<3 #অবুঝ_ভালোবাসা <3 ৫ম পর্ব
পরিস্থিতিটা হয়তো সামাল দিতে পারতাম কিন্তু আমার চোখে চোখ পড়ে গেলো তার।
রিয়া আমার হাত ধরো বললো....
-এই শামীম কি দেখছো?
-কই নাতো! কিছু নাহ....
নীলা রেগেমেগে গটগট করে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে গেলো। সামিহাও তার পিছু নিলো।
আমি ও দৌড়ে তাদের পথ অনুসরন করলাম। পিছে না তাকিয়েও আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম রিয়া মেয়েটা আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে....
বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে (যদিও এখন বৃষ্টির মৌসুম নয়)। ঝড়ো বাতাসে সামনের কয়েক ফুটের কিছু দেখাও দায়। এরই মধ্যে আবছা ভাবে দেখতে পেলাম নীলা আর সামিহা কে। বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হয়ে গেছে। আমি তাদের সামনে গিয়ে পথরোধ করে দাড়ালাম।
নীলা সামিহাকে বাসায় যেতে বললো। কিন্তু সামিহা তাকে একা ছেড়ে যেতে নারাজ। শেষমেষ ধমক খেয়ে অগত্যা বাড়ির পথ ধরলো.....
এতক্ষনে খেয়াল করলাম নীলার শরীরে ওড়না নেই। রেস্টুরেন্ট থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার সময় কখন যে পড়ে গেছে হয়তো নিজেও খেয়াল করে নি!
রাস্তার পাশে দোকানের ছাউনিতে দাড়িয়ে থাকা লোকগুলো বদ নজরে ওর দিকে তাকাচ্ছে। ব্যাপার টা আমার মোটেই ভালো লাগছে না।
নীলার মতো মেয়েরা যদি বোরখা ও পড়ে তবুও তাদের সৌন্দর্য ঠিকড়ে বের হয়। আর মানুষ তাদের দিকে কু-নজরে তাকায়। আর এখন তো ভেজা শরীরে তাও আবার ওড়না ছাড়া! কি সাংঘাতিক ব্যাপার....
আমি আমার শার্ট টা খুলে ওর গায়ে জড়িয়ে দিলাম। আমি এখন শুধু একটা স্যান্ডো গেঞ্জী পড়া।
মেয়েটা থরথর করে কাঁপছে। দেখে আমার ভীষন মায়া লাগলো। ইচ্ছে করছে ওকে জড়িয়ে ধরে আমার সমস্ত উষ্ঞতা ওকে দিয়ে দেই। কিন্তু সেটা সম্ভব নয়....
-নীলা চলো বাসায় চলো, বৃষ্টিতে ভিজলে তোমার ঠান্ডা লাগবে!
-আমার ঠান্ডা লাগলেই কি আর আমি মারা গেলেই কি? আপনার কিছু এসে যায়?
মেয়েটার চোখে চোখ রাখলাম আমি। সেখানে গভীর অভিমান লুকিয়ে আছে, আর সেই অভিমান অশ্রু হয়ে চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে।
'বৃষ্টির পানির রহস্যময়তা হচ্ছে ঝমঝম বৃষ্টির মধ্যেও তা আলাদা করা যায়।' হুমায়ূন আহমেদ যে এই উক্তি শুধু শুধু করে নি তা আজ নিজের চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি।
অঝোর বৃষ্টির মধ্যে একটি ছেলে আর একটি মেয়ে রাস্তায় দাড়িয়ে আছে। মেয়েটা অভিমান করে আছে আর ছেলেটা রাগ ভাঙাচ্ছে। আমাদের সামনে একটা ক্যামেরা থাকলে কোনো রোমান্টিক নাটকের শ্যুটিং বলে চালিয়ে দেয়া যেতো.....
-নীলা পাগলামি করো না, চলো বাসায় চলো....
-না যাবো না আমি!!!
-আচ্ছা তুমি রাগ করে আছো কেন বলো তো? আমার সাথে কোনো মেয়ে কে দেখলে তুমি এমন করো কেন? আমি কে হই তোমার....
-একটা মেয়ের না বলা ভাষাটুকু বোঝার ক্ষমতা আপনার নেই। মেয়েদের বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না এই কথাটা আপনার জানা আছে?
-এতো কিছু আমি কি করে বলবো? আমি কি মেয়ে নাকি?
-তাহলে কোনো ছেলে কে বিয়ে কইরেন!
মেয়েটার শরীরে প্রচন্ড রাগ। ওভারলোডের কারনে যেমন বৈদ্যুতিক সংযোগের শর্ট-সার্কিট হয়ে যায় তেমনি প্রচন্ড রাগের কারনে তার মাথার দুই-একটা তার সম্ভবত ছিড়ে গেছে। যাদের মাথার তার ছিড়া তাদের পাগলামি শুরু হয় চৈত্র-বৈশাখ মাসে। এই শ্রেনীর পাগলদের 'চৈতা পাগল' বলে। কিন্তু এখন তো ষোল আনা বসন্ত! ওর নাম কি তাহলে 'বাসন্তী পাগল' কিংবা 'বাসন্তী পাগলী' দেয়া যায়? খারাপ হয় না তাহলে....
একটা ছেলে হয়ে আরেকটা ছেলে কে কি করে বিয়ে করবো আমি? এসব উদ্ভট কথার কোনো মানে হয়?
-আমি আপনাকে ভালোবাসি!!! আপনি বোঝেন না গাধা? তাই অন্য মেয়ের সাথে দেখলে জেলাস ফিল হয়... >_<
ও আমাকে ভালোবাসে আমি খুব ভালো করেই জানি। কিন্তু এখন যে আচমকা বলে ফেলবে তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না! এতোদিন আমি না বোঝার ভান করে থাকতাম কিন্তু এখন সমস্যা টা হচ্ছে সে তার মনের কথাটা বলে দিয়েছে। এখন আর সেটা করা সম্ভব নয়.....
-শামীম তুমি আমায় ভালোবাসো না? :'(
আপনি থেকে সরাসরি তুমি তে চলে গেলো নীলা....
-দেখো নীলা আজ এপ্রিল ফুল না। সো ফান করা বন্ধ করো....
-আমার কথা শুনে কি আপনার ফান মনে হচ্ছে? কি করলে আপনার আমার কথা সিরিয়াস মনে হবে শুনি? ওই যে চলন্ত বাসটার নিচে লাফ দিবো? ওয়েট!
নীলা এক পা বাড়ালো....
আর ওমনি আমি টান দিয়ে বুকে জড়িয়ে নিলাম। আমি কোথায় আছি এই কথাটা তখন আর আমার মাথায় নেই। চেপে না রাখতে পেরে আমিও বলে দিলাম মনের কথা....
-পাগলী আমিও তোমাকে খুব ভালোবাসি! তুমি কি আমার বাবুর আম্মু হবে? :)
-সত্যি বলছো তো? :'(
-হ্যা সত্যি বলছি.... :*
পাগলীটা লজ্জায় আমার বুকে মুখ লুকালো। (ব্যাকগ্রাউন্ডে আশিকি টু ছবির গান হলে ভালো হতো)
পেছনে শিষ আর কড়তালির আওয়াজ শুনলাম। লোকগুলো ছাউনির নিচ থেকে এতক্ষন আমাদের রোম্যান্স দেখছিলো! কি লজ্জার কথা...!! :o
আমি আর নীলা সেখান থেকে দ্রুত কেটে পড়লাম। বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শুতেই বৃষ্টিতে ভেজার মজা টের পেলাম। শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বাড়ছে। জ্বর টর আসতে পারে....
রিয়াকে ফোন দিয়ে কোথায় আছে জানতে চাইলাম। সে বললো আমাদের অফিসের আশে-পাশেই কোথাও এক জায়গায় আছে, কি এক কাজে এসেছে। রিয়াকে জরুরী একটা কথা বলা দরকার। কিন্তু ঠিক ভরসা পাচ্ছি না। তবে ওর আচার-আচরন, কথা-বার্তা আমার কাছে ভালোই লেগেছে....
-রিয়া তুমি তো অফিসের পাশেই আছো! একটা কাজ করে দিবে প্লিজ? যদি কিছু মনে না করো?
-অবশ্যই, বলো কি কাজ?
-অফিসে আমার ডেস্কের উপর কিছু ফাইল আর হিসাবের কাগজ-পত্র আছে, একটু কষ্ট করে আমার বাসায় নিয়ে আসতে পারবে? এক সপ্তাহের জমানো কাজগুলো শেষ করতে হবে। নাহলে চাকরি নিয়ে টানাটানি হয়ে যাবে..... :(
-এ আর এমন কি কাজ? তোমার ঠিকানা বলো? :)
আমি তাকে আমার ঠিকানা দিয়ে দিলাম। মেয়েরা তেমন একটা হেল্পফুল হয় না। হেল্প চাইলে নানা টালবাহানা করে। কিন্তু ও একেবারেই ব্যতিক্রম!
সন্ধ্যার দিকে আমি বারান্দায় বসে বৃষ্টি দেখছিলাম। দরজায় টোকা পড়লো। ভাবলাম রিয়া এসেছে। কিন্তু না দরজার ওপাশে নীলার বড় বোন ফারিহা দাড়িয়ে আছে। হঠাৎ আসার কারন জানতে চাইলে বললো, সে আর তার বাবা-মা নাকি ঢাকার বাইরে কোন এক বিয়ের অনুষ্ঠানে যাচ্ছে। আগামীকাল নাগাদ ফিরবে। বাসায় নীলা আর সামিহা কে রেখে যাচ্ছে। কারন বৃষ্টিতে ভিজে নীলা নাকি জ্বর বাধিয়ে বসেছে। ওদের কোনো সমস্যা হলে যেন আমি দেখি.....
দুইটা মেয়েকে একটা ব্যাচেলর ছেলের পাহারায় বাসায় রেখে যাওয়া হচ্ছে। ব্যাপার টা ইন্টারেস্টিং! পৃথিবীর ইতিহাসে এমন নজির আছে কিনা আমার জানা নাই.....
তবে একটা ব্যাপার বুঝলাম ওর ফ্যামিলির সবাই আমাকে বিশ্বাস করে!
বিশাল কালো গাড়িটায় চড়ে ফারিহাদের চলে যেতে দেখলাম। আর ওদের যাওয়ার প্রায় সাথে সাথে রিয়া এসে উপস্থিত! হাতে একগাদা ফাইল-পত্র নিয়ে দরজার সামনে হাসি-মুখে দাড়িয়ে আছে মেয়েটা.....
মেয়েরাই সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে বৈচিত্র্যপূর্ন প্রানী। পৃথিবীর সাতশ কোটি মানুষের মধ্যে সম্ভবত সাড়ে তিনশ কোটি মেয়ে। আর এদের একেকজনের স্বভাব একেকরকম। রিয়া আর নীলা কে দেখলেই সেটা বোঝা যায়....
আমি তাকে ভেতরে আসতে বললাম। লম্বা চুলগুলো ভিজে গেছে বৃষ্টিতে। তাকে একটা তোয়ালে এগিয়ে দিলাম চুল মোছার জন্য। তার দীঘল কেশ কোমড় ছাড়িয়ে পড়েছে। সে মুছতে শুরু করলো। আমার মমতাজের গানটার কথা মনে পড়ে গেলো-খায়রুন লো....তোর লম্বা মাথার কেশ..... :p
আমি বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকতে পারলাম না। কোনো পুরুষ ই সম্ভবত পারবে না। চোখ ঝলসে যেতে পারে। পুরুষ জাতি তাদের স্ত্রীদের এমন দৃশ্য দেখলে পেছন দিয়ে জড়িয়ে ধরে।
-এভাবে কি দেখছো? রিয়ার ঠোটে মুচকি হাসি!
আমি লজ্জা পেয়ে গেলাম...
-ক.....কই না তো! ক....কিছু নাহ!!
-কিছু না দেখেই এই অবস্থা? আর দেখলে কি করবা? :p
খাইছে! রিয়াও তো দেখছি কম দুষ্টু নাহ! :p জীবনের প্রথম কোনো মেয়ে পরিচয়ের প্রথম দিনে আমার সাথে এতোটা ঘনিষ্ঠ হয়েছে। এটাই ওর আশ্চর্য একটা গুন। খুব সহজেই মিশে যেতে পারে সবার সাথে.....
ওর রসিকতায় আমরা দুজন অনেকক্ষন হাসলাম। হঠাৎ নীলার কথা মনে পড়লো। মেয়েটার শরীর খারাপ। ওর কাছে যেতে হবে.....
-রিয়া তুমি একটু বসবে? আমি একটু নীচ তলায় যাবো।
-ওকে যাও, আমি কি তোমার কাজ গুলো গুছিয়ে ফেলবো?
-আরে বাহ! এতো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। তুমি এগিয়ে রাখো আমি আসছি.... :D
আমি নীলাদের বাসায় গেলাম। দেখি নীলা ঘুমিয়ে আছে। আমি তার কপালে হাত রাখলাম। জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। কপালে হাতের স্পর্শ সে চোখ মেলে তাকালো। আমাকে দেখে সে খুব খুশী হয়ে গেলো। আমার হাত টা জড়িয়ে ধরে বললো.....
-তুমি এসেছো? আমি খুব খুশী হয়েছি, ভেবেছি আসবে না..... :'(
-আসবো না কেনো? তোমার শরীর খারাপ আর আমি আসবো না? :)
-এই তোমার মুখ টা একটু সামনে আনো তো কানে কানে একটা কথা বলবো....
আমি মুখ টা তার সামনে বাড়িয়ে দিলাম। আর ওমনি সে টুক করে চুমু খেয়ে বসলো! পাশে বসে থাকা সামিহার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে এই মাত্র পৃথিবীর সবচেয়ে বিভৎস দৃশ্য টা সে দেখলো।
-নীলা এটা তুমি কি করলে? ^_^
-কেন? আমার ভালোবাসার মানুষটা কে চুমু খেলাম!
আমাদের কথা-বার্তা শুনে সামিহা রাগে আমাদের সামনে থেকে উঠে চলে গেলো। ওর এমন প্রতিক্রিয়ার কারন কি আমার জানা নাই.....
বাইরে তুমুল বৃষ্টি। আমি চলে যেতে চাইলাম। কিন্তু নীলা কিছুতেই আমাকে যেতে দিবে না! অগত্যা আমি তার পাশে বসে রইলাম। সে ঘুমালে আমি চুপি-চুপি বাসায় চলে গেলাম। গিয়ে দেখি রিয়া কাগজ-কলম নিয়ে ব্যস্ত....
-কাজ কতোটুকু হলো?
-এই যে মাত্র শেষ হলো.....
মেয়েটার ওপর মনে মনে কৃতজ্ঞ হয়ে গেলাম। এতোটা উপকার কেউ কাউকে করে না!
- তো এখন বাসায় যাবে না? চলো তোমাকে এগিয়ে দিয়ে আসি.....
-বাইরে তো বৃষ্টি হচ্ছে! কিভাবে যাবো?
-তা ও তো কথা! ঠিকাছে বৃষ্টি থামার অপেক্ষা করো.....
বৃষ্টি তো থামলোই না বরং কারেন্ট টাই চলে গেলো! বৃষ্টির তেজ যেন ধীরে ধীরে বাড়ছে।
-আমি বরং আজ রাত টা থেকে যাই। তোমার কোনো সমস্যা হবে?
আমি বেশ চিন্তায় পড়ে গেলাম।
-আমার কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু তুমি বাসায় কি বলবে?
-সেটা নিয়ে কোনো সমস্যা নাই। আমি মহিলা হোস্টেলে থাকি ফ্যামিলির সাথে না!
-ঠিকাছে তুমি থাকো, আমি বরং ছাদে গিয়ে বসি, বৃষ্টি দেখি।
-ঘুমাবে না?
-তুমি ঘুমিয়ে থাকো। আজ রাতটা না ঘুমালে কিছু হবে না! :)
-কিন্তু....
-তুমি থাকো তো, আমার কোনো সমস্যা হবে না। ভেতর থেকে গেট টা লাগিয়ে দাও।
আমি ছাদে চলে গেলাম। ছাদের গেট টা খুলে সিড়িতে বসে বৃষ্টি দেখতে দেখতে একসময় ঘুমিয়ে পড়লাম। উঠে দেখি সকাল হয়ে গেছে।
বাসার দরজা নক করতেই রিয়া দরজা খুলে দিলো। ভেতর থেকে খাবারের সুগন্ধ ভেসে আসছে। দেখলাম কয়েক পদের তরকারি টেবিলে সাজানো। ফ্রিজে যা ছিলো তাই দিয়ে ই রান্না করেছে। আমরা এক সাথে ব্রেকফাস্ট করলাম।
খাওয়া-দাওয়া শেষ করে ও বিদায় নিলো। তাকে দরজার সামনে এগিয়ে দিলাম।
এবং আবারো সুসংবাদ!!!!
দরজা খুলেই নীলার মুখটা দেখতে পেলাম...... :)
আমি জানি ও এখন কি ভাববে! আমি রিয়ার সাথে রাত কাটিয়েছি!!!
(৬ষ্ঠ পর্বে সমাপ্য)
কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেন না.... :)
লেখক: Saiful Shamim (হিমুর জোছনা রাত)
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ