<3 #অবুঝ_ভালোবাসা <3 ৪র্থ পর্ব
নীলা আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে, চোখে মুখে প্রচন্ড ক্ষোভ। হাতে কেক কাটার ছুড়ি টা শক্ত করে ধরা!
সামনে দাড়িয়ে থাকা মেয়েটা আমার হাত না ছেড়েই কথা বলতে লাগলো.....
-আমি সামিহা, নীলার কাজিন। আপনি?
-আমি শ....শামীম
খেয়াল করলাম আমার মুখ দিয়ে কোনো আওয়াজ বের হলো না, যা বের হলো শুধু বাতাস। গলা শুকিয়ে কাঠ। কোনো কারনে মানুষ ভয় পেয়ে গেলে এরকম অবস্থা হয়! আমি ও কি তাহলে ভয় পাচ্ছি?
নীলা আমাদের সামনে এসে দাড়ালো। সামিহার হাত থেকে ঝটকা দিয়ে আমার হাত টা সরিয়ে নিলাম। মেয়েটা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। এমনটা কেন করলাম আমি নিজেও এ ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত নই।
- সামিহা এখানে কি করছিস? তোকে তোর আম্মু ডাকছে, যা.....
- তুই যা একটু পরে আমি আসছি
- না এখনই আয় নাহলে খালা তোকে বকবে....
এই বলে নীলা প্রায় জোর করেই তাকে আমার সামনে থেকে নিয়ে গেলো। সামিহা পেছনে ফিরে অসহায় দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো।
আমি খুব ভালো করেই জানি এটা সামিহা কে আমার সামনে থেকে সরানোর একটা উছিলা মাত্র। নীলা মিথ্যে বলেছে যেন মেয়েটা আমার সাথে কথা বলতে না পারে। (উফ আমি সব কিছু বুঝে ফেলি কেন!? :p )
অনুষ্ঠান শেষে রাত বারোটার পর ঘরে ফিরলাম। ক্লান্তিতে চোখ বুজে আসছে। পোশাক টা খোলার
অবশিষ্ট শক্তি (কিংবা ইচ্ছা) টুকু ও যেন নেই। এমন সময় একটা নাম্বার থেকে ফোনে কল আসলো। ভ্রু কুচকে মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকালাম। নাম্বার টা অপরিচিত! ফোন রিসিভ করতেই একটা পরিচিত মেয়েলি গলা ভেসে এলো......
-হ্যালো শামীম?
- হ্যা, কে বলছেন?
-আজ যার জন্মদিন ছিলো.....
-কে নীলা? তুমি আমার নাম্বার পেলে কোথায়?
-সেটা আপনার জানার দরকার নাই। ছাদে আসতে পারবেন একটু?
-মাথা খারাপ? রাত কয়টা বাজে হিসেব আছে? লোকে দেখলে কি বলবে?
-আমার এতো কিছু জানার দরকার নাই! আসতে বলেছি আসবেন ব্যাস!!
পরক্ষনেই লাইন টা কেটে গেলো। অনেকবার ফোনে ট্রাই করেও পেলাম না তাকে। কিছুতেই ফোন ধরছে না জেদি মেয়েটা!
আমার ও রাগ উঠে গেলো। সিদ্ধান্ত নিলাম যাবো না ছাদে, দেখি কি করে ও! এসব ভাবতে ভাবতে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম। ঘুম ভাঙতেই মোবাইলে তাকিয়ে দেখি দুুই ঘন্টা পার হয়ে গেছে। নীলার কথা মনে পড়লো। ও কি এখনো ছাদে আছে? এতক্ষন তো কখনোই থাকার কথা নয়। ওর কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ঘুমোতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসতে চাইছে না। মনটা খচখচ করছে। শেষমেষ ছাদে যাবো বলে মনস্থির করলাম.....
গুটিগুটি পায়ে নিঃশব্দে ছাদে গিয়ে উঠলাম। চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখি কেউ নেই। নেমে যাওয়ার আগে আরেকবার ভালো করে তাকাতেই দেখি আমার ধারনা ভুল। নীলা এখনো অপেক্ষা করছে আমার আসার জন্য। একটা কোনায় চুপচাপ বসে আছে! কিন্তু ওর বসার ভঙ্গি দেখে ভয় পেয়ে গেলাম। বিপজ্জনক ভাবে রেলিংয়ের সাইডে পা ঝুলিয়ে বসে আছে সে। যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে....
আমি ওর পেছনে গিয়ে কয়েকবার ডাক দিলাম সাইডে থেকে চলে আসতে। কিন্তু কিছুতেই সে আমার কথা শুনছে না। শেষমেষ বাধ্য হয়েই তাকে জাপটে ধরে কোলে তুলে নিয়ে আসতে হলো.....
মেয়েটার চেহারায় এখনো পার্টি সাজ আছে। চেহারায় হাল্কা মেকআপ, ঠোটে লাল লিপ্সটিপ, পরনে কালো শাড়ী। সকল কবি-সাহিত্যিকদের গল্পের নায়িকা সুন্দরী হয় আর তারা সবসময় লাল নাহলে নীল শাড়ি পরিহিত থাকে। যা দেখে নায়ক প্রেমে পড়ে। কিন্তু সাহিত্যিকগণ কি কখনো দেখেছেন একজন সুন্দরী রমনী কালো শাড়ী পড়লে তাকে কি রকম দেখায়? আমার মন চাইছে তাদের ডেকে এনে দেখাই! স্বর্গের অপ্সরী ও নিলাদ্রী কে দেখে তিনবার 'সুবাহানআল্লাহ' বলবে।
নীলা এখনো আমার কোলেই আছে। সময় যেন থমকে গেছে। আইনস্টাইনের থিওরী অব রিলেটিভিটির ভাষায় একে টাইম ডিল্যুশন বলে। এর কার্যকারিতা যখন শুরু হয় তখন মনে হয় সময় স্থির হয়ে আছে।
চাঁদের ম্লান আলো তার মুখে পড়ছে, দেখলাম মেয়েটার চোখের পাতা থিরথির করে কাপছে। নাহ! সময় থেমে যায় নি তাহলে.... চলতে শুরু করেছে। তবে স্বাভাবিক ভাবে নয়, সিনেমার স্লো মোশন এফেক্টের গতিতে....
মনে হচ্ছে অনন্তকাল ধরে তার চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকতে পারবো আমি। আমার ধারনা কোলে যে মেয়েটা শুয়ে আছে সে নিলাদ্রী নয়, রুপকথার পাতা থেকে উঠে আসা স্লিপিং বিউটি.....
এতক্ষন এক ধরনের ঘোরের মধ্যে ছিলাম আমি। হঠাৎ সংবিৎ ফিরে এলো। কোল থেকে নামিয়ে দিলাম তাকে। নামাতে না নামাতেই সে আমাকে জড়িয়ে ধরলো! জড়িয়ে ধরে সে কি কান্না.....
নীলার মতো মেয়েদের যেমন প্রচন্ড জেদ থাকে তেমনি থাকে বুক ভরা ভালোবাসা। সেই ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ করতে গিয়ে তারা যখন তখন কেঁদে ফেলে। এদের চোখে সম্ভবত অশ্রু ভরাই থাকে। স্থান বুঝে তা বাধ ভেঙে বেরিয়ে আসে। হুমায়ূন আহমেদ তার সাহিত্যে এ ধরনের মেয়েদের 'অশ্রুকন্যা' হিসেবে অভিহিত করেছেন.....
-নীলা কাদছো কেন?
-আপনি এতো দেরিতে আসলেন কেন?
-ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, তুমি তো চলে গেলেই পারতে?
-আমার মন বলছিলো আপনি আসবেন, ঠিকই এসেছেন....
-কেন ডেকেছিলে আমায়?
-আপনার উপহার টা খুব খুব খুব পছন্দ হয়েছে আমার! অংখ্য ধন্যবাদ....
-আরে ধুর কি বলো! ওটা নিতান্তই একটা সস্তা জিনিস। দাম মাত্র....
নীলা মুখ চেপে ধরলো আমার।
-উপহার কে কখনো মূল্য দিয়ে বিচার করতে নেই! দাম যতই হোক সেটা আমার কাছে কোটি টাকার চেয়ে দামী....
মেয়েটা খুব রহস্য করে কথা বলে। আমার কাছে হয়তো চাইনিজ কিংবা হিব্রু ভাষার মর্ম ভেদ করা সম্ভব। কিন্তু ওর কথার আগা-মাথা বোঝা কিছুতেই সম্ভব না। একটা সস্তা শো পিস কেন কোটি টাকার চেয়ে দামী হবে সেটা কিছুতেই আমার মাথায় ঢুকলো না.....
-আরেকটা কথা! আপনি তখন সামিহার হাত ধরে কি কথা বলছিলেন? প্রপোজ টপোজ করে বসেন নি তো আবার?
-নাউযুবিল্লাহ! সেই তো আমার কাছে এসে পরিচিত পরিচিত হতে চাইলো....
-একদম পাত্তা দেবেন না ওকে। ছেলে দেখলে ছোকছোক করা ওর স্বভাব।
আমি ওর কথায় না হেসে পারলাম না। আমি জানি সামিহা তার কাজিন হলেও হলেও ওদের সম্পর্কটা বন্ধুর মতো। মেয়েদের বন্ধুত্ব যতই গভীর হোক না কেন তাতে কিছুটা হলেও হিংসা থাকবেই। সেটা হতে পারে গায়ের রং নিয়ে, কে কতোটা ভালো ছাত্রী তা নিয়ে কিংবা বয়ফ্রেন্ড নিয়ে! এসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে তাদের মাঝে দ্বন্দ থাকে। কিন্তু এদের মাঝে অনেকেই একে অপরের জন্য জান ও দিতে পারে। কি অদ্ভুদ! মেয়েদের সাইকোলজি বোঝা টা ফিজিক্সে পিএইচডি করার চেয়েও কঠিন....
সামিহা মেয়েটা অনেকদিন বাঁচবে বলতে হবে। কথা শেষ হতে না হতেই দেখি ও দরজার সামনে এসে দাড়িয়ে আছে!
ওকে দেখে চমকে গেলেও দ্রুত সামলে নিলাম....
-এই তোকে না বললাম এখানে না আসতে?
নীলার কন্ঠে স্পষ্ট বিরক্তি....
-কি করবো এতো রাত হয়ে গেলো অথচ তুই ঘরে ফিরছিলি না তাই দেখতে এলাম বেঁচে আছিস না মরে গেছিস!
-দেখছিস ই তো বেঁচে আছি এখন যা!
সামিহা মুখ টা কালো করে চলে গেলো....
এতক্ষনে নীলা আমার সাথে কথা বলার সুযোগ পেলো।
-কাল কি আপনি ফ্রি আছেন?
-কেন বলো তো?
-আপনার সাথে একটু বের হতাম....
-কোথায় যাবে?
-নিরিবিলি কোনো পরিবেশে, যেখানে সামিহা নামের কোনো কাবাবের হাড্ডি নেই! :/
-এক সপ্তাহ অফিসে যাই নি, মায়ের শরীর খারাপ ছিলো। অনেক কাজ জমে আছে। আগামীকাল সারাদিন বিজি থাকতে হবে। আমি দুঃখিত নীলা..... :(
মেয়েটা মন খারাপ করে চলে গেলো। পেছন থেকে ডাকলেও কোনো কথা শুনলো না।
সকালে অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি এমন সময় শুভ র কল আসলো। শুভ আমার অফিস কলিগ, খুব ভালো বন্ধু ও।
-কিরে শামীম? অফিসে আসছিস না কেন?
-মায়ের শরীর খারাপ ছিলো রে! সমস্যা নেই আমি আজ অফিসে আসবো....
-দ্রুত আয়! তোর পাশের টেবিলে নতুন কলিগ এসেছে। তাকে কাজ বুঝিয়ে দিতে হবে। উপর তলা থেকে বারবার এসে কাজ বোঝানো আমার পক্ষে সম্ভব না।
অফিসে ঢুকেই আমার টেবিলে ফাইল-পত্র নিয়ে বসে পড়লাম। একটু পর শুভ এসে উপস্থিত।
-শামীম পরিচিত হয়ে নে। উনি আমাদের অফিসে নতুন জয়েন করেছেন, তোর পাশের টেবিলেই ওনার ডেস্ক।
দেখলাম ওর পাশে একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে। চোখে কালো ফ্রেমের চশমা, লম্বা ছিপছিপে গড়ন, গোলগাল চেহারা, গাত্রবর্ণ লালচে ফর্সা। দেখলে হাই স্কুলের টিচারদের কথা মনে আসে।
-আসসালামুআলাইকুম, আমি তামান্না আফরোজ রিয়া।
বলেই হাতটা বাড়িয়ে দিলো।
আমি হাতটা ধরার আগে ডানে বামে দেখে নিশ্চিত হয়ে নিলাম নীলা আছে কি না! :p
না নেই, হাত টা তাহলে ধরা যায়....
-আমি শামীম, পরিচিত হয়ে ভালো লাগলো.... :)
-রিয়া, অফিসের যা টুকটাক কাজ আছে শামীম তোমাকে বুঝিয়ে দেবে। শুভ বললো...
মেয়েটা বেশ তড়িৎকর্মা। একটু দেখিয়ে দিলেই সব বুঝে যায়। এমন কলিগের সাথে কাজ করেও মজা আছে। শুধু তাই না, রিয়া অনেক ফ্রেন্ডলি। কথা বলার সময় সারাক্ষন মুখে হাসি লেগেই থাকে!
অফিস শেষে শুভ আমাকে আর রিয়াকে তার গাড়িতে উঠতে বললো। যেহেতু আমরা একই রাস্তা দিয়ে যাবো তাই আপত্তি করলাম না। মাঝপথে সে একটা রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি থামালো। কারন জানতে চাইলে বললো তার নাকি খুব ক্ষিদে পেয়েছে। অবশ্য এমন কোনো মূহুর্ত নেই যখন তার পেটে খিদে থাকে না। কখনো কম কখনো বেশি। তার সাথে বন্ধুত্বের সুবাদে এই বিষয় টা আমার অজানা নয়।
রেস্টুরেন্ট টা বেশ বড়। কর্নারের একটা টেবিলে বসলাম আমরা তিনজন। ওয়েটার কে ডেকে একগাদা খাবার অর্ডার দিলো পেটুক শুভ। এত খাবার কে খাবে আমার মাথায় ধরছে না।
কিছুক্ষন পর ওয়েটার এসে খাবার দিয়ে গেলো। খাবারের ওপর প্রায় ঝাপিয়ে পড়লো শুভ। কিন্তু বেচারা বেশিক্ষন চালিয়ে যেতে পারলো না। তার বউ ফোন দিলো। আসার সময় স্কুল থেকে বাচ্চাকে নিয়ে আসার দায়িত্ব পড়লো বেচারার উপর। সে আমাদের কে বসিয়ে রেখে চলে গেলো। আমি পড়ে গেলাম দারুন অস্বস্তি তে। আমি রিয়া কে ভালো ভাবে চিনি না সেও আমাকে চেনে না। আজই তো পরিচয় হলো.....
পরিবেশ হাল্কা করার জন্য মেয়েটা আলাপ জমাতে চেষ্টা করলো। কিছুক্ষনের মধ্যেই কথা-বার্তা বেশ জমে উঠলো। এখন আর তাকে অপরিচিত মনে হচ্ছে না। যে কোনো পরিস্থিতি নিজের কন্ট্রোলে নিয়ে আসার এক ধরনের ক্ষমতা আছে তার। দুজনের মধ্যে কথা তো চলতে থাকলোই পাশাপাশি আমরা হাসি-ঠাট্রায় ও মেতে উঠলাম।
কিন্তু আমার হাসি পরিনত হলো আতঙ্কে যখন রেস্টুরেন্টের দরজা দিয়ে সামিহা আর নীলা কে ভেতরে প্রবেশ করতে দেখলাম। পরিস্থিতি হয়তো সামাল দিতে পারতাম কিন্তু সমস্যা হলো আমার চোখে চোখ পড়ে গেলো তার...... 😨😭😳
(পঞ্চম পর্বে সমাপ্য)
সবাইকে ধৈর্য্য ধরার জন্য ধন্যবাদ। আশা করি আগামী ২/১ পর্বের মধ্যে গল্প শেষ করতে পারবো!
কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেন না...... :)
লেখক: Saiful Shamim (হিমুর জোছনা রাত)
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ