"অমনোযোগী মেয়েটা"
পর্ব: ০১
লেখা: মিশু মনি
.
ঘরের সাজসজ্জা দেখেই মিশুর মেজাজ বিগড়ে গেল।বাসর ঘর কেউ এভাবে সাজায়?
কণ্ঠস্বর উচুতে তুলে চিৎকার দিয়ে ডাকলো,মর্ম....
মর্ম ছুটে এসে বলল,কি হয়েছে মিশু?
- বাসর ঘর কেউ এভাবে সাজায়? এটা কোনো সাজানোর সিস্টেম হলো? পুরাই আফ্রিকার জংগল বানিয়ে রেখেছে।দেলোয়ার হোসাইন কে ডাকো।
মর্ম জিহ্বায় কামড় দিয়ে বলল,সর্বনাশ! তুমি আমার বাপের নাম ধরে ডাকছ কেন?
মিশু চেঁচিয়ে বলল,দেলোয়ার হোসাইনকে ডাকো।
মর্মকে কষ্ট করে ডাকতে হলো না।মিশুর চেঁচামেচিতে মর্ম'র বাবা দেলোয়ার হোসাইন নিজেই এসে হাজির।পিছনে বাড়ির সবাই।সকলের চোখেই কৌতুহল!
মিশু দেলোয়ার হোসাইনের সামনে এসে বলল,বাবা এটা কি?
বাবা অবাক হয়ে বললেন, কি মা কি হইছে?
- এই ঘর কে সাজিয়েছে? বাসর ঘর কেউ এভাবে সাজায়? ফুলশয্যা মানেই হচ্ছে ফুলের উপরে শয্যা।এটা তো আফ্রিকার জংগল সাজিয়ে রেখেছে।ফুল কিনার টাকা ছিল না? টাকা না থাকলে ধুতুরার ফুল,কুমড়া ফুল,জবা ফুল দিয়ে সাজাতে পারতেন।
দেলোয়ার হোসাইন পুত্রবধূর কথা শুনে অবাক হয়ে গেছেন।
মর্ম হতভম্বের মত তাকিয়ে আছে।
মিশু বলল,বাবা আপনি মৈত্রীকে টাকা দিন।উনি এখন ফুল কিনে আনবেন।
বলেই শাশুড়ির সামনে এসে বলল,মা এসব কি? বাসায় এতগুলা মানুষ থাকতে এই রকম বিশ্রী ভাবে কেউ ঘর সাজায়? কে সাজিয়েছে বলুন তো?
মর্ম'র বড় ভাই মৈত্রী সামনে এগিয়ে এসে বলল,কি হইছে মিশু বোনটার? এত রেগে গেছ কেন বোন?
মিশু জবাব দিলো, পাচ বছরের রিলেশন মর্ম'র সাথে।ওকে কমপক্ষে পাচ হাজার বার বলেছি ফুলশয্যার ঘরে যেন ফুলের ছড়াছড়ি থাকে।এটা কি কচুরিপানার পুকুর বানিয়ে রেখেছে।
মিশুর শাশুড়ি মা মিশুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, আমার লক্ষী মামনি। রাগ করে না।আমি ব্যবস্থা করছি।মৈত্রীকে এখুনি বাজারে পাঠাচ্ছি।
- হ্যা মা।আমি হাফ এন আওয়ার টাইম দিচ্ছি।এর মধ্যেই বিছানায় এক কোটি গোলাপের পাপড়ি দেখতে চাই।
সবাই একে অপরের দিকে মুখ চাওয়াচাওয়ি করে মিশুকে বলল,আচ্ছা।আমি ডেকোরেশনে ফোন দিয়ে জানাচ্ছি।ফুল চলে আসবে।
.
সবাই ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলে মর্ম এসে মিশুর সামনে দাড়াল।ভয়ংকর রাগ ওর চোখে।মর্ম রেগে বলল,আমার আব্বু আম্মুকে এভাবে অপমান করতে তোর লজ্জা হলোনা?
মিশু পাল্টা জবাব দিলো, আমি এতবার বলার পর ও আমাকে এই কচুরিপানার পুকুরে নিয়ে আসতে তোর লজ্জা করল না?
- মিশু, মুখে লাগাম দে।
- মর্ম,মুখের দরজা দে।বেশি কথা বললে খারাপ হবে বলে দিচ্ছি।
- কি করবি তুই? রাবিশ
মিশু রেগে বলল,মিশুকে তুই ভালো করেই চিনিস।ধানি লংকা, তেজ কেমন জানিস ই তো।
-আজ বিয়ের রাত বলে কিছু বললাম না।আমার বাপের নাম ধরে ডাকছিস।অন্যদিন হলে থাপ্রায়া নিজের বাপের নাম ভুলায়া দিতাম।ডাইনি মাইয়া।
মিশু এগিয়ে এসে মর্ম'র শার্টের কলার টেনে ধরে বলল,কাজীর বাচ্চা কাজী। তোর বাপের নাম আমি একশবার নিবো। আমার শ্বশুর আর আমি বুঝবো।who told you?
মিশুর মুখের কাছে গন্ধ পেয়ে মর্ম'র আর কিছু বুঝতে বাকি রইলো না।মিশু মদ খেয়েছে,তাই এইসব খারাপ কথা বলতে পারছে।
.
মর্ম'র বাবা দেলোয়ার হোসাইন ও মিশুর বাবা ছোটবেলার বন্ধু।অনেক আগে থেকেই দুই পরিবারের সম্পর্ক খুব ভালো। মিশুকে সকলেই অনেক ভালোবাসে।তাই মর্ম'র সাথে বিয়ে দিয়ে সম্পর্ক টাকে আরো দৃঢ় করে ফেললেন।
বাসায় পৌছে মর্ম'র বড় ভাই মৈত্রী ও তার স্ত্রী মিলে মদ্যপান করছিল।মিশু ও তাদের সাথে যোগ দেয়।ফলস্বরুপ বাসর ঘরের সাজসজ্জা পছন্দ না হওয়ায় মিশু উলটা পাল্টা কথা শুরু করে দিয়েছে।
.
মর্ম বুঝতে পেরেছে মিশুকে আর কিছু বলে লাভ নেই।এখন পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে।
ও বলল,মিশু তুমি শান্ত হও।কিছুক্ষনের মধ্যেই ফুল এসে যাবে।
- চুপ কর কাজির বাচ্চা কাজি।এতবার বলার পর ও ঘর টাই সাজাতে পারলি না আর তুই করবি সংসার? হারামির পুত,বিড়াল মর্ম কোথাকার।
- আমাকে গালি দিচ্ছ দাও,আমার বাবাকে গালি দিচ্ছ কেন?
- ইচ্ছে হইছে দিচ্ছি।আরও দিবো। তুই ছাগশিশু,হা হা হা।
- আমি ছাগশিশু?
- হ্যা,আমি শিশু আর তুই ছাগশিশু। দ্যাখ তো ফুল কতদূর? যা বাইরে যা,গিয়ে দ্যাখ।
- আমার মুখ ছোট করে দিয়েছ।আর বাইরে যেতে পারবো না।
- কই তোমার মুখ ছোট হইছে? তোমার মুখ তো হাতির মত বড় আছে।এই দেখো তোমার শুড়।
বলেই মিশু মর্ম'র নাক টেনে ধরল।মর্ম'র রাগ হচ্ছে না,বরং হাসি পাচ্ছে।মিশুর উপর চাইলেও সে রাগ করতে পারেনা। আর রাগ করলেও সেটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়না।
মর্ম মিশুকে রুমে রেখে বাইরে আসল।বসার ঘরে বাবা মা বসে আছেন।
মর্ম এসে বলল,সরি আব্বু।মিশুর বিহ্যাভের জন্য আমি সরি।
- আমি কিছু মনে করিনি।কিন্তু ও এরকম আচরণ করল কেন সেটাই ভাবছি?
- আব্বু,ভাইয়া আর ভাবি ওকে মদ খাইয়ে দিয়েছে।
- হা হা হা।ভালোই করেছে।এইবার তুই ও মদ খা।নয় পেগ খাবি,তুই মাতালের বাসর জমবে ভালো।
বলেই দেলোয়ার হোসাইন শব্দ করে হাসছেন।
মর্ম লজ্জা পেলেও হাসল।বাবা মায়ের সাথে ওরা সবাই খুব ফ্রি।
মর্ম বলল,চলো আব্বু।আজ একসাথে drink করি।সিগারেট ও চলুক।
- নাহ,আজ মিশু তাহলে আমাকে আছাড় মারবে।তুই বউকে সময় দে গিয়ে।
- আচ্ছা আব্বু।ফুল কতদূর?
- ফুল চলে আসবে।মৈত্রী আনতে গেছে।মিশুর নাকি এক কোটি গোলাপের পাপড়ি লাগবে? হা হা হা।
- ভাইয়ার দোস সব।কি দরকার ছিল ওকে মদ খাওয়ানোর?
- ভালোই করেছে।বললাম না তুই ও খা গিয়ে।জমবে ভালো। আর হ্যা,আমাকে ও দুই বোতল ওয়াইন দিয়ে যাস।
মর্ম হেসে বলল,আচ্ছা।
মিশুর কণ্ঠস্বর শোনা গেল,ওই কাজির বাচ্চা কাজি।কই গেলা?
দেলোয়ার হোসাইন হেসে বললেন, ঘরে যা।মিশু চিল্লাচ্ছে।
বলেই হেসে উঠলেন।
.
মর্ম ঘরে আসতেই মিশু দুহাতে ওর গলা টিপে ধরে বলল,কুত্তা,মেনি বিড়াল কোথাকার।এতক্ষণ লাগে ফুল নিয়ে আসতে? হাফ এন আওয়ার হতে আর মাত্র ছয় মিনিট বাকি।এর মধ্যে গোলাপ চলে না আসলে কাজি পরিবারে আজ কুরুক্ষেত্র শুরু হয়ে যাবে বলে দিলাম।
মর্ম মনে মনে ভাবল,আজ বাসার সবাই মিলে মাতলামি করবো। বেশ হবে।
মিশু বলল,মেরে ফেলি তোকে?
- আজ রাতেই?
- হ্যা।ফুল কই? কখন আসবে? আমি গোলাপের উপ্রে ঘুমাবো তো।
মর্ম মিশুর হাত ছাড়িয়ে দিয়ে বলল,ছয় মিনিট অপেক্ষা করো মিশু বিড়াল। আমি বাবাকে ওয়াইন দিয়ে আসছি।
- আচ্ছা,আর পাচ মিনিট কিন্তু।
.
মর্ম ছুটে বেড়িয়ে গেল।
মিশু চেয়ারে বসে টেবিলের উপর পা তুলে দিয়ে পা নাচাতে লাগলো।
.
অমনোযোগী মেয়েটা
পর্ব: ০২
লেখা: মিশু মনি
.
ফুল চলে এসেছে।মিশু চুপচাপ বসে খুব মনোযোগের সাথে মোমবাতি সাজাচ্ছে।মোমের আলোয় আলোকিত মেয়েটির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে মর্ম।
সারা ঘরে গোলাপের ছড়াছড়ি। ফুলের মিষ্টি গন্ধে মন ভরে যাচ্ছে।
.
মর্ম মিশুর দিকে তাকিয়ে বলল,মিশু আমাদের একটা ফুটফুটে মেয়ে হবে।তার নাম রাখবো মিষ্টি।
মিশু চেঁচিয়ে বলল,হুহ একদম না।আমাদের মেয়ের নাম রাখবো মারমা।মর্ম'র মেয়ে মারমা।
- কিহ! মারমা তো আদিবাসী দের নাম।
- আরে তাতে কি? মর্ম'র মেয়ে মারমা।আমি তোমায় বলবো এই মার্মার বাপ শুনছো?
- হুহ একদম না।আমি তোমাকে বলবো এই মিষ্টির আম্মু শুনছো?
- প্লিজ মর্ম, মিষ্টি বাদ দাও।মারমা নাম রাখবো। মিষ্টি আমার খুব প্রিয়।তুমি যতবার মিষ্টির আম্মু বলবা ততবার ই মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করবে।
- তাই বলে মারমা?
- হ্যা।আর নয়ত সামারাইজ।সারমর্মের মেয়ে সামারাইজ।
মর্ম রেগে বলল,তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে মিশু।
- ওই,কি বললা?
- হ্যা,মাথা খারাপ হয়ে গেছে।নেশা হয়ে গেছে।এখন ঘুমাও তো।
মিশু বলল,আচ্ছা আসো।তুমি বসো,আমি তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুমাই।
.
মর্ম'র কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে মিশু।মর্ম ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
মিশু বলল,মর্ম একটা গান শুনাবা?
- হুম,শুনাবো..
- শুনাও...
মর্ম মিশুর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে গান গেয়ে উঠল,
তোমায় হৃদ মাঝারে রাখিবো ছেড়ে দেবো না...
ওরে ছেড়ে দিলে সোনার গৌড় আর পাবো না...
গান শুনে মিশুর চোখে পানি এসে যাচ্ছে।মনে হচ্ছে আজ সে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মেয়ে।ছলছল চোখে মর্ম'র দিকে তাকিয়ে রইলো মিশু।
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ