#দ্বিতীয় বিয়ে (৩য় পর্ব)
লেখা: Umme Nipa
এলোমেলো চুল...যত্নহীন শাড়ির আঁচল সাগরের বালি আছড়াচ্ছে।
মেয়েটি আনমনা হেঁটে হেঁটে যাচ্ছে সাগরের দিকে।তার দৃষ্টি একমনে সাগরের দিকে..
পিছন থেকে বার বার কেউ ডাকছে মেয়ের সেদিকে কোন খেয়াল নেই।
সে তাকিয়ে আছে সাগরের মাঝ বরাবর..
মনে হচ্ছে খুব নিখুঁত ভাবে সাগরের গভীরতা মাপছে।
ছেলেটি মেয়ের সামনে এসে দাড়িয়ে বলছে,দাড়ান সেই কখন থেকে আপনাকে ডাকছি আমি?
মেয়ে তবুও তার দিকে তাকাচ্ছেনা।
ছেলে: এই যে শুনছেন?
মেয়ে কেঁপে উঠলো।
মনে হচ্ছে অনেকক্ষন পর অসাড় শরীরে প্রান ফিরে পেয়েছে।
জীবিত মানুষ ও মাঝে মাঝে অচেতন হয়ে ঘুরে বেড়াতে পারে।
হয় কেউ বোঝে নয় বুঝতে চায়না...
ছেলে: আপনাকে ডাকছি আপনি শুনছেন না?
মেয়ে: কি হয়েছে বলুন?
ছেলে: এতো রাতে একা একা হাঁটছেন কেন?
মেয়ে: সাগর পাড়ে একা একা হাঁটা বারণ? তা তো জানা ছিলনা।
ছেলে: ম্যাম আমি সেই বিকেল থেকেই আপনাকে দেখছি আর এখন ন'টা বাজে এতো রাতে একলা একজন মেয়ে তারউপর এখানের কিছু মানুষ অনেক খারাপ।
আপনার ক্ষতিও করতে পারে।
মেয়েটি হেসেই বললো আমার আর নতুন করে কি ক্ষতি হবে!
আচ্ছা আমায় ৩দিনের জন্য ১টা থাকার ব্যবস্থা করে দিবেন?
ছেলে: অবশ্যই পারবো।এখানের এক হোটেল এর মালিক আমার মামা।মামা মারা যাবার পর আমি ই দেখাশোনা করি।
আচ্ছা আপনার নাম কি?
মেয়ে: লুবনা।
ছেলে: আপনি এখানে একাই এসেছেন?আপনার বাসার সবাই..
এই বলতে লুবনা বলে উঠলো আমার কেউ নেই...
আচ্ছা এই সাগরে যদি কেউ ডুবে যায় তাহলে তার লাশ কি কেউ খুঁজে পায়?
ছেলেটি তার এই রহস্যকর প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়েও যেন দিতে পারছেনা।
আমি কখনো মরে দেখিনি,আপনি বললে চেষ্টা করে দেখতে পারি বলে হেসে দিল।
লুবনা মনে মনে ভাবছে এতো কঠিন কথাও মানুষ হাসির ছলে উড়িয়ে দিতে পারে...!
ছেলে: আচ্ছা ম্যাম চলুন আমি আপনার রুম দেখিয়ে দিচ্ছি।তারপর গল্প করা যাবে।
এই বলে ছেলেটি সামনের দিকে হাঁটা শুরু করলো...
পিছন থেকে লুবনা এই যে সাগর ভাই বলে ডাকতে লাগলো।
ছেলেটি পিছন তাকিয়ে বলছে,আমায় ডাকছেন?
লুবনা: হুম।
ছেলে হেসে বললো আমার নাম সাগর কে বললো...?
লুবনা: নামটা আমি ই দিলাম।
সাগর পাড়ে এসে একজন সাগরের মতন বিশাল মনের মানুষ এর সন্ধান পেলাম তার নাম সাগর ই মানায়।
ছেলে হেসে বলে আচ্ছা আমায় ওই নামেই ডাকবেন।
লুবনা: আচ্ছা বডিং এ তিন দিক থাকার জন্য কত টাকা নিবে?
খাওয়া বাদ...
আমি খাব না।
সাগর: খাবেন না?তাহলে কি এই খানের বালি -পানি খেয়ে বাঁচবেন?
আচ্ছা আপনি আবার পেত্নী নন তো..?বলে হাসছে...
লুবনা: পেত্নী নই তার চেয়েও বেশি কিছু।পেত্নী তো যা ইচ্ছে তাই পারে আমি তো অপয়া যা ইচ্ছে তাই করতে পারিনা বলে চোখ ছল ছল করতে লাগলো..
সাগর: আচ্ছা চলুন...টাকার হিসাব নিকাশ পরে করি...
প্যারিস নামের এক বডিং এর তিন তলায় সিংগেল রুমে নিয়ে গেল লুবনাকে।
সাগর রুমের ভিতর গিয়ে বলছে,পছন্দ হয়েছে?
লুবনা: সাগরের পাড়ে ভালো ছিলাম।
এখানে দম বন্ধ লাগে।নিরাপদ আশ্রয়গুলি কি এমন ই হয়?দম বন্ধ করার মতন?
সাগর: আপনার প্রত্যেক কথাগুলি কেমন যেন রহস্যময়।
লুবনা হেসে বলে তাই?
জানেন অনেকদিন পর আমি হাসলাম।
সাগর: আমার সাথে থাকেন কয়েক ঘন্টা দেখবেন হাসির বাচ্চা ও হয়ে যাবে...
লুবনা: সব কিছুর ই বাচ্চা হয় শুধু আমার...
এই বলে থেমে গেল..
সাগর: কিছু বললেন?
লুবনা: না..
সাগর: আচ্ছা আপনি ফ্রেস হন।।।
আর পাশের এই টেলিফোন দেখছেন এখান থেকে কল দিলেই আপনার যা লাগবে চাইবেন।
আর আমি মাঝে মাঝে আসবো...
এই বলে সাগর চলে যেতে নিল।
লুবনা পিছন থেকে সাগর ভাই বলে ডাক দিল..
সাগর: জ্বী মেডাম?
লুবনা ওর কান থেকে জিনিস খুলে সাগর কে দিয়ে বলছে,এইটা রাখেন..আমার কাছে টাকা পয়সা নেই..
যা ছিল আসার সময় ই শেষ...
সাগর: বন্ধুর মতন ভরসা করে আবার লজ্জা দিচ্ছেন?
৩দিন বন্ধুকে রাখতে পারবোনা?
লুবনা: এই জিনিস দিয়ে আমি কি করবো?জিনিস তো আর হিংস্র মাছ ও খায়না?
সাগর: মানে?
লুবনা: এই জিনিস আমি যখন ক্লাস নাইন এ পড়ি তখন আমার বাবা আমায় বানিয়ে দেয়।আপনার কাছে রাখুন হয়তো বন্ধুর শেষ স্মৃতি হিসেবে থেকে যাবে।
সাগর: স্মৃতি রাখার সময় আসুক আমি চেয়ে নিব।
আপনি ফ্রেস হন আমি খাবার দিতে বলছি...
কিছুক্ষন পর সাগর লুবনাকে খাবারের জন্য ডাকতে আসলো।
লুবনা খাবেনা বলার পর ও সাগরের পিড়াপীড়িতে রাজি হল।
খাবারের টেবিল এ বসে লুবনা খাবার নিয়ে নাড়াচাড়া করছে।
সাগর খাবারে প্লেট হাতে নিয়ে বলছে ইকবালকে এতো বললাম খাবারের আইটেম বাড়াতে ও শুনলোই না।
লুবনা সাগরের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
সাগর: কি হয়েছে?
লুবনা: কি নাম বললেন?
সাগর: ইকবাল কেন?
লুবনা: কে উনি?
সাগর: এখানের ই কর্মচারী।
লুবনা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
সাগর: কি কোন সমস্যা?
লুবনা: এই নাম টা যে আমার বেশ পরিচিত, খুব কাছের, খুব পছনের এই বলে চোখের পানি মুছতে লাগলো...
সাগর: কি হয় ইকবাল সাহেব আপনার?
লুবনা: আমার বর...
সাগর: তিনি কোথায়?
লুবনা: মুক্তি দিয়েছি আমি তাকে।এখনো চিরতরে নয় তবে ৩দিন পর চিরতরে দিব এই বলে না খেয়েই রুমের দিকে চলে গেল...
চলবে...
#দ্বিতীয় বিয়ে (৪র্থ পর্ব)
লেখা: Umme Nipa
সাগর লুবনার রুমের সামনে গিয়ে অনেকক্ষন ধরে দরজায় টোকা দিচ্ছে কিন্তু লুবনা খুলছেনা।
সাগর: ম্যাডাম এই সময়ে সাগরটা বেশ শান্ত থাকে।ভালো লাগে খুব..
দেখতে যাবেন?
লুবনা এই শুনে দরজা খুলে দিল।
মেয়েটার চোখ ফুলে আছে।নিশ্চই কেঁদেছে...
মনে হয় কতদিনের ঘুম জমে আছে চোখের পাতায়।
সাগর: আচ্ছা আপনাকে ক্লান্ত লাগছে।আপনি বরং ঘুমান।
লুবনা: সাগর দেখতে যাবেন না?
মেয়েটা এতো ক্লান্ত তবুও সাগর দেখার নেশা সে কোন ভাবেই তাচ্ছিল্য করতে পারছেনা যেন।
সাগর হেসে বললো আচ্ছা চলুন...
দুজন হাঁটছে সাগর পাড়ে। লুবনা ইকবালের কাছে কত বায়না করেছিল সাগর দেখতে নিয়ে যেতে সে আজ নয় কাল করে কাটিয়ে নিত।
এবার বিবাহ বার্ষিকীতে আমায় নিয়ে আসবে বলেছিলেনা ইকবাল?
দেখো সে দিন আর এলোনা..
এই ভেবে লুবনার চোখ ঝাপ্সা হতে থাকে।
আজ কাল কাঁন্নাও যেন গড়িয়ে পরেনা।শুধু চোখ ঝাপ্সা করে গায়েফ হয়ে যায়। কান্নার আর কি দোষ...আমি অকারণেই অযথা অনেক পানি ঝরিয়েছি।
সাগর: কি হল কিছু বলছেন না যে?
লুবনা: সাগরের গর্জন এখন বেশ প্রখর লাগছে।
সাগর: হুম এই সময় জনকোলাহল থেমে যায় আর সাগরের ঢেউয়ের শব্দ বেশি শোনা যায়...
লুবনা ভাবছে সাগর ও আমার মতন সবার আড়ালে কাঁদতে ভালোবাসে।
সাগর: কিছু বললেন?
লুবনা: কই নাতো...
সাগর: কিছু কথা জিজ্ঞেস করবো?
যদি আপনি আপত্তি না করেন?
লুবনা:নিজেকে বন্ধুর জায়গায় রেখে বন্ধুর মতই আবদার করুন।পর মানুষ এর মতন কথা শোভা পায়না।
সাগর: আচ্ছা তাহলে বলছি, ইকবাল ভাই কোথায়?
আর আপনি একা কেন?
লুবনা চুপ করে আছে..
সাগর: থাক না বলতে চাইলে বলতে হবেনা।
লুবনা: আমি পালিয়ে এসেছি।
সাগর এ কথা শুনে কিছুটা ইতস্তত হলো।সাগর অবাক করে লুবনার দিকে তাকিয়ে আছে।
সাগর আশ্চর্য হয়ে বললো,পালিয়ে?
লুবনা: হুম পালিয়ে।ইকবাল কে বলেছিলাম আমি আরেকজন কে ভালোবাসি।
সাগর: কে সে?
লুবনা হেসে হেসে সাগরের আরো কাছে গেল।
সাগর: হাসছেন কেন?ভালোবাসার মানুষ কি আপনাকে এখানে অপেক্ষা করতে বলেছে?
লুবনা সাগরের দিকে তাকিয়ে বলে,ভালোবাসার মানুষ কে মুক্তি দিতে হলে মাঝে মাঝে ছলনার আশ্রয় নিতে হয়।
সে ছলনায় আরেক ভালোবাসার আশ্রয় ও নিতে পারে।
সাগর: কিছুই বুঝছিনা।
লুবনা হেঁটে হেঁটে সাগরের পানিতে পা ডুবাল...
সাগর: ম্যাম বেশি দূরে যাবেন না।
সাগরের ঢেউকে ভরসা নেই।
লুবনা: মৃত্যুর জন্য এর চেয়ে উত্তম জায়গা আর হতে পারে?
সাগর: আচ্ছা আমায় বলবেন না কেন এই অভিনয় তাও বরের সাথে?
লুবনা:জানেন আমার শ্বশুর খুব ভালো মানুষ ছিলেন।
আমায় খুব সাপোর্ট দিতেন।
সে মারা গেল এই এক বছর হল।
তিনি মারা যাবার পর পর ই আমার ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করলো...
বিয়ের ৫বছর হবে দু দিন পর।
আমি ইকবাল কে এখনো বাবা ডাক শোনাতে পারিনি।
এই নিয়ে সবার অভিযোগ।
আচ্ছা আমার কি ইচ্ছে করেনা মা হতে?
আমারো ইচ্ছে করে দুটো কোমল হাত আমার গালে ছোয়াতে।
আমায় মা বলে ডাকার কেউ আসুক তা আমি কেন চাইবোনা?
তবে সব কিছু কি আমার হাতে?
সাগর: এর জন্য ইকবাল ভাই আপনাকে কথা শোনাতো?
লুবনা হেসে বলে ওই মানুষটা আমায় কখনো কিছুর জন্যই কথা শুনতে পারেনি।
কথা শুনাতে জানলে তো আমি খুশি ই হতাম।
ভাবতাম যাক মানুষটা আমায় দায়ী করছে কিন্তু মানুষ টা আমায় ভুল বুঝতে জানে।আমায় অপরাধী করে নিজে কষ্ট পেতে জানে।
সাগর লুবনার দিকে তাকিয়ে আছে।মেয়ের মুখ থেকে কথাগুলি বের হচ্ছে আর মুখে ফুটে উঠছে বুকে কত গভীর ক্ষত নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে তার প্রতিচ্ছাপ। কত জ্বালা এ কথায়,কত আগুন ও চোখের পানিতে...
সাগর লুবনার পাশে গিয়ে বললো,আপনি যাকে এতো ভালোবাসেন তাকে একা রেখে এলেন কেন?
লুবনা: যাকে ভালোবাসি তাকে ভালো রাখার দায়িত্ব তো আমার ই।
তাইনা?
চলবে...
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ