#অজানা_দ্বীপ
পর্ব-০৪
লেখকঃ মনজুরুল করিম
"গউস আহমদ"কে জীবিত দেখে সবাই ভয় পেয়ে যায়। কারোর মুখে কোন কথা নেই। কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না কেউই। চারজনই একে ওপরের হাত ধরাধরি করে দাঁড়িয়ে আছে।
কোন কিছু ভাবার আগেই" গউস আহমদ " তাদের দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। সকলেই প্রচন্ড রকমের ভয় পেয়ে গেলো। ফাহিম বাকিদের হাত ধরে পিছনে ফিরেই দৌঁড় শুরু করলো। অনেকক্ষণ দৌঁড়ানোর পরে তারা সবাই নিরাপদ দূরত্বে চলে আসে। ফাহিম,,তানভির,,ইশান চলে আসলেও হাসনাত আসতে পারেনি।
দৌঁড় দিতে গিয়ে হাসনাত আছাড় খেয়ে পড়ে গিয়েছিলো,,, সেদিকে কারোরই নজর ছিলো। পড়ে গিয়ে হাসনাত প্রচণ্ড ব্যাথা পেয়েছে যার জন্য উঠতেও পারেনি।
এদিকে "গউস আহমদের " চেহারা আস্তে আস্তে বদলে যেতে শুরু করলো। ফাহিম,,ইশান আর তানভির দূর থেকেই তার বদলে যাবার দৃশ্য দেখতেছে ,,, পলকের মধ্যেই গউস আহমদের চেহারা বদলে একটা ছোট্ট বাচ্চার চেহারায় পরিণত হয়ে গেলো।
ভয়ে আর আতংকে কারো মুখে কোন কথা নেই। একটা ছোট্ট বাচ্চা দূরে দাঁড়িয়ে আছে। তার সামনেই পড়ে আছে ''হাসনাত''। হয়তো পড়ে গিয়ে আঘাত পেয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছে সে। কিন্তু ছোট্ট বাচ্চাটি আস্তে আস্তে হাসনাতের পাশেই চলে আসে।
হাসনাতের শরীরে স্পর্শ করলেই বাচ্চাটি হাসনাত সহ উদাও হয়ে গেলো। কোথায় গেলো কেউই জানে না। ফাহিমের মনে পড়ে গেলো,,, এতো সেই বাচ্চা যে গতকাল রিদয়কে নিয়ে উদাও হয়ে গিয়েছিলো। আর আজ হাসনাতকে নিয়ে গেছে।
এই অজানা দ্বীপে কেউই নেই এখন। ফাহিম,,ইশান,, তানভির আর সেই ছোট্ট বাচ্চাটিই এই দ্বীপে জীবন্ত আছে। আর আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আশে মাথা বিহীন,, হাত-পা বিহীন অসংখ্য লাশ।
তিন বন্ধুর এই মূহুর্তে কি করা উচিত কেউই বুঝে উঠতে পারেনা। এখান থেকে ফিরে যাবার কোন উপায় কারোর জানা নেই। তাইলে কি সবাই এই ছোট্ট বাচ্চাটির শিকার হয়ে লাশ হিসেবে এই দ্বীপেই পড়ে থাকবে??
না তা কিছুতেই হতে দেয়া যায় না। তাদের তিনজনকেই এই বাচ্চাটির হাত থেকে বাঁচতে হবে। কিন্তু কিভাবে বাঁচতে হবে সেটা কেউই জানে না??
তিনজন মিলে এবার দ্বীপের পিছন দিকে যেতে লাগলো। তারা যতই পিছনে যাচ্ছে ততই বেশি বেশি লাশ দেখতে পাচ্ছে। এইসব লাশের দেহ পঁচে গন্ধ বের হচ্ছে। পঁচা লাশের গন্ধে সকলের নাড়িভুঁড়ি বের হবার উপক্রম। কিন্তু কিছুই করার নেই। বাঁচতে হলে গন্ধ সহ্য করতে হবে।
আরো কিছু সামনে এগুতেই দুটো বাচ্চার লাশ দেখা গেলো। দেহ থেকে মাথা ছিন্ন করা। কাদের লাশ?? বুঝা মুশকিল। এই লাশ দুটো দেখতেই ইশানের চোখের কোণে জল চলে আসলো,,,, চিৎকার করে কাঁদতে চাইলেও ভয়ে তার কান্নার আওয়াজ মুখের বাইরে বের হলোনা।
লাশের মাথা দেখে ছেলে দুটোকে কেউ চিনতে না পারলেও,, "ইশান "বাচ্চা দুটোর পরনের কাপড় দেখে ঠিকই চিনতে পারলো যে,,, এই ছেলে দুটোই তার হারিয়ে যাওয়া ভাই '' অভি ও জাভেদ''।
ইশানের মুখ থেকে এই কথা শুনেই সবাই অবাক। তাদের সকলের ভয় আরোও বেড়ে যায়। তাহলে কি এই দ্বীপেই,,, দীপু,,রিদয় ও হাসনাতের লাশ এভাবেই পড়ে রয়েছে??
এই ভাবতেই সবাই চমকে উঠে।আরেকটু সামনে যেতেই চোখে পড়ে আরোও দুটো ছোট বাচ্চার লাশ। কারোর বুঝতে বাকি রইলো না যে এই লাশ দুটো কার??
এই বাচ্চা দুটো নিশ্চয় সেই দম্পতীর বাচ্চা যারা সমুদ্র সৈকতে হারিয়ে গিয়েছিলো।
এখন তারা দ্বীপের প্রায় পিছনে চলে এসেছে। তানভিরের মাথায় আবার রক্ত পড়া শুরু হয়েছে। সেদিন রাতের আঘাতটা এখনো সেরে উঠেনি। তার রক্তের রঙ টাও কেমন জানি বদলে গেছে। তার লাল রঙের রক্ত এখন আস্তে আস্তে হলুদে পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে ।
তানভিরের হলুদ রক্ত দেখে ফাহিম ভয় পেলেও ইশান কেনো জানি ভয় পায়না।ইশান কেনো হলুদ রক্ত দেখে ভয় পায়নি সেটা কিছুতেই বুঝতে পারেনি ফাহিম। হলুদ রক্ত দেখে ইশানের চরিত্রে কেমন জানি উৎফুল্লতা ফুঠে উঠে। আংগুলের ডগায় সামান্য রক্ত নিয়ে ইশান রক্তের স্বাদ নেয়। তার মুখের কোণায় কিঞ্চিত হাসি দেখা যায়।
ইশানের এই ব্যতিক্রমী হাসিতে ফাহিম অনেকটা অবাক হয়। একটু আগে যেই ছেলে ভাইয়ের গলে যাওয়া লাশ দেখে কেঁদেছিলো সেই ছেলে নাকি এখন রক্তের স্বাদ নিয়ে হাসে??
তানভিরের প্রচুর রক্তক্ষরণের জন্য সে এখন ক্লান্ত হয়ে মাটিতে শুয়ে আছে,,, তার চোখ দুটো বন্ধ। এদিকে ইশানের অদ্ভুত আচরণ গুলা শুধুমাত্র ফাহিম'ই দেখতেছে। আশেপাশে কেউ নেই। জায়গাটাও নির্জন। কোন পশুপাখির আওয়াজ ও নেই।
"ইশান " এবার তার পুরো হাত দিয়ে তানভিরের মাথা বুলিয়ে দেয়। তার পুরো হাতে তানভিরের হলুদ রক্তের স্পর্শ লেগে আছে। ইশান আস্তে আস্তে তার হাতটা চুষতে শুরু করে। ফাহিম ভয় পেয়ে কিছুটা সরে আসে।
ফাহিম নিরাপদ দূরত্বে চলে আসলেই,, কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই ছোট্ট ছেলেটা চলে আসে তানভির আর ইশানের কাছে। দূর থেকে ফাহিম দেখতে পায় ইশান আর সেই পিচ্ছি ছেলেটা তানভিরের হলুদ রক্তের স্বাদ নিচ্ছে আর হাসছে,,,, এদিকে তানভির অজ্ঞান থাকায় সে এর কিছুই টের পাচ্ছেনা।
ফাহিম" কিছুতেই বুঝতে পারছেনা তাদের সাথে এসব কি হয়েছিলো আর কি হচ্ছে এখন??? সে শুধু সেই ছোট্ট ছেলেটার রক্তমাখা চোখের দিকে থাকিয়ে আছে আর ইশানের সাথে ছেলেটার রহস্যময় হাসি দেখে ভয়ে কাঁপতেছে,,,,,
(চলবে)
#অজানা_দীপ
পর্ব-০৫ (শেষের পর্ব)
লেখকঃ মনজুরুল করিম
ইশান আর পিচ্ছি ছেলেটার অদ্ভুত আচরণে ফাহিম ভয় পেয়ে নিরব হয়ে বসে আছে দ্বীপের এক কোণে।তাদের কাছ থেকে নিজেকে আড়াল করে রেখেছে সে। দূর থেকে তাদের অদ্ভুত অদ্ভুত আচরণ গুলো দেখতেছে। তানভির তখনো অজ্ঞান। কিছুক্ষণের মধ্যেই তানভিরকে নিয়ে ইশান আর পিচ্ছি ছেলেটা উদাও হয়ে যায়।
কোথায় আর কিভাবে গেলো?? এর কিছুই বুঝতে পারে না ফাহিম।তবে এই দ্বীপে এখন ফাহিম একা। সে কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না ।
একা একা ভাবতেছে কেনো বন্ধুদের নিয়ে কক্সবাজার বেড়াতে এলো আর কেনোই বা সবাইকে হারাতে হলো। এসব ভাবতে ভাবতেই সন্ধ্যা হয়ে আসে। আজ কেউ নেই তার সাথে। তাই নিজেকে একা একা মনে হচ্ছে। কি করবে কিছুই বুঝতে পারতেছে না ।
আস্তে আস্তে "ফাহিম" দ্বীপের ভিতরের দিকে যেতে থাকলো। আগের দিনের মতোই দ্বীপের ভিতরে ছোট বাচ্চার কান্না শুনা যাচ্ছে। একা ভিতরে যাবার সাহস হয়না ফাহিমের। ঠিক করলো আজকের রাত সে বাহিরেই কাঠিয়ে দিবে।
ব্যাগের ভিতরে থাকা সব কয়টি শার্ট-প্যান্ট বের করে মাটিতে চাদরের মতো বিছিয়ে দেয়। সারা দিন ধরে কিচ্ছু খাওয়া হয়নি তার। ব্যাগ থেকে সামান্য বিস্কুট আর পানি খেয়ে নেয় সে। দ্বীপের বাহিরে থাকায় চাঁদের আলোয় স্পষ্ট সবকিছু দেখা যাচ্ছে। তাছাড়া আজ এমনিতেই চাঁদের আলো একটু বেশি। হয়তো আজ পূর্ণিমারাত।
একা থাকায় ভয়ে আর আতংকে ফাহিমের ঘুম আসেনা কিছুতেই।আনমনে বসে কি করা যায় সেই চিন্তা করতেছে সে। কিছুক্ষণ পর দ্বীপে কারো অট্টহাসির শব্দে ফাহিমের টনক নড়ে।
ফাহিম যেখানে বসে আছে এর অনেকটা দূরে বসে আছে আরো দুজন ব্যাক্তি। সে দুজন ব্যাক্তি কে? সেটা বুঝতে ফাহিমের দেরি হলোনা। এদের একজন তারই বন্ধু ইশান আর আরেকজন দ্বীপের সেই পিচ্ছি ছেলেটা।
তাদের হাসির কারণ টা বুঝতে পারেনা "ফাহিম"।কিন্তু এটা বুঝতে পারে যে,, এই দুজনের হাসি মানেই খারাপ কিছুর পূর্বাভাস। আস্তে আস্তে হাসির আওয়াজ আরেকটু প্রখর ও তীব্র হতে থাকে। এক সময় তাদের হাসিটা পুরো দ্বীপে ছড়িয়ে যায়। সেই চিৎকার করে হাসাহাসিতে পুরো দ্বীপ হেলে যাবে মনে হচ্ছে।
ফাহিম,,, আরেকটু খেয়াল করে দেখে যে ইশান আর পিচ্ছি ছেলেটার পাশেই রয়েছে একটা ছোট নৌকা। আর সেই নৌকায় রয়েছে ৩/৪ টা মানুষের লাশ। ইশান আর পিচ্ছি ছেলেটা লাশ গুলোর দেহ থেকে বিভিন্ন অংশ ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছে।
এবার ফাহিমের বুঝতে বাকি রইলো না যে এই দ্বীপে এত মানুষের লাশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কেনো? সামনে দুটো পিশাচ বসে আছে আর এদের থেকে কিছু দূরেই বসে আছে ফাহিম,,, কথাটি ভাবতেই ভয়ে ফাহিমের গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।
নৌকায় থাকা লাশগুলো ভক্ষণ শেষে ইশান আর পিচ্ছি ছেলেটা হাসতে হাসতে দ্বীপের ভিতরে চলে যায়।
ফাহিম,,, এবার না বসে থেকে সাহস করে নৌকার পাশে চলে আসে। নৌকায় থাকা লাশগুলো থেকে বিদঘুটে গন্ধ বের হচ্ছে। কিন্তু,, ফাহিম সেই গন্ধ সহ্য করে লাশ গুলো নৌকা থেকে নিচে নামিয়ে নেয়। নৌকাটি আস্তে আস্তে জলে নামিয়ে আনে।
ফহিমের বুঝতে দেরি হয়না যে,,, তাকে যা করার আজ রাতেই করতে হবে নইলে কাল সকালে সেও এই পিশাচের খাদ্য হবে।
নিজের ব্যাগটা নিয়ে নৌকায় উঠে বসে ফাহিম। হাতে ছোট একটা লাটি আছে। আস্তে আস্তে এই অজানা আর ভূতুড়ে দ্বীপ থেকে সে সরে আসে। এবার অনেকটা দূরে এসে গেছে। মনে হচ্ছে সমুদ্রের মাঝখানে আছে। অনেক ক্লান্ত সে। কোন কিছু না ভেবেই নৌকায় ঘুমিয়ে পড়ে সে।
পরের দিন দুপুরে ঘুম ভাঙে তার। নিজেকে একটা ট্রলারে আবিষ্কার করে সে। ট্রলারের মানুষজন জানিয়ে দিলেন যে আজ সকালেই তারা সেন্ট-মার্টিন দ্বীপ থেকে কক্সবাজার ফেরার পথে একটা ছোট নৌকায় অজ্ঞান পেয়েছেন,,, ফাহিমকে।ট্রলারে করেই ফাহিম কক্সবাজার চলে আসে।
ফাহিম,,, কাউকে কিছুই জানায় না। নিজের বাড়িতে চলে আসে সে। "অজানা দ্বীপের" রহস্য সকলের অজানাই থেকে যায়। কিন্তু,, শুধু ফাহিম নিজে জানে সে কিভাবে তার বন্ধুদের হারিয়েছিলো। এখনো "অজানা দ্বীপের" রহস্যের জন্য ফাহিম অনুশোচনায় ভোগে।
***
এতটুকু গল্প লিখে "দীপু "থেমে যায়। চেয়ারে বসে দেহ সামনে পিছনে আনা- নেওয়া করে। "ইশান "তার খুব ভালো বন্ধু ছিলো। ফেইসবুকেই পরিচয় তাদের। তবে ইশান এখন আর বেঁচে নেই। কিছুদিন আগেই সড়ক দূর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়ে। মৃত্যুর পূর্বে "ইশান "চাইতো যে,, দীপু তাকে নিয়ে গল্প লিখবে তবে তাকে একটা ভিলেনের চরিত্র দিতে হবে।
ইশানের সেই আশা পূর্ণ করতেই "দীপু " এই আজগুবি গল্পটা লিখেছে। এতক্ষণে দীপু গল্প লিখে ক্লান্ত। রুমের লাইটটা অফ করে বিছানায় দেহ হেলিয়ে দেয় সে। হাল্কা ঘুমুবার চেষ্টা করলেও ঘুমুতে পারেনা সে।
হঠাৎ,,, রুমে অদ্ভুত হাসির শব্দ শুনতে পায় দীপু। বিছানায় শুয়ে শুয়ে দেখতে পায় পড়ার টেবিলে বসে আসে "ইশান ও সেই পিচ্ছি"ছেলেটা। তারাই দীপুর দিকে থাকিয়ে অদ্ভুত রকমের হাসি হাসছে।
(সমাপ্ত)
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ