<3 #অবুঝ_ভালোবাসা <3 ৮ম পর্ব
-কি বলছিস তুই! মেয়ের নাম ও দেখি জানিস না, নীলা তো ওর ছোট বোনের নাম। পাত্রীর নাম তো হচ্ছে ফারিহা!
আমার হাসি টা সেকেন্ডের মধ্যে উবে গেলো! নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছি না। বিধাতা এ কোন ধরনের খেলা খেলছে আমার সাথে?
ঘরের চেয়ার-টেবিল, আসবাবপত্র আমার চোখের সামনে উল্টে-পাল্টে যেতে লাগলো। এমন কেন হচ্ছে? ভূমিকম্প নাকি? আমি আর দাড়িয়ে থাকতে পারলাম না, টলতে টলতে সোফায় হেলে পড়লাম। মা এসে আমাকে ধরে ফেললো। তারপর ই সব কিছু অন্ধকার....
চোখ মেলে নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করলাম। দেখি আমার পাশে মা বসে আছে। মা কাঁদছে। আমি মাকে অভয় দিলাম কিছুই হয় নি আমার.....
বেশ কিছুদিন বিছানায় পরে রইলাম। মা যথাসাধ্য আমার সেবা করলো। কিন্তু শরীর আর ভালো হয় না।
শেষমেষ আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হলো। আমার অসুস্থতার কারন মনে হতেই আমার খুব হাসি পেলো। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে হাসা টা সম্ভব নয়, তাই মুখে আসার আগেই হজম করে ফেললাম।
যে কোনো ভাবেই হোক রিয়া আর ফারিহাদের বাসায় আমার অসুস্থতার খবর পৌঁছলো। দল বেঁধে দুই বাড়ির (কিংবা দুই শ্বশুর বাড়ির) লোকজন আসতে লাগলো। ওরা এমনভাবে কান্না-কাটি করছে যেন আমি ক্যান্সারের রোগী। আর কিছুক্ষনের মধ্যেই মারা যাচ্ছি.....
ফারিহা, সামিহা আর রিয়া দরজার পাশে দাড়িয়ে বড়দের বিলাপ করার সুযোগ দিচ্ছে। আমার সামনে আসছে না। ইশারায় আমি সামিহার কাছে নীলার কথা জানতে চাইলাম। সে জানালো নীলা আসছে.....
কর্তব্যরত মহিলা ডাক্তার (কিংবা মেয়ে ডাক্তার) তানিয়া এসে রুমের অবস্থা দেখে থমকে গেলেন.....
-এ কি! আপনারা কি শুরু করেছেন!! এরকম কান্নাকাটি করলে তো পেশেন্ট এর অবস্থা আরও খারাপ হবে। প্লিজ আপনারা বেরিয়ে যান.....
সবাই বেরিয়ে গেলেও অনেক রিকোয়েস্ট করে রিয়া আমার রুমে থেকে গেলো। ওর দেখা-দেখি ফারিহাও রিকোয়েস্ট করা শুরু করলো। ডাক্তার সাহেবা মনে হয় অনেক দয়ালু! দুজনকেই থাকার অনুমতি দিলেন.....
আমি জানি ওদের দুজনের মনে এখন কি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে! রিয়া ভাবছে আমার হবু বরের সাথে এই বজ্জাত মেয়ে টা কি করছে? >_< আর ফারিহা ও একই কথা ভাবছে... আমার হবু বরের সাথে এই কুটনী মেয়েটা কি করছে? >_<
বাহ! খেলা তো জমে উঠেছে। এই খেলায় আমি দর্শক মাত্র। ফলাফল উপর থেকে ফিক্সড করে দেয়া হয়েছে। সময় মতো উত্তর পাওয়া যাবে। আমার অসুস্থতা ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করলো। চারপাশে বিনোদন দেয়ার মতো এতো মানুষ থাকলে কি আর অসুস্থ থাকা যায়? :p
-রিয়া পরিচিত হয়ে নাও, এ হচ্ছে ফারিহা, আমার হবু বৌ। ফারিহা তুমিও পরিচিত হয়ে নাও এ হচ্ছে রিয়া আমার হবু বৌ.....
রিয়া আর ফারিহা পরস্পর মুখ চাওয়া-চাওয়ি করলো! দেখার মতো একটা দৃশ্য...আমি সাথে সাথে হাহা করে হেসে উঠলাম।
-কি হলো ভয় পেয়েছো? আমি তো মজা করলাম! ^_^
তারা দুজন ও হেসে উঠলো। কিন্তু হাসির মধ্যে একটা অনিশ্চিত ভাব আছে।
রাত ঘনিয়ে এলে রিয়া আর ফারিহা কে রেখে পরিবারের বাকি সদস্য রা চলে গেলো। তারা দুজনই আমার দেখা-শোনার দায়িত্ব নিয়েছে। কিন্তু অন্য ফ্যামিলির একটা মেয়ে আমার সাথে কেন থাকবে এটা যেন দুই পরিবারের কেউই মেনে নিতে পারছে না। রিয়ার বাবা-মা ও না, ফারিহার বাবা-মা ও না। কিন্তু সেটা প্রকাশ করলো না। কোনো ঝামেলা না পাকিয়েই বাড়ির পথ ধরলো.....
রাত দশটা নাগাদ নীলা আমার কেবিনে উপস্থিত হলো সাথে সামিহা ও রয়েছে। নীলা চেহারা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলো। যেন কিছুই হয় নি! কিন্তু আমি জানি তার ভেতর টা ফেটে যাচ্ছে, আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে ইচ্ছে করছে। মেয়েটা সম্ভবত আমার উপর অভিমান করেছে। হুট করে না বলে বাসা থেকে চলে এসেছি বলে, কিন্তু কেন যে এসেছি সেটা যদি জানতো! আচ্ছা আমার ও তো নীলার সাথে রাগ করা উচিৎ? সে ও তো মোবাইল ফোন বন্ধ রেখেছে, আমার সাথে কোনো যোগাযোগ রাখে নি....
নীলার সাথে মন খুলে কথা বলতে খুব ইচ্ছা করছে। কিন্তু এই মূহুর্তে কেবিনে আরও তিনটা মেয়ে আছে (যাদের মধ্যে দুজন আমার হবু বৌ :p ) কাজেই সেটা করা সম্ভব হচ্ছে না.....
-কিরে নীলা? তুই এতো রাতে? বাসায় চলে যেতে পারিস, আমি আছি এখানে... (ফারিহা)
-না আপু, আমার কোনো সমস্যা নেই থাকতে। তুমি চাইলে বরং যেতে পারো...
-তাহলে আমরা একসাথেই থাকি, ওর কখন কি লাগে আবার.....কিরে সামিহা তুই ও কি থাকবি নাকি....?
- না না আমিও থাকবো!
সামিহা দ্রুত উত্তর দিলো....
রিয়া আর ফারিহা আমার মাথার পাশে বসে আছে। রিয়ার লম্বা চুল (খায়রুন সুন্দরীর মতো) আমার মাথার অর্ধেক টা ঢেকে আছে। নীলা আর সামিহা আমার পায়ের কাছে বসলো।
এই মূহুর্তে আমার নিজেকে সৌদি প্রিন্স মনে হচ্ছে। যার চারটা বিবি তাকে আদর-যত্ন করছে! :p
আমি চারজনের ভাব-ভঙ্গি লক্ষ্য করলাম। একজন ও আমাকে ছেড়ে এক মূহুর্তের জন্য ও উঠছে না। মনে হচ্ছে একে-অপরকে পাহাড়া দিচ্ছে যেন আমার খুব বেশি ঘনিষ্ঠ না হতে পারে।
সামিহা মনে মনে হিংসা করছে নীলা কে, নীলা হিংসা করছে তার আপন বড় বোন ফারিহা কে, ফারিহা আবার হিংসা করছে রিয়া কে! কি অদ্ভুদ এক চক্র.... :p
কিছুক্ষন পর দরজায় ঠকঠক আওয়াজ হলো.....
-আসতে পারি?
দরজায় মেয়ে বয়সী ডাক্তার টা কে দেখা যাচ্ছে.....
-এ কি ম্যাডাম! আপনিই তো আমাদের থাকার অনুমতি দিয়েছেন আর আপনিই কি না আসার জন্য অনুমতি চাচ্ছেন! ^_^
রিয়া হেসে বললো....
-না ভাবলাম হঠাৎ এসে আপনাদের ডির্স্টাব করা টা ঠিক হবে না, তা কি নিয়ে আলাপ চলছিলো? :D
-না তেমন কিছু না....
-আজ সারা রাত হাসপাতালে ডিউটি কিন্তু হাতে কোনো কাজ নেই। তাই ভাবলাম আপনাদের সাথে একটু গল্প করি। এখানে তো আমার সমবয়সী চারজন মেয়ে আছেই! আপনাদের কোনো সমস্যা নেই তো? :)
-নাহ কি যে বলেন! আপনি আসাতে ভালোই হলো..... ফারিহা বললো
কিন্তু কিছুক্ষনের মধ্যেই বুঝতে পারলাম। ডাক্তার তানিয়া আসলে ওদের সঙ্গে নয় আমার সঙ্গে গল্প করতে এসেছেন! উনি আমাকে একের পর এক অস্বস্থিকর প্রশ্ন করেই যাচ্ছেন....
-আপনি কি বিয়ে করেছেন?
-জি না
-করার চিন্তা-ভাবনা নেই?
-না তো!
উত্তর টা দিয়েই বুঝতে পারলাম বড় রকমের ভুল করে ফেলেছি! আমার দু পাশে বসা দুই ললনা পারলে আমাকে তাদের দৃষ্টি দিয়ে ভস্ম করে দেয়। টের পেলাম শরীর টা আবার কেমন জানি লাগছে! এ কেমন ডাক্তার? রোগী কে ভালো না করে আরও অসুস্থ করে ফেলে? এ কেমন বিচার? :'(
কিন্তু এই ডাক্তার সম্ভবত আমার হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ না করে থামবে না! আবার ও প্রশ্ন করলো....
-কখনো প্রেম করেছেন?
এখন যদি বলি 'হ্যা' তাহলে ফারিহা আর রিয়া আমাকে গলা টিপে মেরে ফেলবে। আর যদি বলি 'না' তাহলে.....
নীলা আমাকে খুন করে ফেলবে! উভয় সঙ্কট বুঝি একেই বলে? আম্মুউউউ..... আমাকে বাঁচাও! আমি আর জীবনে প্রেম ও করবো না বিয়েও করতে চাই না..... :'(
-কি হলো বলছেন না যে?
অনেক ভেবে চিন্তে 'না' উত্তর দিলাম। দুজনের চেয়ে একজনের আক্রোশের স্বীকার হওয়া অনেক ভালো!
নীলা পারলে এখনই উঠে এসে আমার কলার চেপে দু-চারটা কিল ঘুষি দিয়ে দেয়! :p কিন্তু আফসোস বেচারির জন্য, এই মূহুর্তে সেটা করা সম্ভব হচ্ছে না....
কিছুক্ষন পর কারেন্ট চলে গেলো। হাসপাতালের জেনারেটর এ ও সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাই কেবিন কিছুটা অন্ধকারাচ্ছন্ন, চাঁদের আলোর কারনে সম্পূর্ন অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে যায় নি....
অদ্ভুদ একটা অনভুতি হচ্ছে। আমার কাছে মনে হচ্ছে আমি মরে গেছি। এজন্য সম্ভবত চাঁদের রহস্যময় আলো দায়ী। ইষৎ নীল জোছনা পরিবেশটা কে অপার্থিব করে তুলছে।
চোখে কখন যে তন্দ্রা এসে গেলো টেরও পেলাম না! সকালে সূর্যের মিষ্টি আলো চোখে পড়তেই আমার ঘুম ভেঙে গেলো। কিন্তু একি! আমি হাত-পাত নাড়াতে পারছি না কেন? প্যারালাইসিস হয়ে গেলাম নাকি?
না ঘটনা সেটা নয়...চারটি দেহ শরীরের ওপর পড়ে আছে! আমার বালিশের দুপাশে রিয়া আর ফারিহা, আমার দু হাত ওদের দুজনের পিঠের নিচে! :o
আর ওদের দুজনের হাত আমার বুকের ওপরে। নীলা আর সামিহা ঠিক আমার পায়ের কাছে। আর ডাক্তার তানিয়া নিচে বসে বেডে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। তার ডান হাত আমার পা স্পর্শ করে আছে....
একটু পর দরজায় এক নার্স কে দেখতে পেলাম। আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে উধাও হয়ে গেলো। একটু পর চার/পাচজন নার্সের একটা দল হাজির হলো। আমার করুন অবস্থা দেখে খুব মজা পাচ্ছে!
-প্লিজ হেল্প মি নার্স! আমাকে ধ্বংস স্তুপ থেকে উদ্ধার করুন.... :'(
আমি চেচিয়ে উঠলাম!
আমার চিৎকারে পাঁচজনের ঘুম ভেঙে গেলো। উঠে দেখলো নার্স রা আমাদের দেখে হাসছে। লজ্জায় একেকজন পারলে মাটি ফুড়ে ভেতরে ঢুকে যায়! :p
হাসপাতাল থেকে সেদিন বিকেলেই আমি রিলিজ পাই। বাসায় ফিরতে না ফিরতেই দুই পক্ষ থেকে বিয়ের ডেট ঠিক করার জন্য চাপ আসতে থাকে। মা বেশ চিন্তায় পড়ে যান। কি করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না তিনি। মা আমাকে জিজ্ঞেস করলেন.....
-তুই কাকে বিয়ে করতে চাস বাবা?
-সত্যি বলবো মা? :)
-হ্যা বল....
-একজনকে ও না!
-কি বলিস তুই! তাহলে কাকে বিয়ে করবি?
-ফারিহার ছোট বোন নীলা কে....
মা যেন আকাশ থেকে পড়লেন!
-মানে? তুই কি ওকে পছন্দ করিস?
-শুধু পছন্দ না মা, আমরা একে অপরকে ভালোবাসি.....
-আমাকে তো আগে বলিস নি? >_<
-বলার সুযোগ ই তো দাও নি.... :(
-ঠিকাছে আমি এ ব্যাপারে তার বাবা-মায়ের সাথে কথা বলবো..... :)
আমি খুশিতে মা কে জড়িয়ে ধরে চুমু খেলাম। এবার আমার আর নীলার মাঝে কোনো বাধা নেই! :D
আমি নীলার মোবাইলে ফোন দিলাম। নাম্বার টা খোলা আছে। দুবার রিং হতেই ধরে ফেললো.....
-হ্যালো নীলা?
-হ্যা বলো....
-আমি তোমার আর আমার বিয়ের ব্যাপারে মা কে বলেছি। আর কোনো সমস্যা নাই, আমাদের দুজনের মধুর মিলন ঘটতে যাচ্ছে! :D
-হাহাহা! কিন্তু শামীম দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি....আমি যে তোমাকে বিয়ে করতে পারছি না.... :)
(চলবে)
কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেন না! :)
লেখক: Saiful Shamim (হিমুর জোছনা রাত) ★
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ