আমি কিছু না বলে চুপচাপ বসে আছি। সামনে একটা মেয়ে বসে মুচকি মুচকি হাসতেছে।
- হিহি তোমার সাথে কথা বলতে না আমার খুব লজ্জা লাগতেছে। (মেয়েটি)
এই প্রথম দেখলাম কেউ লজ্জা পেলে হাসে। এক সময় মেয়েটি শব্দ করে হাসা শুরু করে দিলো
- হাহাহাহাহাহাহা। তোমার সাথে আমার বিয়ে হবে ভাবতেই খুব মজা লাগতেছে। হিহিহি।
হায় রে কপাল শেষে কি না এই মেয়েকে বিয়ে করা লাগতেছে। আমার থেকে দশ বছরে সিনিয়ার হবে।
- এই তুমি কথা বলতেছো না কেন? এমনিই আমি লজ্জা পাচ্ছি তুমি যদি কথা না বলো তাহলে তো আমি আরো লজ্জা পাব।
খোদা বাচাও আমাকে।
-আচ্ছা তুমি আমাকে বিয়ের পর কি বলে ডাকবা? জানো আমার বড় আপুর নাম লায়লা। ওর জামাই ওকে লালা বলে ডাকে। হিহিহি। মজা না?
- আপনার নাম কি? (আমি)
- শায়লা
- তাহলে আমি আপনাকে শালা বলে ডাকব।
- হাহাহাহাহাহা.............তুমি তো খুব দুষ্টু। বউকে কেউ শালা বলে?
.
আমি আবারও চুপ করে থাকলাম। কি করব ভেবে পাচ্ছি না। আজ রাতে এই আন্টির সাথে আমার বিয়ে হবে। আন্টি বলছি কারন ওনি সত্যিই আমার আন্টির বয়সের। ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন দেখতাম ক্যাটরিনার মতো সুন্দরি কে বিয়ে করব। কিন্তু এই মেয়ে দেখতে......কি আর বলব। কোথায় শেখ সাদি আর কোথায়...............
.
.
কলেজ থেকে বাসায় ফিরছিলাম এমন সময় কয়েকটা লোক আমার কাছে এসে বললো আপনাকে আমাদের সাথে যেতে হবে। কোথায় যেতে হবে কিছু বলে না। যেতে না চাওয়ার ওরা আমাকে ক্লোরোফম দিয়ে অজ্ঞান করে নিয়ে আসছে। চোখ খুলতেই দেখি একজন বয়স্ক লোক আমার সামনে বসে আছে। ডাকাতের মতো চেহারা।
- নাম কি তোমার? (লোকটি)
- আমি কোথায়? (আমি)
- আমার বাড়িতে
- এখানে কিভাবে আসলাম
- আমার ছেলেরা কিডন্যাপ করে নিয়ে আসছে
- কেন? কি চান আমার কাছে?
- আমার মেয়ের তোমাকে পছন্দ হইছে। তোমার সাথে ওর বিয়ে দিব।
- কিইইই!!
এইটুকু বলে লোকটি চলে গেলো। কেউ মেয়ের বিয়ে দাওয়ার জন্য কাউকে কিডন্যাপ করে আনে আমার জানা ছিল না। একটু পর একজন লোক এসে আমার সামনে খাবার রাখলো। লোকটাকে জিজ্ঞাস করলাম আমাকে এভাবে ধরে আনা হইছে কেন?
লোকটার মুখে যা শুনলাম তা হলো,,ওরা যার আন্ডারে কাজ করে তার মেয়ের নাকি আমাকে দেখে খুব পছন্দ হয়। সে এই কথা ওর আব্বুকে বলে। ওর আব্বু একজন ডাকাত। প্রায় বড়লোকের ছেলেমেয়েদের কিডন্যাপ করে নিয়ে এসে বেশি টাকা দাবি করে। টাকা দিলে তখন ছেড়ে দেয়। কয়েক বছর ধরে ওনার মেয়ের বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতেছে। কিন্তু মেয়ের বয়স একটু বেশি বলে বিয়ে হচ্ছে না। তাই এবার আমাকে ধরে নিয়ে আসা হয়েছে যাতে আমার সাথে বিয়েটা হয়।
.
যাহ শালা আমার মতো কাউয়াকে কেউ পছন্দ করছে। আবার তার সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য আমাকে ধরে আনা হয়েছে। কি আজব ব্যাপার। সবে মাত্র কলেজে ভর্তি হইছি। এই সময় বিয়ে করব কিভাবে? আব্বু আম্মুকে কি বলব? একটু পর একটা মেয়ে ঘরে এসে বক বক শুরু করে। ওই মেয়েটার সাথেই আমার বিয়ে হবে। মেয়ে না বলে বুড়ি বলা উচিত। দেখতে একটুও সুন্দর না। পালাতে হবে। যে করেই হোক এখান থেকে আমার পালাতে হবে। কিন্তু কোন উপায়ই নাই। ঘরে বন্ধি হয়ে আছি।
.
কিছুক্ষন পর একটা লোক এসে আমাকে ঘর থেকে বের করলো। বাহিরে দেখি পুরো বাড়িতে মানুষ ভর্তি। বাড়ির মেয়ে বিয়ে তাই এতো লোকের আনাগোনা। সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে আমার বলি হয়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষনের মধ্যেই বলির কাজ সম্পন্ন হবে। এতো মানুষের মধ্যে একটা পরিচিত মানুষের মুখ দেখতে পাইলাম। একটা চেয়ারে একাই বসে আছে। আমার ফ্রেন্ড আশা। একা একা বসে আছে। এখানে ওকে দেখব ভাবি নাই। আমি আশার কাছে গেলাম।
- আশা!!
আমার দিকে তাকালো
- তুই এখানে??
- হুম। কিন্তু তুই এখানে কিভাবে?
- কাজিনের বিয়ে। হঠাত করেই ঠিক হইলো তাই আসলাম। তুই কিভাবে?
- তোর অই বুড়ি কাজিনের লগে আমারই বিয়ে রে। ফেসে গেছি ভাই।
- কিইইই। কি বলিস? কিভাবে?
- আমাকে ধরে নিয়ে আসছে। তুই আমাকে বাচা ভাই। প্লিজ। আমি কিছুতেই এ বিয়ে করতে পারব না।
- ওহহ। তুই-ই সেই ছেলে যাকে আমার চাচা ধরে নিয়ে আসছে।
- ওই ডাকাতটা তোর চাচা হয়??
- হুম
- এখন আমি কি করব বল।
- বিয়ে করে ফেল
- কি বলছিস?? ওরকম মেয়েকে বিয়ে করা যায় নাকি?
- আচ্ছা আমি দেখছি কি করা যায়। তোকে এখন পালাতে হবে। আমি ব্যবস্থা করতেছি।
- আচ্ছা। তাড়াতাড়ি কর।
বাড়িতে অনেক মানুষজন। এতো মানুষের ভিড়ে পালানো অসম্ভব। তারপরও অনেক কষ্টে আশা আমাকে ওই বাড়ি থেকে বাহিরে বের করে নিয়ে আসলো। বাহিরেও অনেক লোক। শেষ মেষ একটা চাদর মুখে দিয়ে আশা আর আমি বাড়ি থেকে দূরে চলে আসলাম।
- আচ্ছা তুই একটা অটো ধরে দূরে কোথাও চলে যা। আবার যদি ওরা তোকে ধরতে পারে তাহলে এবার বিয়ে দিয়েই ছাড়বে। (আশা)
- তুইও চল আমার সাথে। আমার একা যেতে ভয় করছে। (আমি)
- আরে ভয় পাওয়ার কি আছে? যা তুই। আমি গেলে সমস্যা হবে।
- নাহ তুইও চল। তুই এখন ওখানে গেলে তোকে সবাই সন্দেহ করবে যে তুই-ই আমাকে পালাতে সাহায্য করছিস।
আশা কিছুক্ষন ভাবলো। বেশিক্ষন ভাবার সময় নাই। তাই আশাও আমার সাথে চলে আসলো। ট্যাক্সিতে করে আমার মেসে চলে আসলাম। এখন মেসে থাকা ঠিক হবে না। তাই মেস থেকে কাপড় চোপড় নিয়ে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার জন্য বের হব এমন সময় দরজার সামনে কয়েকজন লোককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। আশা দেখে থ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো। আশার আব্বুসহ কয়েকজন লোক আসছে।
- আ আ আব্বু তুমি? (আশা)
আশার আব্বু আশাকে ধমক দিলো।
-তুই কি করছিস এসব? যে ছেলের সাথে শায়লার বিয়ে ঠিক হইছে সেই ছেলের সাথেই পালিয়ে আসছিস? আমার মান সম্মান সব ডুবাইলি। (আশার আব্বু)
- আসলে আব্বু.....
- চুপ তুই
আশা চুপ হয়ে গেলো। আশার আব্বু আমার দিকে এগিয়ে আসলো। রাগি দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো।
- নাম কি? (আশার আব্বু)
- জ্বি..আল আমিন
- কর কি?
- লেখাপড়া
- আমার মেয়েকে নিয়ে পালাইছো কেন?
- আসলে আমি....
- থাক আর বলতে হবে না। আমার সাথে আসো। আশা আয়।
আশা কিছু না বলে ওর আব্বুর পিছু পিছু যাওয়া শুরু করলো। আমিও ওর পিছু পিছু যাওয়া শুরু করলাম। কোথায় নিয়ে যাচ্ছে জানি না। আবার ওখানে নিয়ে যাচ্ছে না তো?? ওই মেয়ের সাথে এবার জোর করে বিয়ে দিয়ে দিবে নাকি??
গাড়িতে করে একটা বাসার সামনে চলে আসলাম। শায়লাদের বাসা এটা নয়। অন্য বাসায়। গাড়ি থেকে নেমে আশাকে ফিস ফিস করে বললাম
- ওই কই আসলাম আমরা?
- এটা আমাদের বাসা
- তোদের বাসায় কেন?
- শালা শুকরিয়া আদায় কর যে শায়লাদের বাসায় নিয়ে যায় নি। ওখানে গেলে নির্ঘাত বিয়ে দিতো।
- কিন্তু এখানে এখন কি করব?
- চুপ থাক তো এখন। এমনেই টেনশনে মরতেছি।
আমি চুপ করে গেলাম। বাসার ভিতরে ঢুকে একটা রুমে বসে আছি। একা একাই বসে আছি। আশা কই আছে জানি না। কি যে হবে আল্লাহই ভাল জানেন। একটু পর আশার আব্বু এসে আমার কাছে আমার আব্বুর নাম্বার চাইলো। নাম্বার দিলাম। আব্বু আম্মুকে এখানে আসতে বলবে নাকি?? খাইছে। ওনারা আসলে আরো ঝামেলা বাড়বে।
.
.
অনেকক্ষন ধরে একা একা রুমে বসে আছি। কেউ এদিকে আসতেছে না। আর ভাল লাগতেছে না বসে থাকতে। কিছুক্ষন পর একটা লোক আসলো আমাকে বাহিরে নিয়ে আসলো। বাহিরে এসে দেখি আমার আব্বু আম্মু আর ছোট ভাই আশার আব্বুর সাথে হাসতে হাসতে কথা বলতেছে। আমি গিয়ে ওখানে বসলাম। একটু পর একটা পাঞ্জাবি আমার হাতে দিয়ে আমার ছোট ভাইকে সহ একটা রুমে পাঠানো হলো। পাঞ্জাবি দিচ্ছে তারমানে বিয়ে হচ্ছে। ওই মেয়েকে বিয়ে করতেই হবে। হায় আল্লাহ আমি শেষ। রুমে আমার ছোট ভাইকে বললাম
- কি রে আব্বু আম্মু বিয়েতে রাজি হইছে?
- হুম (ছোট ভাই)
- কিইই? এরকম একটা মেয়ের সাথে বিয়ে দিতে রাজি হইল কেন? মেয়ে কি দেখছে ওনারা?
- হুম। আব্বু আম্মুর অনেক পছন্দ হইছে।
- কি বলিস? এমন মেয়েকে পছন্দ হলো কেমনে?
- মেয়ে দেখতে তো খুবেই সুন্দর। আর তুই পালিয়ে নিয়ে গেছিস মেয়েকে। এখন বিয়েতে রাজি না হয়ে উপায় আছে? মান সম্মান সব চলে যাবে তো।
- আমি মেয়েকে পালিয়ে নিয়ে গেছি? কি বলছিস? শায়লাকে বিয়ে করব না বলে তো আমি পালাইছি।
- শায়লা কে?
- যার সাথে আমার বিয়ে দিচ্ছে সেই মেয়ের নাম শায়লা
- ভাবির নাম শায়লা না তো। ভাবির নাম তো আশা।
- কিইইই
- হুম। ভাবির বাবা আব্বুকে বলছিল, তুই নাকি ওনার মেয়েকে নিয়ে একটা বিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে চাইছিলি। তোর মেসে নাকি ওরা তোকে আর আশাকে ধরতে পেরে এখানে নিয়ে আসছে।
- আরে আসল কাহিনী তোরা জানিস না রে।
এরপর পুরো কাহিনী ওকে বললাম। মুখ হা করে আমার সব কথা গিলে নিচ্ছে যেন।
- আমার মাথা ঘুরতেছে রে। পুরাই সিনেমা হয়ে গেছে।
- হুম। এখন কি করব বল
- এখন যেমন হচ্ছে তেমন হতে দে। তোর বান্ধবিকেই বিয়ে করে ফেল। এছাড়া আর কোন উপায় নাই
- তা কেমন করে হয়?
- কেন হয় না? তোকে তো আর ওই বুড়িকে বিয়ে করতে হচ্ছে না। ভেবে দেখ এখন যদি এই বিয়ে না করিস তাহলে ওই বুড়িটাকে বিয়ে করতে হবে।
কি করব কিছু বুঝতে পাচ্ছি না। ও ঠিকই বলেছে। দুইটা অফশনই আছে শুধু হয় আশাকে বিয়ে কর না হয় শায়লাকে। কিন্তু আশা আমাকে বিয়ে করতে রাজি হবে না তো। বেশি ভাবার সময় পেলাম না। পাঞ্জাবি পড়ে বিয়ের জন্য রেডি হয়ে গেলাম। অন্তত ওই বুড়ির হাত থেকে বাচা যাবে।
.
.
.
কিছু কিছু মানুষের জীবনে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যায় যা সিনেমার কাহিনীকেও হার মানায়। এরকম একজন যে আমি হব সেটা কখনোই ভাবি নি। আজ সারাদিন যা যা ঘটলো আমার সাথে এটা নিয়ে যদি একটা সিনেমা তৈরি করা হয় সেটা নির্ঘাত অস্কার পাইতো।
আমার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। রুমের ভিতরে ঢুকতে ভয় লাগছে। আশা রুমের ভিতরে বসে আছে। ওর সামনে গেলে আমাকে মেরে ফেলবে। চোখে ঘুমও আসছে খুব। রুমের ভিতরেও যেতে পাচ্ছি না। অবশেষে আর থাকতে না পেরে রুমের ভিতরে গেলাম। আশা আমার বিছানায় বসে আছে। আমি খুব ভয়ে ভয়ে বিছানার দিকে গেলাম।
- অই খবরদার কাছে আসবি না (আশা)
- অকে অকে। তুই চাকুটা রেখে দে। (আমি)
- কুত্তা। তোর জন্য আমার লাইফ শেষ হয়ে গেল (কেদে কেদে)
- আর আমার লাইফ মনে হয় খুব সুন্দর হয়ে গেলো।
আশা কান্না করতেছে।
- ঘুম আসছে। সর আমি ঘুমাব। (আমি)
- সরবো মানে? আমি কই ঘুমাব?
- আমি কি জানি? আমার বিছানা থেকে সরে যেখানে খুশি ঘুমা
- আমি পারব না। তুই যেখানে খুশি ঘুমা। আমি বিছানায়ই ঘুমাব
- মগের মুল্লুক নাকি? যা অন্য কোথাও গিয়ে মর
- অই এইটা দেখছস? ঘুতাইয়া তোর নার ভুড়ি বের কইরা দিমু। (চাকু হাতে)
- অ অ অই আমি আমি বাহিরে যাচ্ছি। তুই ঘুমাও। গুড নাইট।
চাকু দেখে ভয় পেয়ে বাহিরে চলে আসলাম। রাগ উঠতেছে এখন। আমার ঘর আমার বিছানা আর আমাকেই থাকতে দিল না। বারান্ডায় দাঁড়িয়ে আছি। একটা চেয়ারও নাই যে বসব। খুব বৃষ্টি হচ্ছে। তা নাহলে বন্ধুর বাসায় চলে যেতাম। এখন দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া কোন উপায় নাই। মাঝে মাঝে আকাশ ঝিলিক দিয়ে উঠতেছে। আর বিকট শব্দ করে ডেকে উঠতেছে। মনে হচ্ছে আমার চেয়েও আকাশটা বেশি রেগে আছে।
-অইই
পিছন থেকে আশা ডাক দিলো
- কি?
- আমার ভয় করতেছে।
- তো? আমি কি করব? নাচব??
- ঘরে আয়। একা থাকতে পারব না আমি।
- যা ভাগ
- কুত্তা তুই ঘরে আসবি (চাকু দেখিয়ে)
- আসতেছি!!
ঘরে ঢুকলাম।
- আমার ঘুম ধরছে। তুই বিছানায় ঘুমা। আমি শোফায় ঘুমাচ্ছি। (আমি)
- নাহ। তুই শোফায় ঘুমাস না। ভয় করে খুব আমার। (আশা)
- তাহলে আমি কোথায় ঘুমাব।
- একটা রাত না ঘুমালে হয় না।
- কিই? আমি পারব না। আমার অনেক ঘুম আসতেছে।
- আচ্ছা বিছানায়ই ঘুমা। তবে আমার ধারে কাছেও আসার চেষ্টা করবি না। তাহলে এইটা দিয়া তোরে খুন করে ফেলব। (চাকু দেখিয়ে)
আমি আর কোনকিছু শুনার অপেক্ষা করলাম না। সাথে সাথে শুয়ে পড়লাম। শোয়ার সাথে সাথেই ঘুম। সারাদিন শরীরের উপর দিয়ে অনেক ধকল গেছে। পুরো দিনটাই দুঃস্বপ্নে কাটছে। এখন একটু ঘুমানো দরকার।
মাঝ রাতে মেঘের গর্জনে হঠাত ঘুম ভেঙে গেল। ঘুম থেকে উঠে দেখি আশা আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। মেঘের গর্জনের কারনে খুব ভয় পাইছে। যখনই মেঘ গর্জে উঠতেছে তখনও আশা আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতেছে। আমার মাঝে অন্য রকমের ফিলিংস কাজ করতেছে। অন্য এক ধরনের ভাল লাগতেছে। আবার যে কখন ঘুমিয়ে পড়ছি মনে নাই।
ঘুম থেকে উঠে দেখি ঘরে আশা নেই। সকালে ঘুম থেকে উঠেই আমার চা খাওয়ার অভ্যাস। তাই রান্নাঘরের দিকে গেলাম আম্মুকে চা বানাতে বলার জন্য। রান্না ঘরে দেখি আশা আর আম্মু একসাথে রান্না করতেছে আর গল্প করতেছে। আশা এমন ভাব যেন সত্যি সত্যিই বাসার বউ।
- কি রে কিছু বলবি? (আম্মু)
- চা কই? (আমি)
- ঘরে যা বউমা নিয়ে যাচ্ছে।
ঘরে চলে আসলাম। একটু পর আশা চায়ের কাপ হাতে ঘরে আসলো।
- এই নে চা (আশা)
- ধন্যবাদ
- কেন?
- কষ্ট করে চা করলি তাই
- আমি করি নি। তোর মা করছে। আমি তোর জন্য চা করব এটা ভাবলি কেমনে?
- ওহহ। সেটাও তো ঠিক।
- অই শোন আমি তোকে কখনোই স্বামী হিসেবে মানতে পারব না।
- হুম। আমিও পারব না মানতে।
- তাহলে আমাকে তুই তাড়াতাড়ি ডিভোর্স দিয়ে দে। আর আমাকে আমাদের বাসায় দিয়ে আয়।
- আচ্ছা।
এভাবে কিছুদিন চললো। প্রতিদিনই আশার সাথে কিছু না কিছু নিয়ে ঝগড়া লাগতো। এমন ভাব দেখায় যেন বিয়েটা হওয়ার পিছনে সম্পূর্ন দোষ আমার। মাঝে মাঝে খুব রাগ উঠতো আমার। তবে ওর সাথে ঝগড়া করতে ভালই লাগতো। মাঝে মাঝে বিনা কারনেই ওর সাথে ঝগড়া বাধাতাম। ভালই লাগতো।
একদিন আব্বু আম্মু ছোটভাই সবাই আমাদের গ্রামের বাড়িতে গেছে। আমার ওখানে যেতে ভাল লাগে না তাই যাই নি। আর আমার জন্য আম্মু আশাকে নিয়ে যায় নি। রুমে বসে টিভি দেখতেছি। আশা বলল
- অই আমার খুদা লাগছে
- তো খাবি। আমাকে বলছিস কেন?
- কি খাব?
- কি খাবি মানে? আম্মু রান্না করে রাখেনি?
- নাহ
- তাহলে কি খাব এখন?
- আমি কি জানি?
আম্মুকে কল দিলাম
- রান্না করে রেখে যাও নি কেন?
- বউমাকে বল রান্না করতে
- আমি পারব না তুমি বলো
আশাকে ফোনটা দিলাম। আশা আম্মুর সাথে কিছুক্ষন কথা বলল। এরপর আশা আমাকে বলল
- অই আমি রান্না করতে পারব না। তুই রান্না কর
- কিই!! আমি জীবনে রান্না করি নাই
- তো আমি করছি নাকি?
- তুই রান্না করলে কর না করলে না খেয়ে থাক
- তুই হোটেল থেকে খাবার কিনে আন
- পারব না।
এটা বলে চলে আসলাম বাহিরে। হোটেলের খাবার আমি খাইতে পারি না। খাইলের বমি হয়। দুপুরের দিকে বাসায় আসলাম। খুব খুদা লেগেছে। আশা রান্না করছে কিনা আল্লাহই ভাল জানেন। সন্ধ্যার সময় বাসায় ঢুকে দেখি আশা বসে বসে টিভি দেখতেছে।
- অই খুদা লাগছে (আমি)
- তো আমি কি করব? নাচব? (আশা)
- রান্না করিস নাই
- তুই কে রে যে তোর জন্য রান্না করব
- হুম। সেটাই।
ধুর মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল। ওখান থেকে চলে আসতে ধরছি পিছন থেকে আশা ডাক দিলো
- টেবিলে খাবার আছে। খেয়ে নে।
তাড়াতাড়ি টেবিলের দিকে গেলাম। খুব খুদা লাগছে। খাবার দেখে আবার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। কচু রান্না করে রেখেছে। আমি কচু খাই না। ঘৃনা করি। রাগি চোখে আশার দিকে তাকাইলাম। আশা আড় চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আবার টিভি দেখায় মনযোগ দিলো।
- এইজন্যেই এতো মুখ চুলকায় (আমি)
- মানে?
- কচু খেয়ে তুই বড় হইছিস তাই মুখ চুলকায় তোর। সারাদিন শুধু ঝগড়া করিস।
- অই কি বললি তুই
- আবার বলা লাগবে? একবারে শুনতে পারিস না
- মন চাইলে খা না চাইলে খাবি না।
মেজাজটা অনেক বেশি খারাপ হয়ে গেল। ইচ্ছা করছে ওরে ধরে আচার মারি। কিন্তু কিছু না বলে সেই কচু দিয়েই ভাত খাইলাম। খুব খুদা লাগছে না খেয়ে উপায় নাই। তবে কচু খেতে খারাপ লাগলো না। মজাই লাগলো। ভালই রান্না করছে।
- অই শোন আমি আর এভাবে থাকতে পারছি না। তুই কালকেই আমাকে আমাদের বাসায় রেখে আসবি। (আশা)
- ওকে
- আর ডিভোর্স কবে দিবি?
- একটু সময় লাগবে। এক মাসের আগে হবে না।
আশা ওর রুমে চলে গেলো। ওর কথা শুনে কিছুটা খারাপ লাগলো। কেন খারাপ লাগছে জানি না। একটু পরে আব্বু আম্মু গ্রামের বাড়ি থেকে আসলো। আশা ওনাদের বলল যে কিছুদিনের জন্য ও ওর বাবার বাড়ি থেকে ঘুরে আসতে চায়। আব্বু আম্মু রাজি হয়ে গেল।
.
রেল স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছি। কিছুক্ষনের মধ্যেই ট্রেন আসবে। ওই তো এসে গেছে। আশা ট্রেনে উঠে পড়লো।
- শোন সাবধানে যাস রে (আমি)
- হুম
- আচ্ছা ভাল থাকিস
- তুইও
- আমি কয়েকদিনের মধ্যে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দিব।
- হুম
- আচ্ছা বাই
জালানার কাছ থেকে সরে আসলাম। অনেক কষ্ট লাগতেছে কেন জানি। মনে হচ্ছে মুল্যবান কিছু হারিয়ে ফেলতেছি। ট্রেন চলা শুরু করে দিয়েছে। ধীর গতিতে ট্রেন এগিয়ে চলছে। আমার অজান্তেই চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে পড়লো।
কি যেন মনে করে ট্রেনের দিকে দৌড় দিলাম। ততক্ষনে ট্রেনের গতি বেড়ে গেছে। প্রান পন ছুটছি ট্রেনের দিকে। আর আশা আশা বলে চিৎকার করতেছি।
অনেক কষ্টে ট্রেনে উঠতে পারলাম। ট্রেনে উঠে হাপাতে লাগলাম। আশা আমার দিকে অবাক চোখে চেয়ে আছে। ভাবতেই পারে নি আমি এমন কিছু একটা করব।
- ওই পাগল হইছিস নাকি? এভাবে কেউ ছুটে? কিছু একটা যদি হয়ে যেতো? (আশা)
আমি হাপিয়েই যাচ্ছি। আশার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।
আচমকাই আমি আশাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।
- অই কি করছিস? (আশা)
ট্রেনের সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হয় সবাই সিনেমার সুটিং দেখতেছে।
- অই ছাড় আমাকে। ব্যথা পাচ্ছি তো। (আশা)
আমি ওকে ছেড়ে না দিয়ে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। আশা বার বার ছেড়ে দিতে বলতেছে।
- আই লাভ ইউ আশা। আমি তোকে অনেক ভালবাসি রে। তোকে ছাড়া আমি থাকতে পারব না।
কাদো কাদো কন্ঠে আমি বললাম।
আশা এখন চুপচাপ হয়ে আছে। আমি অনাগল বলেই চলছি। এক সময় আশাও আমাকে আলতো ভাবে জড়িয়ে ধরলো
- আমিও তোকে ভালবাসি (আশা)
.
.
তারপর আর কি? দুজনে মিলে শশুড়বাড়ি গেলাম। সেখানে এক সপ্তাহ থেকে আবার আমাদের বাড়িতে ফিরে আসলাম।
.
লেখকঃ আল আমিন
āĻāϞ্āĻĒ āϏংāĻ্āϰāĻš āĻāϰা āĻāĻŽাāϰ āύেāĻļা। āϰোāĻŽাāύ্āĻিāĻ, āĻৌāϤিāĻ, āϰāĻŽ্āϝ, āĻৌāϤুāĻ āϏāĻš āĻšাāĻাāϰো āĻāϞ্āĻĒ āĻāĻে āĻāĻŽাāϰ āϏংāĻ্āϰāĻšে।
āĻļāύিāĻŦাāϰ, ā§Ģ āĻāĻāϏ্āĻ, ⧍ā§Ļā§§ā§
647
āĻāϰ āĻĻ্āĻŦাāϰা āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰা
Rahathossain1010100@gmail.com
āĻāĻ āϏāĻŽā§ে
ā§§:ā§Ļā§§ AM

āĻāϤে āϏāĻĻāϏ্āϝāϤা:
āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝāĻুāϞি āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ (Atom)
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ