3942 (1)

মিস্টার চিতপটাং
পর্ব: ০১
লেখা: মিশু মনি
.
- ওরে বাবাগো!
চিৎকার শুনে তাকিয়ে দেখি এক সুদর্শন যুবক একেবারে চিতপটাং
আহারে! বেচারার সাদা শার্ট টা একেবারে কাদার কারুকার্য খচিত হয়ে গেল।আর কোমড় টা বোধহয় ভেঙেই গেল।দেখতে তো ভালই।যদি ব্যাচেলর হয়ে থাকে,বেচারার আর বিয়েই হবে না।
আমার কথা শুনে ইমা হাসি থামিয়ে বলল, ক্রাশ খাইলি নাকি মনি?
- উহু।কেরাশ খেয়েছি।দুই গেলাশ কেরাশ খেয়েছি।
- হুম।হ্যানডসাম বটে ছেলে টা।
- চল কথা বলি,
- সিরিয়াসলি?
- হুম।কারও উপর ক্রাশ খেলে তার সাথে কয়েক মিনিট বাক্য বিনিময় করতে হয়।এতে করে পরবর্তী দেখা হলে দুজন ই চিনতে পারবে।আর এভাবে পরপর পাঁচ বার দেখা হলে বুঝবি প্রেম হয়ে গেছে।
- হইছে।এত ফিলজফি কপচাইতে হবেনা।চল।
.
ছেলে টা উঠে দাড়িয়ে বিব্রত ভঙ্গিতে কি যেন ভাবছে।আমরা দুই বান্ধবি গিয়ে হামলা করলাম।
- এই যে মিস্টার চিতপটাং,
সে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল,জ্বি বলুন,
- এক টু দেখে চলতে পারেন না? এক টুর জন্য কোমড় টা গেলনা।
ছেলে টি হেসে বলল,এটা আনকমন কিছুনা।অভ্যাস আছে।আমি প্রায়ই এমন ধপাস ধাপুসের শিকার হই।
- বাহ! ভালই তোহ।তবে আপনার শার্ট এ কাদার কারুকাজ কিন্তু বেশ লাগছে!
- ধন্যবাদ। আপ্নারা কি আমায় চিনেন? এত সহজ ভাবে কথা বলছেন যে?
আমি বললাম,এবার জটিলতা তৈরি করব।পরেরবার পরিচিত হব।আজ আসি।
ছেলে টি অবাক হয়ে গেছে।কিছু বলতে যাচ্ছিল।আমি ও ইমা চলে আসলাম।
.
বাসায় ফিরে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।কিন্তু ঘুম আসল না।কিছুক্ষণ ফেসবুকে সময় কাটিয়ে বাড়ির বাইরে হাটতে বের হলাম।
সকালের ব্যাপার টা মনে করে হাসি পাচ্ছে।
হঠাত দেখি বাসার সামনে এক টা গাড়ি এসে দাড়াল।গাড়ি থেকে মালপত্র বাসায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
আম্মুকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম উপর তলা ভাড়া দেয়া হয়েছে।আম্মুর পরিচিত এক মহিলার বাসায় সাময়িক সমস্যার কারনে ছয়মাস ভাড়া থাকবেন।
যাক,আম্মুর তাহলে একজন গল্প করার মানুষ হল।
.
পরিচিত হওয়ার জন্য উপর তলায় আসলাম।মহিলা আমাকে দেখে ভীষন খুশি।ওনার ঘর গোছাতে সাহায্য করলাম।
উনি চা করে দিলেন।চা খাচ্ছিলাম আর গল্প করছিলাম এমন সময় উনার ছেলে তন্ময় আসল।
আমাকে দেখেই বলল,আপনি কি আমাদের নতুন কাজের মেয়ে?
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললাম,আমাকে দেখে কি তাই মনে হয়?
- হা হা।মজা করলাম। আপনি এই বাড়ির মেয়ে তাই তো? আমি তন্ময়। ক্লাস নাইন।আপনি?
এই টুকু ছেলের চঞ্চলতা দেখে অবাক হয়ে গেলাম।বললাম,আমি অবনী। ক্লাস নাই।
তন্ময় হাসতে হাসতে বলল,নাই ক্লাসের মেয়ে।কাজের মেয়ে বলায় খারাপ কিছুই হয়নি।ওয়েট আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।
.
তন্ময় ভিতরে গেলে আনটি বললেন,ওর কথায় কিছু মনে করোনা।খুব পাজি ছেলে।
- হুম।আজকাল কার বাচ্চারা এমনই।চঞ্চল অনেক।
.
তন্ময় এসে বলল,কিসে পড়া হয় আপু?
- ইংলিশ এ অনার্স করছি।
- তাহলে কাল থেকে আমাকে ইংলিশ পড়াবেন।আর আমি কিন্তু বেশিক্ষণ আপনি বলতে পারব না।তুমি বলি ওকে?
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।প্রথম পরিচয়ে কারও সাথে এভাবে কথা বলা যায় জানতাম না।তবে পিচ্চি টাকে ভালই লাগছে।আমিও তো সারাক্ষণ একাই থাকি।আমারও সময় টা ভালো কাটবে।
.
শপিং শেষ করে আমি ও ইমা সিএনজি তে উঠতে যাচ্ছিলাম। হঠাত দেখি সেই মিস্টার চিতপটাং!
আমার হাসি পেল।সে সিএনজির এক পাশে সরে আমাদের জায়গা করে দিলো।
অনেক্ষন কেউ কোনো কথা বললাম না।আমি মনে মনে ভাবছি,ক্রাশের সাথে দুইবার সাক্ষাৎ হল।বলা যায় না,কিছু হলেও হতে পারে
.
মিস্টার চিতপটাং ই আগে কথা বলল,পরেরবার দেখা হলে পরিচিত হওয়ার কথা ছিল?
( চলবে.....)

মিস্টার চিতপটাং
পর্ব: ০২
লেখা: মিশু মনি
.
বাসায় ফিরে শুয়ে আছি।আম্মু এসে বলল,কি কিনলি আজ?
- এক টা জামা নিয়েছি আম্মু।
- দেখা তো কেমন?
আমি জামা টা বের করে হা হয়ে গেলাম।এটা তো ছেলেদের টি শার্ট!
আম্মু বলল,বাব্বাহ! আজকাল তুই ছেলেদের গেঞ্জি পড়িস? নাকি বিশেষ কারও জন্য?
- আম্মু তেমন টা নয়।আসলে সিএনজি তে আমাদের পাশে একজন ছেলে ছিল।সে ও বোধহয় শপিং করে ফিরছিল আর তার ব্যাগের সাথে আমার ব্যাগ টা মনেহয় বদল হয়ে গেছে।
- ভালই তো। যত্ন করে রাখিস।
- কিন্তু মা,আমার নতুন জামা টা?
- আরেক টা কিনিস।
বলেই আম্মু বেড়িয়ে চলে গেল।
.
আমি ভাবছি- মিস্টার চিতপটাং ইচ্ছাকৃত ভাবে ব্যাগ বদল করেনি তো?
নিজের মনেই হেসে উঠলাম।
.
তন্ময় কে পড়াচ্ছি।ও হঠাত পড়া থামিয়ে বলল,আপু,তোমার কোনো ছোট বোন আছে?
- নাহ।আমি একাই।কেন?
- তাহলে আমারও এক টা হিল্লে হয়ে যেত আরকি।
- কি বল্লা? তোমার আম্মুকে বলে দিবো?
- হা হা হা।কষ্ট করে বলতে যাবা? দাড়াও আমিই বলছি।
কয়েকবার ডাকতেই আনটি চলে আসলেন।
তন্ময় বলল,মা,অবনী আপুর কোনো কাজিনের সাথে আমার ভাব করিয়ে দাও না।
আনটি বললেন, খুব দুষ্টুমি হচ্ছে না? পরো ভালো করে।
উনি চলে গেলে আমি বললাম,তন্ময়, খুব পেকে গেছো।
- আপু,এ যুগের বাচ্চারা মায়ের পেট থেকে পেকেই বের হয়।
আমি হেসে বললাম,পাজি ছেলে এক টা।
- হুম।এবার বল কবে তোমার বোনের সাথে পরিচয় করাই দিবা?
- দিবো না।
- আপু,দ্যাখো আমার কিন্তু সেই লেভেলের handsome ভাই আছে।তুমি একদম ফিদা হয়ে যাবা।আগে তোমার বোনের সাথে মিট করিয়ে দাও।আমি আমার ভাইয়ার সাথে তোমার আলাপ করিয়ে দিবো।
- লিসেন, আমি যাকে তাকে দেখে ফিদা হই না।বুঝলা?
- আমার ভাই যে সে নয়।আমার মতই হিরো।
- হুহ।দেখা যাবে। তা কই সে?
- ভাইয়া মেসে থাকে।মেয়েরা আমাদের দুই ভাইয়ের পিছে লাইন লেগে থাকে বুঝলা?
- এবার কিন্তু রেগে যাবো তন্ময়। পড়তে বসে এসব কি?
- ওকে বাবা পড়ছি।
.
কয়েকদিন পর আমার বন্ধু স্নিগ্ধার সাথে কফিশপে বসে কফি খাচ্ছিলাম।ওর বয় ফ্রেন্ড এর সাথে আজ পরিচিত হব।
কিছুক্ষণ পর একজন ভাইয়া এসে আমাদের দেখে হাসতে লাগল।বুঝতে পারলাম ইনিই স্নিগ্ধার বয় ফ্রেন্ড।
অবাক হয়ে গেলাম তখন ই,যখন তাকিয়ে দেখি ওনার সাথে সেই চিতপটাং সাহেব
.
ওনারা আমাদের সামনাসামনি বসল।আমি হাসি থামাতে পারছি না।
ভাইয়া বলল,আমি কি দেখতে কার্টুনের মত? হাসছ যে?
মিস্টার চিতপটাং বলল,উনি আমাকে দেখে হাসছেন।
- তাই? ওকে চিনিস?
- সেদিন ও পরিচিত হতে পারিনি।উনি বলেছিলেন পরের বার পরিচিত হব।
ভাইয়া হেসে বলল,ইন্টারেসটিং!
চিতপটাং সাহেব বলল,ইনিই সেই ব্যক্তি।যার সাথে আমার ব্যাগ বদল হয়ে গিয়েছিল।
আমি হাসতে লাগলাম। ভাইয়া বলল,তাই নাকি? ভালই তো। জানো তোমরা,মেসে ওর ব্যাগে মেয়ের জামা দেখে বন্ধুরা সে কি উপহাস! আর আমি তো অনেক রিকুয়েস্ট করছিলাম যে ভাই জামা টা দে গার্ল ফ্রেন্ড কে গিফট দিবো। ও দেয় নি।
আমরা হাসতে লাগলাম।
.
মিস্টার চিতপটাং বলল,আজও কি পরিচিত হতে পারিনা?
আমি বললাম,আবার দেখা হতে পারে।সেদিন বলব।
-:)
কিছুক্ষণ আডডা দেয়ার পর বাসায় চলে আসলাম।
মনে মনে হাসছি।তিনবার দেখা হল।কেন জানি মনে হচ্ছে খুব শীঘ্রই আবার দেখা হবে।
(চলবে.....)
মিস্টার চিতপটাং
পর্ব:০৩
লেখা: Mishu Moni
.
বসে বসে গেমস খেলছিলাম।
তন্ময় এসে বলল,আপু আসবো?
- হুম।আসো।
তন্ময় আমার পাশে এসে বসল।বলল,তোমার দূর সম্পর্কের বোনের সাথে দেখা করতে আসলাম।
- কি?
-
বললাম,বেশি পাকনামো করবা না।ভালো হবেনা বলে দিচ্ছি।
- ভালো হবেই।তুমি জানো আপু,স্কুলে মেয়েরা আমার পিছনে লাইন লেগে থাকে।সবাই যেভাবে পিছে লাগছে,কিছুদিন পর আমাকে আর খুজে পাবা না।দেখবা সবাই ভাগাভাগি করে নিয়ে নেবে।
- আর বলতে হবেনা।যত গর্জে তত বর্ষে না।
তন্ময় বলল,তারমানে বলতে চাইছ আমি ঢপ মারছি?
- হুম।একশবার।
- আচ্ছা আমার ফোন টা চেক করো।
তন্ময় ওর মোবাইল টা এগিয়ে দিলো। তাকিয়ে দেখি মেসেঞ্জার এ লগইন করা।অনেক মেয়ে মেসেজ পাঠিয়েছে।তন্ময় সিন অব্দি করেনি।
মোবাইল টা আমার হাতে থাকা অবস্থায়ই এক মেয়ে মেসেজ দিলো - jodi reply na dao,kanna korbo kintu.
.
আমি বললাম,বাবাহ! ভয়াবহ অবস্থা!
তন্ময় বলল,হুম।সে জন্যই তো আইডি টা in a relationship করতে চাচ্ছি।ওরা যাতে পিছু ছারে।কিন্তু মেয়েরা disturb না করলে আমারও ভালো লাগেনা।
আমি হেসে উঠলাম।
তন্ময় বলল,পাশের বাড়িতে অনন্যা নামে এক মেয়ে থাকে না? সেও তো হাবুডুবু খাচ্ছে।
- হুহ।বিশ্বাস হয়না।
- prove করে দিবো?
- তন্ময়, তুমি মাত্র ক্লাস নাইনে পড়।এটা ভুলে যেও না।
- কি যে বলো আপু।আমাদের সামনে ক্লাস সিক্স,সেভেনের বাচ্চারা জিএফ নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।
আমি মাথায় হাত দিলাম।
তন্ময় বকবক করতে করতে চলে গেল।
.
রাস্তায় দাড়িয়ে আছি আর ভাবছি- অনেকদিন তো হয়েই গেল।চিতপটাং এর সাথে কি আর দেখা হবেই না?
ভাবনা শেষ হলোনা।তাকিয়ে দেখি চিতপটাং সাহেব আমার দিকেই আসছেন। এটা কিভাবে সম্ভব? আমার চোখের ভুল নয়তো?
নাহ,ভুল নয়।সে এসে বলল,আবারো দেখা হলো।কিন্তু এবার পরিচিত হতে চাইনা।
- কেন?
- কারণ আমাদের আবারো দেখা হবে।
- কিভাবে বুঝলেন?
- আপনার নিয়মানুযায়ী।
বলেই সে হেটে চলে যেতে লাগল।এটা কি হলো? আমার মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে
আবার কবে দেখা হবে কে জানে? হয়ত দেখাই হবে না।
.
কিসের যেন শব্দ হল।তাকিয়ে দেখি মিস্টার চিতপটাং আবারো চিতপটাং!
আমি হাসতে লাগলাম।
কাছে গিয়ে ওনাকে টেনে তুললাম।লোকজনও দেখছে আর বিনোদন পাচ্ছে
বললাম,এত সুন্দর রাস্তা! বৃস্টি নাই,কাদা নাই,পিচ্ছিল ও নয়।আচমকা পড়ে গেলেন কিভাবে?
ছেলে টি হেসে বলল,সেদিন বলেছিলাম না এটা আনকমন কিছু না।আমার অভ্যেস আছে।
আমি হাসলাম।চিতপটাং নাম টার সার্থকতা প্রমাণিত হলো
.
সে বলল,আমার মনেহয় কি জানেন? এটা এক টা অসুখ।ডাক্তার দেখাই।কি বলেন?
- ডাক্তারও জীবনে এমন রোগী পায়নি।ভালই হবে
- কি যে বলেন।এটা তো রানীপুকুর রোগ।
- রানিক্ষেত নাম শুনেছি।রানীপুকুর আবার আছে নাকি?
- জ্বি।মুরগির ক্ষেত্রে ক্ষেত আর মানুষের ক্ষেত্রে পুকুর
আমি হেসে বললাম,আপনি আসলেই অনেক রসিক।
- হ্যা।এক্কেবারে রসে জবজবা।রসে টইটুম্বুর।
চিতপটাং সাহেবের কথা শুনে আর না হেসে পারলাম না।
( চলবে....)