রহস্যময় মন্দির
পর্ব ১
লেখকঃ মঞ্জুরুল করিম
কলেজ জিবনের শুরু থেকে ফাহিমের পরিচয় অর্ণব এর সাথে। "অর্ণব " ছেলেটা অনেক মেধাবী,, শান্ত আর উদাসীন। লেখাপড়া করে ঠিকই কিন্তু সে কখনো প্রাণ খুলে হাসে না। কেনো হাসেনা সে কথাও কাউকে বলে না। কলেজে তার একমাত্র কাছের বন্ধু হচ্ছে ফাহিম।আর কারো সাথে তাকে বেশ মিশতে দেখা যায়না। ফাহিম আর অর্ণব হচ্ছে রুমমেট। একই কলেজে পড়ে একই হোস্টেলের একই রুমে থাকে তার পরেও ফাহিম,,, অর্ণবের উদাসীনতার কারণ জানে না।
ফাহিম "অর্ণবের" উদাসীনতার ব্যাপারে জানতে অনেক চেষ্টা করেছিল কিন্তু কিছুই জানতে পারেনি। কয়েকদিন আগে অর্ণবের বাড়ি থেকে ফোন আসে অর্ণবের নাকি কাকা মারা গেছেন। তাই তাকে তাড়াতাড়ি বাড়ি যেতে হয়। কলেজ থেকে ৫ দিনের ছুটি নিয়ে অর্ণব চলে যায় তার দেশের বাড়ি। ফাহিমেরও অনেক মন খারাপ হয় তবে তা অর্ণবের কাকার মৃত্যুর জন্য নয় সে,,, একা থাকবে কিভাবে সেই জন্য মন খারাপ হয়,,,,,,
"অর্ণব " চলে যাবার পর,,, ফাহিম হঠাৎ একদিন রুম পরিষ্কার করতে গিয়ে অর্ণবের বিছানার নিচে একটা অদ্ভুত ডায়েরি পেলো।
ডায়েরিটার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত শুধু মৃত্যুর কাহিনী লিখা। শেষের কয়েকটা পাতায় নতুন একটা সুইসাইড নোট লিখা।যেই লোকগুলার মৃত্যু কাহিনী লিখা এরা সবাই অর্ণবের পরিবারের সদস্য। আর শেষের সুইসাইড নোটটা অর্ণবের নিজের হাতের লিখা।
ফাহিম অর্ণবের রেখে যাওয়া ডায়েরিটা পড়তে শুরু করে।(ডায়েরিতে অর্ণবের যেভাবে লিখা ছিল)
"""মৃত্যুঃ
আমাদের পরিবার অন্যান্য পরিবার গুলো থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। আর আমার পিতামহের বাবা ছিলেন পরিবারের সব থেকে রহস্যময় ব্যক্তি। তিনি ছিলেন ইংরেজ আমলের লোক। সেই কয়েক বছর আগে তিনি ইংরেজদের সাহায্য নিয়ে একটি রাজকীয় মন্দির তৈরি করেছিলেন। তার আমলে মন্দিরের কার্যক্রম চলতো ভালো ভাবেই কিন্তু তার মৃত্যুর পর সেই মন্দিরটা এখনো পর্যন্ত বন্ধ আছে।
কোন এক তান্ত্রিক ভবিষ্যৎ বাণী দিয়েছিলেন,,,,, " যে এই মন্দির খুলতে যাবে তার নাকি সাথে সাথেই মৃত্যু হবে।" তাই এর পর থেকে এই মন্দির আর কেউ খুলেনি। কিন্তু আমার পিতামহ ছিলেন অনেক সাহসী ও অকুতোভয় লোক।দশ গ্রামে তার মত সাহসী কেউই ছিলনা।সেই তিনিই একদিন সাহস করে মন্দিরের দরজা খুলতে গিয়েছিলেন। কিন্তু শত চেষ্টা করেও মন্দিরের দরজা খুলতে পারেন নি। রাতে তার সাথে অদ্ভুত অদ্ভুত কান্ড ঘটতে থাকে। তার রুমের ঝাড়বাতির আলো জ্বলে নিভে। রুমে তার প্রচণ্ড চিৎকার শুনা যায়। কিন্তু ভিতর থেকে দরজা লাগানো থাকায়, কেউ রুমে ডুকতে পারেনি। পরে দরজা ভেঙে যখন ভিতরে ডুকা হয় তখন মেঝেতে তার লাশ পড়ে আছে।
এর পর থেকে এই মন্দির কেউ খুলতে যায়নি। অনেক দিন হয়ে গেলো,,,, সবাই আমার পিতার পিতামহের মৃত্যুর কথা সবাই ভুলে গেছে প্রায়। সেই মন্দিরটা আমার দাদু বিক্রি করে দিতে চাইলেন কিন্তু এই ভূতুড়ে মন্দির কেউ কিনতে রাজি হয়না। কি আর করার তাই দাদু ঠিক করলেন এই মন্দির এর যত্তসব ভৌতিকতা তিনি দূর করবেন। তাই তিনিও মন্দিরের দরজা খুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।
শহর থেকে বড় বড় কারিগর আনা হলো মন্দিরের প্রধান ফটক ভাঙার জন্য। বিকেলে কারিগররা বাড়িতে এলেন,,, পরেরদিন সকাইলেই ফটক ভাঙার কাজ শুরু করবে। কিন্তু রাতেই ঘটলো বিপত্তি,,,, কারিগরদের প্রধান "গউস মিয়ার "লাশ পাওয়া গেলো গভীর রাতে সেই মন্দিরের সামনে,,,, কে?? কেন?? কিভাবে?? তাকে খুন করলো এর কোন সঠিক কারণ জানা যায়নি। শুধু গউস মিয়ার গাড়ে দুটো গাঢ় ফুঁটো দেখা গেলো।
এলাকার সকলে বলতে শুরু করলো এসব কিছুর জন্য এই মন্দিরই দায়ী।বাকি সব কারিগররা ভয় পেয়ে সকালেই শহরে চলে যায়।কিন্তু আমার পিতামহ নাছোড়বান্দা তিনি মন্দিরের দরজা খুলবেনই। তাই পরের দিন তিনি নিজেই প্রধাণ ফটক খুলতে লেগে গেলেন কিন্তু তিনিও খুলতে ব্যর্থ হলেন। রাতে তার সাথেও ঘটতে থাকলো অদ্ভুত সব ঘটনা। তিনি নাকি চোখ বুজলেই শুধু ভয়ানক স্বপ্ন দেখেন। রাতে তার ঘুম হয়নি। সকালে হঠাৎ তার মুখ দিয়ে রক্ত বমি বের হতে শুরু করে কিছুক্ষণ পর তার মুখ দিয়ে সাদা ফেঁনা বের হতে শুরু করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তার মৃত্যু ঘটে।
এর পর থেকে আর কেউ এই মন্দির খুলতে সাহস পায়নি।তবে আমার কাকা মাঝে মাঝে এই মন্দিরটি এখনও খুলতে চান।"""
এতটুকু পড়ে ফাহিম কিছুই বুঝতে পারেনা। শুধু এটাই বুঝতে পারে যে অর্ণবের কাকা হয়তো মন্দিরটি খুলতে চাইছিলেন যার জন্য তিনিও মারা গেলেন। এই কারণেই হয়তো অর্ণব সবসময় উদাসীন থাকে।
ফাহিম চিন্তায় পড়ে যায়,,, সত্যিই কি মন্দিরটা ভূতুড়ে নাকি এর মধ্যেও কোন রহস্য লুকিয়ে আছে???? আর যদি মন্দিরের মধ্যে কোন রহস্য লুকিয়ে তাকে তবে তা তাকে অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে। তার প্রিয় বন্ধুকে তো আর এভাবে উদাস থাকতে দেয়া যায়না???
রাতেই,, ফাহিম,,, অর্ণবকে ফোন করে জানায় যে,,ফাহিম সহ তাদের আরোও ৬/৭ জন বন্ধু মিলে অর্ণবদের গ্রামে বেড়াতে যাবে। তবে কেনো যাবে?? সেটা অর্ণবকে জানায়নি।
ফাহিম এবার সকল বন্ধুদের জানিয়ে দেয় যে,, সে নতুন রহস্যের খোঁজ পেয়েছে। তবে এবারের রহস্যটা যতটা ভয়ানক তার চেয়ে বেশি ভৌতিক। ভৌতিক??? বলতেই সকলেই হেসে উঠলো,,, কারণ তারা কেউই ভূতে বিশ্বাসী না। কলেজ থেকে ছুটিও নিয়ে নিলো কয়েকদিনের।
পরের দিন সকালেই সবাই রওয়ানা দিলো অর্নবদের গ্রামের উদ্দেশ্যে। অর্ণব আগে থেকেই স্টেশনে ছিলো তাদের এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য। সবাই যখন স্টেশনে নামলো,,, তখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে। চারিদিকে অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। স্টেশন থেকে গ্রামে যেতে আরো ৩ কি.মি. পথ যেতে হবে।
অন্ধকারের মধ্যে সবাই জিপগাড়ি করে অর্ণবের বাড়ির দিকে যাচ্ছে। প্রতিমধ্যেই এক বৃদ্ধার সাথে দেখা হয় তাদের। বৃদ্ধাটি রাস্তার মাঝখানেই শুয়ে আছে। গাড়ির হর্ণ বাজছে তবুও সে উঠছে না। ফাহিম গাড়ি থেকে নেমে বৃদ্ধাকে সরিয়ে দেয়। কিন্তু বৃদ্ধা তখনও খিলখিলিয়ে হাসছে আর বলছে তোমরা কেউ ফিরে যেতে পারবি না,,, কেউনা। অর্ণব বলে দেয় এটা হচ্ছে গ্রামের "রহিম পাগলা"। এর কথায় কিছু যায় আসেনা। কিন্তু ততক্ষণে দীপু ভয় পেয়ে গেছে,,,,,, বৃদ্ধ রহিম পাগল কি সত্যিই বলছে??? ওরা কেউ ফিরে যেতে পারবে না,,, ,,,,,,,,,
(চলবে)
রহস্যময় মন্দির
পর্ব -২
লেখকঃমঞ্জুরুল করিম
পাগল রহিমের কথায় কারো কিছুই যায় আসে না। তবে দীপু ভয় পাচ্ছে কেনো??
এই কথা বলেই "সুফিয়ান "হেসে উঠলো,,,,, তার সাথে তাল মিলিয়ে বাকি সবাই হাসতে লাগলো। কিন্তু,,,, দীপু তখনও ভয়ার্ত। কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই "অর্ণবদের" বাড়িতে পৌঁছে যায়। ইশান,,তানভির,,ফাহিম,, সহ সবাই গাড়ি থেকে নেমে আসে।বাকিদের সবাইকে অর্ণব বাড়ির ভিতরে নিয়ে গেলো। শুধু ফাহিম,,তানভির,,ইশান বাহিরে থাকলো।
কারণ,,, ফাহিম জানে যে,,তারা এসেছে শুনে হয়তো কেউ তাদের ক্ষতি করতে পারে যেমনটা হয়েছিল কারিঘরদের সাথে। তিন জন মিলে দূর থেকে মন্দিরটি পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো। তখনো মন্দিরের ভিতরে আলো জ্বলছে। এত রাতে মন্দিরের ভিতরে আলো জ্বলার কোন কারণ খুঁজে পায়না কেউ।
কিছুক্ষণের মধ্যে বাকি সবাই ফ্রেশ হয়ে বাহিরে বেরিয়ে আসলো। এরপর সবাই মিলে মন্দিরের কাছে যেতে চাইলে গ্রামের,,, সেলিম শেখ তাদের কাউকে মন্দিরের পাশে যেতে দেয়না। সে বলতে লাগলো,,,,
"রাতে মন্দিরের পাশে কেউ যাইও না বাজান,,,,বিপদ হতে পারে। আর তোমরা বাচ্চা মানুষ এত রাতে মন্দিরেরর আশেপাশে গেলে তোমাদের সাথে যেকোন ভয়ংকর কিছু ঘটতে পারে।""
"সেলিম শেখের "কথায় সবাই ভয় পেলেও ফাহিম ভয় পায়নি,,, বরং তার কাছে রহিম শেখকে কেমন জানি রহস্যময় মনে হয়। সে রাতে আর মন্দিরে যাওয়া হয়নি।সবাই অর্ণবদের বাড়ি চলে আসে।ছোট একটা রুমে সবাই থাকবে। রিদয়কে বলা হয় পাশের রুমে থাকতে কিন্তু সে জন্মের ভীতু অন্যরুমে থাকতে পারবে না একা।
তাছাড়া সবাই একসাথে থাকাই ভালো কখন কি হয় বলা যায় না। পরের দিন খুব সকালেই ঘুম ভাঙে সবার। অর্ণব এসে সবাইকে নাস্তা দিয়ে যায় আর নতুন একটা মৃত্যু সংবাদ নিয়ে আসে,,,,,,
আজ ভোরে নাকি মন্দিরের সামনে পাগলা রহিমের লাশ পাওয়া গিয়েছে। তাকে খুন করা হয়েছে নাকি সে আত্মহত্যা করেছে তার কিছুই বুঝা যাচ্ছেনা।সবাই ভয় পেয়ে গেলো,,,,, গ্রামে আসতে না আসতেই মৃত্যু শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু,,,,পাগলকে কেউ কেনইবা মারবে???
যাই হোক,,,,সবাই সকালে খেয়ে মন্দিরসহ পুরো গ্রামটা ঘুরতে বের হলো।পুরো গ্রাম ঘুরে তেমন কোন রহস্যময় কিছুই দেখা গেলোনা। শুধু এই মন্দিরটাই রহস্যময়। গ্রামে এসে দীপু কয়েকটা বন্ধু বানিয়ে নিলো,,,, জাবেদ,, অভি,,কেফায়েত আর শাকিল হচ্ছে তার গ্রামের নতুন বানানো বন্ধু।দীপুর বন্ধু বানানোর মূল কারণ হচ্ছে এদের কাছ থেকে গ্রামের আর মন্দিরের তথ্যগুলো ভালোভাবে পাওয়া যাবে। তাছাড়া ছেলে গুলোও ভালো।
দীপু অভি আর জাবেদের কাছ থেকে জানতে পারে যে রহিম মিয়া আগে পাগল ছিলনা। অনেক শিক্ষিত ছিল লোকটা।ভূত-প্রেতে একেবারেই বিশ্বাসী ছিলোনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নাকি পড়তো লোকটা।অনেক মেধাবী ছিলেন। গ্রামে যখন মন্দির নিয়ে গেঞ্জাম আর আজগুবি সব কাহিনীর সৃষ্টি হতো তখন তিনিই নাকি এর বিরোধিতা করতেন আর সবাইকে বুঝাতে চাইতেন যে,,,,এগুলা কুসংস্কার। কিন্তু তার কথার কেউই দাম দিতোনা। বরং তাকে নিয়ে অনেকেই হাসি ঠাট্টা করতো।প্রতিদিন রাতে তার সাথে ভয়ানক রকমের কান্ড ঘটতে থাকে। তাকে নানা রকমের ভয় দেখানো হয়।তার সাথে নাকি প্রতিদিন রাতেই ভয়ানক কান্ড ঘটতো। তিনি তার ঘরেই ঘুমাতেন কিন্তু সকাল হলে নিজেকে মন্দিরের সামনে অথবা বাড়ির উঠানে আবিষ্কার করতেন। এসব কিছুর পরেও তিনি ভূত বা ভৌতিকতায় বিশ্বাস করেননি। কিন্তু,,, কয়েকদিন পর তার বাবা'র লাশ পাওয়া যায় মন্দিরের পাশে,,,,, বাবার মৃত্যু তিনি সহ্য করতে পারেননি,,, সেই থেকে এলাকার মেধাবী রহিম উদ্দিন রহিম পাগলা হিসেবে পরিচিত।
ইশান কিছুটা অন্যরকম চিন্তা করতে থাকে,,, এলাকার সকলেই ভালো আছে শুধু যারা মন্দির নিয়ে চর্চা করতে যায় তাদেরই কেনো সমস্যা হয়?? এবার সুফিয়ান ও তার কথায় সমর্থন করে বলে যে,,,যদি মন্দিরটা সত্যিই ভৌতিক। হতো তবে মন্দিরের ভূত এলাকার সবাইকে জ্বালাতো,,,, কিন্তু যারা মন্দির খুলতে চায় বা মন্দিরের ভৌতিকতায় বিশ্বাস করে না ভূত কেনো শুধু শুধু তাদের পেছনেই লেগে থাকে???
সুফিয়ানের এই কথা শুনতেই দীপু ভয় পেয়ে যায়। তারাও তো মন্দিরের রহস্য উন্মোচন করতে এসেছে,,,, তার মানে তাদের সাথেও ভূতুড়ে কিছু হবে।তানভিরের মুখে মুচকি হাসি দেখা যায় কিন্তু দীপুর কথাও ফেলে দেবার মতো নয়,,,, তাদের সাথেও ভূতুড়ে কিছু হতে পারে।
ফাহিম,,, সবাইকে বলে দেয়, যেহেতু,,,ভূত শুধু মন্দির নিয়ে চর্চা করা মানুষ গুলোকে টার্গেট করে সেহেতু সবাইকে নিজেদের পরিচয় গোপন রাখতে হবে যেনো কেউই জানতে না পারে যে,,তারা মন্দিরটি নিয়ে চর্চা করতে এসেছে। এমনকি অর্ণবকেও বলা যাবে না যে সবাই তার গ্রামে এসেছে মন্দির রহস্য নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে।
রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে লুকিয়ে লুকিয়ে ফাহিম,, ইশান,,তানভির আর সুফিয়ান চলে যায় মন্দিরটি ভালোভাবে দেখতে। তেমন কিছুই দেখতে পায়নি। তারা মন্দিরের প্রধান ফটক অনেক বড়।। পুরণু দিনের শক্ত লোহা দিয়ে দরজাটি তৈরী। ভিতরে ডোকার কোন রাস্তা বা উপায় কিছুই নেই। এবার ৪ জন মিলে মন্দিরের পিছনে যায়। পিছনে ঘন জংগল। কিছুই দেখা যাচ্ছে না। ঘাস আরর লতাপাতায় ভর্তি। সেই কারণেই হয়তো কেউ আর মন্দিরের পিছন দিকে আসে না।
কিন্তু,, এবার তানভির আবিষ্কার করে যে পিছন থেকে একটা ছোটখাটো রাস্তা সোজা মন্দিরের ভিতর দিকে চলে গেছে। রাস্তাটি দেখেই বুঝা যাচ্ছে যে,,,,এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন কেউ না কেউ চলাচল করে আর সে মন্দিরের ভিতরে যাতায়াত করে।
তানভির,,পিছনে ফিরে সবাইকে রাস্তাটি দেখাতে যাবে এমন সময় পিছনে থাকিয়ে দেখে যে সুফিয়ান মাটিতে পড়ে আছে তার মাথা দিয়ে প্রচন্ড রক্ত বের হচ্ছে,,,,,
(চলবে)
রহস্যময় মন্দির
পর্ব-৩
মঞ্জুরুল করিম
সুফিয়ানের মাথা দিয়ে প্রচন্ড রক্ত বের হচ্ছে,,, রক্ত বের হওয়া কিছুতেই বন্ধ হচ্ছেনা। তানভির,,, ইশান আর ফাহিম তাকে ধরাধরি করে বাড়িতে নিয়ে আসলো। তখন দীপু জেগে রয়েছিল,,সে তার ফার্স্ট-এইড বক্সটা বের করে সুফিয়ানের মাথায় ব্যান্ডেজ করে দেয়। এতে তার রক্ত পড়া কিছুটা বন্ধ হয়।
কেউই বুঝতে পারে না তাদের সাথে কি হয়েছিল। বাকি সবাই ঘুমুচ্ছে।সুফিয়ানের কিছুতেই ঘুম আসছে না। মাথায় চিনচিন ব্যথা অনুভব হচ্ছে। এত রাতে কেনই বা মন্দিরে সে যেতে চাইলো আর কেনইবা এই ভূতুড়ে গ্রামে এ এলো এসব সে চিন্তা করতেছে। হঠাৎ,,, বিদ্যুৎ চলে গেলো। অত্যাধিক গরমে সবাই জেগে উঠে।
ঘরের ভিতরে প্রচণ্ড গরম থাকায়,,,, ফাহিম বাহিরে বেরিয়ে আসে। বাড়ির উঠোন থেকে মন্দিরটি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।সেদিন রাতের মত আজও মন্দিরে আলো জ্বলছে। যেই মন্দিরে কেউ ঢুকে না,,, কারোর যাওয়া আসা নেই সেই মন্দিরে কেনো আলো জ্বলবে?? এই প্রশ্ন ফাহিমকে ভাবায়। অনেক চিন্তা করে সে কিন্তু,, কোন কারণ খুঁজে পায়না।
সে রাতটা তারা জেগে জেগে কাটিয়ে দেয়। সকালে সবাই দেরি করেই ঘুম থেকে উঠে। অর্ণব অনেকক্ষণ থেকে বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে।ইশান ঘুম ঘুম চোখে দরজা খুলে দেখতে পায় যে,, বাহিরে অর্ণব দাঁড়িয়ে আছে।। সবাইকে ঘুমুতে দেখে অর্ণব প্রশ্ন করে,,,"কিরে কাল রাতে ঘুমাসনি তোরা কেউ???" ইশান জবাব দেয়,,,, রাতে লোডশেডিং এর কারণে কেউ ঘুমায়নি,,, তাই সবাই এখনো ঘুমুচ্ছে। অর্ণব কিছুটা অবাক হয়, ,, পুরো বাড়িতেই সারা রাত বিদ্যুৎ ছিলো। এই রুমে থাকবে না কেনো???
ইশান কিছুক্ষণ চুপ থাকে সে কোন কথাই বলে না। কিছুক্ষণের মধ্যে বাকি সবাই ঘুম থেকে জেগে উঠে। সকালে খেয়ে সবাইকে নিয়ে এবার ফাহিম আবার সেই মন্দিরটি দেখতে চাইলো কিন্তু এবার তাকে পিংকু বাধা দিলো। এখন যদি তারা মন্দিরের আসেপাশে ঘুরে তাহলে তাদেরকে যেকোন কেউ সন্দেহ করতে পারে। তাদেরকে যা করতে হবে রাতেই করতে হবে।
সারা দিন কেউ মন্দিরের ধারে কাছেও যায়নি। সন্ধ্যা নামার পর সবাই হাল্কা নাস্তা করে মন্দিরের দিকে চলে যায়। তানভির,,, সবাইকে মন্দিরের ভিতরে যাবার গোপন রাস্তাটি দেখিয়ে দেয়। তবে গতকাল যেখানে সুফিয়ানের মাথা ফেটেছিল সেখানে অনেক রক্ত পড়ে থাকার কথা কিন্তু আজ সেখানে রক্তের কোন চিহ্ন নেই। কে যেনো অনেক যত্ন করে জায়গাটা পরিষ্কার করে রেখেছে।কে পরিষ্কার করলো এইসব???এর কোন জবাব নেই তাদের কাছে।
অনেকক্ষণ ঘাটাঘাটির পরে মন্দিরের পিছনে তেমন কিছুই দেখা গেলোনা শুধু এই রাস্তাটি ছাড়া।
ফাহিম মনেমনে অপেক্ষা করছে কখন মন্দিরের ভিতরে আলো জ্বলে উঠবে আর তারা বাহির থেকে ভিতরে কি হচ্ছে দেখবে,,,,কিন্তু আজ রাতে মন্দিরের ভিতরে কোন আলো জ্বলে উঠলোনা। আজ রাতে সবার সাথে দীপুও এসেছিল কিন্তু দীপুকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। সকলের সাথেই ছিলো দীপু,,, পিছন থেকেই সে গায়েব,,,,,,,
ফাহিমের এবার ভয় হয়,,,,, এই বোকা ছেলেটাকে বাড়িতেই রেখে আসা উচিত ছিল তাদের। যদি দীপুর কিছু হয়ে যায় তাহলে তার বাবা-মাকে কি জবাব দিবে তারা???
কিছুক্ষণের মধ্যে মন্দিরের ভিতরে আলো জ্বলে উঠে,,,, অদ্ভুত অদ্ভুত সব শব্দ শুনা যাচ্ছে। অনেক গুলা হাসির শব্দ আসছে মন্দির থেকে। বিকট আর বিশ্রী শব্দে কারা যেনো মন্দিরের ভিতরে হাসছে। সবাই এই হাসির শব্দ শুনে ভয় পায়।
এত গুলা হাসির শব্দের মধ্যে মন্দিরে একটা করুণ কান্নার শব্দ শুনা যাচ্ছে। কার কান্না হতে পারে এটা??? সবাই কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়ে,,, পিংকুর মনে নতুন প্রশ্ন জাগে,,,, এটা দীপুর কান্না নাতো???
ফাহিম,,,তার কথায় একমত এই পিচ্ছি দীপুটাই এই রকম কান্না করতে পারে,,, সর্বোচ্চ শক্তি দিয়েও কান্না করলে তার কান্না স্পষ্ট শুনা যাবেনা কখনো,,,,
তবে দীপু কিভাবে মন্দিরের ভিতরে গেলো?? তার কোন ক্ষতি হবেনা তো??? সবাই দীপুর জন্য চিন্তিত। এমন সময় মন্দিরের আলো নিভে গেলো,,, সাথে সাথে সে চিৎকার করে হাসির আওয়াজ আর কান্নার আওয়াজও গায়েব হয়ে গেলো। তানভিরসহ সকলে মন্দিরের পিছনে বসে ভাবতেছে কি করা যায়?? কিন্তু,, তারা কি করবে বা কি করা উচিত এর কিছুই বুঝতে পারেনা।
এদিকে মসজিদের মাইক থেকে ফজরের আজান স্পষ্ট শুনা যাচ্ছে। তার মানে কিছুক্ষণের মধ্যে ভোর হয়ে যাবে,,, দীপুর জন্য সবার মন খারাপ কিন্তু কিছুই করার নেই।সবাই বাড়িতে চলে আসে। বাড়িতে এসে সবাই একটা ঘুম দিবে ভাবছিলো কিন্তু কারোরই ঘুম আসছে না। দীপুর জন্য সবার মন খারাপ।
ফাহিম,, সবাইকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে দীপুর কিছুই হবে না,,,, আজ রাতেই আমরা মন্দিরের ভিতরে ঢুকবো,,,,, ফাহিমের কথায় সবাই একমত। সকলে হাল্কা ঘুমুবার চেষ্টা করতেছে তবে কিছুক্ষণের মধ্যে,,, অর্ণব এসে দরজায় ধাক্কা দিতে লাগলো । সে সবার জন্য নাস্তা নিয়ে হাজির।
অর্ণব সবার জন্যই নাস্তা গুণে নিয়ে আসে। তবে আজ একজনের ভাগের নাস্তা কম। আর দীপুও আজ নেই। কিন্তু,, অর্ণব কিভাবে জানলো আজকে দীপুর নাস্তা লাগবেনা?? দীপু হারিয়ে গিয়েছে???
ফাহিম,,,অর্ণবকে এই প্রশ্ন করতে চাইলেও ততক্ষণে অর্ণব সেখান থেকে চলে গেছে। এবার ফাহিমের সন্দেহ হতে থাকে "অর্ণবের" উপর। ছেলেটা গ্রামে এসে কেমন জানি বদলে গেছে। কলেজে তাকে উদাসীন দেখা যেত সব সময় কিন্তু গ্রামে এসে সে এত হাসিখুশি থাকে কেমনে??
তানভির,, ফাহিমের পাশে এসে দাঁড়ায়। ফাহিম তার সন্দেহের কথা তানভিরকে খুলে বলে। তবে তানভির এমন ভাব দেখায় যেনো ফাহিমের সন্দেহের কোন ভিত্তি নেই। কারণ,,, ফাহিমই তাদেরকে গ্রামে নিয়ে এসেছে "অর্ণব"এর সমস্যার সমাধান করতে,,,, আর এখন তার "অর্ণব"কেই সন্দেহ হচ্ছে।
কিন্তু,,,ফাহিমের কথাও ফেলে দেবার নয়। অর্ণব কে সবসময় ফলো করার জন্য রিদয় আর হাসনাতকে কাজে লাগিয়ে দেয় ফাহিম।
পুরোটা দিন এই সব আজগুবি চিন্তায় তাদের দিন কাঠে। সন্ধ্যা হতেই সবাই মন্দিরে যাবার জন্য অস্থির হয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পরেই সবাই মন্দিরের দিকে পা বাড়ায়। মন্দিরের পিছনটা আজ বেশ নিরব। কোথাও কোন আওয়াজ শুনা যাচ্ছেনা। কান্না,, চিৎকার এসব কিছুই নেই।
তবে ঝোপঝাড়ের পিছনে কান্নার আওয়াজ শুনা যাচ্ছে। সবাই ঝোপের দিকে নজর দেয়। সেখানে দীপুর দেহ পড়ে আছে। তবে কান্নার শব্দ তার না। এখানে অন্য কেউ আছে যে কাঁদছে। দীপু মৃত না জীবিত তা ঠিক বুঝা যাচ্ছেনা,,,,,
(চলবে)
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ