#দ্বিতীয় বিয়ে (৫ম পর্ব)।
লেখা: Umme Nipa
সাগর হেসে বলে যাকে ভালোবাসেন সেও আপনাকে ভালোবাসতে পারে?
লুবনা: বিয়ের পর ভালোবাসা একটা পর্যায় এসে কি পেলাম কি আর কি দিলাম, এতে রূপান্তরিত হয়।
ওর এক খালাতো বোন আসমা তার বিয়ের ২বছর যেতে না যেতেই বাচ্চা হয়।
আর এই আসমার সাথেই এক সময় ইকবাল এর বিয়ের কথা ছিল।
দুর্ভাগ্যবশত আসমার বর বিদেশে এক এক্সিডেন্ট এ মারা যায়।
দেখুন না আজ আসমা আর ইকবাল এর বিয়ে হলে কত ভালো হত।
ইকবাল ও বাবা হতে পারতো আর আসমা তার মনের মতন বর পেত।
সাগর হাসি দিয়ে বলে,এর জন্য এতো অভিমান আপনার?
লুবনা: অভিমান নয়,আমার নিজের প্রতি অনেক রাগ জানেন?
আমি কেন এতো অক্ষম?
একে একে যখন তিনটা বাচ্চা আমার গর্ভে এসে জন্মানোর আগেই মারা গেল তার দোষ আমি ছাড়া কে নিবে?
ইকবাল কে আমি হাজার বললেও আমায় ছাড়তো না,তাই আমি ই ওর মনে আমার জন্য ঘৃনার সৃষ্টি করে দিয়েছি।
সাগর: এক সময় ঠিক ই মা হবেন। রাগ কমিয়ে ইকবাল ভাইয়ের কাছে ফিরে যান।
লুবনা: প্রথম বাচ্চা ৩মাস আমার গর্ভে ছিল।এই ৩মাস ইকবাল এর সে কি আনন্দ।
তখন ওর চাকরী হয়নি।ও প্রাইভেট পড়িয়ে রোজ আমার জন্য খাবার আনতো।
ইকবালের পরিবার ও আমাকে অনেক উৎসাহ দিত।
কিন্তু যখন আমার বাচ্চাটা নষ্ট হয়ে যায় তখন থেকেই মানুষিক অশান্তি দেয়া হয় আমায়।
খাবার খেতে গেলেও প্লেট থেকে মাছ তুলে নিত ইকবালের নানী।
বলতো বাচ্চা খাইছো এখনো খাওয়া বাকি আছে?আমার নাতীরে খাইবা তাই তো আসছো..
ইকবাল এর আড়ালে বলতো। আমিও এসব ওর কানে নিতাম না।
এসব বলতে বলতে পিছন এ সাগরের দিকে তাকিয়ে দেখে সাগর মলিন মুখ করে দাড়িয়ে আছে..
লুবনা হেসে বলে,কি খারাপ লাগছে এতটুকুতেই?
আমার মাঝে কত কষ্ট কবর দিয়েছি তা নিজের ও জানা নেই।
জানেন সব কষ্ট আমি ভুলে যেতাম। যদি আমি একবার হলেও ইকবাল এর যোগ্য করতে পারতাম নিজেকে।
২য় বার যখন আমার সন্তান এলো..
ইকবাল তখন বাড়িতে থাকতোনা।
ওর চাকরী হয়েছিল অন্য জেলায়...
তাকেও আমি দুনিয়ায় আনতে পারিনি।
তখন ইকবাল এর মা ও অনেক কথা শুনিয়েছে।শুনাবার কথাই..
ইকবাল এর নানী প্রতিবার ই বলতো আমি নাকি চাইনা ইকবালের সাথে থাকতে তাই ইচ্ছাকৃত বাচ্চা নষ্ট করে ফেলি।
তারা ভুলেই গেছে আমিও মা।
আমি কি করে বাচ্চাকে মেরে ফেলি বলতে বলতে লুবনা বালির উপর বসে কেঁদে দিল।
সাগর পাশে এসে বলে,কাঁদবেন না। যা হবার হয়েছে...
এরপর ইকবাল ও কেমন যেন মনমরা থাকতো।
ইকবালকে ওর নানী বার বার আরেকটা বিয়ে করতে বলতো ও তাদের কখনো রাগ করে বলতো না যে, না আমার পক্ষে লুবনাকে ছাড়া আর কাউকে ভাবা সম্ভব নয়।আবার বলতো ও না যে আমি বিয়ে করবো...
আমি চলে গেলে ও ঠিক ই নতুন করে জীবন শুরু করবে...
সাগর: চলুন এখন রুমে যাওয়া যাক।অনেক ঠান্ডা পরেছে।
লুবনা: আর কিছুক্ষন থাকিনা...
আগ থেকে নিয়তির সাথে পরিচিত হতে মন্দ লাগেনা।
সাগর: নিয়তি?
লুবনা : হুম এই বিশাল সাগর ই আমার শেষ আশ্রয়।
সাগর: আপনার কিছু কিছু কথা আমার বুঝতে কষ্ট হয়।
লুবনা: থাক না...সব কিছু বুঝেও বা কি লাভ?
সাগর: চলুন ওই সামনে একটা বসার জায়গা আছে।
ওখানে সারারাত ই কিছু মানুষ আড্ডা দেয়।
লুবনা: লোকজন আমার আর ভালো লাগেনা।
শেষ বাচ্চাটা ও আমায় ছেড়ে চলে গেল এই ১সপ্তাহ...
আসলে আল্লাহ সব মেয়েকে মা এর সুখ গ্রহন করতে দেয়না।
মা হতে হলেও কপাল লাগে।
আমি ঠিক ই অপয়া..
এর পর আমি কলেজ যাওয়া বন্ধ করে দেই।
বাসাতেও কেমন দম বন্ধ হতে লাগলো।
বাসার মানুষ থেকে আশেপাশের সব প্রতিবেশী জানতো আমার অক্ষমতার জন্য বাচ্চা মারা যায়।
কেউ কেউ এসে সান্তনা দিত আবার কেউ এসে ইকবাল এর কপাল নিয়ে আহাজারি করতো যা আমার হৃদয় ভেদ করে পাঁজর ছেদ করতো।
আমি একা একা কাঁদতাম।
দুনিয়াতে নিজেকে এতো তুচ্ছ লাগবে তা কখনো ভাবিনি।
বার বার আমার সামনে ইকবাল কে বলতো আসমাকে বিয়ে করলে আজ এমন হতনা।
ইকবাল ও প্রতিবাদ করতো না।
ওর চুপ করে থাকা আমার কাছে বিষাক্ত লাগতো অনেক।
ওর আর কি বা বলার ছিল।ওর ও বাবা হবার ইচ্ছে বার বার নষ্ট হওয়ায় মনে ভেঙে গিয়েছিল।
কয়েকদিন যাবত ই ও আমায় এড়িয়ে যেত খুব।যে সময়টা আমার পাশে ওকে খুব দরকার ছিল সেই সময় টাই ও আমার কাছ থেকে দূরে থাকতো।
বেশিরভাগ সময় মসজিদ এ রাত কাটাতো...
সাগর: আপনি কিছু বলতেন না?
লুবনা : কিছু বলার মুখ আমার ছিলনা।
কলেজে যাইনি তাই আমার এক ক্লাসমেট 'দিহান' আসলো আমাদের বাসায়।
ও এসে আমার রুমেই বসলো।
শরীর খারাপ ছিল তাই আমি শুয়েই ছিলাম।
ও কিছুক্ষন কথা বলে চলে গেল।
ইকবাল বাসায় ফিরতেই ওর নানী ইকবালের কানে লাগায় আমি পরপুরুষ ঘরে এনেছি।
ইকবাল এর চোখে ধুলো দিয়েছি।
ইকবাল ছিলনা বাসায় তাই নাকি সেই ছেলে এসেছে।ছেলের সাথে আমার খারাপ সম্পর্ক।আরো অনেককিছু..
ইকবাল ওর নানীকে কিছু বললোনা আবার আমায় এসে জিজ্ঞেস ও করলো না যে, ছেলেটা কে..?
শুধু বললো,এটা গ্রাম..তোমাদের শহর নয় যে যখন ইচ্ছে যে কোন ছেলেকেই নিজের রুমে আনবে...
এতে অনেক কথা হয়...আর একজন পুরুষ এর সাহস ই কি করে হয় আমাদের বেড রুমে ঢোকার?
আমি সেদিন চুপ করেই সব শুনেছিলাম।
কিছু বলতে পারিনি।
যেদিন আমি বাসা থেকে বের হয়ে এসেছি সেদিন সকালে আসমা আসে বাসায়।
আমি আমার রুমে ছিলাম আর ইকবাল রুমের সামনেই বসে ছিল।
আসমা আমায় দেখতে পায়নি..
আসমা এসেই ইকবালকে জিজ্ঞেস করে,ইকবাল ভাই তুমি কি সুখে আছো?
ইকবাল কোন উত্তর দিচ্ছিলনা।
আসমা আবার বলতেছে,তোমার চোখ-মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে তুমি সুখে নেই।
আমার অনেক মনে পরে তোমার কথা...
ইকবাল কিছু না বলেই চলে গেল।
আমি তখন ই বুঝেছি আমি ই এদের মাঝে কাটা।ওর নিষ্ক্রিয় থাকা আমায় ব্যথা দিত খুব।
সাগর: তখন ই বাসা থেকে রাগ করে চলে এলেন?
লুবনা: না। সন্ধ্যায় ইকবালের বাসায় আসার শব্দ শুনেই আমি ফোন কানে নিয়ে মিথ্যে কথা বলার ভান করলাম।
এমন ভাবে বললাম যাতে বোঝা যায় আমি কারো সাথে রিলেশন করেছি।যাতে ইকবাল আমায় ঘৃনা করে নতুন করে বিয়ে করতে রাজি হয়।
সাগর: ও মাই গড!তারপর?
লুবনা: ইকবাল ঠিক ই আমার পিছনে দাড়িয়ে শুনতেছিল।
ফোন রাখতেই জিজ্ঞেস করে কে ছিল?
আমি বললাম,দিহান কেন?
ইকবাল: তাহলে নানী ই ঠিক?
আমি বললাম,কেন তোমরা ছেলেরা একাধিক বিয়ে করতে পারো আর আমি করতে পারিনা?
ইকবাল সাথে সাথেই আমায় চড় মারলো এই বলে লুবনা হাসতে লাগলো।
সাগর: হাসছেন আপনি?
লুবনা: বারে হাসবো না?
ভালোবাসা ছাড়া কি কাউকে আঘাত করা যায়?
ও আমায় চড় দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিল ও আমায় ভালোবাসে।
সাগর: তাহলে আসলেন কেন?
লুবনা: আমি আসতে চাইনি জানেন..আমি ভেবেছি সকালে ও বাসায় আসলে ওকে সব বলে দিব।ক্ষমা চাইবো..
কিন্তু নানী এসে আমায় চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিল আমি ইকবালের জীবন নষ্ট করছি।তিনি ওকে মুক্তি দিতে বললেন।
বংশে ও একাই ছেলে ওর যদি বাচ্চা না হয় বংশের প্রদীপ দেয়ার নাকি কেউ থাকবেনা..
আমি চলে গেলে ও ঠিক বিয়ে করে নিবে।আর না মুক্তি দিলেও নাকি একদিন ইকবাল নিজেই অশান্তি নিতে না পেরে ঘর ছাড়া হয়ে যাবে।
আমি সারারাত ভেবেছি।একবার ভেবেছি নিজেকে শেষ করে দেই কিন্তু তা করলে আমার মা -বাবা ই ইকবাল কে জেল খাটাতো।
তাই আজান দিতেই ঘর থেকে বের হয়ে আসি।
আসার সময় চিঠি রেখে এসেছি জানিনা ও পড়েছে কিনা?
দিহান এর সাথে পালিয়ে এসেছি জেনে ও কি ভাবছে তাও বুঝছিনা..
হয়তো খারাপ ভাবছে,মনে মনে ঘৃনা করছে আমায়...
দূর থেকে গিটার এর শব্দ শুনে লুবনা এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।
লুবনা: কে বাজাচ্ছে?
সাগর: আশেপাশেই কেউ বাজাচ্ছে হয়তো।
লুবনা: আপনি পারেন বাজাতে?
সাগর: না
লুবনা: আমার অনেক পছন্দের।ইকবালকে বলায় ও শিখেছিল।
একদিন বাসায় আমায় বাজিয়ে শোনাতে ওর মা রাগ করেছিলেন।
ওর বাবা নাকি গান-বাজনা পছন্দ করতন না..তাই আর বাজায়নি কখনো।
আচ্ছা আমিতো নিজের কথাই বলছি তখন থেকে,আপনার কথা বলুন।
সাগর: আমার আর কি? দু ভাই আমরা।বড় ভাই বিবাহিত আর আমি এখনো ভবঘুরে। আচ্ছা আপনাদের এই ক'বছর হলো বিবাহিত জীবন?
লুবনা: একদিন বাদেই ৫বছর হবে..
আমার আরেকটা কথা রাখবেন?
সাগল: হুম বলুন।
লুবনা: আমার ইচ্ছে এই বিবাহবার্ষিকীতে আমি বিয়ের শাড়ি পরবো।
আমায় একটা এনে দিতে পারবেন?
আমার কানের দুল বিক্রি করে এনে দিবেন?
সাগর: এনে দিব।কিন্তু শাড়ি কিনতে দুল বিক্রি করতে হবেনা।পরে শোধ করে দিয়েন।
আচ্ছা শাড়ি পরে কি মা-বাবার কাছে ফিরে যাবেন?
লুবনা: না তাদের কাছে যাওয়ার পথ আমি অনেক আগেই শেষ করে এসেছি।তাদের কাছে আমি ছোট হলেও ইকবাল কে ছোট করতে পারবোনা।
সাগর: তাহলে?
লুবনা চুপ করে রইলো
মনে মনে ভাবছে,জীবনের শেষ দিনটাও ইকবাল এর বউ হয়ে থাকতে চাই।
সাগরের মাঝে তলিয়ে যাবোও ইকবাল কে ভাবতে ভাবতে আর সাথে সাথে বিলীন হয়ে যাবে আমার সব কষ্ট।
লুবনা আর কাঁদবেনা, লুবনাকে আর তার প্রিয় মানুষ এর মলীন মুখ দেখতে হবেনা।লুবনা আর তার বাচ্চাকে বাঁচিয়ে রাখার ভয় করতে হবেনা।
সাগর আমায় গ্রাস করে নিবে সাথে আমার বুকে জমে থাকা আক্ষেপ।
সাগর লুবনার দিকে তাকিয়ে আছে।
লুবনা স্থীর হয়ে সমূদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে।
স্তব্ধ সাগর যতটা ভয়াবহ ঠিক লুবনাকেও ততটাই লাগছে স্থীর।
লুবনার দীর্ঘনিঃশ্বাস সাগরের ঢেউ এর শব্দকেও হার মানায়...
এর পর শেষ পর্ব...
#দ্বিতীয় বিয়ে (৬ষ্ঠ এবং শেষ পর্ব)
লেখা: Umme Nipa
মাঝে ১টি দিন কেটে গেল।
ইকবাল কে দুদিন হল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা।
বাসার সবাই ই ইকবাল এর চিন্তায় অস্থির হয়ে আছে।
অনেকেই ভাবছে ইকবাল লুবনার দেয়া অপমান নিতে পারেনি তাই ঘর ছেড়েছে।
আবার অনেকেই ভাবছে ইকবাল নিজেকে শেষ করে দিয়েছে।
একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে ইকবাল এর মায়ের শয্যাশায়ী অবস্থা।
সাগর লুবনার জন্য শুধু শাড়ি নয় নতুন বউয়ের বিয়েতে সাঁজতে যত টুকু লাগে তার চেয়েও বেশি কিছু কিনে এনেছে।
লুবনা রুমের ভিতর শুয়ে শুয়ে ভাবছে আর তো কয়েক ঘন্টা।
রাত ১২:০১ মি: আমার আর ইকবালের বিয়ের ৫বছর হবে।
তারপর ই আমি চিরতরে চলে যাব।
ইকবালের জীবনে লুবনা নামের কোন কালো ছাঁয়া থাকবেনা...
এর মাঝেই কেউ একজন দরজায় নক দিল।
লুবনা: কে?
ওপাশ থেকে: লুবনা আমি সাগর।
দরজা খুলেই দেখে হাতে অনেকগুলি শপিং ব্যাগ..লুবনা দরজা খুলেই বলে,এতো কিছু?
সাগর: বারে আজ আপনার বিয়ে না?
লুবনা: বিয়ে না আজ আমার বিবাহ বার্ষিকী।
সাগর: ওই একই কথা..
আর মাত্র কয়েক ঘন্টা কিন্তু।
তৈরী হবেন কখন?
লুবনা: দীর্ঘনিঃশ্বাস নিয়ে বলছে হবো..
মনে মনে ভাবছে,আমি ই মনে হয় প্রথম যে সেঁজেগুজে মরতে যাচ্ছি।
এ মৃত্যু লজ্জার,এ মৃত্যু অপমানের-ঘৃনার...
সাগর: কি হল কিছু ভাবছেন?
লুবনা: না কিছুনা।
সাগর: আচ্ছা আপনি তৈরী হন আমি আসছি।
লুবনা একেবারে বিয়ের পাত্রীর মতন সেজেছে।
নিজেকে বিয়ের সাজে সে যখন নতুন বউ ছিল তখন ও এভাবে দেখেনি যতটা আজ দেখছে।
রাত ১১:১৫....
সাগর ওপাশ থেকে,কি হলো?
লুবনা: এই তো হয়েছে।
ভাবছে এই লোক আশেপাশে থাকলে কি করে মরবো।
পিছুই ছাড়ছেনা।যাক বলে দিব আমি ঘুমাবো আপনি এখন আসেন...
দরজা খুলতেই সাগর লুবনার দিকে অ- পলকে তাকিয়ে আছে।
বউ সাঁজে মেয়েটিকে বেশ লাগে।কি স্নিগ্ধ এবং সরল তার মুখটি।
এমন রূপের দিকে তাকিয়ে কাটিয়ে দেয়া যায় অনন্তকাল..
লুবনা: কি ভাবছেন?
সাগর: একটা সারপ্রাইজ আছে..
লুবনা কৌতুহলি হয়ে জিজ্ঞেস করলো সারপ্রাইজ?
সাগর: হুম।পাশের রুমে চলুন..
লুবনা পাশের রুমে গিয়ে দেখে সারাঘর ফুল দিয়ে পরিপাটি করে সাজানো।
ঠিক ফুলশয্যার ঘর যেভাবে সাজায়।
লুবনা: এগুলো কেন?
সাগর: বিয়ের দিনে এটা কি অস্বাভাবিক কিছু?
পছন্দ হয়নি?
লুবনা সাগরের দিকে তাকিয়ে বলে এসব তো আমি চাইনি।
ফুলশয্যায় যার জন্য অপেক্ষা করবো তার জন্য অপেক্ষা চিরতরে শেষ করে দিয়েছি।
যা একবার ভেঙেছি তা কি করে নতুন করে শুরু করি?
সাগর লুবনার হাত ধরে বলছে,আমাকে একবার সুযোগ দিবে তোমার জীবনে?
একবার সব গুছিয়ে দিতে দিবে লুবনা?
আমি তোমার এবং তোমার কথার নেশায় পরে গেছি।
আমি কথা দিচ্ছি কখনো তোমায় আঘাত করবোনা।
লুবনা অসাড় হয়ে তাকিয়ে আছে।
প্রত্যাশিত কিছু বললে মেনে নেয়া যায় তবে অপ্রত্যাশিত সূক্ষ জিনিস ও মনে ঠাঁই দেয়া যায়না।
সাগর লুবনার হাত শক্ত করে ধরে বললো কি দিবে আমায় সুযোগ?
লুবনা সাগরকে চড় দিল।
বন্ধুত্বের এই দাম দিলেন সাগর ভাই?
ছিঃ বলে রুম থেকে বের হয়ে গেল..
সাগরপাড়ে লুবনা অর্ধ পা ভিজিয়ে দাড়িয়ে আছে।যাকে ভরসা করে বাচতে চেয়েছি তার জীবনে কাল হয়ে গেছি।
আবার যার কাছে অল্প দিনের আশ্রয় চেয়েছি সেই আমায় অবলম্বন করে বাঁচতে চাইছে।
আমি তো এসব চাইনি।তবে এমন আমার সাথে কেন হচ্ছে বার বার বলে চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরছে।
আমি মরে যাচ্ছি ইকবাল।তুমি হয়তো জানবেওনা তোমরার লুবনা কতটা অভিমান নিয়ে দুনিয়া ছাড়লো চেঁচিয়ে বলতে লাগলো...
পিছনে কারো দাড়ানোর শব্দ পেয়ে লুবনা পিছনে না তাকিয়েই বললো,আপনি আবার আমার পিছন পিছন এসেছেন?
চড় দিয়েছি তাতেও হয়নি আপনার?
ইকবালের কথা এতো কিছু বলাতেও আপনি বুঝলেন না যে ইকবাল ছাড়া আমার কাউকে ভাবার মতন ইচ্ছে বা রুচি কোনটাই নেই।
ওই মানুষটাকে আমি বেঁচে থাকতে ভুলতে পারবোনা।
যে মানুষ আমায় কখনো অপমান করেনি,আঘাত করেনি বরং আমি ই তার কষ্টের কারন হয়েছি বরাবর।
আমি বোঝার মতন তার উপর চেপে বসেছি তাকে ভুলে যাবো সে কথা আপনি ভাবলেন কি করে?
আমি নিজেকে তার কাছ থেকে মুক্তি দিতে চাই তবে তাকে আমার কাছ থেকে নয়।
তাইতো তার আমার বিয়ের দিনটা আমি মৃত্যুর সাথে সাথে বহন করবো এই বলে দু কদম সামনে পা বাড়ালো।
পিছন থেকে কেউ কাঁধে হাত রাখলো।
লুবনা: হাত সরান বলছি আমি চেঁচাবো। সাহায্য করে এখন তার প্রতিদান নিচ্ছেন?
পিছন থেকে: সামনে আর এগিয়ো না।
লুবনা চমকে গেল।এতো সাগরের কন্ঠ নয়।এই কন্ঠ যে খুব পরিচিত, খুব কাছের।এই কন্ঠে কতশতবার হৃদয়ে ভালোবাসার সৃষ্টি করেছিল তার হিসেব নেই।
লুবনা ভাবছে হয়তো শোনার ভুল।দেখার নেশা উপেক্ষা করতে না পেরে পিছনে তাকালো...
না ভুল নয়।সেই মানুষ টি.. সেই চিরচেনা মানুষ টি আজ লুবনার সামনে দাড়িয়ে।
বরাবরের মতন নীলছে পাঞ্জাবী পরে দাড়িয়ে আছে লুবনার সামনে।
লুবনা: তুমি?
ইকবাল: কি ভেবেছিলে?এতো সহজেই আমায় শাস্তি দিতে পারবে?
লুবনা: শাস্তি?আমিতো পালিয়ে এসেছি দিহানের সাথে।
ইকবাল হেসে বলে কই তোমার দিহান?
লুবনা : আশেপাশেই আছে।তুমি চলে যাও এখান থেকে, এই বলতে না বলতেই ইকবাল লুবনার মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরলো..
ইকবাল: লুবনা মিথ্যে বললে তোমার চোখ পানিতে ভরে যায়।
নিজের চোখ কে আর কষ্ট দিওনা।
চোখের পানি গড়িয়ে ইকবাল এত হাতে পরলো।
লুবনা কিছুই বলছেনা...
ইকবাল: কেঁদনা।অনেক কাঁদিয়েছি তোমায়।আমায় আর অপরাধী বানিয়ো না।
লুবনা ইকবাল কে শক্ত করে জড়িয়ে কেঁদে দিল।
ইকবাল লুবনার মাথায় হাত রেখে বলছে,পাগলি বিয়ে করেছিলাম কি শুধুই সন্তান এর বাবা হবার জন্য?
একজন মেয়েকি শুধু মা হবার জন্য বিয়ে করে?
আমার ভালোবাসা কি শুধু আমার বংশেরবাতি রক্ষার জন্য?
কখনোই যা বলতে পারিনি তা হলো আমার বংশেরবাতি না থাকলেও জীবন চলে যাবে তবে হৃদয়ের বাতি নিভে গেলে কি করে থাকবো?
লুবনা ইকবালকে ছেড়ে দিয়ে ইকবালের দিকে তাকিয়ে আছে।
ইকবাল হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে বললো,হুম আমার মনের ঘরের প্রদীপ তো তুমি ই লুবনা।
তুমি আমায় কি করে অন্ধকারে রেখে আসলে?
লুবনা: আমি তো কখনই মা হতে পারবোনা।তুমি বরং বিয়ে করে নেও।
ইকবাল:আমার কপালে যদি সন্তান থাকে তাহলে আজ না হয় কাল আসবেই।
আর না থাকলে ১০০টা বিয়ে করলেও আসবেনা।
বাচ্চার হাত ধরে হেঁটে যাবার স্বপ্ন যখন দেখেছি বাচ্চার আরেক হাত সবসময় তোমার হাত ই ধরা ছিল।
আমার কল্পনা কখনই তোমায় ছাড়া কিছু ছিলনা।
সেখানে বাস্তবে কি করে ভাবি?
লুবনাকে বুকের মাঝে নিয়ে বললো আজকাল বুঝি আমার বুকে তুমি শান্তি পাওনা তাই এই বিশার সাগরের বুকে ঝাঁপ দিতে চাও?
লুবনা: ভয় ছিল হয়তো তুমি ই একদিন সরিয়ে দিবে তাই আগেই সরে যেতে চেয়েছি।
ইকবাল: আজ যদি আমি পঙ্গু থাকতাম বা আমি অকেজো থাকতাম তাহলে কি আমায় তাচ্ছিল্য করতে?
লুবনা: কখনোই না।কিন্তু তাহলে বাসার কেউ আমায় ছোট করতে পারতোনা।
ইকবাল: আর এমন হবেনা লুবনা।
আর চুপ করে থাকবোনা আমি।
আর কথা শুনতে হবেনা তোমায়।লুবনা শক্ত করে ইকবালকে জড়িয়ে ধরলো।
ইকবাল: এ বাবা ছাড়ো আমায়।এমন ভাবে ধরলে আমার বাকি বউরা কি ধরবে?
লুবনা ছেড়ে দিয়ে ইকবালের পাঞ্জাবীর কলার ধরে বললো বাকি বউ না?
সব কটাকে খুন করবো আমি।
ইকবাল হেসে লুবনার কপালে চুমো দিয়ে বলে আমার গুন্ডি বউকে এভাবেই মানায়।
কাঁদলে তাকে বিশ্রী লাগে।
পিছনে সাগর এসে বললো গুন্ডিতে অস্কার দিতে হয় ভাবিকে।
যে চড়টা মারলো আমায়।
লুবনা: উনি সাগর। উনি ই আমায় আশ্রয় দিয়েছিলেন।
ইকবাল সাগরের দিকে তাকিয়ে বলে কিরে তোর নাম সাগর হলো কবে?
লুবনা অবাক হয়ে ইকবালের দিকে তাকিয়ে বলে চিনো তুমি?
ইকবাল: হুম ও তো জুয়েল।
আমার বন্ধু।আমাদের বিয়েতে ছিল তুমি খেয়াল করোনি!
কিন্তু সাগর হলো কি করে?
জুয়েল: তোমার বউ ই আমার নাম দিয়েছে সাগর।এখন আমায় জুয়েল বলে কেউ ডাক দিলে মাঝে মাঝে নিজেই ভুলে যাই আমার আসল নাম।
লুবনা: আমার সাথে অভিনয় করেছেন জুয়েল ভাই?
ইকবাল: আরে ও তোমায় একা একা দেখে আমায় কল দিল।
আমি তখন দিহানকে কল দিলাম যে আমার কাছ থেকে লুবনাকে নিয়েছো ভালো তবে একা রাখো কেন?ও কিন্তু কিছু চিনেনা।
পরে ও আমার সব ভুল ভেঙে দিল।
জুয়েলকে কল দিয়ে বললাম তোমার সাথেই যেন থাকে...
আজ জুয়েল না হলে হয়তো এ জীবনে তোমার সাথে দেখা হতনা।
লুবনা জুয়েল এর কাছে এসে বলে আপনার নাম সাগর দিলেও ভুল হবে।আপনি শুধু আশ্রয়দাতা নন বরং আল্লাহর পাঠানো কোন বড় উপহার যে আমার জীবনের হিসেব টা মিলিয়ে দিল।সাগর শুধু হাসি দিল কিছুই বললোনা।
সারারাত ইকবাল আর লুবনা সাগর পাড়ে বসে কাটালো।
ইকবাল: লুবু সেদিন গিটার এর শব্দ শুনেছিলে?
লুবনা ইকবাল এর ঘার থেকে মাথা সরিয়ে অবাক হয়ে বললো,ওটা তুমি ছিলে?
ইকবাল: তাহলে আর কি?
লুবনা: গিটার কই পেলে?
ইকবাল: অনেকাগেই ভেবেছি এবার বিবাহ বার্ষিকীতে তোমায় গিটার উপহার দিব।
তুমি তো সুযোগ ই দিলেনা।
লুবনা : এখন শুনাও।
ইকবাল: চলো রুমে রেখে এসেছি।
ফুলশয্যার খাটে ইকবাল আর লুবনা বসে আছে।
ইকবাল গিটার বাজাচ্ছে আর লুবনা শুনছে।দিনটা আজ কি না হতে পারতো কিন্তু আল্লাহ তা হতে দেননি।
মাঝে মাঝে জীবন ও মানুষ কে সারপ্রাইজ দেয়।
এগুলি ভাবতে ভাবলে লুবনা ইকবালকে বলছে,আচ্ছা এসব সব স্বপ্ন নয়তো?
ইকবাল হেসে বলে: ঘুময়ে পরো।কাল বাড়ি রওনা দিব।
লুবনা: ঘুম ভাঙলে যদি সব স্বপ্ন হয়ে যায়?
ইকবাল: তাহলে আবার ঘুমিয়ে পরবে।আমি আবার স্বপ্নে এসে পরবো।
লুবনা ইকবালের হাতের উপর মাথা দিয়ে শুয়ে পরলো...
ভোর হতেই রওনা দিল বাড়ির উদ্দেশ্যে।
জুয়েল দুজনকে বাস এ উঠিয়ে দিতে এসেছে।
লুবানা জুয়েলের কাছে এসে বলে,সাগর ভাই ভালো থাকবেন।বিয়ের জন্য পাত্রী দেখবো কিন্তু।
জুয়েল: এখনো সাগর ই বলবেন।
লুবনা: হুম সাগর হয়েই তো এসেছেন আমার জীবনে।
সাগর মনে মনে ভাবে ঠিক ই। সাগর থেকে মানুষ তাদের কূল খুঁজে পায়।
কেউ ঠিকানা খুঁজে পায় তবে সাগরের কখনো ঠিকানা আর পাওয়া হয়না।
লুবনা: সাগর ভাই আপনি আর যাই বলেন অভিনয় খুব ভালো করেন।শেষ এর অভিনয় কিন্তু আমায় ভয় পাইয়ে দিয়েছিল।আচ্ছা আসি আমরা ভালো থাকবেন।
এই বলে লুবনা গাড়িতে উঠে বসলো।
সাগর লুবনাকে দেখছে আর ভাবছে মাঝে মাঝে অভিনয়ের মাঝে কিছু ভয়াবহ বাস্তব চাপা পরে যায়।
কিছু অভিনয়কে বাস্তব প্রমান করতে কষ্ট না হলেও কিছু বাস্তব সবার কাছেই চিরকাল অভিনয় মনে হয়।
কিছু বাস্তবতা যে খুব পাপ পূর্ন থাকে।
ভালোবাসা মাঝে মাঝে খুব অন্যায় আবদার করে ফেলে।
সেদিন যদি আমার কথায় একবার রাজি হতে লুবনা হয়তো আমি সবার সাথেই সম্পর্ক নষ্ট করে তোমায় নিয়ে বহুদূর চলে যেতাম।
তখন যে আমার বিবেক মরে গিয়েছিল।জন্ম হয়েছিল ভালোবাসার।যে ভালোবাসা সমাজের চোখে কলঙ্কিত তবে আমার কাছে পবিত্র যেমনটা তখন ছিল..তেমনি আজ ও।
কিন্তু ভাগ্য আমার কেমন দেখো...
ভালোবাসা প্রকাশ করার সাহস ও আমার নেই।
গাড়ির ধোঁয়ার সাথে সাথে চোখ আবছা হয়ে আসছে জুয়েলের...
বাড়িতে পৌঁছাতেই ইকবালকে দেখে ইকবালে মা,বোন জড়িয়ে ধরলো..
বাপ তুই কই গেছিলি বলে ইকবালের মা কেঁদে উঠলো...
পিছন থেকে ঘোমটা দেয়া এক মেয়ে এসে ইকবালের পাশে দাড়ালো।
ইতি মেয়েটিকে দেখে বলে উনি কে ভাইয়া।
ইকবাল কথা বলছেনা।
ইতি মন খারাপ করে বললো,ভাবি যেতে না যেতেই তুই আবার বিয়ে করে আনলি ভাইয়া?
ইকবালের নানী এসে হেসে হেসে বলছে, নাতী আমার কাজের কাজ করছে।
আমরাও চাইছিলাম তোরে বিয়া দিতে।
যাক তুই কাজ টা করলি।
অলক্ষী দূর হইছে।
ইকবালের মা: আমাদের একবার জানালিওনা।
লুবনা কে এক বার খুঁজলিওনা।
নানী মেয়েটির পাশে গিয়ে বলে কি এতো শরম কিসের?
ঘোমটা তুলো বউ বলে ঘোমটা সরিয়ে ফেললো।
সবাই মেয়েকে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
ইতি খুশি হয়ে ভাবি বলে লুবনাকে জড়িয়ে ধরলো।
নানী: হায় হায় তুই ওরে নিয়া আসছোস কেন?
ইকবাল: কই নানী ও তো লুবনা না।
নানী : তুই আমারে বোকা পাইছোস?
আমি এখনো চোখের মাথা খাইনাই।
ইকবাল: ও লুবনা না।আসলে লুবনার মতন দেখতে।
নানী : তোরে ২য় বার বিয়া করতে বলছিলাম।
ইকবাল: হুম নানী ওই আমার ২য় বউ।
বিয়ে করলাম গত কাল।
নানী : এতো বউ এর রূপে দেওয়ানা হইয়োনা।ও তরে বাচ্চা দিতে পারবেনা।
ইকবাল লুবনার হাত ধরে বললো বাচ্চা দিতে না পারলে আরেকজন লুবনার মতন দেখে ৩য় বিয়েটা করে ফেলবো।
লুবনা ইকবালের দিকে তাকিয়ে হাসছে।
ইকবাল লুবনার দিকে তাকিয়ে বলে,কি রুমে যাবেন?
লুবনা মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো...
নানী ইকবালের মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে দেখছিস তোর ছেলের কান্ড?
ইকবালের মা হেসে বলে ছেলে একেবারে ওর বাবার মতন ই হয়েছে।
রুমের ভিতর গিয়ে দেখে দেয়ালে লুবনা আর ইকবালের ছবিটা নেই।
লুবনা:ইকবাল আমাদের ছবি কই?
ইকবাল: বালিশের নিচে রেখেছি।
লুবনা: কেন?
ইকবাল লুবনাকে কাছে টেনে নিয়ে এসে বললো বারেহ! এখন তো ২য় বউ এর সাথে ছবি তুলে রাখবো দেয়ালে।
লুবনা: না...আমিও তাহলে ২য় বিয়েটা সেরে নেই।
ইকবাল চোখ বড় বড় করে বলে মানে??
লুবনা ইকবাল এর মাথার চুল এলোমেলো করে দিয়ে বললো হুম আমার ২য় বরটা একদম ইকবালের মতন ই দেখতে হবে, পুরাই.খেঁজুর ..এই বলে হেসে দিল...
ইকবাল: তওবা করো বরকে খেঁজুর বলতে নেই।
লুবনা ইকবালের বুকে মাথা রেখে বললো বর আমার তাকে খেঁজুর বলবো না কি বলবো তা কি তুমি বলে দিবে?
* সমাপ্ত*
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ