অমনোযোগী মেয়েটা
পর্ব:০৩
লেখা: মিশু মনি
.
ফজরের আজানের শব্দে মিশুর ঘুম ভেঙে গেলো।
চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে পাশেই মর্ম ঘুমাচ্ছে।মর্ম'র ঘুমন্ত মুখ টা দেখতে ভালো লাগছে কিন্তু মিশুর খুব কান্না পাচ্ছে।রাতে কখন সে ঘুমিয়ে পড়েছে নিজেও জানেনা।বাসর রাত নিয়ে দুজনের অনেক পরিকল্পনা ছিল,সারারাত জেগে দুজনে সুখ দুঃখের গল্প করত।কিন্তু রাত টা ঘুমিয়েই পার করে দিয়েছে এটা ভেবেই মিশুর কষ্ট হচ্ছে।মর্ম ও নিশ্চয় ই খুব মন খারাপ করেছে।কিন্তু মর্ম তাকে ডাকেনি কেন?
মর্মকে একবার ডাকতেই ও চোখ মেলে বলল,কি হয়েছে মিশু?
- মর্ম,ভোর হয়ে গেছে।
- ওহ আচ্ছা।যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।
- উহু সেটা বলছি না।আমার খুব কান্না পাচ্ছে।
মর্ম উঠে বসে চোখ কচলে বলল কান্না পাচ্ছে কেন? কি হইছে?
- কষ্ট হচ্ছে তোমার জন্য।বিয়ের রাত নিয়ে কত্ত প্লান ছিল।কিন্তু আমি কখন যে ঘুমিয়ে গিয়েছি! তুমি ডাকোনি কেন?
- তুমি আমার কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছ। তোমাকে দেখে মনে হচ্ছিল খুব তৃপ্তির সাথে ঘুমাচ্ছ।ঘুম ভাঙিয়ে দিলে আমার ভালো লাগত না।তুমি আরামে ঘুমাচ্ছ,আমি কি সেটা ভেঙে দিতে পারি?
মিশু কাদো কাদো গলায় বলল,এই রাত নিয়ে তোমার কত্ত প্লান ছিল।আমার জন্য সব নষ্ট হয়ে গেলো। নিজের উপর রাগ হচ্ছে।
মর্ম মুচকি হেসে বলল,পাগলি মেয়ে।আজ তো আমাদের বৌভাত।আজ রাতে অনেক গল্প করবো,সারারাত জেগে থাকবো।
মিশু মুখ কালো করে বলল,ধেৎ ভালো ই লাগেনা।
তারপর চারিদিকে তাকিয়ে বলল এত ফুল কেন? সারা বিছানায় এত গোলাপের পাপড়ি!
- তোমার মনে নেই?
- না তো। কি মনে থাকবে?
- বারে,তুমিই তো রাতে ঝগড়া করে ফুল নিয়ে আসতে বাধ্য করলে।সেকি রাগ রে বাবাহ!
মিশু অবাক হয়ে বলল,আমি!
- হ্যা তুমি।নেশার ঘোরে কিসব উলটা পাল্টা কাজ করেছ মনে নেই?
- না।কিচ্ছু মনে নেই।ইস আমার মনেই ছিল না।রাতে ভাইয়া ভাবির সাথে বিয়ার খেয়েছিলাম তারপর আর কিচ্ছু মনে নেই।আমি কি খারাপ কিছু করেছি?
- জানিনা।তবে আমার কলার টেনে ধরে বলেছ,দেলোয়ার হোসাইন কে ডাক।
মিশু অবাক হয়ে বলল,বাবাকেও কিছু বলেছি নাকি?
- শুধু কি বাবা? আমাকে,আম্মুকে,ভাইয়াকে সবাইকে বলেছ।এটা কি ঘর সাজানো হয়েছে? এটা তো আফ্রিকার জংগল হয়েছে,কচুরিপানার পুকুর হয়েছে।আব্বুকে বলেছ,ফুল কেনার টাকা না থাকলে ধুতুরার ফুল দিয়ে ঘর সাজাতেন।
মিশু এই কথা গুলা শুনে কেদেই ফেলল।মর্ম ব্যস্ত হয়ে বলল,এই পাগলি কাঁদছ কেন?
- ছি,আমি ভালো বউ নই।ভালো বউরা কখনো ওসব আচরণ করতে পারে? ছি ছি আমার নিজের উপর রাগ হচ্ছে।আমার নেশা করার জন্য আমাদের বাসর টাও নষ্ট হয়ে গেছে,আবার সবাই কষ্ট পেয়েছে।
বলেই মিশু ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো। মর্ম মিশুর মুখ টা দুহাতে ধরে বলল,আহা মিশু মনি কাঁদছ কেন? আমরা কেউ কষ্ট পাইনি।সবাই তোমায় খুব ভালবাসে বুঝেছ পাগলি?
- তাই বলে বাবার নাম ধরে ডেকেছি! ছি ছি।আমি এতদিনের অর্জিত শিক্ষা মাটি করে ফেলেছি।
- মিশু প্লিজ,শান্ত হও।আব্বু কিচ্ছু মনে করেনি।তুমি তো আব্বুর মেয়ের মত।আর তোমার তো দোষ নেই,নেশা করার কারনে ওসব বলে ফেলেছ।
- আমি একজন ডাক্তার হয়ে মাতলামি করেছি।ছিঃ
- মিশু এবার কিন্তু আমিও কাঁদবো। বলছি তো কেউ কিচ্ছু মনে করেনি।জানো রাতে আব্বু আমাকে বলেছিল তুই ও বিয়ার খা।দুই মাতালের জমবে ভালো।কিন্তু আমি খাইনি,কারন তোমাকে সামলে রাখার জন্য তো মর্মকে সুস্থ স্বাভাবিক থাকতে হবে তাইনা?
- হুম।আব্বু কষ্ট পায়নি তো মর্ম?
- না।আব্বু ঘুম থেকে উঠলে গিয়ে সরি বলবা।এখন ফ্রেশ হয়ে নাও।
- ধেৎ, আমার পাগলামির জন্য তোমাকেও কষ্ট দিয়ে ফেলেছি।মনটা কিছুতেই শান্ত হচ্ছে না।
- আমি কষ্ট পাইনি পাগলি বউ।
- হ্যা,আমি পাগলি বউ।মিশু মনিটা আজীবন পাগলি ই থেকে গেলো।
- আবারো মন খারাপ করছ? আচ্ছা তাহলে ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করো।মনটা শান্ত হবে।
- কিভাবে?
- ওজু করে আসো, দুইজন একসাথে নামাজ পড়ি। তারপর দুয়া করবো আমাদের ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য।নামাজ শেষ করে দুজনে বাগানে যাবো, শিউলি কুড়াতে।
মিশুর চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। ও বলল,হ্যা।আমি এক্ষুনি ওজু করে আসছি।
.
মর্ম মিশু পাশাপাশি দাড়িয়ে নামাজ পড়ল।
নামাজ শেষে মর্ম বলল,আমি শুনেছি স্বামী স্ত্রী একসাথে নামাজ পড়লে আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়।
মিশু খুশি হয়ে বলল,হুম এখন মনটা শান্ত হয়েছে।চলো বাইরে যাবো।
.
মিশু শাড়ি বদলে একটা নীল রঙের শারি পড়ল।
মর্ম মিশুর চুলে বেনি করে দিলো। তারপর দুজনে বের হয়ে বাগানে আসলো।
সবেমাত্র ভোর হয়েছে।ঘাসের উপর শিশির বিন্দু,হালকা কুয়াশা পড়েছে।শীত শীত লাগছে।শিউলি গাছের কাছে আসতেই মিষ্টি গন্ধে মন ভরে উঠল।
মিশু আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাচ্ছে।মিশুর আনন্দিত মুখ টা দেখতে মর্ম'র অনেক ভালো লাগছে!
মর্ম বলল,জানো মিশু, তুমি এখনো বাচ্চা স্বভাবের ই আছো। ডাক্তার হয়েও শিশুসুলভ আচরণ বদলায় নি।
- হুম।
মিশু ঘাসের উপর নেচে নেচে বেড়াচ্ছে আর উতফুল্ল হয়ে উঠছে।
মর্ম হেসে বলল,আজ ফুল দিয়ে মালা বানাবো।
মিশুর সেদিকে খেয়াল নেই।ও ছুটোছুটি করে ফুল তুলে নিচ্ছে ঘাসের উপর থেকে।
অনেক ফুল কুড়িয়ে শাড়ির আচলে জমা করে দুজনে এসে একটা গাছের গুড়ির উপর বসলো।
মর্ম বলল, কেমন লাগছে এখন?
- খুব ভালো।
- তোমাকে খুব মিষ্টি লাগছে দেখতে।
মিশু শব্দ করে হেসে বলল,কিসের মত মিষ্টি?
- মানে!
- চিনির মত মিষ্টি, গুড়ের মত,মধুর মত নাকি পাকা আমের মত মিষ্টি?
- হা হা হা।তুমি মর্ম'র বউয়ের মত মিষ্টি।
মিশু হাসতে গিয়েও হাসল না।বলল,তোমার আরো বউ আছে?
- হা হা হা।তুমি ই তো আমার একমাত্র বউ।
- না।তুমি বলিয়াদি জমিদার বাড়ি তে বেড়াতে গিয়ে কি বলছিলা মনে আছে?
- না তো। কি বলেছিলাম?
- বলেছিলা তোমার বিশজন রানী,অর্ধশত বাগদত্তা আর অগণিত গার্ল ফ্রেন্ড।
মর্ম আবারো হাসতে লাগলো। মিশুর ছেলেমানুষি কথা গুলো শুনতে বড় ভালো লাগে।
মিশু বলল,শুধু শুধু হাসছ যে?
- হাসির কথা বললে হাসবো না? রাতে তুমি কি কি বলছিলা বলবো?
- না থাক।শুনবো না ওইসব কথা।
- আরে শুনো না।
- না শুনবো না।
- আচ্ছা।শুনলে আবার ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিবা।তুমি আবার অল্প শোকেই কাতর।
বলেই হাসতে লাগলো।
মিশু বলল,তাও তো ভালো। জীবনে দেখেছিলা এমন ডাক্তার? ডাক্তারদের কোনো ইমোশন টিমোশন থাকেনা।কিন্তু আমি কারো অপারেশনে ঢুকলে ই চোখে পানি চলে আসে।মনে প্রানে দুয়া করতে থাকি,যেন অপারেশন সাকসেসফুল হয়।কখনো কেউ মারা গেলে কেঁদে ভাসাই।
- সে কি আমি জানিনা ভেবেছ? একবার বার্ন ইউনিটে একটা রোগি দেখে কাঁদতে কাঁদতে সব ডাক্তারদের জড়ো করে ফেলেছিলা।হা হা হা।
মিশু রেগে বলল,এটা হাসার মত কথা হলো? এমনি এমনি হাসো কেন?
- জানিনা মিশু পাগলী। আজ খুব হাসি পাচ্ছে আমার।
- হ্যা,তুমি সেইসব লোকেদের একজন, যারা সিরিয়াস পোস্ট এও হাহা react দেয়।
মর্ম আবারো হেসে উঠল।
মিশু তাকিয়ে থেকে দেখছে,মর্ম হাসলে ভারি সুন্দর লাগে দেখতে!
.
বাসায় এসে মিশু সকলের জন্য চা বানালো।
দেলোয়ার হোসাইন কে চা দিতে গিয়ে সালাম জানালো।
উনি সালাম নিয়ে হেসে বললেন, কি খবর মিশু মা?
- আপনার চা।
- থ্যাংক ইউ।কিন্তু আজই তোমাকে কাজে লেগে পড়তে হবে?
- হ্যা হবে।আবার বাবা টা যে আমার হাতের খাবার বড় ভালবাসেন।
দেলোয়ার হোসাইন হেসে বললেন , হুম।চা টা অন্যদিনের চেয়েও ভালো হয়েছে।
এমন সময় মর্ম'র হাসির শব্দ শোনা গেলো।
মিশু বলল,দেখুন তো মর্ম টা আজ পাগল হয়ে গেছে।শুধু হাসছে।
- আজ বৌভাত তো। তাই হাসছে,হাসতে দাও।আমার ছেলের দাত ও ঝকঝকে আর মুখে দূর্গন্ধ ও নাই।
বলেই হাসতে লাগলেন। মিশু ও হেসে বলল,সবাই আজ রসিকতা করছেন আমার সাথে!
- তুমিই তো শিখিয়েছ।কঠিন মুহুর্তেও মুখে হাসি রাখতে।আর তোমার সাথে মিশতে মিশতে পরিবারের সবাই হাস্যমানব হয়ে উঠেছি। আর বাড়ি টা হয়েছে হাসির রাজ্য।
- আজ আমার মন খারাপ বাবা।
- কেন মিশু মা?
মিশু দেলোয়ার হোসাইনের পাশে এসে বসলো। তারপর বলল,আমি কাল রাতে খুব বাজে আচরণ করেছি।আমি সরি বাবা।আর কখনো এমন ভুল হবেনা।আমাকে মাফ করে দিন।
দেলোয়ার হোসাইন মিশুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,তোর উপর কি রাগ করা যায়? আমাদের মনটা সতেজ করে দিয়েছিস তুই।আর তুই তো আমার মেয়ে।বাবা কি মেয়ের উপর রাগ করতে পারে?
- সত্যি তো? রাগ অভিমান কিছু নেই তো?
- নাহ নেই।
মিশু বলল,আমার খুব মন খারাপ লাগছিল।ভাবলাম, ভুল ভাল বকেছি আবার নেশা করেছি।আপনি হয়ত এটা আশা করেন নি আমার কাছে।
- আশা হয়ত করিনি।তবে মিশু মনিটা তো খুব বুদ্ধিমতী,খুব দ্রুত নিজের ভুল টা বুঝতে পারে। আর তা স্বীকার করে নেয়।সে জন্য তোকে আমার খুব ভালো লাগে।আমার পাগলী আম্মু।মন খারাপ করিস না,আমি রাগ করিনি।তুই আমার মা আর আমি তোর ছেলে না? মায়ের উপর ছেলেরা রাগ করে?
- আমি আপনার নাম ধরে ও ডেকেছি।সরি বাবা।
- বললাম না আমি তোর ছেলে,তুই আমার মা।আর মায়েরা তো সন্তানের নাম ধরেই ডাকবে তাই না?
বলেই হেসে উঠলেন। মিশু ও হেসে বলল, তাহলে আর বাবা বলে ডাকেবো না কিন্তু।
- তবে কি নাম ধরে ডাকবি? হা হা হা।
মিশু বলল,বাবা বললে একটা শ্বশুর শ্বশুর ভাব চলে আসে।কিন্তু আপনি তো আমার নিজের বাবা।তাই আব্বু বলে ডাকবো।
- আচ্ছা।আমার তো মেয়ে নেই।আব্বু বলেই ডাকবি।মাঝেমাঝে বলবি,এই দেলোয়ার হোসাইন এদিকে শোনো।হা হা হা।
মিশু হেসে বাবাকে জড়িয়ে ধরল।মনে হচ্ছে এটা ওর নিজেরি বাবা।এমন একটা পরিবার পেয়ে মিশুর নিজেকে ধন্য মনে হচ্ছে।সকলেই অনেক ভালো!
বাবা বললেন, জানিস মিশু কাল রাতে আমার ও মদ খাওয়ার শখ জাগছিল।ভাবলাম আমিও খাই।কিন্তু মাত্রার আম্মু বলল,একবার মদের গ্লাস ছুঁয়ে দেখো আমি বাপের বাড়ি চলে যাবো। একমাসেও আর আসবো না।ওর কথা শুনে ভয়ে আর বিয়ারের নাম মুখে আনিনি।মনে হচ্ছিল হঠাত ই সেই বিশ বছর বয়সে চলে গিয়েছি।ও অভিমান করে বলল,আমি কিন্তু বাপের বাড়ি চলে যাবো একমাসেও আর ফিরবো না।হা হা হা...
মিশু ও হো হো করে হেসে উঠল। মানুষ গুলো আজকাল এত রসিক হয়ে উঠছে যে মন খারাপের সুযোগ ই নেই এ বাড়ি তে!
( চলবে...)
অমনোযোগি মেয়েটা
শেষ পর্ব
লেখা: মিশু মনি
.
নাস্তার টেবিলে বসে মিশু বলল,আব্বু আমি একটু হসপিটালে যাবো।
সবাই অবাক হয়ে তাকালো!
মিশু বলল,বিয়ের জন্য চারদিন থেকে হসপিটালে যেতে পারিনা।আজ একবার যাবো।
মর্ম বলল,আজ বৌভাত।আজকের দিনে যেতেই হবে?
মিশু বলল,আমার হাসপাতালে না গেলে ভালো লাগেনা।তাছাড়া হসপিটাল টা আমার নিজের। আমি না গেলে অন্যরা কাজে ফাকি দিবে।
- কালকে যেও।আজই যেতে হবে?
- না গেলে ভালো লাগে না আমার।আমি নিজের উপর ছাড়া অন্যকারো উপর ততটা ভরসা করতে পারিনা।
মর্ম আর কিছু বলল না।দেলোয়ার হোসাইন বললেন, গাড়ি নিয়ে যেও।মর্ম নিজে নিয়ে যাবে,আর তাড়াতাড়ি আসবা।বিকেলেই গেস্ট রা আসবেন।
মিশু বলল,তাড়াতাড়ি ই চলে আসবো আব্বু।আর মর্মকে যেতে হবেনা।ও বাসায় কাজ গুলা দেখবে।আমি একাই যেতে পারবো।
.
খাওয়া শেষ করে মিশু তৈরি হয়ে বেরিয়ে পড়ল।
মর্ম বলল,সাবধানে যাবা।
- আচ্ছা,একটু হাসি দাও না মর্ম।তোমার হাসি টা বড় ভালো লাগে দেখতে!!
মর্ম প্রাণখোলা হাসি দিয়ে বলল,মন ভরেছে?
- হ্যা,সব কাজ নিজে করবা আর আব্বুকে হেল্প করবা।ডেকোরেশনের দিকে নজর রেখো।
মর্ম হেসে বলল,এত মনোযোগি হতে হবেনা।তুমি অমনোযোগি ই থেকো।
- আচ্ছা।
- কিন্তু গাড়ি চালানোর সময় মনোযোগি থেকো প্লিজ।
- ওকে বাবা,এবার আসি?
- মিশু,একটু দারাও।ভালোভাবে দেখি।শাড়ি তে খুব মিষ্টি লাগছে তোমায়।
মিশু দুহাত কোমড়ে দিয়ে বাচ্চাদের মত করে বলল,দেখো দেখো। মন খুলে দেখো।
মর্ম পপলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে।
মিশু বলল,এমনভাবে দেখছ যেন আর দেখতেই পারবা না? এই যাত্রাই আমার অগস্ত্য যাত্রা।
মর্ম মিশুর মুখে হাত রেখে বলল,ছিঃ মিশু এমন কথা বলবা না কখনো। কাঁদবো কিন্তু।
- আচ্ছা বাবা।এবার যাই।
মিশু এক পা এগিয়ে দিলো। মর্ম আবারো ডাকল,মিশু শোনো।
মিশু ঘুরে তাকালো,কি? বলো?
মর্ম বলল,I love you.
মিশু হেসে বেড়িয়ে আসলো।
.
মর্ম খুব মনোযোগ দিয়ে সব কাজ দেখছে।দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে আসলো।
মর্ম অপেক্ষা করছে মিশুর জন্য।মিশুর মোবাইল টাও বন্ধ,কখন আসবে মেয়েটা কে জানে!
এমন সময় মর্ম'র মোবাইল বেজে উঠল। মর্ম রিসিভ করে বলল,হ্যালো।
- মর্ম,আমি তোমার নির্ঝর ভাইয়া।এখুনি একবার হসপিটালে আসো।মিশু খুব অসুস্থ।অবস্থা অনেক খারাপ।
মর্ম চিৎকার করে বলল,কি হয়েছে মিশুর?
- তুমি আসো তারপর বলছি।
- আমি মেনে নিতে পারছি না।আমাকে টেনশন দিবেন না।বলুন ওর কি হয়েছে?
- মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ।তুমি আসো,তারপর সব শুনো।
.
মর্ম বিকট চিৎকার দিয়ে কাঁদতে লাগলো। মিশু অসুস্থ এটা কিছুতেই সে মেনে নিতে পারছে না।মিশুর তো এমন হওয়ার কোনো কথা ছিল না।
মর্ম কথা বলতে পারছে না।বাড়ির সবাই মিলে ওকে নিয়ে হাসপাতালে আসলো।
.
ডাক্তার মর্মকে বললেন, তুমি শান্ত হও মর্ম।আমরা দেখছি তো।
মর্ম কথা বলতে পারছে না।কেমন যেন পাথরের মত হয়ে গেছে।
মৈত্রী জিজ্ঞেস করলো, কিভাবে কি হলো?
- মিশু বাসায় ফিরছিলো।বাসের মুখোমুখি accident হয়ে যাচ্ছিল।কিন্তু গাড়ির একদম নিকটে এসে বাস ব্রেক করেছে।আমার মনে হয়,মিশু ভেবেছিল বাস ওকে চাপা দিয়ে যাবে।ও হয়ত খুব ভয় পেয়েছিল তাই আঘাত টা নিতে পারেনি। ভয়ে stork করে ফেলেছে।
সকলে চিন্তিত হয়ে জানতে চাইলেন মিশুর কি অবস্থা এখন?
ডাক্তার বললেন, আমরা সকলে মিলে দেখছি।আরো কয়েকজন doctor কে খবর দিয়েছি।আপনারা চিন্তা করবেন না।
মৈত্রী বলল,ওর কি অবস্থা এখন সেটা বলুন?
- মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হলে সাধারণত রোগীকে বাচানো টা কঠিন হয়ে যায়।তবে আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।আল্লাহ নিশ্চয় ই মিশুকে ভালো করে দিবেন।সবার প্রিয় মানুষ টার কিছু হতেই পারেনা।
কিন্তু ডাক্তারের কথায় কেউ ভরসা পাচ্ছে না।সকলেরই যেন পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছে।মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হলে রোগীর বেচে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।সবাই কাঁদছে কিন্তু মর্ম'র চোখ শুকনা।ও একদম নিস্তব্ধ হয়ে গেছে।
.
বাবা বললেন, মর্ম মিশুকে দেখে আয়।
মর্ম বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে।মুখে কোনো কথা আসছে না।এমন টা তো হওয়ার কথা ছিলোনা।মিশুকে সবাই খুব ভালবাসে,ওর কেন এমন হলো?
বাবা আবারো বললেন, মিশুকে দেখে আয়।
মর্ম স্তব্ধ! যেন চিন্তাশক্তি ও লোপ পেয়ে গেছে।
.
মিশু বাবার সহায়তায় নিজে প্রতিষ্ঠা করেছে এই হাসপাতাল।সকল ডাক্তার,নার্স ও সব শ্রেনির কর্মী মিশুকে ভীষণ ভালবাসে।ওর এই অবস্থা কেউ মেনে নিতে পারছে না।
সকলেই মনে প্রানে আল্লাহর নিকট দুয়া করছে যেন মিশু ঠিক হয়ে যায়।
.
মর্ম সারাদিন সারারাত পড়ে রইলো মসজিদে।নামাজ পড়ে, কোরআন তেলাওয়াত করে আল্লাহর নিকট দুয়া করছে মিশুর জন্য।
.
মিশুর বাবা মা,শ্বশুর বাড়ির সবাই প্রার্থনা করছে মিশুর জন্য।মেয়েটাকে যে সকলেই অনেক ভালবাসে!
.
অবশেষে সকলের দুয়া ও নির্ঘুম প্রচেষ্টায় মিশু বেচে গেলো।
একমাস লাগলো পুরোপুরি সুস্থ হতে।
কিন্তু সুস্থ হওয়ার পর ও একটা সমস্যা দেখা দিলো, মিশুর স্মরণশক্তি কমে গেছে অনেক টা। কিছুই মনে রাখতে পারেনা।একটু আগেই যা শুনল,কিছুক্ষণ পরই সেটা আর মনে থাকে না।
এটা হয়ে মর্ম অনেক খুশি।কারন মিশু এখন একদম পাগলি মেয়ে,কিছু বেশিক্ষণ মনে রাখতে পারেনা।ফলে সারাক্ষণ মর্ম মিশুর সাথে থাকতে পারে,মিশুকে দেখতে পারে,মিশুর দুষ্টুমি গুলো উপভোগ করতে পারে।
.
বাসার কেউই মিশুকে ডিউটি তে যেতে দেয়না।যে মেয়ে কিছু মনে রাখতে পারেনা,তার দ্বারা চিকিৎসা করালে ক্ষতির সম্ভাবনা আছে।দেখা যাবে যে,অপারেশন এর পর রোগীর পেটে কাচি রেখেই পেট সেলাই করে দিয়েছে।
এসব কথা বলে মর্ম মিশুকে তেমন একটা কাজ করতে দেয়না।কিন্তু মিশু আরো জেদি হয়ে উঠেছে। ও নিয়মিত হাসপাতালে যায়,ডাক্তার রা কাজ করে আর মিশু বসে বসে দেখে আর হাসে।
পাগলি মেয়েটার মুখে সারাক্ষণ ই হাসি থাকে।স্মরণশক্তি লোপ পাওয়াতে ব্যাপার টা আরো মজার হয়ে গিয়েছে।কাউকে কিছু বলার কিছু সময় পর পুনরায় তাকে এসে বলে কাজটি করতে বলে।এতে করে সে হাসে,মিশুও হাসে।যেন এটা অনেক মজার ব্যাপার!
.
বিকেলবেলা মিশু গিয়ে মর্মকে বলল,আমরা দার্জিলিং ঘুরতে যাবো কবে?
মর্ম হেসে বলল,পাগলী মেয়েটা।সকাল থেকে তিনবার বলেছ কথাটা।
মিশু মুখ বাকিয়ে বলল,কিচ্ছু মনে থাকেনা।মেমোরি লুজ হয়ে গেছে।
মর্ম হাসিমুখে উত্তর দিলো, সেই ভালো হয়েছে।আমার মিশু পাগলী টা আজীবন যেন এমন পাগলী ই থাকে।
মিশু কিছু না বলে মুখ বাকালো।দার্জিলিং যাওয়ার পরিকল্পনা মনে মনে আটছে সে...
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ