āϰāĻŦিāĻŦাāϰ, ā§§ā§­ āĻĄিāϏেāĻŽ্āĻŦāϰ, ⧍ā§Ļā§§ā§­

3879 (2)

#সতীদাহ ৩য় পর্ব।
লেখা: Umme Nipa

একে একে আমাদের বাড়িতে আত্মীয়পরিজন আসতে শুরু
করে।
বাড়ি ভর্তি অতিথি। পূজো তার পর পর ই বিয়ে এই নিয়ে সবাই ব্যস্ত।

এর মাঝে মল্লিকার মা-বাবা আমায় এসে দেখে যায়।
পূজোতে আমায় এবং আমার বোনকে নতুন পোষাক
দিয়েছেন যা আমার বাবার পছন্দ হলেও মা এর পছন্দ
হয়নি।
যতদূর শুনেছি,মল্লিকা আমার ছবি ও দেখেনি।সে তার
মা-বাবার উপর অন্ধ বিশ্বাস রেখে আমায় বিয়ে করতে
চলেছে।

বলতে বলতে বিয়ের দিন চলে আসলো..
আমার বিয়ের চেয়েও বেশি খুশি আজ আমি মল্লিকাকে
দেখবো।

আমি আমার স্বপ্নের মল্লিকার সাথে বাস্তব এর
মল্লিকাকে একে এক মিলাবো..
শুভদৃষ্টির সময় চলে আসতেই আমার বুকের ভিতর আতংক
জমতে শুরু করলো...

মল্লিকাকে নিয়ে আসা হল আমার সামনে।এক জোড়া
পান পাতা দিয়ে সে নিজেকে আড়াল করে রেখেছে।
আড়াল এর পর্ব মোটে যেতেই চায়না যেন।
পান পাতা সরাতেই আমার চোখে ধাঁদা লেগে যায়।
মল্লিকা ঠিক ই বলেছিল,সে প্রদীপ এর চেয়েও উজ্জ্বল...
কি সিগ্ধ চোখ...
এক রাশ মায়া ভীড় করে আছে মুখে। মল্লিকা একবার ও আমার দিকে তাকাচ্ছেনা। মেয়েরা এমন ই,মনের ইচ্ছে
লজ্জায় চাপা পরে যায়।

বিয়ের পর্ব শেষ হতেই কাল রাত্রির জন্য আমি আর মল্লিকাকে দেখতে পারবোনা।
আমাকে আলাদা রুমে ঘুমাতে দেয়া হল।
মা-বাবাকে খুশি ই দেখা যাচ্ছে। হয়তো তাদের যা পাবার তারা পেয়ে গেছে।আমার তা নিয়ে কোন মাথা
ব্যাথা নেই।আমার যা পাবার আমি তার চেয়েও বেশি
কিছু পেয়েছি।
আমি মায়া খুঁজেছি যে মায়ার টানে আমি বার বার
আবদ্ধ হব আমি সেই মায়াই পেয়েছি।
মায়া তার নামে,মায়া তার চোখে..
আমি মায়া দেখেছি তার সর্ব মুখে।
যে মুখে তাকিয়ে অনন্তকাল পাড় করে দেয়া যায়।

সকাল হতেই সব নিয়ম-কানুন মেনে মল্লিকাকে বাড়ির
উদ্দেশ্য করে নিয়ে এলাম।
সারাপথ মেয়েটা কেঁদেছে। মেয়েটা এমন সে কাঁদতে
গেলেও দূর্বল হয়ে যায়।

আমি যে তার বর সেদিকে তার কোন অনুভুতি নেই।সে
কেঁদেই চলেছে আবার সেই কাঁন্না নিজের শাড়ি দিয়ে মুছে ফেলছে।

গুরুজনরা সামনে তাই আমিও তাকে কাঁন্না থামানোর
কথা বলতে পারিনি।
বাড়ি ফিরে মল্লিকাকে আমার কক্ষে নেয়া হল।
মুকুল আমার কানে এসে ফিস ফিস করে বলে দিল,দাদা
আমি কিন্তু সারা বিছানায় ফুল বিছিয়ে এসেছি।তোর
বউ যে হারে কাঁন্না করছে তাতে ফুল ভেসে না গেলে হয়।

আমি: উনি এখনো কাঁন্না করছেন?

মুকুল: আহা কি দরদ।যা গিয়ে থামা।

মল্লিকাকে ভীড় করে আছে সবাই।
মল্লিকাকে দেখার চেয়েও বেশি দেখার ইচ্ছে
মল্লিকার গয়নার ওজন।
কেউ হাত দেখার ছুঁতোয় হাতের বালা আবার কেউ গলার
হার এভাবেই মল্লিকাকে বিচার করছে..

সবাই আমার ঘর থেকে বের হয়ে আমায় পাঠালো..
আমি গিয়ে দেখি মল্লিকার গায়ের গয়না বলতে গলায়
ফুলের মালা আর খোপায় কিছু ফুল..
এছাড়া আর কিছুই নেই..
আমি: আপনার গয়না খুলে রেখেছেন?আমার ঘরে না
রেখে মুকুল এর কাছে রাখুন।এ ঘর নিরাপদ নয়।

মল্লিকা: আপনার মায়ের কাছে দিয়েছি।

আমার বুঝতে বাকি নেই মা ই নিয়ে গেছে।নিজের মাকে
কারো কাছে ছোট করে তুলে ধরতে বিবেক এ বাধে খুব।

আচ্ছা কাঁন্না কি সে গয়নার জন্য করছেন?

মল্লিকা: গয়না আমার এমনিতেও ভালো লাগেনা।কাঁন্না
করছি ছোট বোনদের জন্য।

আমি: ছোট বোন তো আসবে কাল।দেখা হবে,সারাদিন
গল্প করা যাবে তখন।

মল্লিকা:আপনি কি মাস্টারমশাই?

আমি হেসে বললাম হুম কেন?

মল্লিকা: না স্কুলের মাস্টারমশাই
হয়।

আমি: আমিও রাগী। কেউ কাঁন্না করলে আমার রাগ চড়া
হয়ে যায়।

মল্লিকা গুটিসুটি হয়ে বসেছে।আমি বুঝলাম বেচারি ভয়
পেয়েছে।
আমি অনেক কষ্টে হাসি চেপে রাখলাম।এই মেয়ে যদি
জানে যে আমায় স্কুলের কেউ ই ভয় পায়না তাহলে কি
যে করবে..

আমি: শুয়ে পরুন।অনেক রাত হয়েছে।

মল্লিকা: আমি আমার বোন কে না জড়িয়ে ধরে ঘুমোতে
পারিনা।
আমার বোন ও পারেনা।

আমি বললাম,কাল আপনার বোন কে রেখে দিব আমাদের
বাসায় কেমন?এখন ঘুমান।
মল্লিকা শুয়ে পরলো।মেয়েটার বিয়ে, বর এসব বেপারে
কৌতুহল নেই বললেই চলে।
না থাকার ই কথা,বয়স আর কতই বা...এ বয়সে বিয়ে বলতে
কিছু না বোঝার ই কথা।

হঠাৎ করে বিড়বিড় শব্দ শুনে আমার ঘুম ভেঙে যায়।
চোখ খুলে দেখি মল্লিকা আমার হাতের উপর মাথা
রেখে ঘুমিয়ে আছে।
আর বিড়বিড় করে কি যেন বলছে।
আমি মুখের কাছে কান পেতে কথাগুলি শুনতে চাচ্ছি।
ওখানে যাস না.।।চন্দ্রিকা..
এইটুকুই শুনলাম...

আমার চোখ চলে গেল মল্লিকার কপালের সিঁদুর এর উপর।
আমার দেয়া প্রথম উপহার মল্লিকা বহন করছে..
আমি কি ভেবেছিলাম,মল্লিকা আমার ই হবে...?

ভোর হতেই মল্লিকা সজাগ হয়ে আমায়
ডাকছে,মাস্টারমশাই.. ও মাস্টারমশাই..
আমি এ ডাক শুনে ঘুম থেকে উঠে বসি।ঠিক স্বপ্নে
যেভাবে ডেকেছিল ঠিক সেভাবে আজ বাস্তবে মল্লিকা আমায় ডাকলো..

আমি: কি হয়েছে?

মল্লিকা: সকাল হয়েছে সেই কখন..
আমরা বাসায় এই সময় সবাই মিলে খাবার খাই।

এ কথা শুনেই বুঝলাম মল্লিকার ক্ষুধা পেয়েছে..
আচ্ছা দেখছি কি আনা যায়।
বাইরে বের হয়ে দেখি কেউ এখনো জাগেনি।
আমি রান্নাঘরে গিয়ে,মুড়ি আর গুড় পেলাম।এছাড়া কিছু নেই।
সেটা নিয়েই মল্লিকাকে দিলাম।

মল্লিকা সেটা পেয়েই খুশি হয়ে খাচ্ছে আর বলছে চন্দ্রিকার এই খাবার খুব পছন্দ জানেন.

আমি: চন্দ্রিকা কে?

মল্লিকার: মেঝ বোন।

তারমানে কাল এর নাম ই বিড়বিড় করেছে।মল্লিকা এখানে ঠিক ই তবে ওর মন পরে আছে ওর বোনের কাছে।

দুপুরেই মল্লিকার মা,বোন আসলেন..
আমি মল্লিকাকে দেয়া কথা রেখে চন্দ্রিকাকে রেখে দিলাম।

রাতে মায়ের কথার খেলাপ করে চন্দ্রিকাকে আমাদের ঘরে ঘুমাতে দিয়ে আমি স্কুলের কাজ আছে বলে রাত এ
বন্ধুর বাসায় ঘুমালাম।

জানি মল্লিকা আজ ভালো করেই ঘুমাতে পারবে।

একে একে ৬মাস চলে যায়। খুব ভালো ভাবেই যাচ্ছিল।
মল্লিকা এখনো ঠিক প্রথম দেখা মল্লিকার মতন সহজ-সরল। একটুও পরিবর্তন হয়নি।
মুকুল ও এর সাথে বেশ ভাব হয়ে গিয়েছিল।

এর মাঝেই মুকুল এর বিয়ের কথা চলতে থাকে।
বিয়েতে পণ এখানে দ্বিগুণ। মা সব চাপ দিতে থাকে
মল্লিকাকে।মল্লিকাকে তার বাবার কাছে জমি চাইতে
বলা হয়।
ধীরে ধীরে মল্লিকার প্রতি মায়ের অত্যাচার বাড়তে থাকে।

মা যা করতেন তা কখনই আমার সামনে করতেন না,কিন্তু
আমি বাড়িতে ফিরেই বুঝতে পারতাম মল্লিকার মুখ দেখে।

মল্লিকা যেন এক ধাক্কায় অনেক বড় হয়ে গেল।খুব
সহজেই মনের অভিমান চেপে রাখতে পারে..

মুকুলের বিয়ের সময় মল্লিকা তার সকল গয়না মুকুল কে
দিয়ে দেয়।
তবুও মায়ের মন পায়নি সে।

মুকুল চলে যাবার পর আমার স্কুলে বেশিক্ষন থাকতে
ভালো লাগতো না।
বিরতি দিলে বাড়িতে খাবার খেতে আসতাম।
একদিন এসে দেখি মা মল্লিকার থালা থেকে ভাত সরিয়ে নিয়ে বলছে, এতো ভাত ঝি- বউরা খায়?
এতে মানুষ রাক্ষস বলে..
বাপ মা এটা শিখায়নায়..?

আমি এটা দেখে আর চুপ থাকতে পারিনি।
মাকে সেদিন বলেছিলাম,খাবার খরচ লাগলে বেশি দিব
আমি।

তখন মা আরো রেগে গিয়ে মল্লিকাকে কথা শুনালেন,
আমি তাই আর প্রতিবাদ করতাম না।কারন প্রতিবাদ করলেই সেটা মল্লিকার উপর যেত।

মল্লিকাকে আমি শেষ কবে হাসতে দেখেছি আমার মনে নেই।

বেচারি এখন আর আমার সাথেও প্রয়োজন ছাড়া কথা বলেনা।
রাত ছাড়া আমি মল্লিকাকে একা পাইনা বললেই চলে।
সারাদিন একাজ নয়তো ও কাজ।
মুকুল থাকতে কিছু অবসর পেলেও এখন একেবেরাই পায়না।

রাতে শুয়ে মল্লিকার অপেক্ষা করছি।
মল্লিকা এসে আমার পাশে বসে বলছে,মাস্টারমশাই
একটা জিনিস দেখবেন?

আমি অবাক হয়ে বললাম,কি?

সে দুটো কাগজ আমার হাতে দিয়ে বললো কি এগুলো?

আমি কাগজ হাতে নিয়ে দেখি একটা সেই চিঠি আর একটা কবিতা লেখা কাগজ যা আমি মল্লিকাকে নিয়ে
লিখেছিলাম।
আমি ইতস্তত হয়ে বললাম,এগুলো আমার স্কুলের দরকারি কাগজ।

ও আচ্ছা বলে হেরিকেন এর আলো কমিয়ে ওপাশ ফিরে শুয়ে পরলো।
আমি চোখ বন্ধ করতেই ও আমার কানের কাছে ফিস ফিস করে এসে বলে,মাস্টারমশাই আমি না বাংলা বানান
করে পড়তে পারি।

অনেকদিন পর ওকে অনেক খুশি দেখাচ্ছে।আমি বুঝলাম ধীরে ধীরে
ওর ও ভালোবাসা পাওয়ার বাসনা চেপে বসেছে..

চলবে....

নিপার লেখাগুচ্ছ

#সতীদাহ (৪র্থ এবংশেষ পর্ব)
লেখা: Umme Nipa

আমি হেসে বললাম,ওটা আমাদের বিয়ের আগে লেখা।

মল্লিকা আমার হাতের উপর মাথা রেখে বলছে,বিয়ের
আগে চিনতেন নাকি আমায়?

আমি: না চিনতাম না,জানতাম বলে হেসে দিলাম।

মল্লিকা: আপনি জানেন আমি ভেবেছিলাম আপনার ইয়া
বড় বড় গোঁফ হবে...

আমি হেসে বললাম এরকম ভাবনা কেন শুনি?

মল্লিকা: আমাদের স্কুলে মাস্টার ছিলেন নির্মল স্যার।
তার গোঁফ ছিল আর সে রাগী ছিলেন।

আমি: এখন আমায় কেমন মনে হয়?

মল্লিকা: আপনি রাগীনা। আপনার আমার চেয়েও লজ্জা
বেশি এই বলে হেসে দিল।

আমি তখন একটু অপমান ই বোধ করেছিলাম।ছোট বউ আমার
সেও আমায় লাজুক বলে এতে অপমান  হবার ই কথা..
আমি মল্লিকাকে কাছে টেনে ওর কপালে চুমো দিলাম।

কি এবার বলো আমি লাজুক?
মল্লিকা কিছু না বলে চোখ বন্ধ করে আমায় শক্ত করে
ধরে রইলো...
মনে হচ্ছে সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় আমি।
যে আমার বুকে আশ্রয় করে নিয়েছে তাকে কি করে ছুড়ে ফেলি?

ঘুম থেকে উঠে দেখি মল্লিকা আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।
আমি ওকে টেনে বসিয়ে ওর কোলে মাথা রেখে বললাম,এভাবে হাসতে পারো না সারাদিন?

মল্লিকা: আপনার নাকে কি সারাদিন সিঁদুর লেগে থাকে নাকি?যে আমি তা দেখে হাসবো।
আমার নাকে সিঁদুর ই তো লেগে আছে,এমন ভাবে বলছো
যেন আমার নাকে মল্লিকা লেগে আছে।
মল্লিকা ওর আঁচল দিয়ে আমার নাকের সিঁদুর মুছিয়ে দিয়ে বললো আমি কি নাকে লাগার মতন?
আমি উঠে বসে ওর দিকে তাকিয়ে আছি আর ভাবছি না
তুমি হৃদয়ে লাগার মতন একজন।

মল্লিকা: এই যে মাস্টারমশাই।

আমি: ও নামে বউ রা ডাকে?

মল্লিকা: সব বউদের বর বুঝি মাস্টার হয়?

না এই মেয়ের সাথে কথা বললে আমার স্কুল এর সময় চলে
যাবে এই বলে আমি চলে গেলাম।
যাবার সময় বলে গেলাম,আজ চিঠি তে আমার নাম ধরে
যেন ডাকা হয়।আমার সন্দেহ হচ্ছে আসলে তুমি আমার
নাম এর বানান পারো কিনা।

মল্লিকা : আমি পারি বলে শোনেন,  ই...

আমি: বলতে না লিখে দিতে হবে কেমন।আমি ১২ টার সময়
চিঠি দিব তুমি লিখে রেখ...
এর পর আমি স্কুল বিরতির সময় বাসায় আসতাম না।বাসায়
আসলে মা অনেক কথা শুনাতো।
বিয়ের আগে আসিনি এখন এতো বাসায় আসা যেন পাপ..

তাই মাঝে মাঝে কাউকে দিয়ে মল্লিকাকে দু-চার লাইন এর চিঠি দিতাম আর মল্লিকাও কাজের ফাঁকেফাঁকে
আমার জন্য কিছু লিখে রাখতো..

মাঝে মাঝে ওর লেখায় আমি বুঝতে পারতাল এ লেখা
কত আড়াল বা ভয় নিয়ে লিখেছে।
মাঝে মাঝে চিঠির কথার মাঝে খুব কষ্ট বুঝতে পারতাম।
মল্লিকা সব কষ্ট নিজের মাঝে হজম করতে লাগলো।মা
যে মল্লিকাকে খুব একটা ভালো ব্যবহার দিতেন না তা আমি খুব বুঝতে পারতাল।মল্লিকা মিথ্যে বললেও
মল্লিকার চোখ মল
স্কুল এর কর্মচারী কে বেলা ১২টার সময় পাঠালাম।
সে মল্লিকার চিঠি নিয়া আসাতো দূরে থাক আমার চিঠি ও দিয়ে আসেনি।
জিজ্ঞেস করতেই বলছে,আমার মা অনেক কথা শুনিয়ে দিয়েছে তাকে।

মূলত আমি তাকে রোজ শিখিয়ে দেই যে মাস্টার কিছু কাগজ ভুলে রেখে গেছে ওটা নিতে আসছি।
আজ ও সে এটা বলার পর মা বললেন,ইদানীং রোজ ই ভুলে ফেলে যাচ্ছে।
যার টা তারেই এসে নিতে বলবা।এ সময় হাতে কাজ থাকে।
আমার নাম মল্লিকার আর ডাকা হলনা।

বিকেলে বাসায় ফিরে দেখি,মল্লিকা বিছানায় শুয়ে আছে।
ও মূলত রাত ছাড়া শুতে যায়না।

আমি: কি হয়েছে?

ও কোন সাড়া দিচ্ছেনা।
আমি ওর গায়ে হাত দিতেই দেখি গা পুড়ে যাচ্ছে জ্বর এ।
গতকাল ও তো বেশ ছিল..
মল্লিকা,এই মল্লিকা..
ও জ্বরের ঘোরে আমার কোলে মাথা রেখে বলছে হাতে খুব ব্যাথা।
আমি হাত ধরে তাকিয়ে দেখি হাতে ফোসকা পরে গেছে।

আমার মতন কাপুরুষ আর কেউ নেই।আমি সব দেখেও কিছু করতে পারছিনা।
মায়ের ঘরে গেলাম।
মা মল্লিকার... এটা বলতেই মা চেঁচিয়ে বললো ও এর
মাঝে সব কানে লাগানো হয়ে গেছে?

আমি কি ইচ্ছে করে ওর হাতে গরম তেল দিছি?

ও মুখে মুখে কথা বলতেছিল,তাই রাগ করের কড়াই ধরে ফেলে দিতে নিছি।
কড়াইয়ের তেল ওর হাতে লাগবে আমি কিকরে বুঝবো!

যদিও মল্লিকা কিছুই বলেনি আমায়।মা না বুঝেই সব বলে দিল।

আমি: মুখে মুখে কথা বলার মত ও মেয়ে?

মা: এখন আর আমার কথা বিশ্বাস কেন হবে?

বাবা: দেখ ইন্দ্র,আমি আজ মুকুল কে দেখতে গিয়েছিলাম।
মুকুল এর অবস্থা ওর শ্বশুর বাড়ি যা করেছে তার তুলনায়
মল্লিকা ভালো আছে অনেক।
মুকুল কে এতো কিছু দেয়ার পর ও এখন আরো টাকা চায়।
মুকুল এর স্বামী ও মুকুল কে বোঝেনা।

আমি: তাতে মল্লিকার কি দোষ?

মা: দেখ আমাদের জায়গা জমি যা ছিল মুকুল এর বিয়েতে সব বিক্রি করে দিয়েছি।
বউয়ের বাড়ি তো জায়গা আছে ওটা আনতে বল,পরে তুই
টাকা দিয়ে দিস।

আমি কথা না বলে আমার ঘরে এসে মল্লিকার মাথায় জল পট্টি দিলাম।
ভাবছি এভাবে থাকলে মল্লিকা মারা যাবে।
মল্লিকা কখনই ওর বাবার কাছে জায়গা চাইবেনা,মরে গেলেও না।
মল্লিকা মরে গেলে আমার মা বাবার আমায় আরেক খানা বিয়ে দিতে সুবিধাই হবে।
মল্লিকা একবার ও চোখ খুলছেনা।
ভোর হতেই মা বাবার ঘরে গেলাম।

তাদের গিয়ে বললাম,এভাবে জমি পাবেন না।
আর মল্লিকাকে যদি বাড়ি পাঠিয়ে দেন সমাজের লোক নানা কথা বলবে।
গোপাল কাকু ও আমাদের খারাপ জানবে।
তার চেয়ে আমার একটা বুদ্ধি এসেছে মাথায়..

আমার মুখে এমনধারা কথা শুনে,মা হাসি দিয়ে বললো,এতদিনে আমার ছেলের শু বুদ্ধি হলো..
বাবাকেও খুশি মনে হচ্ছে।

বাবা: কি বল?

আমি: একটা অভিনয় করতে হবে।

আমি স্কুল থেকে এক লোক পাঠিয়ে খবর দিব যে আমায়
সাপে কেটেছে।
আমায় বাড়ি আনার পর এক ওঝা আনাবেন বিষ তুলতে।
ওঝারে আগেই শিখিয়ে দিবেন বলতে যে বাঁচাতে হলে
৪কানি জমির দাম দেয়া লাগবে
তখন অবশ্যই মল্লিকা ওর বাবাকে বলবে।

মা: আর যদি না বলে..
তাহলে আমায় ভেলায় ভাসিয়ে দিবেন।আর মল্লিকাকে বাসায় রাখার জন্য ওর বাবার কাছে টাকা চাইবেন।

টাকা নেয়ার পর আমি ফিরে এলে আর তা
ফিরিয়ে নিবেনা।বলবো পানিতে মা মনষার বাঁচিয়ে দিয়েছেন।

মা: ওঝা কই পাই এখন?

বাবা: আমার চেনা লোক আছে।কিছু টাকা দিয়ে দিলেই
হবে।

মনে মনে ভাবলাম,এতে অন্তত মল্লিকা জিবীত থাকবে।
তাতে একটু মরার অভিনয় করলাম।পরে আমি আমার
মাইনে থেকে ধীরে ধীরে কাউকে না জানিয়ে
শ্বশুরমশাইকে দিয়ে দিব।

আমার ঘরে গিয়ে মল্লিকার কপালে হাত দিয়ে দেখি জ্বর কমেছে।
স্কুলে যাবার জন্য তৈরী হলাম।ভাবছি কিছুক্ষন পর বেচারি আমার মরার খবর পেয়ে কি না কষ্ট পাবে।

সল্প কষ্ট তারপর তো আমি আবার ফিরেই আসবো..
মল্লিকাকে বললাম,আজ চিঠি দিতে পারবোনা।বাগানে গাছ লাগাবো তাই ব্যস্ত থাকতে হবে।
যাবার সময় ইচ্ছে করেই মল্লিকার কপালে চুমো দিয়ে নাকে সিঁদুর লাগালাম।
ও আবার তাই দেখে হাসছে।
আমি ওর আঁচল দিয়ে সিঁদুর মুছে বললাম,এর চেয়ে বেশি
হাসা যায়না বুঝি?

মল্লিকা: আমার মরার আগে এর চেয়ে বেশি হেসে যাব,শেষ হাসি।

আমি: তা দেখা আর আমার হবেনা।

মল্লিকা: কেন?

আমি: তখন তোমার মাথার সিঁদুর অবশিষ্ট থাকবেনা।
মল্লিকা আমার মুখ হাত দিয়ে চেপে বললো এ সব কথা বলতে নেই।

সতী নারীর স্বামী আগে মারা যায় না।
আমি স্পষ্ট মল্লিকার চোখের পানির মাঝে অনেক ভালোবাসা দেখতে পাচ্ছি।
আমি ওকে বুকের মাঝে নিয়ে বললাম,আমায় অসৎ
বানানো চলবেনা।তাহলে একসাথেই মারা যাব।
আমি চলে গেলাম স্কুলে।

যাকে দিয়ে চিঠি পাঠাতাম সে আমার বন্ধুর মতই হয়ে গিয়েছিল।
পাশের গ্রামেই থাকে সে।
সব তাকে বললাম সে প্রথম রাজি না হলেও পরে রাজি হয়ে যায়।
আমি ৭দিন তার বাসায় থাকবো এই কথাই পাকা হল।

বেলা ১২টায় আমি বাড়ির প্রধান দরজার সামনে শুয়ে থাকি আর
আমার বন্ধু ঘরের ভিতর গিয়ে খবর দেয় আমায় সাপে কেটেছে।

মল্লিকা ভাত এর পাতিল ফেলে চলে আসে।
মা দৌড় দিয়ে এসে মল্লিকাকে বলে,দিলে তো সব ভাত নষ্ট করে?

আমি চোখ বুজে সব ই শুনতে ছিলাম।
মল্লিকা আমার কাছে বসে চেঁচিয়ে কাঁদতেইছে।

ইচ্ছে হয় উঠে ওকে বলি কেঁদনা তুমি,জ্বর বেড়ে যাবে।

ও যে এতো কাঁদবে আমি আগে বুঝিনি..
একে একে মানুষ ভিড় হয়ে গেল।
আমার পক্ষে এ অভিনয় চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে।
মল্লিকা আর কাঁদতে পারছে না।কিছুক্ষন থেমে থেমে
চিৎকার দিয়ে উঠছে..

মুকুল ও এসে পরেছে।ওকে ও জানানো হয়নি।ও আমার জন্য কাঁদছে।
জানানো হলে হয়ত মল্লিকাকে বলে দিবে।

ওঝা ঠিক ভাবেই বলবো,বাঁচাতে হলে টাকা লাগবে অনেক।
আমার মা বার বার মল্লিকাকে খোঁচাচ্ছিল, তার বাবার
কাছে গিয়ে চাইতে।
মল্লিকা হ্যাঁ বা না কিছুই বলছেনা।

আমি মনে মনে বলছি,হ্যাঁ বলে দেও মল্লিকা।তাতে
আমিও এ অভিনয় থেকে রেহাই পাই।এর চেয়ে মরে
গেলেও বেশ হত..

ওঝা একসময় বললো,তার চেয়ে ভেলায় ভাসিয়ে দিন।
৭দিনের মাঝে বাঁচলে তো ভালো না বাঁচলে আসা ছেড়ে দিন।
আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

আমার মা তখন চেঁচিয়ে কাঁন্না জুড়ে দিল।
এ অপয়া,অলক্ষী আমার ছেলেকে ভাসিয়ে দিল।
এ অসতীর জন্য আমার সংসার আজ এ দশা।

আমি বুঝতে পারলাম,মায়ের কাঁন্না মল্লিকার উপর রাগের কারন।টাকা আনতে রাজি হয়নি তাই মা কাঁদছে।
সবার সামনে তো আর মারতে পারেনা।

আমায় ভেলায় নদীতে
ভাসিয়ে দেয়া হল।আমি একটু দূরে ভেসে যেতেই বন্ধু
নৌকা নিয়া আমায় তুলে নিল।তারপর তার বাড়ি।

জানিনা মল্লিকার কি অবস্থা।হয়তো ও আমার বাসায়
থাকার জন্য হলেও টাকা আনবে..
একে একে ৩দিন হয়ে গেল কোন খোঁজ পাচ্ছিনা।
বন্ধুকে পাঠালাম বাড়ির অবস্থা জানার জন্য।

সে এসে আমায় বললো,সব শেষ ইন্দ্র দা।

আমি: কি হয়েছে পল্লব?

আপনি চলেন এখন ই।আর গা ঢাকা দিয়ে যান না হলে
গ্রাম এর মানুষ দেখবে আপনাকে।

আমি গায়ে চাঁদর পেঁচিয়ে রওনা দিলাম।

পল্লব এদিকে তো আমাদের বাড়ি না।
তুই আমায় শ্মশান এর দিকে কেন নিচ্ছিস?

মনে মনে মা-বাবার মুখ ভেসে আসলো।
বাবা কয়েকদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন,তার কিছু হয়নি তো এই ভেবে বুকে মোচর দিচ্ছে বার বার..

চিতার কাছে যেতেই দেখি মা-বাবা দাড়ানো...
অনেক মানুষ কিন্তু মুকুল কে আর মল্লিকাকে দেখছিনা..

আমি: পল্লব এই চিতা কার?কে মারা গেছে।

পল্লাব কাঁদছে.. কিছুই বলছেনা।

এর মাঝে মুকুল দৌড়ে এসে বসে পরলো..কাঁদতে কাঁদতে
বললো মা বৌদিকে মেরে ফেললে মা?

আমার বুঝতে বাকি নেই এ চিতা আর কারো নয়,এ চিতা
আমার মল্লিকার।
সে চিরতরে জ্বলে গিয়ে আমায় ও জ্বালিয়ে দিয়ে গেল।আমি তার জ্বালা দূর করতে গিয়ে জ্বালিয়ে দিলাম!

সে তার কথা রেখেছে।সতী হিসেবে নিজেকে প্রমান
দিয়েছে।
মা চেঁচিয়ে বলছে: আমি কি মেরেছি,স্বামী মারা গেলে বউ কে সতী হিসেবে প্রমান দিতে হয়।
তাই স্বামীর চিতায় নিজেকে পুড়তে হয়।এই তো নিয়ম।

মল্লিকার বাবা কেঁদে কেঁদে বলছে,ওর স্বামী তো চিতায় পোড়ে নি...
আমার মেয়েকে পোড়ানো হল আর আমায় জানানো হল না..

আমার বাবা বললেন,আপনার মেয়েই আপনাদের জানাতে
বারন করেছে।

মা-বাবাকে ফিস ফিস করে বলছে টাকা আনতে রাজি
হলনা,কি জেদ সে মরবে তবুও টাকা আনবেনা।
বললাম বাপের বাড়ি চলে যা তা না তাও যাবেনা।

মুকুল মায়ের পা ধরে বলছে,মা কেন করতে দিলে এমন।

মা মুকুল এর পাশে বসে বলছে,বিশ্বাস কর আমি শুধু বলছি
সতীদের স্বামী আগে মরেনা।
তারা তাদের স্বামীর জ্বালানো চিতায় মরে।
এই কথা শোনায় সে ইন্দ্রর একটা জামা নিয়ে ঘর থেকে
বের হয়ে আসলো।

সে নিজেই সবাইকে বলেছে,সে তার স্বামীর মঙ্গল এর
জন্য চিতায় উঠতে চায়।সে সতী তার প্রমান দিতে চায়।
স্বামীর কাপড় ও তার সাথে পোড়ানো হবে তা সেই চেয়েছে।
এখন কেউ যদি নিজ ইচ্ছায় নিজেকে সতী হিসেবে প্রমান দিতে চায় তাতে আমি কি বারন করতে পারি?
আর এটা না করলে সমাজ আমাদের একঘরে করে দিত।

আমি বেশ বুঝলাম মা-বাবা ইচ্ছে করে চিতায় উঠতে
বাধ্য করেছে।

মল্লিকা বলেছিল মরার আগে হাসবে।ও হেসেছে নিশ্চই।
হেসে হেসে মরে গেছে আমার মল্লিকা।
আমায় হারিয়ে দিয়ে গেছে।
চিতার আগুন ধাউ ধাউ করে জ্বলছে,আর আমি সেই আগুনের মাঝে মল্লিকার হাসি শুনছি।

"মাস্টারমশাই বলেছিলাম না আপনার লজ্জা আমার চেয়েও বেশি।
আপনি চাঁদর দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেছেন কেন?
এতো লজ্জা মাস্টারমশাই?"
ইন্দ্র...আমি কিন্তু সতী হতে পেরেছি...

বাবা মাকে বলছে ইন্দ্র এলে কি বলবে?
মা: ছেলে মানুষ আরেকটা বিয়ে দিয়ে দিলে সব ভুলে যাবে।

আমি চাঁদর দিয়ে মুখ বেশিকরে ঢেকে চললাম..

পল্লব: ইন্দ্রদা কই যান?
পল্লব যেখানে সাপ-হিংস্র কুকুর আমায় খেতে লজ্জা পাবেনা সেখানেই যাচ্ছি..

পল্লব: ইন্দ্রদা কি বলছেন?

পল্লব কাউকে বলিসনা,তাহলে আমি ওই চিতায় ঝাঁপ দিব।
অকারনে শাস্তি আমি কাউকে দেইনি। কিন্তু
সবচেয়ে বড় শাস্তিটা আমি মল্লিকাকে দিলাম।
ওর কাছে অনেক জবাবদিহি দেয়া যে বাকি আমার.....
নিজেকে সৎ প্রমান করতে হবে...

সবকিছু পিছনে ফেলে মল্লিকার কাছে আমি চললাম...
           **সমাপ্ত**

āĻ•োāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāχ:

āĻāĻ•āϟি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āϟ āĻ•āϰুāύ