<3 #অবুঝ_ভালোবাসা <3 → ৩য় পর্ব
আমি তার মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বললাম......
-নিলাদ্রী মানে? আজ নিলাদ্রীর কি? :o
-আজ নিলাদ্রীর জন্মদিন! :D
আমি হাপ ছেড়ে বাচলাম। যাক! আমি তো ভেবেছিলাম বিয়ে টিয়ে হবে হয়তো.....
কিন্তু কোন হিসেবে বড় বোন কে রেখে ছোট বোনের
বিয়ে হবে এই বিষয় টা প্রথমে আমার মাথায় আসে নি। মানব মস্তিষ্ক যখন উত্তেজিত হয়ে যায় তখন যুক্তির ধার ধারে না....
আর আমার হাপ ছেড়ে বাচার ও কোনো মানানসই কারন খুজে পেলাম না। নীলা তো আমার কেউ না? ওর বিয়ে হলেই বা কি আর না হলেই কি? এই তুচ্ছ বিষয় টা কেন আমার মনে এতো গভীর ভাবে প্রভাব ফেলবে?
আমার সেইদিনের কথাটা মনে পড়ে গেলো। যখন আমি ছাদের মধ্যে নীলা কে বললাম আমার কোনো জিএফ নেই সে খুব খুশী হয়ে গিয়েছিলো! যখন শুনলাম অনুষ্ঠান টা ওর বিয়ের না তখন আমিও খুশি হয়েছি, অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। আমার আর ওর আচরনের মধ্যে যোগসূত্র আছে। আমি বুঝতে পারছি প্রকৃতি আমাদের নিয়ে একধরনের খেলায়
মেতেছে.....রহস্যময় খেলা!
ঘরে ফিরে সোফায় হেলান দিয়ে চুপ-চাপ বসে রইলাম। অনুষ্ঠানের আনন্দ-উত্তেজনা মোটেও আমাকে স্পর্শ করতে পারে নি। হঠাৎ কেন জানি মন খারাপ লাগছে। অবশ্য এর যুক্তিসঙ্গত কোনো কারন খুজে পেলাম না। তবে মাঝে মাঝে মন খারাপের জন্য কোনো কারন লাগে না। অযথাই মুড অফ হয়ে যায়.....
হঠাৎ লাফ দিয়ে উঠলাম! চোখ কচলে ডানে-বামে চেয়ে দেখি আমি সোফায় বসে আছি, তখন আকাশ-কুসুম চিন্তা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি নিজেও টের পাই নি! হঠাৎ ঘুম ভাঙার কারন হয়তো কোনো স্বপ্ন....দিবা স্বপ্ন!
কোনরকম হাত-মুখে পানি দিয়ে কুচকানো শার্ট টা গায়ে দিয়েই ছাদে চললাম হাওয়া খেতে। ছাদে প্যান্ডেল টাঙানো হয়েছে, খাওয়া-দাওয়ার পর্ব টা বোধহয় এখানেই সম্পন্ন হবে আর কেক কাটা হবে নিলাদ্রীদের বাসায়। আজ কে ছাদের চারপাশ লোকে-লোকারন্য! পুরুষের চাইতে সংখ্যায় কয়েকগুন বেশি মেয়েরা। একেকজনের মুখে কমপক্ষে দুই ইঞ্চি পুরু করে মেকআপ দেয়া। আমার কাছে মনে হচ্ছে স্কুলের যেমন খুশি তেমন সাজ প্রতিযোগিতায় এসেছি। একেকজন কে উদ্ভট আর হাস্যকর দেখাচ্ছে। এদিকে মহিলাদের যার যার মেয়েকে ক্যামেরার সামনে আনতে ব্যস্ততা চোখে পড়ার মতো!
এসব অনুষ্ঠানে আসলে আমার কোরবানী ইদের কথা মনে হয়ে যায়। ব্যাপারী রা তাদের গরু কে শিঙে, গলায়, কপালে মালা টালা দিয়ে সাজিয়ে হাটে আনে যেন ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষন হয়। এখনকার বাবা-মায়েরা ঠিক সেভাবে তাদের বিবাহযোগ্য কন্যাকে সাজিয়ে-গুজিয়ে বিয়ে কিংবা জন্মদিনের অনুষ্ঠানে নিয়ে আসে সবার দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য। তাহলে ব্যাপার টা দাড়ালো হাট হলো অনুষ্ঠান, ব্যাপারী হলো কন্যার বাবা-মা, কাস্টোমার হলো ছেলের বাবা-মা আর গরু হলো..... থাক! সেদিকে না যাই!! ;)
আমি চলে যাওয়ার জন্য উঠে দাড়ালাম, সিড়িতে এক পা দিতেই কোমল হাতের স্পর্শ অনুভব করলাম। পেছনে তাকাতেই দেখি স্বয়ং নিলাদ্রী দাড়িয়ে আছে! মেয়েটা এমনিতেই সুন্দর কিন্তু আজ তাকে অন্যরকম সুন্দর লাগছে। কেমন ঠিক বোঝানো যাবে না। মেয়েদের কে বিয়ের পরদিন সাধারনত এমন দেখায়। তখন তাদের চেহারায় এক ধরনের লাবন্যতা আসে। আজ নীলা কে সেরকম ই লাগছে দেখতে......
নীলাদ্রী অভিমানী কন্ঠে বললো....
-এতোদিন কোথায় ছিলেন? জানেন আমি আপনাকে কতো করে খুজেছি? :(
-তাই বুঝি? তা আমাকে 'কতো করে' খোজার কারন টা জানতে পারি? ;)
-আজ আমার জন্মদিন। রাত আটটায় কেক কাটা হবে, আপনি অবশ্যই থাকবেন নাহলে আমি কেক কাটবো না!
-অবশ্যই থাকতে চেষ্ঠা করবো! এখন আমি যাই তাহলে।
-শুনুন!
-হ্যা বলো?
-ছাদে এতক্ষন কি করছিলেন?
-কই তেমন কিছুই না তো! কেন?
-মিথ্যে বলবেন না! আমি খেয়াল করেছি আপনি মেয়েদের দিকে তাকিয়ে ছিলেন!
-আরে নাহ! কি বলো এসব....
-আবার মিথ্যে! কই কখনো তো এভাবে আমাকে দেখেন নি! ওরা কি আমার চেয়েও সুন্দরী? :'(
আমি পড়ে গেলাম মহা বিপদে! এই ধরনের কথা-বার্তা একমাত্র প্রেমিকা তার প্রেমিক কে বলতে পারে। কিন্তু আমাদের মাঝে সেরকম কোনো সম্পর্ক ই নেই। নীলা হয়তো সেটা ভুলে গেছে। তরুনী মেয়েদের আবেগের পারদ খুব ঘনঘন ওঠা নামা করে। তাদের মন বোঝা বড়ই দায়। যুগে যুগে বড় বড় কবি-সাহিত্যিক রা যা পারে নি আমার দ্বারা সেটা হওয়া এক কথায় অসম্ভব। কোনো একজন মনীষি বলেছিলেন- 'মেয়েদের বুঝতে যেও না হয় প্রেমে পড়ে যাবে নয় পাগল হয়ে যাবে'। আমার অবস্থা ও হয়েছে তাই!
আমি ওকে বোঝানোর বৃথা চেষ্ঠা করলাম.....
-কে বলেছে ওরা তোমার চেয়ে সুন্দরী? তুমিই এখানে সবার সেরা। আর কি বললে? আমি কখনো তোমাকে ওই ভাবে দেখি নি মানে? আমি তো সব সময় ই তোমাকে দেখছি!
-আচ্ছা তাহলে বলুন তো আমি এখন কি ড্রেস পড়ে আছি?
হায় হায়! সত্যিই তো আমি খেয়াল করি নি! আমি চোখ টা একটু নিচে নামাতে চেষ্টা করতেই ওর ধমক খেতে হলো। কোনো এক ছবিতে এরকম পরিস্থিতিতে টলিউডের নায়ক জিৎ কে একবার পড়তে দেখেছিলাম। তার অবস্থা আর আমার অবস্থা সেম..... :p
নীলা মন খারাপ করে আমার সামনে থেকে চলে গেলো।
বাসায় এসে আমি মহা দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলাম, বড়লোকের মেয়ে দাওয়াত তো দিয়ে গেলো এখন গিফট পাবো কোথায়? মধ্যবিত্ত মানুষ আমি কোনোরকম চলা ফেরা করি। এতো বড় অনুষ্ঠান কমদামী গিফট দিলে তো আর চলে না!
পকেটে যা টাকা ছিলো তা দিয়েই মন মতো একটা গিফট কিনে আনলাম। শাহরুক খানের ওম শান্তি ওম ছবিতে যে শো পিছ টা দেখা যায় আমার টা সেটাই। কিন্তু আমার টা সাইজে অনেক বড়, ফুটবলের মতো! পুতুল জোড়া কাঁচের ভেতরে কি সুন্দর করে হাত ধরে ঘুরছে, আর পেছনে মিউজিক বাজছে.....
রাত ৭ টা বেজে ৫০ মিনিট। আমার কেমন জানি নার্ভাস লাগছে। মন বলছে একবার যাবো আরেকবার যাবো না। কিছুক্ষনপর ফারিহা এসে উপস্থিত। আমাকে না নিয়ে সে যাবেই না! আমি না গেলে নাকি তার বোন কেক কাটবে না!! কি ভয়ংকর ব্যাপার স্যাপার। আমি কি এতই গুরুত্বপূর্ন কোনো ব্যক্তি?
মলিন শার্ট আর রংচটা একটা জিন্স প্যান্ট পরে হাজির হলাম অনুষ্ঠানে। নীলা আমাকে দেখে মৃদু হাসলো। কিছুক্ষন পর কেক কাটার মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হলো।
দাড়িয়ে দাড়িয়ে কেক কাটা দেখছি এমন সময় পেছন থেকে কে জানি গায়ের ওপর এসে পড়লো.....
ঘুরে দাড়িয়ে দেখি সেই মেয়ে যে আমাকে সকালে বলেছিলো এটা নাকি চল্লিশার অনুষ্ঠান! >_<
অনেকটা অপ্রস্তুত ভাব ধরলেও আমার মনে হচ্ছে ধাক্কা টা সে ইচ্ছে করেই খেয়েছে। সরি বলেই সে আমাকে উদ্দেশ্য করে হাত টা বাড়িয়ে দিলো.....
-পরিচিত হতে পারি? :)
-পরিচয় পরে হবো, আগে বলেন চল্লিশার অনুষ্ঠানে আপনি হিল জুতা, লেহেঙ্গা পড়ে পাউডার মেরে হাজির হয়েছেন কেন?
রাগ্বত স্বরে বললাম আমি!
মেয়েটা মিষ্টি হেসে বললো....
-সকালের আচরনের জন্য সত্যিই আমি দুঃখিত! আমরা কি পরিচিত হতে পারি না?
মেয়েটা হাত টা বাড়িয়েই রেখেছে.....
আমিও মৃদু হেসে তার বাড়ানো হাত টা ধরলাম.....
কিন্তু পরক্ষনেই আড় চোখে চেয়ে দেখি নীলা কেক কাটা বাদ দিয়ে আমার দিকে রাগ্বত চেহারায় তাকিয়ে আছে! চোখে ছলছল করছে পানি.....
এরপর ও যা করলো আতঙ্কে আমার হাত-পা অবশ হয়ে আসছিলো! নীলা আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে, চোখে মুখে প্রচন্ড ক্ষোভ আর হ্যা হাতে কেক কাটার ছুড়ি টা শক্ত করে ধরা......
(৪র্থ পর্বে সমাপ্য)
লেখকঃ Saiful Islam Shamim (হিমুর জোছনা রাত)
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ