āϏোāĻŽāĻŦাāϰ, ā§§ā§Ž āĻĄিāϏেāĻŽ্āĻŦāϰ, ⧍ā§Ļā§§ā§­

3920

আমার বর
সম্পূর্ন গল্প (সব পর্ব একত্রে)
লেখা : মিশু মনি
.
ঘুম থেকে উঠেই শুনি আজ আমার বিয়ে!
যতবেশি অবাক হয়েছি,তারচেয়ে বেশি বিব্রত বোধ করছি।আচমকা নিজের বিয়ের কথা শুনলে কেমন লাগে?
কিন্তু ব্যাপার সেটা নয়,আসল কথা হচ্ছে বর নাকি সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট। বিদ্যুতের খুটির মত লম্বা।আর আমার যে উচ্চতা, তার পাশে দাড়ালে মনে হবে ল্যাম্পপোস্ট এর নিচে বনমানুষ দাড়িয়ে।
চেঁচামেচি শুরু করে দিলাম। আম্মু বলল,ছেলে খুব সুন্দর। তোর পছন্দ হবে।
- আচমকা বিয়ে ক্যান?
- বিয়ের অনুমতি পাইছে।আর তাছাড়া ছেলের আব্বা আম্মা এই সপ্তাহেই হজ্বে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ জন্যই...
- কিন্তু আম্মু,ছেলের হাইট এত বেশি যে আমাকে তার পাশে মানাবে না।
- ছেলে যখন রাজি,তোর অসুবিধা কি?
- ছেলে নিশ্চয় মানসিক সমস্যাগ্রস্ত।
- ছেলে ভালো।সে বাবার মতের বাইরে যাবেনা।ওর বাবার ইচ্ছে তোকে মেয়ে বানাবেন।
- তাহলে তুমি বরং ওই মুরুব্বি কে বিয়ে করে ফেলো। আমি ওনাকে আব্বা বলব।
আম্মু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল,পাগলী। এমন পাত্র হাতছারা করলে পাপ হবে।
আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আম্মু বেরিয়ে গেল।
.
অনেক কষ্টে ছেলের মোবাইল নাম্বার জোগার করে কল দিলাম। যদি বিয়ে টা আটকানো যায়,কিন্তু মোবাইল বন্ধ।
অবশেষে হবু শ্বাশুরি মাকে কল দিয়ে আমার আপত্তির কারন জানালাম। তিনি বললেন,পেন্সিল হিল পড়ে একসাথে বের হবা।
- কিন্তু আনটি,ও যখন অফিসে বের হবে,ওর কপালে এক টা চুমু দেয়ার মত ভাগ্য আমার হবেনা।
- কেন হবেনা? টুলের উপর দারিয়ে চুমু দিবা।
.
অনেক চেষ্টা করেও কিছুই লাভ হল না।পাত্রের নাম তন্ময়।সবারই খুব পছন্দ হয়েছে।
আমি পড়েছি মহা যন্ত্রনায়।কিছুদিন আগে এক বৃদ্ধকে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। নিজের রক্ত দিয়ে সাহায্য করেছিলাম। তিনিই এখন আমার শ্বশুর হওয়ার ইচ্ছে পোষন করেছেন। হজ্ব করতে যাবেন, সকলেই তার ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে বিয়েতে মত দিয়েছেন। আমার ব্যাপার টা কেউ বুঝল না।
.
কবুল বলার পর একসাথে খেতে বসলাম। তখন আমার বরকে ভালো ভাবে দেখলাম। ওর চোখে যেন আগুন ঝরছে।হয়ত ওকেও জোর করে রাজি করানো হয়েছে।জানিনা কি আছে কপালে!
.
রাত সাড়ে দশ টায় শ্বশুরবাড়িতে পৌছলাম।
ফ্রেশ হয়ে রুমে আসলাম।
.
আমার আখাম্বা বর রুমে ঢুকেই আমাকে আপাদমস্তক দেখতে লাগল।
তারপর বলল,short মেয়েদের ব্যাপারে আমার এলার্জি আছে।আর তুমি আমার short বউ।তুমি এখন মহা এলার্জি।
- জেনে শুনে বিয়ে করেন নাই?
- বিয়ের কথা অনেক আগেই শুনেছি।short বলে contact করার ইচ্ছা হয়নি।
- তাহলে বিয়ে করলেন কেন? আজব তো! আমি তো আজ সকালে উঠে জানলে পারলাম আমার বিয়ে!
- তুমিতো intelligent গার্ল।ছেলে defence এ job করে শুনেই নাচতে নাচতে রাজি হয়ে গেলা।নিজের হাইট টা দেখবা না?
- অনেক চেষ্টা করেছি।কাজ হয়নি।আপনার এলার্জি থাকলে বিয়ে করার কি দরকার ছিল? বাবাকে বলতে পারতেন কথা টা।
- আব্বু হজ্বে যাচ্ছেন। শেষ ইচ্ছে পুর্ন করব না?
- তাহলে এখন আমাকে কথা শুনাচ্ছেন কেন? আর আপনার বাবা তো আমায় দেখেছেন। তিনি কেন এক টা short মেয়ের সাথে ছেলের বিয়ে দিতে গেলেন?
- ওই যে রক্তের ঋণ শোধ করবেন বলে।
- এভাবে ঝগড়া করতে থাকলে ঋণ শোধ হবে?
- তাহলে কি তোমাকে নিয়ে শুয়ে পড়ব?
আমি বললাম,আপনি কি করবেন জানিনা।আমি শোব।ঘুম পাচ্ছে।
- আমার ভিতরে আগুন জ্বলছে আর তোমাকে ঘুমাতে দিবো?
- তাহলে কি ফায়ার সার্ভিস ডাকব?
- যা খুশি করো।আমি তোমাকে মেনে নিতে পারব না ব্যস।
- তাহলে ডিভোর্স দিয়ে দিন।
- ডিভোর্স দেয়ার জন্য বিয়ে করছি?
- তাহলে কি ঝগড়া করার জন্য বিয়ে করছেন?
- নাহ।রক্তের ঋণ শোধ করার জন্য বিয়ে করছি।
- ছাড়তেও চান না,মানতেও চান না।এক টা সিদ্ধান্তে তো আসতে হবে?
- বাহ! বিয়ের রাতেই ডিভোর্স চাইছ,লক্ষি মেয়ে তুমি।
- দেখুন আমার দিক থেকে কোনো অসুবিধা নাই।আপ্নিই তো অপমান করছেন।
- তাহলে কি করব? নিজের হাইট টা তো দেখবা।
- অনেক চেষ্টা করছি বিয়ে আটকাতে। পারিনি।যদি আমার বয় ফ্রেন্ড থাকত,অবশ্যই পালিয়ে যেতাম। আপনার গার্ল ফ্রেন্ড ছিল না?
- ছিল even এখনো আছে।পুরা ক্যাটরিনা কাইফের মত দেখতে।হাইট ৫ ফুট ৫.
- আবারো আমাকে অপমান করছেন। আপনি কি চাচ্ছেন আমি নিজেই আপনাকে ছেড়ে দিই?
- যদি বলি তাই?
- ওকে।আপনার আব্বা আম্মা হজ্ব থেকে ফিরে আসুক,then সিদ্ধান্তে আসা যাবে।
- ওকে ডান।
.
আমি ব্যাগ থেকে হেডফোন বের করে গান শুনতে লাগলাম। এরকম কিছু ঘটতে পারে ভেবে সারাদিনে নিজেকে প্রস্তুত করেই রেখেছি যাতে এখন কষ্ট না হয়।
.
তন্ময় চিৎকার করে বলল,কোথায় শোব?
- চিল্লাচ্ছেন কেন?
- চারবার বলেছি।শুনতে পাওনি।
- আমার পাশে ঘুমান।
- impossible.
- তাহলে ওয়াশরুমে গিয়ে ঘুমান।
-কথা কম বলবা।এটা আমার বাড়ি।
- আমি এ বাড়ির বউ।
চুপ করে গান শুনতে লাগলাম।
#
দুচোখ বন্ধ করে গান শুনছিলাম। তন্ময় কি করছে সেটা দেখার জন্য এক চোখ মেলে তাকালাম। ও ফোনে কথা বলছে।নিশ্চয়ই ওর সেই ক্যাটরিনা কাইফের সাথে।মনে একটা প্রশ্ন জাগল।ক্যাটরিনার তো বয়স অনেক হয়েছে।এত নায়িকা থাকতে ক্যাটের সাথে তুলনা করল।ওর গার্ল ফ্রেন্ড কি তাহলে বয়স্ক মহিলা? হতেও পারে।আমার বরের বয়স তো আর কম হয়নি।প্রশ্নটা তোলা থাক,পরে জিজ্ঞেস করব।
.
অনেক চেষ্টা করছি ঘুমাতে।কিন্তু ঘুম আসছে না।ঘুম না আসাটাই স্বাভাবিক। বাসর রাত বলে কথা।কিন্তু এ কেমন বাসর? এটাকে তো কালোরাত টু বলা উচিৎ।
.
রাত ১ টা।
খুব ক্ষুধা লেগেছে।এটা আমার বদভ্যাস। খুব রেগে গেলে খাবার গিলতে থাকি।এখন খুব রেগে আছি,তাই খাবারের জন্য দাত কিড়মিড় করছে।কিন্তু এ বাড়িতে ফ্রিজ কোথায় জানিনা।এত রাতে কাউকে খাবার কথা বললে ব্যাপার টা বাজে হয়ে যাবে।তারচেয়ে বরং নিজের রাগ কমাই,রাগ কমলে খাবার ইচ্ছাটাও কমে যাবে।
রাগ কমানোর চেষ্টা করে লাভ কিছুই হচ্ছেনা।রাগগুলা সব মেয়বি জেদ করে অবরোধ ডেকে বসেছে।মনে মনে রাগগুলো কে কয়েকটা ভাগে ভাগ করলাম। এক ভাগ রাগ মা বাবার প্রতি,এক ভাগ রাগ শ্বশুর শ্বাশুরির প্রতি,আরেক ভাগ রাগ আমার আখাম্বা বরের প্রতি।যাক,এখন কিছুটা হালকা লাগছে।
.
তন্ময় এসে বিছানায় শুয়ে পড়ল। আমি অন্যদিকে সরে ওকে জায়গা করে দিলাম।
হেডফোনটা খুলে রাখলাম।
অনেকক্ষণ পর তন্ময় বলল,আমাকে disturb করবা না।ঘুমাব।
- disturb করব কেন?
- অধিকার খাটানোর জন্য।
- করতেও পারি।আমাকে কেউ কিছু নিষেধ করলে সেটার প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যায় আমার।
- তোমার আকর্ষণ এমনিই কমবে।আব্বু আম্মু চলে যাক,আকর্ষণ টের পাবা।
- আহারে! কি সৌভাগ্য আমার!
তন্ময় দাতে দাত চেপে বলল,সেটা পরেই টের পাবা।ওরা চলে যাওয়ার পর তোমার মুখ আর আমি দেখতে চাইনা।
- ওকে তাহলে মুখোশ পড়ে থাকব।আমার হাত,পা,চুল এগুলা দেখবেন।
তন্ময়ের রাগ আরও বাড়ছে। আর আমার রাগ কমছে।ব্যাপার টা কি বুঝলাম না!
.
তন্ময় উঠে বসে বলল,ঘুমাতে দিবা না বুঝছি।
- বাসর রাতে কেউ ঘুমায়?
- বাসর রাতের গুল্লি মারি।
তন্ময় খুব রেগে গেছে।আমি বললাম,আপনি গুলি মারতে পারেন? আপনার তো রিভলভার থাকার কথা।থাকলে সেটা আমার মাথায় ঠেকিয়ে ঠুস করে দিন।আমি মরে গেলে ডেড বডি লুকিয়ে ফেলবেন। সবাইকে বলবেন বউ পালিয়ে গেছে।
তন্ময় বলল, এত শয়তানি বুদ্ধি পাও কই হুম? দেখেই বুঝেছিলাম তুমি একটা চিংড়িমাছ।
- চিংড়িমাছের মাথায় গু থাকে তাইনা?
তন্ময় ভীষণরকম রেগে বলল,আমাকে রাগাতে ভাল্লাগছে? তাইনা?
- হুম।বিষে বিষে বিষকক্ষয়,তেমনি রাগে রাগে রাগকক্ষয়।
- shut up.
.
আমি একেবারেই shut down হয়ে গেলাম।বিছানার এক কোনো গুটিসুটি মেরে শুয়ে রইলাম।যদিও খুব দুষ্টুমি করতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু এখন লক্ষী মেয়ের মত ঘুমানোটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
.
আবারো মনে প্রশ্নটা উদয় হল।তন্ময়ের গার্ল ফ্রেন্ড বয়স্ক মহিলা কি না?
আসতে করে বললাম,ঘুমিয়ে গেছেন?
- উহুম।কি হইছে?
- আপনার গার্ল ফ্রেন্ড কি বয়স্ক?
- non sense.
.
আমি আর কিছু বললাম না।হায় রে বিয়ের রাত! নিজের বিয়ে নিয়ে কত্ত পরিকল্পনা ছিল! আব্বু আম্মু সব নষ্ট করে দিলো।
.
কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম জানিনা।
মোবাইলের রিংটোনের শব্দে ঘুম ভাঙল।
- হ্যা আম্মু বলো।
- কিরে এত বেলা অব্দি ঘুমাচ্ছিস?
- হুম।তোমার জামাই এত ভালো যে...... থাক বাকিটা আর বললাম না।
- সব ঠিক আছে?
- কিচ্ছু ঠিক নাই।তাড়াতাড়ি এসে আমাকে নিয়ে যাও।
- নারে।দুটা দিন থাক।বেয়াই সাহেবরা চলে গেলে এসে অনেকদিন থাকিস।
- ওহ আমার ত নতুন মা বাবা হইছে।তোমাদের দায়িত্ব তো শেষ। তাহলে কল দিছো ক্যানো?
- রাগ করিস না মা।কয়েকদিন গেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
কল কেটে দিলাম।আজ আম্মুর সাথেও কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।
.
ফ্রেশ হয়ে বাইরে আসতেই শ্বাশুরিমা এসে অনেক কথা বললেন, উপদেশ দিলেন। ওনাদেরকে মা বাবা বলে ডাকতে বললেন। নিজের মা বাবা ছাড়া কোনো ভাগ্নিকেও শখ করে আম্মু আব্বু বলিনি।কিভাবে সম্ভব?
অনেক চেষ্টা করে বলতে পারলাম। দুজনেই খুব খুশি।
বাবা আমাকে তুলে খাওয়ালেন। তারপর বললেন, এই সংসার টা আমরা দুইজন মিলে অনেক কষ্টে আর যত্নে সাজিয়েছি।আমরা আর কয়দিনই বা বাঁচব? আমার আর ছেলেমেয়ে নাই।এখন তুমি আর তন্ময় ই এসব দেখবা।তন্ময় খুব রাগী, কিন্তু অনেক ভালো ছেলে।ওকে সামলে রেখো। একটু কষ্ট হলেও সহ্য করো।কিন্তু সংসার টা টিকিয়ে রেখো।আমরা যদি হজ্ব থেকে আর ফিরতে না পারি,যদি সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করি,আর তো বলতে পারব না মা।
আমি বাবার হাত ধরে বললাম,দোয়া করি বাবা আপ্নারা যেন সুস্থ শরীরে ভালভাবে ফিরে আসতে পারেন।
মা বললেন , আমার পাগল ছেলে টাকে দেখে রেখো মা।
কি বলব বুঝতে পারছি না।দুজনেই মায়াভরা চোখে তাকিয়ে আছেন। ভরসা দিয়ে বললাম,দোয়া করবেন আপ্নারা।
- মা,তোমার তন্ময়কে পছন্দ হয়েছে?
মনে মনে বললাম,এই প্রশ্নটা বিয়ের আগে করলে কি হত?
কিন্তু সেটা বলতে পারলাম না।বললাম,হুম।
- তুমি নাস্তা নিয়ে গিয়ে তন্ময়কে ডেকে তুলে খাওয়াও। নিজেও খাও। কাল সেই সন্ধ্যেবেলা খাইছ।
আমার কেন জানি খুব মায়া লাগছে এই মানুষ দুজনের প্রতি।বিয়ে হতে না হতেই এত মায়া জন্মাল কেন? ওনারা আমাকে খুব স্নেহ করেন।এদের ছেড়ে যেতে খুব কষ্ট হবে।তন্ময় যদি মানতে না চায়,আলাদা তো হতেই হবে।ভাবতেই খারাপ লাগছে।
.
নাস্তা নিয়ে এসে দেখি তন্ময় ঘুমাচ্ছে।ডাকলে আবার রেগে যাবে নাতো?
দুইবার ডাকতেই চোখ মেলে তাকাল।বলল,এত সকাল সকাল ডাকছ কেন?
- মা নাস্তা পাঠিয়েছেন।খেয়ে নিন।
তন্ময় কোনো কথা না বলে উঠে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসল।আমি খাবার এগিয়ে দিতেই বলল,শাড়ি পড়ে আছ কেন? জামা থাকলে জামা পড়ে নাও।
আমি দারিয়ে রইলাম। ও খেতে শুরু করেছে।
একবার খেতেও বলছে না! আমারও তো ক্ষিধে পেয়েছে।বাবা শুধু দুইবার মুখে খাবার তুলে দিয়েছেন, তাতে কি পেট ভরে?
তন্ময় আমার দিকে তাকিয়ে বলল খেয়েছ?
- না।
- বসো।খেয়ে নাও।
.
আমিও একটা প্লেট নিয়ে খাওয়া শুরু করলাম।
.
গোসল সেরে জামা পড়লাম। ঘরে আসতেই তন্ময় ড্যাবড্যাব চোখে তাকাল।
আমি খুব সহজ ভঙ্গিতে ব্যাগ থেকে আমার জিনিসপত্র বের করলাম।
চোখে কাজল দিলাম,হালকা লিপস্টিক দিলাম,চুল আচরে ছেড়ে দিলাম।আয়নায় তাকিয়ে দেখি তন্ময় মুচকি হাসছে।
মাথা ঘুরিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, হাসছেন কেন?
- তোমার weight ৩৮ তাইনা?
- হুম।কিভাবে বুঝলেন?
- অনুমান করলাম। চেহারার গড়ন, ওয়েট, সবকিছুই হাইটের সাথে ম্যাচ করেছে।এখন তোমাকে ঠিক পুতুলের মত লাগছে।যেকেউ দেখলে বলবে ক্লাস এইট নাইনে পরো।
আমি হাসলাম।
তন্ময় বলল,তোমার হাসিটাও সুন্দর, চুলগুলাও সুন্দর, সব মিলিয়ে রুপবতী বলা যায়।কিন্তু হাইট টাই প্রব্লেম। আমার কলিগ,ফ্রেন্ড সার্কেল, সবার সামনে কিভাবে পরিচয় করাই দিবো? বাইরে বের হবো কিভাবে? এসব ভাবলে মাথা গরম হয়ে যায়।
- এত মাথা গরম করতে হবেনা।আমিতো চলেই যাবো। তখন আপনার ক্যাটরিনাকে বিয়ে করে ফেলবেন।
তন্ময় কি যেন ভাবল।তারপর বলল,তোমাকে নিয়ে থাকাটা সম্ভব না আমার পক্ষে।প্লিজ কষ্ট পেও না।আমি কি করবো বলো? পারব না।
- পারতে হবেনা।কিন্তু এভাবে বললে আমার নিজেকে ছোট মনে হয়।অপমানিত বোধ করি।এভাবে বলবেন না।আপনি যা চান,তাই হবে।বাবা মা চলে যাক,তারপর আমার মুখ আর দেখতে হবে না।

তন্ময়কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই রান্নাঘরে এলাম।
মা অনেক নিষেধ করার পরও রান্নার কাজে যোগ দিলাম। কিছুই ভালো লাগছিল না।মনটাকে কোনো কাজে ব্যস্ত রাখা বিশেষ প্রয়োজন।
রান্নাঘরের কোথায় কি রাখা আছে মা সব বুঝিয়ে দিলেন। আমি উতসাহের সাথে রান্না করতে লাগলাম।
.
ছোটবেলা থেকেই শখের বশে রান্না শিখেছি মায়ের কাছে।রান্নার অভ্যাস আছে।নতুন বাড়িতে এসেও সহজেই মানিয়ে নিয়ে রান্না করতে লাগলাম।
এ বাড়িতে মা বাবা ও তন্ময় ছাড়া আর কেউ থাকেনা।একজন কাজের মহিলা আছে যিনি রোজ এসে কাজ শেষ করে বাসায় চলে যান।বিয়ে উপলক্ষে কয়েকজন আত্মীয় এসেছেন। উনারা দুপুরের খাবার খেয়েই চলে যাবেন।
.
রান্না শেষ করে সবাই মিলে একসাথে বসে খেলাম।তন্ময় আমার পাশেই বসেছিল। সকলেই রান্নার অনেক প্রশংসা করলেও তন্ময় চুপচাপ খাওয়া শেষ করে উঠে চলে গেল।
.
আত্মীয় গণ বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। বাড়ি একদম শুন্য শুন্য লাগছে।
.
রুমে এসে দেখি তন্ময় সাজগোজ করছে।কিন্তু একটা গু কালার শার্ট পড়েছে। একদম ই ভালো দেখাচ্ছে না।
বললাম,কোথাও যাচ্ছেন?
- হুম।বাইরে যাবো একটু।
- কিন্তু গু কালার শার্ট পড়েছেন কেন?আপনাকে মানায়নি একদম।
- কি কালার বললা?
- গু কালার
- এই নামে কোনো কালার আছে বলে তো জানা ছিল না।
- হুম।এই হলুদের মত রঙ টাকে গু কালার বলা হয়।আপনি জানেন না?
- নাহ।তোমার কাছে কত কিছুই জানলাম। আমিতো ভাবছিলাম তোমার রান্না কেউ খেতেও পারবে না।কিন্তু তুমি তো দেখছি পাক্কা রাঁধুনি।
আমি হেসে বললাম,থ্যাংকস।
.
তন্ময় আকাশী রঙের টিশার্ট পরে এসে বলল,এইবার ঠিক আছে?
- হ্যা।
- বাবাহ! কি নাম,গু কালার!
বলেই হাসতে লাগল।
তারপর বলল,আমার মোবাইল টা দ্যাখো তো।
- কেন?
- আম্মু বলেছে তোমাকে একটা ভালো iphone কিনে দিতে।আমার টাই নিবা নাকি নতুন কিনে দিবো?
- আমার ফোন লাগবে না।
- ফোন রেখে যাচ্ছি।দেখো, ভালো লাগলে এটাই নিও।আর ফ্রিজে ভ্যানিলা আইসক্রিম আছে।আব্বু আম্মুর দিকে খেয়াল রেখো। আসি।
তন্ময় বেড়িয়ে গেল।আমি মুগ্ধ হয়ে গেছি! এত সুন্দর আমার বর টা! কত ভালো একটা মানুষ! কিন্তু মাঝেমাঝে ভয়ংকর হয়ে ওঠে। ও যাই বলুক,বিয়ে যখন হয়েই গেছে আলাদা হওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠেনা।আলাদা হওয়ার জন্য কেউ বিয়ে করেনা।যদি আলাদাই হবে,তাহলে ও বিয়ে করত না।যত কষ্টই হোক,সম্পর্ক টাকে টিকিয়ে রাখতে আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে।
.
ভাবতে ভাবতে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছি।
ঘুম থেকে উঠে মা বাবাকে চা করে দিলাম।
মা বললেন, কয়েকটা কথা বলব মা?
- হ্যা মা বলুন।
- মন দিয়ে শোনো।তন্ময় একটা মেয়ের সাথে রিলেশন করে সেটা আমরা জানি।মেয়েটাকে আমি দেখেছি,কথা বলেছি।কিন্তু ওই মেয়ের সাথে বিয়ে হলে বেশিদিন সম্পর্ক টিকত না।কারণ সব মেয়েরা ত্যাগ স্বীকার করতে পারেনা।সব কষ্ট সহ্য করে একটা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা অনেক কষ্টের।আর তন্ময়ের বাবা অনেক গরীব ছিলো। আমরা দুজন মিলে আজ এতদূর আসতে পেরেছি শুধুমাত্র নিজেদের চেষ্টায়।আমার এত কষ্টের সংসার টাকে কি করে নষ্ট হতে দেই বলো?
আমি চুপ করে শুনছি মায়ের কথা।মা আবারো বলতে শুরু করলেন, দেখো সুন্দর হলেই হয়না,মানসিকতা ভালো হতে হয়।সম্পর্কের প্রতি মনোযোগ দিতে হয়।আমরা তোমার কথা,আচরণ দেখেই বুঝেছি তুমি সংসারী মেয়ে।সব দায়িত্ব তোমার হাতে দিচ্ছি।সামলে রেখো। আমরা দুজন দোয়া করব শুধু।
মায়ের কথা শুনে মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি।এত সুন্দর করে কথা বলতে পারেন! আমি অনেক তপস্যা করলেও হয়ত এত সুন্দর করে কথা বলে কাউকে বোঝাতে পারবো না।
মা বললেন, তন্ময় খুব রাগী। আর একটু পাগল পাগল। ও একবার রাগ হলে আরেকবার খুব যত্ন করবে।তুমি কষ্ট পেও না।ভরসা রাখো।
আমি মায়ের কোলে মাথা রাখলাম। আমার নিজের মা মনে হচ্ছে।আল্লাহ যা করেন,ভালোর জন্যই করেন। তন্ময় সম্পর্ক রাখুক বা না রাখুক, আমি মা বাবাকে ছাড়বো না।
চোখে পানি এসে যাচ্ছে।
.
তন্ময় রাতে বাসায় ফিরল।
আমাকে দেখে বলল,কেমন আছো?
আমি অবাক হয়ে তাকালাম। এটা কেমন প্রশ্ন!
- কেন? কেমন আছো জিজ্ঞেস করতে পারিনা?
- হ্যা।খুব ভালো আছি।
- আমার মোবাইল টা কই?
- ওটার কথা মনেই ছিলনা।যেখানে রেখে গেছেন সেখানেই আছে।
তন্ময় মোবাইল নিয়ে শুয়ে পড়ল। জিজ্ঞেস করলাম, খাবেন না?
- না।
- খেয়ে এসেছেন?
- না।খেতে ইচ্ছে করছে না।
কয়েকবার খাওয়ার জন্য জোর করতেই ও রেগে গেল- বউ হয়েছ বলে সব ব্যাপারে ইন্টারফেয়ার করবা না।
আমি চুপ করে গেলাম।
কিছুক্ষণ পর তন্ময় নিজেই বলল,চলো খেতে দাও।
আমি ওর মুখের দিকে তাকালাম। ছেলেটা কখন কি রুপ ধারণ করে বুঝতে পারছি না।তন্ময়কে বুঝতে পারা অনেক কঠিন!
.
খাবার শেষ করে মা বাবার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে ঘুমাতে আসলাম।
তন্ময় বলল,প্রতিদিন কি এই ঘরেই ঘুমাবা?
- মানে? আমি কোথায় যাবো ঘুমাতে?
- এত বড় বাড়িতে ঘুমানোর জায়গার অভাব হবেনা।আব্বু আম্মু চলে গেলে আলাদা ঘুমাব।
- এখন কি একসাথে ঘুমাচ্ছি?
তন্ময় হাসল।আমি লজ্জা পেয়ে চুপ করে আছি।
.
ও ফেসবুকে ব্যস্ত।কিন্তু আমি কি করবো? আমার তো ঘুম আসছে না।
কিছুক্ষণ পর তন্ময় বলল,কি কি খেলতে পারো তুমি?
- ক্লাস অফ ক্লান,কার রেসিং,ভাইস সিটি...
- এগুলা না।তাস,লুডু,ক্যারম,দাবা?
- সবগুলাই পারি।কেন?
- wow! great!
তন্ময় উঠে তাস নিয়ে আসল।আমার হাসি পেল।
অনেক্ষন দুজনে বিছানার উপর বসে তাস খেলছি।
ও বলল,আব্বু আম্মু জানতে পারলে খুব বকবে।
- কেন? আমরা তো জুয়া খেলছি না।তাস খেললে কি হবে?
- খেলায় তো বেশ পটু দেখছি!
- হুম।সব গুনই আছে।
- সব গুনই আছে।শুধু হাইটে খাটো।
আমার মেজাজ টা খারাপ হয়ে গেল।খেলার মুড টাই নষ্ট হয়ে গেল।চুপচাপ বিছানায় এসে শুয়ে পড়লাম।

ঘুম ভাঙল খুব ভোরে।
চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি তন্ময়ের ঘুমন্ত মুখ।খুব পবিত্র আর মিষ্টি লাগছে দেখতে!
বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায় না।চোখ ফিরিয়ে নিলাম।
উঠে নামায পড়ে কাজ শুরু করে দিলাম। মা বাবা কাল চলে যাবেন। সবকিছু ঠিক ঠাক মত গুছিয়ে দিতে হবে।
সারাদিন ভীষণ ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে কাটল।তন্ময়ের সাথে তেমন কথা হয়নি।
বিকেলে কাজ শেষ করে একটু বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। তন্ময় এসে বলল,সব কাজ কমপ্লিট?
- হুম।
- আমি একটু বাইরে যাবো। ফ্রেন্ডরা ডাকছে।
- আচ্ছা যান।
- জান! আমি তোমার জান?
- উহহু।কথা পেচান কেন? আপনাকে যেতে বলেছি।জান বলতে আমার বয়েই গেছে।
- ওকে যাচ্ছি।আজ কোনটা শার্ট পড়ব?
- গু কালার টা পড়ে যান।
- এত রেগে আছো কেন?
- কই নাতো। যেটা পরেছেন, সেটা পড়েই যান।কাল আমার আব্বু আম্মু আসবে মা বাবাকে বিদায় দিতে।আমি ওদের সাথে বাসায় চলে যাবো।
- যেও।নিয়মানুযায়ী আমাকেও তোমার সাথে যেতে হয়।কিন্তু আমার এসব ফর্মালিটি একদম ই ভাল্লাগেনা।তাছাড়া আমি মেয়বি পরশু থেকে ডিউটিতে যাবো। তুমি একাই বাড়ি যেও।
- আচ্ছা।
তন্ময় বেড়িয়ে গেল।
বিশাল বাড়িটাকে খুব শুন্য শুন্য লাগছে।
.
তন্ময় বাসায় ফেরার পর থেকেই বেলকুনিতে বসে আছে।অনেক্ষন ধরে ফোনে কথা বলল।তারপর থেকে মনটা খুব খারাপ মনে হচ্ছে।হয়ত ওর গার্ল ফ্রেন্ড এর সাথে ঝগড়া হয়েছে।
আমি চুপচাপ দূর থেকে দেখছি।কাছে যেতে সাহস পাচ্ছি না।
.
গভীর ঘুমে তলিয়ে যাচ্ছি।হঠাত বুঝতে পারলাম তন্ময় আমার দুই পা জরিয়ে ধরে বসে আছে।আমি এক লাফে উঠে বসলাম।
জিজ্ঞেস করলাম, পা ধরে বসে আছেন কেন?
- মা গো, তোমার পায়ের নিচে আমার বেহেশত।
- কিহ! কি বলছেন এসব?
- ফান্দে পইড়া কাইন্দা বলি এখন কি করি,ছাইড়া দে মা কাইন্দা বাচি তোর পায়ে ধরি....
আমি ভ্যাবাচেকা খেয়ে বললাম,মাথা ঠিক আছে? আমি আপনার বউ।
কয়েকবার বউ শব্দটা উচ্চারণ করে গান গাইতে শুরু করল,-
"প্রেম পিরিতি ভাল্লাগেনা, দিয়া দিছি দাড়ি, ফটকামিতে ব্যস্ত আমি আজাইরা কাম ছাড়ি... ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দেরে..
ওর গান শুনে আমি শব্দ করে হেসে উঠলাম।
বললাম,খুব অন্যায় করে ফেলেছেন। আমি আপনার বউ।আর আপনি এসে কি উলটা পাল্টা কথা বলছিলেন।
তন্ময় আমার কোলে মাথা রেখে বলল,বউ মাথায় হাত বুলিয়ে দাও।
আমি ওর আচরনে অবাক হয়ে যাচ্ছি।মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললাম,কি হইছে আপনার?
তন্ময়ের চোখ ভয়ংকর দেখাচ্ছে।চুল গুলা এলোমেলো হয়ে আছে।মায়া লাগছে দেখলে।কিভাবে যেন তাকিয়ে আছে।এত কাছ থেকে কখনো ওকে দেখিনি।মাথা টা সামান্য নিচু করতেই আর কিছু বুঝতে বাকি রইল না।প্রচণ্ড পরিমানে রেগে গেলাম।খুব বিশ্রী গন্ধ লাগছে।ও নিশ্চয়ই মদ টদ নয়ত নেশাকর কিছু খেয়ে এসেছে।এ জন্যই পাগলামি করছে!
রেগে বললাম,আপনি ড্রাগ নিয়েছেন?
- ড্রাগ কি গো?
- ড্রাগ কি তাইনা? মদ খেয়েছেন না অন্যকিছু? কি খেয়ে এসেছেন বলুন?
- খেয়ে আসিনি তো। এসে খেয়েছি।
আমার রাগ আরও বেড়ে গেল।বললাম,কি খেয়েছেন?
- খাই নাই কিচ্ছু খাই নাই।খাবো।
- খাবো মানে?
তন্ময় আবারো গান শুরু করল,গাজা খাবো আটি আটি.. মদ খাবো বাটি বাটি...
আমি আর রাগ সামলাতে পারছিনা।তন্ময় এসব কি শুরু করেছে! নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিনা।
ও বলল,মিফতা...
- হুম।
- খাবা? অল্প একটু পেটে পড়লে জগত সুন্দর হয়ে যাবে!
- চুপ করুন।আমার কোলে মাথা রাখবেন না।উঠুন। আমি মা বাবাকে ডাকব।
তন্ময় উঠে গিয়ে আলমারি খুলে একটা বোতল বের করে ঢকঢক করে গিলল।আমি একদম নিশ্চুপ।
.
আমি কি করব বুঝতে পারছিনা।তন্ময়ের পাগলামি বেড়েই চলেছে।এমনসব পচা গান গাওয়া শুরু করেছে যা অসহ্য লাগছে।
চুপচাপ দেখতে লাগলাম।
তন্ময় এসে আমার পাশে বসল।বলল,জানো মিফতা,আমি ছোট থেকেই ঘুমালে স্বপ্ন দেখতাম একঝাক পরি আমাকে নিয়ে যাচ্ছে।রোজই নিয়ে যেত।কিন্তু ওরা সবাই আমাকে বিয়ে করতে চাইত।এ জন্য ওই স্বপ্ন আর দেখিনা।
আমি হেসে উঠলাম।ওর এই অদ্ভুত অদ্ভুত কথা শুনতে ভালই লাগছে!
তন্ময় বলল,আমার না খুব বাথরুম পেয়েছে।বাথরুম করবো।
- বাথরুমে যান।
- নাহ।এখানেই বাথরুম সারব।
- কিহ!
আমার চোখ কপালে উঠে গেল।ও বলল,ছোটবেলায় তো রুমেই করতাম। আম্মু পরিষ্কার করত।এখন তুমি আমার সহধর্মিণী, আমার সেবাকারী,এখন তুমি পরিষ্কার করবা।
- আপনি কি পাগল হয়ে গেলেন? - তোমরা সবাই আমাকে পাগল বলছ? আমার জিএফ ও আমাকে আজ পাগল বলেছে।কিন্তু আমিতো পাগল নই।
-আপনি পাগল নন।আপনি সুন্দর একটা মানুষ।এখন বাথরুম এ যান।এসে ঘুমান।সব ঠিক হয়ে যাবে।
- উহুম।বলছিনা এখানেই করবো।
কি জ্বালায় পড়লাম রে বাবাহ! কাঁদবো না রাগ করবো বুঝতে পারছিনা।তন্ময় এমনভাবে কথা বলছে যেন ও সত্যিই এখানে..... উফফ ভাবতে পারছিনা।কি করি আমি?
.
আমার মাথা দিয়ে ওর মাথায় জোরে আঘাত করলাম। ও মাথাটা জোরে ঝাকিয়ে বলল,গরু গরু খেলছো?
- চুপ করুন।আমার দিকে তাকান।
ও আমার দিকে একদৃস্টে তাকিয়ে রইল।তারপর আস্তে আস্তে ওকে বুঝিয়ে বললাম।ও একটু বুঝল।কিন্তু হাত ধরে আমাকেই বাথরুম এ রেখে আসতে হলো।
.
তন্ময় এসে উদ্ভট সব কথাবার্তা বলছে আর গান গাইছে।আমাকে বারকয়েক মা মা বলে ডাকছিল।রাগ দেখাতেই বউ বউ বলে ডাকতে আরম্ভ করে দিয়েছে।
ওর আচরনে আমার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।কি যে করব বুঝতে পারছিনা।ওকে বুঝানো ও যাচ্ছেনা,থামানো ও যাচ্ছেনা।মা বাবার ঘর কয়েকটা ঘর পড়ে। ওদের ঘর অব্দি কথা পৌছাবে না।কিন্তু যদি কোনোক্রমে তারা তন্ময়ের গান শুনে ফেলে,ব্যাপার টা খারাপ হবে।উনারা কাল চলে যাবেন, এই অবস্থায় কিছুতেই তাদেরকে এই ব্যাপার টা বুঝতে দেয়া যাবেনা।
.
কিন্তু কি করবো বুঝে উঠতে পারছিনা।তন্ময় আজেবাজে কথা বলছে।পরিস্থিতি সামলাবো কিভাবে?
.
তন্ময় অনেক আজগুবি কথাবার্তা বলা শুরু করেছে।ওকে ঘুমানোর কথা বলতেই ও বলল,তুমি আমার বউ?
- হুম বউ।আমার কথা শুনো, ঘুমাও এখন।তুমি কি বুঝতে পারছ,পুরোপুরি নেশা হয়ে গেছে তোমার।
তন্ময় কোনো কথা না বলে মেঝেতে বসে পড়ল। ওর চোখে পানি।বলল,আমার খুব কষ্ট হচ্ছে মিফতা।খুব কষ্ট হচ্ছে।আর পারছিনা।সবাই মিলে আমাকে মেরে ফেলছে।মিমি আমাকে খুব বাজে কথা বলেছে।আমাকে খুব অপমান করেছে।আমি ওকে ভুলে যেতে চাই মিফতা।
- আমি আছি তো।সব ঠিক করে দিবো।কাদবা না তো, ছেলেরা কখনো কাদেনা।
- মিফতা,খুব কষ্ট হচ্ছে।আমি তোমাকেও ঠকাচ্ছি তাইনা?
তন্ময় কেমন যেন অসহায়ের মত তাকাচ্ছে।ও একটু মানসিক শান্তি চাইছে। কিন্তু আমিই বা কি করতে পারি?
.
টেনশন হচ্ছিল।কি করব বুঝে উঠতে না পেরে বোতল টা হাতে নিলাম।নাকের কাছে নিতেই কেমন একটা গন্ধ লাগল।কিছু না ভেবেই একটু খেয়ে নিলাম। মাথাটা ঝিম ঝিম করে উঠল। কেমন যেন লাগতে শুরু করল।আরও একটু খেলাম।এবার চোখে পানি এসে যাচ্ছে।অনেক কষ্টে আরেকটু গলায় ঢাললাম।এবার বুঝতে পারছি নেশা ধরে আসছে।পা টলছে,দারিয়ে থাকতে পারছিনা।
বিছানায় বসে পড়লাম। আমি জানি আমার সামনে তন্ময়। কিন্তু তন্ময়কে যেন চিনতে পারছিনা।অচেনা অচেনা লাগছে।হাত বারিয়ে ধরার চেষ্টা করেও ধরতে পারলাম না।
ধীরে ধীরে ভালো লাগতে শুরু করল।সব কিছুই ভালো লাগছে।মন থেকে সকল চিন্তা দূর হয়ে গেছে মনে হচ্ছে।নতুন একটা জগতে প্রবেশ করলাম। অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করছে।
অনেক কিছুই বলতে চাচ্ছি কিন্তু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।তন্ময় কে কি বললাম নিজেই জানিনা।ও আমাকে জরিয়ে ধরল শক্ত করে।
.
ঘুম থেকে উঠে কিছুক্ষণ সময় লাগল স্বাভাবিক হতে।একে একে রাতের সব কথা মনে পড়ে যাচ্ছে।হাসি পাচ্ছে আর লজ্জায় লাল হয়ে উঠলাম।
.
আব্বু আম্মু আসলে সবার সাথে অনেক ভালো সময় কাটালাম।তন্ময় আমার দিকে তাকিয়ে হাসল।আমি লজ্জায় মাথা নিচু করলাম।
.
মা বাবা চলে গেলেন।
আমি বাসায় আসার সময় তন্ময়ের দিকে অনেক আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে ছিলাম হয়ত কিছু বলবে।কিন্তু ওর মনটা অনেক খারাপ। হয়ত মা বাবা চলে যাওয়ার কারনে।আমার সাথে শেষ মুহুর্তে কোনো কথাই বলল না।আমি বাসায় চলে আসলাম।

আমি বাবার বাসায় এসেছি পাচদিন হয়ে গেল।এই পাচ দিনে তন্ময়ের সাথে কোনো যোগাযোগ হয়নি।
আমি ওর ফোনের অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু অপেক্ষা তো সীমাহীন হয়ে যাচ্ছে।ভালোবাসা না থাকুক,নিজের স্ত্রীর প্রতি দায়িত্ববোধ থেকেও তো একবার ফোন দিতে পারত।
শুয়ে শুয়ে ভাবছি এসব কথা।আজ ওর কথা খুব মনে পড়ছে। ও হয়ত ভুলেই গেছে মিফতা নামে ওর জীবনে কেউ একজন আছে।
কে যেন দরজায় নক করল।দরজা খুলে দেখি তন্ময় দারিয়ে!
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম! স্বপ্ন দেখছি না তো?
তন্ময় জিজ্ঞেস করল,কেমন আছো?
আমি অবাক চোখে তাকিয়েই আছি।বিশ্বাস করতে পারছিনা আমার বর এসেছে!
- কি হলো? ভিতরে ঢুকতে দাও।
আমি দরজা ছেড়ে দিলাম।
তন্ময় সোফায় বসে একটা মোবাইল আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,নাও এটা তোমার জন্য।নতুন কিনেছি।
আমি ফোনটা হাতে নিয়ে চুপ করে দারিয়ে আছি।
- মিফতা,কি হয়েছে? এমন চুপ কেন?
- বিশ্বাস হচ্ছেনা আপনি এসেছেন!
ও উঠে এসে আমার হাতে একটা চিমটি দিয়ে বলল,লেগেছে?
- উফফ..
-বুঝলা তো এটা স্বপ্ন নয়।
- হুম।আপনি এতদিন ফোন দেননি কেন?
- নাম্বার ছিলনা।
- কিহ!
- হুম সত্যি।তুমিও তো দাওনি।
- আমি আপনার অপেক্ষায় ছিলাম।
- অপেক্ষা স্বার্থক হয়েছে।গিফট নিয়ে এসেছি।
আমি কিছু না বলে মোবাইল টা দেখতে লাগলাম।
তন্ময় বলল,এই কয়েকদিন ভালভাবে খেতে পারিনি।এখন kindly ভালো করে কিছু রেঁধে দাও।
- ওহ।তারমানে আপনি আমার জন্য আসেননি।দায়িত্ব থেকেও আসেননি। এসেছেন ভালো করে খেতে?
- হুম।আফা,পাঁচদিন কিছু খাইতে পারি নাই।চারডা খাওন দিবেন?
আমি হেসে বললাম,দুষ্টু কোথাকার।আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন।আমি খাবার রেডি করছি।
.
তন্ময় হাত মুখ ধুয়ে এসে বলল,কি করা হচ্ছে?
- তরকারি টা গরম করে দিচ্ছি।ওয়েট।
- উফফ বাবা পেট জ্বলছে ক্ষুধায়।পাকস্থলীতে প্রচুর এসিড উতপন্ন হয়েছে।
- ক্ষার ঢেলে দিবো?
- তখন তো লবণ উতপন্ন হবে।
- ভালই হবে।সেই লবণ উত্তোলন করে আমি রান্না করবো আর বাকিটা বেচে দিবো।
- কি বললা? বরকে মেরে ফেলার প্লান তাইনা?
- আপনি আমার বর!? কি দায়িত্ব পালন করেছেন এ পর্যন্ত?
- পড়ে ঝগড়া করছি।আগে খেতে দাও প্লিজ।
.
খাওয়া শেষ করে তন্ময় কিছুক্ষণ আব্বু আম্মুর সাথে কথা বলল।তারপর রুমে আসল।
আমি বললাম,আমাদের বাসায় আলাদা ঘুমালে অসুবিধা নাই।আপনি চাইলে আমি অন্য রুমে যাচ্ছি।
তন্ময় কি যেন ভাবল।তারপর বলল,ওকে যাও তাহলে।
আমি অবাক হয়ে গেলাম।কথার কথা বলে ফেলেছি বলে এখন আমাকে আলাদা থাকতে হবে! এ কেমন মানুষ!
.
রেগে অন্য রুমে চলে আসলাম। এই কয়েকদিন ওর প্রতি ভীষণ রাগ জমে গিয়েছিল।ওকে দেখে সেটা ভুলে গিয়েছিলাম। এখন আবারো রাগ গর্জে উঠছে।
.
তন্ময় এসে আমার বিছানার উপর পা তুলে বসল।
রেগে বললাম,আবার এ ঘরে কেন? ওই রুম পছন্দ হয়নি?
- হইছে।
- তাহলে?
- তোমাকে তো বলেছি অন্য রুমে যেতে।কিন্তু আমাকে ছেড়ে একা তো ঘুমাতে বলিনি।
- আপনি হচ্ছেন গিরগিটি। ক্ষনে ক্ষনে রুপ বদলান।আপনি আসলে কি চান বুঝা বড় দায়।
তন্ময় হেসে বলল, আপাতত তোমার পাশে ঘুমাতে চাইছি।দিবা না ঘুমাতে?
আমি কিছু বলতে পারলাম না।ছেলেটা এমন কেন?
.
অনেক রাত অব্দি দুজনে জেগে রইলাম। কখনো খুনসুটি, দুষ্টুমি, ঝগড়া, ফাজলামি,গল্প,কিছু অনুভূতি, সব মিলিয়ে খুব সুন্দর কাটল রাত টা!
.
পরদিন
আজ তন্ময়ের এক বন্ধুর বাসায় দাওয়াত আছে।এই প্রথম ওর সাথে বের হচ্ছি।কেমন যেন ভয় ভয় লাগছে!
তন্ময় বের হয়েই বলল,হাটার সময় আমার মুখের দিকে তাকাবা না।তুমি মাথা উপরে তুলে আমার দিকে তাকাও ব্যাপার টা দেখলে হাসি পায়।
আমি কিছু বললাম না।শুনতে খারাপ লাগলেও চুপচাপ শুনে গেলাম।বিয়ের প্রথম রাত থেকেই ওর মুখে এমন কথা শুনতে শুনতে অভ্যাস হয়ে গেছে।
.
ওর বন্ধুর বাসায় পৌছলাম। সকলেই উতসাহের সাথে আমাদের অভ্যর্থনা জানালেন। বেশ ভালই লাগছে।আরও অনেকেই এসেছেন। তাদের প্রায় সকলেই তন্ময়ের কলিগ।তন্ময় সবার সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিলো।
আমার মনটা ভীষন ভালো লাগছে।আশংকা ছিল তন্ময় আমাকে নিয়ে বিব্রতবোধ করবে।কিন্তু ওকে দেখে মনে হচ্ছে ও খুব আনন্দ করছে।আমার আনন্দ দ্বিগুণ হয়ে গেল ওর হাসিমুখ দেখে"
.
এমন সময় তন্ময়ের গার্ল ফ্রেন্ড মিমি আসল।মিমি ও থাকবে এখানে এটা আমি জানতাম না।
তন্ময় বলল,আমাকে ও বলা হয়নি মিমি আসবে এখানে।জানতে পারলে এখানে আসতাম না।ওকে আজকাল অসহ্য লাগে।
তন্ময়ের মুখে এ কথা শুনে স্বস্তি পেলাম।
.
অনেক্ষন ধরে তন্ময় ও মিমি দূরে দারিয়ে কথা বলছে।তন্ময়কে দেখে মনে হচ্ছে ও খুব উত্তেজিত। রেগে গেছে ভীষন।ওকে সামলাতে হবে।কিন্তু আমি ওখানে গেলে হয়ত আরও বেশি রেগে যাবে।দূরে দারিয়ে দেখতে লাগলাম।
.
তন্ময়ের একজন বন্ধু এসে বলল,ভাবি আপনি এখানে কেন? তন্ময়কে মিমি বাজে কথা বলছে।ওখানে চলুন।
- কিন্তু ও হয়ত রেগে যাবে।
- মিমির বিহ্যাভ সুবিধার না।আপনি আসুন তো।
.
ওদের পাশে গিয়ে দারাতেই মিমি আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল,শর্ট হলে কি হবে।তামিল নায়িকা বটে।
আমি বুঝতে পারলাম আমার ব্যাপারেই কিছু কথা হচ্ছিল।ইচ্ছে করছে এখান থেকে সরে যাই,কিন্তু তন্ময় কেও নিয়ে যেতে হবে।
.
মিমি তন্ময় কে বলল, আচ্ছা তোমার মনে আছে একবার সরকারি কলেজের এক মেয়ে তোমায় প্রপোজ করছিল আর তুমি কি জবাব দিছিলা?
তন্ময় বলল,অনেক মেয়েই আমাকে প্রপোজ করেছিল।এসব ছোট খাটো ব্যাপার আমি মনে রাখিনা।
- তাহলে মনে করিয়ে দেই? তুমি বলছিলা,নিজের হাইট টা ফিতা দিয়ে মাপিও।দেশে অনেক বাইটটা পোলাপান আছে,তাদের কাউকে খুজে নিও।আমি তোমার জন্য না।
আমি মনে মনে ভীষন রেগে গেলাম।ও আমাকে অপমান করছে,সেই সাথে তন্ময় কেও।
তন্ময় বলল,তখন বুঝিনি।এখন বুঝি।উচ্চতা কোনো ব্যাপার না।
- ব্যাপার না? তুমি যদি হাফ টিকেট হতে,তাহলে কি ডিফেন্সে আসতে পারতে? আমাদের can't এরিয়ায় একটা শর্ট মানুষ খুজে বের করো দেখি।
তন্ময় রেগে বলল আমি তোমার সাথে কথা বলতে চাইছি না।আমাকে বিরক্ত করোনা।
- তাই নাকি? বউ পেয়েছ বলে? তন্ময়, এই মেয়েটার মাঝে কি আছে?
আমি প্রচণ্ড রেগে গেলাম।চুপচাপ শুনে যাচ্ছি।আমার বর কি বলে সেটা শুনার জন্য।
মিমি উপহাস করেই চলেছে।
তন্ময়ের বন্ধু তাসিন বলল, মিমি,লিমিট ক্রস করিও না।
মিমি বলল,আমার আর তন্ময়ের মাঝে কখনো কোনো লিমিট ছিলনা।
- কিন্তু এখন আছে।মিফতা সব সহ্য করে যাচ্ছে।তুমি ওকে এভাবে অপমান করতে পারোনা।
- কেন পারিনা? তন্ময়ের সাথে আমার এফেয়ার দীর্ঘ সময়ের।তন্ময় আমাকে ঠকিয়ে একটা পুচকে মেয়েকে বিয়ে করবে আর আমি চুপচাপ দেখবো?
তাসিন ভাইয়া বলল,তাহলে কি তোমাকে বিয়ে করা উচিৎ ছিল? তন্ময়ের বউ হওয়ার যোগ্যতা তোমার নাই মিমি।তন্ময় যেমন পরিবারের ছেলে,তুমি কোনোদিক দিয়েই তার কাছে ঘেসতে পারবা না।কারণ তোমার মানসিকতা অত্যন্ত নিম্নমানের।
আমি চুপ করে আছি।তাসিন ভাইয়ার জবাব টা ভালো লেগেছে।তন্ময় রাগে ফুঁসছে।
মিমি রেগে বলল,তাই নাকি? এই মেয়েটার যোগ্যতা আছে?
- হুম আছে।মিফতার বিহ্যাভেই আমরা বুঝে গেছি।আর ও শুধুমাত্র একটু শর্তা। কিন্তু অন্য সব দিক দিয়েই ওর উচ্চতা কোনো অংশে কম না।
- বাহ! ওর হয়ে এত কথা বলছ যে?
তাসিন বলল,ন্যায় অন্যায় বোধ টা আমাকে খুব নাড়া দেয়।কেউ অন্যায় কথা বললে আমি চুপ থাকতে পারিনা।আর তুমি বারবার শর্ট শর্ট করছ কেন? আমি যাকে ভালবাসি তার সাথে আমার ফেসবুকে পরিচয়। ওর হাইট আমি জানতাম না।আমি ওকে সত্যিই ভালবাসি। যখন দেখা হল তখন দেখি ও আমার চেয়ে অনেক শর্ট। তাই বলে কি আমি ওকে ছেড়ে দিবো? আমার ফ্যামিলি না চাইলেও আমি অকেই বিয়ে করবো। আর এখানে মিফতা তন্ময়ের বিয়ে করা বউ।
মিমি রেগে বলল,নিজে ভালোবাসো বলে ছাড়তে পারবা না।আর আমাদের এত বছরের রিলেশন? আমিও তো তন্ময় কে অনেক ভালবাসি। ও আমাকে ধোকা দিলো।
.
আমার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।এখানে আর থাকতে পারছিনা।ভাবলাম তন্ময় কে নিয়ে চলে যাবো কিন্তু তন্ময় রেগে বলল,ভালবাসার মানুষ কে এভাবে অপমান করা যায়? অনেকবার অপমান করেছ আমাকে।আসলে তুমি ভালবাসার মানেই বুঝো না।আমার আম্মু ঠিক ই বলেছে,তোমাকে বিয়ে করলে আমি এক মাসের বেশি ভালো থাকতে পারতাম না।কিভাবে এতদিন ধরে রিলেশন চলেছিল কে জানে!
মিমি হুংকার দিয়ে উঠল। পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে।সকলে আমাদের চারপাশে এসে দারিয়েছে।
অনেক চেষ্টা করলাম তন্ময় কে এখান থেকে সরানোর।কিন্তু পারছিনা।ওরা তর্ক করেই যাচ্ছে।তাসিন ভাইয়াও অনেক চেষ্টা করলেন কিন্তু কেউই থামল না।
এক পর্যায়ে মিমি তন্ময়ের কলার টেনে ধরে হুমকি দিলো। আমি আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না।মিমির সামনে দারিয়ে বললাম,শুধু লম্বাই হয়েছ।বিবেক বুদ্ধি হাটুর উপরে উঠেনি।কোন পরিবেশে কার সাথে কিভাবে কথা বলা উচিৎ সেটাও জানো না।এত লম্বা হয়ে কি লাভ হলো তোমার? নিজের উচ্চতা কোথায় প্রমাণ করে দিলে আজ।পার্টি টাই নষ্ট করে দিলে।
সকলে নিশ্চুপ হয়ে গেছে আমার কথায়।রাগেমাথায় কি যে বললাম! আর এখানে থাকা যাবেনা।
তন্ময় কে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসলাম।
.
আমার খুব মন খারাপ। রাগ ও হচ্ছে প্রচুর। এরকম পরিস্থিতি তে জীবনে প্রথম বারের মত পড়লাম।আমার উচ্চতার জন্য কখনো কোথাও অপমানিত হতে হয়নি।আজ বিয়ে করে এভাবে অপমানিত হলাম।আমার কি অপরাধ ছিল! তন্ময়ের পাশে দারিয়ে থাকতেও আর ইচ্ছে করছে না।
তন্ময় বলল,থ্যাংকস মিফতা।তুমি ব্যাপার টা শেষ করে না দিলে হয়ত আরও খারাপ হত।আমি খুব রাগী জানোই তো।এত বেশি রেগে গিয়েছিলাম, আর একটু হলেই তো ওকে থাপ্পড় লাগাতাম।
আমি চুপ করে আছি।তন্ময়ের কথা শুনতে ইচ্ছে করছে না।
তন্ময় বলল,আমিতো ভেবেছিলাম তুমি পাবলিক প্লেসে কথাই বলতে পারবা না।কিন্তু তুমিতো দেখছি যোগ্য জবাব দিতে পারো।
আমার রাগ বেড়ে যাচ্ছে।নিজের উপর,তন্ময়ের উপর আর আমার পরিবারের প্রতি।
আমার কাউকেই চাইনা।আমি আমার অবস্থাতেই অনেক ভালো ছিলাম। হঠাত বিয়েটা হয়ে সব সময় অপমানিত হচ্ছি।
তন্ময় আমার হাত ধরে বলল,আমার মিষ্টি বউ।
আমি ওর হাত সরিয়ে দিয়ে বললাম,আমি আমার মত থাকতে চাই।আপনার তো আমাকে নিয়ে অনেক অসুবিধা হয়।আজ থেকে আর হবেনা।
- কি বলছ এসব?
- হুম।বলেছিলেন, মা বাবা চলে যাওয়ার পর থেকে আর আমার মুখ দেখতে চাননা।আর দেখতে হবেনা।
বলেই হাটা শুরু করলাম। তন্ময় ছুটে এসে অনেক কথাই বলল।ওকে বললাম নিজের বাসায় চলে যেতে।আমি একাই অনেক ভালো ছিলাম।
তন্ময় কে রেখেই সিএনজি তে করে বাসায় চলে এলাম।চোখ দুটো আর বাধা মানছে না।অবহেলা,অপমান, রাগ সব মিলিয়ে অনেক বড় আঘাত পেয়েছি।অজস্র চোখের জলে ব্যাথা টাকে ভুলতে চাই।

রাত একটা।
অনেক চেষ্টা করেও ঘুমাতে পারছিনা।বারবার শুধু আজ দিনের ঘটনাটা মনে পড়ে যাচ্ছে।আমার জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময় পার করেছি আজ।
তন্ময়ের প্রতি ভীষন রাগ হয়েছিল।তাই ওকে ছেড়ে চলে এসেছি।এখন ও কোথায় আছে জানিনা।বারবার মনে পড়ে যাচ্ছে ওকে।এভাবে ছেড়ে চলে আসাটা উচিৎ হয়নি।বিয়ের পর প্রথম দিকে ও আমাকে সহ্য করতে পারত না।সে নিজেই কাল আমার দুয়ারে এসে দারিয়েছিল।আমার জন্য দামি ফোন কিনে এনেছে,বন্ধুর বাসায় বেরাতে নিয়ে গেছে,আর গত রাতের মত সুন্দর একটা রাত উপহার দিয়েছে।আমার প্রতি কিছুটা হলেও ওর ভালবাসা জন্মেছে।
ভাবতে ভাবতে মন ভালো হতে শুরু করেছে।তন্ময়ের দেয়া মোবাইল টা হাতে নিয়ে দেখতে লাগলাম। গ্যালারিতে ঢুকেই দেখি তন্ময়ের ৫০০ টা ছবি! অন্যরকম এক ভালোলাগা কাজ করলো। ও সারাক্ষণ কাজে ব্যস্ত থাকবে আর আমি এই ছবিগুলা দেখে ওর কথা ভাব্ব।আমার জন্য এতগুলা ছবি উপহার! ভালবাসা না থাকলে এটা করত না।
.
খুশি মনে ওর সব ছবি দেখতে লাগলাম। বিভিন্ন ভঙ্গিতে তোলা ছবি।এখন আর মন খারাপ ভাব টা নেই।বেশ ভাল লাগছে!
কিন্তু তন্ময় এখন কোথায়য়? বাসায় কেউ নেই।একা একা সেখানে কি করছে কে জানে! হয়ত না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছে। আর নয়ত জেগে বসে আছে।
.
আর থাকতে পারলাম না।কল দিয়েই ফেললাম।কিন্তু ওর নাম্বার বন্ধ।পরপর অনেকবার কল দিলাম। বন্ধ দেখাচ্ছে।
ভীষন চিন্তা হচ্ছে।হয়ত আমার প্রতি রাগ করেছে।ওর ছবিগুলা দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়লাম।
.
ঘুম থেকে উঠেই তন্ময় কে কল করলাম। নাম্বার এখনো বন্ধ।মনটা খারাপ হয়ে গেল।
সারাদিন কল দিতেই থাকলাম। প্রতিবার শুনতে পেলাম, সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছেনা।
.
রাতে ঘুমাতে পারলাম না।
পরদিন সকাল হতে না হতেই শ্বশুরবাড়ি চলে আসলাম। এখন ওকে বাসায় পাওয়া যাবে।এত সকালে নিশ্চয়ই ডিউটিতে যায়নি।
কিন্তু বাসায় এসে দেখি মেইন দরজা তালাবন্ধ। তারমানে তন্ময় বাসায় ছিলনা।ও কোথায় থাকতে পারে সেই ধারনা আমার নেই।মন খারাপ করে বাসায় চলে আসলাম।
.
তিনদিন ধরে ওর কোনো খোজ পাচ্ছিনা।প্রতিমুহুর্তে খুব মনে পড়ছে বলে তিন দিন কেই অনেক দীর্ঘ সময় মনে হচ্ছে।
মা বাবা অনেক ভরসা করে আমার উপর দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। তারা যদি এই মুহুর্তে ফোন দিয়ে তন্ময়ের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে আমি কি জবাব দিবো? তন্ময় তো আমার কাছে এসেছিল।আমি নিজেই ওকে ছেড়ে চলে এসেছি।
বুক ফেটে কান্না আসছে।ভীসন রাগ হচ্ছে নিজের প্রতি।
.
মোবাইল বেজে উঠল। তাকিয়ে দেখি তন্ময়ের নাম্বার থেকে কল।রিসিভ করেই কেদে ফেললাম।
তন্ময় শুধু বলল,মিফতা...
ওর কণ্ঠ শুনেই স্বস্তি পাচ্ছি।
বললাম,কি হইছিল আপনার? কোথায় হারিয়ে গেলেন?
- ভিডিও কল দিই প্লিজ?
- হুম দিন।
তন্ময় ভিডিও কল করল।ওকে দেখে ভয় পেয়ে গেলাম।এ কি ভয়ংকর চেহারা হয়েছে! বুঝতে পারলাম ও হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে।বিপদের আশংকায় বুকটা কেপে উঠল আমার।
তন্ময় বলল,sorry মিফতা।
আমি কাদতে কাদতে বললাম আপনার কি হইছে?
-accident...
ওকে দেখে আমার ভীষন কস্ট হতে লাগল।তন্ময় বলল,এই কদিন আমি অচেতন অবস্থায় ছিলাম। তোমাকে কল দেয়ার মত কেউ ছিলনা।
- আমি অনেক ট্রাই করেছি..
- বললাম তো আমি অচেতন অবস্থায় ছিলাম।হুশ ছিলনা।
- কিভাবে এমন হল? আপনার কি খুব কষ্ট হচ্ছে? এখন কেমন আছেন?
- এত প্রশ্ন! তুমি আসো আমার কাছে। কষ্ট হচ্ছে আমার।
.
ফোন রেখে তন্ময়ের প্রিয় খাবার রান্না করলাম। নিজের প্রতি খুব রাগ হচ্ছে।মা বাবা অনেক দূরে আছেন। তন্ময়ের আপন বলতে এখন শুধুই আমি।সেই আমিই ওর বিপদে পাশে নেই..
.
তন্ময় আমাকে দেখে মানসিক শান্তি পেয়েছে বুঝতে পারছি।কিন্তু আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।খুব করুন অবস্থা ওর।পায়ের উপর দিয়ে গাড়ির চাকা চলে গেছে।ওর কষ্ট টা আমিও অনুভব করছি।বুক ফেটে কান্না আসছে।ও কথা বলতে পারছে,হাত নারাতে পারছে কিন্তু উঠে বসতে পারছে না।ওঠার শক্তি নেই।পা দুটোর কথা ভেবে ডুকরে কেঁদে উঠলাম।
আমার বর! আমার সবচেয়ে আপনজন। ওর এই অবস্থা আমি মেনে নিতে পারছিনা।
.
অনেক কষ্টে হালকা কিছু খেতে পারল ও।
আমাকে কাছে ডাকতেই ওর পাশে গিয়ে বসলাম।
ও বলল,মিফতা তোমার হাত ধরবো একটু?
আমি তন্ময়ের হাত ধরলাম।
তন্ময় মায়াভরা চোখে তাকিয়ে আছে।
বলল,এত ভেঙে পড়োনা।আমি সুস্থ হয়ে যাব।
- আপনার পায়ের অবস্থা খুবই খারাপ।
- আমি বুঝি সেটা মিফতা।কেদোনা পাগলী।এই accident টার খুব দরকার ছিল।
আমি বললাম,কি বলছেন এসব?
- হুম।এটার প্রয়োজন ছিল।আমি আমি বুঝতে পারছি আমার ভুল টা। তুমি একজন সুস্থ,পরিপুর্ন,সুন্দর একটা মানুষ। কিন্তু আমি তোমায় ছোট করেছি অনেকবার।আমি তোমার তুলনায় একটু লম্বা বলে খুব ভাব নিতাম। কিন্তু আজ যদি আমার পা দুটো কেটে ফেলত,কোথায় যেত আমার অহংকার? সারাজীবন হুইল চেয়ারে করে চলাফেরা করতে হত।অন্যের উপর নির্ভর করে বাচতে হত।
আমি ওকে নিষেধ করে বললাম, এসব কি বলছেন? এভাবে বলবেন না প্লিজ।আমার কষ্ট হয়।
তন্ময় বলল,আমাকে বলতে দাও মিফতা।স্বীকার করতে দাও।এই সময়ে আমি কাউকেই পাশে পেতাম না।আমার আব্বু আম্মু অনেক দূরে।আমার কোনো ভাইবোন নেই।মিমি কখনোই এখানে এসে আমার সেবা করত না।আজ বুঝি, আমার একমাত্র আপনজন এখন তুমি।এটা বুঝার জন্য এই accident টার খুব দরকার ছিল।আমার পা যতদিন ঠিক হয়নি,আমি তোমার উপর নির্ভর করে থাকবো।
আমি কাদতে কাদতে বললাম,সেদিন আমার ওরকম করা উচিৎ হয়নি।Sorry... আমাকে মাফ করে দিন।
- করবো। তবে শর্ত আছে।
- কি? বলুন?
- আমার একটা ইচ্ছে হচ্ছে।পুরন করবা?
- হুম।বলুন।
তন্ময় বলল,আমি ১০০ টা বিয়ে করতে চাই।
- কিহ! ১০০ টা বিয়ে!
- হুম।তবে সেটা শুধু একজন কেই।সে হচ্ছে আমার বিয়ে করা বউ।সে বিয়ের রাতে আমার কাছে ডিভোর্স চেয়েছিল। তাই আমি চাই,তাকে ১০০ বার করতে।শুধু আমার বউ মিফতাকে।১০০ বার বিয়ে করবো। আর হাজারো উপায়ে ভালোবাসব।
আমি হেসে বললাম,পাগল হলেন নাকি?
- হুম হলাম।করবা না আমায় বিয়ে?
- তাই বলে ১০০ বার?
- হুম।মুমূর্ষু রোগীর ইচ্ছা পুরন করবা না?
আমি হেসে বললাম,আপনাকে কি ১০০ বার বিয়ে করার অনুমতি দিবে?
- কেন দিবেনা? আমি তো ১০০ জনকে বিয়ে করবো না।আমি আমার বিয়ে করা একমাত্র বউকে বারবার বিয়ে করবো। আর যদি কেউ ঝামেলা করে তাহলে তুমি কবুল বলবা,আমি কবুল বলব ব্যস বিয়ে হয়ে গেল।
- তাই?
- হুম।আর যদি কেউ ঝামেলা না করে ১০০ বার ই বিয়ে করব কাজি ডেকে।
- কাজি যদি না পরায়?
- তাহলে সারাদেশ ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন কাজি অফিসে গিয়ে বিয়ে করবো।
- পাগল হয়ে গেছেন আপনি?
- এত আপনি আপনি করবা না তো। আমার ঘুম পাচ্ছে।ঘুম পাড়িয়ে দাও।
.
তন্ময় কে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বললাম।তিনি বললেন অনেক সময় লাগবে সুস্থ হতে।ওষুধ খাওয়ানো, পরিচর্যার নিয়ম,চলাফেরা,সেবা যত্ন সবকিছুই বিস্তারিত বুঝিয়ে নিলাম ডাক্তারের কাছ থেকে।আমার প্রচেষ্টা আর সেবা যত্ন দিয়ে ওকে খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ করে তুলতে হবে।বাবা মা হজ্ব থেকে ফিরে আসার আগেই ওকে হাটতে হবে।
.
হাসপাতাল থেকে বাসায় নিয়ে এসে নিয়মিত ওর সেবা করতে লাগলাম। দুজনে মিলে অনেক ভালো সময় কাটাচ্ছি।
তন্ময় সেদিন বলল,অসুস্থ হয়ে বেশ ভালই হইছে।বাসায় বসে বসে বউয়ের ভালোবাসায় স্বর্গে এসে গেছি।
.
অনেক সময় লাগল তন্ময় সুস্থ হতে।আজ ও মাটিতে পা ফেলতে পেরেছে।খুব আনন্দ হচ্ছে।
.
মা বাবা হজ্ব থেকে ফিরে আসলেন। তন্ময় এখন পুরোপুরি সুস্থ।
খুব ধুমধাম করে আমাদের বিয়ের অনুষ্ঠান হলো।
.
আজ আবারো সুন্দর করে বাসর ঘর সাজানো হয়েছে।
আমি বউ সেজে বসে আছি।আজ খুব খুশি খুশি লাগছে।
.
তন্ময় এসে আমার পাশে বসল।ওর চোখে দুষ্টুমি ভরা হাসি।
আমি বললাম,বিয়ের প্রথম রাতে কি বলছিলা মনে আছে? আমি নাকি তোমার শর্ট বউ,তোমার মহা এলার্জি?
তন্ময় আমার নাক টেনে ধরে বলল,এই মহা এলার্জি টাই তো আমার জীবন।এই মিষ্টি বউ টার জন্যই সবকিছুকে এত সুন্দর উপভোগ করতে পারছি।
- যাও হইছে।আর বলতে হবেনা।
- কই যাবো? আজও আলাদা ঘুমাতে বলছ নাকি? আজ প্রাইম মিনিস্টার কল দিয়ে ডাকলেও আমি তোমাকে ছেড়ে যাচ্ছিনা।
আমি হেসে বললাম,এত প্রেম?
- হুম।আচ্ছা মিফতা আমরা যদি ১০০ বার বিয়ে করি,আমাদের ১০০ বার বাসর হবে।আর ১০০ টা বাচ্চাও হবে তাইনা?
আমি রেগে তাকালাম। তন্ময় শব্দ করে হাসতে লাগল।
মুগ্ধ হয়ে দেখছি ওর হাসিটা।এই ছেলে টাই আমার বর;আমার পৃথিবী!

āĻ•োāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāχ:

āĻāĻ•āϟি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āϟ āĻ•āϰুāύ