#পুতুলের_মৃত্যু
পর্ব-০১
লেখকঃ মনজুরুল করিম
জন্মের সময় মেয়েটি দেখতে পুরো পুতুলের মতো চেহারা ছিলো বলে বাবা-মা আদর করে মেয়ের নাম রেখেছিলেন পুতুল।ছোট বেলা থেকেই মেয়েটির প্রিয় খেলনা ছিলো পুতুল। নিজের নাম পুতুল আর পছন্দের খেলনাও ছিলো পুতুল,,এজন্য সকলে তাকে নিয়ে হাসাহাসি করতো।
পুতুলের অনেক পুতুল থাকলেও একটা পুতুল ছিলো তার বেশ পছন্দের। লাল রংয়ের এই পুতুলটা তার কোন এক জন্মদিনে বাবার কাছ থেকে গিফট পেয়েছিলো সে । বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে হওয়ায় পুলুতকে সবাই অনেক ভালোবাসতো। তাছাড়া পুতুল দেখতে যেমন মায়াবতী তার ব্যাবহার ও ছিলো
তেমনি ভালো। তবে সবসময় পুতুল নিয়ে থাকে বলেই তার বন্ধু কেউ হতে চাইতো না।
সবসময় অনেকগুলা পুতুল সাজানো থাকতো তার বিছানায়। লাল রঙয়ের পুতুলটা কে মাঝখানের রেখে বাকি ছোট ছোট পুতুল গুলা চারপাশে সাজিয়ে রাখতো সে। তার জগতটাই ছিলো পুতুলকে নিয়ে।
তবে তার একটামাত্র বন্ধু ছিলো। বন্ধুটির নাম ছিলো "দীপু"। দীপু ছেলেটা অনেক ভাল ছিলো। দীপুও পুতুল নিয়ে খেলতে অনেক ভালোবাসতো। তাই দীপু আর পুতুলের মধ্যে অনেক ভাব ছিলো।আস্তে আস্তে তারা অনেক বড় হয়ে যায়।তারা এখন কলেজে পড়ে।
দীপুর আবার অনেক বন্ধু ছিলো।খালেদ,,ফাহিম,, হেলিম,, হাসান সহ আরো অনেকেই ছিলো দীপুর কাছের বন্ধু।এদের মধ্যে খালেদ আর হেলিম দেখতে আবুলের মতো হলেও ভিতরে ভিতরে অনেক গুটিবাজ ছিলো।
দীপু তার সব বন্ধুকেই পুতুলের সাথে আলাপ করিয়ে দেয়।পুতুল,,, দীপুর সব বন্ধুদের সাথে খুব সহজেই বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলে।তবে এর মধ্যে খালেদ কেমন জানি পুতুলের প্রেমে পড়ে যায়।পুতুলকে অসম্ভব ভালোবেসে ফেলে সে। যদিও এটা তার প্রথম প্রেমে পড়া না,,, এর আগেও সে অনেক প্রেম করেছে,,,,,
পুতুল,,,, খালেদের চরিত্র সম্পর্কে কিছুই জানতো না। এদিকে নিজের বন্ধু বলে দীপুও খালেদ সম্পর্কে পুতুলকে কিছু বলেনি।
পুতুলের কোন বন্ধু ছিলো না দীপু ছাড়া। তাই সেও ফাহিম,হাসান, হেলিম আর খালেদের সাথে পরিচিত হয়ে অনেক খুশি।
এদিকে হঠাৎ করেই খালেদ,,,,, " পুতুল"কে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে দেয়।
পুতুলের আগেও কোন ছেলে বন্ধু ছিলনা দীপু ছাড়া। তাই খালেদের প্রস্তাবে সেও রাজি হয়ে যায়। কিন্তু,,, পুতুল কিংবা খালেদ কেউই তাদের প্রেমের কথা দীপুকে জানায়নি।
দীপু যেদিন জানতে পারে যে পুতুলও খালেদের প্রেমে পড়েছে সেদিনই সে পুতুলকে খালেদের থেকে দূরে থাকতে বলে,,,,, কিন্তু পুতুল খালেদকে প্রচুর ভালোবেসে ফেলেছে!!!
এভাবে কিছুদিন যেতেই "পুতুল" আস্তে আস্তে দীপুকে ভুলে যেতে শুরু করে।তবে খালেদের সাথে তার অনেক ভাব জমে গেছে । একজন আরেকজন কে না দেখে থাকতে পারেনা এমন অবস্থা।
আস্তে আস্তে তাদের প্রেমের দুবছর পার হয়ে গেলো। এদিকে পুতুলের বাবা পুতুলের বিয়ে ঠিক করে ফেলেন। এ খবর পেয়ে খালেদ আর পুতুল দুজনেই অস্থির হয়ে পড়ে।
পুতুলের হঠাৎ মনে পড়লো "দীপুর" কথা। এই অসময়ে দীপুই তাদেরকে একটা ভালো বুদ্ধি দিতে পারবে । খালেদও পুতুলের সাথে একমত। দুজনেই দীপুর সাথে এ ব্যাপারে কথা বলতে গেলো।
একসাথে দুই বন্ধুর ফিরে আসায় "দীপু" একটু অবাকই হলো। তারা যখন তাদের সমস্যার কথা খুলে বললো তখন দীপু আরোও অবাক হলো।দীপুর মনে হঠাৎ করে একটা কাল্পনিক কষ্ট জড় হলো।
কেউ না জানলেও দীপু,,, পুতুলকে অনেক অনেক ভালোবাসতো। কখনো এই কথা সে পুতুলকে জানায়নি। সে ভেবেছিলো হয়তো এটা বলতে গেলে তাদের বন্ধুত্বের সম্পর্কটাও নষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু হঠাৎ করে তাদের বন্ধুত্বটা নষ্ট হয়ে যায়,,,,,
আজ সেই পুরনো বন্ধু ফিরে এসেছে তাও তার প্রেমিককে নিয়ে বিয়ের ব্যাপারে সাহায্য চাইতে!!! কথাটা ভাবতেই দীপু হাল্কা কষ্ট অনুভব করে। কিন্তু খালেদ বা পুতুল কাউকেই তার কষ্ট বুঝতে দেয় না।
দীপু,,,, তাদের পালিয়ে যাবার পরামর্শ দেয়। কারণ,,, "পুতুলের" বাবা যে পরিমাণ রাগী,,,,,, পুতুল আর খালেদের রিলেশনের কথা শুনলেই তিনি খালেদ আর পুতুল দুজনকেই মেরে ফেলবেন,,,,,,
ঠিক করা হলো,,, পুতুলের বিয়ের দিন রাতেই পুতুল আরর খালেদ পালিয়ে যাবে। আর এতে সাহায্য করবে দীপু।
বিয়ের দিন রাতে পুতুলকে অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়। দীপু,,,,, পুতুলকে দেখতেই থাকে আর বার বার নতুন করে তার প্রেমে পড়ে। কিন্তু কি হবে তার প্রেমে পড়ে?? একটু পরেই তো সে খালেদের সাথে পালিয়ে যাবে অজানার পথে,,,,,
"দীপু" সকলের অগোচরে পুতুলকে বাড়ির বাহিরে নিয়ে আসে। সাজগোজ আর অলংকারের ভারে পুতুল হাঠতে পারছিল না। বাধ্য হয়েই দীপু,,, পুতুলকে কোলে করেই নিয়ে আসে। দীপু অন্যরকম রোমান্টিক অনুভূতি অনুভব করে। কিন্তু একটু পরেই যে মেয়ে আরেকজনের হাত ধরে পালাবে তাকে নিয়ে কিসের রোমান্টিকতা?? ভাবতেই দীপুর রোমান্টিকথা উধাও হয়ে যায়।
পুতুলকে নিয়ে দীপু নিজের বাসায় চলে আসে।দীপুর বাসায় খালেদ আগে থেকেই ছিলো। দীপু নিজের বাইক আর কিছু টাকা দিয়ে পুতুল আর খালেদকে চলে যেতে বলে। খালেদ পুতুলকে নিয়ে নিজের ফুফুর বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে।
রাতে "দীপুর" ঘুম আসেনা। চোখ বেয়ে জল পড়ছে। নিজের একভালো বন্ধু কে আরেকটা ৪২০ বন্ধুর হাতে তুলে দিয়ে নিজেকে পাপী মনে হচ্ছে তার। কিন্তু তার তো কিছু করার নেই। সে তো পুতুলকে অনেক বুঝিয়ে ছিলো কিন্তু পুতুলই তো বুঝতে চায়নি,,,,,, এইসব চিন্তা করতে করতে দীপু ঘুমিয়ে যায়।
সকালে বাসায় চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ শুনে "দীপুর" ঘুম ভাঙে। এলাকার নদীর তীরে পাওয়া গেছে পুতুলের লাশ!! লাশের পাশে দীপুর বাইকটাও রয়েছে। গতরাতে অনেকেই দেখছে পুতুল নাকি দীপুর সাথেই ছিলো,,,,
তাই প্রমাণসহ থানা থেকে পুলিশ এসেছে "দীপু"কে গ্রেপ্তার করে নিতে। তাদের কাছে সব বিষয়েই প্রমাণ আছে যে "দীপুই" পুতুলের হত্যাকারী।
(চলবে)
#পুতুলের_মৃত্যু
পর্ব-০২
মনজুরুল করিম
"দীপুকে" ধরে থানায় নেওয়া হলো। দীপু বার বার বলতেছে আমি "পুতুলের" খুন করিনি বা তার মৃত্যুর ব্যাপারে কিছুই জানিনা। কিন্তু তার কথা কেউই শুনতেছেনা। কেনো জানি দীপুর নিজেকে অসহায় অসহায় মনে হচ্ছিল।
দীপুর বাবা-মা দুজনেই বিশ্বাস করতে পারছেন না,, তাদের ছেলে কি খুন করতে পারে??? তাও আবার নিজের সব থেকে কাছের বান্ধবীকে,,,,
এদিকে খালেদ নিখোঁজ। তাকে পাওয়া যাচ্ছেনা । ফাহিম থানায় গিয়েছিলো দীপুর সাথে দেখা করতে,,,, ফাহিম =নিজেও জানে দীপু খুন করেনি।তবুও তার কিছু করার নেই। দীপুকে সান্তনা দেবার ভাষা তার জানা নেই,,,,
বিয়ে বাড়ি থেকে "পুতুল"কে নিয়ে আসার সময় "দীপু" ভেবেছিলো কেউ তাকে দেখেনি,,, কিন্তু বিয়ে বাড়ির অনেকেই পুতুল আর দীপুকে একসাথে দেখেছিল। দুজনেই খুব কাছের বন্ধু হওয়ায় কেউ তাদের সন্দেহ করেনি বলেই পুতুল আর দীপু খুব সহজেই পালিয়ে আসে ।
পুতুলের মৃত্যু হওয়ায় এখন অনেকেই দীপুর বিরুদ্ধে সাক্ষী দিচ্ছে। এলাকায় দীপুর শাস্তির দাবী জানিয়ে আন্দোলন হচ্ছে। দীপু,,, থানায় বসেই ভাবতে থাকে,,,
"একটা মেয়ে জীবিত থাকতে কোন পুরুষের কাছ থেকে সহানুভূতিশীল আচরণ পায়না,,, তার বাবা,ভাই ব্যাতীত। কিন্তু কোন কারণে যখন তার ধর্ষণ/ মৃত্যু /হয়রানি হয় তখন সমস্ত পুরুষ জাতি কেমন জানি সহানুভূতিশীল হয়ে উঠে। যেনো তাদের নিজেই আপন বোন ছিলো সে । "
কিন্তু এই মুহুর্তে,, দীপুর এসব বিষয় নিয়ে চিন্তা করা উচিত না । আদালতে পুরো ঘটনা একটা দূর্ঘটনা বিবেচনা করে "দীপু"র ০৪ বছরের কারাদণ্ড হয়। দু-মাস যেতে না যেতেই "দীপু" জেল থেকে ছাড়া পায়। কিন্তু এর পিছনেও কারচুপি আছে,,, বাবার পরিচিত উকিল আর জজ থাকায় বড় ধরণের শাস্তি থেকে দীপু মুক্তি পায়। দীপু,,, খুন না করেও নিজেকে অপরাধী ভাবে,,, তার বাবার এমন অসৎ পন্থা অবলম্বন করা ঠিক হয়নি....
দু - মাসে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। কাছের মানুষ গুলা অনেক পালটে গেছে। অনেকের কাছেই "দীপু" একজন খুনী আর বাবার করা কারচুপিতে এলাকার সবাই তাদের নিয়ে কানাঘুষা করে।
কিন্তু, সবকিছুর মধ্যে "ফাহিম"নামক একটা প্রানী আগের মতই রয়েগেছে দীপুর বন্ধু হয়ে । এতকিছুর পরেও নিজের বন্ধুকে ভুলতে পারেনি সে।
কিছুদিনের মধ্যেই এলাকার অবস্থা স্বাভাবিক হয়ে আসে। পুতুলের মৃত্যুর কথা আস্তে আস্তে সবাই ভুলে যেতে শুরু করছে।তবু দীপু কিছুতেই পুতুলের মৃত্যুর কথা ভুলতে পারছে না। তার বার বার কেনো জানি মনে হয় কেউ একজন তাকে ফাঁসাতে চেয়েছিলো।
খালেদের কোন খোজ পাওয়া যায়নি। এমনকি তার পরিবারে কেউই জানে না সে কোথায় আছে। খালেদের ও কি মৃত্যু হয়েছে পুতুলের মতো??. নাকি খালেদই পুতুলকে মেরে নিজে পলাতক.... এর কোন সমাধান খুঁজে পায় না দীপু।
কিছুদিনের মধ্যে এলাকায় নতুন একটা ফ্যামিলি আসে ভাসা ভাড়া নিয়ে । সেই পরিরারই একটি মেয়ে "অহনা"। বলতে গেলে দীপুর এখন কোন বন্ধু নেই ফাহিম ছাড়া। তাই দীপু,,, "অহনা"কে নিজের বন্ধু বানিয়ে নেয়।
"অহনা " আর "পুতুল" দুজনের মধ্যে অনেক মিল। অহনারও কোন বন্ধু নেই। যেমনটা পুতুলের ছিলোনা। অহনা,,, "পুতুল " খুব ভালবাসে। তার বিছানায়ও সব সময় ছোট বড় আকারের পুতুল সাজানো থাকে।
দিনে দিনে তাদের বন্ধুত্বটা গাঢ় হতে থাকে। এখন এক বন্ধু আরেকজনকে না দেখে থাকতেই পারেনা । তাদের বন্ধুত্ব দেখে "হেলিম" ছেলেটার খুব হিংসা হয়। সে "অহনা"কে বলে দেয় যে,,, দীপু একটা খুনী,,কিছুদিন আগে জেল থেকে বাবার কারচুপির জন্য বেরিয়ে এসেছে।
অহনা,,, সংবাদ টা শুনে মোটেও ঘাবড়ায় না। সে মিটিমিটি হাসতে থাকে,,, তার হাসি দেখে হেলিম ভয় পায়।ভয়ে হেলিম আর কোন কথা বলেনা "অহনা"র সাথে।
ফাহিমেরও দেখা হয় "অহনার" সাথে। কিন্তু,, অহনাকে কেমন জানি অদ্ভুত লাগে ফাহিমের। তার আচার-আচরণ মোটেই স্বাভাবিক লাগেনা,, ফাহিমের। কেমন জানি মেয়েটির সাথে,, "পুতুলের" মিল খুজে পায়।
কিন্তু,, দীপুর কাছে "অহনা"কে স্বাভাবিকই মনে হয়। অহনাকে তার কেমন জানি ভালো লেগে যায়। পুতুলের মতোও অহনাকে সে তার ভালোলাগার কথা জানায়নি।
কিছুদিনের মধ্যেই অহনা দীপুর খুব কাছের মানুষে পরিণত হয়। অহনা,,, দীপুর কাছ থেকে "পুতুলের" মৃত্যুর কথা জানতে চাইলে,, দীপু অকপটে স্বীকার করে নেয় সেই "পুতুল"কে মেরেছে। দীপু কোন ভাব নেয়না,,, সবাই জানে সে খুনি তাই সেও সকলের কাছে বলে বেড়ায় সেই খুনি।
অহনা,,, দীপুর কথায় মিটিমিটি হাসে,,,, আর জবাব দেয়,,, " আমি জানি তুমি খুনী না। "
এমনকি "পুতুলের" সাথে ঘটে যাওয়া সব ঘটনাই "অহনার" জানা। দীপু,, যে,, পুতুলকে ভালবাসতো সে কথাও অহনা জানে। খালেদ আর পুতুলকে পালিয়ে যেতে কে সাহায্য করেছিল সে খবরও "অহনা " জানে। দীপু যে এখনো পুতুলকে ভুলতে পারেনি সে কথাও জানে,, অহনা।
এই প্রথম দীপুর ও "অহনা"কে কেমন জানি লাগে। এই প্রথম তার মনে হয় যে,,, "অহনা" পুতুলের মতো না। অহনাই পুতুল।
(চলবে)
#পুতুলের_মৃত্যু
পর্ব-০৩
লেখকঃ মনজুরুল করি
"অহনা"র সাথে আর কোন কথা বলে না "দীপু"। তার কাছে থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় চলে আসে। অহনাকে কেমন জানি সন্দেহ হয় "দীপুর"।
পরের দিন "ফাহিম"কে সাথে নিয়ে দীপু,, "অহনা"দের বাসায় বেড়াতে যায়। এলাকায় নতুন এসেছে "অহনা"র পরিবার। তাছাড়া যে বাসায় ভাড়া থাকে অই বাসাটা দীপুর চাচার। তাই ফাহিম আর দীপুর আগমনে "অহনা"র বাবা-মা কেউই খুব একটা অবাক হলোনা।
তাছাড়া "দীপু" হাতে করে মায়ের রান্না করা খাবার এনেছিল "অহনাদের" দেবার জন্য। অহনার "মা" খাবার উপহার পেয়ে বেজায় খুশি। "অহনা" বাসায় নেই,,, কলেজে গিয়েছে হয়তো। অহনার আম্মু "দীপু আর ফাহিম"কে ড্রয়িং রুমে বসিয়ে,,, তাদের জন্য নাস্তা আনতে গেলেন।
সেই সুযোগে ফাহিম আর দীপু,,, "অহনার" রুমে ডুকে সব কিছু ভালো করে দেখতে থাকে। অহনার বিছানায় অনেক গুলা পুতুল ছড়ানো থাকলেও তাদের মধ্যে একটা পুতুল দেখে "দীপু" ভয় পেয়ে যায়। এটাতো সেই লাল রঙের পুতুলটা যেটা "পুতুলের" বাবা তার কোন এক জন্মদিনে গিফট দিয়েছেলেন তাকে। "পুতুলের" পুতুল অহনার কাছে এলো কিভাবে??
ফাহিম,,,, দীপুর ভুল ধরিয়ে দিয়ে জানিয়ে দেয় এখনে সন্দেহের কিছু নেই। একই রঙের পুতুল দুজনের কাছে থাকতেই পারে!!! এখানে অবাক হবার কিছু নেই...
তবুও "দীপুর" মন থেকে সন্দেহ যায় না। একই রঙের পুতুল দুজনের হতে পারে ঠিকই,,,, কিন্তু "পুতুল আর অহনার" এই দুজনের একই রঙের পুতুল থাকবে কেন???
"অহনা"র মা ততক্ষণে দীপুদের জন্য চা বানিয়ে নিয়ে এসেছেন। তিনি এসে দেখতে পেলেন "দীপু আর ফাহিম" অহনার রুমে বসে আছে আর পুতুল গুলো নাড়াচাড়া করছে। বেশ অবাক হলেননা তিনি!!
চা নিয়ে "অহনা"র রুমে তিনিও চলে আসলেন। চা-খেতে খেতে অহনার মা- আর দীপুরা গল্প করতেছে। হঠাৎ,,, অহনার সম্পর্কে জানতে চাইলে "অহনার" মা- কেমন জানি চমকে উঠেন।
করুণ সুরে তিনি "অহনা" সম্পর্কে সবকিছু দীপুদের বলতে শুরু করলেন,,,,,
""""অহনা" আগে মোটেই "পুতুল" পছন্দ করতো না। কিন্তু এখানে আসার পর থেকে "অহনা" পুতুল ছাড়া থাকতে পারেনা। সব সময় পুতুল নিয়ে পড়ে থাকে । পুতুল কেনার জন্য বায়না করলে,,, অহনার বাবা তার জন্য অনেক গুলা পুতুল কিনে আনেন। কিন্তু, লাল রঙের বড় পুতুলটা অহনা নিজেই কিনে আনে।তাছাড়া তাদের মেয়ের আগে অনেকগুলা বন্ধু ছিল কিন্তু এখানে আসার পর থেকে নতুন পুরাতন কোন বন্ধুর সাথেই তার ভালো সম্পর্ক নেই। শুধু এখানকার " দীপু"নামের একটা ছেলের সাথে মাঝেমধ্যে গল্প করে। """
"দীপু" নামটা শুনেই ফাহিম আর দীপু দুজনেই চমকে উঠে। অহনা,,, নতুন কোন বন্ধু বানাবে না কেন?? আর পুরোণু অত গুলা বন্ধুকে হঠাৎ করে কেনইবা ভুলে যাবে??? কেনইবা শুধু "দীপু"র সাথে কথা বলবে,, গল্প করবে?? এসব প্রশ্নের কোন জবাব নেই,,, "দীপু আর ফাহিমের" কাছে।
অহনার মায়ের কাছ থেকে ফাহিম আর দীপু দুজনেই বিদায় নিয়ে ফিরে আসে । কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না তারা। ফাহিম,,, কোন সমাধান দিতে না পেরে নিজের বাসায় চলে যায়।
বিকেলে,,, "অহনার" সাথে দেখা হয় দীপুর। অহনা অনেকক্ষণ ধরে কথা বলে যাচ্ছে কোন জবাব দেয়না, দীপু। তার মনে অনেক ভয় কাজ করছে ,,, ভয়ে "অহনার" কোন কথারই জবাব দিতে পারছেনা,,
কোন কথার জবাব না পেয়ে "অহনা" রাগান্বিত হয়ে দীপুকে ধমকের সুরে চিৎকার করে কথা বলতে শুরু করে। অহনার ধম্পকে দীপুর,, টনক নড়ে। মাথা ঘুরিয়ে "অহনার" দিকে থাকাতেই সে চমকে উঠে।
অহনা,, রাগ করায় তাকে অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে,,,,, মেয়েটাকে কেমন জানি ভালোলাগে দীপুর। অহনার চোখ দুটো আজ ঠিকই পুতুলের চোখের মত লাগছে। দীপুর মন চায় একটু রোমান্টিক হতে,,, কিন্তু "অহনার" প্রতি সন্দেহ থাকায় তার আর রোমান্টিক হওয়া হয়না।
ভয় আর রোমান্টিকতা দুটোই একসাথে কাজ করছে। অহনার সব কথাগুলো শুনতেছে ঠিকই কিন্তু কোন জবাব দিতে পারছে না। অহনা তার চূড়ান্ত রাগ দেখিয়ে দীপুর সাথে কোন কথা না বলেই চলে যায়।
রাতে "দীপুর " ঘুম আসেনা কিছুতেই। বার বার তার "পুতুলের" কথা মনে পড়ে। কিন্তু পুতুল তো অনেক আগেই মারা গেছে। তবে এখন আর পুতুলের কথা ভাবতে গেলে"অহনা"ও তার ভাবনায় চলে আসে। "অহনার" মাঝেই এখন "পুতুল"কে খুঁজে পায় সে। দীপুর হঠাৎ মনে হয়,,,,, খালেদের কি হলো??? সেও কি মরে গেছে?? নাকি এখনো জীবিত আছে.... এসব কিছু ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে সে.....
পরের দিন সকালে পাড়ায় বাচ্চাদের চেঁচামেচি শুনে ঘুম ভাঙে "দীপুর"। এলাকায় নাকি নতুন পাগল এসেছে,,,, তাই ছোট ছোট সব ছেলেমেয়েই সে পাগলের পিছনে পিছনে ঘুরাঘুরি করে তাকে জ্বালাচ্ছে,,,,
বিষয়টা ভালো লাগে না,, দীপুর। সব বাচ্চাদের তাড়িয়ে দিয়ে পাগলটাকে বাসার নিচে নিয়ে আসে। কেন জানি পাগলটাকে খুব চেনাচেনা ময়ে হয় "দীপুর "। মনে হয় যেনো তার খুব কাছের একজন মানুষ ছিল এই পাগলটা। পাগলটাও অপলক দৃষ্টিতে থাকিয়ে আছে,, দীপুর দিকে। কিন্তু কেউ কাউকে চিনতে পারছে না।
ফাহিমকে ফোন দিয়ে বাসায় আসতে বলে দীপু। কিছুক্ষণের মধ্যে ফাহিমও চলে আসে। পাগলটাকে দেখে ফাহিম চমকে উঠে ,,,, এই পাগল আর কেউ না ,,,, এই পাগলটাই হচ্ছে তাদের হারিয়ে যাওয়া বন্ধু "খালেদ"।
আজ থেকে প্রায় ২ বছর আগে খালেদ আর পুতুল কে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছিলো,, "দীপু"। পরের দিন "পুতুলের"লাশ পাওয়া গেলেও খালেদকে পাওয়া যায়নি.... আজ সেই খালেদই তাদের সামনে বসে আছে... পাগলের বেশে।
ফাহিম আর দীপু কাউকে বুঝতে দেয়না যে এই পাগলই তাদের হারিয়ে যাওয়া বন্ধু,,, খালেদ। এটা শুধু তারা দুই বন্ধুই জানে। তবে পুতুলের মৃত্যু কিভাবে হলো আর খালেদ কেনইবা পাগল হলো সে রহস্য তাদের খুঁজে বের করতে হবে এখন.....
(চলবে)
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ