#গুপ্তধনের_খোঁজে
পর্ব-০৪
লেখকঃ মনজুরুল করিম
"দাদুর" হাসির কোন মানে কেউ খুঁজে পায় না। সবাই নিশ্চুপ! তবে খালেদ এখনো "হেলিম" এর উদাও হবার কথা ভাবে,,, তার সামনে থেকেই কেমন জানি উদাও হয়ে গেলো..... কেমনে কি হলো?? এর কিছুই বুঝতে পারেনা "খালেদ"।
দাদু সবাইকে আবারো লোভনীয় কোন কিছুতে হাত দিতে নিষেধ করলেন। এবার সবাই বেশ সাবধান! তবে খালেদের এখন কিছুই করার নেই। দাদু তাকেও নিজেদের সাথে রেখে দেন। তবে তাকে কোন কিছুতে হাত লাগাতে আর অতিরিক্ত লোভ না দেখাতে মানা করলেন।
সবাই ঘুমিয়ে যায় এখন। তবে বরাবরের মত "দীপু" আজও ঘুমায়নি। তার চোখ আবারো চলে যায় সেই প্রসাদের দিকে। প্রসাদের সামনে এখনো বেশ কয়েকটি ছায়ামূর্তি দেখা যাচ্ছে। কে কি করছে দূর থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছেনা। তবে এটা বুঝা যাচ্ছে যে তারা সবাই সেখানে কিছুনা কিছু খুঁজছে।
কিছুক্ষণ আগে যখন খালেদ আর হেলিম সেখানে কিছু খুজছিলো তখন দুজনের একজন গায়েব হয়েছিল কিন্তু এখন অনেকেই সেখান থেকে কিছু একটা খুঁজে নিজের প্যাকেটে পুরছে তখন কেউই গায়েব হচ্ছেনা।বিষয়টা বেশ ভাবায় "দীপুকে"। তাইলেকি "দাদু" ভুল বলেছেন?? এখান থেকে যদি কোন মণিমুক্তা কুড়িয়ে নেয়া হয় তাইলে কি সত্যিই মানুষ গায়েব হয়ে যায়?? কিন্তু এই ছায়ামূর্তি গুলোর কেউই তো গায়েব হচ্ছেনা.....
কিছুক্ষণের জন্য "দাদুকে" সন্দেহ হয় "দীপুর"। দাদু কি সত্যিই "গুপ্তধন" সম্পর্কে কিছু জানেন? নাকি এখানে তাদের এমনি এমনি নিয়ে এসেছেন?? বেশ কিছু ভাবতে পারে না "দীপু"। তার আগেই খুব বেশি ঘুম পায় তার। কোন কিছু না ভেবেই ঘুমিয়ে পড়ে সে....
খুব ভোরে কিছু অদ্ভুত আওয়াজে ঘুম ভাঙে "দীপুর"। তাবুর সামনে ছোটখাটো একটা জটলা দেখতে পায় সে। একটা মাঝবয়সী লোককে ঘিরে বসে আছে সবাই। সকলেরই চোখে মুখে বেশ উত্তেজনার ছাপ। তবে লোকটার মুখ কেমন জানি ফ্যাকাশে হয়ে আছে। মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে যে,,, তার সাথে বেশ ভয়ংকর কিছু ঘটেছে।
"তানভির" দীপুকে সব কিছু খুলে বলে,,,,
গতকাল রাতে নাকি এই লোকটা তার বন্ধুদের নিয়ে জংগলে শিকার করতে এসেছিল। দূর থেকে প্রসাদটা দেখে তারা বেশ অবাক হয়। কাছে এসেই অনেক মণিমুক্তাদি দেখে নিজেদের লোভ সামলাতে পারেনি । আশেপাশে ঘুরাঘুরি করে সন্দেহজনক কিছুই দেখতে না পেয়ে তারা তড়িঘড়ি করে মণিমুক্তা কুড়াতে থাকে।
যেই মুক্তোয় হাত দিয়েছে সেই গায়েব হয়ে গেছে। তিনিই একমাত্র যিনি কোন মুক্তোয় হাত দেননি। তাই হয়তো তিনি বেঁচে গেছেন।
কথাগুলো "তানভিরের"মুখ থেকে শুনেই দীপু চমকে উঠে। তার মানে গতরাতে যেই ছায়ামূর্তি গুলা "দীপু" দেখেছিল। কিন্তু সেতো কাউকে গায়েব হতে দেখেনি?? তাহলে এই ব্যাক্তির বন্ধুরা কিভাবে গায়েব হলো??
বেশিক্ষণ ভাবার আগেই "আভা" ডাক দেয়। সবার জন্য নাস্তা তৈরী করেছেন দাদু। সাথে করে বেশ কিছু খাবারদাবার নিয়ে এসেছিল সবাই। কিন্তু দাদু আবার বেশ সৌখিন মানুষ তিনি বিরিয়ানি ও খিচুড়ি রান্নার সরঞ্জাম নিয়ে এসেছিলেন। তাই এখন। রান্না করে বেশ মজা করেই খাচ্ছে সবাই।
তবে "খালেদ"কে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা । সকাল থেকেই তাবু থেকে গায়েব সে,,,, কোথায় গেছে কেউই জানেনা??
মাঝবয়সী লোকটাও আছে তাদের সাথে। লোকটা ভয় পেয়েছিল ঠিকই কিন্তু খাবার খাওয়ায় তার কোন সংকোচ নেই। বেশ আরামেই বিরিয়ানি সাবাড় করছে সে....
খাওয়াদাওয়া শেষে এখান থেকে তাবু তুলে নেওয়া হয়। এবার সকলে বেশ উত্তেজনা অনুভব করছে। কিছুক্ষণ পরেই তারা সেই প্রসাদের সামনে যাবে। ভাবতেই অবাক লাগে সবার! কিছুক্ষণ হাঠার পরেই রাস্তার মধ্যে অনেক রক্তের ছাপ পড়ে থাকতে দেখে সবাই। পিছন থেকে "দীপু" ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠে। কারোর লাশ ঠেনে নিয়ে যাইয়ার স্পষ্ট চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। কেউ একজন অন্যএকজন ব্যাক্তিকে টেনে নিয়ে গেছে হয়তো,,,,,
কিন্তু এই জংগলে কে কার লাশ টেনে নিয়ে যাবে কেউই বুঝতে পারেনা??ইশানের মনে সন্দেহ খুব বেশি। সে এই রক্তের চিহ্ন দেখে দেখে এর পিছন পিছন যেতে চাইলো। কিন্তু "দাদু" তাকে অযথা ঝামেলায় জড়াতে বাধা দেন। তাই ইশান আর আগায় না।
কিন্তু,, "দীপুর" আবার সন্দেহ হয় "দাদুকে" নিয়ে। দাদু কেনো ইশানকে রক্ত চিহ্নের পিছু নিতে বাধা দিবেন?? "দীপু" এর কোন উত্তর খোঁজে পায় না... হঠাৎ,, তানভিরের ডাকে "দীপুর" টনক নড়ে। পিছে ফিরতেই দেখে "খালেদ" তাদের সামনে। তার পুরো শরীরে রক্ত লেগে আসে। কিসের রক্ত কিছুতেই বোঝা যাচ্ছেনা
বেশ উত্তেজিত আর ভয়ার্ত লাগছে খালেদকে। তার কি হয়েছে কেউ জানে না।তবে এটা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে তার উপর কেউ না কেউ হামলা করেছে এটা নিশ্চিত। পুরো ঘটনা খুলে বলার আগেই "খালেদ " অজ্ঞান হয়ে যায়। কোন কথা বলতে পারেনা সে। খালেদের এমন অবস্থা দেখে আজকে আর প্রসাদে যাওয়া হয়না তাদের।
যেখানে ছিলো আবার সেখানেই তাবু গাড়া হয়।
খালেদের শারীরিক অবস্থা বেশ খারাপ। দীপু,,, ফার্স্ট এইড বক্স বের করে "খালেদের" প্রাথমিক চিকিৎসা করে নেয়। খালেদ এখন হাল্কা সুস্থ। তবে সে ভালো করে কথা বলতে পারে না।
ইশানের,,, পুরো ব্যাপারটা কেমন জানি আগোছালো লাগে। খালেদের উপরে হামলা হয়,, মাঝবয়সী লোকটার উপরেও হামলা হয়। কিন্তু তাদের কারো উপর কিছু হয়না কেনো?
এসব কিছু ভাবার আগেই,,, দীপুর চিৎকার শুনা যায়। ইশান পিছনে ফিরে থাকাতেই দেখে "দীপুর" পুরা বেহাল অবস্থা। মাথা দিয়ে প্রচুর রক্ত বের হচ্ছে,,,
(চলবে)
#গুপ্তধনের_খোঁজে
পর্ব-০৫
লেখকঃ মনজুরুল করিম
"দীপুর" এই অবস্থা কিভাবে হলো কিছুই ভেবে পায়না "ইশান "। আশেপাশে কেউ নেই। সবাই তাবু গাড়তে ব্যাস্ত ছিলো। দীপুর মাথায় আগাত কিভাবে লাগলো এর কিছুই বুঝতে পারেনা "ইশান"। ততক্ষণে "দীপু" বেহুঁশ হয়ে নিচে পড়ে আছে। ইশান আর কিছুই না ভেবে "দীপুর" কাছে গিয়ে নিজের শার্ট ছিঁড়ে মাথায় বেঁধে দেয়।
ততক্ষণে বাকি সবাইও টের পেয়েগিয়েছে যে, "দীপুর" কিছু একটা হয়েছে । কিন্তু কিভাবে কি হলো কেউই বুঝতে পারেনা। কোন কিছু বুঝার প্রয়োজন মনে না করে সবাই ধরাধরি করে "দীপুকে" তাবুর ভিতর নিয়ে গেলো। কিছুক্ষণ তার সেবা করার পর জ্ঞান ফিরলেও "দীপু"মুখ দিয়ে কোন কথা বলতে পারেনা.....
শুধু আঙুল দিয়ে "দাদুর" দিকে ইশারা করতে থাকে। কিন্তু এই ইশারার কোন মানে কেউই বুঝতে পারে না। দাদু হাল্কা নেড়েচেড়ে উনার পিছনে থাকা পানির বোতল "দীপুর" দিকে এগিয়ে দেন,,, আর এমন ভাব দেখান যেনো,, দীপু উনার দিকে ইশারা করে পানি খেতে চেয়েছে.....
"ইশানের" ব্যাপারটা অন্যরকম লাগে! "দীপু" পানি খেতে চাইবে ঠিক আছে,,,, অন্যকাউকে ইশারা করতে পারতো। কিন্তু দাদুর দিকেই কেনো ইশারা করবে?? এই প্রশ্নের কোন জবাব খোঁজার আগেই পিছন থেকে দাদু ডাক দেন,,,,,
- কি ভাবছো,, ইশান?
-কিছুনা,, দাদু।
-কিছু একটা ভাবছো এটা তো নিশ্চিত!
-হুম,,,ভাবছি,, "দীপুর" এমন অবস্থা কে করলো??
"ইশানের" মুখ থেকে এই কথা শুনে দাদুকে বেশ অস্থির দেখাচ্ছে। ইশানের এমন মনে হচ্ছে যে,, দাদুই দীপুর এই হাল করেছেন। কিন্তু দাদু এমন কেনো করবেন??কোন জবাব পায়না,, ইশান।সে,, আর কিছু সময় এ নিয়ে ভাবতে পারতো,, কিন্তু আভার ডাকে ইশানের টনক নড়ে । সন্ধ্যা হয়ে এসেছে ।
আজ সবাই একসাথে বসে গল্প হবে। তাবুর বাহিরে বসে আসে সবাই। সামনে বেশ কিছু শুকনা কাট নিয়ে আগুন ধরানো হয়েছে । এই কয়েকদিনে বেশ ঠান্ডা পড়েছে এখানে। কিন্তু জংগলের ভিতরে যেনো আরো বেশি ঠান্ডা লাগতেছে। যদিও বাহিরে সবাই বেশ জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে কিন্তু তাবুর ভিতরে "দীপু" একাই আছে,,,,
বাহিরে সবাই কি করছে এর কিছুই "দীপু" বুঝতে পারেনা। বুঝার চেষ্টাও করে না সে।হঠাৎ মাথায় প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করে তার। মাথায় হাত দিয়ে কিছুই বুঝতে না পারলেও যে তার মাথায় ব্যান্ডেজ দেয়া এটা ঠিকই অনুভব করতে পারে। কিন্তু তার মাথায় ব্যান্ডেজ এলো কিভাবে??? এর কিছুই বুঝতে পারে না "দীপু"। চিৎকার দিয়ে উঠে সে.......
"দীপুর" চিৎকার শুনে সবাই তাবুর ভিতরে চলে আসে। "দীপু " তার মাথায় ব্যান্ডেজ এর কারণ জানতে চাইলে "ইশান" হাল্কা হেসে উত্তর দিলো,,, " তোর কি শর্ট টাইম ম্যামোরি লস হইছে নাকি?? একটু আগে ঘটে যাওয়া ব্যাপার ভুলে গেলি??""
ইশানের,,, কথা শুনে "দীপু" বেশ অবাক হয়। তার আবার কি হলো যে সে নিজেই জানে না?? ইশানের হাসাহাসিতে বেশ বিরক্ত হয়ে মাথার ব্যান্ডেজ হাত দিয়ে টেনে খুলে দেয় সে,,,,,
এবার সবাই বেশ অবাক হয়!!! একটু আগে যার মাথা থেকে প্রচন্ড রক্ত ঝরছিল এখন তার মাথায় কোন আঘাতের চিহ্ন নেই। বেশ অবাক লাগছে সবার।এভাবে কিভাবে হতে পারে?? এটা কি কোন অলৌকিক ঘটনা?? কেউ কোন কিছু ভাবতে পারেনা।
সবার নিরবতা ভেঙে "দীপু" প্রশ্ন করে,,,"পেইন কিলার আছে কারো কাছে??? মাথায় ও শরীরে প্রচন্ড ব্যাথা করছে??""
কেউ কোন কথা না বললেও "আভা" একটা পেইনকিলার এগিয়ে দেয় "দীপুর" দিকে।
"দীপু" পেইন কিলারটা খেয়ে,,, তাবু থেকে বেরিয়ে যায়।
এবার সবাই আরো বেশি অবাক হয়। যে ভয়ের কারণে বিছানা থেকে উঠে বাথরুমে যেতে ভয় পায় সেই ছেলে নাকি এখন এত রাতে জংগলের ভিতর একা একা ঘুরতে বেরিয়ে যাচ্ছে,,, বিষয়টা বেশ রহস্যময় মনে হয় ইশান আর তানভিরের। আভাকে আর দাদুকে তাবুতে রেখে তারাও "দীপুর" পিছু নেয়,,,,,,
দীপু বেশি দূরে যায়না। সেই প্রাসাদের সামনে এসেই থমকে দাঁড়ায়। তার পিছনে পিছনে এসেছে ফাহিম,, তানভির ও ইশান। প্রসাদের সামনে প্রচুর মণিমুক্তা দেখে সবার চক্ষু চড়ক গাছ! এত্ত মনিমুক্তা এখানে কেমনে কি?? কিছু বুঝার আগেই সবাই এগুলো হাতে নিতে যাবে এমন সময় "দাদুর" কথা মনে পড়ে। দাদু বলেছেন যে,, যেই এগুলো তে হাত দিবে সেই গায়েব হয়ে যাবে,,,,,,
ভয়ে কেউই এগুলোতে হাত দেয় না। কিন্তু,, "দীপু" বিড়বিড় করে কি জেনো বলছে আর দুহাত সামনের দিকে এগিয়ে দিয়ে নানা ভঙিতে নাড়াচাড়া করছে,,,, বেশ কিছু সময় এমন করার পর... এবার সে মাটিতে বসে যায়। কিছুক্ষণ বসে হাতের কাছের একটা মুক্তো খুব সাবধানে নিজের হাতে তুলেনেয়।
অবিশ্বাস্য ভাবে সবাই লক্ষ্য করে যে "দীপুর" কিছুই হয়নি। কিন্তু দাদুতো বলেছিলেন যেই মুক্তোয় হাত দিবে সেই মরবে!!! সবাই কথাটি ভাবতে থাকলেও বেশিক্ষণ ভাবতে পারেনা,,,, তার আগেই তাদের সামনেই "দীপু" বেহুঁশ হয়ে পড়ে যায়।
সবাই "দীপু"কে ধরাধরি করে আবার তাবুতে নিয়ে আসে।কেউই কিছুই বুঝতে পারেনা । শুধু "দাদুর" মুখে হাল্কা হাসির ছাপ দেখা যায়। ইশানের মনে আবারো সন্দেহ হয়,,, এত সিরিয়াস মূহুর্তে দাদু হাসছেন কেনো?? এর কোন কারণ খুঁজে পায়না কেউই.....
রাতে সবাই ঘুমিয়ে যায়। প্রচণ্ড মাথা ব্যাথা থাকায় আজ "দীপুও" ঘুমিয়ে যায়। আজ আর তার মনে আবোল তাবোল চিন্তার উদয় হয়নি। "ফাহিম" বেশ অস্থির। সবাই ঘুমিয়ে গেলেও সে একা জেগে আছে,,, বন্ধুর এমন বেহাল অবস্থা দেখে তারও মন খারাপ।তাদের সাথে এসব কি হচ্ছে এর কিছুই বুঝতে পারেনা সে। আর কিছু না ভেবে সেও ঘুমিয়ে পড়ে।
পরের দিন যথারীতি খুব সকালে সবার ঘুম ভাঙে। ঘুম থেকে উটেই দাদুর রান্না করা চা'য়ে চুমুক দেয় সবাই। কিন্তু "দীপু" তখনো ঘুমাচ্ছে। ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুমিয়ে থাকার জন্য তার মুখটা দেখতে পায়না কেউই।
কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুম ভাঙে "দীপু" ঘাড় ঘুরাতেই সবাই চমকে উঠে। আজ আবার "দীপুর" মাথা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে,,,, বেশ জোরে হয়তো কেউ আঘাত করেছে তাকে,,, কিন্তু অবাক ব্যাপার হলো যে,,, দীপু বোধহয় এর কিছুই টের পায়নি নয়তো তার মাথায় যে রক্ত ঝড়ছে এটা সে অনুভব করতে পারছে না,,,,,,,,
(চলবে)
#গুপ্তধনের_খোঁজে
পর্ব-০৬ (শেষ পর্ব)
লেখকঃ মনজুরুল করিম
সবাই বেশ অবাক! "দীপুর" সাথে এসব কি হচ্ছে? কেউই বুঝতে পারেনা । সবাইকে বেশ অস্থির দেখাচ্ছে। কিন্তু,, দাদুর মধ্যে কোন অস্থিরতা নেই। তার মুখে সেই আগেকার রহস্যময় হাসি বিদ্যমান। এই হাসির কোন মানে কেউই খোঁজে পায়না। দাদুর এই হাসি শুধু সবাইকে ভাবায়......
কিছুক্ষণের মধ্যে দাদুকে তাবুতে রেখে সবাই বাইরে বেরিয়ে আসে। তাবুতে শুধু দাদু একা। "দীপু" বাইরে এসে নিজের মাথায় মিথ্যে আঘাতের দাগ মুছে ফেলে। বেশ বিরক্তির সাথে বলতে থাকে,,,"কিছুতেই "দাদুকে" ভয় পাওয়ানু গেলনা।"
"দীপুর" কথাতে সবাই বেশ ঘাবড়ে যায়। তার মানে "দীপুর" সাথে যা হচ্ছে তা অন্য কেউ করছে না। দীপু নিজেই এসব কিছুর কেন্দ্রবিন্দু। বেশ অবাক লাগে সবার।"দীপু" এবার নিজের পুরো কার্যকলাপ সবাইকে বলে দেয়,,,
"প্রথম থেকেই দাদুকে তার সন্দেহ হয়। এত ভয়ংকর জংগল,, যেখানে কোন লোভনীয় কিছুতে যে হাত দিবে সেই গায়েব হয়ে যাবে । কিন্তু তবুও এই ভয়ংকর জংগলে দাদুর আসতে কোন ভয় ছিলনা । তাছাড়া দাদুর রহস্যময় হাসিতে দীপু প্রায়ই ভয় পেতো। যদি সত্যি সত্যি এমন কিছু হতো,,, তাহলে দাদু নিশ্চয় ভয় পেত। কিন্তু এত কিছু হয়ে গেলো সবাই ভয় পেলেও "দাদু" কেনো ভয় পায়না??
সেই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে আমি এই নাটক করি বলে"দীপু" থেমে যায়।
"দীপু"র মুখ থেকে কথাটা শুনেই ইশান বলে,,, দাদু ভয় পান আর নাই পান আমরা কিন্তু ঠিকই ভয় পেয়েছি । তানভিরের মাথায় নতুন ফন্দি আসে। তারও দাদুকে সন্দেহ হতো মাঝে মাঝে। তবে এবার তারা পুরোপুরি নিশ্চিত দাদুই এসব কিছুই মূল কেন্দ্রবিন্দু।
কিন্তু,, "আভা" কিছুতেই বিশ্বাস করতে চাইলোনা যে,, দাদু এমন করতে পারেন বলে.... "তানভির" তার নতুন ফন্দির কথা সবাইকে বললো,,,,
"দাদুকে গিয়ে সবাই বলবো যে,,, "দীপুর" কাছে অলৌকিক শক্তি আছে। সে প্রসাদের সামনে মনিমুক্তো গুলোয় হাত দিতে পারে এবং তার কিছুই হয়নি।দাদু যদি সত্যিই এসব কিছুর সাথে জড়িত না থাকেন তাহলে তিনি নিশ্চয় বেশ অবাক হবেন। "
তানভিরের,,, কথায় সবাই রাজি। কিছুক্ষণের মধ্যে সবাই "দাদুর" কাছে চলে আসে। বেশ রহস্যময় ভাবে "দীপুর" কার্যকলাপ গুলো দাদুর কাছে তুলে ধরে সবাই। এমন ভাবে বলে যেনো দাদুর মনে হয় "দীপুই" সব রহস্যের মূল।কিন্তু দাদুকে বেশ অবাক হতে দেখা গেলোনা ।
"দাদুর" মুখে আবার সেই রহস্যময় হাসি। যে হাসির কোন মানে কেউ খুঁজে পায়না।এবার দাদু আসল ঘটনা খুলে বলতে থাকেন....
দাদু আগে থেকেই এই গুপ্তধনের ব্যাপারে অনেক কিছু জানতেন। তিনি নিজেই তার বন্ধুকে ভয় দেখিয়ে জংগলের ভিতরে পাঠান। পরে সেই নিখোঁজ বন্ধুকে খুঁজতে আরো দুই বন্ধুকে নিয়ে জংগলের ভিতরে নিয়ে আসেন।গুপ্তধনের অন্যতম একটা রহস্য ছিল। এই গুপ্তধন সবার আগে "দাদু" আর তার সব থেকে কাছের বন্ধু "রহিম শেখ" দেখেছিলেন। জংগলে তারা অনেক আগে বেড়াতে এসেছিলেন। তখনই এই "গুপ্তধন" আর প্রাসাদের দেখা পান।
কিন্তু,,, দাদুর গুপ্তধনের প্রতি প্রচন্ড লোভ দেখা দেয়। যার জন্য তিনি সেখানেই তার বন্ধু "রহিম শেখ"কে হত্যা করে গুপ্তধন নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। "রহিম শেখ"কে হত্যা করেছিলেন ঠিকই কিন্তু তিনি গুপ্তধন নিয়ে যেতে পারেন নি!! কারণ মরে যাবার সময় "রহিম শেখ " অভিশাপ দিয়েছিলেন যে,, "যে বা যারা এই গুপ্তধনে হাত দিবে তাদের পরপর ০৫ জনের মৃত্যু হবে। "
"প্রথম ০৫ জন ব্যক্তি যারা এই গুপ্তধনে হাত দিবে তারা সবাই মারা যাবে।" কথা টা শুনে সবাই বেশ অবাক হয়। এখন ৪ জনের মৃত্যু হয়েগিয়েছে,,, রহিম শেখ,, জিহাদ,মামুন,,আর দাদুর আরেক বন্ধু। তার মানে এখনো একজন কে মরতে হবে। কিন্তু এই জংগলে যারা আছেন তারা সবাই সত্যটা যেনে গেছে। সুতরাং এদের কেউই নিজের ইচ্ছায় মরতে রাজি হবে না।
গুপ্তধনের প্রতি সবারই আকর্ষণ আছে। কিন্তু কোন একজনকে তো মরতে হবে!! কে মরবে?? মরতে তো কেউই রাজি হবে না ।
"দাদুর" মুখে আবারো সেই রহস্যময় হাসি।তার মনে অন্যরকম শয়তানি বুদ্ধির উদয় হয়... কেউ মরতে না চাইলে তো কাউকে মারতে হবে!! নিজের মনে মনে কথাটা ভেবে ভেবেই "দাদু" হেসে যাচ্ছেন একা একা....
"দাদু" এবার সকলের সামনেই বলে দিলেন কেউ যদি মরতে না চাও তাহলে আমাকে তো কাউকে না কাউকে মরার জন্য বাধ্য করতে হবে.... দাদুর মুখ থেকে কথাটা শুনার পরপরই সবাই অবাক!! শেষ পর্যন্ত "দাদুই" কিনা সমস্ত কিছুর মূল আর তিনিই এখন কাউকে মরার জন্য আদেশ দিচ্ছেন। তাও স্ব ইচ্ছায় না মরলে তিনি নিজেই কাউকে মারার জন্য বাধ্য হবেন....
"দীপুর" মাথায় আবারো আগের মত বিভিন্ন প্রশ্ন ঘুরছে। আচ্ছা দাদু যদি কারো মৃত্যু চাইতেন তাইলে তিনি বার বার গুপ্তধনে হাত না লাগানোরর জন্য নিষেধ করছিলেন কেনো? তাছাড়া এই মাঝবয়সী লোকটাই বা কে?? নিজেকে প্রশ্ন করে যখন সে কোন জবাব পায়নি তখন সরাসরি দাদুকেই প্রশ্নটা করে সে,,,
আবার সেই রহস্যময় হাসি দিয়ে দাদু জবাব দেন,,, আমিতো চাইছিলাম তোমরা কেউই আমাকে সন্দেহ না করো। তার জন্য আমি এই মাঝবয়সী লোকটার সাহায্যে আজগুবি কাহিনী বানিয়ে তোদের সবাইকে ভয় দেখিয়েছিলাম। কিন্তু যা হবার তাই হলো,, তোমরা সবাই আমার আসল পরিচয় ও উদ্দেশ্য জেনে ফেলেছো....
এবার "দাদু" বেশ ভয়ংকর রকমের হাসি দিয়ে বললেন কে মরবে?? তাড়াতাড়ি প্রস্তুত হও... ততক্ষণে খালেদ,, জবাব দিল "হেলিম" ও তো গুপ্তধনে হাত দিয়ে গায়েব হয়ে গেছে..
দাদু তার রহস্যময় হাসিটা বদলে ফেলে স্বাভাবিকভাবে একটা হাসি দিয়েই... প্রাসাদের দিকে পা বাড়ালেন। বাকি সবাই দাদুর পিছনে পিছনে চলছে.. দাদু বেশ অস্বাভাবিকভাবে হাসি দিয়ে যেই মাত্র প্রসাদের সামনের মুক্তো গুলোয় হাত দিলেন তখন সাথে সাথেই অদ্ভুতুড়ে সব কান্ড ঘটতে লাগলো "দাদুর" সাথে... কিছুক্ষণের মধ্যেই দাদু গায়েব হয়ে গেলেন।
পিছন থেকে "খালেদের" অটঠাসি শুনা যায়। হেলিমের মৃত্যু হয়নি!! যার জন্য দাদুই ৫ম ব্যক্তি হিসেবে গায়েব হলেন।
দাদুকে হারানোর জন্য মন খারাপ হলেও সবাই বেশ খুশি। অনেক গুলা "গুপ্তধন" পাওয়া যাবে। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ালো "হেলিম আর খালেদ"। অবশ্য তারা বেশি কিছু করতে পারেনি। কারণ,,, "ইশান" আগে থেকেই তার পুলিশ আংকেল কে জানিয়ে রেখেছিল এই জংগল আর গুপ্তধনের কথা । প্রতিটা সময়ের খবর সে তারা পুলিশ আংকেল কে জানাতো,,,
তাই কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে পুলিশ আংকেল এসে উপস্থিত হলেন। খালেদ,,হেলিম আর মাঝবয়সী লোকটাকে তারা গ্রেপ্তার করে নিলেন।
এবার প্রসাদের বাহিরের সব "গুপ্তধন" এবং প্রাসাদের ভিতরে রাখা মনিমুক্তা এবং পুরো প্রাসাদটাই "দীপু"দের আয়ত্বে চলে আসে। তবে এইসবের কিছুতেই তাদের কোন লোভ নেই।
সমস্ত মনিমুক্তা গুলো সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। জংগলের ভিতরে থাকা প্রাসাদটাকে জাদুঘর হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। প্রেস কনফারেন্স ডেকে "দীপুদের" সংবর্ধনা দেওয়া হয়। বড়বড় পত্রিকায় তাদের ছবিসহ নাম প্রকাশ হয়। বেশ খুশি সবাই।
আভাদের গ্রামে এখন আর কারো মাথা ভাঙা লাশ দিঘীর জলে পাওয়া যায়না। গ্রামের সবাই এখন বেশ হাসিখুশি দিন কাটাচ্ছে। তবে "দীপুর" মন থেকে এখনো সন্দেহ যায়না!! আচ্ছা দিঘীরর পানি বিভিন্ন রঙের হয় কেমনে??
"দীপুর" কথা শুনে সবাই একগাল হেসে নেয়... আভা হেসে হেসে জবাব দেয়,,,, এটা কোন রাসায়নিক বর্জ্যের কামাল এটাও বুঝছিস ন বোকা??
"দীপু,,, তানভির,,ইশান,,ফাহিম,,আভা" সবাই শহরে ফিরে আসে। তানভির আফসোস করতেছে... এত্ত গুপ্তধন দেখলাম কেউ কিছু নিয়ে আসলাম না!!
তখনই "আভা" নিজের ব্যাগ থেকে ৫ টা মুক্তো বের করে সবাইকে দেখালো... সবাই বেশ অবাক!! ৫ জন ৫টা মুক্তো পেয়ে বেজায় খুশি........
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ