#গুপ্তধনের_খোঁজে
পর্ব-০১
লেখকঃ মনজুরুল করিম
ফাহিম,,, ইশান,,তানভির,,আভা আর দীপুর..... পরীক্ষা শেষ!! বেশ আনন্দ আর উল্লাসে দিন কাঠছে সবার। অনেক দিন পর আবার সবাই একসাথে ঘুরতে যাবে... !! ভাবতেই অবাক লাগে!! "ইশান" কক্সবাজার নিয়ে যেতে চাইলেও কেউ রাজি হয়না... কক্সবাজার আগেও অনেকবার যাওয়া হইছে....
তাছাড়া,,, দীপু,,ফাহিম,,তানভির,, সবার গ্রামের বাড়িতেও অনেক বার বেড়াতে গিয়েছে সবাই.... তার মানে এবার "আভার" গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া যাবে... কিন্তু "আভা" কিছুতেই রাজি হয়না!!!
রাজি না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে... উত্তরে সে অনেকগুলা আজগুবি গল্প বলতে থাকে সবাইকে... কিন্তু তার এই আজগুবি গল্পতে কেউই বিশ্বাসী না....
"" আভাদের" গ্রামটা নাকি অনেকটা ভূতুড়ে গ্রামের মতো.... গ্রামের পাশেই রয়েছে ভয়ংকর জংগল। যেখানে কেউ ঢুকলে আর ফিরে আসেনা। "
-আভার মুখ থেকে এই কথা শুনার পর সবাই অনেকগুলা হাসি উপহার দিলো "আভাকে"। কিন্তু "তানভির" বরাবরের মতই সিরিয়াস;;; তাছাড়া.. জংগল থেকে যেহেতু কেউ ফিরে আসতে পারেনা... সেহেতু এর পিছনে নিশ্চয়ই কোন রহস্য লুকিয়া আছে... আর এই রহস্যের টানে তাদের অবশ্যই "আভাদের" গ্রামে যাওয়া উচিত.....
তানভিরের,,, মুখ থেকে "রহস্য" শব্দটা শুনেই সকেলের মুখের হাসি নিমিষেই উদাও হয়ে গেলো.... সাথে সাথে সবাই সিরিয়াস হয়ে গেলো.... কিছুক্ষণের জন্য প্রত্যেকেই নিরব থাকলো..... তারপর সবাই একসাথেই যাবার জন্য মত প্রকাশ করলো.....
পরের দিন সবাই... " আভা"দের বাড়িতে যাবার জন্য রওয়ানা দিলো.... তবে এবারের জার্নি "ট্রেনে" করে.... ।। "আভা" ছাড়া বাকি সবাই এই প্রথম ট্রেনে চড়ছে... সকলের মাঝে অন্যরকম উত্তেজনা। কিন্তু,, কেনো জানি "দীপু"কে খুব বেশি চিন্তিত মনে হচ্ছে.... সবাই দীপুকে নিয়ে একগাল হেসে নিলো... ছেলেটা সব ফানি সময়ে এভাবে মনমরা হয়ে থাকে...
পুরো একদিন একরাত লাগবে "আভাদের" বাড়িতে যাবার জন্য... রাতে সবাই ঘুমিয়ে গেলেও... ট্রেনের অস্বাভাবিক আওয়াজে "দীপুর" ঘুম আসছে না কিছুতেই.... কেমন জানি ভয় ভয় লাগছে তার... অনেক অন্ধকার চারিদিকে...রাত দুটো বাজে....দূরে কোথাও কোথাও মশালের অথবা লাইটের আলো দেখা যাচ্ছে। কিন্তু ট্রেনের ভিতরে বেশ অন্ধকার!!! এই অন্ধকারে দীপুর ভয় খুব বেশি বাড়তে থাকে.... মনে হয় এই অন্ধকারেও যেনো তার পাশে কেউ বসে আছে... স্পষ্ট দেখা না গেলেও তার শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ আর অবস্থান "দীপু" অনুভব করতে পারে.... কিছুক্ষণের মধ্যেই ভয়ে "দীপু " চিৎকার দিয়ে উঠে......
তার চিৎকারে সাথে সাথেই "ফাহিমে"র ঘুম ভেঙে যায়।ফাহিম আগে থেকেই জানে " দীপুর" একটা মানসিক সমস্যা আছে.... নিজে যা কল্পনা করবে তার মনে হবে যে... বাস্তবেও তা হচ্ছে....তাই কল্পনায় ভূত দেখে এখন বাস্তবে শুধু শুধুই ভয় পাচ্ছে "দীপু"।
এতরাতে অযথা ঘুম ভাঙানোর জন্য মনে মনে "দীপু"কে একরাশ গালি দিয়ে তার সাথেই সারারাত জেগে থাকে।।
পরের দিন সকালে "তানভিরের" ডাকে দীপু আর ফাহিম দুজনের ঘুম ভাঙে। তারা আভাদের গ্রামের ষ্টেশনে চলে এসেছে মনে হয়। ষ্টেশনে নেমেই সবাই অবাক! তাদের নেবার জন্য কেউ আসেনি! "দীপুর" মাথায় অন্য চিন্তা,,, কেউ নিতে আসেনি ভালো কথা;;; কিন্তু খাওয়া দাওয়ার ভালো ব্যাবস্থা হবে নিশ্চয়;;
ছোট্ট একটা টেক্সি ভাড়া করে সবাই "আভার" বাড়ির উদ্দেশ্য রওয়ানা দিলো...আভাদের বাড়িতে যেতেই তার বাবা- বেরিয়ে আসেন। বেশ খুশমেজাজি মানুষ। মেয়ের সাথে আরো কয়েকজন দেখে বেশ অবাক হলেন তিনি!! তার মানে "আভা" তাকে জানায়নি যে.. তারা সব বন্ধু একসাথে বেড়াতে আসবে....
"দীপুর" বেশ মন খারাপ। কারণ যেহেতু,, আংকেল জানেন না তারা আসবে তাই খাবারের খুব একটা ব্যাবস্থা করা হয়নি হয়তো... তবে আংকেল বেশ মিশুক মানুষ....
অনেক সময় ধরে ট্রেনে থাকায় সবারই বিশ্রামের দরকার। হাল্কা নাস্তা খেয়ে "আভাদের" গেস্টরুমে বেশ আরামে ঘুমুচ্ছে সবাই।বিকেলে আংকেলের ডাকে ঘুম ভাঙে সবার।
এইবার "দীপুর" মুখে কিঞ্চিত হাসি দেখা দেয়। আংকেল নিশ্চয় খাবার খাওয়ার জন্য ডাকতেছেন....টেবিলে হরেক রকমের খাবার,, কোনটা খাবে কোনটা খাবেনা.. দীপু ঠিক বুঝতে পারে না.. সবাই হাল্কা করে খেয়ে নিলেও "দীপু" তখনো খাচ্ছে। বাকিরা আড় চোখে তাকিয়ে আছে... আর হাসছে.. তবে আন্টি সামনে থাকায় কিছু বলতে পারছেনা.......
খাওয়াদাওয়ার পর্ব শেষ করে সবাই বিকেলবেলা ঘুরতে বেরিয়েছে.... তাদের সাথে আছে আভার,, গ্রমের বন্ধু "অনিকা"। সে আর আভা মিলে সবাইকে পুরো গ্রামটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাচ্ছে।গ্রাম্য পরিবেশ বেশ!! ভালো লাগছে সবার... শহরের মত এখানে এত ব্যাস্ততা নেই...
ঘুরতে ঘুরতে গ্রামের দীঘির পাড়ে চলে আসে সবাই... এই দীঘিটা বড়ই অদ্ভুত। এর পানি কখনো লাল কখনো নীল অথবা কখনো কখনো... লালচে হলুদাভ বর্ণের থাকে। তাছাড়া এই দীঘিতে নাকি আগেকার দিনে অনেক লাশ পাওয়া যেত!! সবগুলা লাশই মাথাভাঙ্গা থাকতো....পরে গ্রামের লোকজন সেই লাশগুলা পানি থেকে তুলে দাফন দিয়ে দিতেন.....তবে বেশ কয়েকবছর থেকে এই দীঘিতে আর কোন লাশ ভেসে উঠেনি.....
দীঘির পাশেই রয়েছে ভয়ানক জংগল। যার কতা "আভা " বলেছিল....এই সেই জংগল যেখানে গেলে কেউ ফিরে আসেনা....যে জংগলে যায় সে বেঁচে থাকে নাকি মারা যায় সে খবরও কেউ জানতে পারেনা। জংগলটা বাইরে থেকে বেশ ভয়াকন লাগছে... তার মানে ভিতরে আরো বেশি ভয়ানক অবস্থা হবে নিশ্চয়... ভাবতেই সকলের গা শিউরে উঠে।
কিছুক্ষণের ভিতরে এলাকায় বেশ শোরগোল শুনা গেলো... মায়ের সাথে ঝগড়া করে পিচ্ছি একটা ছেলে রাগ করে জংগলের ভিতরে চলে গেছে.... কিন্তু কেউ তাকে ফিরিয়ে আনতে জংলের ভিতরে যেতে রাজি নয়...। ছেলেটার মা!" ছেলেটিকে ফিরিয়ে আনতে জংগলের ভিতরে যাবার জন্য অস্থির। কিন্তু এলাকার কেউ তাকে ভিতরে যেতে দিচ্ছেনা।
বিকেল ঘনিয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেলো কিন্তু ছেলেটা এখনো ফিরে এলোনা... । রাতে সবাই খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়লেও "দীপু" ঘুমায়না। গতরাতের মত আজও তার মনে কাল্পনিক ভয় এসে ভর করে... সে ভাবতেই তাকে,, হারিয়ে যাওয়া ছেলেটার অবস্থা কেমন এখন?? তাকে কি কেউ ঘাড় মটকে দিয়েছে....?? কল্পনায় আরো অনেক কিছুই ভাবে " দীপু"... কিন্তু ভয় পাবার আগেই ফাহিম উঠে তাকে হাল্কা একটা চড় দিয়ে আবার তাকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে..
পরের দিন সকালে.. ভয়ংকর একটা খবর পাওয়া গেলো.... গতদিন যে ছেলেটা হারিয়ে গেছে আজ সকালে সেই ছেলেটার মাথাভাঙ্গা লাশ দীঘিতে পাওয়া গিয়েছে.....
"দীপু" চমকে উঠে.. সেই তো গতরাতে কল্পনায় পিচ্ছি ছেলেটার ঘাড় মটকানোর কথা ভেবেছিল আর আজ সকালেই ছেলেটার ঘাড়ভাঙ্গা লাশ দীঘিতে পাওয়া গেলো.....
(চলবে)
#গুপ্তধনের_খোঁজে
পর্ব-০২
লেখকঃ মনজুরুল করিম
অনেকক্ষণ চিন্তা করে "দীপু"। বিষয়টা কাকতালীয় নাকি সে যা কল্পনা করে তাই হয়?? ভাবতেই দীপু ঘাবড়ে যায়। আচ্ছা ছেলেটা কে কেইবা খুন করতে পারে?? কোন প্রেতাত্মা?? আর কোন কিছু ভাবার আগেই "ফাহিম" দীপুর পাশে এসে দাঁড়ায়,,, বেশি কিছু ভাবতে পারেনা "দীপু"।
ছেলেটার লাশটা দীঘি থেকে তুলে এনে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হলো... ছেলেটা কিভাবে মরলো এর কথা কেউ চিন্তাও করলো না। গ্রাম্য মানুষগুলা এতটাই কু -সংষ্কারে বিশ্বাসী যে,, ছেলেটার মৃত্যু নিয়ে ভাবতেও ভয় পায়।
কেউ ছেলেটার মৃত্যু নিয়ে না ভাবলেও "দীপুরা" সবাই ছেলেটার মৃত্যুর কারণ জানতে অস্তির। নিশ্চয় এর পিছনে কোন রহস্য আছে.... কিন্তু কি হতে পারে এই রহস্য???
কোন কিছু ভাবার আগের পিছন থেকে "আভা" ডাক দেয় । খাবার রেডি সবাইকে খেতে যেতে হবে.....
খাবার খেতে গিয়ে নতুন একজন লোকের সাথে "আভা" পরিচয় করিয়ে দেয়। অনেক বৃদ্ধ লোকটা... বেশ বয়স হয়েছে উনার।সম্পর্কে আভার দাদু হোন তিনি....
খাওয়া শেষে,, দাদুর সাথে বেশ জমিয়ে আড্ডা দেয় সবাই। দাদুও খুব বেশি রশিক টাইপের মানুষ.... দাদুর কাছে কাছে,, গ্রমের পাশের ভয়ংকর জংগলের কথা জানতে চাইলে "দাদুর"রসিক মুখটা মুহুর্তেই বদলে যায়। তার মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট দেখতে পাওয়া যায়। "আভা" ইশারা করে সবাইকে বুঝাতে চাইলো যে,, দাদুকে যেনো জংগল সম্পর্কে কোন প্রশ্ন কেউ না করে... কিন্তু কেউ তার ইশারার কোন মানে বুঝলো না..
কেউ যখন ভয় পায় তখন তার ভয়ের কারণ না জানা পর্যন্ত "ইশানের" মনে সুখ আসেন। ইশান বারবার দাদুকে সেই জংগল সম্পর্কে প্রশ্ন করতে থাকে। কিন্তু দাদু কোন কথা বলেন না... কিছুক্ষণের মধ্যে দাদু সেখান থেকে চলে যান....
দাদু চলে যাবার পর "আভা" দাদুকে অযথা প্রশ্ন করে বিরক্ত করার জন্য... সবাইকে শাসাতে থাকে...। আর বলে দেয় "দাদু"কে আর কেউ যেনো এই বিষয়ে প্রশ্ন না করে,,,,
কিন্তু, "ইশান" নাছোড়বান্দা.. দাদুর ভয় পাওয়া আর মন খারাপের কথা তাকে জানতেই হবে.... এবার "আভা" দাদুর পুরো ঘটনা খুলে বলতে শুরু করে....
"" "দাদু" যখন যুবক ছিলেন তখন তিনিও তানভির,,ইশান,,ফাহিম আর দীপুর মতো রহস্য প্রিয় ছিলেন। ছোটখাটো যেকোন রহস্য দাদু নিমিষেই সমাধান করে দিতেন। সে জন্য এলাকায় দাদুর বেশ পরিচিতি ছিলো.... দাদুর সব থেকে কাছের বন্ধু ছিলেন মামুন আর জিহাদ দাদু। এরা দুজন সব সময় দাদুর সাথেই থাকতেন।
তখন গ্রাম থেকে তাদের অন্য এক বন্ধু সাহস দেখাতে গিয়ে সেই জংগলের ভিতরে প্রবেশ করেছিল। কিন্তু পুরো একদিন চলে গেলেও যখন সে ফিরে আসেনি তখন দাদু ও তার দুই বন্ধু মিলে জংগলের ভিতরে প্রবেশ করেন তাদের অন্য বন্ধুটিকে খুঁজতে... তবে জংগলের ভিতরে তারা তাদের বন্ধুটিকে খুঁজে পাননি.....
জংগল থেকে ফেরার সময় তারা ফিরে আসার রাস্তা হারিয়ে ফেলেন। কোন দিক দিয়ে যাবেন কেউ বুঝতে পারছিলেন না। তারা তিনজন যখন বের হবার রাস্তা খুঁজতেছিলেন তখন দাদু টের পেলেন যে তাদের পেছনে কেউ আছে.... পিছনে ফিরে তাকাতেই দেখেন তার বন্ধু "মামুন" গায়েব।
তখন তিনি আর আর বন্ধু জিহাদ খুব বেশি ভয় পেয়ে গেলেন...তারা দুজনেই সামনের দিকে দৌড়াতে শুরু করেন। কিন্তু তখনো মনে হচ্ছিল যেনো তাদের পিছন পিছন অন্য কেউ আসছে। মাথা হাল্কা ঘুরিয়ে দাদু একটা ছায়ামূর্তি ছাড়া কিছুই দেখতে পেলেন না... পুরো ব্যাপারটা বুঝার জন্য যখনই তিনি পিছনের দিকে ঘুরলেন ঠিক তখনি তার অন্য বন্ধু "জিহাদ" ও গায়েব হয়ে গেলো...
তারপর দাদু আর পিছনের দিকে ফিরে না তাকিয়ে সোজা সামনের দিকে দৌড়াতে থাকেন... পরেরদিন সকালে দাদুকে নাকি জংগলের বাহিরে বেহুঁশ অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিলো আর তার তিন বন্ধুর মাথাভাঙ্গা লাশ দীঘির পানিতে পাওয়া গিয়েছিলো।""
"আভার" মুখ থেকে দাদুর এমন কাহিনী শুনে সকলের মুখে ভয়ের ছায়া দেখা গেলেও "ফাহিম" কিন্তু মোটেই ভয় পায়নি। সে শুধু ছোট্ট একটা হাততালি দিয়ে বলতে লাগলো.. "এইবার রহস্য পাইছি।" ফাহিমের কথার মাথামুণ্ডু কেউই বুঝতে পারেনা। তবে ফাহিম সবাইকে নিয়ে দাদুর কাছে চলে যায়।
প্রথমেই দাদুকে সরি! বলেই আবার সেই জংগলের কথা শুরু করে দেয়,, "ইশান"। "যুবক বয়সে দাদু ,,, রহস্যপ্রিয় ছিলেন আর এখন আমরাও দাদুর মতোন রহস্যপ্রিয়" বলেই ইশান আস্তে আস্তে দাদুর মন জয় করতে শুরু করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই "ইশান" দাদুর সাথে বেশ ভাব জমিয়ে তুলে......
এই কিশোর রহস্য বালকদের পেয়ে দাদুর মনেও রহস্যে খুঁজার ধান্ধা উকি দেয়। হাল্কা রহস্যময় হাসি দিয়ে দাদু বলেন,,, "আমাকে যদি তোমাদের দলে নাও,, তাইলে আমি অনেক রহস্যের জানা অজানা কথা তোমাদের বলতে রাজি।""
দাদুর মুখের কথা "তানভির" লুফে নিয়েই বলতে শুরু করে,,, "অবশ্যই দাদু,, আজ থেকে আপনিও আমাদের টিমের একজন।"
"দাদু " এবার বেজায় খুশি। দাদু বলতে শুরু করেন,,, " জংগলের ভিতরে গেলে কেউ এমনি এমনি মরতো না। এর পিছনে অন্য একটা কারণ ছিলো... যাদের লোভ বেশি তারাই মরে।
দাদুর কথা কেউই বুঝতে পারে না। মরার পিছনে লোভের কি সম্পর্ক??
দাদু আবার বলতে শুরু করেন... " জংগলের ভিতরে আমি বেশ বড় একটা প্রাসাদ দেখেছিলাম। যার আশেপাশে এমনকি ভিতরেও অনেক অনেক মনিমুক্তা ছড়ানো ছিটানো... আমার বন্ধু জিহাদ আর মামুন অইগুলা থেকে কয়েকটা মুক্তা নিজেদের হাতে করে নিয়ে এসেছিল। কিন্তু আমি ওগুলোতে হাত দেইনি। যার জন্য আমি জংগল থেকে মুক্ত অবস্থায় ফিরে আসি আর ওরা মৃত। "
জংগলের ভিতরে প্রসাদ!! সেখানে মনিমুক্তা!! ভাবতেই "গুপ্তধন" বলে চিৎকার দিয়ে উঠে,,, ফাহিম।কিন্তু তাতে হাত দিলে গেলেই যে নিশ্চিত মৃত্যু!! সেটা ভাবতেই "ফাহিমের" মুখ আবার চুপসে যায়।
ইশান দাদুর কথায় রহস্য খুঁজে পেলেও তানভির অন্য কথা ভাবে...গতকাল যে বাচ্চাটা জংগলের ভিতরে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরে এলো সেও কি মনিমুক্তায় হাত দিয়েছিল??? ছোট বাচ্চা মনিমুক্তা চিনে ফেলার কথাও না। তাহলে ও কিভাবে মারা গেলো??
ফাহিম,,, "তানভির"কে নিয়ে তাচ্ছিল্য করে আর বলে,, "এদিকে এতো "গুপ্তধন" পড়ে আছে সে চিন্তা না করে উনি পিচ্ছির মৃত্যুর কথা চিন্তা করে... হয়তো কোন মানুষই তাকে মেরে ফেলেছে....!! " তানভির,, ফাহিমের কথায় রাজি। হয়তো কোন মানুষই বাচ্চাটির খুন করেছে...
"দীপু" ভাবে অন্যকথা!!! তার মনে গেঁথে আছে সেই দীঘির জলের কথা। একটা মাত্র দীঘি। এটার কোন পানি যাওয়া আসার রাস্তা নেই। তাও দীঘির পানি কখনো লাল,,কখনো নীল,, কখনো লালচে হলুদ হয় কেমনে???
দীপুর মুখ থেকে এই কথা শুনে "দাদু"সহ সবাই একসাথে হেসে উঠে। এখানে মৃত্যু রহস্য! গুপ্তধন রহস্য! রেখে "দীপু" পানির পিছনে পড়ে আছে..... ভাবতেই সকলের হাসি পায়। তবে দাদুকে সম্মান দিতে গিয়ে কেউই উচ্চস্বরে হাসেনা।
তবে আগামীকাল থেকে তাদের "গুপ্তধনের" খুঁজে বের হতে হবে.. ভাবতেই সবার অবাক লাগে তবে... "দীপুর" মন থেকে অজানা ভয় গুলা কখনোই যায়না,,,,,,
(চলবে)
#গুপ্তধনের_খোঁজে
পর্ব-০৩
লেখকঃ মনজুরুল করিম
২য় পর্বের লিংক,,
https://www.facebook.com/groups/1719583311671361/permalink/1741615402801485/
নিজের মনে নিজেই ভয় সৃষ্টি করে ভয় পাওয়ার অভ্যাস "দীপুর" ছোটকাল থেকেই আছে। যেখানে ভয় পাবার কথা সেখানে তার ভয় লাগে না। আর যেখানে বিন্দুমাত্র ভয়ের অবকাশ নেই সেখানেই সে ভয় পায়। তাই "দীপুর" ভয় পাওয়ায় বাকিদের কিছুই যায় আসেনা।
গুপ্তধনের খুঁজে যাওয়া হবে বলে দাদুর মন মেজাজ বেশ ভালো। তাকে বেশ অস্থির লাগছে। তবে একটা বিষয় দাদুকে বেশ চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। আচ্ছা জংগলের ভিতর ঢুকলে কি সত্যি সত্যি ফিরে আসা যাবে.???কেউ যদি না বুঝেই কোন মণি মুক্তোয় হাত লাগায় তাহলে যদি তার কিছু হয় তবে "দাদু" তাদের বাবা-মাকে কি জবাব দিবেন.??
কিছুক্ষণের মধ্যে "ফাহিম"দাদুর রুমে প্রকাশ করে,,, । ফাহিম,, দাদুকে দেখেই বুঝতে পারে যে,, তিনি বেশ দুশ্চিন্তায় আছেন। দাদু,, ফাহিমকে তার চিন্তার কথা খুলে বলেন। জবাবে,, "ফাহিম" দাদুকে কোন চিন্তা না করে খুশি থাকতে বলে... এসব নিয়ে তাদের এখন ভাবলে কি চলে??? কাল রাতেই তো তারা যাচ্ছে জংগলের ভিতর সেই প্রসাদে!! যা হবার হবে.....
রাতে,,, সবাই খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে গেলেও প্রতিদিনের মতো, "দীপুর" ঘুম আসেনা। রুম থেকে বের হয়ে বেল্কনিতে দাঁড়িয়ে আছে। অনেক দূরে আমগাছের নিচে একটা স্পষ্ট ছায়া দেখা যাচ্ছে!! কিসের ছায়্ব বোঝা যাচ্ছেনা। "দীপু" মনে করে হয়তো এটা কোন মানুষের ছায়া হবে!! কিন্তু এত রাতে আমগাছের নিচে কে আসবে???দীপু,, তেঁতুল গাছে ভূত থাকতে শুনেছে,,, কিন্তু আমগাছেও কি ভূত থাকে???
খুব বেশি ভয় পাবার আগেই প্রতিদিনের মতোই "ফাহিম" দীপুর পাশে এসে দাঁড়ায়।আমগাছের নিচে আমগাছেরই ছায়া দেখে যে, "দীপু" ভয়ে পেয়েছে সেটা নিয়ে হাসতে থাকে। কিছুক্ষণ দীপুকে নিয়ে হাসাহাসি করে আবার রুমের ভিতর এসে দুজনেই ঘুমিয়ে পড়ে।
পরেরদিন সকালে খুব দেরি করে ঘুম ভাঙে "দীপুর"। ঘুম থেকে উঠে দেখে সবাই নিজেদের ব্যাগ ও কাপড়চোপড় গুছিয়ে নিচ্ছে। চলে যাবে নাকি সবাই??? কিছু বুঝে উঠার আগেই,,,, " তানভির" বলে উঠে কিরে তুই "গুপ্তধনের" মিশনে যাবি না?? নিজের ব্যাগ নিজেই গুছিয়ে নে তাড়াতাড়ি,,, আজ রাতেই যাওয়া হবে.....
গুপ্তধন!! শুনেই "দীপু" তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে নেয়। সবাই খেয়ে নিয়েছে,, বাকি রয়েছে দীপু....। খাবার টেবিলে যাবার আগেই "দীপু " হতাশ। সবাই খেয়ে নিয়েছে!! তার মানে যেটুকু বাকি আছে তাই তাকে খেতে হবে আজ!!
সবাই জংগলে যাবার জন্য পুরোপুরি তৈরী। কিন্তু "দাদু"কে আজও কেমন জানি হতাস দেখাচ্ছে। তার রসিক মুখটা মলিন হয়ে আছে। সবাই দাদুকে খুশি করার নানা ফন্দি করতে লাগলো। "ইশানে"র পাম দেওয়া কথা গুলো খুব ভালো কাজ করছে। বেশ সহজেই দাদুকে মানিয়ে নেয় ইশান।
সব কিছুই ঠিকটাক। সন্ধ্যায় জংগলে যাওয়া হবে। বিকেল বেলা দীঘির পাড়ে সবাই ঘুরতে বেরিয়েছে। গতকাল দীঘির পানি সবুজ ছিলো আজ কেমন জানি লাল হয়ে গেছে। ভাবতেই "দীপু"অবাক হয়। অবশ্য আর কারো দীঘির পানি নিয়ে চিন্তা নেই। শুধু "দীপু"ই দীঘির পানি নিয়ে চিন্তা করে... বাকিরা বেশ জমিয়ে আড্ডা দেয় দীঘির পাড়ে,,,,,
সন্ধ্যা নামতেই "দাদু"কে নিয়ে সবাই জংগলে যাবার প্রস্তুতি নিয়ে নেয়। নিজ নিজ খাবার নিজেদের ব্যাগে ভরে নেয় সবাই। তারা যে জংগলের ভিতরে যাচ্ছে এটা এলাকার কাউকেই জানানো হয়নি। এমনকি "আভাদের"পরিবারে কেউই জানেন না ।
দাদুর একটু বয়স বেশি ঠিকই কিন্তু তার মনে এখনো যুবক বয়সের সাহস ও মনোবল রয়েগিয়েছে।সবাইকে নিয়ে দাদু জংগলের ভিতরে প্রবেশ করলেন। "দাদু" সবাইকে রাস্তা দেখিয়ে দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।দাদুর পিছনে পিছনে সবাই হাঠতেছে,,,, দাদু কাউকে কোন কিছুতে হাত দিতে পুরোপুরি ভাবে নিষেধ করলেন।
তাদের পিছনে পিছনে আসতে লাগলো এলাকার দুই কৃতি-সন্তান "খালেদ ও হেলিম"। গ্রামের এমন কোন কু-কাম নেই যার পিছনে এই দুয়ের নাম নেই। দীপুরা কেউই জানে না যে তাদের পিছনে আরো দুজন আসছে !!
বিকেলে যখন সবাই "দীঘির " পাড়ে বসে গুপ্তধন নিয়ে আড্ডা দিচ্ছিলো ঠিক তখনি "খালেদ আর হেলিম" দুজনেই আড়াল থেকে গুপ্তধনের কথা শুনে নেয়... গুপ্তধনের নেশায় এখনন তারাও "দীপুদের" পিছু নিয়েছে।
"দীপুর" মাঝে মধ্যে সন্দেহ হয়, যে তাদের পিছনে পিছনে কেউ একজন আসছে। কিন্তু ভয়ে পিছনের দিকে তাকায় না সে। আবার সবাই তাকে নিয়ে হাসাহাসি করবে বলে,, কাউকে এই কথাটা জানায়না সে।
আস্তে আস্তে চারিদিকে বেশ অন্ধকার নেমে এসেছে। মশার উপদ্রব ও ধীরেধীরে বাড়ছে। তবে হাল্কা চাঁদের আলোয় চারপাশের সবকিছুই বেশ ভালো করে দেখা যাচ্ছে। কখনো কখনো জোরে জোর শেয়ালের ডাক শুনা যায়। "দীপু " ভয় পেলেও বাকি সবাই এই ভৌতিক পরিবেশে বেশ মজা নেয়।
বেশ কিছুক্ষণ হাঠার পরে "দাদু" সবাইকে থেমে যেতে বলেন। আজ এখানেই তাবু তৈরী করা হবে। দাদুর কথায় সবাই রাজি। হাঠতে হাঠতে বেশ ক্লান্ত হয়ে গেছে সবাই। তবে যেখানে তাবু তৈরী করা হয়েছে সেখান থেকে প্রাসাদ টা ভালো করেই দেখা যাচ্ছে। "দাদু" সবাইকে প্রাসাদের থেকে দূরে থাকতে বললেন আর কেউ যেনো কোন কিছুতে হাত না লাগায় সে বিষয়েও আবার সতর্ক করে দেন।
তারা যেখানে তাবু তৈরী করে এর থেকে বেশ কিছুদূরে দুটো ছায়ামূর্তি দেখতে পায় "দীপু"।অনেকটা ভয় পায় সে। সবাই তাকে নিয়ে হাসাহাসি করবে বলে আবারো কাউকে কিছুই বলেনা।পিছনের ছায়ামূর্তি দুটো দিপুদের তাবুর পাশ দিয়ে জংগলের প্রায় ভিতরেই চলে যায়।
"দীপু" তখনো এই দুই ছায়ার দিকে তাকিয়ে আছে। এরা দুজন প্রায় প্রাসাদের কাছেই চলে গেছে। হঠাৎ "দীপুর" মনে হলো যেনো ছায়ামূর্তি গুলো কেমন জানি লাফাচ্ছে। প্রথম ছায়ামূর্তিটি লাফালাফি করে মাটি থেকে কি যেনো একটাকিছু হাতে নিলো তারপর সাথে সাথে সেই ছায়ামূর্তিটি উদাও হয়ে গেলো।
কিছুক্ষণের মধ্যেই ২য় ছায়ামমূর্তিটি চিৎকার দিয়ে উঠলো। তার পর দৌড় দিয়ে "দীপুদের" তাবুর দিকে আসতে লাগলো। "দীপু" এবার ভয় পেয়ে সবাইকে জাগিয়ে তুললো। ততক্ষণে ছায়ামূর্তিটি প্রায় তাবুর কাছে চলে এসেছে,,, তার মুখ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। এটা তো এলাকার বখাটে,,, "খালেদ"।
খালেদকে এখানে দেখে সবাই অবাক! সে এখানে এলো কিভাবে?? কিছু ভাবার আগেই খালেদ,,, বলেদেয়,, হেলিম উদাও হয়ে গিয়েছে,,,, কিভাবে?? কেনো??
এসব কিছু বলার আগেই। দাদু,, মিটমিটিয়ে হেসে উঠেন। আর বলেন,,,, "বলেছিলাম না,, যে লোভ করবে সেই মরবে!!"""
(চলবে)
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ