#অবৈধ বিয়ে(৬ষ্ঠ পর্ব)
লেখা: Umme Nipa
বের হয়ে দেখি ইকবাল এর মা -বাবা আর দুজন মহিলা বসা..
এর মাঝে একজন বৃদ্ধা মহিলা..
সে বক বক করেই যাচ্ছে।
"আরে বিয়ের পর মেয়েরা ঘুম দিয়া উঠে সবার আগে।
শ্বশুর -শাশুড়ির খেদমত করে আর ইকবাল এ কি বিয়া কইরা আনছে?ওরে বললাম আসমারে বিয়া করতে..আসমা কত গুনি মাইয়া..
ইকবাল এর মা-বাবা কিছুই বলছেননা,কে এই মহিলা তাও আমি জানিনা...
আমি পাশে গিয়ে দাড়ালাম...
ইকবাল এর মা বলছে,বউ এই তোমার নানী শাশুড়ি আর এই তোমার খালা শাশুড়ি..
আমি সালাম দিলাম..
নানী : এ মা... বউ পর পুরুষ এর সামনে মাথায় কাপড় দিয়া আসতে হয় তাও জানো না?
আমি: পরপুরুষ কে?
নানী : কেন তোমার শ্বশুর..
আমি: বাবা আবার পরপুরুষ কি করে হয়?
ইকবাল এর বাবা আমার দিকে তাকালো..তার মুখ দেখে মনে হচ্ছে সে খুশি হয়েছে যদিওবা আমি তাকে খুশি করার জন্য বলিনি..
নানী : তো শহরের মাইয়া..দেখলে তো ছোট মনে হয় তাইলে এতো তাড়াতাড়ি বিয়া করলা কেন?
তার একটা কথায় আমার বুকে ভিতর মোচর দিল
আমি কি বিয়ে করতে চেয়েছিলাম..আমার পক্ষে কি এতো কিছু মেনে নেয়া সম্ভব ছিল,তবে পরিস্থিতি সব সম্ভব করে দিয়েছে।
আমি তার কথায় আর উত্তর দিলাম না।
বাবা: আম্মা থাক যা হবার হয়েছে,ইকবাল খুশি থাকলেই আমরা খুশি।
নাটক -সিনেমায় দেখতাম শাশুড়িরা বউকে নির্যাতন করে..
আর এখন দেখছি নানী শাশুড়ি ও।
আমার ঘর বাঁচানোর দায় নেই তাই আমায় কিছু বলুক একবার তাহলে আমিও প্রতিবাদ করবো..
এর মাঝে ইকবাল এর মা বললো চা করে আনতে।
চা আমি করতে পারি।বাসায় আমি ই চা করতাম সবসময় তাই কাজটা আমার অপছন্দ নয়...
কিন্তু এখানে যে উঁনুন তাতে আমি করতে কিছুটা ভয় পাচ্ছি।
ইতি আসলো আমায় সাহায্য করতে..
মেয়েটা যেন আমার অনেক দিনের আপনজন।
আমি ফিস ফিস করে জিজ্ঞেস করলাম ইতি আসমা কে?
ইতি কিছুক্ষন চুপ করে রইলো।
আমি: না বলতে চাইলে থাক..
ইতি: আমার খালাতো বোন..নানির পাশে যে খালা বসা তার মেয়ে।ভাইয়ার সাথে বিয়ে দিতে চাইছিল।
আমি: তারপর?
আমি জানিনা আমার কেন এতো কৌতুহল হচ্ছে?ইকবাল এর বিয়ে না যেন যা ইচ্ছে তাই হোক তাতে আমার কি?
ইতি: আব্বা বলছিল ভাইয়া চাকরি করবে তারপর।
আসমা আপু খারাপ না ভাবি,ভাইয়ার সাথে কিছুই ছিলনা তুমি আবার ভাইয়াকে ভুল বুঝোনা।
আসমা আপুও আসছে,হয়তো সামনেই আছে...
আমি: তোমার ভাইয়াকে দেখছো?
ভাবছি,হয়তো আসমার সাথে দেখা করতে গেছে।যাক তাতে আমার কি?উনি আমার কেউ নন শুধুই আজ আমার অবস্থা আমার পক্ষে নেই তাই।
ইতি:ভাইয়া বাড়ি যতক্ষণ থাকে ঘরে থাকে শুধু রাতে।সারাদিন ঘুরে বেড়ায়।নামাজ পড়ার পর আর আসেনি।
সবাইকে চা দিয়ে আমি রুমে গেলাম।
মাঝে মাঝেই বিভিন্ন মানুষ আসে আমায় দেখতে,কি অদ্ভুত মনে হচ্ছে ভিন্ন গ্রহ থেকে এলিয়েন এসেছি তাই জনে জনে আমায় দেখতে আসছে।
দুপুর হয়ে গেল ইকবাল সাহেবের খবর নাই...
আমি কানে ইয়ার ফোন লাগিয়ে গান শুনছি..
এর মাঝেই রুমে এসে নানীর
চিৎকার..
বউ এর কি লজ্জা নাই..?
ঘরের বউ থাকবে বউ এর মতন,তা না সে কানে তার লাগাইয়া শুয়ে আছে..
আমাগো বিয়ার সময় লজ্জায় ৩মাস মাথা উঁচু ই করিনাই..
এই বলে চলে গেল..
আমি ওনার কথা বসে বসে শুনেছি..
কিছুই বলতে পারিনি..
ইকবাল আমায় একা রেখে চলে গেল।অবশ্য যাবে নাই বা কেন! কে আমি?আমায় তো সে দয়া করেছে...
আমি কাঁদছি মহিলার কথা শুনে নয়..
কথা শুনতে আমার অভ্যাস হয়ে গেছে...
কাঁদছি আমার কপালের কথা ভেবে..
এর মাঝে ইতি এসে বলে,ভাবি তুমি ওনার কথায় মন খারাপ করোনা।উনি ওমন ই..
আমি: তোমার ভাই কি এলো?
ইতি :না
ইতি আসমার সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিল।কেন যেন এই আসমা মেয়েকে আমার হিংসা হয়।কেন যেন এই মেয়েকে আমি সহ্য করতে পারিনা।
আসলে আমি কি চাই বা কি চেয়েছিলাম সব ই আমার অজানা তেমনি অজানা আমি কি করবো সেটা..
সন্ধ্যা হয়ে গেল ইকবাল এখনো আসছেনা..
কিছুক্ষন পরে বাহির থেকে কে যেন জানালায় টোকা দিল..
আমি সেটা আবার শোনার জন্য জানালার পাশে গিয়ে দাড়ালাম
আবার টোকার শব্দ এক সময় জিজ্ঞেস করলাম কে?
ওপাশ থেকে ইকবাল ধীর গলায় বলছে,আমি,লুবনা জানালা খুলুন।
ভাবছি আমিও আধা ঘন্টা পর জানালা খুলবো।অপেক্ষা করার কষ্ট বুঝুক।
জানালা খুলে দেখি দাড়িয়ে আছে।
আমি: এখান দিয়ে রুম এ আসবেন কি করে?
সামনের দরজা দিয়ে আসুন।
ইকবাল: আমার হাতে একটা প্যাকেট দিয়ে বললো এই নিন।
আমি: কি এটা?
ইকবাল: জিলাপি । আমাদের এখানে খুব ভালো বানায়..
আমি: বাসার সবাইকে দিব?
ইকবাল: না এটা শুধু আপনার। বাসার কাউকে দেখাবেন না।
আমি: ইতি কে ছাড়া খাব না।
ইকবাল: ওর জন্য এনেছি।আমি দিয়ে দিব।
আমি জানিনা সে কেন আমায় আলাদা দিল।তবে আমি তার কথা মতই লুকিয়ে রেখেছি খাবার..
এর মাঝে ইকবাল আসলো ঘরে।
ইকবাল এর নানী ইকবাল কে জড়িয়ে ধরে আবার কাঁন্না।
এখানে রিতি এমন ই হয়তো,ছেলেরা বিয়ে করলেই তারে জড়িয়ে ধরে কাঁদে।আর মেয়েদের না আছে হাসা বা না আছে কাঁদার অধিকার।
ইকবাল এর মা ইকবাল কে বলছে,নতুন বউ ঘরে একা রেখে কই ছিলি সারাদিন?
ইকবাল: কেন তোমরা আছোনা?
ইতি এই নে জিলাপি ।
ইতি: ভাবির হাতে দে।
নানী : বিয়ে হতে না হতেই বউর হাতে সব দিলে বউ মাথায় উঠে নাচবে।
তোদের নানা আমায় প্রশ্রয় দিতনা।
বউ আশ্রয় দেবার জিনিস,প্রশ্রয়না।
ইতি তবুও জিলাপি এনে আমার হাতে দিল।
আমি: ইতি তুমি খাও।আমি খাইনা বলে ইকবাল এর দিকে তাকিয়ে দেখি সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে...
এর মাঝেই আসমা এসে বলে,ভাবি মনে হয় রাগ করছে যাও ইকবাল ভাইয়া বউ এর মান ভাঙাও।
ইকবাল এর মা: ইকবাল বিয়ে কইছিস তাই যা আনবি বউ কে দিবি।আজকালকার বউরা অনেক কিছুই আশা করে। আগের যুগ আর নাই এখন।
এক খাবার নিয়ে এতো কাহিনী এ ঘরে,এর জন্যই আলাদা আমায় দিয়েছে।
ইকবাল রুমে গেল তারপর আমিও গেলাম.
শুনছি আসমা বলছে,বর কে চোখে হারাচ্ছে।
আমি কানে নিলামনা।
ইকবাল : খেয়েছেন?
আমি ওর কথার উত্তর দিলাম না.
সারাদিন কই ছিলেন?
ইকবাল: মসজিদ এ ঘুমিয়ে ছিলাম।রাতে ঘুম হয়নি।
আমি: আপনার ঘর নাই?
ইকবাল: মসজিদে ঘুমাতে শান্তি আছে অনেক।
আসলে,ঘরে তো অশান্তি অনেক আর তা হলাম আমি। সেটা আমি খুব বুঝি ইকবাল বলুক আর না বলুক।
ইকবাল: আমার বাসার কারো কথায় কিছু মনে করবেন না।
আমি: আসমা কে?
ইকবাল: আমার খালাতো বোন।
আমি: তা আমি জানি বাকিটা বলুন।
ইকবাল: বাকি কি? আমার খালা আর খালুর মেয়ে।
ইকবাল আমায় হয়তো বলতে পারছেনা বা চাইছেনা। আমার ও উচিৎ না কারো পার্সনাল বেপার নিয়ে খোঁচানো...
আমি: তা কি ভাবছেন?
ইকবাল: কি?
আমি: আমরা এখান থেকে যাব কবে?
ইকবাল: আমি ২-১দিন পর ই যাব। আপনাকে মা মনে হয় এতো তাড়াতাড়ি যেতে দিবেনা।
আমি: মানে?
ইকবাল: হুম নতুন বউকে এখনো অনেকের দেখা বাকি।
আমি: কিসের বউ বউ করছেন আপনি?
তারা না হয় জানেনা?
আপনি তো জানেন?
এ বিয়ে অবৈধ,এ বিয়েতে আমার মত ছিলনা,এ বিয়ে আমি চাইনি..
আপনি কি ভাবছেন আমি সব মেনে নিয়েছি?
আচ্ছা আমার সাথে আপনাকে যায়??
এমন ঘরে থাকা যায়? সবাই খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে কথা বলে।বিয়ের কাজ বিয়ে করেছি।চলেও যাব সময় মত।
ইকবাল কোন কথা না বলে রুম থেকে চলে গেল।
আমি জানিনা এসব আমি কেন বলছি।ইকাবাল এর প্রতি রাগ এর কারন টা শুধু বুঝতে পারছি তা হল আসমা।কিন্তু সেই রাগের কারনটা আমি মানতে পারছিনা।নিজের মনের প্রতি নিজের ই লজ্জা লাগছে।
আজ রাতে আর ঘুমাবোনা। সকাল-সকাল উঠে আমি ই আজ সবাইকে নামাজ পড়তে উঠাবো।
নানীর মুখ এ ছাই দিব আমি।
রাতের খাবার শেষ করে আমি এসে শুয়ে শুয়ে গান শুনছি।বাবা-মায়ের কথা মনে পরছে।আসার পর তাদের সাথে একটু কথাও বলিনি।ইচ্ছে করেই বলিনি,রাগ- অভিমানে..
বাবা-মা চিন্তায় ই শেষ হয়ে যাচ্ছে হয়তো..
এর মাঝে ইকবাল রুমে আসলো,আমি ওনার সাথে কথা না বলে অন্য দিক ফিরে শুয়ে আছি।হয়তো সেও কথা বলবেনা।
ইকবাল: কাল রাতে গল্পটা শেষ পর্যন্ত না শুনেই ঘুমিয়ে গেছেন।আজ বাকিটা পড়বো?..
আমি উঠে বসলাম,কেন আপনাকে গল্প পড়তে বলছি?
নিজেই তো টেবিল এর উপর হা করে ঘুমিয়ে পরলেন..আবার বলেন আমি ঘুমিয়েছি।
শুনুন,বিছানায় আসুন।আবার কাল মসজিদ এ গিয়ে ঘুমাবেন তা আমি চাইনা।
ইকবাল বিছানার এক পাশে এসে শুয়ে পড়লো।আমি বসে আছি ইকবাল এর ঘুমের অপেক্ষায়।কিছুক্ষন পর ইকবাল কে বললাম ঘুমিয়ে পরেছেন?
ইকবাল: না..
আমি: আমার না ক্ষুধা লাগছে।সবার সামনে লজ্জায় আমি খেতে পারিনি।
ইকবাল উঠে বসলো কিসের লজ্জা খেতে আবার?দাড়ান দেখছি খাবার আছে কিনা.
আমি: যেতে হবেনা,টেবিল এর ড্রয়ারের মধ্যে জিলাপি আছে আমি তখন খাইনি।
ইকবাল: খান নি কেন?এখন তো ঠান্ডা হয়ে গেছে..
আমি: বারে,আপনাকে রেখে খাব কেন?
দুজন রাতে জিলাপি খাচ্ছি..
ইকবাল: বেশি আনতাম কিন্তু আমার কাছে টাকা ছিলনা..
আমি: বেশি আনলে মজা লাগতো না।
আচ্ছা রাতে ঘুমিয়ে গেলে সকালে উঠতে পারবোনা।তার চেয়ে সারারাত জেগেই থাকি।
ইকবাল: আমি উঠিয়ে দিব ঘুমান।রাত জাগলে দিনেও ঘুমাতে পারবেন না।
বাড়ছে রাত,বাড়ছে ঘুমের নেশা।
ইকবাল আর আমি দুজন দুদিকে ফিরে শুয়ে আছি।
আমি: আচ্ছা জলমানব এর শেষে কি হয়েছিল?.
ইকবাল: নায়িকা জলমানবের সাথে সাগরে চলে গেল..
আমি: নায়িকা সাগরের মাঝে কি করে থাকবে?অক্সিজেন পাবে কি করে? দ্বীপ ঢুবে গেলে মরে যাবেনা?
ইকবাল: গল্পে ভালোবাসাই অক্সিজেন..
আমি হাসি দিয়ে চোখ বন্ধ করলাম।খেজুর আবার ভালোবাসাও বোঝে..
চোখে ঘুম ভর করেছে।চোখের সামনেই এক জলমানব প্রেমিক ভেসে আসছে আর তার নায়িকা হিসেবে নিজেকে মনে হচ্ছে।নায়কটার চেহারা স্পষ্ট বুঝছিনা।ঘুমে ক্রমানয়ে আবছা হয়ে আসছে সব..
ঘুমিয়ে যেতে না যেতেই কানের কাছে ইকবাল ফিস ফিস করে আমার নাম ধরে ডাক দিল..
চলবে...
#অবৈধ বিয়ে (৭ম এবং শেষ পর্ব)
লেখা: Umme Nipa
সমূদ্রের তীরে ইকবাল বসে আছে।আর ওর বুকে মাথা রেখে আমি..
ঠান্ডা বাতাস দিচ্ছে সাথে আমার চুলের ঝাঁপটায় ইকবাল এলোমেলো হচ্ছে..
শীতল শরীর ক্রমানয়েই আরো শীতল হচ্ছে।আমি ইকবাল কে শক্ত করে ধরলাম।ওর উষ্ণ নিঃশ্বাস আমার চুল ভেদ করে ঘাড়ে লাগছে ...
ওর খোঁচা খোঁচা দাড়ি আমার গালকে স্পর্শ করলো তাতেই আমার ঘুম ভেঙে গেল..
চোখ খুলতে না খুলতেই আমি টের পেলাম ওর দাড়ি ঠিক ই আমার গালে স্পর্শ করছে।আমি ওকে ঠিক ই শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছি।আর ইকবাল আমার নাম ধরে ডাকছে বার.বার..
ঠিক এভাবেই স্বপ্নেও ডেকেছিল।ইকবাল কে ধাক্কা দিলাম।
ও হতভম্ব হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে..
আমি: এসব কি?এই না আমি আপনাকে বিশ্বাস করে ছিলাম..
এই বলে আমি কেঁদে দিলাম..
ইকবাল চুপ করে আছে..
আমি: আসলে পুরুষ আর হিংস্র পশুকে আস্থা করতে নেই।আমার দূর্বলতার দাম এভাবে দিলেন?
তারচেয়ে আমায় মেরে ফেলতেন?
ইকবাল: কি বলছো?
আমি: এর মাঝে তুমি করে বলা শুরু করছেন?ছিঃ.. ছিঃ
ইকবাল: আমি আপনাকে যেই ডাকতে গেলাম যে নামাজ পড়ার সময় হয়েছে আর আপনি সেই আমায় জড়িয়ে ধরলেন তাতে আমার কি দোষ...
আমি!জড়িয়ে ধরেছিলাম!তা তো স্বপ্নে ধরেছিলাম কিন্তু বাস্তবে কি করে..!
আমি: ও..আসলে রাতে জলমানব এর নায়ক কে ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়েছিলাম..
ইকবাল: তো স্বপ্নে নায়ক কে জড়িয়ে ধরেছিলেন বুঝি?
লজ্জা লাগছে খুব...বলা উচিৎ হবেনা যে আমি নায়ক হিসেবে তাকেই দেখেছি তাহলে খেজুর এর ভাব বেড়ে যাবে..
আমি: নায়ক পাব কই!দেখি ইয়া বড় ডলফিন মাছ কে শিকার করেছি আমি।
ইকবাল: হা হা হা।
আমি: হাসির কি বললাম?
ইকবাল: না ঘুম ভেঙে উঠে দেখেন পুঁটি মাছ শিকার করছেন?
আমি: না বিড়াল।
ইকবাল চোখ বড় করে বলছে,এই মেয়ে স্যার কে বিড়াল বলা পাপ..
আমি: স্যার কে না বরকে বলছি বলেই আমি থতমত খেলাম।
ইকবাল কথা এড়িয়ে নিয়ে বললো নামাজ এর সময় পাবেন না কিন্তু।
আমি: হুম উঠি।
ইকবাল: আপনি চুলে কি আতর দেন?
আমি ইকবাল এর দিকে রহস্য নিয়ে তাকিয়ে বললাম আতর কেউ চুলে দেয়?
ইকবাল: চুলের ঘ্রান অনেক সুন্দর। এমন ঘ্রান এর আতর খুঁজি আমি, কিন্তু পাইনা।
আমি: একটা কাজ করেন..
ইকবাল: কি?
আমি:আমায় মেশিন এ দিয়ে আতর বানিয়ে নিন।আতর এর নাম লুবনা আতর।
ইকবাল: হুম ভালো আইডিয়া।
আমি রাগ হয়ে বললাম, কি?বললাম আর উনি রাজি।
যান মসজিদ এ,আমি একজন কে নামাজ পড়তে উঠাতে যাই।
ইকবাল: কাকে?
আমি দরজার কাছে গিয়ে পিছন ফিরে ইকবাল এর দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়ে বললাম আপনার নানী কে..
ইকবাল হাসি দিয়ে বলে আপনি পারেন ও।
ইদানীং এই নতুন পরিবেশ আমার ভালো লাগছে।ভালো লাগে নামাজ পড়াতে উঠাতে।
আমার ১৭বছর বয়সে আমি এমন কখনো নামাজ পড়াতে উঠি নি।
দুপুরবেলা ইকবাল আবারো আমায় খাবার এনে দিল।
আমি জিজ্ঞেস করলাম টাকা পেলেন কই?
বললো মা দিয়েছে।আপনি তো আবার লজ্জায় খেতে পারেন না তাই খাবার রুমের দরজা বন্ধ করে খান...
আমি দরজা না বন্ধ করে খাচ্ছি আর ইয়ারফোন এ গান শুনছি।
এর মাঝে নানী রুম এ আসলো।আমি টের পেয়েই খাবার লুকিয়ে ফেললাম।
আমি: নানী বসেন।
নানী : ওই তার দিয়া কি শুন সারাদিন?
আমি: আপনি শুনবেন?ভালো লাগবে বলে ওনার কানে দিলাম।উনি কিছুক্ষন চুপচাপ করে চিৎকার দিল ওরে আল্লাহরে আমার কান গেলরে...
আমি কানে কিছু শুনিনা..
এক লাফ দিয়েই ইকবাল এর মায়ের কাছে গেল।ওনার চেঁচানো শুনে ইকবাল, ইতি ঘরের সবাই এসে পরেছে।
ইকবাল: কি হয়েছে নানী?
নানী : ইকবালরে আমার কান গেল..আমি কিছুই শুনিনা এখন।
ইকবাল: কি হয়েছে বলবা তো?
নানী : তর বউ আমার কানে কি যেন তার লাগাইয়া দিছে..ঠাডা পরার মতন শব্দ আসে তা দিয়া।আমার কান গেল।
আমি: আপনি কানে না শুনলে এসব প্রশ্নের উত্তর কি করে দেন?
নানী : দেখ দেখ আবার মুখে মুখে কথা কয়।
ইকবাল: দেখুন লুবনা নানী এ যুগ এর নয় তাকে আপনি ওসব না দিলেও পারতেন।
নানী : এতো মহব্বত দিয়া কতা কইছ না তো।তোর নানায় আমায় মারতো। একটু পুরুষ হ।তোর নানায় জ্যাতা থাকতে কি আমার ভুতে ভয় ছিল?
আমারে রাত ৩টায় ও লড়ানি দিত।আমি বাগান-কবরস্থান এ গিয়া পলাইতাম।
ইকবাল কিছু বলছেনা...
সবাই ই নানী কে নিয়ে ব্যস্ত।আমার কথা বা আমাকে বোঝার মতন কেউ নাই।
আমি আমার রুমে চলে আসলাম।আমার ঘৃনায় কাঁন্না আসছে বার বার।বাকি কারো কথায় ঘৃনা লাগেনা।ঘৃনা কেবল ইকবাল এর কথায়...
কিছুক্ষন পর নানী আসলো..
আমায় বলে: বউ মন সংসার এ দেও।গান এ দিও না।
আমি: আপনার স্বামী আপনাকে মারতেন?
নানী : হ কত মাইর খাইছি।মারতো আবার সোহাগ করতো...
যখন মারতো তহন আমি তার রাগ তার জামাকাপড় এর উপর ঝারাইতাম।
আমি: জামাকাপড়?
নানী : হুম তার জামাকাপড় মাটিতে ফালাইয়া পা দিয়া লাথি দিতাম মনে মনে ভাবতাম তারে লাথি মারি।
আমি: উনি দেখতেন না?
নানী : না সে আসার আগেই জামাকাপড় আবার গুছিয়ে রাখতাম।
আমি:আসলে আপনার স্বামি দূর্বল ছিল।ওনার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে এখন সে বেঁচে থাকতো আর আপনি কবরে।যে কাজ করেন তাতে মারার কাজ ই করেন।
নানী চিৎকার দিয়ে ইকবাল কে ডাক দিল।
ইকবাল : কি হয়েছে?
নানী : তুই বিচার কর..এই মাইয়া আমারে মারতে চায়।
আমি: ও আমার বিচার করার কে?
ওরে আমি আমার কিছু মানি না।
আমি থাকবো না এখানে।
ইকবাল: নানী একটু শান্তি দেও আমারে।আমারে বাঁচতে দেও তোমরা।
কথাগুলি আমাকেই শুনাচ্ছে।
আমি মাকে কল দিলাম। মা-বাবা আসলো বিকালে।আমি চলে যাব।
ইকবাল একবার ও আমায় রাখতে চাচ্ছেনা।
মা-বাবা বাড়ির পরিবেশ দেখে এখন আর আমার বিয়ে নিয়ে খুশি নন।তারা পারলে আমায় আজ ই ডিভোর্স দেয়ায়।ইকবাল এর সাথে কথাও বলছেনা আমার মা।
বাসা থেকে বের হবার সময় সবাই এসেছে শুধু ইকবাল কে দেখছিনা।
ওকে খুঁজছি আমি কিন্তু ও নেই।
একবার যদি আমার হাত ধরে বলতো যেও না আমি থেকে যেতাম।
ইকবাল এর নানীর কাছে গিয়ে শব্দ না করেই মুখ নাড়িয়ে বললাম ভালো থাকবেন।
নানী : কি কও?
আমি আবারো একই ভাবে বললাম।
উনি কেঁদে কেঁদে বলে উঠলো এই আমি এখন সত্যি সত্যিই শুনিনা।
ইতি: নানী তার মানে তুমি অভিনয় করছিলা?
আমি: বাদ দেও।আসলে আমার জীবন ই অভিনয়ের মঞ্চ।
বাবা-মা উঠোনে দাড়িয়ে আছে।
আমি বাসা থেকে নামার সময় ইকবাল এর বাবা বললো মা রাগ অভিমান সবার ই হয় তাই বলে চলে যাবা কেন?
আমি: বাবা আমি এমনিতেই যাচ্ছি। ক্লাস মিস যাচ্ছে।
এই প্রথম আমার বাবাকে ছাড়াও কাউকে বাবা বললাম।
মা: তাহলে ইকবাল কেও নিয়ে যাও?
আমার মা: না সে তার সময় মত যাবে।
ইতি: ভাবি তুমি আজ যেওনা।
ইকবাল কি কপুর এর মতন উবে গেল!দেখছিনা ওকে...
আমি আমার বাসায় চলে আসলাম।মন একবার বলে আমি ভুল করছি তো,আমি ১০বার বলি না আমি ই ঠিক..
ইকবাল কে মনে পরছে।বর হিসেবে না হলেও বন্ধু হিসেবে ও।খুব মায়া ধরে গেছে।
আমার এ মায়া কাটিয়ে উঠতে হবে।
একবার কল দিব ভাবছি কিন্তু আমার কাছে ইকবাল এর নম্বর টা ও নেই।
মায়ের কাছে চাইতেও লজ্জা লাগছে।
আমি ই মনে হয় প্রথম বউ যার কাছে বর এর মোবাইল নম্বর নেই।
সারারাত শুধু আমার সাথে ঘটে যাওয়া দিনগুলির কথা ভাবছি।বার বার ইকবাল এর সেই মুখ আমার চোখে ভেসে আসছে।
ঘুমে চোখ লেগে গেল,ঘুম ভাঙলো আযান এর শব্দে।
আমি উঠেই পাশে ফিরে চোখ বন্ধ করে ডাকছি,ইকবাল নামাজ এর সময় হয়ে গেছে তো..ওঠো..
তাকিয়ে দেখি কেউ নেই।আমি একা..
তাকিয়ে আমার কিছুসময় লাগলো মনে করতে আমার জায়গাটা।ইকবাল কে আর জাগানো হবেনা আমার।এটা ভাবলেই চোখের পাতা ভারি হয়ে আসে।
এখন আমি ঠিক ই নামাজ পড়ি নিয়ম করে শুধু সেই মানুষ নেই যে আমায় শিখালো..
আসলে ধার্মিক মানুষ হলো ঝর্নার মতন।তাদের সংস্পর্শে যে কোন ঘোলা পানি গেলে তা পরিষ্কার -স্বচ্ছ হয়ে যায়।
আমি হয়তো সেই ঝর্না থেকে প্রবাহিত হয়ে স্রতে অন্যদিকে চলে যাচ্ছি। সে ঝর্নার খোঁজ হয়তো আমার ইহকালে মিলবেনা..
শুনছি মা কার সাথে যেন খুব খারাপ ভাবে কথা বলছে।
যেই শুনলাম সে বলছে আমার মেয়েকে আর তোমার সাথে দিব না আমার বুঝতে বাকি রইলনা যে ওটা ইকবাল।
আমি দরজার আড়ালে গিয়ে শুনছি মায়ের কথা।খুব মন চাইছে মায়ের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে শুনি ওর কথা।
মা বলছে খুব তাড়াতাড়ি সব কিছু থেকে মুক্তি পাবে...আর কল দিবেনা বলে ফোন রেখে দিল।
আমি ইদানীং আর হাসতে পারিনা।একা ঘরেই বসে থাকি।
মা আসলো আমার রুমে।
আমি: মা রুবেল কে দেখলাম না আসার পর একবার ও?
মা: আরে তুই তো জানিস না।সে ছেলে তো জেলে?
আমি: কেন?
মা: জামিল এর বউ এর ঘরে রাতে চোরের মতন ঢুকে বসে ছিল।
এলাকার মানুষ ধরে মেরে জেলে দিছে।
ভাবছি এই সেই মানুষ যে এককালে আমার বিচারক ছিল।যার জন্য আমার জীবন এলোমেলো হয়ে গেছে।
আচ্ছা কিছু কিছু এলোমেলো জিনিসের মাঝেও হয়তো কিছু মূল্যবান জিনিস লুকিয়ে থাকে..
মা: কি ভাবছিস?
আমি: না কিছুনা।ইকবাল কল দিয়েছিল?
মা: ওর কথা বাদ দে।কি নোংড়া পরিবেশে থাকে।
আমি: না জেনে বিয়ে দিয়েছিলে কেন মা?
মা: আমি কি বুঝেছি ওমন ছেলে ওই পরিবেশ এর।তুই চিন্তা করিসনা আমি যেমন বিয়ে দিয়েছি আমি ই এর সমাধান করবো।
আমি: সমাধান?এখন সমাজ কিছু বলবেনা?
মা: বললেও বেশিদিন না।ভুল থেকেই শিখেছি।
আসলে কিছু মানুষ শুধু জন্মই নেই কিন্তু তাদের চালনাকাঠি থাকে অন্য কারো হাতে।
তারা চাইলে গড়বে আবার দুমড়েমুছরে দিবে।
যাক তাতে ইকবাল ও হয়তো শান্তিতে থাকবে।ও তো বাঁচতেই চায়।
বলতে বলতে ৪মাস কেটে গেল।কারো সাথেই আমার যোগাযোগ নেই।ইকবাল প্রায় ই মাকে কল দেয়, মা হুমকি দেয় বাসায় আসতে বারন করে।আর ইকবাল ও আর আসেনা।
২৩শে নভেম্বর..মা সকালে উঠেই দেখছি খুব খুশি।
আমার রুমে এসে আমার মাথা তার বুকে চেপে ধরে বলছে লুবনা অপেক্ষার দিন শেষ..
আমি তার এতো খুশির কারন বুঝছিনা।শুধু বুকের ভিতর চিনচিন ব্যথা অনুভব হচ্ছে।
শুনছি কোন ভাঙার শব্দ।আমি জানি আমি আবারো কিছু হারাতে যাচ্ছি..
আমি: কি মা?
মা: কাল তোদের ডিভোর্স এর ডেট পরেছে।
আমি এই ভয় ই পেয়েছিলাম।এতদিন কিছুর আশায় বেঁচে ছিলাম এখন সে আশার ও মৃত্যু হতে চলেছে।
মা তার ফোনটা হাতে দিয়ে বললো নে তুই ই ইকবাল কে জানা।
এই প্রথম আমি ওর সাথে ফোনে কথা বলবো হয়তো এই শেষ।
কল রিসিভ করেই সালাম দিল।
আমি উত্তর নেয়ায় আমার কণ্ঠ বুঝে ফেললো।
ইকবাল: লুবনা কেমন আছো?
আমি এর উত্তর দিলাম না। আসলে দিতে পারছিলাম না।আমি কেমন আছি তা আমি নিজেও জানিনা।
আমি: কাল ১০টার দিকে এডভোকেট মন্সুর আলম এর চেম্বার এ আসবেন।মা কে কল দিবেন মা ঠিকানা জানিয়ে দিবে।
ইকবাল: কেন?
আমি: উকিল এর কাছে কেন যায়! ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে।আমার আর আপনার মাঝে আছে এক অবৈধ বিয়ের ঝামেলা তা থেকেই মুক্তি।যদিওবা এ বিয়ের মুক্তি করতে দলিল লাগেনা।যেখানে পরাধীন এর বেপার নেই সেখানে মুক্তি ও লাগেনা।
ইকবাল চুপ করে আছে..
আমি: কি রাখবো?
ইকবাল: আমি বিয়ে করার সময় ও নিজের কথা ভাবিনি।আজ ও ভাববো না।নিজের জন্য কিছুই চাওয়ার নেই লুবনা।
শুধু একটি কথাই,কারো কথা নিজের মুখে বসানো যায় কিন্তু কারো ইচ্ছে নিজের মন এর উপর চাপিয়ে দিলে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়।আমি সেই দীর্ঘনিঃশ্বাস নিয়ে কাটিয়ে দিতে পারবো। কিন্তু আশা করি তুমি সুস্থ ভাবেই নিশ্বাস নিবে।
ওর গলার স্বর পাল্টে যাচ্ছে ক্রমাগত।কাঁপা গলায় কথা বলা যায় ঠিক ই তবে কথার মাঝে বেশ ফারাক।
আমি: আপনি ও ভালো থাকবেন আসমা কে নিয়ে।মানাবে খুব।বউ একেবারে বউ এর মতন ই।
ইকবাল: মানুষ ভুল অনেকবার ই করে তবে ভুল থেকে শিক্ষা একবার নেয়া হলে আর করেনা।আমার শিক্ষা কি এখনো নেয়া হয়নি?
আমি: আচ্ছা আমি রাখি।
ওর কথায় আমি দূর্বল হয়ে যাচ্ছি। আমি ওর কাছে হারতে চাইনা।নিজের কাছে হারি বার বার তবুও ওর কাছে নয়।
দুপুরে ও যে খাতায় গনিত কষেছিল আমি সে খাতার ঘ্রান নিচ্ছি।এখনো সেই আতর এর ঘ্রান তবে তা স্পষ্ট নয়।ইকবাল এর মতন ধীরে ধীরে ঘ্রান ও দূরে সরে যাচ্ছে..
খাতা টা কাছে নিয়ে বিছানায় শুলাম।
কিছুক্ষন এর মাঝেই কলিংবেল এর শব্দ।আমি দরজা খুলতেই দেখি ইকবাল আর আসমা।আসমা লাল শাড়ি পরা আর ইকবাল পিছনে।কি মলীন মুখ..
আসমার হাতে কাগজ।আমায় দিয়ে বললো এটায় সিগনেচার করে দেও।
আমি বললাম কি এটা।
আসমা হেসে বললো এটা তালাক এর দলিল।
ইকবাল চুপ হয়ে দাড়িয়ে আছে।কিছু বলছেনা।
আর আসমা হাসছে..কি ভয়ানক সে হাসি...
হাসির শব্দে আমার ঘুম ভেঙে যায়। বাইরে তাকিয়ে দেখি বিকাল হয়ে গেছে।
আমি ঘুমিয়ে পরেছিলাম।
আমার মন কিছুতেই স্থীর হচ্ছেনা।কাল কি এভাবেই আসমা হাসবে!
আমি কিছুতেই তা মানতে পারবোনা..
মা ও দেখছি ঘুমাচ্ছে।আর আমি মাকে না বলেই বাসার পোষাক পরে রওনা দিলাম ইকবাল এর বাড়িতে..
বার বার ভয় হচ্ছে গিয়ে হয়তো দেখবো আসমাকে বউ সাজে।
বার বার সেই স্বপ্নের কথা মনে পরছে।
বাস থেকে নামলাম রাত ৮টায়। চারদিকে অন্ধকার।ভয় করছে খুব তার ভিতরে মনের ভিতর কিছুক্ষন যাবত ই কিছু শেষ হবার আভাস পাচ্ছি।
দূরে একজন কে দেখলাম লাইট নিয়ে আসতে।
কাছে আসতেই দেখলাম ইকবাল এর বাবা।
আমি বাবার পায়ে পরে কেঁদে দিলাম।
বাবা ও কাঁদছে।
আমায় তুলে বললো মা,সংসার খুব কঠিন বেপার এ নিয়ে খেলিস না।ইকবাল, তুই যাবার পর থেকে কারো সাথে কথা বলেনা।আমার ইচ্ছে ছিল ওকে শিক্ষিত বানাবো কিন্তু এই ধাক্কা ও নিতে পারবেনা।
আমি: বাবা এর পর আর এমন কিছু হবেনা।
দুজন মিলে বাড়িতে গেলাম।মা-ইতি সবাই আমায় দেখে খুশি। কিন্তু ইকবাল কে দেখছিনা..
আমি: ইতি তোমার ভাইয়া কই?
ইতি:রুমে আছে।তুমি যাও
আমি রুমের সামনে গিয়ে দেখি দরজা দেয়া।
নক করলাম।কোন সাড়া নেই।এখনো কি ৩০মিনিট পর দরজা খুলবে নাকি!!
আবার নক করলাম।
ওপাশ থেকে বলছে: আমি পরে খাব তোমরা খেয়ে নেও।
উমহ! ওনাকে নাকি খেতে ডাকি..
আমি আবারো ধাক্কা দিলাম দরজায়।
ও খুলে আমায় দেখে তাকিয়ে আছে অবাক হয়ে।
মনে হচ্ছে মাথায় বাজ পরেছে...
আমি: দেখি সরেন সামনে থেকে।আমি রুমে যাব।
ইকবাল: আপনি?
আমি: হুম গল্পের শেষ টা শুনতে এসেছি।
ইকবাল: তারপর আবার চলে যাবেন..?
বেচারার চোখ লাল হয়ে আছে..
আমি: হুম যাব। না হলে আসমাকে বিয়ে করবেন কি করে?
বিছানায় দেখি আমার গামছা পরে আছে।
আমি: গামছা এখানে কেন?
ইকবাল: চুলের আতর এর ঘ্রান নিচ্ছিলাম।গামছায় লেগে আছে।
আমি ওর কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলছি,আতর টা কি খুব পছন্দ হয়েছে?
ইকবাল: হুম।
আমি: আমার কাছে আছে।।গায়ে দিবেন?
ইকবাল : দিন।
আমি ওকে জড়িয়ে ধরে বললাম এই যে আতর দিয়ে দিচ্ছি।এখন থেকে যখন লাগবে তখন ই চাইবেন।
ইকবাল ও আমায় শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলছে,আল্লাহ এ আতর শুধু আমার জন্যই সৃষ্টি করেছেন।
আমি: আমার খুব ক্ষুধা লাগছে চলুন খেয়ে আসি।দীর্ঘ চার মাসের ক্ষুধার্ত আমি।
ইকবাল: চলুন একসাথে খাই।
বাসার সবাই মিলে রাতের খাবার খেলাম।
রুমে গিয়ে শুয়ে পরলাম।ইকবাল আসছেনা।
মাকে কল দিয়ে জানিয়ে দিলাম যে আমার পক্ষে এর বিপরীত কিছুই করা সম্ভব নয়।
অপেক্ষা করতে করতে শুয়ে পরলাম।মনে হয় রাতেও মসজিদ এ গিয়ে ঘুমাবে।এই খেজুর রা এতো বেরসিক কেমনে হয়!
বিরক্তিকর...
নভেম্বর এর শেষ দিক।গ্রামে প্রচুর ঠান্ডা পরে এই সময়।বিছানায় শুয়ে ঠান্ডায় জমে যাচ্ছি।
এমন সময় টের পেলাম...ইকবাল এর আসার।
ওর আসার শব্দ পেয়ে আমি ঘুমানোর ভান ধরলাম..
ও এসে আমার পাশে খাট এর সাথে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে।
আর আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
বিরক্তি লাগছে..এভাবে তাকিয়ে থাকলে আমার চোখ কখন যেন খুলে যায়।
ইকবাল ওর হাত টা আমার গালে দিয়ে বলছে,গল্পের শেষ টা না শুনেই ঘুম?
আমি: উফ! হাত খুব ঠান্ডা।
ও হাত টা সরিয়ে নিল ভয়ে।
আমি ওর বুকে মাথা দিয়ে বললাম পুরো বিছানাটাই ঠান্ডা...
ও হেসে আমায় আরো শক্ত করে ধরলো..
আমি: আচ্ছা ছাড়ুন আমায়।
ইকবাল: কেন?
আমি: আমি কবুল পড়ে বিয়ে করিনি।পরমহিলাকে ছুঁতে নেই।
ইকবাল: পরমহিলা কি?
আমি: কেন পরপুরুষ এর স্ত্রী লিঙ্গ।
ইকবাল: হা হা হা।জানেন আমি বিয়ে পড়াতে জানি।
আমি: তাই?
ইকবাল: হুম।আসুন আমার বুকে আসুন।আমি বিয়ের দোয়া পড়ছি..
আমি ওর বুকে মাথা রাখলাম।
ও দোয়া পড়া শেষ করে বলছে বলুন বউ কবুল..
আমি: কবুল...কবুল..কবুল..
এক একবার কবুল এর সাথে সাথে ওর নিকটে আসা প্রবল হলো আর কমে যাচ্ছে শীতের মাত্রা।
সব বিয়ে শুরুতেই মনের বৈধতা দিয়ে হয়না।কিছু কিছু বিয়ে করার পর সম্পর্ক প্রবল শক্ত হয়ে যায়। বিয়ের এমন ই এক গুন আছে...যা খুব সহজে অবৈধতাকে বৈধ এর রূপ দিতে পারে...
*সমাপ্ত* 😒
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ