#এক তিল ভালোবাসা।
লেখা: Umme Nipa
ভোরে খবরের কাগজ হাতে নিয়ে সুহান এর দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি।
ও ঘুমাচ্ছে।মাঝে মাঝে চোখ নড়ে উঠছে আবার ঘুমিয়ে পড়ছে।আর আমি আমার চোখে পলক ও ফেলছিনা।
কিছুক্ষন পর সুহান এর চোখের পাতা টেনে ধরে বললাম,ওঠো এখন।
ও আমায় জিজ্ঞেস করছে কি হল?এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
আমি: ওঠো আগে তারপর বুঝাচ্ছি।
সুহান: আজ তো অফিস অফ।মাথা ঠিক আছে?
আমি ওর হাত ধরে টান দিয়ে ওঠালাম।
আমি: দেখো খবরের কাগজ।
সুহান: কেন আমার ছবি ছাঁপিয়েছে বুঝি?
আমি: ভন্ডামি রেখে দেখো।
খবরের কাগজে "তিল এর উদ্দেশ্য" সম্পর্কে লিখেছে।
ছেলেদের ঠোঁট এর নিচে তিল থাকলে সে ছেলেরা তাদের বউকে ভালোবাসে।
সুহান: তো কি হইছে তাতে?
আমি: বিয়ের আগে না তোমার ঠোঁটের নিচে তিল ছিল?এখন দেখছিনা কেন?
সুহান: তিল বউ দেখে পালিয়েছে.
আমি কাঁন্না গলায় বললাম আসলে মানুষ ঠিক ই বলে প্রেম করে বিয়ে করতে নেই।ভালোবাসা পালায়..সাথে তিল ও পালায়।আমার কপালে ভালোবাসা নেই।
সুহান: কেঁদ না তো..মনে হয় সেভ করতে গিয়ে তিল ও চলে গেছে।
আমি: তাহলে তুমি গেলা না কেন?এই বলে ওর মুখের উপর কাগজ মেরে চলে গেলাম।
সুহান: কাল থেকে এই খবরের কাগজ রাখা যাবেনা। কি সব আজে বাজে নিউজ।এরা সংসার ভাঙার প্লান শুরু করছে।
সুহান রুম থেকে চেঁচিয়ে বলছে,মেয়েদের হাতে তিল থাকলে নাকি রান্না ভালো হয়।
আমি তো এ একবছর নাক-চোখ বন্ধ করে খাচ্ছি।আচ্ছা তিল কি বানানো যায়?
চলো তোমার হাতে একটা বানিয়ে আনি।
আমি: আমার রান্না করা খাবারে বিষ মিশিয়ে মারবো তোমায়।
সুহান রান্নাঘরের দরজার সামনে ব্রাশ হাতে নিয়ে দাড়িয়ে বলছে, যে রান্না হজম করতেছি এতদিন, তাতে মনে হয়না,কোন বিষ ই আমায় ঘায়েল করতে পারবে।
আমি: এই চামচ মারার আগে আমার সামনে দিয়া যাও।
সুহান: ঘাড়ে তিল আছে নাকি?দেখতে আসলাম।।
ঘাড়ে তিল থাকলে স্বামি খুনি হয়।
আমি: ঘাড়ে তিল থাক আর না থাক খুনি আমি হব তাতে মিস নাই।
সকাল -সকাল তিল নিয়ে ঝগড়া হয়ে গেল।সারাদিন ওর সাথে কথা বলিনি।ও মাঝে মাঝে আমায় হাসাতে চেয়েছে আমি মুখ বাঁকিয়ে সরে গেছি।
আগে ঝগড়া হলে আমি খেতাম না।ও ঠিক ঠাকছে খেত।আর আমায় বলতো ও না খেতে।তাই এখন যত ঝগড়াই হোক খাওয়া বাদ দেইনা।বরং ওর উপর জেদ করে বেশি বেশি খাই।
রাতে দুজন মিলে বাংলা সিনেমা দেখছি।নায়ক রিয়াজ আর নায়িকা শাবনূর।এক কালে রিয়াজ আমার খুব পছন্দের নায়ক ছিল।
সুহান এর হাসি অনেকটা রিয়াজ এর মতন তাই ওর প্রেমে পরেছিলাম।
এখন ওই হাসি ই আমার গা জ্বলার কারন।
আমি যত রাগি তার হাসির মাত্রা ততো বাড়ে। চাহিদা আর যোগান এর সম্পর্ক আরকি।
ছবি দেখছি আর বলছি,হায়রে রিয়াজ! আমি কয়লাকে হিরা ভেবে ভুল করেছিলাম।
সুহান: এটা কোন মুভির ডায়ালগ?
আমি আবার মুখ বাঁকালাম। কথা বলবোই না।
এক পর্যায় সিনামায়,শাবনূর ঘুমিয়ে আছে আর রিয়াজ পাশে বসে বলছে বিধাতা বানিয়েছেন কি যত্ন করে।
আমি দীর্ঘনিঃশ্বাস নিয়ে বললাম,আমায় এমন কেউ বলার নেই।আমি ঘুমানের আগেই সবাই মরার মতন ঘুমিয়ে যায়।
সুহান: ওমন পাম দিছে শাবনূর রে, তাই এখন এমন মোটা হইয়া গেছে।
আমি চাইনা তুমিও ওমন হও।
ধূর!টেলিভিশন বন্ধ করে দিলাম। এর সাথে বসে কিছুই দেখা যায়না। না আছে আবেগ না আছে বিবেক। আহাম্মক প্রকৃতির লোক...
রাতের খাবার খেয়েই সুহান শুয়ে পরলো।আমি শাবনুর এর মতন সাজতে বসলাম।কি সুন্দর কপালে টিপ দিয়ে ঘুমায়।আমি কখনই টিপ দিয়ে ঘুমাইনি তাই হয়তো সুহান আমার প্রশংসা করে না।কপালে টিপ দিয়ে,সেজে-গুজে ঘুমালাম।
সকালে ঘুম ভেঙে দেখি সুহান আমার দিকে তাকিয়ে আছে।মনে মনে ভাবলাম আমার আইডিয়া কাজে দিছে।নিশ্চই এখন আমায় বলবে,বিধাতার অপরূপ সৃষ্টি..
আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম,কি আমার দিকে তাকিয়ে আছো কেন?নজর লাগবে যে..
সুহান: যা ভাবছিলাম তাই হল।
কি বিষণ্ণ দেখাচ্ছে সুহানকে।
আমি অবাক হয়ে বললাম,কি হয়েছে?
সুহান: ইরা তোমার গলায় তিল।গলা আর ঘাড়ে তিল থাকা মানে স্বামীকে খুন করে।তার মানে আমি কি তোমার হাতে খুন হতে চলেছি?
আমি ভয় নিয়ে,গলায় হাত দিয়ে দেখি গত রাতের কপালে দেয়া টিপ ঘুমের মাঝে গলায় এসে লেগে আছে।
আমি টিপ টা নিয়ে ওর হাতে দিয়ে বললাম,আহাম্মক এটা টিপ, তিলনা।
সুহান: আহ যাক বাঁচা গেল।
আজ ও আবার সকাল সকাল মুডটাই খারাপ করে দিল।কি ভাবলাম আর কি হল..
টিপ ও বা কপাল রেখে গলায় কেন গেল।ধূরর..
ফ্রেস হয়ে বের হয়েই দেখি সুহান আমার কাছে হাসি মুখে এসে বলছে,ইরা তুমি কি চোখের মাথা খেয়েছো?
আমার ঠোঁট এর নিচে তিলটা তো এখনো আছে।
ও আমায় জড়িয়ে ধরে বলছে,আগের চেয়ে তিলটা গাঢ় হয়েছে।তার মানে আগের চেয়েও বেশি ভালোবাসি।
আমিও খুশি হয়ে হাত দিয়ে ওর তিল টা ধরবো এমন সময়ে ও চেঁচিয়ে বলে, ধরো না,উঠে যাবে।
পরে দেখি ওটা আমার টিপ।
আমি: এতো বড় মিথ্যাবাদী তুমি?
সুহান: তিল থাকলেই তো হয়,আসল-নকল আছে নাকি?
আমি: বিয়ের আগেও তুমি নকল দিয়ে আসতা মনে হয়।যাও আজ ঘরে রান্না ও হবেনা। না খেয়ে থাকো।
সুহান: চা তো দিবা।
আমি: না তা ও হবেনা।
আমি বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরলাম।
সুহান আমার পাশে বসে আছে।
কিছুক্ষন পর চেঁচিয়ে বলছে,ইরা আমরা তো বিদেশে যাচ্ছি।
আমি ওর কথায় কান না দিয়ে অন্য দিকে ফিরে শুলাম।
সুহান: এই ওঠো..দেখো তোমার পায়ে তিল।পায়ে তিল থাকলে বিদেশ কনফার্ম।
আমি উঠে বসে বললাম,আমি বিদেশ গেলে তোমার কি?পায়ে তিল আমার, গেলে আমি যাব। তুমি তাহলে শান্তিতেই থাকতে পারবা।
ও আমায় ওর কাছে নিয়ে বললো,তুমি জাহান্নামে গেলেও আমায় নিয়েই যাবা তা আমি জানি।
আমি: শোন বিদেশে গিয়ে কিন্তু আমায় Mam বলবা।
সুহান: ok Mam.
আমি: মাঝে মাঝে Dear বা Darling ও বলতে পারো।ঝগড়া করা যাবেনা। আর ইংরেজিতে কথা বলবা সবসময়।
সুহান: Ok dear.Now pls give me a cup of tea Darling.
আমি ভ্রু কুঁচকিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,এখন না বিদেশ গিয়ে।
সুহান: আরে এখন থেকে প্রাকটিস করছি।যাও তুমি বিদেশি ম্যামদের মতন চা বানিয়ে আনো।
আমি: আমাকে বোকা পেয়েছো?তুমি বলবা আর আমি চা আনতে যাব? বিদেশে ছেলেরা রান্না করে।যাও এখন ই চা বানাতে।নইলে বিদেশ নিব না।
সুহান: ইরা প্লিস..
আমি: যাও বলছি।নইলে বাসা থেকে চলে যাব। চা করে আনো।আর অবশ্যই যেন দোকানদার রা যেমন চামচ দিয়ে চা নাড়ার সময় শব্দ হয়, ঠিক তেমন শব্দ যেন আমি রুম থেকে শুনতে পাই।
সুহান মুখ পেঁচার মতন করে চা বানাতে গেল।
আমি পা দুলাচ্ছি আর পেপার পড়ছি।
মাঝে মাঝে পাতিলে পাতিল টাক দেয়ার শব্দ পাচ্ছি।
আমি চেঁচিয়ে বললাম,কিসের শব্দ?তোমায় না বললাম চা নাড়ায় শব্দ করতে..তুমি পাতিল ভাঙছো কেন?
সুহান: পাতিল ভাঙি না।আমার কপাল ভাঙি।
কপালে পাতিল দিয়ে মারতেছি।
আমি: কেন?ওমন করে চা বানায়?
সুহান: কপালে নাকি বউ থাকে,বউরে তো মারতে পারবোনা, তাই কপালে মেরে মনে মনে ভাবছি বউকে মারছি।
আমি: চা বানাও বক বক না করে :/
#এটি একটি কাল্পনিক চরিত্র।
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ