<3 #অবুঝ_ভালোবাসা <3 (৭ম পর্ব)
ঘোমটা দেয়া মেয়েটা আর কেউ না আমার অফিস কলিগ রিয়া.....
মেয়েটা আমার দিকে আড় চোখে চাইছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। আমার মন চাচ্ছে উঠে চলে যাই। কিন্তু ভদ্রতার খাতিরে সেটা করা সম্ভব হচ্ছে না।
-মাশাআল্লাহ, এতো দেখছি ডানা কাটা পরী! মেয়ে আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে! কি বলো ছেলের বাবা? :D
-পছন্দ না হলেই কি তোমাকে এখানে নিয়ে এসেছি? তা ভাবী ছেলে কে আপনাদের পছন্দ হয়েছে তো! নাকি....
(রিয়ার মা কে উদ্দেশ্য করে বাবা)
-কি যে বলেন! এমন সোনার টুকরো ছেলে কে কি পছন্দ না করে পারা যায়? :D (রিয়ার মা)
ফাঁসির আসামী কে বিচারক রায় পড়ে শোনালে তার কাছে যেমন লাগে, ওনাদের কথা-বার্তা আমার কাছেও তেমন লাগছে! আর একটা কথা আমার মাথায় ঢুকছে না, আমি নাকি সোনার টুকরো ছেলে! আজব..... আমি তো নিজেকে কয়লার টুকরো ও ভাবি না। এজন্য মনে ক্ষীণ আশা ছিলো পাত্রী পক্ষ হয়তো আমাকে পছন্দ করবে না। কিন্তু ভাগ্য খারাপ হলে যা হয় আরকি....
-এবার কি তাহলে বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করা যায়? (মা বললো)
আমি অবাক হয়ে গেলাম। একবারের জন্যও আমার পছন্দ অপছন্দ জিজ্ঞেস করা হলো না। যেন বিয়ে টা আমি না...আমার বাবা-মা করছে!
-তার আগে ওদের আলাদা একটা রুমে কথা বলার সুযোগ দেয়া উচিৎ (রিয়ার মা)
-হ্যা অবশ্যই!
আমাদের একটা রুমে ঢুকিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়া হলো। এই মূহুর্তে নিজেকে খুব অসহায় লাগছে। স্কুল জীবনের প্রথম দিন স্টুডেন্ট কে ক্লাস রুমে ঢুকিয়ে বাবা-মা চলে গেলে তার কাছে যেরকম লাগে আমার ও সেরকম অনুভূতি হচ্ছে।
রিয়া হুট করে এসে আমার কলার চেপে ধরলো। বাচ্চা মেয়েদের মতো হাসছে সে। এই হাসির একটা নাম আছে। মুক্তাঝরা হাসি।
ওর এরকম আচরনের যুক্তিসংগত কোনো কারন খুজে পেলাম না। বেশিদিন হয় নি ওর সাথে পরিচয় হয়েছে, সম্পর্ক টা যে খুব বেশি ঘনিষ্ঠ তা ও কিন্তু না। মেয়েরা মাঝে মাঝেই এমন রহস্যময় আচরন করে। যার কোনো ব্যাখ্যা নেই। এজন্যই হয়তো নারীকে 'রহস্যময়' বলা হয়।
-এই যে মিস্টার! আব্বু-আম্মুর সামনে এমন কাচুমাচু হয়ে বসেছিলে কেন? ভয় পাচ্ছিলে নাকি? ;)
-রিয়া আমি কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছি না, কিভাবে কি হলো?
-আরে ওইদিন যে তোমার বাবা অফিসে গিয়েছিলো তখনই নাকি ওনার আমাকে পছন্দ হয়ে যায়। তারপর আমার কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে সরাসরি চলে যায় আমাদের বাসায়। পরের ঘটনার স্বাক্ষী তো তুমি নিজেই..... ;)
-হুম বুঝলাম, এবার কি আমার কলার টা ছাড়া যায়?
-নাহ...আগে বলো আমাকে তোমার পছন্দ হয় কি না! বিয়ে করবে তো আমায়? :)
রিয়ার চোখ চকচক করছে। সেখানে আশার আলো। হয়তো আমার 'হ্যা' শোনার জন্য....
-কি হলো বলছো না যে?
ওকে মুখের ওপর না বলে দিতে বিবেকে বাধছে। অন্য কোনো প্ল্যান বের করতে হবে....
-আচ্ছা রিয়া তুমি কি আমাকে ভালোবাসো? :)
আচমকা প্রশ্নটা ছুড়ে দিলাম.....
এবার ও আমার কলার ছেড়ে দিলো। বাঙালী ললনাদের চিরচেনা সহজাত বৈশিষ্ট্য তার মুখে ফুটে উঠলো। লজ্জায় লাল, নীল, বেগুনী হয়ে যাচ্ছে মেয়েটা। মেয়েদের কে সবচেয়ে বেশি সুন্দর লাগে যখন সে কাঁদে আর লজ্জা পায়....
-কি হলো বলছো না যে?
-ভালো না বাসলেই কি তোমাকে আমার বেড রুমে ঢুকতে দিয়েছি? আমার বাবা বাদে তুমিই একমাত্র পুরুষ যে আমার রুমে পা রেখেছে।
এতক্ষনে আমি চারপাশ টা খেয়াল করলাম। দেয়ালে রিয়ার বড় বড় ছবি টাঙানো। টেডি বিয়ার সহ নানা রকম মেয়েলি জিনিস পত্রে ঠাসা রুম টা....
-আমায় যে ভালোবাসো আগে তো বলো নি?
-যখন থেকে আমাদের বিয়ের কথা-বার্তা শুরু হয়েছে তারপর থেকেই তোমাকে আমি ভালোবাসতে শুরু করি। জানো মনে মনে আমার স্বামীর আসনে তোমাকে বসিয়েছি.....
সর্বনাশ! এই মেয়ের গতিশীলতা তো আলোর চেয়ে ও বেশি। কাউকে ভালোবাসতে না বাসতেই সরাসরি স্বামীর আসনে বসিয়ে দিয়েছে! অদ্ভুদ....
-আচ্ছা রিয়া আমরা তো একে অপরকে ভালো করে চিনি না, বিয়ের আগে ভালো করে পরিচিত হওয়া টা জরুরী না? আমি বলছিলাম কি আজকেই বিয়ের ডেট না করে আমরা কিছুদিন সময় নিয়ে দুজন দুজনকে চিনি-জানি, তারপর নাহয়.....
-আইডিয়া টা কিন্তু খারাপ না! :D
আমার কথায় রিয়া ও সায় দিলো....
আমাদের প্রস্তাব সংসদে পাশ হলো। কিন্তু বিরোধী দলীয় নেত্রীর মতো মা বারবার আপত্তি জানাচ্ছিলো। ছেলের বৌ কে ঘরে তুলতে তার যেন তর সইছে না! শেষমেষ বাবা অনেক বুঝিয়ে-সুঝিয়ে তাকে রাজি করালো।
এরপর থেকে প্রতিদিন ডিউটি হলো রিয়ার বাসায় যাওয়া, তার সাথে গল্প করা, সময় কাটানো। আমি যেতে না চাইলেও বাবা-মা জোর করে পাঠাতো। আর রিয়া, রিয়ার বাবা-মায়ের চব্বিশ ঘন্টা ফোন তো আছেই!
আমি যখন রিয়ার সাথে সময় কাটাই তখন বাড়ির চাকর-বাকরের ও আমাদের রুমে ঢুকে ঘর পরিষ্কার কিংবা অন্যান্য কার্যক্রম করা নিষিদ্ধ। শত হোক ওনাদের কাছে আমি এ বাড়ির হবু জামাই ( :p ) আমাদের ডির্স্টাব হোক তা কখনোই তাদের কাম্য নয়।
রিয়া আমার কাধে মাথা রেখে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দেয়। কিন্তু আমার মন পড়ে থাকে নীলার কাছে। নীলা নিশ্চই আমাকে না দেখতে পেয়ে খুব কষ্ট পাচ্ছে?
বাবা-মা কে মন থেকে সত্যি টা বলার তাগিদ অনুভব করলাম। যেই ভাবা সেই কাজ। কিন্তু আমি কি জানতাম তারা আমার মতামতের কোনো মূল্য দেবে না? তাদের মতে বেশি বড়লোকের মেয়েরা নাকি সংসারী হয় না। তাছাড়া রিয়ার কে নাকি তাদের খুব পছন্দ হয়েছে তাই অন্য কোনো মেয়ে দেখার প্রশ্নই উঠে না। হোক সে আমার পছন্দের....
নীলার কথা ওদের কাছে বলে আরও বিপদে পড়লাম। বিয়ের আগ পর্যন্ত আমার রিয়ার বাড়ি ছাড়া অন্য কোথাও যাওয়া সম্পূর্ন নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হলো। নীলার সাথে যে দেখা করবো সেই সুযোগ টা ও পাচ্ছি না। তার ফোন টা ও সুইচ অফ।
নীলার সাথে যে করেই হোক দেখা করার সিদ্ধান্ত নিলাম। একদিন সবার অজান্তে চলে গেলাম তাদের বাসায়। কিন্তু আফসোস নীলা কে পেলাম না। বাসায় শুধু আন্টি আর সামিহা। সামিহা সেই যে নীলার জন্মদিনে বেড়াতে এসেছিলো আর যায় নি। আন্টির সাথে বেশ কিছুক্ষন কথা হলো। কিন্তু খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম যখন তিনি আমার বাসার ঠিকানা চাইলেন। অনিচ্ছা সত্বেও আমি দিয়ে দিলাম। কিন্তু তখন যদি জানতাম কেন চেয়েছে তাহলে কি আর আমি এ ভুল করতাম....? :'(
একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি ড্রয়িং রুমে নীলার মা বসে আছে। আমার মায়ের সাথে কি ব্যাপারে জানি কথা বলছে....
কথা-বার্তা শোনার জন্য কান পাতলাম।
-আপা আমার মেয়ে কিন্তু আপনার ছেলে কে খুব পছন্দ করে। তাই আমি চাচ্ছিলাম ওদের দুটি হাত এক করে দিতে!
আমি খুব খুশী হয়ে গেলাম যাক, এতোদিনে নীলা একটা কাজের কাজ করেছে! :D
মা পাকা কথা না দিলেও বলেছে ভেবে দেখবে। ওনার সাথে কথা বলে আম্মুর নাকি খুব ভালো লেগেছে। তার ধারনা মহিলার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড ও নিশ্চই ভালো হবে। বেশি বড়লোকের মেয়েরা সংসারী হয় না তার এমন ধারনা পাল্টে যেতে লাগলো। মহিলার কথা-বার্তা যেহেতু ভদ্র, মার্জিত তার মেয়ে ও নিশ্চই সেরকম হবে.....
একদিন আন্টি আমার মোবাইলে ফোন দিলো....
-বাবা আমার মেয়ে কে তোমার কেমন লাগে সত্যি করে বলো তো?
আমি ভদ্রতার খাতিরে কিছু বললাম না। শত হোক লজ্জা-শরমের একটা ব্যাপার আছে তো! :p
-কি হলো বাবা বলো? লজ্জার কিছু নেই!
-আন্টি সত্যি বলতে কি ওকে আমার খুব ভালো লাগে।
-বাহ! তাহলে তো খুব ভালো....
রিয়ার সাথে আমার বিয়ের অর্ধেক পাঁকা কথা হওয়া সত্বেও মা নীলাদের বাসায় গেলো একদিন। তাদের ঘর-বাড়ি পরিবেশ খুব পছন্দ হলো তার।
মা বাসায় আসলে তার মতামত জানতে চাইলাম। সে জানালো সব কিছু তার পছন্দ হয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি নাকি পছন্দ হয়েছে তার পাত্রী কে....
আমি খুশি খুশি গলায় বললাম....
-হ্যা মা, নীলা খুবই ভদ্র আর সুন্দরী ওর মতো মেয়েই হয় না! :)
-কি বলছিস তুই, মেয়ের নাম ও দেখি জানিস না! নীলা হচ্ছে ওর ছোট বোনের নাম, পাত্রীর নাম তো ফারিহা......!!!!
(গল্প এতো বড় কেন, কবে শেষ হবে এই টাইপের কমেন্ট যারা করবেন আমার প্রোফাইলে নেক্সট টাইম তারা আর ঢুকতে পারবেন না, একজন লেখককে তার নিজের মতো করে লিখতে দেয়া উচিৎ :) )
কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেন না..... :)
লেখক: Saiful Shamim (হিমুর জোছনা রাত)
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ