গল্প: মায়াবতীর গল্প
লেখা: শুভ্র
-এই তুমি আমার দিকে একদম তাকাবেনা।
-হাজারবার তাকাবো।
-চোখ তুলে নিবো তোমার হুহ!
-চুল ছিড়ে নিবো আমি তোমার।
-কি?এত্ত সাহস পেয়েছো কোথায় তুমি আমার চুলে হাত দিবে?
-সাহসের দেখেছো কি?আমি রাগলে যা ইচ্ছে তাই করতে পারি।
-তাই নাকি?তো কি করবে শুনি?
-তোমার সব শাড়ি কাঁচি দিয়ে কুচি কুচি করে ফেলবো!
-হি হি হি ভীতুর ডিম।
-ভীতুর কি হলো শুনি?
-রাগটা আমার উপর যা করার আমাকেই করতে হবে।
-তাহলে তো তুমিও ভীতুর ডিম!
-মোটেই না।
-তাহলে আমার উপর রাগ করে আমার টি-শার্ট
গুলো এমন অবস্থা করেছো কেনো?
-আমি একটা মেয়ে আমার যা ইচ্ছে হবে আমি তাই করবো।
-আমিও একটা ছেলে যা ইচ্ছে তাই করবো।
-কি আর করবে,শাড়ি নষ্ট করবে তো কর।মানুষে তোমাকে খেপাবে পাগল বলে।
-যা বলে বলুক।তোমাকে সহজে ছাড়বো না।
-হি হি হি গাঁধা একটা।
-তুমি কি গাঁধার গাঁধী।
-হু আমার বয়েই গেছে উনার গাঁধী হতে।
-বেশ তো আছো কেন এই গাঁধার কাছে পড়ে?যাও
চলে চাও।
-কোথায় যাবো?
-যেদিকে দু'চোখ যায়।
-তুমি পারবে আমাকে হারানোর বেদনা সইতে?
-না মানে...হ্যা পারতে তো হবে।
-শয়তান জামাই তুমি কি ভেবেছো আমি এত
সহজে তোমার ঘাড় থেকে নেমে যাবো,আর তুমি
অন্য মেয়েদের নিয়ে টাংকি মারবে তা আমি কখনও হতে দিবোনা।
-তো বেশ তো থাকো তুমি।
-আমি থাকবো মানে তুমি কই যাবে?
-চলে যাবো দূর বহুদূর...
-ওয়াও এই আমাকেও সাথে নিও।মুসাফিরের
বেশে আমাদের হানিমুন টাও হয়ে যাবে।
-চুপ।
-কেনো?
-ভুলে যেও না আমরা ঝগড়া করছি কোনো আবেগ
চলবেনা।
-এই যে মিষ্টার বিড়াল আমি সারাজীবন কেনো এক সেকেন্ডও থাকতে পারবো না তোমার সাথে।
-কি আমি বিড়াল?তুমি ইঁদুর।
-আমি ইঁদুর!এ্যাক ধুর একটা ভালো নামও দিতে
পারোনা।
-না পারিনা তুমি একটা এ্যালার্জী।
-কিইইই বললে?
-আমার টি-শার্ট গুলো তো মনে হয় নিজের দাঁত
দিয়েই নষ্ট করেছো।
-হ্যা করেছি,করবো ওগুলোর উপর আমার যথেষ্ট
অধিকার আছে।
-কিসের অধিকার শুনি?
-তোমাকে বলবো কেনো তুমি কোন দেশের মহারাজা হ্যা?
-বলবে না তো বেশ দাড়াও দেখাচ্ছি।
-এই শুভ্র একদম না।
-হে হে হে হে এবার কেমন লাগে? (সারামুখে কালি লেপ্টে দিয়েছি)
-উহু উহু উহু।
-কি হলো এত সহজে হেরে গেলেন মহারানী।
-শয়তান,পাঁজি ছেলে,তুমি একটা পঁচা।
-ওয়াও আমার পেত্নি বউকে নিয়ে একটা সেল্ফি তুলতে হবে।
-একদম না,আর আমাকে বউ ডাকবেনা।
-তাহলে কি ডাকবো।
-কিছুনা।
-ও বউ একবার আয়নায় মুখটা দেখ না।একেবারে
পরী,তবে এ পরী একটু কালো হা হা হা।
-এর প্রতিশোধ কিন্তু আমি নিয়েই ছাড়বো।
-তাই বুঝি?দেখি নাকের কাছে একটু বাকি আছে ওখানে একটু.....
-এই একদম না...... (দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে
গেলো)
এই মেয়েটা পাগলী না পাগলীর ডিব্বা হা হা হা।
মায়াবতী?হ্যা মায়ামাখা মুখটা যতটা হাসিখুশি রাগলে বা অভিমান করলে একেবারে শ্রাবনের কালো আকাশ।এইতো কয়েকমাস হলো নীলাকে বউ করে এনেছি।এখন যেমন সময়!সত্যিই একটু নরম মনেরর মেয়ে পাওয়া তো দূরের কথা চাওয়াটাই বেকার।তবু হয়তো আমার ভাগ্যের লিখনে এমন একটা মেয়েকে খুঁজে পেয়েছি।সত্যি ওকে নিয়ে ভাবতে এতো কেনো ভালো লাগে জানিনা।ওর সবথেকে একটা জিনিসই আমার বেশি
মন কাঁড়ে।ওর উঁচু নিচু দাঁতগুলো।হাসলে এত
সুন্দর লাগে আমি হা করে তাকিয়ে থাকি।যদি কেউ
আমাকে জিজ্ঞেস করে মেয়েদের চোখের পর কি সুন্দর,নিঃসন্দেহে বলবো ওদের হাঁসি।সবার
হাঁসি যদিও সুন্দর তবে আমার মায়াবতীর হাঁসিটা আমাকে বার বার প্রেমে পড়তে বাধ্য করে।ওর এলেমেলো দাঁতের হাঁসি আমাকে বাধ্য করে তাকিয়ে থাকতে।যদিও বেশি বেশি ভালোবাসা দেখাইনি কখনো।কারন কেউ যখন বুঝে তুমি তার উপর এতোটা দুর্বল যে তুমি তাকে ছাড়া চলতে পারবেনা তখন সে তোমার দুর্বলতার সুযোগ নিবে।তারপরেও আমি আমার মতো করেই ভালোবাসি আমার মায়াবতীকে।আমাদের ঝগড়াটা একটু অন্যরকম। বেশি রেগে যাওয়া যাবেনা শর্ত আছে।কিন্তু নীলা মাঝে মাঝে এতোটাই রাগে যে ঠোঁটটা থর থর
করে কাঁপে।যাই হোক মহারানী আজকের রাগার
কারনটা হলো একটা ফোন কল।কি জানি কি
ভাবোদয় হল আমার কলেজ লাইফের বান্ধবী
নিশা হঠাৎ আননোন নাম্বার থেকে ফোন দিলো।
ফোনটা অবশ্য নীলাই প্রথমে তুলেছিলো।পরে
আমাকে দেয় মেয়ে কন্ঠ শুনে।ফোনটা আমার
হাতে দেওয়ার সময় চোখ কটমট করে তাকায়।আমি ভেবেছিলাম সামান্য একটু কথা বলেই রাখবো তাই নীলাকে চা ও আনতে বলেছিলাম।কিন্তু নিশা এত্তসব কথা শুরু করলো যে ভুলে গেলাম সব।হাঁসাহাঁসি,কথা বলা,বিভিন্ন ভাবে কথা শেষ করে স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখি একঘন্টা পঁচিশ মিনিট বত্রিশ সেকেন্ড।ভয়ে ভয়ে পিছনে তাকালাম কারন
নীলাকে চা আনতে বলেছিলাম।কথা বলার ফাঁকে
আমাকে অবশ্য কয়েকবার ডেকেছিলো কিন্তু
খেয়াল করিনি।ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম
তো নীলা রাগী মুখ কল্পনা করে পা টিপে টিপে রুমে আসলাম। ভেবেছি মায়া হয়তো রাগে চেঁচামেচি করবে।কিন্তু বউ তো দেখি একেবারে শান্ত হাতে একটা কাঁচি নিয়ে মনোযোগ সহকারে কি যেন করছে।পাশে চায়ের কাপটাও খালি নিশ্চয়ই ও খেয়েছে।কিন্তু ও কি করছে কাঁচি নিয়ে?শান্ত দেখে
আস্তে আস্তে ওর কাছে যেতেই বড় ধরনের শক
খেলাম!কি করেছে এটা,ওহ গড!কিভাবে সম্ভব
এটা?কি করেছে মেয়েটা।নিজে পছন্দ করে গতদিনই তিনটে টি শার্ট এনেছি সুন্দর করে তার উপর গোলক ত্রিভুজ চতুর্ভুজ এঁকেছে।এটা
কি হলো নীলা।কি হলো দেখতেই পারছো।কেন
করলে এরকম।ইচ্ছে হল তাই করলাম।তারপরই
শুরু হলো ঝগড়া।যাই হোক পাগলীটাকে হারিয়ে
দিয়েছি,সারামুখে কালি লেপ্টে দিয়েছি।দৌড়ে পালিয়েছে।মেয়েটা যে ফাজিল!কখন কি মনে চাইবে,আবার কখন কি করবে কে জানে।
পরেরদিন সকালে.....
-এই নীলা,এই উঠো।
-কি হলো এত সকালে ডাকছ কেনো হু?
-এখন সকাল কয়টা বাজে খেয়াল আছে?
-কতইবা বাজে ঘুমিয়ে পড়।
-ঘুমিয়ে পড়বো মানে?এখন ৮:৩৫ বাজে আমার
অফিস ৯টায় নাস্তা কই?
-ইশশ এই যা!এই শোন না বলছি আজকে খেতে
হবেনা!
-মানে কি নীলা,না খেয়ে কেমনে থাকবো?
-একটাই তো দিন,বলছি তো টের পাইনি।
-ধুর।
-এত রাগ দেখানোর কি আছে?সামান্য ব্যাপারে।
-সামান্য ব্যাপার?এটা তুমি জানো না আমি বাইরে খাইনা?
-খাও না,আজকে খাবে।
-পারবো না...উঠো কিছু একটা বানাও।
-পারবো না।
-কেনো?
-চুপচাপ শুয়ে পড়লো।
যদিও ভীষন রাগ হচ্ছিলো তবুও না খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম।আমি জানি কাল বলেছিলো প্রতিশোধ নিবে এজন্য ইচ্ছে করেই শুয়ে আছে।অবশ্য আম্মু নাস্তা বানিয়ে দিয়েছে।কিন্তু বাসায় খাইনি অফিসে এসেই খেয়েছি।লেট হচ্ছিলো এমনিতেই।
সন্ধ্যায়....
-নীলা শুনছো?
-বলো।
-এক কাপ চা দাও তো।
-হাতে অনেক কাজ।
-কি এমন কাজ শুনি?
-সব কৈফিয়ত তোমাকে দিতে হবে কেনো?
-মানে কি নীলা তুমি এমন বিহেভ করছো কেনো?
-আমি ঠিকই আছি।
-তো যাও চা নিয়ে এসো।
-পারবো না।
-মনে থাকে যেনো।
-হু।
এমনভাবে চলতে থাকলে আমার গৃহত্যাগী হতে
বেশিদিন লাগবেনা।না পারি জোরে ধমক দিতে,না পারি কিছু করতে।কিইবা করবো?কিছু করতে গেলে আম্মু আব্বু আমাকে ছেড়ে দিবেনা।আদরের বউমা তাদের,আমার অস্তিত্ব এখন নগন্য।বন্ধুরা ঠিকই বলতো,বউ মানে প্যারা!
দুইদিন পর সন্ধ্যায়.....
নীলা আলমারিতে কাপড় সাজাচ্ছে আর আড়চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছে।ইদানিং প্রায়ই তাকায় আমার দিকে কারন এখন যোগাযোগের মাধ্যম হচ্ছে চোখের ভাষা।নাহ সবার জন্য না শুধু আমার আর নীলার জন্য।গত দুইদিন নীলার সাথে আড়ি।মানে ওর সাথে কথা হয়না।ওকে কখনো জ্বালাইনা,খাবার দিতে বলিনা।এমনি নিজেই কথা বলা বন্ধ করেছি।ও অবশ্য বলার চেষ্টা করে,কিন্তু আমি পাত্তা দেইনা।ভালোই যাচ্ছিলো।কিন্তু আজ দেখি মায়াবতীর চোখ টলমল করছে।কারনটা হচ্ছে আমার শ্যালক এসেছে ওকে নিতে।সকালেই বাপের বাড়ি যাবে।আমি
খাটে বসে টিভি দেখছি আর গুনগুন করছি।হঠাৎ
নীলা ছুটে এসে রিমোটটা নিয়ে টিভি অফ করে
ছুড়ে ফেললো রিমোটটা।বোঝা যাচ্ছে বউ আমার
বেশ রেগে আছে।
-এই আমার দিকে তাকাও? (আমার কলার চেপে
ধরে বললো মায়া)
-কথা না বলে হাত দিয়ে ইশারা করে বললাম
ছেড়ে দিতে।
-আমি কি এতই খারাপ যে আমার সাথে কথা বলতে এত ঘৃনা লাগে তোমার?
-এই ছাড়ো কি করছ? (মুখ খুললাম)
-কি হয়েছে তোমার হু নীরবে থেকে কি প্রমান করতে চাইছো আমার আর কোনো প্রয়োজন নেই তোমার জীবনে তাইতো?নতুন কেউ এসেছে বুঝি?
-কি বলো এসব?
-কি বলি বোঝোনা?ওরকম কিছু যদি ভেবে থাকো,
যদি ভেবে থাকো আমাকে এ্যভোয়েড করে চলবে খুন করে ফেলবো বলে দিলাম।
-কি করলাম আমি?
-ন্যাকামি কর তাই না?কি ভাবো নিজেকে হু?আমার সাথে কথা না বললে আমি কষ্ট পাবো তাই তো?মোটেও না,কোন কষ্ট নেই আমার।সব মুছে যাবে।কালই তো চলে যাবো বাপের বাড়ি।আর কখনও আসবোনা জ্বালাতে। (পাগলীটা কেঁদে ফেলেছে)
-ও বউ আমি তোমাকে ভালোবাসি,এরকম বলোনা।
-একদম বউ ডাকবেনা আমাকে!
-কেনো?
-নিজেকে খুব মহাপুরুষ ভাবো তাইনা?
-উহু তুমি ছাড়া আমি অসম্পূর্ন।
-যাই হোক তোমার ন্যাকামো দেখার কোনো ইচ্ছে নেই।কাল চলে যাবো ভুলেও যেনো আমাকে আসতে না বলা হয়।
-আমি স্যরি তো নীলা। (হাত ধরলাম ওর)
-হাত ছাড়ো।
-শোনোনা লক্ষীটি।
-ছাড়তে বলেছি?
-সত্যিই ছেড়ে দিবো?
-খুন করে ফেলবো।
-পাগলী একটা। (বুকে মাথা রাখলো)
-এত কষ্ট দাও কেনো?
-তুমি কষ্ট পাও বলে।
-মজা দেখো তাইনা?
-এ মা,ছি ছি...কি যে বলো তুমি আমার লক্ষী বউ!
-এই শোনো না?
-বলো?
-দুইদিন পর আমাকে আনতে যাবে কিন্তু।্!
-না গেলে কি হবে?
-খুন করে ফেলবো।
-আমার মায়াবতীর কি হবে তাহলে?
-হারিয়ে যাবে।
-পাগলী ভালোবাসি।
-ভালোবাসি অনেক।
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ