āĻļāύিāĻŦাāϰ, ā§Ģ āφāĻ—āϏ্āϟ, ⧍ā§Ļā§§ā§­

671{3}

গল্পের ৩য় অংশ
দিয়া বাড়ি

পরের দিন বিকেল চারটা বাজে মিরপুর
পৌছিয়েই সাফা আপুর নাম্বারে ফোন
দিলাম। ফোনটা ধরেই উনি বলে উঠলো,
এসে পড়েছো?
"জ্বি!
"কই আছো এখন?
"এইতো বাস থেকে নেমে রাস্তার ওই পাড়
দাঁড়িয়ে আছি।
"ওয়েট আমি আসতেছি।
.
মিনিট দশেক ওয়েট করার পর খেয়াল
করলাম মেয়েটা রাস্তা পার হচ্ছে। ধূসর রং
এর একটা শাল গায়ে জড়ানো। চুল গুলো
ছাড়ানো ছিলো আর বড় ফ্রেম এর একটা
সাদা চশমা পড়নে। দূর থেকে চশমার
গ্লাসটা চমকাচ্ছিলো।
.
মেয়েটা আমার সামনে এসেই বলে উঠলো,
কেমন আছো?
"জ্বি ভালো।
"কেউ কিছু জিজ্ঞাস করলে তার প্রতি
উত্তরের সাথে তাকেও কিছু জিজ্ঞাসা
করতে হয়।
"জ্বি জানি।
"তো জিজ্ঞাসা করলে না কেন?
"গতকাল ফোনে আপনাকে বলেছিলাম,
কেমন আছেন? আপনি কথাটা এড়িয়ে দিয়ে
আমার থাকার ব্যবস্থা হয়ে গেছে এই
বেপারে কথা বলা শুরু করেছিলেন। তাই
ভাবলাম আপনি এই প্রশ্নটার উত্তর দিতে
ইচ্ছুক না, এর জন্যই জিজ্ঞাস করি নাই।
"আমি শুনি নাই। শুনলে ঠিকি বলতাম। আর
তাছাড়া ইচ্ছার অনিচ্ছার এখানে প্রশ্ন
আসে না। এখন থেকে প্রতিদিনই এক সাথে
উঠা বসা হবে।
.
কথাটা বলেই মেয়েটা তার থাকা টিসুটা
দিয়ে তার নাকে একটু চাপ দিলো।
মেয়েটার নাকটা খুব লাল দেখা
যাচ্ছিলো। বুঝাই যাচ্ছিলো খুব ঠান্ডা
লেগেছে মেয়েটার।
.
"চলো!
"কোথায়?
"তোমার রুমের বেপারে না কথা বল্লাম?
সামনেই ওই বাড়িটা ওইখানে যেয়ে ওদের
কাউকে ফোন দেই। তোমাকে নিয়ে রুমটা
দেখিয়ে দেক।
"হুম চলেন।
.
কথাটা শেষ করেই দুইজনে হাটা ধরলাম।
প্রায় মিনিট দশেক হাটার পর সেইখানে
যেয়ে পৌছালাম। তারপর সাফা আপু তার
পাস থেকে মোবাইলটা বের করে কাকে
যেনো ফোন দিয়ে নিচে নামতে বল্লো।
.
কিছুক্ষণ পর একটা তরুন যুবক নিচে নেমে
এসে মেয়েটাকে বলে উঠলো, কি বেপার
হঠাৎ এইখানে আসলা?
"তোমাকে বলছিলাম না, একজন তোমাদের
সাথে থাকবে?
"হুম!
" ও থাকবে।
ছেলেটা আমাকে দেখে বল্লো, চলো ব্রো
রুমটা দেখে নেও। আর এক রুমে তিনজন করে
কোনো সমস্যা হবে না তো!
"না সমস্যা হবে কেনো?
এই বলেই যেই ছেলেটার সাথে যেতে
লাগলাম ঠিক তখনি সাফা আপু বলে উঠলো,
আমি দাড়ালাম তুমি রুমটা দেখে
তাড়াতাড়ি আসো।
.
রুমে ঢুকে দেখলাম রুমের ভিতরে আরো
তিনটা ছেলে বসে আছে। আমাকে দেখে
ওরা আমাকে নিয়ে আসা পাশের
ছেলেটাকে বলে উঠলো, কিরে মামা!
এইডারে কইত্তে আনলি?
"সাফা নিয়া আসছে। আমাদের এইখানেই
থাকবে আর আমাদের সাথেই কাজ করবে।
.
ওই ছেলেগুলার মধ্যে একটা ছেলে আমাকে
বলে উঠলো, ভাই প্যারা দিতে দিতে
আপনারে শেষ করে ফেলবো। জাইনা শুইনা
এই কুমিরের ফাঁদে পইড়েন না।
ওদের কথা শুনে আমি একটু হাসলাম। তারপর
রুমটা একটু ভালো করে দেখলাম। আর
ভাবতে লাগলাম, মেয়েটাকি খুব কঠোর!
সবাই কি সব বলছে!
তারপর আমি ওদের কাছ থেকে বিদায়
নিয়ে বাহিরে চলে আসলাম।
.
বাহিরে এসে দেখি মেয়েটা কানে ইয়ার
ফোন গুজছে। আমাকে দেখেই ইয়ারফোনটা
খুলে মোবাইলটা আর ইয়ারফোনটা তার
পাসের ভিতর রেখে বল্লো, কি বেপার রুম
পছন্দ হইছে?
"হুম পছন্দ হইছে।
"আশা করি এখানে থাকতে তোমার বেশি
সমস্যা হবে না! কোনো সমস্যা হলে
আমাকে
জানাবা, আমি সেইটা দেখবো।
"ঠিক আছে আপু।
"চলো, আমাদের বাসার দুই তালায় আমাদের
ছোট একটা অফিস আছে ওইখানে বসে কথা
বলি।
"হুম চলেন। আর আপু আমাকে এতোটা হেল্প
করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
"এতো বার বার আপু আপু বলতে হবে না।
আমি
তোমার আহামরি বড় না যে আপু বলেই
ডাকতে হবে। এখন থেকে নাম ধরেই ডাকবা!
ওরা সবাই আমাকে নাম ধরেই ডাকে। ওদের
মধ্যে একজন বাদে সবাই থার্ড ইয়ারের
ছাত্র। সো, নাম ধরেই ডাকবা, আর হুম! তুমি
করে বলবা আমরা এইখানে সবাই কাজের
জন্য আসছি। এই জিনিসটা বুঝতে হবে।
"আচ্ছা ঠিক আছে।
"এখন চলো সামনেই আমার বাড়ি।
.
আর কিছু না বলে দুইজন হাটতে লাগলাম।
ম্যানেজমেন্ট এর ভাষায় একটা কথা আছে,
প্রতিটা টিমের এরেঞ্জম্যান্ট করার জন্য
একজন সবল,দক্ষ ব্যক্তি প্রয়োজন। যে
কিনা
তার টিমের কর্মীদের সকল সুযোগ সুবিধা
দেখবে। সাফার মাঝেও আমি সেই গুণটা
দেখতে পাচ্ছিলাম। হয়তো একটু মুড নিয়ে
থাকে মেয়েটা তবে এই দিকটা দিয়ে
পুরোপুরি পার্ফেক্ট।
.
সাফাদের বাসাটা ছয় তালা ছিলো। বড়
লোক ঘরের মেয়ে ওকে দেখলেই বোঝা
যায়। এই টাইপের মেয়েগুলার চাহিদার
পরিমানটা একটু বেশিই থাকে। আর এদের
চয়েজটা ও হাই লেভেলের হয়। উপরের
লেভেল এর মেয়ে বলে কথা!
.
দুই তালা উঠার পর একটা ফ্লাটের ভিতর
ঢুকলাম। ফ্লাটের এক রুম অফিস হিসাবে খুব
সুন্দর করেই সাজিয়েছে মেয়েটা।
আরেকটা রুম ছিলো সেইটা খালি। দুই জনে
চেয়ারে বসলাম। বসার পরেই মেয়েটা
আমাকে বলে উঠলো, চা নাকি কফি খাবা?
"না ঠিক আছে। কিছু খেতে হবেনা।
আমার কথাটা শুনেই মেয়েটা ওর ফোন বের
করে কাকে যেনো ফোন দিয়ে বলে উঠলো,
দুই তালায় দুইটা কফি নিয়ে আসোতো।
.
কিছুক্ষন পর একটা ছেলে এসে কফি দিয়ে
চলে গেলো। আমি মেয়েটার দিকে
তাকিয়ে আছি। মেয়েটা এমন কেন! বল্লাম
কিছু খাবোনা। তবুও কফি আনিয়েছে।
মেয়েটা আমার দিকে কফির মগটা বাড়িয়ে
দিয়ে বলে উঠলো,ধরো খাও।
আমি আর কিছু না বলে মগটা ওর হাত থেকে
নিলাম।
.
মেয়েটা বার বার টিসু দিয়ে নাকে চাপ
দিতে লাগলো। খুব মারাত্মক সর্দি
লেগেছে দেখেই বুঝা যাচ্ছে। মেয়েটা
কফির মগে একটা চুমুক দিয়ে আমাকে বলে
উঠলো, রুম দেখতে যাওয়ার পর আমার
সম্পর্কে ওরা কি বল্লো?
কথাটা বলেই মেয়েটা আবার মগে চুমুক
দিলো। আমি ভাবতে লাগলাম ওরা আবার
আমাকে কি বলবে? মেয়েটা আমাকে
আবার বলে উঠলো, খুব প্যারা দেই আমি
বলে নাই?
.
একি! মেয়েটা এইটা কি করে বুঝলো! আমি
এখন কি বলবো!
আমি কিছু বলার আগেই মেয়েটা আমাকে
আবার বলে উঠলো, হুম! আমি খুব প্যারা
দেই। ওরা আমার সম্পর্কে যা বলছে সবি
সত্যি বলেছে। আমাকে এখনি না করে
দিতে পারো। আমার টিমে না থেকে
আমাদের গ্রুপের অন্য কারো টিমে জয়েন
করতে পারো।
"কবে থেকে জয়েন করবো আমি?
.
আমার কথাটা শুনে মেয়েটা কফির মগে চুমুক
দিতে যেয়েও থেমে গেলো। ওর মুখ থেকে
এরকম কথা শোনার পরেও যে আমি ওর টিমেই
থাকবো সেইটা শোনে মেয়েটা অনেকটা
আশ্চর্য হয়ে গেছিলো। আমিও ওকে কিছু
বলার সুযোগ না দিয়ে আবার বলে উঠলাম,
সামনের শনিবার আমি আমার জিনিসপত্র
নিয়ে চলে আসতেছি। রবিবার থেকে কাজে
জয়েন করতে চাচ্ছি!
মেয়েটা নাকটা একটু ভিতরে টান দিয়ে বলে
উঠলো, ঠিক আছে।
"আর শুনেন! সরি শুনো! খুব সর্দি লাগছে
তোমার দেখা যাচ্ছে। কাপূড় চিনো?
"ওই যে জামা কাপড়ের ভিতরে যে সাদা
সাদা বিচ্চির
মতো রাখে ওইগুলা?
"হুম। ওইগুলা দুই পিছ নিয়ে যেই বালিশে শোও
সেটার ভিতরে রেখে ঘুমাবা না হলে উন্নায়
বেধে রাখবা। কিছুক্ষণ হাচ্চি আসবে। পরে
সর্দিটা ঠিক হয়ে যাবে।
"আচ্ছা ঠিক আছে।
"আমি কি এখন উঠতে পারি?
"হুম! শিউর।
তারপর আমি মেয়েটাকে আর কিছুনা বলে
বাহিরে বের হয়ে গেলাম।
.
মেয়েটা আসলেও বিশ্বাস করতে পারেনি যে
আমি ওর টিমে এতো কিছু শোনার পরো কাজ
করবো। আমার কথা শোনার পর মেয়েটার
চেহারাটা পুরো মিকি মাউস এর মতো
হয়েগেছিলো। জাষ্ট ওর নাকটা লাল না হয়ে
কালো হয়ে গেলেই ওকে পুরো মিকি মাউস
মনে হতো।
.
আরো দুইটা দিন কেটেগেলো। মনে হচ্ছে
সময়গুলো কেমন করে যেনো দৌড়াচ্ছে। এই
কয়েকটা দিন ধরে মা সব আমার প্রিয় খাবার
গুলোই রান্না করছে। আজকেও দুপুরে খেতে
যেয়ে দেখলাম মা মুড়িঘণ্ট, বেগুন ভাজা,
কয়েক পদের ভর্তা রান্না করেছে।
.
খাওয়া শেষে রুমে যেয়ে ফ্যানটা ছেড়ে
বসলাম। আজকে একটু বেশিই খেয়ে ফেলছি
তাই খুব গরম লাগতেছে। যেই বিছানায়
হেলান দিতে যাবো ঠিক তখনি মোবাইলটা
বেজে উঠলো। মোবাইলের স্কিনে তাকিয়ে
দেখি সাফা ফোন করেছে। মেয়েটার
নাম্বারটা মোবাইলে সেভ করা ছিলোনা।
কিন্তু লাষ্টের দুইটা ডিজিট মনে ছিলো।
তারপর আমি কিছুনা ভেবে ফোনটা রিসিভ
করে বলে উঠলাম, কেমন আছো?
"এইতো ভালো তুমি?
"ভালো।
"কি করো?
"এইতো খেয়ে উঠলাম মাত্র। তুমি?
"এইতো বসে আছি। আজ ক্যান্টনমেন্টে কাজ
পড়েছেতো। তাই বেশি কাজ থাকেনা এই
টাইমে।
"ওহ! কিছু বলবা?
"হুম। ধন্যবাদ দেওয়ার জন্য ফোন করে ছিলাম।
সর্দিটা চলে গেছে তোমার ট্রিটমেন্টের
ফলে
"দূর!এটা আবার কিসের ট্রিটমেন্ট? আর
ধন্যবাদের কোনো প্রশ্ন আসেনা।
"তবুও উপকারতো করেছো তাই না!
"হুম!
" শনিবারে তো এসে পড়বা তুমি তাই না?
"হুম। আসার আগে ফোন দিবো তুমি ওদের
আগে থেকে বলে দিও।আমি রুমে উঠবো যে।
"আচ্ছা ঠিক আছে। এখন রাখি লাঞ্চ করবো।
"ওকে।
কথাটা বলেই ফোনটা কেটে দিলাম। আর ওর
নাম্বারটা সাফা নামে সেভ না করে মিকি
মাউস নামেই সেভ করলাম।
.
সাদিয়ারো একবার সর্দি লেগেছিলো খুব।
সেইদিন মেয়েটা আমাকে ফোন দিয়ে
বলেছিল, আমি মনে হয় আর বাঁচবোনা।
"কেন?
"খুব সর্দি লাগছে।
ওর কথা শুনে আমি হেসে উঠেছিলাম। তারপর
ওকে বল্লাম কাপূড় বালিশের নিচে রেখে
শুয়ে থাকো,ওইটার ঘ্রাণে খুব হাচ্ছি আসবে
পরে ঠিক হয়ে যাবে। মেয়েটা আমার কথা মত
শুনে উপকারো পেয়েছিলো। তারপর আমাকে
ফোন দিয়ে কত কিছু বল্লো, আমার বাবুটা
এতো কিছু জানে কেমনে, তুমি আর কোন
কোন রোগের ট্রিটমেন্ট দিতে জানো!
.
ওর কথাগুলো মনে করতে না চাইলেও মনে
পড়ে যায়। কেন এমনটা করলি আমার সাথে!
মন থেকেইতো খুব ভালবাসতাম। তোর এই রং-
তামাসা গুলো কি, শুধু আমাকে মিথ্যা সুখ
দেওয়ার জন্যই ছিলো! দোয়া করি সুখেই
থাক!
.
দেখতে দেখতে দিনগুলো কেটে গেলো। আজ
শনিবার। আজকেই মিরপুর চলে যাবো।
সকালে রেডি হয়ে নাস্তা খেয়ে ছোট একটা
প্রাইভেট কার ভাড়া করে নিয়ে আমাদের
বাড়ির সামনে চলে আসলাম। আমার যা যা
লাগবে সব কিছু গতকালি প্যাকিং করে
ফেলেছিলাম। বইগুলোও সাথে করে
নিয়েছিলাম। গতকাল রাতেই বাবা এসে
হাজার চারেক টাকা আমাকে দিয়ে বল্লো,
সাবধানে থেকো। কাজের প্রতি মন দিও।
আমি জানি তুমি পারবে।
.
তারপর গাড়িতে আমার সব জিনিসপত্র
উঠিয়ে। যেই মার দিকে তাকাবো তখনি
দেখলাম সে মন মরা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
তাকে একটু হাসানোর জন্য বলে উঠলাম,
তোমার খেয়াল রেখো। আমি ছাড়াতো
তোমার কেউ খেয়াল রাখে না। ঘরেতো
আরেক জন থাকে উনিতো লাখ সাহেব।
উনারো খেয়াল রেখো।
"তুই আর ভালো হবিনা! যা সাবধানে থাকিস।
কথাটা বলেই আমার গালে একটু হাত রেখে
একটু হেসে উঠলো। বাবার দিকে তাকিয়ে
বল্লাম, আমি আসি!
কথাটা বলেই গাড়িতে উঠে পড়লাম।
.
বাবা যে মার খেয়াল রাখেনা তা ভুল।
বাবাও মার অনেক খেয়াল রাখে। আমি
বাবাকে রাগানোর জন্যই এমনটা করি। বাবা
তা ভালো করেই জানে। এইতো কিছুদিন
আগের কথা আমি রাতে একটু বাহিরে যাবো
তখন তাদের রুমি ফুঁকি মেরে দেখি বাবার
মোবাইলে ইয়ারফোন লাগিয়ে বাবা আর মা
একসাথে গান শুনছে। এই বয়সেও তাদের
রসিকতার প্রেমের দৃশ্য দেখেছিলাম।
.
কথাটা ভাবতে ভাবতে নিজে নিজেই হেসে
উঠলাম। তারপর পকেট থেকে মোবাইটা বের
করে সাফাকে ফোন দিলাম। ফোনটা ধরেই
মেয়েটা আমাকে বলে উঠলো, রওনা দিছো?
"হুম। আর ঘন্টা খানিক লাগবে পৌছাতে।
"আজ এরিয়া ভিত্তিক কাজতো,ওরাতো সবাই
কাজে বের হয়ে গেছে। আর রুমের চাবি
আমার কাছে দিয়ে গেছে। তুমি আসবে বলে।
তুমি বাড়ির কাছাকাছি এসে পড়লে আমাকে
একটা ফোন দিও, আমি চাবি নিয়ে বের হয়ে
যাবো।
"আচ্ছা ঠিক আছে।
কথাটা বলেই ফোনটা রেখে দিলাম।
.
প্রায় ঘন্টা খানিক পর বাড়ির কাছাকাছি
এসে সাফাকে ফোন দিয়ে আসতে বল্লাম।
.
গাড়িটা বাড়ির সামনে থামাতেই দেখি
মেয়েটা গেটের সামনে দাড়িয়ে আছে।
গাড়ির থেকে ব্যাগ গুলো নামিয়ে ড্রাইভার
কে ভাড়া দিয়ে যেই ব্যাগ দুইটা হাতে নিয়ে
আরেকটা ব্যাগ হাতে নেওয়ার চেষ্টা করতে
লাগলাম, তখনি মেয়েটা এসে ওই ব্যাগটা ওর
হাতে নিয়ে বাড়ির ভিতর ঢুকতে লাগলো।
.
তালা খুলে রুমে ঢুকেই মেয়েটা একটা
চেয়ারে বসলো। বাবা জামাতে গেলে যেই
বেডটা নিয়ে যেতো আমি সেই বেডটা নিয়ে
এসেছিলাম। বেডটা বিছিয়েই সেটার উপর
বসে পড়লাম।
.
মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে বল্লো, কাঁথা
বালিশ আনো নাই?
"হুম ব্যাগে আছে।
"আচ্ছা শুনো, আমি এখন ধানমন্ডি যাবো
আমাদের মেইন অফিসে। তুমি সব কিছু গুছিয়ে
ফেলো। বিকেলবেলা ওরা চলে আসবে।
তারপর ওদের সাথে সন্ধ্যায় আমাদের
অফিসে চলে এসো। ওই যে আমার বাসার দুই
তালায় যেইটা।
" আচ্ছা ঠিক আছে।
"এখন আমি জাই। দরজাটা লাগিয়ে দেও।
তারপর মেয়েটা চলে যাওয়ার পর দরজাটা
লাগিয়ে দিয়ে, আমি আমার জিনিসপত্র
গুছাতে লাগলাম।
.
দুপুরে বাহিরে হাল্কা কিছু খেয়ে নিলাম।
বিকেলবেলা ওরা আসার পর সবার সাথে
একটু কথা বার্তা বল্লাম। ওরা সবাই খাওয়া
দাওয়া করার পর। এক সাথে সাফাদের
বাসার সেই অফিসে যাওয়ার জন্য রওনা
দিলাম।
.
সবাই হাতে করে একটা কাগজ নিয়ে গেলো।
আমি জিজ্ঞাস করলাম এইটাতে কি? ওরা
বল্লো, কালেকশনের কাগজ।
.
ওই খানে পৌছিয়েই দেখি মেয়েটা অফিসে
বসে আছে। আমরা সবাই এক এক করে
চেয়ারে বসলাম। তারপর মেয়েটা সবার কাছ
থেকে তাদের নিয়ে আসা কাগজ গুলো
নিলো। একটা একটা করে সব কাগজগুলো
মেয়েটা উলটিয়ে দেখতে লাগলো।
.
হঠাৎ করে মেয়েটা আমার পাশে থাকা
ছেলেটাকে বলে উঠলো, মিরপুর ১২ তে তুমি
এই পর্যন্ত কয়টা দোকানদারের সাথে
পরিচিত হইছো?
"২৫ টার মতো।
"প্রতি সাপ্তায় তোমার সেই এড়িয়াতে কাজ
একবার পড়ে। আজকে সেই ২৫ টা দোকান
থেকে ৫০% ও অডার নিতে পারো নাই।
"না পেলে কি করে করবো?
"দোকানদার কে বুঝাতে হবে। আমাদের
অফার সম্পর্কে জানাতে হবে! আমি কিছু
জানিনা। সামনের সাপ্তায় যেমনে পাড়ো এই
ঘাটতিটা পুষিয়ে দিবে তুমি।
ছেলেটা কিছু না বলে চুপ করে রইলো।
.
আমি শুধু মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
আর ওর কঠোরতা টা দেখলাম। একের পর এক
সব ছেলে গুলোর একটু একটু করে খুঁচিয়ে
খুঁচিয়ে দোষ বের করলো মেয়েটা। আমি
শিউর ছেলেগুলো মেয়েটাকে মনে মনে ইচ্ছা
মতো বকা দিচ্ছে।
.
তারপর মেয়েটা কাগজগুলো ডয়ারে রেখে
সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো, এখন
থেকে আমাদের শিডিউল অনুযায়ী করতে
হবে। উপর থেকে নতুন শিডিউল আজ ঘোষণা
দিছে, প্রত্যেক টিমের তিনজন মার্কেটিং
লাইনে থাকবে। আর বাকি তিনজন আমার
সাথে স্টলে থাকবে। এখন তোমরাই ঠিক করে
নেও কে কি করবে?
.
মেয়েটার কথা শুনে সবাই মার্কেটিং লাইনে
কাজ করার জন্য সিদ্ধান্ত নিলো। তখন
মেয়েটা রাগ নিয়ে বলে উঠলো, আমি স্টলে
থাকবো একা তাহলে!
তারপর মেয়েটা আমাকে আর বাকি দুইজন
ওদের মধ্য থেকে নিয়ে বল্লো, তোমরা আমার
সাথে স্টলে কাজ করবা। আর ওরা
মার্কেটিং লাইনে করবে। কাল আমাদের
ক্যান্টনমেন্টে কাজ। তোমরা সকাল ৯ টার
মধ্যে উপস্থিত থাকবা। আর ফায়সাল তুমি
কাল ওদের সাথে এসে পড়বা।
কথাটা বলেই মেয়েটা ওদের সবাকে
আজকের কাজের রোজের টাকাটা দিয়ে
দিলো।
আর আমাদের বলে উঠলো, এখন তাহলে
তোমরা আসো।
এই বলেই মেয়েটা আমাদেরকে বিদায় দিয়ে
দিলো।
.
সবাই রুমে আসার পর যে যার মতো বসে
পড়লাম। মার্কেটিং লাইনে যারা কাজ
করবে তাদের দিকে তাকিয়ে দেখলাম তারা
মহা খুশি। কিন্তু সাফার সাথে যে দুইজন
কাজ করবে,ওরা গুমড়া মুখু হয়ে বসে ছিলো।
বুঝতে পারলাম না কিছু, সাফার সাথে স্টলে
থাকলে সমস্যাটা কই?
.
সকালে ঘুম থেকে উঠে যে যার মতো রেডি
হতে লাগলাম। দেখলাম ওদের মধ্যে একজন
আমার গামছা নিয়ে মাথা মুছতেছে। এই
জিনিসটা আমার একদম ভালো লাগলো না!
আমি আর কিছু বল্লাম না। রান্না ঘরে
তাকাতেই দেখলাম একটা মহিলা রান্না
করতেছে। বুঝতে আর বাকি রইলো না যে,
উনিই রান্না করে খাওয়াই।তারপর সবাই এক
সাথে খেতে বসে পড়লাম।
.
কোন মত খাওয়াটা শেষ করে যেই উঠতে
যাবো, ঠিক তখনি একজন বলে উঠলো, ভাই
প্রতিদিন ৫০ টাকা করে দিতে হবে খাওয়ার
জন্য, আর রুম ভাড়া ১৫০০ টাকা দিতে হবে
প্রতি মাসে।
"হুম ঠিক আছে নিবেন।
"আর বাজার কিন্তু আপনাকে ডেইলি করতে
হবে।
"কেন আপনারা করবেন না?
"নাহ! আমাদের এইখানে যে নতুন আসে তারই
সব করতে হয়।
.
ওরা যে আমার সাথে মজা করতেছে বুঝতে
পেরেছিলাম। আমি আর কিছু না বলে পকেট
থেকে ৫০ টাকা বের করে ওদের কাছে
দিলাম।
.
সবার খাওয়া শেষ হওয়ার পর আমরা তিনজন
বের হয়ে গেলাম। আমার সাথের দুইজনের
কাধে ব্যাগ ও ছিলো। আমি ওদের আর
জিজ্ঞাস করলাম না ব্যাগে কি আছে।
এমনিতেই ওদের মেজাজ এখনো খারাপ।
বুঝাই যাচ্ছিলো। তারপর সবাই গাড়িতে উঠে
পরলাম।
.
রাস্তা খালি ছিলো বিদায় ক্যান্টনমেন্ট
পৌছাতে বেশি সময় লাগলো না। সেইখানে
পৌছিয়েই স্টলে যেয়ে বসলাম। কিছুক্ষণ পর
দেখলাম সাফাও এসে পড়েছে।
.
মেয়েটা এসেই পণ্যের প্যাকেজ সম্পর্কে
আমাকে বুঝাতে লাগলো। আর ঠিক তখনি
একটা কাষ্টমার এসে হাজির। বাবার
দোকানে মাঝেমাঝে বসতাম বিদায়
কিভাবে কাষ্টমারদের বুঝাতে হয় সেই
সম্পর্কে আগের থেকেই আমার ধারনা আছে।
একটু চাপাও থাকা লাগে! তাই প্রথম
কাষ্টমারটাকে আমিই হ্যান্ডেল করলাম।
.
কাষ্টমারটা যাওয়ার পর মেয়েটা আমার
দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, আগে কোথাও
কাজ করছো?
"নাহ! বাবার দোকানে বসতামতো।
অভিজ্ঞতা আছে আর কি।
"গুড!
.
তারপর মেয়েটা ওদের দুইজনকে বলে উঠলো,
এই তোমরা সামনের দিকটা সুন্দর করে
ডিসপ্লে করে ফেলোতো। কথাটা বলেই
মেয়েটা আমাকে কাজ সম্পর্কে ধারনা
দিতে লাগলো। এরি মধ্যে ছেলে দুইটাকে
মেয়েটা দুইবার ঝাড়িও মারলো, এতদিন ধরে
কাজ করো ডিসপ্লেটা সুন্দর করে করতে
পারতেছোনা। ওই বাম পাশের বক্সটা ডান
পাশে সিরিয়াল করে সাজাও।
কথাটা বলেই আমার সাথে আবার কথা বলতে
লাগলো।
.
বুঝতে আর বাকি রইলো কেন ছেলেগুলো ওর
সাথে স্টলে থাকতে চায় না। আমিও একটু
পুরান হলে হয়তো এই মেয়েটার কাছে এরকম
ঝাড়ি দৈনিক হজম করতে হবে।
.
আজ বাসা থেকে খাবার আনি নি বাদায়
মেয়েটা আমাকে বলে উঠলো, ওরা তোমাকে
বলে নি খাবার আনার জন্য?
"নাহ
মেয়েটা আর কিছু না বলে ওর বাসা থেকে
নিয়ে আসা খাবার গুলো থেকেই আমাকে
খেতে দিয়েছিলো।
.
সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে বাজার করে নিয়ে
এসে। সোজা সাফার অফিসে চলে গেলাম।
আমি যাওয়ার আগেই বাকি ছেলেগুলো
পৌছিয়ে গিয়েছিলো। সেইখানে যাওয়ার
পর দেখলাম, মেয়েটা সবাইকে রোজের
টাকা দিয়ে দিচ্ছে, আর সাথে যাতায়াত
খরচের টাকাটাও দিয়ে দিচ্ছে। সবার সাথে
আমাকে আমার আজকের রোজের ৫০০ টাকা
আর যাতায়াত খরচের টাকাটা দিয়ে দিলো।
আর বলে দিলো আগামীকাল আমাদের
এয়ারপোর্টে কাজ। সবাই টাকা নিয়ে বের
হয়ে গেলেও আমি বের হোলাম না। আমাকে
বসে থাকা দেখে মেয়েটা আমাকে বলে
উঠলো, কিছু বোলবা?
"হুম।
"বলো!
"আমার টাকাটা তোমার কাছে রাখো। মাস
শেষে একবারে নিবো।
"কেন?
"খরচ হয়ে যাবে আমার কাছে থাকলে।
যাতায়াত খরচটা আমার কাছে রাখি, আর
রোজের টাকাটা তোমার কাছে রেখে দাও
মাস শেষে তোমার কাছ থেকে নিয়ে নিবো।
.
মেয়েটা আমার কথা শুনে আমার হাত থেকে
টাকাটা নিয়ে বলে উঠলো, আচ্ছা ঠিক আছে।
তোমার খরচের টাকা আছে?
"হুম! বাসা থেকে কিছু নিয়ে এসেছিলাম
ওইটা দিয়ে আমার এই মাস চলে যাবে।
"আচ্ছা তাহলে ঠিক আছে।
"আমি আসি তাহলে!
কথাটা বলেই আমি অফিস থেকে বের হয়ে
গেলাম।
.
বাসায় যেয়ে দেখি ওরা যে যার মতো বসে
আছে। আমাকে দেখেই একজন বলে উঠলো,
কি বেপার মামা সাফার সাথে চান্স
নিতাছো নাকি?
"ধূর মিয়া!কি বলেন এসব!
আমার কথাটা শুনে আরেকজন বলে উঠলো,
দেইখো ভুলেও এই আকাম কইরো না। এর
আগেও কিন্তু আমাদের সাথের এক ছেলে
সাফারে ইম্প্রেশ করতে যেয়ে নিজেই বড়
ধরনের ইম্প্রেশ হয়ে ঘাড় ধাক্কা খেয়ে
চাকরী থেকে বের হয়ে গেছে। আর
শাহারিয়ার ভাইয়ের কাছে ফাও মাইরো
খাইছে। এর পর থেকে মেয়েটা এতো কঠোর
হয়ে গেছে। আগে মাঝে মধ্যে আমাদের
একেক জনকে নিয়ে টুকটাক শপিং এ বের
হতো। মাসে একবার রেস্টুরেন্টে নিজের
টাকা খরচ করে খাওয়াতো। মেয়েটার মনটা
কত নরম ছিলো! শালায় আকামটা কইরা
মাইয়াটারে দিছে কঠোর বানায়া। এখন
উঠতে বসতে একটু এদিক থেকে ওদিক হলেই
খালি প্যারা দেয়।
.
আমি ওদের কথা শুনে বলে উঠলাম, নাহ ভাই
তেমন কিছু আমাকে দিয়ে হবেনা। আর আমি
আমার চাকরীটা ও হারাতে চাই না।
"হুম মন থকে যেনো। আর তুমি এখন রান্নাঘরে
যেয়ে আদা রসুনগুলো ছিলে ফেলো। বুয়া
ওইগুলা কাল বেটে রাখবে।
কথাটা শোনার পর আমি সবার দিকে
তাকালাম, সবাই মিটমিটিয়ে হাসতেছে।
আমি বুঝতে পেরেছি এরা আমার সাথে খুব
মজা নিচ্ছে। আমি আর কিছু বল্লাম না।
দেখি কতদিন এরকমটা করতে পারে!
.
এইভাবেই একের পর এক দিনগুলো কাটতে
লাগলো। আর আমার রুমমেটের সব ছেলেগুলো
এক জোট হয়ে ঘরের সব কাজ আমাকে দিয়েই
করাতে লাগলো। বুয়া শুধু রান্নাকরতো,আর ঘর
মুছে চলে যেতেন।আর আমাকে দৈনিক টয়লেট
পরিষ্কার, বাজার আনা ইত্যাদি টুকটাক কাজ
করতে হতো। আমি জানি এখন কিছু বল্লেই
ওরা আমাকে চলে যেতে বলবে। আর আমিও
যদি ঘাড় ত্যাড়ামি করি ওরা যদি উল্টা
পাল্টা কোনো নালিশ সাফার কাছে করে
বসে! তাই চুপ করে ছিলাম। থাক এতটুকু
জিনিস না হয় সেক্রিফাইজ করলাম।
.
কাজের প্রতি খুব মমনোযোগ ছিলো আমার।
বেশিভাগ কাস্টমার গুলোকে নিজেই
হ্যান্ডেল করতাম। আমার এই দিকটা দেখে
বলা যেতে পারে মেয়েটা খুব খুশি
হয়েছিলো। কিন্তু কখনো এই জিনিসটা
মেয়েটা প্রকাশ করতোনা। কিন্তু ওর কথা
বার্তা ঠিকই আমাকে সব কিছু বুঝিয়ে
দিতো।
.
প্রায় দুই সাপ্তাহ হয়ে গেছে আমি এইখানে
কাজ করি। এই দুই সাপ্তায় দুইবার বাড়িতেও
গিয়েছিলাম। মাকে কথা দিয়েছিলাম যে,
প্রতি সাপ্তায় একবার বাসায় আসবো।
.
আজকে আমাদের কাজটা ক্যান্টনমেন্টে।
সেইখানে পৌছানোর পর থেকেই দেখলাম
সাফার মুডটা আজকে একটু অন্য রকম। স্টলে
এসে বসার পরই আমি বাদে ওদের দুইজনকে
ইচ্ছা মতো ঝাড়লো। কারন দুইজনেই স্টলের
বাহিরে দাঁড়িয়ে কি যেনো করছিলো আর
হাসতেছিলো। ওদের ঝাড়ি দেওয়া দেখে
আমি খানিকটা চুপ হয়ে আস্তে করে ওর
থেকে কিছুটা দূরে সরে গেলাম।
.
আমার এই কান্ডটা ওর চোখে ঠিকি ধরা
দিয়েছিলো। কিন্তু মেয়েটা আমাকে কিছু
না বলে ওর মোবাইলটা ব্যাগ থেকে বের
করে কাকে যেনো ফোন দিলো। আর আমাকে
বলে উঠলো, ফায়সাল বাহিরের দিকটা
ডিসপ্লে করে ফেলোতো।
.
কথাটা আমাকে বলেই মেয়েটা অন্য দিকে
ফিরে কার সাথে যেনো কথা বলতে লাগলো।
আমি বাহিরে বের হয়ে তাড়াতাড়ি
ডিসপ্লেটা করেই আমার জায়গায় এসে বসে
পড়লাম।
.
মেয়েটা কথা বলা শেষে আমার দিকে
তাকিয়ে একটু রাগ নিয়ে বলে উঠলো,
তোমাকে না বলছি বাহিরের দিকটা
ডিসপ্লে করতে! তুমি এখনো বসে আছো!
"করে ফেলছি। বাহিরে যেয়ে দেখে আসো।
.
মেয়েটা আমাকে আর কিছু না বলে চুপ করে
রইলো। ওকে দেখে মনে হচ্ছিলো ও খুব
চিন্তিত। ইচ্ছে জাগছিলো ওকে জিজ্ঞাস
করতে কি হয়েছে ওর। কিন্তু আমি আর কিছু
জিজ্ঞাস করলাম না।
.
দুপুরে খাওয়ার সময় পার হয়ে যাচ্ছিলো।
মেয়েটা এখনো কিছু খাই নি। ওই ছেলে দুইটা
খেতে যাওয়ার পর আমি ওর সামনে যেয়ে
বলে উঠলাম, কি বেপার তোমার শরীর
খারাপ?
"নাহ! কেনো?
"কিছু খেলে না যে এখনো।
"এমনি।
"কোনো সমস্যা হইছে?
"নাহ! তেমন কিছুনা।
"ফ্রেন্ড হিসাবেতো বলতে পারো। সেই
সকাল থেকেই দেখছি তোমার মুডটা খারাপ।
তুমিই কিন্তু বলছিলা এখানে আমারা কাজের
জন্য এসেছি। এক সাথে উঠা বসা করবো। তো
এক সাথে উঠা বসা করলে পাশের জনের কিছু
হলে সেই সম্পর্কেতো জানতে হবেই তাই না?
.
আমার কথাটা শোনার পর মেয়েটা যেনো
আমার দিকে কেমন করে তাকালো। আমি ওর
তাকানো ভঙ্গি দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে
গেলাম। তারপর আস্তে করে যেই ওর সামনে
থেকে দূরে সরতে লাগলাম ঠিক তখনি
মেয়েটা হেসে উঠলো। এই প্রথম বারের মতো
মেয়েটার হাসি দেখলাম।
.
মেয়েটা হাসি থামিয়ে আমাকে বলে উঠলো,
কথাটা বলে আস্তে করে সরে গেলে কেনো?
ভয় পাইছো!
"নাহ! ভাবলাম আবার ঝাড়ি মেরে বসো যদি।
"হা হা হা! হাসালা তুমি আমাকে। আচ্ছা
ওরা আসুক তারপর খেতে খেতে বলবো কি
হইছে।
"ওকে।
.
ওরা আসার পর আমরা দুইজন আমাদের খাবার
নিয়ে ক্যান্টিনে খেতে চলে গেলাম। খেতে
খেতে মেয়েটা বললো, শাহারিয়ার ভাইয়ার
সাথে নাকি ওর রিলেশন ছিলো। আর
শাহারিয়ার ভাইয়া উনার টিমের আরেকটা
মেয়ের সাথে নাকি অনেক দিন ধরে রিলেশন
চালিয়ে যাচ্ছে। সাফা নাকি উনাকে
বলেছে এটা ঠিক করছে না উনি। কিন্তু
শাহারিয়ার ভাইয়া সাফাকে বলেছে ওই
মেয়ের সাথে নাকি তেমন কোনো কিছু
চলছে না তার। গতকাল রাতে নাকি ওই
মেয়েটার সাথে শাহারিয়ার ভাইয়াকে খুব
ক্লোজ অবস্থায় রিকশার ভিতর দেখেছে
সাফা। তবুও নাকি শাহারিয়ার ভাই
অস্বিকার করেছে। তারপর নাকি রিলেশন
ব্রেকাপ করে ফেলেছে।এর জন্য নাকি মন
খারাপ ছিলো। তবে আমার ভয় পাওয়ার দৃশ্য
দেখে নাকি ওর মন খারাপটা অনেকটা কমে
গেছে।
.
রাতে খাওয়া দাওয়া করে একটু রাস্তায় বের
হলাম চা খাওয়ার জন্য। তখনি ফোনটা বেজে
উঠলো। মোবাইলটার স্কিনে তাকিয়ে
দেখলাম সাফার ফোন। ফোনটা রিসিভ
করাতেই বলে উঠলো, কি করো?
"এইতো রাস্তায় আসলাম একটু চা খাওয়ার
জন্য।
"শুধু চা সিগারেট খাচ্ছোনা?
"কি যে বলো।
"কেন কথা সত্য না!
ওর কথাটা শুনে হাতের সিগারেট টার দিকে
একবার তাকালাম। তারপর কি মনে করে
যেনো সিগারেটটা ফেলে দিলাম।যেই আমি
ওকে কিছু বলতে নিলাম ঠিক তখনি ও
আমাকে বলে উঠলো, কি বেপার সিগারেটটা
ফেলে দিলা কেন?
.
ওর কথা শুনে আমি অনেকটা অবাক হয়ে
গেলাম। মেয়েটাকি আমাকে দেখতেছে!
আমি আর কিছু না বলে ওকে বলে উঠলাম, কই
তুমি?
"তোমার ডান পাশে রোডের এই পাড়
তাকিয়ে দেখো।
আমি ঘুরে তাকাতেই দেখি মেয়েটা শাল
গায়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার ওই
পাড়ে। মেয়েটা কান থেকে মোবাইলটা
নামিয়ে ফোনটা হয়তো কেটে দিলো।
.
আমি দোকানদারকে টাকাটা দিয়ে ওর
সামনে গেলাম। ওর সামনে যাওয়াতে ও
আমাকে বলে উঠলো, এগুলো খাওয়া ভালো
না।
আমি কিছুনা বলে মাথাটা একটু নিচু করে
নিলাম। ও আমাকে আবার বলে উঠলো,
খাইছো?
"হুম তুমি?
"এইতো খেয়ে আসলাম।
"মানে?
"গ্রিল খেতে ইচ্ছে করতেছিলো তাই ওই
সামনে একটা হটেল ওইখান থেকে খেয়ে
আসলাম।
"কাউকে দিয়েতো পার্সেল করে আনতে
পারতা।
"পার্সেল করা খাবার খেয়ে আমার পেট
ভরেনা।
"ওহ।
"হুম। আর শোনো, লাঞ্চের টাইমে যা যা
বলছি ওদের আবার বইলোনা।
"আরে ধূর! ওদের কেন বলবো? আর ওদের সাথে
আমি কথা বলিনা।
"কেন?
"না এমনি। চলো হাটি বাসায় যাবা না?
"হুম! তুমি কই যাবা?
"তোমাকে দিয়ে আসি।
"আমি একাই যেতে পারবো।
"আরে চলোতো।
কথাটা বলেই দুইজন হাটতে লাগলাম।
.
ওদের বাসার সামনে আসার পর মেয়েটা
আমাকে বলে উঠলো, এখন সোজা বাসায় যাও
বাই।
কথাটা বলেই মেয়েটা ওদের বাড়ির ভিতর
ঢুকে গেলো।
.
সাপ্তার প্রথম তিন দিন আমাদের কাজটা
ক্যান্টনমেন্টেই হয়। আর পরের তিন দিন
এয়ারপোর্টে। আজ সোমবার শিডিউল
অনুযায়ী আজকেও আমাদের কাজটা
ক্যান্টনমেন্টে পড়েছে।
.
সকালে নাস্তাটা খেয়ে একটু ওয়াশ রুমে
গেলাম। ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে দেখি
আমার সাথের দুইজন চলে গেছে। এমন কেন
এরা! একটু মিলেমিশে থাকলে কিবা হয়! আজ
একাই যেতে হবে।
.
সেইখানে যেয়ে পৌছিয়েই দেখি সবাই এসে
পড়েছে। আমার দেড়িতে আসা দেখে
ভাবছিলাম সাফা কিছু বলবে কিন্ত আমার
ভাবনাটা ভুল প্রকাশ পেলো। মেয়েটা
আমাকে কিছু বল্লোনা। আমি স্টলে ঢুকেই
আমার জায়গায় বসে পড়লাম।
.
আজকে মেয়েটাকে খুব সতেজ লাগছে। ওই
দুইটার সাথে খুব হাশি খুশি মুড নিয়ে কথা
বলতেছে। কেন যেনো মনে হচ্ছে মেয়েটাকে
নিয়ে যা যা ভেবেছিলাম সব কিছুই ভুল
ভেবেছি। ছেলে দুইটাও আজ ওর এরূপ ব্যবহার
দিকে খুব আশ্চর্য হচ্ছে তা আর আমার বুঝতে
বাকি রইলো না। কারন মেয়েটা আজকে
ওদের কোন কিছু করার আদেশ না দিয়ে নিজ
হাতেই ডিসপ্লে টা সুন্দর করে করতে
লাগলো। কি জানি ওর এই রকম হাশিখুশি
মনোভাবটা কত দিনের জন্য স্থায়ী। নারী
বলে কথা! এরা সব পারে! সহজ কাজটাকে
তাদের বিশেষ গুণ দিয়ে জটিল করতে পারে।
আবার জটিল কাজটাও তারা সহয করে
তোলতে পারে।
.
আজকে প্রথম কাষ্টমারটা আমার জন্য
যে,এতো লক্ষি হবে তা অবিশ্বাস্য! পানি
খাবো বলে পানির বতলটা নিচু হয়ে নিচ
থেকে যেই নিতে যাবো ঠিক তখনি একটা
ছেলে বলে উঠলো, ভাই দুইটা নরমাল
কোকাকোলা ক্যান দিয়েনতো।
.
আমি আর পানির বতলটা না নিয়ে উঠে
দাড়ালাম। উঠতেই দেখলাম ছেলেটার পাশে
একটা মেয়ে দাঁড়ানো। মেয়েটাকে দেখে
আমি খুব চমকিয়ে উঠলাম। মুখ দিয়ে নিজের
অজান্তেই বের হয়ে
আসলো। সাদিয়া!
.
আমার মুখ থেকে এই নামটা শোনার পর
সাদিয়ার পাশে থাকা ছেলেটা ওকে বলে
উঠলো, সাদিয়া চিনো নাকি উনাকে?
"নাহ!
"তোমার নাম ধরে যে ডাকলো।
তখনি ওই ছেলেগুলোর মধ্যে একজন ক্যান
দুইটা ছেলেটার কাছে বাড়িয়ে দিলো।
ছেলেটা আর কিছু না বলে টাকাটা দিয়ে
আমার দিকে একটু তাকিয়ে চলে যেতে
লাগলো। যেতে যেতে সাদিয়াকে বলতে
লাগলো, সত্য করে বলোতো ছেলেটাকে
চিনো নাকি?
"জান সত্যি চিনিনা! আর ছেলেগুলা কেমন হয়
তুমিতো বুঝো তাই না?
.
কিছুটা দূর চলে যাওয়াতে ওদের কথা আর
শুনতে পারলাম না। তারপর ছেলেটার হাতটা
ওর এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে দুইজন হাটতে
হাটতে অনেকটা দূর চলে গেলো। হাহ!
আসলেই নারীরা সব পারে!
.
একটা জড়তে নিশ্বাস নিয়ে নিচ থেকে
পানির বতলটা নিয়ে একটু খেয়ে যেই ওদের
দিকে তাকালাম। দেখলাম সবাই আমার
দিকে তাকিয়ে আছে। ছেলে দুইটার মধ্যে
একজন আমাকে বলে উঠলো, মেয়েটাকে
চিনো নাকি?
"নাহ! ওর মতোই সাদিয়া নামের একটা
মেয়েকে চিনতাম।
এরি মধ্যে আরো কয়েকটা কাষ্টমার চলে
আসলো। তারপর আর কিছুনা বলে
কাষ্টমারদেরকে দেখতে লাগলাম।
.
দুপুরে আমি আর সাফা যখন খেতে বসলাম তখন
মেয়েটা হঠাৎ করে বলে উঠলো, কি লাগে
মেয়েটা তোমার।
"খাওয়ার সময় কথা বলতে হয় না খাও।
যেই কথাটা বলে আমি ভাতের লোকমাটা
মুখে নিবো ঠিক তখনি মেয়েটা আমার
হাতটা ধরে ভাতের লোকমাটা মুখে নিতে
দিলোনা। তারপর ও বলে উঠলো, গার্লফ্রেন্ড
ছিলো?
.
ওর এরূপ দৃশ্য দেখে আমি কিছুটা অবাক হয়ে
গেলাম। মেয়েটা আমকে ওর হাত দিয়ে ধরে
আমাকে লোকমাটা মুখে নিতে বাধা দিলো।
এখনো আমার হাতটা ও ধরে রেখেছে। আমি
আমার হাত থেকে ভাতের লোকমাটা প্লেটে
রেখে দিয়ে ওকে বলে উঠলাম, হুম ছিলো
কিন্তু আমি ওর যোগ্য ছিলাম না। আর
তাছাড়া আমার ফিলিংস গুলো খুব কমদামি
ছিলো, এক কথা বার বার বলতাম। দোষটা
আমারই বেশি ছিলো। তাই আমাকে ছেড়ে
আমার থেকে ভালো কাউকে ধরেছে।
.
মেয়েটা আমার কথাটা শুনে আমার দিকে
তাকিয়ে বলে উঠলো, কে কার যোগ্য না
সেটা আমার বুঝা হয়ে গেছে। আর কখনো
নিজের ফিলিংস গুলোকে ছোট করে দেখবা
না বুঝাতে পারছি?
"হুম।
"গুড! এখন খাও।
কথাটা বলেই মেয়েটা আমার হাতটা ছেড়ে
দিলো। তারপর দুইজন এক সাথেই খেতে শুরু
করলাম। আজকে মেয়েটা চিংড়িমাছ ভুনা
নিয়ে আসছিলো। চিংড়ি মাছ ভুনাটা দেখে
আমার কেমন যেনো লোভ লেগে গেলো।
আমি মেয়েটাকে বলেই উঠলাম, একটু চিংড়ি
মাছ ভুনা দেওয়া যাবে?
.
আমার কথাটা শুনে ও একটু হেসে বল্লো,
এখানে রাখা থাকে যা খেতে ইচ্ছে নিয়ে
খাবা।
তারপর আমি একটু চিংড়ি মাছ ভুনাটা আমার
প্লেটে নিলাম। আর আমার বাটির রুই মাছের
তরকারী গুলো ওর সামনে এগিয়ে দিলাম।
মেয়েটা আমার এরূপ দৃশ্য দেখে আমার
তরকারী থেকে দুই পিছ আলু আর একটু মাছ
ভেঙ্গে খেতে লাগলো।
.
রাতে ওরা সবাই ঘুমিয়ে পড়লেও আমার চোখ
দুইটা এখনো সজাগ ছিলো।এরকম ভাবে
সাদিয়ার সাথে দেখা হওয়াটার কি দরকার
ছিলো! কেন যেনো ওকে নিয়ে লেখা ওই
ডাইরিটাতে চোখ বুলাতে ইচ্ছা হলো। তারপর
ডাইরিটা ব্যাগ থেকে বের করে ডাইরিটার
সুতা বের করানো অংশ ধরে টান দিতেই
চোখে পড়লো ওকে নিয়ে দিয়া বাড়ি ঘুরতে
যাবো সেই লিখাগুলো। হাহ! কেমনে পাড়লা
আজকে এই কাথাটা বলতে? তুমি আমাকে
চিনোনা! কথাটা ভাবতে ভাবতে ডাইরির
একেক একটা পাতা উল্টিয়ে উল্টিয়ে দেখতে
লাগলাম। চোখটা ঘুমে আস্তে আস্তে ছোট
হয়ে যাচ্ছলো। তাই আর কিছু না ভেবে
ডাইরিটা বালিশের নিচে রেখেই শুয়ে
পরলাম।
.
সকালে ঘুম থেকে উঠে যেই ফ্রেশ হতে
যাওয়ার জন্য গামছাটা হাতে নিলাম। তখনি
দেখলাম গামছাটা পুরো ভিজা। মেজাজটা
তখন খুব খারাপ হয়ে গেলো। এদের এ নিয়ে
অনেক বার বলা হয়ে গেছে যে, আমার
গামছাটা যেনো এরা না ব্যবহার করে তবুও
তারা একি কাজ বার বার করতেছে। তার
উপর গামছাটা ভিজিয়ে রাখছে! ধর্য্যের
সীমাটা পার করে ফেলেছে। ওদের সাথে
আর নাহ! দরকার পরলে এখানে ভালো থাকার
ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত আমাদের বাসায়
থাকবো। একটু কষ্ট হবে যাতায়াতের তবুও
ওদের এই রকম যন্ত্রণা থেকে বাঁচবো।
.
তারপর আর কিছু না ভেবে ফ্রেশ হতে চলে
গেলাম। ফ্রেশ হয়ে যেই রুমে ঢুকতে যাবো
ঠিক তখনি খেয়াল করলাম আমার ডাইরিটা
পাশের রুমে নিয়ে যেয়ে ওরা পড়তেছে আর
হাসতেছে। রাগটা এইবার একটু বেশিই উঠে
গেলো। এর আগেও ওরা ডাইরিটা দেখতে
চেয়েছলো আমি বলছিলাম কারো
পার্সোনাল জিনিস কাউকে দেখতে নাই।
.
আমি রুমে যেয়েই আমার ডাইরিটা ওদের
কাছ থেকে টান দিয়ে নিয়ে বলে উঠলাম,
তোমাদের সাথে মানুষ থকে! আর না!
কথাটা বলেই ডাইরিটা হাতে করে নিয়ে
আমার বেড থেকে আমার মোবাইটা নিয়ে
নাস্তা না খেয়েই বাহিরে বের হয়ে গেলাম।
.
বাহিরে এসে হোটেল থেকে নাস্তাটা করেই
সাফাকে ফোন দিলাম। ও ফোনটা ধরতেই
আমি বলে উঠলাম, আমি আজকে কাজে
আসতে পারবোনা।
"কেন কি হইছে?
"আমার মালসামানা নিয়ে বাসায় যাবো।
" কেন কোনো সমস্যা হইছে?
"সমস্যাতো আজকে থেকে সেই প্রথম থেকে
করা হচ্ছে আমার সাথে।
"তুমি কোথায় আছো এখন?
"বাসার নিচে যে হোটেলটা আছে সেইখানে
বসে আছি।
"মালসামানা নিয়েতো আর বের হও নাই?
"নাহ।
"আচ্ছা তুমি তাহলে আমাদের অফিসে চলে
আসো এখন।
কথাটা বলেই মেয়েটা ফোনটা কেটে দিলো।
তারপর আমি হোটেল থেকে বের হয়ে
আমাদের অফিসটাতে যেতে লাগলাম।
.
অফিসে ঢুকেই দেখি সাফা হাতে একটা
কাগজ নিয়ে সেটার দিকে তাকিয়ে আছে
আর কফি খাচ্ছে। আমাকে দেখেই কাগজটা
রেখে বলে উঠলো, বসো চেয়ারে।
আমি চেয়ারে বসার সাথে সাথেই মেয়েটা
বলে উঠলো, কি সমস্যা হইছে শুনি?
" সমস্যাটা তো সেই প্রথম থেকেই করে
যাচ্ছে। প্রতিদিন আমাকে বাজার করতে
হবে, আমাকে টয়লেট পরিষ্কার করতে হবে।
এগুলা আমিই দৈনিক করতাম। ওদের
অনেকবার বলেছি আমার গামছাটা ব্যবহার
করতে না। কিন্তু ওরা প্রতিদিন একি কাজ
করে যাচ্ছে। আবার একবার মানা করা
শর্তেও আমার পার্সোনাল ডাইরিটা নিয়ে
সবাই মিলে আজকে সকালে পড়তেছিলো।
সবাই এক জোট হয়ে আমার সাথে সেই শুরু
থেকে মজা করে যাচ্ছে।
"এই রকম সমস্যা হচ্ছে এই কথাটা আমাকে
আগে বলো নাই কেন?
" ভাবছিলাম ওরা কিছুদিন পর ঠিক হয়ে
যাবে। তাই তোমাকে কিছু বলি নাই।
"তবুও কথাটা আগে বলা উচিত ছিলো। আর
তুমিই কেন প্রতিদিন বাজার করবা আর
টয়লেট পরিষ্কার করবা? সবাই সমান ভাগে
করবে। আচ্ছা আমি ওদের সাথে কথা বলে
দেখতেছি।
"তোমার কোনো কিছু বলতে হবেনা। তুমি
বলতে গেলেই পরে আবার আমাকে খোচা
মেরে মেরে কথা বলবে। আমি এইটা মোটেও
চাইনা।
"তাহলে কি করতে চাচ্ছো তুমি?
"আমি বাসায় চলে যাই ওই জায়গা থেকেই
যেয়ে এসে কাজ করবো। আর বন্ধ্যের দিন
এইখানে এসে রুম খুজবো। একসময় নাতো
একসময় পেয়ে যাবো।
"কোথাও যেতে হবেনা থাকার ব্যবস্থা
হোলেই তো চলবে?
"হুম।
" আসো আমার সাথে।
.
কথাটা বলেই মেয়েটা অফিসের পাশের রুমটা
আমাকে দেখিয়ে বল্লো, এই রুমে থাকতে
সমস্যা হবে?
"নাহ সমস্যা হবে কেন?
"আর রুমের ভিতরেই টয়লেট আছে। রুম না
পাওয়া পর্যন্ত এইখানেই থাকো আপাতত।
" তোমার কোনো সমস্যা হবে না তো আবার?
"আমার আবার কি সমস্যা হবে?
"নাহ! পাশে অফিস আর আমি এখানে থাকবো
কেমন দেখায়?
"সমস্যা নাই। যখন রুমে থাকবা ভিতর দিয়ে নক
করে রাখবা তাহলেই হবে।
"ধন্যবাদ। জানো প্রথমত তোমাকে দেখে
ভবতাম তুমি খুব মুডি টাইপের একটা মেয়ে
হবে।
"এখন কি ভাবো?
"আগে যা ভাবতাম সেটাই ভাবি।
"ভালো! যাও মালসামানা নিয়ে আসো যেয়ে।
একসাথেই বের হবো।
"আচ্ছা ঠিক আছে।
কথাটা বলেই আমি সেখান থেকে বের হয়ে
গেলাম।
.
মালসামানা কম ছিলো বিদায় সেগুলো
রিকশাতে করেই নিয়ে আসলাম। তারপর
সেগুলো রুমে ঢুকিয়ে দুইজন একসাথে রওনা
দিলাম।
.
বাসে উঠে বসার পরেই ওকে জিজ্ঞাস
করলাম তোমার এইখানে চাকরীটা করার
উদ্দেশ্য কি জানতে পারি? তোমার তো
চাকরী না করলেও চলে। মেয়েটা আমার
কথাটা শুনে বল্লো, এতো বছর ধরে পড়াশোনা
করতেছি শুধু কি সার্টিফিকেট এর জন্য।
নিজের কিছু একটা করতে হবে না?
.
ওর কথাটা শুনে আমি আর কিছু বল্লাম না।
মেয়েটা জানালা দিয়ে বাহিরের দিকে
তাকিয়ে আমাকে বলে উঠলো, এখানে
মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে থাকো। ভালো
ভালো কোম্পানি থেকে উচ্চ প্রজেকশন এর
চাকরীর অফার আসে। তখন একটা ব্যবস্থা
করে দিবোনে।
"ঠিক আছে।
"আচ্ছা তোমার বাসায় কে কে থাকে?
"মা,বাবা আর আমি। তোমার?
"সেইম।
.
এই রকম ভাবেই আরো কত গুলো দিন কেটে
গেলো। মেয়েটার মাঝে যে, একটা চঞ্চলতা
ভাব আছে তা কিছুদিন ধরে দেখতে
পাচ্ছিলাম। প্রতিদিন এক সাথেই দুই জন বের
হোতাম কিন্তু বাড়ি ফিরার সময় একা আসতে
হতো। কারন ওর আবার প্রতিদিনি আমাদের
মেইন অফিসে যেতে হতো।
.
আজ মাসের এক তারিখ। সকালে ঘুম থেকে
উঠে রান্না করে খেয়ে যেই রেডি হতে
নিলাম ঠিক তখনি সাফা এসে হাজির।
আমাকে দেখেই বল্লো, কি বেপার
আজকেতো এক তারিখ বেতন লাগবেনা?
"হুম লাগবে। আজকে বৃহস্পতি বার না?
"হুম!
" আমি চাচ্ছিলাম প্রথম মাসের বেতন যখন, মা
আর বাবার জন্য কিছু কিনা কাটা করতাম।
"হুম করবা সমস্যা কি?
"বাবার জন্য পছন্দ করে নিতে পারবো। কিন্তু
মার জন্য যে, পছন্দ করে কিছু নিতে পারবো
না।
"আন্টি শাড়ি পড়ে?
"হুম। সুতির শাড়ি পড়ে। তুমি কি আমার সাথে
কাজ শেষ করে একটু মার্কেটে যেতে
পারবা?
.
আমার কথাটা শুনে মেয়েটা একটু ভেবে বলে
উঠলো, আচ্ছা ঠিক আছে তবে আমার সাথে
কাজ শেষে আগে অফিসে যেতে হবে।
সেখানে আধা ঘন্টার মতো লাগবে হিসাব
নিকাশ দিতে। হিসাব নিকাশ শেষে তারপর
যাবো।
"আমিও অফিসে যাবো?
"হুম!তুমি ওয়েটিং রুমে বসবা আমি কাজ
সেরে এক সাথে বের হয়ে যাবো।
"আচ্ছা ঠিক আছে।
.
তারপর মেয়েটা ওর ব্যাগ থেকে টাকা বের
করে বলে উঠলো, এই নাও তোমার এই মাসের
১৫৫০০ টাকা আর ১৫০০ টাকা বোনাস।
"১৫৫০০ কেনো? মাসেতো ১৫০০০ টাকা আসে
না?
"৩১শা মাস ছিলো। রোজ হিসাব করলে ১৫৫০০
টাকাই পড়ে। ওকে ৫০০ টাকা বেশি দিয়ে
থাকলে ওই ৫০০ টাকা দিয়ে আমাকে কিছু
কিনে দিলে।
"আচ্ছা ঠিক আছে।
তারপর মেয়েটা একটু হেসে আমার কাছে
টাকা গুলো দিলো। আমি টাকাগুলো নিয়ে
রেডি হয়েই একসাথে দুইজন বের হয়ে গেলাম।

āĻ•োāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāχ:

āĻāĻ•āϟি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āϟ āĻ•āϰুāύ