গল্পঃচিরকুটের আড়ালে
....................
...............
বারান্দায় বসে গিটার বাজিয়ে আপন মনে recall এর "এতোটা ভালোবাসি" গানটা গাইতে ছিলাম।মা এসে কফি দিয়ে চলে গেল।আমি আপন মনে গান গেয়েই যাচ্ছি। আমি গান গাইতে বসলে আমায় বিরক্ত করা পছন্দ করি না তাই মা চলে গেল অন্য সময় হলে থাকতো। গানটা শেষ করে কফির কাপে চুমুক দিতেই লক্ষ্য করলাম বারান্দায় একটা ছায়া।ছায়াটা ঘরের ভেতর থেকে আসছে অর্থাৎ আমার ঘরে কেউ দাঁড়িয়ে আছে।তাই বারান্দা থেকেই জিজ্ঞেস করলাম,"কে ঘরে?" তখনই ছায়াটা মিশে গেল।ভাবলাম হয়তো মা।তাই আর মাথা না ঘামিয়ে আবার গানে ডুবে গেলাম।এক সময় বারান্দা থেকে ঘরে আসি। গিটারটা এক কোণে রেখে রাতের খাবার খেতে চলে যাই।খাবার শেষে ঘরে এসে নতুন গান লিখতে বসে যাই।অনেক দিন পর আজ গান লিখতে বসলাম।গান লিখা শেষ হতে হতে ফজরের আযান দিয়ে দিল। আর চোখেও তখন ঘুম ঘুম ভাব তাই লিখালিখি বন্ধ করে ঘুমিয়ে গেলাম।
....................
...............
ঘুম থেকে উঠে দেখি ঘড়ির কাঁটা ১২ টার কোটা পেরিয়েছে অনেক আগেই।আস্তে করে বিছানা থেকে নেমে ঘাড়ে গামছা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম।ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে মাকে ডাকতেই মা খেতে ডাকলো।আমি খেতে বসতেই কলিংবেল বেজে উঠলো। আমি দরজা খোলার জন্য উঠতেই দেখি মা দরজা খুলে দিলো।আমি আবার খেতে বসলাম।কিছুক্ষণ পর মায়ের কণ্ঠ ছাড়া অপরিচিত একটা মেয়ের কণ্ঠ শুনলাম।তাই আমি শুধু কফিটা খেয়ে রুমে চলে আসলাম।কারণ কোন মেয়ের সাথে কথা বলতে বা শুনতে ভালো লাগে না আমার।রুমে এসে পিসি তে কাজ করতে লাগলাম।কাজ করার মাঝে কখন যে ৩টা বেজে গেছে বুঝিনি। আর ক্ষুধাও গেলে গেছে।তাই পিসি বন্ধ করে দুপুরের খাবার খেতে গেলাম।খাবার শেষে টিভির রুমে একটু বসতেই ঘুমিয়ে গেলাম।ঘুম থেকে উঠে দেখি বিকেল হয়ে গেছে।প্রতিদিনের মতো গিটারটা কাঁধে নিয়ে চলে গেলাম ছাদে।
....................
...............
ছাদের এক কোণে আপন মনে গানের সুর তৈরী করার চেষ্টা করছি।আমার পাশে রাখা গানের ডাইরিটার দিকে মাঝে মাঝে তাকিয়ে মৃদু সুরে গান গাওয়ারও চেষ্টা করছি। তবে হচ্ছে না আর ভালোও লাগছিল না তাই উঠে রুমে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করলাম।এর মাঝেই কেউ বলে উঠলো,"গানের কথাগুলো সুন্দর ছিল।আরেকটু থেকে যেতে পারতেন।আমার খুব ভালো লেগেছে কথাগুলো।" আমি পেছনে ফিরে দেখি একটা মেয়ে আমার দিকে তাকায় আছে।
আমি বললাম,"আমায় কিছু বললেন?"
মেয়েটি বললো,"হ্যাঁ! আপনাকেই বললাম।কারণ ছাদে আমি ব্যতীত আপনিই আছেন।আর গানও আপনিই করছিলেন।"
আমি বললাম,"sorry!আসলে আমি গান নিজ ইচ্ছায় করি।অন্য কারো ভালো মন্দ আমার কাছে matter করে না।"
এই কথা বলে মেয়েটাকে আর বলার সুযোগ না দিয়ে সোজা রুমে চলে আসলাম।কিছু ভালো লাগছিল না তাই মাকে ডেকে বললাম,"মা রাতে খাব না।আমার ভালো লাগছে না।তাই রাতে যেন খেতে ডেকো না।"
তারপর একটা ঘুমের টাবলেট খেয়ে শুয়ে পরলাম।।
....................
...............
প্রতিদিনের মতো ঘুম ভাঙ্গে মাঝ দুপুরে।বিছানা থেকে উঠতেই বিছানার পাশের ছোট টেবিলে একটা চিরকুট লক্ষ্য করলাম।চিরকুটে লিখাছিল,"বেশি বেলা করে ঘুমোতে নেই।শরীর খারাপ করবে।কাল থেকে সকালে উঠার চেষ্টা করবেন।"
আমি চিরকুটটা দেখে মাকে ডাক দিলাম।
মা এসে বললো,"কি হয়েছে?এতো জোড়ে ডাকছিস কেন?"
আমি বললাম,"মা এই চিরকুট কে রেখেছে আমার টেবিলে?"
মা বললো,"আমি কি জানি।সারাদিন কাজের ফাঁকে এসব দেখার সময় কই।হয়তো তোরই কোন বন্ধু রাখছে।"
আমি বললাম,"আচ্ছা,ঠিক আছে।তুমি এখন যাও।"
চিরকুটটা টেবিলের ড্রয়ারে রেখে ফ্রেশ হতে গেলাম।ফ্রেশ হয়ে বের হতেই মা কফির মগ নিয়ে রুমে এসে মগটা আমায় দিতে দিতে বললো,"সন্ধ্যায় রিতুদের বাসায় দাওয়াত আছে তুই তৈরী থাকিস।তোর বাবা এলে এক সাথে যাব।"
আমি বললাম,"মা,আমি কোথাও যাচ্ছি না।আর এই রিতু কে?"
মা বললো,"সারাদিন রুম থেকে বাহিরে যাস না।আর গেলেও তো কোন খোঁজ খবর রাখিস না।তাহলে কি ভাবে মানুষকে চিনবি।রিতুকে তুই তো চিনবি না।আরে আমাদের তৃতীয় তলাতে নতুন ভাড়া আসছে।খুব ভালো পরিবার।সন্ধ্যায় গেলেই বুঝবি।"
আমি বললাম,"মা,তোমাদের যা খুশি কর।দয়া করে আমায় জড়িয়ো না।"
মা বললো,"তাহলে তুই যাবি না?"
আমি বললাম,"না মা।"
মা আর কিছু না বলে চলে গেল।
....................
...............
সন্ধ্যার পর পরই বাবা-মা দাওয়াত খেতে চলে যায়।আমি বাসায় একায় ছিলাম।ঘণ্টা তিনেক পর কলিং বেলটা বেজে উঠল।বাবা-মা আসছে ভেবে দরজা খুলতে গেলাম।দরজা খুলে দেখি একটা মেয়ে খোলা চুলে উল্টো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আমি বললাম,"কে?"
মেয়েটি আমার দিকে ফিরে বললো,"আমি সুমাইয়া জান্নাত রিতু।আপনাদের বাসার তৃতীয় তলায় থাকি।আমি একটা প্রাইভেট ভার্সিটিতে আইন নিয়ে পড়ছি দ্বিতীয় বর্ষ।"
আমি বললাম,"তো, আমি কি করব?"
রিতু বললো,"কিছু করতে বলিনি রাফি সাহেব।Aunty আমায় পাঠিয়েছে। তার রুমে একটা প্রয়োজনীয় জিনিস ছাড়া পড়েছে।তা নিতে এসেছি।"
আমি বললাম,"ও,আচ্ছা আসুন।তবে আপনি আমার নাম কীভাবে জানলেন?"
রিতু বললো,"আপনার সাথে দ্বিতীয় বার দেখা।আর নাম জানবো না।এইটা কোন কথা হইলো।"
এরপর রিতু বাসায় ঢুকে সোজা আমার রুমে চলে গেল।
আমি দ্রুত রুমে গিয়ে বললাম,"এইটা আমার রুম।আপনার ভুল হয়েছে।পাশের টা মায়ের রুম।আপনি পাশেরটাই যান।"
রিতু বললো,"আমি ঠিক রুমেই আসছি।আপনি ফ্রেশ হয়ে তাড়াতাড়ি আমার সাথে চলুন। সবাই আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।আর আমি আপনার জন্যই এসেছি।"
আমি বললাম,"মানে কি?"
রেগে রিতু বললো,"বাংলা বুঝেন না আপনি?আমার সাথে আপনি আমাদের বাসায় যাবেন এখন বুঝেছেন।"
আমি বললাম,"কোথাও যাচ্ছি না আমি।আপনি এখন আসতে পারেন।"
রিতু বললো,"ভালোয় ভালোয় যাবেন নাকি আঙ্গুল বাঁকাবো।"
আমি বললাম,"কি বলেন এগুলা?"
রিতু বললো,"ঠিকই বলি।আপনি ভালোয় ভালোয় না গেলে কিন্তু আমি চিল্লাচিল্লি শুরু করব।তারপর কি হবে বুঝতেই পারছেন।"
আমি বললাম,"আচ্ছা আচ্ছা আমি যাব।"
রিতু বললো,"এইতো ভদ্র ছেলে।"
অনেকটা রেগে আছি। অপরিচিত দেখে কিছু না বলে সব মেনে নিয়ে আমি ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে আসলাম।তারপর রিতুকে বললাম,"চলুন।"
রিতু বললো,"হ্যাঁ, চলুন।"
অতঃপর রিতুর সাথে রিতুদের বাসায় ঢুকলাম।
....................
...............
রিতুর সাথে আমায় দেখে আমার বাবা-মা অবাক।কারণ আমি কারো কথা শুনি না।আর আমার মতামত কখনো বদলায় না।তাবুও বাবা-মা সহ সবাই খুশি।তারপর খাবার পরিবেশনা করা হয়।আমি খাবার খেয়েই চলে আসি।রুমে শুয়ে থেকে মেয়েটার ব্যবহারের কথা চিন্তা করি।প্রচন্ড রাগ লাগছে।ভেবে কিছু না পাওয়ায় ঘুমিয়ে যাই।
ঘুম থেকে উঠেই গতদিনের মতো আজও একটা চিরকুট চোখে পড়ে।মসৃণ ভাবে ছোট্ট করে চিরকুটটায় লিখা ছিল,"দুঃখিত!"
আমি চিরকুটটার কিছুই বুঝতে পারি না। আজ আর মাকে ডাকি নি।শুধু চিরকুটটা পড়ে ড্রয়ারে রেখে দেই।কিন্তু চিরকুটটা রাখে কে এই প্রশ্নটা মাথা থেকে যাচ্ছে না। পর পর দুই দিন দুইটা চিরকুট রেখে গেল আর বুঝতে পাড়লাম না।কে এমন আছে যে সরাসরি কথা বলতে ভয় পায়।মাথায় তো আসছে না এমন কারো নাম।আমার সাথে হচ্ছে টা কি? এক দিকে এই চিরকুট আর অন্যদিকে গতকাল রাতে তিন তলার রিতু নামের সেই মেয়েটির ব্যবহার।কোন কিছুই মেনে নেয়ার মতো নয়।মন ভালো না থাকায় আজ বিকেলে গিটারটা নিয়ে ছাদে গিয়ে নিশ্চুপ হয়ে বসে থেকে নিজের সাথে ঘটা বিষয়গুলো নিয়ে ভাবছি।এর মাঝে কেউ বলে উঠলো,"চুপ কেন? গান কই?"
তাকিয়ে দেখি রিতু মেয়েটি আমার পাশে।তাই রাগ আর ধরে রাখতে পারলাম না তাই সব রাগ মেয়েটির উপরে ঝারার জন্য মেয়েটির উদ্দেশ্যে বললাম,"সমস্যা কি আপনার?আমি কি করব না করব সেইটা কি আপনার কথা মতো করতে হবে?আপনি কে আমার? আপনি কি আমার কেউ হন যে আপনাকে সবসময় সবকিছু জানাতে হবে।আমি মেয়েদের সম্মান করি বিধায় গতকাল আপনার কথা শুনেছি।তাছাড়া আমি যা বলি তাই করি।আর ভুলেও আমার সামনে আসবেন না।"
এসব বলে মেয়েটির দিকে তাকায় দেখি মেয়েটি কাঁদতেছে। তাই আর ছাদে দাঁড়ায় না থেকে সোজা রুমে চলে আসলাম।
....................
...............
রুমে এসে মেয়েটির কাঁন্নার কথা মনে হলো।এখন ভেবে খারাপ লাগছে।মনের ভেতরে অনুশোচনা কাজ করল।মন বলছে মেয়েটির কাছে মাফ চাওয়া উচিৎ।তাই ঠিক করলাম আগামীকাল বিকেলে রিতুর কাছে মাফ চাইবো।এসব ভাবতে ভাবতে রাতে খেতে আর ইচ্ছা করলো না তাই রুমে বসে থেকে সময় পার করছিলাম।নিজের অজানায় এক সময় ঘুমিয়ে যাই।ঘুম থেকে চোখ খুলে দেখি আজও সেই চিরকুট। চিরকুটে লিখা,"তোমার গানের কথা এতো সুন্দর, গানের সুর এতো মিষ্টি।কিন্তু তুমি এমন কেন বন্ধু?"
চিরকুটে ভাসমান শব্দগুলো আমার খুব অদ্ভুদ লাগলো।কথাগুলো কিছুটা রিতুর সাথে মিলে যাচ্ছে।তাহলে কি রিতুই প্রতিদিন চিরকুট রেখে যায়।কিন্তু রিতু যেমন মেয়ে ও তো এমন করার মতো নয়।আর গতকাল যে ব্যবহারটা করেছি মেয়েটির সাথে তারপর এমন করার কোন প্রশ্নই আসে না।তাহলে কে? না কিচ্ছু মাথায় আসছে না।সব সমাধান রিতুই দিতে পারবে।যে করেই হোক মেয়েটির সাথে দেখা করতেই হবে।মেয়েটির সাথে করা ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চাইবো এবং চিরকুট নিয়ে প্রশ্ন করবো।
কিন্তু রিতুর সাথে যোগাযোগ করবো কি ভাবে?আমি কি ওদের বাসায় গিয়ে রিতুর খোঁজ করব নাকি বিকেলের জন্য অপেক্ষা করব।কারণ প্রতিদিনই তো আমি ছাদে যাওয়ার পর সেখানে ও আসে।তাহলে বিকেলের জন্য অপেক্ষা করাই উপযুক্ত হবে।তাই বিকেলের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।আজ বিকেলে একটু তাড়াতাড়ি ছাদে চলে গেলাম।কিন্তু রিতুর কোনো দেখা পেলাম না।মনটা বেশ খারাপ হয়ে গেল।মন খারাপ নিয়েই বাসায় আসলাম।বারান্দায় গিটার নিয়ে নিশ্চুপ বসে আছি।হঠাৎ মা এলো বারান্দায়। আমায় নিশ্চুপ দেখে মা বললো,"কিরে কোনো সমস্যা?"
আমি বললাম,"না মা।এমনি কিছু না।"
মা বললো,"কফি খাবি?"
আমি বললাম,"খাওয়া যায় যদি তুমি দাও।"
মা বললো,"আচ্ছা।আমি একটু পর দিয়ে যাচ্ছি।"
আমি বললাম,"আচ্ছা।"
কিছুক্ষণ পর মা কফি দিয়ে যায়।কিন্তু আমার কিছু ভালো লাগছে না।অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকলাম।তবে বারান্দায় ঘুমিয়ে যাব আগে ভাবি নি।সকালের রোদে ঘুম ভাঙ্গার পর বুঝলাম আমি গতরাতে বারান্দায় ঘুমিয়েছিলাম।মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম।
....................
...............
রুমে এসে তো আমি অবাক।আমার বিছানার পাশে গরম কফি আর সাথে চিরকুট।লিখাছিল,"আজ ঘুমন্ত অবস্থায় দেখে আবারো প্রেমে পড়ে গেলাম।তুমি এমন কেন বলতো?কখনো তোমার গানের প্রেমে পড়তে হচ্ছে আবার কখনো তোমার ঘুমন্ত নিষ্পাপ চেহারার।তবে তুমি কিন্তু আজ অনেক আগে ঘুম থেকে উঠেছো।এজন্য তোমার উপহার এক কাপ কফি।"
কৌতূহলী হয়ে কফির মগে চুমুক দিলাম।এক অন্য ধরণের স্বাদ পেলাম।মায়ের হাতের কফি এইটা নয় তা আমি নিশ্চিত।তবুও মাকে জিজ্ঞাসা করা প্রয়োজন।কিন্তু বাসায় মাকে তো পেলাম না।কফিটা শেষ করে চিরকুটটা ড্রয়ারে রেখে ছাদে গেলাম।ছাদে যেতেই দেখলাম রিতু দাঁড়ায় আছে।আমি পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম।আমি দাঁড়াতেই রিতু চলে যেতে লাগলো।তখন আমি বললাম,"আমি কাউকে চলে যেতে বলি নি।কেউ চাইলে থাকতেই পারে।আমার কোনো সমস্যা নেই।"রিতু কিছু না বলে আবার যেতে লাগলো। আমি এবার একটু জোড়েই বললাম,"sorry রিতু।গতকালের ব্যবহারের জন্য।আমার এমন ব্যবহার করা উচিত হয় নি।please ক্ষমা করে দাও।"
কথাগুলো শেষ করে দেখি মেয়েটির চোখে পানি।আমি কিছু বলতে যাব ঠিক তখনি দৌড় দিয়ে নিচে চলে যায়।আমার খুব খারাপ লাগে মেয়েটির চোখে পানি দেখে।এরপর হঠাৎ করেই রিতুকে নিয়ে ভাবতে শুরু করি।কিছুদিন পর রিতুর ভাবনায় সারাদিন ডুবে থাকি।তার কান্নাজড়িত মায়াবী চাহনি তার উপর আমাকে দুর্বল করে ফেলেছে।তার কণ্ঠের কথাগুলো সবসময় কানে বাজে।আর যেন মনে হয় সারাজীবন সেই কণ্ঠের কথা শুনি।কিন্তু কোন ভাবেই রিতুর সাথে যোগাযোগ করতে পারি না।দিনের পর দিন যায় কিন্তু রিতুর খোঁজ নেই।সামনাসামনি দেখা হলেও রিতু আমায় দেখা মাত্র না দেখার ভান করে চলে যায়।জানি না মেয়েটি কি চায়।তবে আমি ওকে চাই।ওর জন্য আমার সব এলোমেলো হয়ে গেছে।কিন্তু তবুও সে বোঝে না।সত্যিই বোঝে না নাকি না বোঝার অভিনয় করছে।কিছুই জানি না আমি।তবে আমি এতটুকু জানি মেয়েটির প্রেমে পড়েছি।সারাজীবন তাকে পাশে দরকার।আর এজন্য কথা গুলো তাকে জানানো দরকার।আগামীকালই রিতুর মুখোমুখি হব।আর সব জানাবো।তারপর যা হবে দেখা যাবে।এসব ভেবেই রাতে ঘুমিয়ে গেলাম।
....................
...............
ঘুম থেকে উঠেই দেখি সেই চিরকুট।লিখাছিল,"বন্ধু তুমি চাইলেই আমায় পেতে পার খুঁজে।যদি খোঁজ তুমি ভালোবেসে।"
প্রতিদিনের রুটিন হয়ে গেছে ঘুম থেকে উঠে চিরকুট পড়া।গত কয়েক মাসে আমার সাথে যাই হোক না কেন তবে চিরকুট পাওয়া কোনদিন বাদ যায় নি।অনেক চেষ্টা করেও চিরকুটের আড়ালে থাকা মানুষটিকে ধরতে পারি নি।হয়তো কোন একদিন ধরবো।এর মাঝে মা এসে বাজারের লিস্ট আমার দিকে দিয়ে বললো,"নাস্তা করে গিয়ে জিনিস গুলো এনে দিস তো।"
আমি বললাম,"টেবিলে রাখো।পড়ে দেখবো নি।"
মা বললো,"না,তুই এখনি আমার সামনে একবার দেখে নে।"
আমি বললাম,"আচ্ছা দাও।"
মা বললো,"এই নে ধর।"
লিষ্ট হাতে নিয়ে চোখ বোলাতেই আমি অবাক।লিখাটা খুব চেনা চেনা।ঠিক চিরকুটের লিখার মতো।আনন্দে মাকে জিজ্ঞেস করলাম,"মা,লিখাটা কার?কে লিষ্টটা করে দিয়েছে?"
মা বললো,"আর বলিস না।সকালে রিতু আসছিল ওই লিষ্টটা করে দিয়েছে।"
আমি বললাম,"মা তুমি আগে বলবে না এইটা রিতুর লিখা।আর রিতু আসছিল তুমি আমায় আগে বল নি কেন?"
মা বললো,"কেন রে তোকে আগে কেন বলতে হবে।রিতু তো প্রতিদিনই সকালে আমাদের বাসায় আসে।"
আমি বললাম,"আচ্ছা।তুমি থাকো আমি আসছি।"
মা বললো,"কই যাচ্ছিস?"
আমি মাকে শুধু এতটুকু বললাম," মা তোমায় এখন এতো বলার সময় নেই।তবে এতটুকু জেনে রাখো তোমায় কফি বানিয়ে খাওয়ানোর জন্য কোন একজনকে নিতে যাচ্ছি।"
কথাটুকু বলে তিনতলার দিকে দৌড় দিলাম।রিতুদের বাসার দরজার কাছে এসে থামলাম।
....................
...............
কলিং বেল দিতেই রিতুর মা দরজা খুললো।
আমি বললাম,"আন্টি বাসায় রিতু আছে?"
রিতুর মা বললো,"হ্যাঁ বাবা আছে।তবে ও তো একটু ছাদে গেছে।"
আমি বললাম,"ও আচ্ছা আন্টি ঠিক আছে।আমি ছাদে যাচ্ছি।"
রিতুর মা বললো,"কোন সমস্যা বাবা?তুমি ভেতরে আসো।"
আমি বললাম,"না আন্টি কোন সমস্যা নয়।রিতুর সাথে একটু দরকার আছে।আন্টি পরে কোন একদিন বাসায় আসবো।"
রিতুর মা বললো,"আচ্ছা ঠিক আছে বাবা।তাহলে তুমি ছাদেই যাও।"
আমি বললাম,"আচ্ছা আন্টি এখন আসি।"
কথাটা বলেই ছাদের দিকে দৌড়।ছাদে গিয়ে রিতুর কাছে দাঁড়ালাম।আমাকে দেখে রিতু চলে যেতে লাগলো।তবে পারলো না।আমি ওর হাতটা ধরে ফেলেছি।হাতটা ধরে রেখেই বললাম,"কোথায় যাচ্ছ?"
রিতু বললো,"হাত ছাড়ুন। আপনার সামনে থেকে চলে যাচ্ছি।"
আমি বললাম,"আমার উপর এখনো রেগে আছো।আমাকে কি ক্ষমা করা যায় না! দয়া করে ক্ষমা করে দাও।"
রিতু বললো,"আমি কে ক্ষমা করার? আমি কি আপনার কেই হই?"
আমি বললাম,"আমার কথা আমাকেই ফেরত দিচ্ছো।খুব অভিমান তোমার। গত কয়েকটা মাস তুমি আমায় কষ্ট দিয়েছ।তবুও শান্তি হয় নি।আর জানতে চাইছো না তুমি আমার কে।তাহলে শোন, তুমি সেই যাকে কখনো ভুলতে পারি না।যার ভাবনায় বিভোর থাকি।যার সুন্দর চাহনি এক দৃষ্টিতে দেখতে চাই।যার মায়াবী কণ্ঠ সারাজীবন শুনতে চাই।"
রিতু বললো,"কিন্তু আমি চাই না।"
আমি বললাম,"তার দরকারও নেই শুধু তুমি পাশে থেকো তাহলেই হবে।ভালোবাসার মানুষ পাশে থাকলেই শান্তি।"
রিতু বললো,"কে ভালোবাসার মানুষ?"
আমি বললাম,"কে আবার তুমি।তুমিই আমার ভালোবাসার মানুষ।তোমাকে খুব ভালোবাসি রিতু।নিজের থেকেও বেশি।"
ছলছল চোখে রিতু বললো,"আমি বাসি না।"
আমি বললাম,"তুমি মিথ্যা বলছো।তুমি অবশ্যই আমায় ভালোবাসো।যদি নাই ভালোবাসতে তাহলে প্রতিদিন কেন আমার টেবিলে চিরকুট রেখে আসতে? কেন কফি বানাতে আমার জন্য? কেন আমি ঘুমিয়ে থাকতে আমার রুমে যেতে?কেন আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকায় থাকতে?"
রিতু বললো,"কই কখন? আমি না অন্য কেউ।"
আমি বললাম,"তুমি মিথ্যা আর কতো বলবে।তুমি কি ভেবেছিলে তুমি দূর থেকো ভালোবেসে যাবে আর আমি বুঝতে পারবো না।এতোটা বোকাও আমি নই।তবুও প্রমাণ হিসেবে এই নাও তোমার লিখা বাজারের লিষ্ট আর এই নাও চিরকুট।এখনো বলবে তুমি না।"
মাথা হেলে অঝরে কান্না করছে রিতু।কিছু বলছে না।আমি কাছে গিয়ে হাত দিয়ে রিতুর মাথাটা উপরে তুলে চোখ মুছে দিয়ে বললাম,"এই পাগলি কাঁদতেছে কেন? আমি জানি তো তুমি আমায় ভালোবাসো।আগে আড়ালে ভালোবাসতে এখন প্রকাশ্যে ভালোবাসবে।"
এরপর রিতু কাঁদতে কাঁদতে আমায় জড়ায় ধরে।আর বলতে থাকে,"তোমায় ভীষণ ভালোবাসি রাফি। তোমায় ভীষণ ভালোবাসি।তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না।"
আমি বললাম,"আমিও তোমাকে ছাড়া এক মুহূর্তের জন্যও বাঁচবো না রিতু।তুমি আমার সব। তুমি আমার গান,তুমিই আমার গিটারের সুর।তোমাকে ছাড়া ওসব ছন্দহীন।"
রিতু বললো," সত্যিই?"
আমি বললাম,"হ্যাঁ,সত্যি।"
রিতু বললো,"তাহলে সেদিন শোনালে না কেন?"
আমি বললাম,"ভুল হয়ে গেছে।এই কান ধরছি আর এমন হবে না।তুমি এখন থেকে যখন চাইবে তখনই শোনাবো।"
মৃদু হাঁসি দিয়ে রিতু বললো,"হইছে হইছে আর কান ধরতে হবে না।আমায় শক্ত করে জড়ায় ধরো তাহলেই হবে।"
আমি বললাম,"ধরতে পারি এক শর্তে।"
রিতু বললো,"কি শর্ত?"
আমি বললাম,"যদি কেউ কফি খাওয়ায় তবে আমি তাকে জড়িয়ে ধরতে পারি।"
রিতু বললো,"নিচে গিয়েই ভালো ভাবে কফি বানায় দিবো নি তোমাকে।"
আমি বললাম,"আমি তো ওই কফি চাই না আমি অন্য কফি চাই।"
রিতু বললো,"খুব দুষ্টু হইছো।অন্য কফি এখন কপালে নেই।সময় হলেই ওই কফি পাবা।তার আগে নয়।"
আমি বললাম,"ঠিক আছে।দিতে হবে না।আমি গেলাম।"
রিতু বললো,"ওই কই যাচ্ছ?"
আমি বললাম,"দেখি অন্য কেউ কিছু দেই কি না।"
রেগে গিয়ে শার্টের কলার ধরে রিতু বললো,"তুমি যদি অন্য কারো দিকে তাকাও তোমার খবর আছে।আর অন্য কারো হওয়ার চেষ্টা করলে আগে তোমায় শেষ করব তারপর নিজেকে।কথাটা মনে রেখ।" কথাটা বলেই কেঁদে দিল মেয়েটা।
আমি রিতুকে শক্ত করে আপন বুকে জড়িয়ে ধরে বললাম,"আমার বাবুটা রাগ করেছে। আমি তো মজা করছিলাম।আমি তো শুধু আমার রিতু বাবুটাকেই ভালোবাসি।আর ভালোবেসে যাব।আর কান্না করে না।"
আমার কথা শুনে কান্না থামিয়েও অনেকক্ষণ রিতু আমায় জড়িয়ে ধরে থাকলো।আমিও ওকে ছাড়ি নি।আর এভাবেই সকালের রোদটুকু দুজনে ভাগাভাগি করছিলাম নতুন ভালোবাসার বন্ধনে।।
..............
লেখকঃরাফি উল হাসান(#কাব্যিক_কবি)
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ