<3 #অবুঝ_ভালোবাসা <3 (দশম এবং শেষ পর্ব)
- বিয়ের ডেট কি ঠিক হয়েছে?
- হ্যা...সামনের শুক্রবার!
এটা সুসংবাদ নাকি দুঃসংবাদ বুঝতে পারছি না। আমি কল্পনায় দেখতে পাচ্ছি ফুলসজ্জার রাতে রিয়া আমার বেডরুমের খাটের ওপর ঘোমটা দিয়ে বসে আছে, আমাকে রুমের ভেতর ঢুকিয়ে দরজা বাইরে থেকে লাগিয়ে দেয়া হয়েছে! কি অবস্থা টা হবে আমার?
এদিকে বিয়ের ধুমধাম শুরু হয়ে গেছে। পুরো বাড়ি লাল-নীল বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে। বিয়ের মার্কেট ও চলছে পুরোদমে। কিন্তু আমি একদিন ও বাবা-মায়ের সাথে শপিং এ গেলাম না। এক সপ্তাহ পর যে আমার বিয়ে কোনো ফিলিংস ই কাজ করছে না আমার মধ্যে!
'যার বিয়ে তার খবর নাই, পাড়া-পড়শীর ঘুম নাই' বুঝি একেই বলে? :p
রিয়া একদিন ফোন করলো....
- হ্যালো?
- হ্যা রিয়া বলো....
- কেমন আছো? একটা ফোন ও তো দাও না, কাকে নিয়ে এতো বিজি শুনি?
- ওমা কাকে নিয়ে আর বিজি থাকবো!
- তোমার কি আর মানুষের অভাব আছে নাকি? যাকগে... এতোদিন যা করার করেছো কিন্তু শুক্রবারের পর যদি আমার একটা কথার বাইরে গেছো তাহলে কিন্তু...
- এই...এই! ভয় দেখাবা না প্লিজ, পরে দেখবা বরপক্ষ কনে পক্ষ সবাই আছে শুধু বরটাই নেই! ভেগে গেছে। :(
- ইস! বললেই হলো? কোথাও যেতে দেবো না তোমাকে, সারা জীবন আমার আচলের সাথে বেঁধে রাখবো। এই জানো? ফুল-সজ্জা রাতের জন্য না আমার আর তর সইছে না, কতো অপেক্ষা করে আছি!😌😍
- ও তাই নাকি? ফুল-সজ্জার রাত কি খুব মজার? :D
- নাটক, সিনেমায় যতটুকু দেখেছি মজার ই তো হওয়ার কথা! ;)
- মজার না ব্যাথার পরে টের পাইবা! :p
- এই শয়তান কি বললা তুমি? দাড়াও তোমাকে পেয়ে নেই! এই শোনো...তুমি কি একটু আসবা? তোমাকে খুব দেখতে মন চাচ্ছে! :'(
- আসলে কি দিবা শুনি? ;)
- যা চাও! 😊
- তোমাকে একটা পাপ্পি দিবো! :*
- যাহ দুষ্টু... কি বলে এসব! :o ^_^ 😌
- যাও আসবো ই না হুম..... :(
- এই না....না! যা চেয়েছো পাবা। আসো প্লিজ? তুমি তো আমার হাজবেন্ড হবা ই। সো...সমস্যা কি!
- আরে ধুর! আমি তো মজা করলাম। এইতো আর কয়েকটা দিন, একটু ওয়েট করো.... :)
- ওকে! কি আর করা।
***
এদিকে বিয়ের দিন ক্রমেই ঘনিয়ে আসছে, আমি মানষিক ভাবে প্রস্তুত হচ্ছি রিয়ার আচলের গিট্রুর সাথে বাধা পড়ার জন্য। আমি যে রিয়ার প্রতি দুর্বল তা কিন্তু না, আসলে নীলা কে দেখিয়ে দিতে চাই সে যেমন আমাকে ছাড়া সুখে আছে, আমিও তাকে ছাড়া সুখে আছি।
গায়ে হলুদের দিন আমার অফিস কলিগরা দলবল সহ হাজির হয়ে গেলো। তাদের মধ্যে আমার বন্ধু শুভ ও আছে, যে আমাকে সর্বপ্রথম রিয়ার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। তার সাথে অনেকদিন যোগাযোগ হয় নি। ফেমিলিগত প্রবলেম হয়েছিলো তার, বৌয়ের সাথে ডিভোর্স হয়ে গেছে! আমার বিয়ে কার সাথে হচ্ছে প্রথমে তাকে জানাই নি, এসে যখন জানতে পারলো তখন তার ভিড়মি খাওয়ার দশা..... :p
আর হ্যা আরেকজন বিশেষ অতিথী ও কিন্তু এসে হাজির হয়েছে। ডাঃ তানিয়া! ভারী সাজ দিয়ে এসেছে, দুর্দান্ত সুন্দরী লাগছে মেয়েটাকে। সবার নজর ঘুরেফিরে তার দিকেই পড়ছে, কিছুক্ষনের মধ্যেই অনুষ্ঠানের মধ্যমনি হয়ে উঠলো সে। তানিয়া ইতিমধ্যেই বন্ধু মহলের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে গেছে। অনেকেই তার সাথে আলাপ জমানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু সে পাত্তাই দিলো না। তানিয়া আমার সাথেই কথা চালিয়ে যেতে লাগলো। শুভ আমাকে পাগল করে ফেললো তার সাথে রিলেশন করিয়ে দিতে, এমনকি ঘুষ ও সাধলো! :p আমি ব্যাপারটা দেখার আশ্বাস দিলাম.....
সবাই মিলে আমার ব্যাচেলর জীবনের শেষ দিন খুব উপভোগ করলাম। আজ আমি জীবিত, আগামী কাল হয়ে যাবো বিবাহিত! ভাবতেই গা শিউরে উঠছে....
আমার মৃত্যু পরোয়ানা জারী হয়ে গেছে। লাল রংয়ের শেরওয়ানী নামক কাপড় পরিয়ে আমাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ফাঁসির মঞ্চে (মানে রিয়াদের বাড়িতে)। আমার পা চলে তো চলে না!
হঠাৎ পকেটের ফোন বেজে উঠলো, নাম্বার টা নীলার! দেখে মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। আমি কেটে দিলাম। কিন্তু অনবরত ফোন দিয়েই যাচ্ছে নাছোড়বান্দা মেয়েটা। ফোন ধরছি না দেখে শেষমেষ মেসেজ দিলো- 'প্লিজ ফোন টা ধরো! তোমার সাথে খুব জরুরী কিছু কথা আছে, কথা দিচ্ছি জীবনে আর কোনোদিন তোমাকে ফোন দিবো না।'
দিলাম ফোনটা বন্ধ করে! নিজেই সবকিছু শেষ করে এখন আবার এসেছে আমার সাথে কথা বলতে...... >_<
ভালোভাবেই বিয়ের সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়ে গেলো। আমি আর রিয়া এখন স্বামী-স্ত্রী! কবুল বলার আগে তানিয়ার দিকে আড়চোখে একবার তাকালাম। দেখি আমার দিকেই চেয়ে আছে সে! প্রানপনে মুখে হাসি ধরে রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু চোখের অশ্রু কি আর বাধ মানে.....?
ব্যান্ড বাজিয়ে বৌ ঘরে তুললাম। রাত বাড়ার সাথে সাথে একে একে সবাই বিদায় নিলো। শুধু শুভ আর তানিয়া বাদে। তানিয়া ও চলে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু শুভর অনুরোধে তাকে থাকতে বললাম। শত হোক সম্পর্ক তৈরী করার দায়িত্ব টা তো আমিই নিয়েছি....
নানান উছিলায় আমি বাড়ির এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করতে লাগলাম। রিয়া আমার রুমে ঘোমটা দিয়ে বসে অপেক্ষা করছে আমার জন্য। কিন্তু আমি তার সামনে যেতে খুবই ভয় পাচ্ছি!
শুভ আর তানিয়া ব্যাপার টা ধরে ফেললো। আমাকে এক প্রকার জোর করে রুমের ভেতরে ঢুকিয়ে দিলো। আমি চোখের ইশারায় শুভ কে বলে দিলাম এই ফাকে তানিয়ার সাথে যতোটা পারা যায় ফ্রি হয়ে নিতে। আজ সারা রাতই পড়ে আছে.....
রিয়া আমাকে দেখে মুচকি মুচকি হাসছে। আমাকে দেখতে নিশ্চই গাধার মতো লাগছে? :(
একটা ছুতো দিয়ে বাইরে যেতে চাইলাম আমি। কিন্তু রিয়া আমার হাত ধরে ফেললো!
-কোথায় যাচ্ছো?
-এইতো আসছি....
-না, বসো তুমি!
-ইয়ে মানে...
-বসতে বলেছি না? >_<
আমি বাধ্য ছেলের মতো বসে পড়লাম...
-এইতো লক্ষী ছেলে.... ;) :*
আমি বালিশটা নিয়ে ফ্লোরে শুয়ে পড়লাম। কিন্তু এতেও শান্তি নাই! আমাকে ধরে খাটের ওপর বসানো হলো...
-রিয়া প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও! আমি একটু শান্তিতে ঘুমোতে চাই.... :(
-কি বললা তুমি! :o 😡
-না না কিছু না..... 😁😰
আচমকা আমাকে খাটে ধাক্কা দিয়ে ফেলে আমার উপরে উঠে পড়লো দুষ্টু মেয়েটা! আমার ঠোটে গভীর এক চুমু একে দিলো!!
- সেদিনের পাওনা টা মিটিয়ে দিলাম! ;)
ওর চুম্বনে আফিম জাতীয় কিছু একটা আছে। কেমন জানি মাতাল মাতাল লাগছে।
-যেদিন রাতে প্রথম তোমার বাসায় গিয়েছিলাম সেদিন তো হা করে আমার দিকে চেয়েছিলে, আজ কেনো এতো কাছে পেয়েও ভনিতা করছো? :/
-রিয়া তুমি আমার বুকের ওপর থেকে একটু সরবে প্লিজ? তোমার ভার আমি কি করে সহ্য করি বলো?
কিন্তু মেয়েটা সরছেই না। আমাকে ছাড়বে না বলে পন করে এসেছে মনে হয়!
হঠাৎ মোবাইলে ফোন আসলো, নীলার মায়ের নাম্বার! ফোনটা ধরতে যেয়েও রিয়ার বাধার সম্মুখীন হলাম....
-আজ পুরো রাতটা আমি তোমার কাছে চাই! ফোন টোন সব বন্ধ করো!
আমি তার বাধা উপেক্ষা করে ফোন টা ধরলাম.....ওপাশ থেকে নীলার মায়ের উদ্বিগ্ন কন্ঠ ভেসে এলো!
-হ্যালো বাবা তুমি জলদি এসো, নীলা ভেতর থেকে গেট আটকে বসে আছে, কিছু হওয়ার আগেই তুমি আসো....!!! 😰😭
আমি এক ধাক্কায় রিয়াকে সরিয়ে দিলাম, ও ছিটকে ফ্লোরে পড়ে গেলো। তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে যেতে চাইলাম আমি, রিয়া আবার আমার হাত ধরে ফেললো....
-কোথায় যাচ্ছো তুমি? এই ফুলসজ্জার রাতে তুমি আমাকে স্বামীর সোহাগ থেকে বঞ্চিত করবে? 😰
-দেখো রিয়া এসব পরেও করা যাবে, এখন আমাকে যেতেই হবে!
আমি ঝাড়া দিয়ে হাতটা ছুটিয়ে নিলাম, বাসার সবাই আমাকে বাধা দিয়েও আটকে রাখতে পারলো না.....
নীলার বেডরুমের বাইরে তার মা, ফারিহা আর সামিহা কান্না করছে আর তাকে বেরিয়ে আসতে বলছে কিন্তু কিছুতেই গেট খুলছে না সে। আমিও অনেকক্ষন ডাকাডাকি করলাম। কিন্তু কোনো লাভ হলো না......
শেষে দুইটা লাথি দিয়ে দরজা ভেঙে ফেললাম! ভেতরের দৃশ্য দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না আমি।
নীলার নিথর দেহটা ফ্লোরে পড়ে আছে! একহাত দুরে একটা ছোট শিশি। তারমানে বিষ খেয়েছে সে! :o
আমি তানিয়াকে ফোন দিয়ে বললাম জলদি শুভকে নিয়ে এখানে চলে আসতে। তানিয়া একজন ডাক্তার, নীলাকে বাচাতে পারলে একমাত্র সেই পারবে!
কিছুক্ষন পর তানিয়া এসে পৌঁছে গেলো। নীলাকে কিছুক্ষন দেখলো সে, তার হাতে নাড়ী টিপে ধরলো।
'আমি দুঃখিত! নীলা আর আমাদের মাঝে নেই!!' তানিয়া জানালো.....
সাথে সাথে গগনবিদারী চিৎকার করে উঠলো নীলার মা আর দুই বোন। আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি! নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছি না। আমার ও ভেতর থেকে ফেটে কান্না বেরিয়ে আসলো। নীলা কে বুকে জড়িয়ে ধরে কাদতে লাগলাম আমি। মৃত্যু ও তার সৌন্দর্য এতোটুকু ম্লান করতে পারে নি! আমার মনে হচ্ছে এখনই সে চোখ খুলে বলে উঠবে- 'শামীম আমি মজা করেছি, এইতো আমি বেচে আছি!'
হঠাৎ তার হাতের দিকে চোখ পড়লো আমার। মুঠো করা, ভেতরে একটা কাগজ দেখা যাচ্ছে। ওটা একটা চিঠি! আমি পড়তে শুরু করলাম.....
'শামীম আমি জানি, আমার মৃত্যুর খবর শুনে তুমি আসবে তাই তোমার জন্য চিঠিটা লেখা। চিঠি যখন পড়বে তখন হয়তো আমি আর থাকবো না।
আমি তোমাকেই ভালোবাসি শামীম, অন্য কাউকে তো প্রশ্নই ওঠে না। আমি তোমাকে ফোনে উল্টো-পাল্টা কথা বলেছি যেন তুমি আমার ওপর জেদ করে ফারিহা আপু কে বিয়ে করো। সে তোমাকে খুব পছন্দ করে। আমি কি করে ছোট বোন হয়ে আমার বড় বোনের পছন্দের জিনিস টা কেড়ে নেবো বলো? কিন্তু তুমি ফারিহা আপু কে বিয়ে না করে অন্য মেয়ের হাত ধরেছো। আমার ছোটো বেলার অবুঝ ভালোবাসা আজ অন্যের! এ দৃশ্য দেখার চেয়ে মরে যাওয়াই অনেক ভালো মনে হয়েছে আমার। এ জন্মে হয়তো তোমাকে পাই নি তবে তোমাকে পাওয়ার জন্য আমি জন্ম-জন্মান্তর ধরে অপেক্ষা করবো। বিদায়........ <3 :) '
আমি কেদেই চলেছি! পাগলের মতো নীলার শরীর ঝাকাচ্ছি। নীলা..... ও নীলা! ওঠো? একবার চোখ খুলে তাকাও? দেখো আমি এসেছি! আমার সাথে রাগ করবে না? আমার সাথে লুকিয়ে ছাদে দেখা করবে না? এই নীলা.....আমার না খুব ক্ষিদে পেয়েছে! আমার জন্যে খাবার রান্না করে আনবে না তুমি?
দেখো আমি অন্য মেয়ের সাথে কথা বলছি! অভিমান করে মুখ ভার করে বসে থাকবে না তুমি?
কিন্তু আমি জানি আর কখনোই নীলার মুখ দিয়ে কথা বেরোবে না, আর কখনোই কেউ আমার সাথে রাগ করবে না, কখনোই আর খাবার হাতে দরজার বাইরে দাড়িয়ে থাকবে না কেউ, অযথা অভিমান ও করবে না! আর কেউ কোনোদিন জোছনা রাতে ছাদে আমার জন্য অপেক্ষা করবে না.....
যেখানেই থাকো ভালো থেকো নীলা, ভালো থেকো আমার অবুঝ ভালোবাসা......
লেখক: Saiful Shamim (হিমুর জোছনা রাত) <3
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ