আর সবুজ, সব কিছু তলিয়ে অাছে সবুজের গভিরতায়। কৃষক জমির পাশে বসে হৃষ্টচিত্ত হয়ে ফসলের দিকে তাকিয়ে অাছে। তার মুখে মায়াবী হাসিরা উকি দিয়ে যাচ্ছে। সবুজ শ্যামলীর বুকে মুগ্ধ হয়ে পাখিরা উড়ে যাচ্ছে।
.
এই কয়েক বছরে দেশ কত পরিবর্তন হয়েছে, কদমতলীর এই রাস্তা দিয়ে এক সময় গাড়ি চলা তো দূর পায়ে হাটাও অসম্ভব ছিলো। কিন্ত অাজ এই বিশাল রাস্তাটা এখন পিচ ঢালা, এবং রাস্তার দু পাশে কত বড় বড় কদম গাছ। গাছের ডালে ঝুলে অাছে শত শত কদমফুল। এবং সেই গাছের ডালে ডালে নাম জানা অজানা পাখিরা ফুলের সুবাস নিচ্ছে, লুকুচুরি খেলছে। সত্যিই মনোমুগ্ধকর।
.
হলুদ রঙ এর টেক্সি টি কদমতলীর ফুটব্রিজে এসে থমকে যায়। এই যায়গার ও বেশ পরিবর্তন হয়েছে, হাটতে হাটতে যতদূর যাচ্ছে অনয় তত বেশি অাশ্চর্য হচ্ছে! এটা কি কদমতলী গ্রাম নাকি ওয়াশিংটনের একটি দৃশ্য।
কত বড় বড় ফ্যাক্টরি অার গার্মেন্টস, মাত্র পাঁচ ছয় বছরে এই গ্রামের এত পরিবর্তন সত্যিই অবিশ্বাস্য।
.
অনয় হঠাৎ থমকে যায়, হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে তার সামনের নির্মানাধীন একটি বাড়ির দিকে। অারে এখানেই তো অাশরাফ চৌধুরীর বাড়ি ছিলো, তাহলে এখানে এটা কেন হচ্ছে?
অনয় বিষাদগ্রস্ত হয়ে অাশেপাশে খুঁজতে থাকে সেই পুরোনো দালানবাড়িটি।
বেলা গরিয়ে যায়, সন্ধা ঘনিয়ে চারপাশ অন্ধকার হয়ে অাসে কিন্তু অনয়ের বাবা অাশরাফ চৌধুরীর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
অনয় খুব ক্লান্ত হয়ে একটি ছাউনির নিচে গিয়ে বসে পরে, কিছু সময় বিশ্রাম নেয়ার পর ভাবলো কাউকে অাশরাফ চৌধুরীর কথা জিজ্ঞাস করা দরকার। তিনি তো একজন পরোপকারী মানুষ ছিলেন, কেউ তো তাকে মনে রাখার কথা।
.
একজন বৃদ্ধলোক অনয়ের একটু সামনে দিয়ে হেটে যাচ্ছে, সন্তর্পণে অনয় বৃদ্ধটির সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করে অাশরাফ চৌধুরী নামে কাউকে চিনে কিনা।
.
-অাসসলামু অালাইকুম (অনয়)
.
-ওয়া অালাইকুমস সালাম
.
-অাচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করবো যদি কিছু মনে না করেন।
.
বৃদ্ধলোক খুক-খুক কাশি দিয়ে বলে "বলো বাবা কি জানতে চাও"
অনয়ের মুখে হাসির অাভা, সে একটু বিচলিত হয়ে অাঙ্গুল দুটো পশ্চিম দিকে তাক করে বলে
.
-ওই যায়গায় অাশরাফ চৌধুরী নামে এক ভদ্রলোকের বাড়ি ছিলো, এখন তো সেটা ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। অাপনি কি জানেন তিনি এবং তার পরিবার কোথায় অাছেন?
.
অনয়ের কাছ থেকে এমন প্রশ্ন শুনে বৃদ্ধটির মুখে বিষণ্ণ মেঘের ছাঁয়া জমে গেছে, মনে হয় তিনি এখনই হাউমাউ করে কেঁদে দিবে।
বৃদ্ধটির নিরাসক্ত চোখ দুটো ছল ছল করছে, দু হাত দিয়ে তার চোখ দুটো কচলাতে কচলাতে বলে
.
-তুমি কে বাবা?
.
অনয় লম্বা একটি নিঃশ্বাস নিয়ে ক্ষীণস্বরে বলে "অামি তার ছোট ছেলে অনয় চৌধুরী" বৃদ্ধটি এবার অনয়ের বুকে ঝাঁপিয়ে পরে হাউমাউ করে কাঁদা শুরু করে, বৃদ্ধটির কান্নায় অনয় বিস্মিত হয়ে গেছে। সে বুঝতে পারলো না বৃদ্ধটি কেন কাঁদছে।
কিছু্ক্ষণ পর বৃদ্ধটি কান্না জড়িত কন্ঠে বলে
.
-বাবা অামি তোমাদের বাড়ির দারোয়ান মফিজ মিয়া, চিনেছো?
.
অনয় হৃষ্টগলায় বললো
.
-অা..অা..অাপনি মফিজ অাংকেল? অার বাবা কোথায়?
.
বৃদ্ধ মফিজ মিয়া একটি দ্বীর্ঘশাস নিয়ে বলে
.
-তুমি যখন লেখাপড়ার জন্য দেশের বাহিরে পা রাখ, তখন তোমার বড় ভাই অজয় সে তার স্বাধীনতা ফিরে পায়। নিজের ইচ্ছে মত চলছিলো, অল্পদিনেই সে তার সীমারেখা অতিক্রম করে ফেলে! এতে সাহেব অজয়কে সাবধান হতে বলে। তুমি বাহিরে যাওয়ার দুই বছর উপক্রম হতেই অজয় বিয়ে করে, অজয়ের বউ সাহেব এবং তার স্ত্রীকে কখনই দেখতে পারতেন না। কেমন যেন বদমেজাজি ছিলো মেয়েটা, কথায় কথায় সাহেব এবং সাহেবার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে যেত। মাঝে মাঝে সাহেবার উপর হাতও তুলতেন, অজয় মেয়েটির ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে সব দেখেও না দেখার ভান করে এড়িয়ে যেত।
স্ত্রীর কথায় অজয় ধিরে শিরে সাহেবের সব কিছু নিজের নামে করে নেয়, অজয় যখন সব কিছু হাতিয়ে নেয় তখন সাহেব এবং সাহেবাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।
সেদিন রাতে প্রচন্ড ঝড় ছিলো, বৃষ্টি পড়ছিলো অনবরত। জানিনা সেই বৃষ্টি ভেজা রাতে তারা কোথায় গিয়ে উঠেছে, বাবা অনয় অামি সেই রাতে তাদের অনেক খুঁজেছিলাম কিন্তু পাইনি।
.
থমকে গেলেন মফিজ চাচা, অনয়ের চোখ দিয়ে অনবরত অশ্রুকণা গুলো গড়িয়ে পড়ছে, সে ঠিক বুঝতে পারছে না এই সময়ে তাকে কি করতে হবে। দেশে ফিরে এসে তাকে এমন কিছুর সম্মুখীন হতে হবে সেটা সে কখনোই উপলব্ধি করতে পারেনি। কত সুন্দর এবং সুখী একটি পরিবার, যে পরিবার অনয়কে পেয়ে সব কিছু পূর্ণতায় ভরে যাবে। পুরো বাড়িতে আনন্দধ্বনি বেজে উঠবে। তার বাবা খুশিতে তাকে জড়িয়ে ধরবে, খুশিতে মায়ের চোখে অশ্রুকণা জমা হবে।
কিন্তু নাহ্, এইসব কিছুই হয়নি। যা হয়েছে তা শুধু অনয়কে পাহাড় সমান কষ্ট দিয়েছে, এবং হতাশ করেছে।
.
৩
দেখতে দেখতে কেটে যায় দুটি বছর, তবুও কাটেনা অনয়ের বিষণ্ণতা। প্রতিনিয়ত অনয় খুঁজে বেড়ায় তাদের, অনয়ের কেন যেন মনে হয় তারা অনয়ের অাশেপাশেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু অনয়ের দৃষ্টির সামনে তারা পা রাখছে না।
অনয়ের চাকরি হওয়ার পর সে খুব ব্যস্ত হয়ে পড়ে, অনেক রোগির দায়িত্ব থাকে তার উপর। এই শত ব্যস্তততার মাঝে একটু সময় খুঁজে নিয়ে বেড়িয়ে পরে রাস্তায়, এই বুঝি তার বাবা গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো, এই বুঝি বাবা তাকে বুকে জড়িয়ে ধরলো।
রাস্তার পাশে বসে থাকা বৃদ্ধ বাবা বয়সি লোক দেখলেই গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে ছুঁটে চলে যায় তাদের সামনে। যখন দেখতে পায় সেখানে অন্য কেউ বসে অাছে তখন হতাশ হয়ে চলে যায় অন্য রাস্তার অন্য মোড়ে।
.
একদিন বিকেলে এক ফাঁকা রাস্তায় ধির গতিতে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে অনয়, সূর্যের উষ্ণ তাপের গরম হাওয়া হারিয়ে গেছে মেঘের অনুষ্ণ বাতাসের মাঝে।
নীল অাকাশের বুকে মেঘেরা গর্জন দিচ্ছে ক্রমাগত, এক ঝাঁক পাখিরা সেই মেঘমেদুর অাকাশ দিয়ে উড়ে যাচ্ছে নিজ গন্তব্যে।
কৃষকের মুখে হাসি টা অাজ দেখা যাচ্ছে না, চাষিরা মেঘাচ্ছন্ন অাকাশের দিকে তাকিয়ে অাছে অানমনে, মনে মনে পার্থনা করছে বৃষ্টি আজ যেন না অাসে।
.
হঠাৎ অনয়ের গাড়ি থমকে যায়, গাড়ির জানালা দিয়ে অনয় দেখছে রাস্তার পূর্ব পাশের একটি বট গাছের নিচে বসে অাছে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা দুজন, স্নিগ্ধশীতল বাতাসে দুজন থর-থর করে কাঁপছে।
অনয় গাড়ি থেকে নেমে হেটে যাচ্ছে বট গাছটির দিকে, গাছটির সামনে যেতেই বৃদ্ধটি রুগ্নস্বরে বলে
.
-অামার স্ত্রীর সরিরটা খুব খারাপ, প্লিজ অামাদের একটু হাসপাতালে নিয়ে যাবেন?
.
অনয় হতবুদ্ধি হয়ে যায়, দু চোখ দিয়ে গড় গড় করে গড়িয়ে পরছে অশ্রু।
বৃষ্টি শুরু হয়েছে, বৃষ্টির জল অার চোখের জলে মিলেমিশে একাকার।
অনয় নির্বাক, কিছু বলতে পারছে না সে, শুধু ছল-ছল চোখে তাকিয়ে অাছে।
এই বৃদ্ধ-বৃদ্ধা দুজনই তার বাবা-মা, যারা অনয়কে সেই ডাস্টবিন থেকে কুড়িয়ে এনে নিজের ছেলের মত মানুষ করিয়েছে।
অনয়ের মা অজ্ঞান অবস্থায় পরে অাছে,গায়ে হাত দিয়ে দেখে দুজনের গায়েই প্রচন্ড জ্বর।
অনয় দুজনকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় হাসপাতালে।
.
৪
অনয়ের মা বেডে শুয়ে অাছে, বেডের দু পাশে দাড়িয়ে অাছে অনয় এবং তার বাবা।
কিছু্ক্ষণ পর মায়ের জ্ঞান ফিরে অাসে, অনয় মায়ের পাশে হাত ধরে বসে অাছে। ছল ছল চোখ দুটো তাকিয়ে অাছে মায়ের মায়াবী মুখের দিকে। দুই বছরে মায়ের মায়াবী মুখটা বিলিন হয়ে গেছে, তবুও বিন্দু পরিমান মায়া কমেনি মুখ থেকে। এই দুই বছরে মনে হয় ঠিক মত খেতে পায়নি ঘুমোতে পারেনি। শুধু রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছে।
মা হঠাৎ অনয়ের বাবাকে ক্ষীণস্বরে বলে
.
-এটা তো অামাদের অনয়
.
বাবা সাথে সাথে কেঁদে দেন, অনয় তো কেঁদেই চলেছে অনবরত।
বাবা যখন বললো "দেখ অামাদের ছেলে কত বড় ডাক্তার হয়েছে" তখন অনয় বাবাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কাঁদে।
সাথে মাকেও জড়িয়ে ধরে অনয়, কান্নার শব্দে এই চার দেয়ালের রুমটি নিস্তব্ধ হয়ে যায়। তবে এটা দুঃখের নয়, সুখের কান্না, সব কিছু ফিরে পাওয়ার অানন্দের অশ্রুকান্না। সব কিছু পূর্ণতায় ছুঁয়ে যায় এই অশ্রুকণা গুলো।
সমাপ্ত
.
লেখাঃ Arif Mahamud
(Silent Writer)
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ