#দ্যা_ডেভিল_ফ্রেন্ড
পর্ব -০১
লেখকঃ মনজুরুল করিম
ছেলেটির নাম "দীপু"। জীবন টা আর ভালো লাগেনা তার। সবসময় মাথায় অদ্ভুত অদ্ভুত চিন্তা থাকে। সকলের অবহেলায় বড় হয়েছে বলেই হয়তো মুক্ত চিন্তার অধিকার তার নেই। লেখাপড়া,, কলেজ,,ক্যাম্পাস আর ব্যর্থতা এই নিয়েই ছিলো তার জীবন। খুব বেশি কারো ভালোবাসা চাইতো না কখনো এজন্যই হয়তো কেউ ভালোও বাসতো না। দেখতে বোকার মত চেহারা থাকায় কোন বন্ধুই ছিলোনা।"দীপু" মাঝে মাঝে ভাবে একলা আর কতদিন??
অন্তত একটা গার্লফ্রেন্ড থাকা চাই তার। কিন্তু কপাল! যে ছেলের ছেলে বন্ধুই নাই তার আবার গার্লফ্রেন্ড? ডিপার্টমেন্ট এর সব গুলা ছেলের গফ আছে আমার নাই কেনো?? আচ্ছা গফ বাদ দিলাম একটা বন্ধু নাই কেনো? এসব প্রশ্নের কোন জবাব পায়না.... "দীপু"।
তবে তার কেউ থাকুক আর না থাকুক একখান ক্রাশ ছিল তার। নাম "অহনা"। কেনো জানি খুব ভালো লাগতো তাকে।"দীপু"র ইচ্ছা হয় পুরো কলেজ জীবন তার দিকে তাকিয়ে কাঠিয়ে দেবার....
কিন্তু, অহনার হয়তো "দীপু"কে কেনো জানি তেমন পছন্দ হয়না। মাঝেমধ্যে কথা হয় তবে সেটা লেখাপড়া,,ক্লাস অথবা অন্য কোন প্রয়োজনে..... কখনো বিনা প্রয়োজনে "অহনা" দীপুর সাথে কথা বলতো না।
তাছাড়া ক্লাসে একখান হাবা ছাত্রের মত সব সময় বসে থাকতো। দেখে মনে হতো যেনো.... স্মার্টনেস বলে কোনকিছু "দীপুর" জীবনে নেই।যে কারণে ছাত্র-শিক্ষক সবাই তাকে অবহেলা করতো....
নিজের উপরে বেশ রাগ "দীপুর"। মাঝেমধ্যে নিজেই নিজের মৃত্যু চায়! কেমন জানি চারপাশের সবকিছু তার বিদঘুটে লাগে। নিজের এমন জীবন থেকে বারবার মুক্তি চায় সে... অনেকবার সুইসাইডের প্ল্যান করে সুইসাইড করতে পারেনি। চোখের সামনে শুধু "অহনা"র প্রতিচ্ছবি আসে বলেই হয়তো... সুইসাইড করতে গিয়েও সে ব্যর্থ।
কলেজের প্রথম বছর শেষ। বেশ অবহেলায় কেটেছে এই বছরটা। নাহ! এভাবে আর থাকা যায় না। এর একটা পরিবর্তন করতে হবে.... মাঝেমধ্যে "দীপু" একটা বন্ধুর কথা চিন্তা করে... কাল্পনিক বন্ধু.. অদ্ভুত বন্ধু... যে বন্ধু তাকে ছাড়া আর কিছুই বুঝবে না। যে,, বন্ধু তার সব সুখ-দুঃখে সাথে থাকবে... কখনো অন্যদের মতো তাকে দুঃখ দিবে না। প্রতিদিনই "দীপু" এমন একজন বন্ধু পাবার জন্য প্রার্থনা করে.........
নিজের কল্পনায় এমন একজন বন্ধুর সৃষ্টি করে নিয়েছে সে... বিষয়টা সম্পূর্ণ কাল্পনিক।মাঝেমধ্যে কলেজ ক্যাম্পাসে,,যেখানে সেখানে "দীপু"কে একাকী কথা বলতে দেখা যায়। রাস্তায় হাঠতে হলেও সে একা একা কথা বলে বলে হাঠে... এলাকার লোকজন তার এই অবস্থা দেখে তাকে.... " পাগল" বলে সম্বোধন করে... এতে "দীপু"র কিছুই যায় আসেনা। কারণ,, সে জানেই যে সে তার বন্ধুর সাথে কথা বলে... অনেক বড় বন্ধু,,, অনেক কাছের বন্ধু!!
এভাবে কিছুদিন যাবার পর এলাকার সবাই জানে "দীপু" পাগল হয়ে গেছে। রাস্তাঘাটে যেই দেখে সেই বলে,," দেখো পাগল "দীপু"টা যাচ্ছে। তবে পাশের লোকের কথায় এখন আগের মত "দীপুর" কিছু যায় আসে না। হয়তো এখন আর সে এই কানাঘুষো গুলো শুনতেও পায়না।
বেশ কিছুদিন কাটলো এভাবে। অপরিচিত কেউ ছাড়া যে কেউ বলে দিতে পারে যে "দীপু" পাগল।"দীপু" এখন অন্য কারোর কথা শুনে না। শুধু তার কাল্পনিক বন্ধুর কথা শুনে.... খাওয়াদাওয়া,, লেখাপড়া,, ঘুম,, খেলাধুলা এসব কিছুই এখন সে তার বন্ধুর অনুমতি নিয়েই করে।
মাঝেমধ্যে "দীপু"কে দাবা খেলতে দেখা যায়। একা একা খেলে সে। কেউ জিজ্ঞেস করলেই অনায়াসে বলে দেয় আমি আমার বন্ধুর সাথে খেলছি....
কখনো কখনো ক্লাশ পরিক্ষা গুলোতে "দীপু" পেপার আর কলম একপাশে রেখে ধ্যানধরে বসে থাকতো। স্যার প্রশ্ন করলে জবাব,, দিতো ,, "আমার বন্ধু লিখতেছে"। পরিক্ষা শেষে সাদা পৃষ্টাই জমা দিয়ে আসতো। কেউ কিছু বললেই জবাব দিত,,,, " আজকে আমি কিছুই লিখিনাই। সব আমার বন্ধু লিখেছে।"
"দীপু"র এই পাগলামিটা ইদানীং খুব বেড়ে গেছে। কলেজের কেউই তার সাথে কথা বলতো না.... আর এখন কথা বলতে চাইলেও সে নিজেই এড়িয়ে চলে। স্যাররাও এখন তার মানসিক অবস্থা দেখে তার প্রতি সদয়। তবে সে এখন নিজে থেকেই সবাইকে এড়িয়ে চলে। আর কেউ তার কাছে আসতে চাইলেই জবাব দেয়... " আমার কেউ লাগবে না, আমার বন্ধু আছে।"
কিছুদিন যাবার পর আগের শান্তশিষ্ট "দীপু" এখন বেশ অস্বাভাবিক হয়ে উঠে। আগের মত বোকা চেহারায় তাকে দেখা যায়না। অনেক পরিবর্তন আসে তার মধ্যে। ক্লাশে একলা বসে থাকে.. পাশের সিটে আগে কেউ বসতো না... এখন কেউ বসতে চাইলেও সে বসতে দেয়না। পাশের সিটটা সবসময় খালিই থাকে.... কখনো কখনো পাশের সিটের দিকে চেয়ে চেয়ে একা একা কথা বলে..... কেউ জানতে চাইলেই জবাব দেয়,, " এখানে আমার বন্ধু বসে আছে"।
কিছুদিন ধরে দীপুর ভাবনার অনেকটা পরিবর্তন ঘটেছে... সে এখন ভাবতে শুরু করেছে যে,,, তার বন্ধু যা ইচ্ছা করতে পারে!!!! প্রথমে সবাই বিষয়টা কাকতালীয় ভাবতো.... পরে সবাই তা বিশ্বাস করে নেয়.... ক্লাশ পরিক্ষায় "দীপু" সাদা পেপার জমা দিত ঠিকই কিন্তু তার রেজাল্ট সবসময়ই ভালো আসতো.. যে ছেলে পরিক্ষায় সাদা পেপার জমা দেয় তার এত্ত ভালো রেজাল্ট হয় কেমনে??
কয়েকদিন আগে "দীপুদের" বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে অনেকের মধ্যে দীপুর এক প্রতিবন্ধী বন্ধু অংশগ্রহণ করে। সেখানে তার ভালো পারফরমেন্স করার কোন সম্ভাবনা ছিলনা... কিন্তু যেই মাত্র "দীপু" বাজি ধরলো যে তার সেই সহপাঠী ভালো পারফরমেন্স করবে তখন সবাইকে অবাক করে দিয়ে সেই প্রতিবন্ধী সহপাঠীই প্রথম হয়েছিল।
কয়েকদিন যাবত "দীপুর" আচরণে বেশ পরিবর্তন হচ্ছে। সে যা চায় তাই হচ্ছে। কিভাবে হচ্ছে কেউই জানেনা????
(চলবে)
#দ্যা_ডেভিল_ফ্রেন্ড
পর্ব-০২
লেখকঃ মনজুরুল করিম
"দীপুর" অবস্থা দিন দিন পরিবর্তন হচ্ছে।তার আচার আচরণেরও বেশ পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। ইদানিং তার একা একা কথা বলার প্রবণতাও খুব বেড়েছে।তবে "দীপু" এখন আর কারো সাথে কথাও বলে না।
সে তার নিজের একটা আলাদা রাজ্য গড়ে তুলেছে। সেখানে তার নিজের আদেশ নিষেধ চলে। অন্য কারোর কথা শোনার প্রয়াস নেই। তার যা ইচ্ছা তাই করে। কারো ইচ্ছা অনিচ্ছার তোয়াক্কা করে না সে।
"দীপু" তার বন্ধুর জন্য একটা সুন্দর নাম খুঁজতে থাকে। তার এই অদৃশ্য বন্ধুর জন্য একটা সুন্দর নাম প্রয়োজন। কিন্তু কি নাম দেয়া যায়?? দীপু মাঝে মাঝে চিন্তা করে আমার নাম তো "দীপু" আর ওর নামও "দীপু" ই হবে।
কাল্পনিক বন্ধুর সাথে কথা বলে "দীপু" তার বন্ধুর নাম দেয় "দীপু"। কিন্তু তার বন্ধুর এই নাম পছন্দ হয়নি। কাল্পনিক বন্ধুটি দীপুর দেওয়া নামের আগে "ডেভিল" যোগ করে তার পুরো নাম দেয় " ডেভিল দীপু"।
"ডেভিল"!!! শব্দটা শুনেই "দীপু" এই প্রথম বারের মত তার কাল্পনিক বন্ধুকে ভয় পায়। এই শব্দটা শুনেই তার মধ্যে অন্যররকম অনুভূতির প্রকাশ পায়। আচ্ছা তার এই বন্ধু হঠাৎ ডেভিল হবার চিন্তা করে কেনো???
কিছুদিন হলো দীপুর সেই কাল্পনিক বন্ধুর সাথে তার তেমন কথা হয়না। কয়েকদিন ধরে তার এই বন্ধু কাজের বিনিময় চাইতে শুরু করেছে । যদি "ডেভিল দীপু" কোন কাজ করে দেয় তবে "দীপুকে" কোন কিছু হারাতে হয়।
কয়েকদিন আগে যখন সেই প্রতিবন্ধী বন্ধুটা ভালো পারফর্ম করেছিল তখন "দীপু" কে তার প্রিয় "ময়না"পাখিটা হারাতে হয়েছিল। কারণ তার কাল্পনিক বন্ধু রক্তের স্বাদ নিতে চেয়েছিল........ সবসময়ই তাকে কিছু পাবার জন্য কিছু হারাতে হতো....
এবার "দীপু" তার সব ইচ্ছা পূরণ করার আবদার করেছিল তার কাল্পনিক বন্ধুর কাছে। তবে তার কাল্পনিক বন্ধু এর জন্য বিনিময় চেয়ে বসে .... যদি "দীপু" যা ইচ্ছা তা করতে চায় তবে তাকে তার সব থেকে প্রিয় মানুষটিকে হারাতে হবে .. এমনটাই বলেছিল....
সবথেকে প্রিয় মানুষ!!! শুনেই অবাক হয় "দীপু"। তার সব থেকে প্রিয় বলতেই তো "অহনা "। তার মানে যদি সে তার সব ইচ্ছা পূরণ করতে চায় তবে তাকে "অহনা"কে হারাতে হবে। সেই ভয়েই "দীপু" তার কাল্পনিক বন্ধু "ডেভিল দীপুর" সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয়।
কিছুদিন ধরে "দীপুকে" রাস্তায় একা একা দেখা যায় না। তার সেই কাল্পনিক বন্ধুর সাথে কথা বলাও হয়না। দীপু শুধু এটাই জানে যে সে যেকোন কিছু করতে পারবে কিন্তু তার "অহনা"কে হারাতে পারবে না।যার জন্য এখন আর তেমন কথা বলা হয়না বন্ধুর সাথে।
এলাকার সবাই বেশ অবাক! হঠাৎ করে "দীপু"র এই পরিবর্তন কেনো??? কেউ কোন উত্তর খুঁজে পায়না । রাস্তায় এখন আর "দীপুকে" একা একা কথা বলতে দেখা যায় না। তার এখন দুএকটা বন্ধুও জুটে গেছে।
এখন তার সব থেকে কাছের বন্ধু হচ্ছে "রবিন "। যখন "দীপু"র কাছে অদৃশ্য শক্তি অর্থাৎ তার কাল্পনিক বন্ধু ছিল তখনই "দীপু" অনেক বন্ধু খুঁজে পেয়েছিল। তাদের মধ্যে রবিন একজন। এখন "দীপু" আগের মত স্বাভাবিক ও হাবার মতোন হয়ে গেছে.... সব বন্ধুই তাকে ছেড়ে গেলেও রবিন তাকে ছেড়ে যায় নি।
"দীপু" আর "রবিন" এখন বেশ ভালো বন্ধু । একজন কে ছাড়া অন্যজনের চলেনা। "দীপু"ও এখন আর তার ডেভিল বন্ধুর সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয়। তবে তার ডেভিল বন্ধুটি এখনো তার আশে পাশে থাকে এবং যেকোন বিপদে তাকে সাহায্য করে....খুব বেশি বিপদে পড়লে "দীপু"কে তার কাছ থেকে সাহায্য নেবার আহবান করে সে.....
তবে "রবিন"কে খুব কাছে পাওয়ায় "দীপু" এখন তার ডেভিল বন্ধুকে সময় দেয়না। তাছাড়া তেমন কথাও বলেনা তার সাথে। "দীপু" স্বাভাবিক হয়ে যাবার জন্য তার অবস্থা এখন আগের মতোন হয়ে গেছে। আগের মতই সবাই তাকে এখন অবহেলা করে,,, কেউ তাকে তেমন গূরুত্ব দেয়না এখন।
"দীপু" এখন প্রচুর মানসিক চাপে আছে। আগের মত জীবনটা এখন কেমন জানি অদ্ভুত লাগে। মাঝে মধ্যে মনে হয় সে তার ডেভিল বন্ধুর সাথে কথা না বলে ভুল করতেছে... কিন্তু তবুও রবিন কাছে থাকায় ডেভিল দীপুর সাথে কথা বলার ইচ্ছা হয়না তার....
কিছুদিন ধরে "দীপু"র ছোটবোন খুব অসুস্থ! অনেক ডাক্তার দেখানো হচ্ছে তবুও সে সুস্থ হচ্ছেনা। একেবারে মৃতপ্রায় অবস্থা তার। খুব ভালো চিকিৎসা না করতে তাকে বাঁচানো হয়ত যাবেনা। এর জন্য অনেক ভালো ভালো ডাক্তার দেখানো হচ্ছে তবুও সে সুস্থ হচ্ছেনা ।
"দীপু" হঠাৎ করে কি করবে কিছুই ভেবে পাচ্ছেনা। তার কি করা উচিত সেটাও ভেবে পাচ্ছেনা। তবে এখন কেমন জানি তার "ডেভিল দীপু"র কথা মনে হচ্ছে। ডেভিলকে স্মরণ করতেই সে দীপুর সামনে এসেই উপস্থিত হয়ে যায়।
তবে তার সেই আগের শর্ত কিছু পেতে হলে কিছু হারাতে হবে..!! "ডেভিলের" এই শর্তে "দীপু" নারাজ। যদি ডেভিল তার বন্ধুই হয় তবে শর্ত চায় কেনো?
তবে এবার হাবা "দীপু" খুব চালাক মনে করতে শুরু করেছে। সে তার ডেভিল বন্ধুকে নিজ থেকে আরেকটা শর্ত দিয়ে বসে। সে ডেভিলকে বলে দেয় যে,,,
"তার বোন পুরোপুরি সুস্থ হবে কিন্তু এর বিনিময়ে ডেভিল "অহনা"র আত্মা চাইবে না।" দীপুর শর্তে ডেভিল নিজ থেকেই রাজি হয়ে যায়।
তবে এবারো সে জিবনের বিনিময়ে জীবন চেয়ে বসে। যদি "দীপু" তার বোনকে সুস্থ হিসেবে পেতে চায় তবে তাকে তার বন্ধু
"রবিন" কে হারাতে হবে।
ডেভিলের এমন শর্তে "দীপু" চমকে উঠে। এখন তো "রবিন"ই তার সবথেকে কাছের বন্ধু। তবে কি বোন কে সুস্থ করতে হলে বন্ধুকে হারাতে হবে........!
(চলবে)
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ