গল্পের ৬নং অংশ
দিয়া বাড়ি
ঘুম ভাঙ্গার পর মোবাইলের স্কিনের দিকে তাকিয়ে দেখি ৯টা বেজে গেছে। যাহ! প্রতিদিন এমন টাইমে বাসে থাকি আর আজকে এখনো বেডে। রাতের থেকে এখন কিছুটা নিজেকে হালকা লাগতেছে। তবে তল পেটের বাম পাশটা কিছুটা ব্যাথা অনুভব করতে লাগলাম। বালিশের পাশ থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা নিয়ে দেখলাম একটাও সিগারেট নেই। মাথায় হাত দিয়ে হাসতে লাগলাম। আজকে এখনো সাফা আসলো না! মোবাইটা নিয়ে ফোন দেওয়ার সাথে সাথেই দেখলাম ওর মোবাইলের রিংটোন এর আওয়াজটা আমার কানে আসতেছে। ও কি তাহলে অফিস রুমে! আমি বিছানা থেকে উঠে পাশের রুমে যেয়ে দেখি মেয়েটা বসে আছে। আমাকে দেখেই আমার মাথা থেকে পা পর্যন্ত তাকিয়ে কিছু না বলে চুপ করে রইলো।
.
আমি ওর চুপ করে থাকা দেখে বলে উঠলাম, আর বইলো না। কাল রাতে ফেসবুকে ফ্রেন্ডের সাথে আড্ডা দিতে দিতে দেরি করে ঘুমাইছিতো, তাই লেট হয়ে গেছে। তুমি বসো আমি ফ্রেশ হয়ে এখনি আসতেছি।
.
ফ্রেশ হয়ে রাতে রান্না করা খাবারটা একটু খেয়ে দুইজন বের হয়ে গেলাম। বের হওয়ার পর মেয়েটা আমাকে বলে উঠলো, তুমি দাড়াও আমি অফিসে একটা দরকারি কাগজ রেখে আসছি ওইটা নিয়ে আসি।
কথাটা বলেই মেয়েটা বাড়ির ভিতর ঢুকে কিছুক্ষন পর নিচে নেমে আসলো।
.
বাসে উঠার পর মেয়েটা আমাকে আবার বলে উঠলো, রাতে ডান্সো করছো?
"কেন?
"বিছানার অবস্থা দেখে বল্লাম।
আমি কিছুনা বলে চুপ করে রইলাম।আমার চুপ করে থাকা দেখে মেয়েটা আমাকে আবার বলে উঠলো, রাতে স্মোক করছো তাইনা?
"নাহ! মানে ঘুম আসছিলোনা তো তাই আর কি। তুমি আমাকে ডাক দিবেনা। রুমতো ভিড়ানোই ছিলো।
"এমন পাগলামি করার কোনো মানে হয় না।
কথাটা বলেই মেয়েটা আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। আমি সেদিকটা না তাকিয়ে অন্য দিকে মুখ ঘুড়িয়ে বসে রইলাম।
.
এয়ারপোর্ট পৌছানোর পর দুইজন স্টলে ঢুকেই চুপ চাপ বসে রইলাম। মেয়েটা এমন করতেছে কেন? আমি স্মোক করছি তাতে ওর কি! ওর দিকে ভালো করে তাকাতেই দেখলাম মেয়েটা আজকে আমার দেওয়া সেই থ্রিপিছটা পড়েছে। আল্লাহ! আমিতো এই দিকটাতো খেয়ালি করি নাই। আমি ওকে ডাক দিয়ে বলে উঠলাম, তোমাকে কিন্তু আজ খুব সুন্দর লাগতেছে এই ড্রেছটাতে।
.
আমার কথাটা ও শুনে আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, এতক্ষণে চোখে পড়লো!
কথাটা খুব রাগ নিয়ে বল্লো মেয়েটা। আমি আবার বলে উঠলাম, চোখে ঘুম ঘুম ভাবটা ছিলোতো তাই আর কি! তবে তোমাকে কিন্তু সুইট........
.
কথাটা শেষ না হতেই দেখলাম শাহারিয়ার ভাই খুব দুরুত্ব গতিতে এসে স্টলের ভিতর ঢুকেই আমার শাটের কলারটা ধরে বলতে লাগলো, বাইর হ তুই।
"কি হইছে ভাইয়া এমন করতাছেন কেন?
তিনি আমার কোনো কথা না শুনে আমাকে ধাক্কা দিয়ে স্টলের ভিতর থেকে বাহিরে পাঠিয়ে দিলো। নিজের ব্যালেন্সটা ধরে আর রাখতে না পেড়ে মাটিতে পড়ে গেলাম।
.
সাফা শাহারিয়ার ভাইয়ের সামনে এসেই একটু চেচিয়ে বলে উঠলো, এইটা কেন করলা তুমি?
"ও আর এইখানে কাজ করতে পারবেনা।
"তোমার কথায়?
"হুম আমার কথায়। আমি যা বলবো সেইটাই হবে।
"এসবের মানে কি?
"দরদ দেখাও তুমি ওই ছেলের উপর তাইনা? নিজের বাসায় নিয়ে উঠাইছো, কাজে এসেও সারাক্ষন কথা বলো সব খবরি আসে আমার কানে?
"তাতে তোমার কি সমস্যা?
"কেন এমনটা করবা?
"আমার ভালো লাগে তাই।
"ওয়েট! ওয়েট! ওয়েট!...... কি বল্লা তুমি? তোমার ভালো লাগে?
"হুম অনেক ভালো লাগে।
"ভালো লাগে নাকি ভালবাসো?
"হুম বাসি। কি করবা?
"ভালো হচ্ছে না কিন্তু সাফা!
"ওই ভালো খারাপের কি দেখছিস তুই? লাগবে না ওর কাজ করা এইখানে। আমি আজকে অফিসে যেয়ে বলে আসবো আমিও এইখানে আর কাজ করতেছিনা।
.
কথাটা বলেই মেয়েটা ওর হ্যান্ডব্যাগটা নিয়ে শাহারিয়ার ভাইয়ার কাছে স্টলের চাবিটা দেয়েই বের হয়ে আমার সামনে আসলো। আমি কিছুই বুঝতেছিলাম না। এই মেয়েটা কি করে এমনটা করতে পারলো! খুব অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম। তারপর মেয়েটা আমার শাটের কলারটা ঠিক করে বলে উঠলো, চলো এখান থেকে।
কথাটা বলেই মেয়েটা আমার হাত ধরে টেনে সেইখান থেকে নিয়ে যাচ্ছিলো। ও যে এমনটা করেছে আমি বিশ্বাসি করতে পারছিনা।
.
মেয়েটা সেখান থেকে সরাসরি আমাকে নিয়ে এসে একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকলো। আমি কোনো মতো নিজেকে সামলিয়ে নিলাম। তারপর দুইজনে এক সাইটে যেয়ে বসলাম। কেন করলো মেয়ে এই কাজটা? আমার জন্য ও কেন এই চাকরীটা ছেড়ে দিতে যাবে!
.
হঠাৎ করে মেয়েটা আমাকে বলে উঠলো, এই তুমি কি ভাবতেছো?
মেয়েটা এমনভাবে কথাটা বল্লো মনে হচ্ছে কিছুক্ষণ আগে কোনো সমস্যাই হয়নি।
"কেন করলে এমনটা। আমার জন্য এতো কিছু হইলো। আবার চাকরীটা তুমি ছেড়ে দিতে চাচ্ছো?
"চুপ!
কথাটা বলেই ওয়েটারকে ডাক দিয়ে মেয়েটা খাবারে অডার করলো।
.
খাওয়া শেষ করে মেয়েটা বলে উঠলো, চলো!
"কোথায়?
"গতকাল বলছিলাম না আমার সাথে উত্তরা ১৭ নাম্বার সেক্টর যেতে হবে?
"ওহ।
.
রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়েই একটা সি.এন.জি ঠিক করতে বল্লো মেয়েটা। সি.এন.জি ঠিক করে দুই জন এক সাথে ঢুকে বসার পর মেয়েটা বাহিরের দিকে তাকিয়ে রইলো। কিছুক্ষন পর মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বলে উঠলো, তখন কি বলতে যেনো চাইছিলে আমাকে সুইট লাগতেছে?
আমি কি বলবো বুঝে উঠতে পারতেছিনা। মেয়েটা সব কিছু এতোটা স্বাভাবিক ভাবে কি করে নিলো? এইখান দিয়ে চাকরীটা চলে গেলো আমার বাসায় কি বলবো? তার উপর আমার প্রতি মেয়েটার এরকম বিহেভিয়ার! আমার চুপ করে থাকা দেখে মেয়েটা বলে উঠলো, চিন্তা করোনা সামনের মাসে এর থেকে ভালো চাকরী হয়ে যাবে।
"মানে?
"আমার চাচ্চু মৌচাক শাখার ওয়ান ব্যাংকের ম্যানেজার কয়েকদিন আগে আমাকে বলছিলো সেইখানে লোক লাগবে। ওই জায়গাতেই সামনের মাস থেকে কাজ করবে।
"ইন্টার্ভিউ য়ে যদি না টিকি!
"ইন্টার্ভিউ দিতে হবেনা। আমি চাচ্চুকে বল্লে এমনিই হয়ে যাবে।
.
আমি এতোটাই এক্সাইটেড হয়ে উঠলাম যে, ওর হাত দুইটা ধরেই বলে উঠলাম, জানো তুমি আমার জন্য এতোটা করবা আমি ভাবতেই পারি নাই। থেংকিউ সো মাচ।
.
মেয়েটার হাতটা ছেড়ে দিয়েই বলে উঠলাম, আমি সরি। আসলে খুব এক্সাইটেড হয়ে গেছিলামতো তাই এমনটা হইছে।
"আমি কিছু বলছি তোমাকে?
"নাহ!
তারপর মেয়েটা আর কিছু না বলে আমার দিকে তাকিয়েই মিটমিটিয়ে হাসতে লাগলো। ওর এরকম হাসার উদ্দেশ্যটা আমি খুজে পেলাম না।
.
উত্তরা ১৭ নাম্বার সেক্টর আসার পর দুইজন সি.এন.জি থেকে নেমে হাটা শুরু করলাম। কিছু দূর যাওয়ার পর আমি মেয়েটাকে বলে উঠলাম, আচ্ছা আমরা কই যাচ্ছি?
"এইতো সামনে একটা পার্ক আছে সেইখানে।
"তোমার ফ্রেন্ড কি ওইখানেই আসবে?
"হুম।
.
কিছুক্ষন চুপ করে থেকে মেয়েটাকে আমি আবার বলে উঠলাম,আমি কিন্তু একটা প্রশ্নের উত্তর পাই নি এখনো।
"কি প্রশ্ন?
"তুমি কেন চাকরিটা ছেড়ে দিবে?
"ভালো লাগেনা।
"এইটা কেমন কথা। চাকরীটা ছেড়ে কি করবে?
"একটা শোরুম দিবো। সেইখানে সব লেডিস ড্রেস থাকবে। জানো এইটা আমার অনেক দিনের স্বপ্ন।
"ভালোইতো।
.
আরো কিছুক্ষন হাটার পর একটা পার্কের ভিতর এসে ঢুকলাম। চার পাশে গাছ-গাছালি দিয়ে ভরা ছিলো। এক অপরূপ দৃশ্য। কেন যেনো খুব ছবি তুলতে ইচ্ছে হলো। এতো সুন্দর জায়গা ছবি না তোলে থাকতে পারলাম না। মোবাইলটা পকেট থেকে বের করে ক্যামেরাটা অন করেই ছবি তোলতে নিলাম আর মেয়েটা বলতে লাগলো, জায়গাটা খুব সুন্দর তাই না।
"হুম অনেক সুন্দর।
"এখানেতো আর কখনো আসো নি,তাই না?
"হুম।
.
যেই দুইটা ছবি তোলে তৃতীয় ছবিটা তোলার জন্য মোবাইলটা ক্লিক করতে নিলাম। তখনি মেয়েটা বলে উঠলো, দিয়া বাড়ি জায়গাটার নাম।
ওর মুখ থেকে দিয়া বাড়ি কথাটা শোনার পর হাত থেকে আমার মোবাইলটা নিচে পড়ে গেলো। এই জায়গাটা যে উত্তরাতে আমি সেইটা জানতাম না। এতোটাই অবাক হলাম যে, যা বলার বাহিরে। ভাবছিলাম আমার হাত থেকে মোবাইল পড়ে যাওয়ার দৃশ্যটা দেখে মেয়েটা খুব অবাক হবে। কিন্তু ওকে দেখে মনে হচ্ছে মেয়েটা আগে থেকেই জানতো যে, আমাকে দ্বারা এমন কিছুই হতে যাবে। মেয়েটা খুব স্বাভাবিক ভাবে মোবাইটা মাটি থেকে উঠিয়ে ওর উন্না দিয়ে মুছে ওর হাতেই রেখে দিলো।
.
মেয়েটা আমার খুব কাছে এসে বলে উঠলো, এই জায়গাটাতে আসার তোমার খুব ইচ্ছে ছিলো এই দিনটাতে তাই না?
মেয়েটার মুখে এই কথাটা শোনার পর আবারো অবাক হয়ে গেলাম। ও এগুলা কি শুরু করলো!প্রতিটা মুহূর্তে দেখি মেয়েটা আমাকে অবাক করে দিচ্ছে! ও কি করে জানলো, এই দিনটাতে আমার এইখানে আসার খুব ইচ্ছে ছিলো।
.
মেয়েটা আমার চোখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। ওর এরকম চাহনি দেখে পুরো শরীরটা ঝিম খেয়ে উঠলো। আমার শরীরটা একদম ছেড়ে দিচ্ছিলো।
.
তারপর মেয়েটা আমার চোখের থেকে চোখ সরিয়ে আমার বুকের দিকে একবার তাকিয়ে আবার আমার চোখে চোখ রেখে বলে উঠলো, চলো সামনে একটা লেক আছে। ওইখানে যেয়ে দাড়াই।
মেয়েটা কিছুটা আগে বাড়লেও আমি আর সামনের দিকে আগাতে পারলাম না। আমি ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম। ওর ফ্রেন্ডের সাথে নাকি ও দেখা করবে। তাহলে কথাটা কি মিথ্যা ছিলো?
.
আমাকে এরূপভাবে দাঁড়িয়ে থাকা দেখে মেয়েটা আবার আমার কাছে এসে। আমার বাম হাতটা ওর হাতে নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে কেমন একটা সামলিয়ে রাখার বিশ্বাস দেখিয়ে আমার হাতটা খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আমার হাতটাতে ওর বুকের স্পর্শ পাওয়ার পর পুরো শরীরটা কেমন যেনো শিরশিরিয়ে উঠলো। সাদিয়াও তো আমার হাতটা এরকম করে অনেকবার ধরে ছিলো। তবে কই! এরকম অনুভূতি তো একটুও সৃষ্টি হয়নি। এতোটা শক্ত করে আপনভাবে আমার হাতটা ধরেনি।
মেয়েটা খুব আস্তে করে আমাকে বলে উঠলো, চলো সামনে একটা সুন্দর লেক আছে সেখানে যাই।
.
আমার মুখ দিয়ে কেন যেনো কোনো শব্দ বের হচ্ছিলো না। তারপর মেয়েটা আমাকে নিয়েই এক পা দুই পা করে সামনের দিকে হাটতে লাগলো।
.
লেকের পার আসার পর মেয়েটা আমার হাতটা ছেড়ে ঘাসের উপর বসে আমার হাতটা ধরে টান দিয়ে আমাকেও সেইখানে বসালো। তারপর মেয়েটা আমাকে আবার বলে উঠলো, গতকাল রাতে নিজের উপর আবারো খুব টর্চার করছো তাইনা?
আমি যেনো ওর একের পর এক কথা শুনে মূর্তি হয়ে উঠেছিলাম। মেয়েটা পরক্ষনে ওর ব্যাগ থেকে আমার ডাইরিটা বের করলো। আমি কি বলবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। কেন যেনো কিছু বলতেও আমার এক অজানা বাধা সৃষ্টি হয়ে উঠেছিলো। মেয়েটা আজ বাসা থেকে বের হওয়ার পর আমাকে দরকারি কাগজ আনার কথা বলে যে, আবার বাসায় গিয়েছিলো। তাহলে এই সেই দরকারি কাগজ! বুঝতে আর বাকি রইলো না যে, মেয়েটা আমার ডাইরিটা পড়ে ফেলেছে।
.
ডাইরিটা হাতে নিয়ে মেয়েটা আমাকে অনেকটা জোর দিয়েই বলে উঠলো, অনেক আগেই এইটা আমার পড়া হয়ে গেছে। এইটাইতো তোমাকে বার বার সাদিয়ার কথা মনে করিয়ে দেয় তাইনা? সেটা আর আমি কখনোই হতে দিচ্ছিনা!
"কি করবে এইটা এখন?
.
মেয়েটা আমার কথা শুনে আমার দিকে একটু তাকয়ে ডাইরিটা লেকের পানিতে ছুড়ে মারলো। আমি শুধু নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে রইলাম। তারপর মেয়েটা দুইজনের মাঝে থাকা দূরত্বটা আর দূরত্বে না রেখে আমার পাশে ঘেসে বসে ঠিক আগের মতো আমার হাতটা শক্ত করে ধরে আমাকে বলে উঠলো, এরপরেও যদি নিজেকে টর্চার করতে চাও তখন আমার কথাটা একটু ভেবো, তুমি নিজেকে একা না আমাকেও টর্চার করতেছো।
কথাটা বলেই আমার বাম কাধে মেয়েটা ওর মাথাটা রাখলো।
লেখা: ফ|য়স|ল আহম্মেদ শ|ওন
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ