<3 #অবুঝ_ভালোবাসা <3 (১ম পর্ব)
আমি বসে আছি ফারিহাদের বাসায়। এসি চলছে ফুল স্পিডে, তা সত্ত্বেও দরদর করে ঘামছি। এমনটা কেন ঘটছে মাথায় আসছে না। মনে হচ্ছে কোনো প্রাইভেট কোম্পানির চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিতে এসেছি!
নার্ভাসনেস কাটানোর জন্য আমি ৩৬০ ডিগ্রী এঙ্গেলে ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পুরো বাসাটা দেখার চেষ্ঠা করছি। কেমন যেন অপরিচিত লাগছে। না... পাঁচ বছর আগে যখন ফারিহাকে পড়াতাম তখন বাসাটা এমন ছিলো না। এখন অনেক পরিপাটি করে সাজানো গোছানো। এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার কারনে ওদের বাসায় আর আসা হয় নি। হয়ত আর আসাও হতো না কিন্তু ভাগ্য আমাকে টেনে এখানে নিয়ে এসেছে। গতকাল ই আমি লোটা-কম্বল সহ ফারিহাদের বিল্ডিংয়ের তিন তলায় উঠেছি। গোটা ছয় তলা এপার্টমেন্টের একমাত্র গর্বিত ব্যাচেলর আমি। ওরা ব্যাচেলর ভাড়া দেয় না, কিন্তু আমি পূর্ব পরিচিত হওয়ায় সানন্দে ফ্ল্যাট ভাড়া দিতে রাজি হয়ে গেছে!
কিছুক্ষন পর নাদুস-নুদুস কিউট চেহারার এক মেয়ে (অথবা মহিলা) আমার সামনে উদয় হলো। সোফার সাথে এলিয়ে পড়া দেহটা আমার শিরদাড়া টান করে সোজা হয়ে বসলো। মেয়ে টা দেখতে অনেক টা ফারিহার মতই..........এক সেকেন্ড! ফারিহার মতো না মেয়েটা ফারিহা ই!! তার ঠোঁটের বাম পাশের তিল টা খেয়াল না করলে হয়তো চিনতাম ই না। এতো মোটা হয়ে গেলো কি করে মেয়েটা? আমার কাছে যখন পড়তো তখন তো পাট কাঠি ছিলো!
ফারিহা মিটি-মিটি হাসছে, রহস্যময় হাসি..... হয়তো আমার অবস্থা দেখে মজা পাচ্ছে!
-কেমন আছেন স্যার? :)
-এইতো আছি বাজার দর! আগে তোমার খবর বলো...কেমন চলছে? :D
-এইতো ভালোই, স্যার এখনো বিয়ে-সাদি করেন নি তাই না? :/
-ওসব আমার দ্বারা হবে না, আমি নিজেকে চির-কুমার সমিতির চেয়ারম্যান দাবি করি! :p তা তোমার কোলে বাচ্চা-কাচ্চা কই? তুমি ও কি আমার দলে নাকি?
-হ্যা স্যার, আমি ও বিয়ে করি নি, তবে ছেলে দেখা চলছে। আপনার মতো কাউকে পেলে শুভ কাজ টা সেরে ফেলবো ভাবছি...... ;)
আমিও কিছু বলতে যাচ্ছিলাম কিন্তু তার আগেই আন্টি খাবার হাতে উপস্থিত। আমি তার পায়ে ধরে সালাম করলাম, তিনজন মিলে শুরু করলাম পুরনো দিনের স্মৃতি চারন। আড্ডার ফাকে একটা অদ্ভুদ ব্যাপার আমার দৃষ্টি আকর্ষন করলো। পাশের রুমে পর্দার আড়াল থেকে এক জোড়া মেয়েলি চোখ আমার দিকে চেয়ে আছে। চেহারা দেখা যাচ্ছে না। আমি তার দিকে আড় চোখে তাকালেই সে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে!!!
-কি হলো স্যার?
-ন...না কই কিছু না তো!
কিন্তু ফারিহা ঠিকই ব্যাপার টা বুঝতে পেরেছে....
-পর্দার ফাক দিয়ে কেউ আপনার দিকে তাকিয়ে আছে এই তো!?
আমি বোকা বোকা একটা হাসি দিয়ে বললাম.....
-হ্যা তাই
-স্যার বলুন তো ও কে? চেনা যায়?
আমি ফ্ল্যাশ ব্যাকে চলে গেলাম, ফারিহার নিলাদ্রী নামের ক্লাস ৮ এ পড়ুয়া পিচ্চি একটা বোন ছিলো। অসম্ভব পাঁকা! আমার দেখলে কেমন জানি হিন্দী ছবির নায়িকাদের মতো রোমান্টিক লুক দিতো, মুচকি মুচকি হাসতো, আবার মাঝে মাঝে লজ্জা পাওয়ার অভিনয় ও করতো। এতটুকুন বাচ্চা মেয়ে এতোকিছু শিখলো কোথা থেকে আমার মাথায় ঢুকতো না। একবার হলো কি ওই মেয়ে আমাকে লাভ লেটার লিখে বসলো! তাতে লেখা ছিলো আই লাভ ইউ। সে নাকি আমাকে না পেলে বাঁচবে না আরো কতো কি হ্যান ত্যান! :o
কিন্তু এই মেয়ে কিছুতেই নিলাদ্রী হতে পারে না। তার চোখে দুষ্টুমি খেলা করতো সব সময়, কিন্তু পর্দার আড়ালে সেই নয়ন জোড়া অসম্ভব সুন্দর, একদম শান্ত দীঘির জলের মতো স্বচ্ছ, আটলান্টিকের মতো গভীর! যেন কয়েক হাজার টাইটানিক অবলীলায় হারিয়ে যাবে ওই গভীর অতলে.......
তাছাড়া ওই চোখের মালিক নিশ্চই প্রাপ্ত বয়স্ক কোনো তরুনী হবে, আর নিলাদ্রী তো পিচ্চি একটা মেয়ে!
-কি ভাবছেন স্যার? চিনতে পারেন নি?
অনেক ভেবেও কোনো কুল কিনারা করতে না পারায় আমি অসহায়ের মতো আত্নসমর্পন করলাম....
-না পারি নি, আগে দেখলে হয়তো চিনতে পারতাম!
আন্টি আর ফারিহার হাসির তীব্রতা ক্রমেই বাড়ছে, সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আমার অস্বস্তি....
-স্যার এই সেই মেয়ে পাঁচ বছর আগে আপনি যার ক্রাশ ছিলেন, যে আপনাকে লাভ লেটার লিখেছিলো! আমাদের নিলা..... ^_^ :p
আমার মাথা টা বো করে একটা চক্কর মারলো। হিসেব কিছুতেই মিলছে না। কি করে সম্ভব? এটা অবশ্য অস্বাভাবিক কিছু ও না।
"মানুষ মরে গেলে পঁচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়, কারনে অকারনে বদলায়"
আমি ফারিহার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমার ফ্ল্যাটে চলে এলাম। বিছানায় সঙ্গে গা এলিয়ে ঘুমোতে চেষ্ঠা করলাম, পারলাম না। মনে একঝাক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
নানা আজগুবি কথা চিন্তা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম টের ও পেলাম না। নিদ্রা দেবী বিকেল পাঁচ টা পর্যন্ত আমার চোখে ভর করে ছিলো। ঘুম থেকে উঠে মন টা ফ্রেশ লাগছে। জানালার পাশে গিয়ে বাইরের দৃশ্য টা পর্যবেক্ষন করলাম। চমৎকার বিকেল! ফুরফুরে হাওয়া বইছে। ভাবলাম ছাদে যাওয়া যাক.....
ছাদে গিয়ে হাফিয়ে উঠলাম, কিছুক্ষন বিশ্রাম ও নিলাম। ছাদ টা বেশ বড়। চারপাশে ফুল-ফলের গাছ লাগানো। পরিবেশ টা ও মনোরম। আমার বেশ পছন্দ হয়েছে। মাঝে মাঝে অবসর সময়ের এখানে আসা যাবে মনে মনে ভাবলাম।
হঠাৎ ছাদের এক কর্নারে আমার চোখ আটকে গেলো। না ভুল দেখছি না.....একটা মেয়ে বসে আছে! ছাদ টা বড় হওয়ায় এতক্ষন চোখে পড়ে নি। কানে হেডফোন লাগিয়ে সম্ভবত গান শুনছে মেয়ে টা। কিন্তু লম্বা চুলের কারনে তার চেহারা দেখা যাচ্ছে না.....
আমি এক পা দু পা করে সামনে এগিয়ে গেলাম। আমার উপস্থিতি টের পেয়ে মেয়ে টা পিছনে ফিরে চাইলো.....
আর সাথে সাথে খুন হয়ে গেলাম আমি! এ আমি কি দেখছি... এতো সুন্দর ও মানুষ হয় নাকি? যেনো কোনো রোমান্টিক উপন্যাসের পাতা থেকে উঠে আসা অপূর্ব সুন্দরী এক নায়িকা!
কিন্তু কেনো জানি খুব চেনা চেনা মনে হচ্ছে। কোথায় যেনো দেখেছি.....
বিস্ময় ভাব টা চাপা দিয়ে মুখে কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে বললাম....
-পরিচিত হতে পারি? :)
-নতুন করে কি পরিচিত হওয়ার কিছু আছে?
আমি তার কথা টা বুঝতে পারলাম না। মেয়ে টা আমাকে তার পাশে বসতে বললো।
-আপনার নাম টা জানতে পারি?
মেয়েটার মুখে রহস্যময় হাসি ফুটে উঠলো.....
-আমার নাম? নীলা..... নিলাদ্রী!!!
(চলবে)
লেখক → → → Saiful Shamim (হিমুর জোছনা রাত)
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ