#গল্প : প্রথম সন্তান। (১ম পর্ব)
লেখা: Umme Nipa
ডাক্তার বান্ধবীর কল পাওয়া থেকেই মনটা ভিষন রকম
অস্থির লাগছে।
আমি মা হতে যাচ্ছি, খবরটা খুশির তবুও আমার কেন যেন
খুশি লাগছেনা।
বার বার হু হু করে কাঁন্না আসছে।
আচ্ছা আমি কি তাহলে মা নামের কলঙ্ক?
মায়েরা কি এমন হতে পারে?
হুম আসলেই আমি মা নামের ডায়নি।
তা না হলে আমার আনন্দ হচ্ছেনা কেনো!
আতিক এর সাথে বিয়ের ২বছর হল।
আতিক ছেলে হিসেবে শুধু ভালোই নয় খুব ভালো।
তবে বর হিসেবে কতটা ভালো বলা যায় তা আমি মাপতে
পারিনা।
হয়তো মাপার চেষ্টা করিনি।
আচ্ছা,আতিক কে কি বলবো ও বাবা হতে যাচ্ছে?
না না...এ কথা বলবো না..
এ কথা শোনাতে যাওয়া অভিশাপ এর,
আমি যে খুব অপয়া..অপয়াদের সুখের খবর দিতে নেই...
কিছুক্ষন পরেই কলিংবেল এর শব্দ।
আতিক: কি বেপার দেরী হলো কেন দরজা খুলতে?
আমি:- এমনেই।
আতিক:- খাবার দেও,আমি ফ্রেস হয়ে আসছি।
দুজন ই খাবার খাচ্ছি।আমার কেন যেন গলা দিয়ে খাবার
নামছেনা।
আচ্ছা,ও তো সন্তান এর বাবা,ওর ১০০%অধিকার আছে তা
জানার।
আমি: আতিক একটা কথা বলার ছিল।
আতিক:- হুম।
না না কি করছি আমি,জেনে বুঝে আমি আবার ওকে এসব
বলছি।
আতিক:- কি হলো?
আমি:- না,কি যেন বলবো..ভুলে গিয়েছি।
আতিক:- আজ খুব চিন্তিত লাগছে তোমাকে।শরীর
খারাপ?
আমি:- না আমি ঠিক আছি।
রাত ৩টা, ঘুম আসছেনা কিছুতেই।বারান্দায় গিয়ে দেয়াল
এর সাথে গা এলিয়ে বসলাম।
বাইরে হাওয়া দিচ্ছে।সেদিন ও এমন বাতাস ছিল।আমি বারান্দায় কারো অপেক্ষায় ছিলাম।
সে অপেক্ষা আজ ও ফুরোচ্ছেনা।
পেট এ হাত দিয়ে আমার বাচ্চার অস্তিত্ব অনুভব করতে
চাচ্ছি।
চোখ টা লেগে এলো, হঠাৎ মনে হলো কে যেন মা বলে
কাঁন্না করছে,
চোখ খুলে দেখি আশে পাশে কেউ নেই।
বুকের ভিতর কেমন যেন মোচর দিল।
বার বার মনে হচ্ছে,আমায় কি আসলেই মা বলে ডাকবে আমার সন্তান?
মা ডাক শোনার ইচ্ছে জাগাতেও যে ভয় হয় খুব।
সবার মা হতে নেই যে।
সন্তান এর অস্তিত্ব অনুভব করা যে আমার জন্য পাপ।
বাইরের বাতাসে আমার শরীর জুড়ায় কিন্তু আমার বুক
জুড়ায় না।
বুক যে আজীবনের জন্যই খালি।
সে শূন্যতাকেই কেউ পূরন করার নেই।
মাঝে মাঝেই আমি আমার চারপাশে বাচ্চা মেয়ে দেখতে
পাই।আমি মুখ ফিরিয়ে নেই তবুও বাচ্চা আমার চারপাশে
থাকে।
মাঝে মাঝে বাচ্চা মেয়ে আমায় খুব উপহাস করে।আমার উপর রাগ করে তাকিয়ে থাকে।
তখন আমার ওর চোখে চোখ রাখতে ভয় হয় খুব।
মা হতে আমি যে চাইনি কখনো। সবাই কি আসলেই মা হতে পারে?মা হবার ইচ্ছেযে মরে গেছে অনেকদিন আগে..
চলবে...
#গল্প: প্রথম সন্তান।(২য় পর্ব)
লেখা: Umme Nipa
আতিক বারান্দায় এলো,
আতিক:- কি হয়েছে,এখানে কি করো?
আমি: ঘুম আসছেনা।
আতিক: বারান্দায় বাতাস অনেক,ঠান্ডা লাগবে।এই বলেই চলে গেল।
ও এমন ই।প্রয়োজনের তুলনায় বেশি বাড়াবাড়ি করেনা আবার কম ও না।যেটুক করলে মানুষটার কোন দোষ ধরা না যায় সেটুক ই করে।
ও পারতো আমার হাত ধরে নিয়ে যেতে। কিন্তু ও তা করেনি।
তা আমি আশাও করিনা।যে করার সে ঠিক ই করতো।
একবার রাত এ খাচ্ছিলাম না।সে সারারাত খাবারের প্লেট নিয়ে আমার আশে পাশে ঘুরেছে।শেষ মেষ আমি না খেয়ে পারিনি।
এখন অনেক রাত ই আঁধ-পেটা যায়। কেউ খেয়াল করেনা।
সকাল হতেই মায়ের কল...
ভাবছি আমি যে মা হবো তা মাকে ও জানাবো না।মায়ের প্রতিও আমার অনেক রাগ জমে আছে।
-হুম মা বলো..
মা : সিমু,কি করিস মা?
আমি: মা ও কেমন আছে?
মা: ভালো আছে, ও এখন সব কথা স্পষ্ট বলতে পারে।
আমি: মা, ও কি মা বলে ডাকতে পারে?
বলে কান্না থামাতে পারছিনা।
আচ্ছা মা,ও কি আমার মতন দেখতে হয়েছে?
আমার উপর কি খুব রাগ ওর?
আমাকে কি ঘৃনা করে?
মা: সিমু ও তো তোকে চিনেনা,ঘৃনার কথা আসবে কেন?
আচ্ছা জামাই বাবা কই?
আমি: মা ওকে একদিন আনবা আমার কাছে?
মা: সিমু জামাই বাবা কি ঘরে?
আমি: হুম,আজ অফিস নেই।
মা: তুই রাখ তাহলে,এসব কথা পরে হবে।
আমি: আর কতো মা?
কিছু ভাঙার ভয়ে কিছু মেরে ফেলা এসব কেমন নিয়ম মা?
আজ থেকে ভাববা,সিমু ও মারা গেছে,আর কল দিবেনা আমায়।
মা: কি বলছিস সিমু?তুই ছাড়া আমাদের কে আছে?
আমি: আর আমার কে আছে মা?
আতিক: সিমু আমার মানিব্যাগ দেখেছো?
তাড়াহুড়া করে চোখের পানি মুছে ফোন কেটে দিলাম।
আমি: দাড়াও খুঁজে দিচ্ছি।
বিকেল হয়ে এলো...
হঠাৎ মনে হলো আজকের তারিখ এর কথা...
২৪সেপ্টেম্বর, ২০১৩।
দিনটি আমি ভুলতেই বসেছি।
লাল শাড়ি, বৌ এর সাজ,চারদিকে রোসনাই..কতো আলো।
সানাইয়ের শব্দ,আজ ও সব তাল আমার মনে আছে।
মনে পড়লেই গা কাটা দেয়।
রায়হান এর সাথে সেদিন আমার বিয়ে হয়েছিল।ভালোবেসে পরিবারের মতেই বিয়ে করেছিলাম।
৭বছর সম্পর্কর পর বিয়ে,দুজনের ই খুব অপেক্ষার সমাপ্তি ছিল বিয়েটা।
আজ ও ২৪সেপ্টেম্বর,দিনগুলি কি ভাবে ঘুরে ফিরে আসে,শুধু দিনের সাথে মানুষ টি আমার পাশে নেই।
রায়হান এর একখানা ছবিও নেই আজ আমার কাছে।
শুধু সেদিন এর লাল বেনারসি আছে এখনো।
আলমারি থেকে শাড়ি নামালাম,আজ ও শাড়ি নাকের কাছে নিয়ে জোরে নিশ্বাস নিলে রজনীগন্ধা ফুল এর ঘ্রান পাওয়া যায়।
তবে ঘ্রান টা আর আগের মতন প্রবল আসেনা।
দিনে দিনে হয়তো একেবারেই বিলীন হয়ে যাবে।
শাড়ি জড়িয়ে ধরলে আজ ও রায়হান কে অনুভব করতে পারি।
রায়হান কই গেলা তুমি,না আছে তোমার কোন ফোন নম্বর,না আছে চিঠি দেয়ার ঠিকানা, আমি কি করে তোমার সাথে যোগাযোগ
করি!
কতদিন তোমার মুখে সিমু নাম শুনিনা।
কতদিন তোমায় দেখিনা।
এতো বড় দুনিয়া,তোমার মতন কারো ঘ্রান আমি পাইনা।
তুমি জানো, তোমার প্রিয় খাবারগুলি আমি আর খেতে পারিনা।
তুমি তোমার সাথে আমার প্রিয় সব কিছুই নিয়ে গেছো, নিয়ে গেছো আমার যত ভালোবাসা,ভালোথাকার ইচ্ছে,
শুধু রেখে গেছো আমায়,আর রেখে গেছো তোমার দেয়া বড় সম্পদ,যা তোমার ও জানা হয়নি।
তোমার দেয়া সম্পদ আমি সামলে রাখতে পারিনি রায়হান।
আমি শুধু বাজে বউ ই নই রায়হান,বাজে মা ও....
চলবে...
#প্রথম সন্তান(৩য় এবং শেষ পর্ব)
লেখা: Umme nipa
খুব ভালোই কাটছিল আমাদের সংসার।
রায়হান খুব রশিক মানুষ ছিল।সারাদিন অফিস করেও আমার জন্য চকলেট আনতে ভুলতোনা।
আজ ৩বছর হয়ে গেছে আমার আর চকলেট এর অপেক্ষা করতে হয়না।
১বছরের মাথায় ই আমি মা হতে চলেছিলাম।
২০১৪,১৮ই নভেম্বর..
আমার এই ডাক্তার বান্ধবী ই খবর টা দিয়েছিল।
রায়হান কে জানাবো বলে অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় ছিলাম।
সারাবেলা বার বার বাইরে তাকাচ্ছিলাম।
ভাবতেছিলাম,ও কথা টা শুনে কি লজ্জা পাবে?
আবার মনে হচ্ছিল,ও খুশিতে আমায় জড়িয়ে ধরবে।
বার বার আয়নার সামনে গিয়ে প্রাকটিস করছি,কি করে রায়হান কে বলবো, তুমি বাবা হতে যাচ্ছো।
-এই যে মি. পিচ্ছি সিমু আসছে।
ধূর এভাবে না।
-রায়হান একটা কথা ছিল।
ডাক্তার বলেছে আমার মারাত্মক রোগ হয়েছে..
জানি ও ভয় পেয়ে যাবে..
তখন ই হেসে বলবো, আমায় মা হওয়া রোগে পেয়েছে,হি হি হি..
না..না এভাবে কেউ খুশির সংবাদ দেয়?
বলবো,এখন থেকে আরেকটা চকলেট বেশি আনতে হবে..
আহ!কিন্তু সে কই?সে এখনো আসেনা।কাকে বলবো..!
ফোনটা সেই কখন থেকে বন্ধ করে রেখেছে..
মিটিং নাকি!
রাত ৯টা, মানুষটা রাত ৭-৮টায় চলে আসে।
হয়তো জ্যাম..
বোরিং লাগছিল খুব,তাই ওর পছন্দের রঙ এর শাড়ি পরে সাজলাম।
তবুও মশাই এর দেখা নেই...
ড্রয়িং রুম এ অপেক্ষা করতে করতে কখন যেন ঘুমিয়ে পরেছি।
কল আসার শব্দে ঘুম ভেঙে যায়, হয়তো রায়হান এর ফোন..
তড়িঘড়ি করে গিয়ে দেখি ওর বন্ধু সাইফুল এর কল।
-রাত ১২টা, এখন তার কল?হয়তো রায়হান কে ফোনে না পেয়ে..
>সাইফুল ভাই,আপনার বন্ধুর কান্ডটা দেখেন একবার, রায়হান এর ফোনে আমিও ট্রাই করছি।অফ পাচ্ছি।ও এখনো বাসায় আসেনি।
-ভাবি..
>কি হয়েছে ভাই?
-ভাবি আপনি তৈরী হন,আমি গাড়ি পাঠাচ্ছি।
>কই যাব? ও আপনাদের বাসায় এখন?ফোনটা ওকে দিন না।
-ভাবি এসে পরেন।বলে কেটে দিল।
গাড়ি আসলো।গাড়িতে যাচ্ছি, তবে রাস্তা তো সাইফুল ভাইয়ের বাসার দিকেনা।
-চালক কে বললাম,কই যাচ্ছি ভাই?
আফা এইতো এসে গেছি।
গাড়িটা হসপিটাল এর সামনে থামালেই আমার কলিজা শুকিয়ে গেল ক্রমশ।
বার বার ভয় হচ্ছে,এই বুঝি আমার সব গেল।
সামনেই সাইফুল ভাই দাড়ানো।
আমার মা -বাবাও দাড়িয়ে আছে।
কি হয়েছে! আচ্ছা রায়হান এর মায়ের কিছু হয়নিতো।
>মা কি হয়েছে?
মা আমায় জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো।
হসপিটাল এর ভিতরে যেতেই দেখি রায়হান এর মা ও বসে বসে কাঁদছে।
তখন আমার খেয়াল হলো,রায়হান কই?
চিৎকার দিয়ে ভিতরে গিয়ে দেখি,আমার রায়হান শুয়ে আছে।
সারাশরীর রক্তে ভেসে গেছে।মাথার এক পাশটা থেতলেই গেছে।
যে পাশে অফিস আসার আগে আমি চিরুনি দিয়ে সিথি করে দিয়েছিলাম,ঠিক সে পাশটাই পিশে গেছে।
রায়হান পাশে গিয়ে এতো ডাকি,সারা পাইনি ওর।
এতো গভীর ঘুম যে ওর ছিলনা কখনো। রায়হান তুমি যে তোমার সন্তান কে দেখে গেলেনা।ও কাকে বাবা ডাকবে?
ওই স্মৃতি ভুলতে চাই বার বার তবুও আমি পারিনা।
আমার গায়ের নীল শাড়ি সেদিন ওর রক্তে লাল হয়ে গিয়েছিল।লাল যে আমার খুব পছন্দের ছিল।
আমার পছন্দে যে বিষ আছে।
আমার যে কিছু পছন্দ থাকতে নেই।সব গ্রাস হয়ে যায়।
রাত হতেই মায়ের কল,
আমি বার বার কাটছি।সকালে বারন করলাম তবুও কল দিচ্ছে।
তার সাথে যে রাগ আমার ২বছর আগে থেকেই পোষা।
আমার সন্তান পৃথিবীতে আসার সাথে সাথেই মারা যায়।
তার ৬মাস এর মাঝেই আতিক এর সাথে আমায় বিয়ে দেয়া হয়।
বাবা অসুস্থ ছিলেন,মায়ের কাছে বোঝা হয়ে গিয়েছিলাম খুব।
মা বাবা আর আমায় নিয়ে ভাবুক তা আমি চাইনি তাই ই বিয়েটা করা।
কিন্তু সেইদিন থেকে নিজেকে ঘৃনা লেগেছিল।
বিয়ের ২মাস যেতেই আমি জানতে পারি আমার আর রায়হান এর সন্তান মারা যায়নি। সে বড় হচ্ছে অনাথ আশ্রম এ।
মা হয়ে আরেক মায়ের বুক খালি করতে আমার মায়ের বিবেক এ বাঁধেনি।
সে চেয়েছিল তার মেয়ে সুখে থাকুক।
আতিক জানতো রায়হান এর কথা,তবে আমার যে সন্তান আছে তা জানেনা।
জানলে হয়তো আমায় বিয়ে করতা না।
মা যে আমার সন্তান কে অনাথ করে দিয়েছে,সে যে আমায় ও মেরে ফেলেছে।
আমার সন্তান কে আমি আমার কাছে আনতে চাইনি।কারন ও হয়তো বেশ ভালো থাকবে।জানবে যে আমি নেই।
আমি চাইনি ও দেখুক ওর মা ওর বাবাকে ভুলে কি সুন্দর ঘর-সংসার করছে।
আমার প্রতি ভালোবাসা থাকুক,ওর ঘৃনা নিয়ে আমি কি করে সহ্য করতাম!
তবুও মাকে বলেছিলাম,আমায় একবার ওর কাছে নিয়ে যেতে, ওর ঘ্রান এ আমি রায়হান এর ঘ্রান পেতাম।
কিন্তু তাতে যদি ওর আমার প্রতি মায়া জন্মে যায়। ডায়নীর প্রতি যে মায়া জন্মানো ও পাপ।
মাকে যতবার বলেছি সে লোক জানাজানির ভয়ে আমায় নেয়নি।
আমি ওকে দেখলে নাকি সব ছেড়ে ওর কাছে চলে যাব।
তাই ভাবছি যেহেতু আমার সন্তান ই তার মাকে পেলনা,তাহলে আমার মায়ের ও আমায় পাওয়ার অধিকার নেই।
বিয়ের পর আমি আমাদের বাসায় যাইনি কখনো। এ নিয়ে আতিক এর ও প্রশ্ন ছিলনা।ও যায় প্রায় ই।
মা এই নিয়ে ১৮বার কল দিল।
বাবা অসুস্থ হয়ে পরেনিতো!
তা ভেবে কল দিলাম...
>কি হয়েছে?
মা কাঁদছে।
ফোনে কারো কাঁন্না শুনলেই যে আমার ভয় হয়।
>মা বাবা কই?
-রুম এ।
>কাঁদছো কেন?
-সিমু আমার নাতনী কে কারা যেন এ্যাডপ্ট নিবে।আমায় কল দিয়ে জানালো।
>তোমার নাতনী তো মারা গেছে মা।
-যা করেছি তোর ভালো চেয়েই।
>মা,আমার সন্তান এর কপাল দেখেছো?
ও অনাথ না মা,ঠিক ই কারো ভালোবাসা পাবে।শুধু আমি সাহস করে আমার বাচ্চাকে একদিন আদর করতেও পারলাম না মা।
আল্লাহ আমায় নেয় না কেন মা?
রায়হান এর মতন আমার গায়ের উপর দিয়ে ট্রাক যায় না কেন বলতে পারো..?
তারপর আর কিছু মনে নেই।চারপাশটা কেমন অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল।এমনটা হতো,আমার প্রথম সন্তান আসার আগেও।
চোখ খুলে দেখি,বিছানার পাশে আতিক বসা।
>সিমু কি হয়েছিল?
তোমার বান্ধবী এসেছিল,আমি ভয় পেয়ে ওকে খবর দিয়েছিলাম।
তার মানে ও জানতে পেরেছে,ও বাবা হতে যাচ্ছে।
>জানো সিমু আজ এতো খুশি আমি,বলে বুঝাতে পারবোনা।
আতিক আসলে বেপারটা আমি আগে জানতাম, বলবো বলবো করে বলতে পারিনি।
>সিমু ইতিহাসে এই প্রথম,বাবার কাছ থেকে মা জানার আগেই বাবা জেনে গেল সে বাবা হয়ে গেছে।হা হা হা..
আতিক, সন্তান তো হয়নি,হবে।আর হলে জানতে।আজ নয়তো কাল।
>তা তো আমার ২য় সন্তান।
মানে?
>মা ভিতরে আয়..
দরজার আড়াল থেকে গুটি গুটি পায়ে একটা বাচ্চা মেয়ে ভিতরে আসলো।
একদম পুতুলের মতন।
আমি: কে ও?
আতিক ওকে কোলে নিয়ে বলে,দেখ মা তোর মা পাগল হয়ে গেছে,নিজের মেয়েকে চিনতে পারেনা।
আরেহ,ও আমাদের প্রথম সন্তান।
আমি কিছুই বুঝতেছিনা আতিক...
বুক এর ভিতর ধড়ফড় করছে আমার।
>ওকে অনাথ আশ্রম এ রেখেছিলে কেন?
আমি কি তোমার কাছে মৃত ছিলাম?
আমার আর বুঝতে বাকি নেই।ও আর কেউ নয়,আমার প্রথম সন্তান।মেয়েটাকে কোলে জড়িয়ে ধরে বুকের সাথে শক্ত করে ধরলাম।
মা আমায় মাফ করে দে মা।
আমার বুকের মাঝের খালি জায়গা ভরে গেল মুহূর্তেই।
আতিক: সকালে মায়ের সাথে কথা বলার সময় আমি শুনতে পাই সব।
মানিব্যাগ চাওয়ার ভান করে রুম এ আসি।দেখলাম আমার কাছে লুকিয়ে গেছো।
তোমার বন্ধুকে কল দিয়ে মিথ্যে অভিনয় করি,ভাবলাম ও তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড, সব জানে।
বললাম,ইতি,সিমুর এতো বড় অতীত লুকিয়ে গেলে?এখন যদি ওকে ছেড়ে দেই?
ও ভয় পেয়ে বলে,ভাইয়া প্লিস এটা করবেন না,আন্টি এর ভয়েই ওর প্রথম সন্তান কে অনাথ আশ্রম এ রাখতেও সংকোচ করেনি।আর সিমু জানতো না।জানলে বিয়ে করতো না।বিয়ের পর আমি ই ওকে জানাই।
পরে ইতিকে নিয়েই গেলাম,বাবুকে এ্যাডপ্ট করলাম।
যেহেতু ইতি আর তোমার মা ওকে আশ্রম এ রেখে এসেছিল,তাই ঝামেলা হয়নি আনতে।
আতিক এর কাছে কৃতজ্ঞতা করলেও কম হয়ে যাবে।
স্বামি হিসেবে আজ আমি খুব মাপতে পারছি,১০০তে ২০০দিলেও কম পরে যাবে।ও শুধু স্বামি নয় আমার সব ভালো পাওয়ার মাঝে ও অন্যতম একজন।
আমি,আমার মেয়েকে বুকে নিয়েই আতিক কে জড়িয়ে ধরলাম।
আতিক তোমায় পাব বলেই হয়তো আমি এখনো বেঁচেছিলাম।
আমাদের রেখে যেও না কখনো।
>ধূর পাগলি,মেয়ের সামনে এতো কাঁন্নাকাটি করলে ও ভয় পাবে।
ইদানীং দিনে ১০বার এর ও বেশি মেয়ে আর তার বাবা আমার পেটে আড়ি পাতে।
রাজকন্যার ভাই আসবে নাকি বোন তাই অনুমান করে বাবা আর মেয়ে।
রাজকন্যা নাম আতিক এর ই দেয়া।
আর আমার কাছে আতিক এখন অন্যতম রাজা ছাড়া কিছুইনা।যে সব সমস্যা দূর করে দিতে পারে।
এমন এক রাজা থাকলে,নিজেকে রানী ভাবা লজ্জার কিছুনা....
অনেকদিনপর, সেই ভালোবাসার তাজা ঘ্রান পাচ্ছি।সব ভালোবাসার ঘ্রান মনে হয় একই হয়....
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ