আপডেট বন্ধু
লেখা: মিশু মনি
.
বাসায় এক শহুরে ভাইয়া বেড়াতে এসেছে।তার কথাবার্তা একটু অন্যরকম। এইচবি,উইফি,হাবি,বিএফ,জিএফ,ক্রাশ,ব্রো,সিস আরো কত কত শব্দ ব্যবহার করে সে! অতকিছু মনে রাখতে পারি নাই।কিন্তু তার কথার অর্থ কিছুই বুঝিনা আমি।জিজ্ঞেস করলে বলে,আরে মামা এইগুলা হচ্ছে আপডেট জিনিস।একটু আপডেটেড হইতে শেখো মামা।
আমি একটা মেয়ে মানুষ। তার উপর ওর বোন হই সম্পর্কে।সে কোন আক্কেলে আমাকে মামা ডাকে মাথায় ঢোকেনা আমার।এটা একবার জিজ্ঞেস করতেই সে বলল,আরে মামা।তুই হইতাছো আমার ফ্রেন্ড।আর ফ্রেন্ড সার্কেলরে আমরা মামা ডাকি।
ফ্রেন্ড সার্কেল জিনিস টাও মাথার উপর দিয়া গেছে।তবুও বললাম,কিন্তু তাই বলে বোনকেও মামা!
- আরে মামা,এইটা টু থাউজেন্ড কত বলোতো? আর কয়েকদিন পরেই আঠার আসতেছে।তুমি মামা এখনো ব্যাকডেটেড রইয়া গ্যালা।
- হু ভাই।আচ্ছা আমরা তো রিক্সা ওয়ালাকে মামা ডাকি।তারাও কি তোমাদের ফ্রেন্ড?
- মামা টা আদরের ডাক সিস।
- সিস মানে?
- সিস্টার থেকে সিস মামা।আর ব্রাদার থেকে ব্রো।
- ব্রাদার থেকে তো... না কিছুনা।বুঝিনা ভাই তোমার কথা।
.
সে বাইরে থেকে এসে বলল,আরে মিশু মামা।তিয়াশের ছোট বোন টার সাথে দেখা হইলো।মাইয়া টা তো একেবারে অস্থির।
- অস্থির কেন? ভয়ে?
- ভয়ে কেন হবে? একেবারে সেই হইছে মামা।চরম..
- কি জন্য অস্থির? সেটা জিজ্ঞেস করছি।
- উফফ মামা।তুমি আমার কথা বুঝো নাই? অস্থির মানে হইতাছে গিয়া সেইরকম,একেবারে সেইরম।
- থাক ভাই।আর বুঝতে চাইনা।
- হু সিস।চলো বাইরে ঘুরতে যাই।আর বইলো না রাস্তায় বাইর হইয়া তো ওরে দেইখা আমি এমন ভাবে ক্রাশ খাইয়া পড়ছি।
আমি অবাক হয়ে বললাম,আল্লাহ! কি বলো ভাইয়া? রোড ক্রাশ আর তুমি হাসতেছ! কোথাও ব্যাথা পাও নাই তো?
- উফফ মিশু।রোড ক্রাশ না,ইটস ক্রাশ।
- হ্যা,তুমি সাবধানে চলবা না? কোথাও লাগেনি তো?
- আরে মামা।এই ক্রাশ সেই ক্রাশ না।আই মিন রোড ক্রাশ না।এটা হইতাছে গিয়া ঘন্টা বাজা।
- স্কুলের ঘন্টা? তুমি বাজাইছো?
- ধুর বোকা মাইয়া।এই ক্রাশ হইতাছে গিয়া হুমরি খাইয়া পড়া।
- হ্যা। শেটাই তো বলছি।তুমি হুমরি খেয়ে পড়লা ব্যাথা পাও নাই?
- omg! আই মিন,প্রেমে পড়া।
- কিহ!
- তুমি বুঝবা না।চলো ত তাড়াতাড়ি বাইরে চলো।
.
ভাইয়াকে নিয়ে বাইরে ঘুরতে বের হলাম।সে বারবার বিভিন্ন ভঙ্গি তে মোবাইল এ ছবি তুলছে।একবার আমাকে বলল,মামা একটু খিইচ্চা খাড়াও তো।সেলফি নিই।
- খিইচ্চা খাড়াও মানে!
- আরে একটু পোজ নিয়া দাড়াও।
- কিসের পোচ না কি বলো বুঝিনা।
- উফফ গড! বলতাছি একটু স্টাইলে দাড়াও।আমার মত।সেলফি নিমু।
- কি নিবা? কিসের ফি?
- মিশু মামা তুমি কি জীবনে আপডেট হইবা না? এইবার ইন্টার টা পাশ করো,তোমারে ঢাকায় নিয়া গিয়া বানামু।
- আমাকে কি বানাবা! আশ্চর্য তো!
- তোমারে আপডেট বানাইমু।আমার সেইরম গার্ল ফ্রেন্ডস রে দেখলে তুমি ক্রাশ খাইবা।
- আমি কিভাবে মেয়েদের প্রেমে পড়বো?
- ওহ মামা।ছাড়ো ত।সেলফি নাও আসো।
আমি না বুঝে বোকার মত দাঁড়িয়ে রইলাম। ভাইয়া মুখ বাকা করে পেচার মত স্টাইলে ছবি তুলল।আর আমাকেও সেভাবে মুখ বাঁকাতে বলল।
অবশেষে সেলফি নামক ফি টা নিলাম।তারপর ঘুরে ঘুরে ভাইয়াকে গ্রাম দেখাতে লাগলাম।
.
একটু পরেই ভাইয়া বলল,মামা!
- কি!
- পিকটা এফবিতে আপলোড দিছিলাম।এরই মধ্যে 1k লাইক,হানড্রেড কমেন্টস।
- বুঝলাম না।পিক কই পাইলা? কখন পান খাইছো?
- পানের পিক না।পিক মানে ওই ছবিটা।এফবিতে আপলোড দিছিলাম। তুমি তো মামা আমারে আরো সেলিব্রেটি বানাইয়া দিলা।তোমার ফটো দেখে সবাই ক্রাশড!
- সবাই মানে! কি করছো বুঝাইয়া বলবা?
এরপর ভাইয়া আমাকে সবটা বুঝিয়ে দিলো। শুনে আমি মাথায় হাত দিলাম। সে নাকি আমার ছবি সারা বিশ্বের দেখার সুযোগ করে দিয়েছে! আল্লাহ গো! আমি শ্যাস!
.
এক ভাইয়াকে দেখে আমার ভাইয়া চেঁচিয়ে বলল,আরে ব্রো!
- কি অবস্থা!
- অস্থির ব্রো।ইউ লুক গরজিয়াস।
- তাই!
ওরা কথা বলছে।আমি হা করে শুনছি।সব মাথার উপর দিয়া যাচ্ছে।এর নাম নাকি আপডেট!
গ্রামের ভাইটা কি যেন বলতে চেয়ে আমতা আমতা করছে।আমার শহুরে ভাই বলল,আরে ব্রো,ত্যানা পেচাইও না তো।স্ট্রেইট ক্লিয়ারলি।
আমি তো একদম থ! ত্যানা পেচাবে কেন! ভাই তো শান্ত মত দাঁড়িয়ে আছে।নাকি ত্যানা প্যাঁচানো মানে আলাদা অর্থ আছে! হে আল্লাহ! আমায় উদ্ধার করো। আমি পাগল হয়ে যাবো।
ভাইয়াকে পিড়াপিড়ি করতে লাগলাম বাসায় আসার জন্য।কিন্তু সে আসতে চাইলো না।জোড় করেই টানতে টানতে বাসায় নিয়ে আসলাম।
.
সে খাবার খেতে বসে খাবারের ছবি তুলে তার এফবি না কি বি সেখানে পাঠালো।তারপর সেকি নাচানাচি। এই ছবি নাকি ওয়ান কে লাইক পেয়েছে! আমি বুঝিনা সেসব! আপডেট ব্যাপার স্যাপার!
ভাইয়া আমার মোবাইল দেখে বলল,তুমি এইসব কি ফোন ইউজ কর মামা? ভালো আই ফোন নিবা।
- কি ফোন!
- ও এম জি! আই ফোন চিনোনা!
- না তো।আগে বলো এই omg মানে কি?
- হেহেহে,তুমি আপডেট হইবা কবে মামা? আসো তোমারে একটা এফবি আইডি ওপেন কইরা দি।অনেক আপডেট জিনিস জানতে পারবা।
- আচ্ছা।
সে আমাকে ফেসবুক একাউন্ট খুলে দিয়ে কিভাবে ব্যবহার করতে হয় সেটা শিখিয়ে দিলো।
তারপর একটা মেয়ের ছবি দেখিয়ে বলল,এটা আমার এক্স গার্ল ফ্রেন্ড।
- গার্ল ফ্রেন্ড আবার এক্স ওয়াই যেড আছে?
- হুম,ওর সাথে ব্রেক আপ হইছে।
- ব্রেক আপ কিভাবে হয়? গাড়ি চালাতে চালাতে ব্রেক কষা?
- এটা রিলেশনে ব্রেক কষা। তাকে ব্রেক আপ বলে।বুঝলা মামা?
- হু,এই টা কে?
- এইটা আমার রানিং জিএফ।
- মানে! সে সারাক্ষণ দৌড়ায়! উসাইন বোল্টের মত?
- উহু,তার সাথে রিলেশন কন্টিনিউ এই আর কি!
- প্রেজেন্ট কন্টিনিউয়াস টেন্স?
ভাইয়া একবার অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো।তারপর বলল,আপডেট হইবা কবে তুমি!
- ২১ সালে।
- তাই! আসো ফেসবুক চালানো টা শিখাই ভালো করে।
- ড্রাইভিং লাইসেন্স লাগবে না?
- আরে মামা।এত ফুল কেউ হয় নাকি! ভালো করে বুঝাইয়া দিই আসো।
এরপর সে আমাকে ফেসবুকিং শিখিয়ে দিলো। আমার ফোনে মেসেঞ্জার ইনস্টল দিয়ে দিলো।সারারাত ধরে মোবাইল টিপে শিখে গেলাম ফেসবুকিং আর মেসেজিং।বাহ! এর মত মজার জিনিস জীবনে আর দেখিনি।আমার ঘর থেকে বাইরে বের হওয়ার দিন শেষ। সারাদিন রাত শুধু ফেসবুকিং আর ফেসবুকিং!
ভাইয়া কয়েকদিন আগেই চলে গেছে।এই ফেসবুকের দুনিয়ায় এসে হাবি,উইফি,ব্রেকাপ,রিলেশন, এক্স গার্ল ফ্রেন্ড,বয় ফ্রেন্ড,সার্কেল মার্কেল সব বুঝতে শিখেছি।এখন আমিও আপডেট হয়ে যাচ্ছি! OMG!!
- মিশু মনি
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ