হাসি আনন্দের গল্প
লেখা: মিশু মনি
.
প্রতিদিনের মত আজকেও শ্বাশুরি মায়ের সাথে ঝগড়া লেগে গেলো।ঝগড়ার কারণ,শয়তানের বাক্স অর্থাৎ টেলিভিশন।আমি দেখবো মটু পাতলু,আর শ্বাশুরি দেখবেন স্টার জলসা।এই নিয়ে প্রায় ই আমাদের মধ্যে ঝগড়া বেধে যায়।আজ ও বেধেছে।
শ্বাশুরি গাল ফুলিয়ে বসে আছেন সোফার এক কোনে।আরেক কোনে আমি।আমিও কম গাল ফুলাই নি।এত বেশি ফুলিয়েছি যে,আরেকটু ফুলালে গাল ফেটে দাত বের হয়ে আসবে।
শ্বাশুরি মা বললেন, মিছু তুমি কিন্তু বাড়াবাড়ি করতাছো কইলাম। আজ আয়াত আছুক,এর একটা বিহিত কইরাই ছারমু।
- আম্মাজান শুনেন, আপনি রোজ রোজ এইরকম করলে কিন্তু আমি আমার স্বামীকে নিয়ে আলাদা বাসায় উঠবো।
- হায় হায়! মাইয়ার ছাহস তো কম না।পোলা জন্ম দিছি আমি,মানুষ করছি আমি।আর এই দুইদিনের বৈরাগী ভাতেরে কয় অন্ন।ছে নাকি আমার পোলারে নিয়া আলাদা বাছায় উঠবো।ছুনো মিছু,বেছি ফাল পারবা না কইয়া দিলাম। খারাপ হইয়া যাইবো কুনো।
- শুনেন আম্মাজান, আমি কিছু করতেছি না।আপ্নিই তো প্রত্যেকদিন এক কাহিনি শুরু করি দেন।স্টার জলসা ছাড়া আর কোনো চ্যানেল নাই? সারাদিন দুই বোনের মত থাকি,আর সন্ধ্যা হইলেই উনি সামান্য স্টার জলসার জন্য তুলকালাম বাধিয়ে দেন।
- ক্যান? আমার যা মুন চায়,আমি তাই দেখমু।তুমার কি? তুমি বাপের বাড়ি থাইকা টেলিভিছন নিয়া আসবার পারো নাই?
আমি ক্ষেপে গিয়ে বললাম,টিভি কি আপনি বাপের বাড়ি থাকি নিয়া আসছেন?
আম্মাজান ভয়ানক রেগে বললেন,টেলিভিছন আমার ছওয়ামি কিনছে।
- আমি ও আমার স্বামী কে বলবো আরেকটা টিভি কিনতে আনতে।
- মামির ঘরের আবদার? আমার পোলার ঘারের উপ্রে বইছা থাইকা খাইবা।আবার টেলিভিশন ও কিন্না নিবা? বাপের বাড়ি থাইকা কি আনছ তুমি? বাড়ি তো ছেই রংপুরো।রংপুরের মানুষ হইতাছে গিয়া মফিজ।মঙ্গা এলাকার মানুষ।কুঞ্জুসের কুঞ্জুস।কিই বা দিবো?
রংপুর নিয়ে গালি দেওয়ায় আমার মেজাজ গরম হয়ে গেল।কিন্তু শ্বাশুরির সাথে তো আর এভাবে ঝগড়া করা ঠিক না।মেজাজ এর মাত্রা টা কমিয়ে বললাম, আম্মাজান।রংপুর মঙ্গা হইতে পারে কিন্তু মানুষ গুলা খাটি।আর আপনি তো পুরান ঢাকার মানুষ।উচ্চারন ই করতে পারেন না।মিশুকে কন মিছু।
শ্বাশুরি মা চোখের মণি ঘুরাচ্ছেন।সম্ভবত কি বলবেন তা খুঁজে পাচ্ছেন না।এটা ই সুযোগ,তর্কে জিতার জন্য।
বললাম,আম্মাজান, আব্বাজান সেদিন কইলেন আপনি নাকি ঘুমের মধ্যে গান করেন?
আম্মাজান চোখ বড় বড় করে তাকালো।বললাম,আপনি নাকি ঘুমের মধ্যে গাইছিলেন- পটল কুমার গানওলা.... আব্বাজান নিষেধ করছিল।আপনি নাকি তাকে সর্বঘাটের কাঠালি কলা বলে গালি দিছেন?
শ্বাশুরি মায়ের ইগোতে লেগেছে এবার। কিছু না বলে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।আমার আনন্দ হচ্ছে।আজ ঝগড়ায় আমিই জিতেছি।বরাবরই আমিই জিতে যাই।শ্বাশুরি অল্পতেই উত্তেজিত হয়ে পড়েন ফলে ঝগড়ার ইতি টানতে হয়।
আমি মুচকি হেসে টিভির রিমোট টা ঘুরাতে লাগলাম।
চ্যানেল আইতে একটা লাইভ প্রোগ্রাম হচ্ছে।মনোযোগ দিয়ে দেখতে লাগলাম।
শ্বাশুরি বললেন, তুমি কি হাচা কইতাছ?
- হ আম্মাজান।আব্বারে জিজ্ঞেস করি দেখিয়েন।
আম্মাজান চিন্তায় পড়ে গেলেন। আসলেই এমন ঘটেছে কি না সেটাই হয়ত ভাবছেন।
আমি লাইভ শো দেখছি।আমার আদরের মটু পাতলু শেষ হয়ে গেছে।
এমন সময় আমার গুনধর স্বামী আয়াত এসে রুমে ঢুকলো।
আয়াতকে দেখে আমি মুখ টা কালো করে ফেললাম।আয়াত উতসুক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,কি হইছে মিছু? গাল ফুলাইছ ক্যালা?
আমি একটু ঢং করে বল্লাম- কিচ্ছু হয় নাই।আমি বাপের বাড়ি চলি যাবো।
- ক্যালা? আম্মাজান কিছু কইছে?
- উনার টিভি দেখায় অসুবিধা হয়।আয়াতুল্লাহ, তুমি আমাকে রংপুরে রাখি আসো। আর আসবো না এখানে।একটা পেকাটির মত মেয়েরে বিয়া করবা।সে আর তুমার আম্মা সারাদিন বসি টিভি দেখবে।
আয়াত চিন্তিত হয়ে বলল,কি কইতাচ্ছ এইছব? তুমি চইলা গেলে আমিও তুমার আচল ধইরা চইলা যামু।কি হইবো তুমি ছাড়া এইখানে থাইকা?
আমি শ্বাশুরির দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিলাম। বুঝিয়ে দিলাম তার ছেলে এখন বউ পাগলা।সে সম্পুর্ন ই আমার দখলে।
শ্বাশুরি কেদে কেদে আয়াতকে বলল,বাবাজি।তুমি বউয়ের ফুলা গাল টাই দেখলা ছুধু? তুমার আম্মায় যে গাল ফুলাইয়া বেলুনের মত করছে ছেইডা তুমার চোক্ষে পড়ে না?
আয়াত বলল,তুমি বরাবর ই এমন আআম্মাজান। মিছুরে তুমি একটুও ভালা বাছো না।এমন করলে কিন্তু আমিও চইলা যামু কইয়া দিলাম।
কথা টা শেষ করেই আয়াত নিজের রুমের দিকে ছুটল।
আমি শ্বাশুরিকে ক্ষেপানোর জন্য বললাম,আয়াত।থামো বলছি থামো।আমার আইনের কসম, আমার দেশের কসম।থামো বলছি
শ্বাশুরির চোখে অগ্নিবর্ষণ হতে লাগল।আমি দৌড়ে রুমে চলে আসলাম।
.
আয়াত কে বললাম,বাবুউউউউ..
- হ্যা মিছু।
- একটা কথা বলি বাবুউউউ??
- কইয়া ফালাও।
- তুমি আজকাল আমার দিকে একদম ই তাকাও না।দেখো না আমার জেল্লা কত্ত কমি গেছে?
আয়াত আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,হাছাই তো। তুমার ফেয়ারনেস কইম্মা যাইতেছে ক্যালা?
- বাবু,আমার ফর্সা হওয়ার ক্রিম টা শ্যাস হয়া গ্যাছে।দেখবা আমি দুইদিন পর মা কালির মত কালো হয়া গেছি।
- আহারে! মা কালি হইতে হইবো না।আমি কাল ই তুমার ক্রিম নিয়াইছা দিমু।কয় টাহা জানি?
- মাত্র সাড়ে আটশ।
- মাত্র!
- হ।কাল আনবা তো?
- আইচ্ছা।এইবার খুছি?
আমি যে বহুত খুশি হয়েছি সেটা বুঝানোর জন্য আমার ২৬ টা দাত বের করে হাসি দিলাম।
.
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি শ্বাশুরি মা চিল্লাচ্ছে।
আমি বাইরে এসে জিজ্ঞেস করলাম, আম্মাজান কি হইছে?
- দৌড়াও।
- কই দৌড়াবো?
- আমার লগে দৌড়াও।
আমি শ্বাশুরি মায়ের পিছে দৌড়ানো শুরু করলাম।
বাইরে এসে দেখি রাস্তা ধরে সকলেই দৌড়াচ্ছে।ব্যাপার টা বুঝতে পারছি না।সকলে দৌড়াচ্ছে কেন? শ্বাশুরি মা দৌড়াচ্ছেন,তার সামনে আমার শ্বশুর আব্বা দৌরাচ্ছেন।আমিও দৌড়াচ্ছি।
দৌড়াতে দৌড়াতে হাফিয়ে গেছি।তবুও দৌড়াচ্ছি।পিছনে তাকিয়ে দেখি প্রায় চল্লিশ জন আমাদের একসাথে দৌড়াচ্ছে।হয়ত কোনো বড় বিপদ হয়েছে।তাছাড়া সবাই এভাবে ছুটবে কেন?
ছুটছি তো ছুটছি। হঠাত কে যেন আমার হাত টেনে ধরে বলল,খাড়াও।
তাকিয়ে দেখি আমার গুণধর স্বামী আয়াত।বললাম,দৌড়াও।
- দৌড়াইতেছ ক্যালা?
- জানিনা।
- জানোনা মাগার দৌড়াইতেছ।এম্নে এম্নে কেউ দৌড়ায়?
- সবাই দৌড়াইতেছে তাই।
- সবাই দৌড়াইতাছে বইলা তুমিও দৌরানি দিবা?
আমি হাফাতে হাফাতে বললাম,আচ্ছা ক্যান দৌড়াতেছি?
- পরে কমুনে।এতদূর ছুইটা আইছ আরেকটু দৌরাও।
বলেই আয়াত দৌড় শুরু করলো। আমিও ছুটছি।
.
আনুমানিক তিন কিলোমিটার দৌড়ানোর পর আমাদের মিছিল হাইস্কুল মাঠে এসে ঢুকল।
.
মাঠে ঢুকে সবাই হাফাচ্ছে আর এদিক সেদিক তাকাচ্ছে।
আমিও হাফাচ্ছি।কখনো এতদূর দৌড়াইনি।
আশেপাশে তাকিয়ে কিছুই দেখতে পাচ্ছিনা।শুধু চল্লিশ -পঁয়তাল্লিশ জন মানুষ।
হাফাতে হাফাতে আয়াতের কাছে এসে দাড়ালাম।আমার গুণধর স্বামী বক্তব্য দেয়া শুরু করলো -
"প্রিয় কলোনি বাসী,আপনারা কি জানেন ক্যান দৌড়াই আইলেন?"
সকলেই একবাক্যে বলল,না।
আয়াত বলল,আপনাদের একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে দৌড়ানি দেওয়ালাম।
আমি মুখ বাকিয়ে তাকালাম। তারমানে এই দৌড় প্রতিযোগীতার মুলনায়ক আমার গুণধর স্বামী!
আয়াত বলল,এই হেয়ার এন্ড টরটয়িজ প্রতিযোগীতার প্রধান কারন হইতাচ্ছে,ছাস্থ ফিট রাখা।আজকাল সব বয়সের লোকেরাই বহুমুত্র রোগে ভুগতাছে।যার ইংরাজি হইতাছে গিয়া ডায়াবেটিস।এই ধরনের সকল রোগ থাইকা দূরে থাকা আর ছাস্থ মাস্থ ফিট রাখার জইন্যে এই দৌরানি টা ছবাইরে দেওয়াইলাম।আপ্নারা যদি রাজি থাকেন তাইলে রোজ এইরকম দৌরানি দিয়া এইহানে আসমু সবাই মিল্লা।এতে ছবার ছাস্থ ফিট থাকবো আর ছকলে আরও ইয়ং হইবো।ছবাই রাজি?
সকলে সমস্বরে চেঁচিয়ে উঠল, হ আমরা রাজি।
- তাইলে এহন বাছায় ফিরা যাক।দৌড় শুরু করেন।
.
সকলে আবার দৌড় শুরু করলো।আমার হাটার অভ্যাস নাই,দৌর তো দুরের কথা।পা চলছে না,তবুও হাফাতে হাফাতে দৌড়াচ্ছি........
দৌড়াচ্ছি তো দৌড়াচ্ছি ই.... :D
সবকিছু কেমন মোশাররফ করিমের নাটকের মত লাগছে...
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ