অনাগত সন্তান।
*শেষ পর্ব*
লেখা:Umme Nipa
রাত তখন ১০টা, আমি সারাক্ষন ভাবছি আমার কি করা উচিৎ তাই নিয়ে।আমার এটা যতদিন বহন করবো তামিম এর বাবা হবার লোভ
ততো বেড়ে যাবে।
যেহেতু আমি এ বাচ্চা রাখবো না তাই বেশি দেরি করা
উচিৎ হবেনা।
কাউকে জন্ম দিলেই হয়না,তাকে পালন করার যোগ্যতা
থাকতে হয়।আচ্ছা আমি কি চাকরি ছেড়ে দিতে
পারিনা?না না.. এ আমার অনেক পরিশ্রম এর পাওয়া
তাকে আমি ছেড়ে দিব কি করে,আর তামিম এর ও জব
নেই...
অনেক টানাপোড়ন এর পর সিদ্ধান্ত নিলাম আমি এ
সন্তান নিবো না।এটাই শেষ সিদ্ধান্ত আমার।
কিছুক্ষন
পর তামিম ওয়াশ রুম থেকে ভিজে বের হলো। আমি ওর
দিকে তাকিয়ে বলি কি বেপার এতো রাতে ভিজেছো
কেন?
তামিম:- ওয়াশ রুম অনেক পিচ্ছিল হয়েছিল,তা পরিস্কার
করলাম।যদি তুমি পরে যাও। আমি ভাবি এখন ওর উপর রাগ
হবো? না হবোনা।না,ওরে রাগ করে কিছুই শুনানো যাবেনা।
তাই একটু আস্তে করেই বললাম,যা আমি চাইনা সেটা
যেভাবেই যাক ক্ষতি কি,সাথে আমি চলে গেলেও বাঁচি।
তামিম আমায় ধমক দিয়ে বললো,শিমু কথা বলার সুযোগ
পাও তাই বলে এমন কিছু বলোনা যাতে তোমাকে
ভালোবাসতেও আমার লজ্জা হয়। মনে মনে হাসি আসলো, ভাবি
পারিবারিক বিয়েতে আবার ভালোবাসা,সব ই দিনের পর
দিন এক সাথে থাকার অভিনয়।
তামিম যাও ফ্রেস হয়ে নেও,ঠান্ডা লাগবে।
সারারাত ভেবে আমার সিদ্ধান্ত অনড় রইলো।সকালেই
আমি ডাক্তার এর কাছে যাব।সব চিন্তার অবসান হবে সকালে।
সকালে ঘুম ভাঙলো তামিম এর কণ্ঠ শুনে।
উঠে দেখি তামিম দরজায় দাড়িয়ে কার সাথে যেন কথা
বলছে।
আমি গিয়ে দেখি একজন ভিখারি আর তার কোলে
বাচ্চা।
তামিম আমায় দেখেই বলছে,দেখো শিমু এই মহিলার স্বামি
তাকে ছেড়ে চলে গেছে,আর একটা বিয়ে করছে এই
বাচ্চা হবার আগেই।দেখছো বাচ্চাকে নিয়ে ভিক্ষা
করে তবুও বাচ্চাকে বোঝা ভাবেনি।
আমার মেজাজ তখন খারাপ না করে পারলাম না।এতো
চাই যে আমি তামিম কে কিছু বলবো না কিন্তু ও এমন
কাজ করে যাতে আমি নিজেকে স্থির রাখতে পারিনা।
আচ্ছা ভিক্ষা দিছ ওনাকে?
তামিম:- হুম,
তাহলে বিদায় করো।
দরজা বন্ধ করার পর বললাম,তামিম তুমি বরং একটা বিয়ে
করে নেও,সে তোমায় প্রতি ২বছরেই এক এক টা বাচ্চা
দিবে।
আর আমার ভিক্ষা করার মতন অবস্থা এলে একাই
করবো,অযথা বাচ্চাকে কষ্ট দিবনা।
তামিম:- এই যে,আমি যদি বলি এক লাইন, তুমি বোঝ আড়াই
লাইন।
আমি মুখ বাকিয়ে রুম এ চলে আসলাম।
কিছুক্ষন পর প্রস্তুত হচ্ছি ডাক্তার এর কাছে যাবার জন্য।
তামিম রুম এ আসলো,আমার ভয় হচ্ছে ও জিজ্ঞেস করলে
কি বলবো?না জানালেও তো খুব অন্যায় হবে।
এর মাঝেই আমার নাম ধরে খুব উচ্চ কন্ঠে ডাক দিল,আমি
ভাবলাম হয়তো ও বুঝে গেছে আমি কই যাচ্ছি।
আমি:- হুম তামিম বলো কি হয়েছে?
তামিম:- ফ্লোর এ পলিথিন আসলো কই দিয়া?
আমি বলি তাতে এভাবে বলার কি আছে?দেখছো যখন
ফেলে দেও।
তামিম:- পলিথিন এ পা স্লিপ কাটে।
আমি তখন বুঝে গেছি ও কেন বলছে এমন করে।তাই কথা বাড়ালাম না।
আমি:- তামিম আমি একটু বের হলাম।
তামিম:- কই যাও?
আমি অনেক্ষন চুপ করে বলতেছি ডাক্তার এর কাছে।
তামিম:- কেন?আবার কি শরীর খাবার লাগছে?
আমি:- না, আর যাতে না লাগে তাই করতে।আসলে যত
তাড়াতাড়ি ঝামেলা শেষ করা যায় ততই ভালো।
ডাক্তার বেশি দেড়ি হলে এবর্শন করতে চায়না।তাই আমি ঝুঁক নিতে চাইনা।
তামিম একটা কথাও বলছেনা,চুপ করে আমার মুখের দিকে
তাকিয়ে আছে।
ওর চুপ থাকার কারন খুঁজতে গেলে আমার অনেক দেরী হয়ে
যাবে।আমি গেলাম বলে রওনা দিলাম।
তামিম আমার নাম ধরে ডাক দিয়ে বলছে,শিমু এতো উঁচু
জুতা পরে যেওনা।
আমি:- আমার অভ্যাস আছে।
এটা বলে চলে গেলাম।আমি কেন যেন তামিম এর চোখে
চোখ রেখে কথা বলতে পারছিলামনা।নিজকে অপরাধী
লাগছে।যাক কিছুদিন পর সব ঠিক হয়ে যাবে। তামিম ও
সব ভুলে যাবে।
ডাক্তার এর কাছে যেতে আর হয়তো ২০মিনিট লাগবে।
আজকের পর হয়তো তামিম এর উপর আর মেজাজ খারাপ হবেনা।সাথে ঝগড়ার কারনও খুঁজে
পাবনা।
তামিম হয়তো আমায় এর জন্য ক্ষমাও করবেনা কিন্তু একটু
সুখে থাকার জন্য কারো চোখে অপরাধী থাকতে ক্ষতি
কি?
এর মাঝেই মা এর কল।
মা এর কল দেখেই ভাবলাম তামিম কে এত বললাম মা কে
না বলতে,ও বলে দিল।ওর উপর এখন মেজাজ খারাপ হওয়া
অভ্যাস এ পরিনত হয়েছে।
-হুম মা বলো।
-শিমু রুনা হসপিটাল এ ভর্তি,তুই এখন ই একটু যা।
রুনা হলো আমার বড় খালার মেয়ে।তার ও বাচ্চা
হবে,বিয়ের ১০বছর পর তাদের বাচ্চা হচ্ছে।আপু এর জন্য কত কেঁদেছে। আজ আপুর সুখের দিন।আমি এ সময় পাশে না থেকে পারিনা।
এখন চাইলেও ডাক্তার এর কাছে যাওয়া সম্ভব নয়।তাই
রুনা আপুর কাছে গেলাম।
গিয়ে দেখি আপুর সিজার হয়েছে।আপুকে ব্লাড দেয়া
হচ্ছে।আর আপুর বাচ্চা ইমার্জেন্সিতে।মনে মনে চাচ্ছি বাচ্চা যেন সুস্থ হয়ে যায়,।দুলাভাই ও অনেক চিন্তা করছে।
এক ঘন্টা পর ডাক্তার এসে বললো বাচ্চাকে বাঁচানো
যায়নি।
দুলাভাই তাই শুনে চিৎকার দিয়ে কাঁদতেছে।আপুর তো
জ্ঞান ফেরেনি,জানিনা জ্ঞান ফিরলে সে কি করে
সহ্য করে।আপুর জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে।
নার্স এর কাছে বাচ্চাকে একটু দেখতে চাইলাম,
বাচ্চাকে আমার কোলে এনে দিল,বাচ্চার মুখ দেখে
মনেই হচ্ছেনা বাচ্চাটা আর নেই।কি সুন্দর মুখটা লাল
হয়ে আছে।
চোখ বন্ধ করে আছে,বার বার মনে হচ্ছে এই বুঝি কেঁদে
উঠবে।
আচ্ছা আমার বাচ্চাও কি এমন চোখ বন্ধ করে থাকবে?
ধূর কি ভাবছি।
বাচ্চার মুখ দেখে আমার গর্ভে থাকা বাচ্চার প্রতি
আমার খুব খারাপ লাগছে।একবার ও আমি আমার বাচ্চার
কথা ভাবিনি।আমি কেমন মা?
আমি বেশিক্ষন বাচ্চাকে কোলে রাখতে পারলাম
না,আমার কোল মনে হচ্ছে ভারি হয়ে আসছে।আমি
হসপিটাল থেকে বের হয়ে এলাম।
বার বার মনে হচ্ছে আমার বাচ্চাও ওমন অভিমান করে
চোখ বন্ধ করে থাকবে।মানুষ বছরের পর বছর অপেক্ষা
করে পায়না আর আমি পেয়েও পায়ে ঠেলে দিচ্ছি,কেমন
মা আমি?
আমি বউ হিসেবে যত খারাপ তার চেয়েও খারাপ মা
হিসেবে।
মা হয়ে নিজের সন্তান কে তেলাপোকার মতন বিষ দিয়ে
মেরে ফেলতে চাচ্ছি।
সারা শরীর জুড়ে বাচ্চার ঘ্রান লেগে আছে।মনে মনে
অনুভব করছি আমার বাচ্চা বার বার আকুতি করছে,তাকে
না মারার জন্য।
বাসায় ফিরে দরজায় নক করতেই তামিম খুললো,
ও আমার দিকে তাকিয়ে কেমন যেন ফ্যাকাশে হয়ে গেল।
আমার সাথে কথা না বলেই বারান্দায় গিয়ে সিগারেট
খাচ্ছে।
আমাদের রুম এ এসে বিছানায় বসেই টেবিল এ একটা খাম
দেখতে পেলাম।
খাম টা নিয়েই দেখলাম,তামিম এর কম্পানি আবার চালু
হয়েছে টার নোটিশ ।দেখেই ভাবলাম,এই বুঝি আমার সন্তান এর
সৌভাগ্যের ফল।
আমি খুশি হয়ে তামিম কে ডাক দিলাম,
তামিম তোমার কম্পানি চালু হয়েছে আর তুমি আমায়
বলছো না?
তামিম রুম এ এসে কোন কথা না বলে বিছানায় শুয়ে
পরলো।
কিছুক্ষন পর বললো,যার জন্য চাকরি করবো সেইতো নেই বলে কেঁদে দিল।
আমি:- এই যে শুনছেন,অফিসে জান আর যাই করেন রোজ
সকালে আমাকে সজাগ করিয়ে নিজেকে দেখিয়ে
যাবেন।
তামিম আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো কেন?
আমি:- বারেহ,তুমি জানো না,প্রেগন্যান্ট থাকা অবস্থায়
ঘুম থেকে উঠে যার মুখ দেখে বাচ্চা তার মতন ই হয়।
তামিম বিছানা থেকে উঠে দাড়ালো...খুশি হয়ে বলছে
শিমু তার মানে তুমি আমাদের সন্তান এর কোন ক্ষতি
করনি?বলে আমায় জড়িয়ে ধরলো।
আমি:- আমি কি করে আমার সন্তান এর ক্ষতি করি
বলতো?ক্ষতি করছো তো তুমি।
তামিম:- কি করে?
আমি:- এতো শক্ত করে ধরলে আমার বাচ্চা অক্সিজেন
নিবে কি করে?
তামিম আরো শক্ত করে ধরে আমায় বলছে,আমার এ
উষ্ণতাই আমার বাচ্চার অক্সিজেন ।
আমি:- বাবাহ,বুড়া হলেও কি শক্তি গায়ে,কি শক্ত করে
ধরেছে আমায়।
তামিম হেসে দিল,এই প্রথম তামিম আমার মুখে বুড়া
শুনেও হাসছে।তামিম কে হাসলে বেশ লাগে,আগে এতো
খেয়াল করে ওর হাসি আমি দেখিনি।হাসলে চোখ
পানিতে ভরে যায়, এমন চোখের প্রেমে না পরে থাকা
যায়না।
আমি তামিম এর প্রেমে পরে যাচ্ছি, আমি ই মনে হয়
প্রথম যে বিয়ের ১বছর পর প্রেমে পরলাম।
তামিম কে ভালোবাসি বলতে ইচ্ছে হলেও
পারছিনা,হয়তো এতো সুখ ও নিতে পারবেনা।
তামিম:-আচ্ছা বাচ্চাকে আমার মতন দেখতে হলে রোজ কয়বেলা
আমার চেহারা তোমায় দেখাতে হবে?
আমি হেসে হেসে বললাম,
সারাবেলা।
এতোদিনে বুঝলাম,একজন মা ই শুধু একজন বাচ্চার জন্ম
দেয়না,একজন বাচ্চাও একজন মায়ের জন্ম দিতে পারে।সাথে
জন্ম দেয় অনেক দায়িত্ববোধ এর।আর শক্ত করে নড়বড়ে বন্ধনগুলি।
সমাপ্ত____
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ