একটি আন স্মার্ট মেয়ের গল্প
লেখা: মিশু মনি
.
এক মনে ডায়েরি লিখে চলেছে অনু:-
আজ আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন।তাই দীর্ঘ সময় পর ডায়েরি লিখতে বসেছি।ডায়েরির পাতা ভিজে যাচ্ছে চোখের জ্বলে।এটা কষ্টের কান্না নয়,সুখের কান্না।আমি পৃথীবির অন্যতম একটা সুখী মেয়ে।কিন্তু চোখের জল বাধা মানছে না।
অশ্রুসিক্ত চোখে ঝাপসা হয়ে উঠছে আমার অতীত।
তখন আমি ক্লাস টেনে উঠেছি মাত্র।রোজ রোজ হেটে স্কুলে যেতাম আর যাবার পথে একটা বাড়ির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকতাম। ওই বাড়ির জানালায় আমার প্রিয় মানুষ টার মুখ মাঝে মাঝে উকি দিত।এক পলক দেখার মাঝেই অপরিসীম ভালো লাগা কাজ করত।
অনেকদিন ধরেই ভাল লাগত প্রতিক নামের এই ছেলেটিকে।কিন্তু কখনো কারও নিকট প্রকাশ করিনি।
প্রতিক ভাইয়া আমার দিকে তাকালেই লজ্জায় লাল হয়ে উঠতাম। প্রতিনিয়ত ভেতর টা ভালবাসা নামক এই যন্ত্রণার দহনে দগ্ধ হচ্ছিল।
একদিন লাজ লজ্জা ভুলে ভাইয়াকে বলেই ফেললাম।
- ভাইয়া আপনাকে একটা কথা বলতে চাই,
- হ্যা বলো,
- আমি আপনাকে ভালবাসি।
প্রতিক ভাইয়া অনেক্ষন অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল আমার দিকে।আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে ছিলাম।
ভাইয়া হেসেই উড়িয়ে দিচ্ছিল কথা টা। তখন খুব রেগে বলেছিলাম, আমি কি ফাজলামি করছি মনে হচ্ছে? আমি সত্যিই আপনাকে অনেক পছন্দ করি।
অনেক চেষ্টা করলাম নিজের অনুভুতি টা বোঝাতে।কিন্তু আমার আবেগমিশ্রিত শত কথাও ভাইয়ার মনে কোনো প্রভাব ফেলতে পারলো না।
আমার পাগলামি ক্রমশ ই বেড়ে যাচ্ছিল।আমার এমন পাগলামি দেখে ভাইয়া বলেছিল,আমাকে কিছুদিন সময় দাও।ভেবে চিন্তে জানাবো।
.
আমি আর কোনো কাজেই মনোযোগ দিতে পারিনি।কিছুদিন অজানা এক ঘোরের মধ্যে ছিলাম। সারাক্ষণ প্রতিক ভাইয়ার কথা ভাবতাম। বিশ্বাস ছিল ভাইয়া নিশ্চয় ই আমার ভালবাসা গ্রহণ করবে।নামাজের পর নফল নামাজ পড়ে ভাইয়ার জন্য দুয়া করতাম যেন সে সবসময় সুস্থ থাকে।
অবশেষে ভাইয়ার নির্দিষ্ট সময় পর তার মুখোমুখি হলাম।
বুকের ভিতর টা দুরুদুরু কাঁপছিল।ভয়ে ভয়ে তার সামনে গিয়েছিলাম অনেক প্রত্যাশা নিয়ে।
কিন্তু ভাইয়া বলেছিল,"তুমি অনেক ভালো একটা মেয়ে।শুনেছি অনেক মেধাবী ও।কিন্তু অনু,তুমি অনেক আন স্মার্ট আর গাইয়া টাইপের।আমার সাথে তোমার খাপ খায় না।
ভাইয়ার মুখে এই ধরনের বাক্য শুনতে হবে এটা কখনো ভাবিনি।বুক ফেটে কান্না আসছিল।তবুও কান্না চেপে বলেছিলাম, আমি আপনাকে অনেক ভালবাসি। আপনি যেভাবে বলবেন আমি সেভাবেই আমাকে গড়ে তুলবো।
আমার এই কথায় ভাইয়া হেসে বলেছিল,তুমি ভদ্র মেয়ে।ভালো ছাত্রী, এইসব প্রেম টেমের চিন্তা বাদ দিয়ে পড়াশুনা করো মন দিয়ে।
প্রচুর কষ্ট পেয়েছিলাম সেদিন। তবুও ভাইয়াকে আপন করে নেওয়ার অনেক চেষ্টাই করেছিলাম।কিন্তু সবসময় ই সে আমাকে বিভিন্নভাবে অপমান করতো। তারপর ও আমার পাগলামি থামেনি।
একদিন ভাইয়া রেগে বলেছিল,তুমি একটা বেহায়া মেয়ে।বলছি তো ভালবাসি না।তবুও পিছে পড়ে আছো।আসলে তুমি মানসিক ভারসাম্যহীন।
ভাইয়ার এই কথাগুলি সেবার আত্মসম্মানে লেগেছিল খুব।আর কখনো তার সামনে যাইনি।
গভীর মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা চালিয়ে গেলাম।এসএসসি তে আমাদের থানায় সেরা রেজাল্ট করলাম আমি।
এই সফলতা অনেক অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল।শুধু পড়াশুনাই করতাম।আড়াল করে নিয়েছিলাম নিজেকে। সারাক্ষণ পড়াশুনায় ডুবে থাকতাম।
মাঝে মাঝে আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে দেখতাম আর ভাবতাম, আমি এত আন স্মার্ট যে কারও ভালবাসা পাওয়ার যোগ্যতা আমার নেই।আমি দেখতে শ্যামলা,আমার জামা কাপড় আর সবার মত শর্ট কাট নয়।আমি স্টাইল করে চলতে পারিনা।কিন্তু এইগুলাই কি ভালবাসা পাওয়ার জন্য যথেষ্ট? আমি তাকে পাওয়ার জন্য এতকিছু করলাম, আমার ভালবাসার কোনো মুল্য নেই! আজকাল গেট আপ টাই সব।
এসব ভেবে ভেবে খুব কাঁদতাম।কারও সামনে খুব কম যেতাম।কিন্তু পড়াশুনায় মেতে থাকতাম সারাক্ষণ।
এইচ.এস.সি তেও অনেক ভালো ফলাফল করে ফেললাম।আমার আপত্তি থাকা সত্ত্বেও পত্রিকায় আমার রেজাল্ট নিয়ে লেখা হলো।লেখাটি পড়ে পত্রিকা বুকে জড়িয়ে খুব কেঁদেছিলাম।
বাবা মা খুশি হয়ে কোচিং এ ভর্তি করিয়ে দিলেন।ক্লাস করা ছাড়া অন্য কোনোভাবেই বাইরে বের হতাম না।আমার কোনো বন্ধু ছিল না।অনেকেই বন্ধুত্ব করতে চাইত।নিজে থেকে আমার সাথে মিশত।কিন্তু আমার বরাবর ই একটা কথাই মনে হত,"তুমি মানসিক ভারসাম্যহীন " এই কথা টি মনে হলেই আর কারও সাথে মিশতে সাহস করতাম না।আমি একদিন প্রমাণ করে দিবো, আমি মানসিক সমস্যাগ্রস্ত নই।আর সেদিন বন্ধুত্ব করবো সবার সাথে।
রুম থেকে বের হতাম না।সারাক্ষণ শুধু বই আর বই।ফলস্বরুপ,প্রথম পরীক্ষাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়ে গেলাম।
ভার্সিটিতে ভর্তির পর ও সহজে কারও সাথে মিশতে পারতাম না।একাকীত্বের সাথে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম।
নিজের চেহারা,ফিটনেস,রুপচর্চা,এইসব নিয়ে কখনোই ভাবতাম না।কিন্তু ভার্সিটি তে আসা যাওয়া করতে করতে কিভাবে যেন আমার মানসিকতা,সৌন্দর্য সবকিছুই পরিবর্তন হয়ে যেতে লাগল।নিজেকে দেখে নিজেই অবাক হয়ে যেতাম।
সবকিছু মিলিয়ে ভালোই দিন যাচ্ছিল।পড়াশুনা করাটা অভ্যাসে পরিণত হওয়ার কারনে সর্বক্ষণ পড়াশুনা ই করতাম।
অনেকেই পাশে থাকার জন্য হাত বাড়িয়ে দিতো। কিন্তু আমি নিজেকে দূরে সরিয়ে নিতাম। আমার জীবনে কোনো স্পেশাল ভালবাসার প্রয়োজন নেই এখন। বাবা মায়ের ভালবাসা আছে,তাতেই আমার স্বর্গ।ছোট এই জীবন টা পড়াশুনা করেই কাটিয়ে দেয়া যায়।
.
পড়াশুনাই একমাত্র প্রেম ও সাধনা হয়ে উঠেছিল।প্রেমিক হয়ত ছেরে চলে যায়,কিন্তু আমার পড়াশুনা কখনো আমাকে ছেড়ে চলে যাবে না।সব ভালবাসা বইকেই দিয়ে দিয়েছি।
আজ আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন।আমি স্কলারশিপ নিয়ে আমেরিকায় যাচ্ছি পড়াশুনা করতে।আমি সুখী, আমি সফল,আমি আমার গর্ব।
.
ডায়েরি টা বন্ধ করে রাখল অনু।আগামীকাল এটা সাংবাদিক দের হাতে চলে যাবে।তারা অনুর সফলতার ইতিহাস জানতে চেয়েছিল।অনু এই দুই পাতা লিখে ডায়েরি রেখে দিলো। চোখের পানিতে ডায়েরির পাতা এমন ভাবে ভিজে যাচ্ছে যে আর লিখাই যাচ্ছে না।এই কাহিনী টা পত্রিকায় বের হলেই দেশের হাজারো মেয়ে জানবে অনুর সফলতার কথা।সকলেই জানবে অনু প্রতিক নামের কাউকে পাগলের মত ভালবাসত কিন্তু ছেলেটা তাকে মানসিক ভারসাম্যহীন বলে অপমান করেছিল।
ভাবতে ভাবতে অনু বাড়ির বাইরে বের হয়ে আসলো।সকলেই জিজ্ঞেস করছে অনু কবে বিদেশে যাচ্ছে,কি কি সুবিধা পাচ্ছে ইত্যাদি। হঠাত প্রতিক ভাইয়ার সামনে পড়ে গেল অনু।প্রতিক মাথা নিচু করে চলে গেল।আজ সে বাজারে একটা ইলেকট্রনিক্স এর দোকানদার।আর যে মেয়েটাকে সে মানসিক ভারসাম্যহীন বলে গালি দিয়েছিল সে মেয়েটা স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে যাচ্ছে।অনুর সামনে মাথা উচু করে চলার মত যোগ্যতা টা এখন প্রতিকের নেই।
অনু পাশ কাটিয়ে চলে গেল।আর মনে মনে বলল,বাহ্যিক সৌন্দর্য মুখ্য নয়,প্রত্যেকেরই অন্তুর্নিহিত শক্তি থাকে।মানুষ চেষ্টা করলেই নিজের সবচেয়ে বর দুর্বলতাকে বড় শক্তিতে পরিণত করতে পারে।আমি পেরেছি,আমার জীবনে আর কারও প্রয়োজন নেই।আমার সেদিনের দুর্বলতাই আজ আমার শক্তি।
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ