- বাবা বিয়া করব।
ভাতের প্লেট থেকে ভাত মুখে তুলতে গিয়ে থেমে গেলেন আকবর সাহেব। ছেলের দিকে ভ্রু কুচকে পর্যবেক্ষন করতে লাগলেন সন্তর্পনে। যেই ছেলের পেটে বোম মেরেও কোন কথা বের করা যায়না। যেই ছেলে সারাদিন মীনা কার্টুন দেখে আর খিলখিল করে হাসে। সেই ছেলে আজ নিজের বিয়ের কথা বলছে। ব্যাপারটা আসলেই রহস্যময়।
- এইভাবে তাকিয়ো না বাবা। ভাত খাও। ভাত মুখের সামনে নিয়ে বসে থাকতে নেই।
-- তা বাবা আপনি কিসব কথা বলিতেছেন আমার তো মাথায় ঢুকিতেছে না।
- বাবা এইভাবে কথা বইলো না। লজ্জা লাগে।
-- আরে বাবারে। আমার ছেলে জনাব শুক্কুর আলী লজ্জাও পায় তার বাবার কথায়। এই কথা শুনে তো আমি মোহাম্মদ আকবর আলী নিজেই লজ্জা পাচ্ছি। তা দোকানে আমার সাইজের প্যাম্পার্স পাওয়া যাবে তো? এক্সট্রা স্কয়ার লার্জ সাইজে হবে না?নাকি সাইজে ব্যসকম হবে? বেল্ট লাগানোর সিস্টেম থাকলে ভালো হয়।
- কিসব বলছো বাবা। কিসের প্যাম্পার্স। আর আল্লাহর ওয়াস্তে শুক্কুর আলী বইলো না। আমার নাম আছে একটা।
-- ক্ষমাপ্রার্থী জনাব। আমাকে ক্ষমা করিয়া দিন। আপনাকে ক্ষিপ্ত করিবার জন্য আপনি যেই শাস্তি আমাকে প্রদান করিবেন তাহা আমি মাথা পাতিয়া লইব।
- যাত্রাপালা বন্ধ করো প্লিজ। আমি ফাজলামোর মুডে নাই।
-- থাপড়িয়ে কানের লতি ২ ইঞ্চি লম্বা করে ফেলব ফাজিল কোথাকার। নিজের বিয়ের কথা নিজের মুখে বলে। লজ্জা শরমের বালাই দুনিয়া থেকে উইঠা গেছে আজকালকার পোলাপানের মধ্য থেকে। সব ইন্টারনেটের দোষ।
- বাবা তোমার ও কিন্তু ২ টা ফেসবুক একাউন্ট আছে যার একটা "ইন্দ্রের অপ্সরী" নাম দিয়ে খোলা।
-- লাইন বিচ্যুত হইস না। ট্র্যাকে থাক। মেয়ে কি করে?
- তোমার ছেলের সাথে প্রেম করে।
-- গুষ্টি উদ্ধার হয়েছে তাতে। তা প্রেম বাদে আর কি করে।
- সময় পেলে বই খাতা নিয়ে ক্লাশে হাজিরা দিতে যায়।
-- কোন ভার্সিটিতে পড়ে?
- বলা যাবে না।
-- কেন?
- মেয়েদের ভার্সিটির নাম শুনলে তো তুমি আবার গেটের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে থাকো তাও জিন্স প্যান্ট আর পোলো টি শার্ট পরে। আমি চাইনা আমার থেকে ছোট কাউকে আম্মা বলে ডাকতে।
-- ট্র্যাক ছেড়ে যাচ্ছিস। ট্র্যাকে আয়। তোর বয়স কত যে বিয়ের জন্য লাফাচ্ছিস?
- তোমার মত বাল্যবিয়ে করলে এতদিনে নাতি নাতনীর বিয়েতে নাগীন ড্যান্স দিতা। বয়স বাড়তেছে তোমার। এখন যদি বিয়ে না করি তাহলে এমন সময় আসবে যে নাতি নাতনীর বিয়েতে নাগীন ড্যান্স তো দুরের কথা সোজামত দাড়াতেই পারবা না। এমনেই তো মেয়ে মানুষ দেখলে এই বয়সেও হুশ থাকে না। তখন হুশের সাথে নিজের জানটা নিয়েও টানাটানি লাগবে।
-- তুই আজকে ট্র্যাক থেকে বেশি পরিমানে দুরে সরে যাচ্ছিস। তা বিয়ের পরে মেয়েকে খাওয়াবি কি?
- ব্যবসার কথা ভেবে রেখেছি।
-- কিসের ব্যবসা??
- স্থলপথের।
-- মানে?
- ০% ডাউন পেমেন্টে লোন নিবো। সেই লোনের টাকা দিয়ে দুইটা ইঞ্জিনচালিত রিক্সা কিনবো। একটা ভাড়া দিবো আরেকটা নিজে চালাবো। যেটা ভাড়া দিবো সেটা থেকে দিনে ৩০০ করে মাসে ৯০০০ টাকা পাবো আর আমি যেটা চালাবো সেটা থেকে ৯ হাজার পাবো। মাসে ১৮ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা দিয়ে লোন ক্লিয়ার করবো আর বাকি ১৫ হাজার করে আরামসে সংসার চলে যাবে।
-- ১৫ হাজারে আবার আরাম ও হবে?? কোন আমলের কথা বলছিস শুনি। এইটা ২০১৭ সাল। ১৯১৭ সাল না।
- আমি জেনে শুনেই সব বলেছি আর ভেবেছি। কেননা আমার থাকতে খেতে তো আর টাকা লাগছে না। খালি তোমার ছেলের বউকে খাওয়াতে যা খরচ হবে এই যা। আর তোমার ছেলের বউ তোমার ছেলের সাথেই থাকবে। সো এটা নিয়ে চিন্তার কি আছে???
-- তোর শ্বশুড় যে এত ভালো মানুষ আগে তো জানতাম না। একদম হাজী মোহাম্মদ মোহসিন মর্ডান ভার্সন।
- আমি তোমার কথা বলছি শ্বশুড়ের না। তুমি আমাকে লোন দিবা আর তোমার ছেলে তোমার বাসাতেই থাকবে তোমার ছেলের বউ সহিত।
-- তাহলে দেরি আছে। আগে তোর মত ভ্যাগাবন্ড এর জন্য মেয়ে পছন্দ কর আর কোন মেয়ে রাজি হোক তারপরে দেখা যাবে নে।
- মেয়ে পছন্দ করাই আছে। সে তোমার ছেলেকে তোমার থেকেও বেশি ভালবাসে। এখন লোনের ব্যবস্থা করো।
-- হ্যা রে!! এইটা মীনা কার্টুনের কত নাম্বার পর্বের কথা বলছিস রে?
- আমি বাস্তবের কথা বলছি। মীনা কার্টুনের না। লোনের ব্যবস্থা করো দ্রুত। জামানত স্বরুপ তোমার রোলেক্স ঘড়ি বন্ধক রাখবো। আর ছেলের বউয়ের জন্য মায়ের রেখে যাওয়া গয়না।
-- আপনি কে স্যার? আপনাকে তো চিনলাম না। আপনি কি আমার পরিচিত কেউ?
- বাবা ফাজলামি কইরো না প্লিজ।
-- ছিঃ কি বলেন স্যার। আপনার সাথে কি আমার ফাজলামির সম্পর্ক? কি যে বলেন না স্যার।
- বাবা তোমার ঘড়ি কিন্তু আমার কাছে।
-- কিইইইইইইইইইই!!!! তুই কোথায় পেলি আমার ঘড়ি?
- জামানত দেবার মত কিছুই আমার নেই। আর লোন যখন তুমিই দিবা তাই ঝামেলা বাধাতে পারো তাই আগে থেকেই মায়ের দেয়া ঘড়িটা সরিয়ে রেখেছি। ওইটাই আমার জামানত।
-- ওইটা তোর মায়ের দেয়া নিশ্চই জানিস।
- হুম জানি তাইতো ওইটার উপরই হামলে পড়েছি।
-- মানুষ রাতে উলটা পালটা কিছু খায় জানতাম। দিনের বেলায় ও যে কিছু খায় তোরে না দেখলে বুঝতামই না। যা খেয়ে ঘুম দে। আর আমি তোকে এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করাচ্ছি না।
- বাবা আমি একদম ঠিক আছি। তুমি ভালোমতই জানো আমি নেশা জাতীয় কিছু ছুইও না। আর এটাও জানতাম যে তুমি রাজি হবা না। তুমি রাজি না হওয়া পর্যন্ত আমি বিয়ে করবো না এইটাও তুমি ভালোমতই জানো। মা মারা যাবার পরে তুমি যে কিভাবে আমাকে মানুষ করেছ তা ভুলার মত না। আমার দুকুলের এককুলে যাও তুমি আছো। রাইসার দুকুলে কেউ নাই। বাবা মারা গেছে জন্মের ঠিক ৭ দিন আগে রোড এক্সিডেন্টে আর সেই শোকে রাইসার মা জন্মের ঠিক এক মাসের মাথায় মৃত্যুবরন করে। অবাক হচ্ছো?? অবাক হবার কিছুই নেই। আমি সেই রাইসার কথাই বলছি যেই রাইসা আমার আপন খালাতো বোন। হ্যা তোমার শ্যালিকার মেয়ে। আমার মাও চাইতো রাইসার সাথে আমার বিয়ে হোক। আম্মা মারা যাবার পরে কিন্তু সংসারটা রাইসাই সামলাচ্ছে নিরন্তনভাবে। বাবা তুমি নিজেই রাইসাকে নিজের মেয়ের মত দেখে আসছো। যদিও আমাদের সাথে থাকে না তবে ওর প্রতি কিন্তু তোমার টানটা কোন অংশে কম না আমি সেটা ভালোমতই জানি। আর রাইসার বাবাই যে তোমাকে বাচাতে গিয়ে মারা গিয়েছে সেটা নিশ্চই তুমি ভুলে যাওনি। রাইসা জানিনা রাজি হবে কিনা তবে আমি সেই ছোট থেকেই রাইসার স্বপ্নের পুরুষের মত করে জীবন যাপন করছি। আমার ইচ্ছা কথা আমি জানালাম। বাকিটা তোমার ইচ্ছা। তবে হ্যা সংসারের দিকটা একটু দেখো। নিজের শরীরের দিকে একটু খেয়াল করো।
কলিজাটা মুহুর্তে দুমড়ে মুচড়ে উঠলো আকবর আলী সাহেবের। নিজের ছেলেকে এতদিন পরে কেন জানি অপরিচিত লাগছে। যেই গালিব গতকাল বাবা বাবা বলে বুকে জড়িয়ে ঘুমাতো সেই ছেলে আজ সংসারের চিন্তা করছে। জীবনে সব ছেলেই বাবা হয় একসময় কিন্তু সব বাবা চাইলেও ছেলে হতে পারে না। আসলেই পারে না।
#বাবার_বিয়ে
Jedny hasan
প্রথম পর্ব
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ