āĻļুāĻ•্āϰāĻŦাāϰ, ā§§ āĻĄিāϏেāĻŽ্āĻŦāϰ, ⧍ā§Ļā§§ā§­

3680 (16)

প্রিয়ার চোখে জল

পর্বঃ ৩৬

লেখকঃ সাইদা ইসলাম বকুল

রাত প্রায় বারোটা বাজে। প্রিয়া খাটের উপর বসে আছে। পাশে কাজের মেয়ে রহিমা দাঁড়িয়ে আছে। কিরণের কিছু আত্মীয় - স্বজন, বন্ধু- বান্ধব, পাড়া- প্রতিবেশী এসে প্রিয়াকে দেখে গেছে। হঠাৎ করে কিরণের বউ দেখে সবাই অবাক। কিরণের বন্ধুরা তো বিশ্বাসই করতে পারেনি। পরে কিরণের মায়ের মুখে শুনে বিশ্বাস করেছে। বউ দেখে যেমন সবাই অবাক, তেমনি বউ এর মুখ দেখে সবাই খুশি। কারণ প্রিয়া দেখতে খুবই সুন্দরী। কিরণের এক বন্ধু তো বলেই ফেলেছে যে,তোর বউয়ের মত যদি আমার বউটা হতো। সবাই নব-দম্পতিকে আশির্বাদ দিয়ে গেছে। কিরণ বিরক্ত হয়ে ছাদে গিয়ে বসে আছে। তার মা এতক্ষণ মেহমানদের দেখা শুনা করেছে। সবাইকে মিষ্টিমুখ করিয়েছে। এখন আর কোন মেহমান নেই ঘরে। মা এসে প্রিয়ার পাশে বসলো। রহিমাকে বললো,কিছু কাজ আছে, তা সেরে ফেলতে রহিমা চলে গেলো। মা প্রিয়ার জন্য খাবার এনেছে। প্রিয়া খেতে চায়নি। মা জোর করাতে সামান্য কিছু খেয়েছে। মা প্রিয়ার হাত ধরে বললো, মা গো, আমার ইচ্ছা পূর্ণ করতে তুমি সব জেনেশুনে এই বাড়িতে বউ হয়ে এসেছো। আমি চাই শুধু আমি না, সব মা-ই চায় তার সন্তানেরা ভালো থাকুক। মা কখনো নিজের কষ্ট দেখে না, সন্তানের কষ্ট দেখে। আমিও চাই। আমার আশা বেঁচে থাকতে পূরণ হবে কিনা। তবে আমি জানি,তুমি খুব ধৈর্যশীল মেয়ে। কিরণকে সঠিক পথে আনতে চেষ্টার কোন ত্রুটি তুমি করবে না। তারপরও যদি আমার ছেলে না বুঝে, তবে কখনো আমি তোমাকে দোষ দেব না।
মা আমাকে যে বিশ্বাসে আপনি এই বাড়িতে এনেছেন, দোয়া করবেন যাতে আমি সেই আশা পূরণ করতে পারি। তবে নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে করবো, যদি আপনার মুখে হাসি ফোটাতে পারি। তবুও তো মনে শান্তি পাব যে, এক মায়ের মুখে আমি হাসি ফোটাতে পেরেছি। আর যদি না পারি, তবে এই জীবনে আর কোন দিন সুখের আশা করবো না।

না বউ মা, আমি চাই না আমার ইচ্ছার মূল্য দিতে গিয়ে তোমার জীবন নষ্ট করতে। চেষ্টার  পরও যদি দেখি কিরণের পরিবর্তন হয়নি, তবে আমি তোমাকে তোমার পছন্দ অনুযায়ী বিয়ে দেব। এটা আমার বাড়ি, এই বাড়ি আমি তোমার নামে লিখে দেব। যাতে কোনদিন তোমার কোন কষ্ট না হয়। আমি মা, আমার কাছে আমার কিরণ যেমন, তুমিও তেমন। মা কখনো সন্তানকে দুঃখের সাগরে ভাসিয়ে দেয় না।

মা,আমি আপনার ধন সম্পদ চাই না। শুধু আপনার দোয়া আর ভালোবাসা চাই। মায়ের দোয়া সাথে থাকলে সন্তানেরা যে কোন কাজেই সফল হতে পারে।

বউ মা,কিরণ যদি তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে?
মা আপনি ওসব নিয়ে ভাববেন না। ওনার সব আচরণ আমি হাসিমুখে মেনে নেব। কেউ যদি খারাপ আচরণ করে,আর আমিও যদি তার সাথে খারাপ আচরণ করি, তবে সে ভালো হবে কি করে?  উনি যদি আমাকে এই ঘর থেকে বের করে দেন, তাহলে আমি পাশের রুমে গিয়ে শুয়ে থাকবো। এত বড় বাড়িতে কি আমার থাকার অসুবিধা হবে?  অনেক রাত হয়েছে, আর অনেক ঝামেলা গেছে আপনার উপর দিয়ে, গিয়ে শুয়ে পড়ুন। আমাকে নিয়ে মোটেও চিন্তা করবেন না, আমি সব রকম পরিস্থিতি সাহসের সাথে মোকাবেলা করবো। তারপরও যদি হেরে যাই, ভেবে নেবো এটা আমার ভাগ্য। মা,আমি আমার ভাগ্যকে বিশ্বাস করি, আমার ভাগ্যই আমাকে এখানে টেনে এনেছে। সুখ যদি হয়, এখানেই হবে। তা না হলে অন্য কোথাও নয়। মানুষ সুখের আশায় এক সংসার ছেড়ে অন্য সংসারে চলে যায়, কিন্তু সুখ কি পায়?  পায় না। আমার সুখ হোক আর দুঃখ হোক, এটাই আমার শেষ ঠিকানা। এই বাড়িতে আপনার ছেলের স্ত্রীর মর্যাদা না পাই। সামান্য একটু আশ্রয় তো পাবো!  সেটাই আমার জন্য অনেক কিছু।

মায়ের চোখ বেয়ে পানি পড়তে লাগলো। প্রিয়ার মাথায় হাত রেখে বললো, তুমি অনেক ভালো মনের মানুষ। সৃষ্টিকর্তা নিষ্ঠুর নয় যে,তোমার ভাগ্যে শুধু দুঃখই আছে,সুখও আছে। অনেক সুখ, এটা আমার বিশ্বাস।
এই বলে চলে গেল। মা চলে যাবার পর প্রিয়ার কেমন যেন ভয় ভয় লাগছে। হঠাৎ করে ভেতরটা অস্থির হয়ে উঠছে। কিরণ যদি প্রিয়ার সামনে এসে দাঁড়ায়, তাহলে কি প্রিয়া কিরণের সামনে দাঁড়িয়ে সাহস করে কথা বলতে পারবে?  এসব ভাবতে ভাবতে প্রিয়ার মন আরো বেশি অস্থির হয়ে উঠলো। তখন প্রিয়া নিজেই নিজেকে সান্ত্বনা দিয়ে বললো, শান্ত হ প্রিয়া, মনকে শান্ত রাখ। অশান্ত মন নিয়ে কোন কিছু জয় করা যায় না। পরিস্থিতি যাই হোক,মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে। প্রিয়া আর বসে থাকতে পারছে না। খুব ক্লান্ত লাগছে, তাই শুয়ে পড়লো। আর শোয়ার সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ পর কিরণ এলো। এসে দেখে প্রিয়া ঘুমিয়ে আছে। শাড়ির আঁচলে প্রিয়ার মুখ ঢাকা, তাই কিরণ প্রিয়ার চেহারা দেখতে পেল না। আর প্রিয়ার চেহারা দেখার কোন ইচ্ছাও কিরণের নেই। কিরণ মনে মনে ভাবলো, আশ্চর্য ব্যাপার, বাসর ঘরে নাকি মেয়েরা স্বামীর জন্য অপেক্ষা করে। আর এই মেয়ে কত আরামে ঘুমিয়ে আছে। দূর আমি এসব কি ভাবছি, ওই মেয়ে ঘুমিয়ে থাক, না জেগে থাক, তাতে আমার কি। কিরণ টেবিলে রাখা গ্লাস থেকে পানি খেতে লাগলো। তার আওয়াজে প্রিয়ার ঘুম ভেঙে গেল । প্রিয়া খাট থেকে নিচে নেমে দাঁড়ালো। মাথায় লম্বা ঘোমটা টেনে কিরণকে সালাম করলো। কিরণ সরে দাঁড়ালো। আরে আপনি আমাকে সালাম করছেন কেন?  প্রিয়া বললো, আমি আমার দায়িত্ব পালন করলাম। কিরণ বললো, আমার প্রতি আপনার কোন দায়িত্ব পালন করতে হবে না। আপনি নিশ্চয়ই আমার ব্যাপারে সব জেনেশুনেই এই বিয়েতে মত দিয়েছেন। অতএব আমার প্রতি দায়িত্ব পালন না করে আমার মায়ের প্রতি দায়িত্ব পালন করুন। এই বাড়িতে আমার মায়ের পুত্রবধূ হিসেবে থাকবেন, বুঝতে পারছেন?
সঠিক করে বললে বুঝতে পারতাম।
তারমানে?  আপনে বলতে চাইছেন, আমি ভুল বলেছি, কোনটা ভুল বললাম? 
ছেলের বিয়ে করা বউকে মানুষ পুত্রবধূ বলে। তাই আমি আপনার মায়ের পুত্রবধূ হওয়ার আগে আপনার স্ত্রী, আমি কি কথাটা ভুল বললাম?
কিরণ প্রিয়ার এই কথার কোন জবাব দিল না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। এটা প্রিয়ার কাছে কিরণের প্রথম পরাজয়। প্রিয়া এই কথাগুলো কিরণকে বলতে পেরেছে, তাই নিজেকে নিজে ধন্যবাদ জানালো। হয়তো ঘোমটার আড়ালে সাহস করে বলতে পেরেছে, চোখের দিকে তাকিয়ে বলতে পারতো কিনা জানে না। অবশ্য তারা দু'জনই পেছন দিকে তাকিয়ে কথা বলছে। কিরণ বললো, আমার মা কিংবা সুমি আপা আপনাকে কিছু বলেনি?
হ্যাঁ বলেছে, এক ছলনাময়ী নারীর জন্য আপনি সবাইকে দোষী ভাবেন। মেয়েদের আপনে দু'চোখে দেখতে পারেন না।

আশ্চর্য মেয়ে তো আপনি!  সব জেনেশুনে ও আপনি এই বিয়েতে মত দিয়েছেন।

প্রিয়ার চোখে জল

পর্বঃ ৩৭

লেখকঃ সাইদা ইসলাম বকুল

আমি আমার ভাগ্যকে বিশ্বাস করি। ভাগ্যই আমাকে এখানে টেনে এনেছে। তা না হলে যে আমাকে প্রথম দেখেই পছন্দ করলো, বিয়ে করতে চাইলো, তার সাথে আমার বিয়ে হলো না। আর যে মেয়েদের নামই শুনতে পারে না, তার সাথে আমার বিয়ে হলো। আমি আমার ভাগ্যকে মেনে নিয়েছি।

ভাগ্যকে যখন মেনে নিয়েছেন, তখন এটাও মেনে নেন, যে আশায় আপনি এই বাড়িতে এসেছেন, সেই আশা আপনার কোনদিন পূরণ নাও হতে পারে।

সময়ের অপেক্ষায় থাকবো।

হয়তো সেই সময় আপনার জীবনে কখনো আসবে না।

যদি সেই সময় না আসে, তবে আমি সময়ের সাথে মানিয়ে চলার চেষ্টা করবো। অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়ুন। আমি এই রুমে থেকে আপনার শান্তি নষ্ট করতে চাইনা, আমি পাশের রুমে চলে যাচ্ছি। এই বলে প্রিয়া চলে গেল। কিরণ দাঁড়িয়ে রইল, আর মনে মনে ভাবলো, আজ প্রথম দিনই মেয়েটার কাছে আমি হেরে গেলাম। আমি তো আজ পর্যন্ত কারো সাথে কথায় হেরে যাইনি। কিন্তু এই মেয়েটার সাথে আমি কথায় পারলাম না। প্রথম দিনেই এই অবস্থা, ওর চেহারাটাও হয়তো ঝগড়াটে। না দেখে ভালোই করেছি। মায়ের সাথে জিদ করে তো বিয়ে করলাম। প্রথম দিনেই এই মেয়ে আমার সাথে যেভাবে কথা বললো,মনে তো হয় আমার বারোটা বাজাবে। উফ কেন যে ইচ্ছে করে এই বিয়ের ফাঁসি গলায় পড়লাম। কিরণ খাটের উপর শুয়ে পড়লো। আবার ভাবলো, না আমার ধারণা হয়তো ভুল। কারণ ও তো আমার শান্তির জন্য এই ঘর থেকে চলে গেছে। প্রথম রাতেই যখন আমার কাছ থেকে সরে গেছে, তখন আমার আর চিন্তা কি। আমি এবার আরাম করে ঘুমাই। কিরণ চোখ বুঝে রইলো। হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়বে।
আজ কিরণের বিয়ে। কিন্তু বিয়ের সানাই বাজেনি। মাথায় বিয়ের পাগড়ি পরেনি। নতুন পায়জামা - পাঞ্জাবি পরেনি। বন্ধু- বান্ধব এসে আনন্দ ফুর্তি করেনি। বাড়িতে ঝলমলে আলো জ্বলেনি। বাসরঘর সাজানো হয়নি। ঘোমটা তুলে নতুন বউয়ের মুখও দেখেনি, তবুও বিয়ে। কিন্তু তার কোন প্রভাব কিরণের উপর পড়েনি। সে নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে। আর প্রিয়া, তার চোখে ঘুম নেই। নতুন বাড়ি, নতুন জায়গা, চারপাশে নতুন মানুষ। একা ঘরে প্রিয়া বসে আছে। দেয়াল ঘড়ির দিকে চোখ গেল। রাত প্রায় দুটো বাজে। প্রিয়ার ভাবতে অবাক লাগছে, সে এই মুহূর্তে তার শ্বশুর বাড়িতে বসে আছে। জীবনের স্রোত প্রিয়াকে কোথা থেকে কোথায় নিয়ে এসেছে। প্রিয়া জানে না স্রোতের ধারা কি এখানেই শেষ, নাকি আবার অন্য কোথাও ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। মামার কথা খুব বেশি মনে পড়ছে আজ। প্রিয়া যখন ঢাকায় এসে সুমির কাছে আশ্রয় পেয়েছে তখন মামার বাড়ির কথা আস্তে আস্তে ভুলে গেল। মাঝে মাঝে মনে পড়তো, কিন্তু সামনে থাকতে যতটা চিন্তা করতো মামার জন্য, যতটা কষ্ট হতো, দূরে চলে আসার পর ততটা হয় না। কেন হয় না, প্রিয়া জানে না। হয়তো দূরে চলে আসাতে দূরত্ব বেড়ে গেছে, তাই মায়ামমতাও কমে গেছে। হয়তো এটাই প্রকৃতির নিয়ম। প্রিয়ার ঘুম আসছে না। তাই রুম থেকে বেরিয়ে এলো। অনেক বড় বাড়ি, অনেকগুলো রুম, সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। তাই প্রিয়া একা একা হাঁটছে।আর সব কিছু দেখছে। ঘরে অনেক জিনিসপত্র। কিন্তু অতটা গুছানো নয়। আর কে গুছাবে। রহিমা সারাক্ষণ সংসারের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। আর মা তো মুরব্বী মানুষ। প্রিয়া ভাবলো, আস্তে আস্তে করে সেই সব গুছিয়ে রাখবে। রান্নাঘরের পাশে ছোট একটা রুমে রহিমা ঘুমিয়ে আছে। প্রিয়া উকি দিয়ে দেখলো রুমে ফ্যান খাট সবই আছে। তা দেখে প্রিয়ার খুব ভালো লাগলো। কাজের মেয়ে বলে তার কোন অবহেলা নেই। যারা সুন্দর মনের মানুষ, তারা মানুষকে মানুষ হিসেবেই মূল্যায়ন করে, ছোট বড় হিসাব করে না। প্রিয়া রান্নাঘরে ঢুকে সব দেখতে লাগলো। কারণ আজ থেকে তো এই বাড়িতেই থাকবে। তাই সব কিছুর সাথে পরিচিত হচ্ছে। রান্নাঘরে কিছুক্ষণ থেকে বেরিয়ে এলো। ড্রইংরুমে এসে বসলো। হালকা আলোয় রুমের জিনিসগুলো অনেক সুন্দর লাগছে। প্রিয়া সোফায় হেলান দিয়ে বসলো। মনে হলো ঘুম পাচ্ছে। প্রিয়া উঠে নিজের রুমে চলে গেল। ঘড়ি দেখলো সাড়ে তিনটা। এই রুমের সাথে কোন বারান্দা নেই। থাকলে কিছুক্ষণ বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতো। প্রিয়া কিরণের রুমের সাথে বারান্দা আছে, কিন্তু এখন তো আর ওই রুমে যাওয়া যাবে না, তাই শুয়ে পড়লো। রাত অনেক হওয়াতে ঘুমিয়ে পড়লো।

প্রিয়ার চোখে জল

পর্বঃ ৩৮

লেখকঃ সাইদা ইসলাম বকুল

প্রিয়া সকালে উঠে নাস্তা তৈরি করেছে। দেখে মা খুব খুসি হয়েছে। রহিমা টেবিলে নাস্তা দিয়েছে। মা বসে আছে। কিরণ এসে বসলো নাস্তা খেতে। মা রহিমাকে বললো, প্রিয়াকে ডাকার জন্য। কিরণ বললো, ডাকার দরকার কি, ক্ষিদে লাগলে নিজেই নিয়ে খাবে। মা রেগে বললো, কিরণ তুই যদি ওকে স্ত্রীর সম্মান না দিতে পারিস, তাহলে অন্তত বাড়ির মেহমান হিসেবে ওর সাথে ভালো ব্যবহার করবি। আমি এমন ছেলে জন্ম দেইনি যে, সে মানুষকে মানুষ হিসেবে ভাববে না। কিরণ বললো, ঠিক আছে মা এমন ভুল আর হবে না। কিরণ নাস্তা খেয়ে অফিসে চলে গেল। কিরণের বাবার ব্যবসা ছিল। এখন তা কিরণ দেখাশুনা করে। অফিসে ঢুকেই দেখে রুবেল বসে আছে। একমাত্র রুবেলই এখন কিরণের বন্ধু। রুবেলকে দেখে কিরণ অবাক হয়ে বললো,রুবেল তুই সিলেট থেকে কখন এলি, তোর না আরো দশদিন পর আসার কথা?  তুই কি সত্যি আমার সামনে বসে আছিস, নাকি স্বপ্ন দেখছি??
তোর তো স্বপ্ন দেখার সময়। স্বপ্ন দেখ ভালো কথা, কিন্তু আমাকে বললে তো আর তোর স্বপ্নের রাজকন্যাকে চুরি করে নিয়ে যেতাম না।
রুবেল তুই এসব কি আজেবাজে বকছিস।
ও তুই করতে পারবি আর বলতে পারবো না। আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না যে, তুই আমাকে না জানিয়ে বিয়ে করে বউ বাসায় নিয়ে এসেছিস।
বলার মত ঘটনা হলে অবশ্যই বলতাম। সেদিন হঠাৎ করে মা এমন কথা বললো, যে তার কথা আর না রেখে পারলাম না। বিয়ে করে মাকে বউ এনে দিয়েছি, আমার দায়িত্ব শেষ।
তাই বল কাল বিয়ে করে আজই অফিসে চলে এলি। ভাবী কি মনে করবে বল তো? 
রুবেল, তুই সব জেনেশুনেও আমাকে এই কথা বলছিস?
হ্যাঁ বলছি, তোর সুখের জন্য কষ্ট চেপে রাখলে শুধু কষ্টই বাড়বে। আর বিয়ে যখন করেই ফেলেছিস, তখন সবকিছু ভুলে নতুন জীবন শুরু কর। যে তোর বউ হয়ে এসেছে, তার তো কোন দোষ নেই। তাকে কষ্ট দিয়ে লাভ কি? 
রুবেল, কেউ যদি ইচ্ছে করে কষ্ট পেতে চায়, তাতে আমার কি করার আছে? 
তার মানে!
মানে ওই মেয়ে সব জেনেশুনেই এই বিয়েতে মত দিয়েছে।
তাহলে নিশ্চয়ই ওই মেয়ে খুব বড় মনের মানুষ। তা না হলে তোর সব জেনেশুনেও তোকে বিয়ে করার জন্য রাজি হবে কেন?
বড় মনের কিনা জানি না, তবে অসহায়। তাই হয়তো আমার সব কিছু জেনেও এই বিয়েতে রাজি হয়েছে।
কিরণ তুই কি ভাবিস বিয়েটা পুতুল খেলা?  একটা মেয়ে যত গরীবই হোক, তারপরও সে চায় তার স্বামী তাকে ভালোবাসুক। সম্পদ দিয়ে মানুষকে মূল্যায়ন করা ঠিক নয়। মেয়েটার প্রতি তোর কৃতজ্ঞ থাকা উচিৎ। কারণ তোর মন্দ কথা জেনেও সে তোকে স্বামী হিসেবে স্বীকার করেছে। আর তোর মায়ের আশা পূরণ করেছে। যে তোর আর খালাম্মার কথা ভেবে এই বাড়িতে এসেছে, তোর কি উচিৎ নয় তার জন্য ভাবা?
রুবেল, তুই কি আমার বন্ধু, না শত্রু? 
কিরণ, আমি তোর খুব ভালো একজন বন্ধু আছি এবং বেঁচে থাকা পর্যন্ত থাকবে। আর তুই শুধু আমার বন্ধু না, আমার ভাইয়ের মত। আর যদি কখনো তোর শত্রু হই, তবুও কখনো তোর কোন ক্ষতি করবো না। এবার বল ভাবী দেখতে কেমন?
জানি না।
জানিস না মানে!  তুই ভাবীকে দেখিসনি?
চেহারা দেখিনি।
মুখ না দেখেই বিয়ে করেছিস?
এই বলে রুবেল উঠে দাঁড়ালো।
কিরণ বললো, কোথায় যাচ্ছিস? 
রুবেল বললো, ভাবীকে দেখতে যাবো। তুই তো আর বলবি না, তাই আমি নিজেই যাচ্ছি দেখতে। তোর কোন আপত্তি নেই তো? 
কিরণ বললো, আমার আবার আপত্তি থাকবে কেন। তোর যা ইচ্ছা হয়, তুই তাই কর। রুবেল চলে এলো। কিরণ চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলো। রুবেলের কথাগুলো ভাবতে লাগলো। প্রিয়া যদি সব জেনেশুনে এই বিয়েতে মত না দিত, তাহলে তো এই বিয়ে হতো না। আর মা এই বাড়িতে ফিরে আসতো না। এইবার কিরণ তার মায়ের রাগ দেখেছে। কিরণ তার মাকে ছেড়ে থাকতে পারে না। কিরণ জানে না অন্য কোন মেয়ে হলে এই বিয়েতে মত দিত কিনা। আর প্রিয়া অসহায় হলেও সুমি আপুর দায়িত্বে ছিল। আকাশ আর সুমি আপু মিলে আমার চেয়ে ভালো কোন ছেলের সাথে ওকে বিয়ে দিতে পারতো। আমি জানি জয় প্রিয়াকে পছন্দ করেছিল, কিন্তু প্রিয়া নীলার সুখের জন্য জয়কে বিয়ে করেনি। সব কিছু জেনেশুনে বিয়ে করতে রাজি হল আমাকে, যেখানে ও কখনো সুখি হতে পারবে না। কিরণের মনটা অস্থির হয়ে উঠলো। অফিসে বসতে ইচ্ছে করছে না। তাই ম্যানেজারের সাথে কথা বলে অফিস থেকে বেরিয়ে গেল।
প্রিয়া মোবাইলে সুমির সাথে কথা বলছে। মা এসে পাশে দাঁড়ালো। প্রিয়া কথা শেষে ফোন রেখে দিল।
মা হাসি মুখে জিজ্ঞেস করলো, কেমন আছে ওরা? 
জ্বী মা, সবাই ভালো আছে। সুমি আপু বললো, মিতু সারাক্ষণ শুধু আপনার কথা জিজ্ঞেস করে।
মেয়েটার জন্য আমারও মায়া হয়। সারাক্ষণ দাদু দাদু বলে ডাকতো। শুনে মনটা আমার জুড়িয়ে যেত । সুমিকে নিয়ে আমি অনেক চিন্তা করতাম। সন্তান না থাকলে ঘর শূন্য শূন্য মনে হয়। মিতু এসে ওর ঘর আলোকিত করেছে। সুমিও ওকে পেয়ে খুশি। সৃষ্টিকর্তা কখন কাকে কি দিয়ে খুশি করেন, তা কেউ বলতে পারে না।
রহিমা এলো। মা বললো, কিরে কিছু বলবি?  রহিমা বললো, রুবেল ভাই আইছে। আমি তারে ড্রইংরুমে বহাইছি। মা বললো, ঠিক আছে, তুই যা আমি আসছি। রহিমা চলে গেল। মা প্রিয়াকে বললো, কিরণের প্রিয়  বন্ধু এসেছে। হয়তো তোমাকে দেখতে এসেছে। তুমি এই কাপড় পালটে অন্য একটা কাপড় পরে এসো। আমি ড্রইংরুমে যাচ্ছি। এই বলে মা চলে গেল। প্রিয়া আলমারি খুললো। ভেতরে অনেক কাপড়। সুমি প্রিয়াকে অনেক কিছু কিনে দিয়েছে। আর বিয়ের দিন মাও অনেক শাড়ী গহনা কিনেছে। প্রিয়ার এখন শাড়ি আর গহনা কোন অভাব নেই। অনেক শাড়ির মাঝ থেকে নীল রঙের একটা শাড়ি বের করে পড়লো। আয়নার সামনে দাঁড়ালো, চুল ঠিক করার জন্য। কিন্তু এলোমেলো চুলেই প্রিয়াকে অনেক সুন্দর লাগছে। মানুষ যখন ভালো জায়গায় থাকে, ভালো খাবার খায়, ভালো পোশাক পরে, তখন মনে হয় মানুষকে আরো বেশি সুন্দর লাগে। প্রিয়া মাঝে মাঝে নিজেই অবাক হয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে থাকে। নিজেকে প্রশ্ন করলো, কিরণকে কিভাবে সঠিক পথে আনা যায়?  ঝগড়া করেও লাভ হবে না, আর জোর করেও হবে না। অন্য কোন উপায় বের করতে হবে। কিন্তু কি করবো, তাই ভেবে পাচ্ছি না। প্রিয়া আয়নার সামনে থেকে সরে এলো। নিজের রুম থেকে বেরিয়ে কিরণের রুমে ঢুকলো। টেবিলের উপর রাখা কিরণের ছবিটা হাতে নিয়ে বললো,জন্মের পর থেকে শুধু দুঃখ -কষ্টই সহ্য করেছি। তাই বেশি কিছু আশা করতে ভয় পাই। আমার চাওয়া পাওয়া খুবই কম। আমি খুব অল্পতেই সন্তুষ্ট হয়ে যায় যাই। আপনার মত ছেলের সাথে আমার বিয়ে হবে, এটা কখনো কল্পনা করতেও সাহস পায়নি। আজ আমি আপনার স্ত্রী হিসেবে এই বাড়িতে আশ্রয় পেয়েছি। আমি আপনাকে স্বামী হিসেবে পাওয়ার দুঃসাহস এখনো করছি না। তবে যদি আপনার ভুল ধারণাটা ভেঙে দিতে পারি, আপনার মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে পারি, সেদিন না হয় আপনার জীবন থেকে সরে দাঁড়াবো। সংসার করতে না পারি, অন্তত এতটুকু তো ভাববো যে, আমার বিয়ে হয়েছিল। সবাই বলে মানুষ নিজের স্বার্থের জন্য সব কিছু করে, কিন্তু পৃথিবীতে এমন মানুষও তো আছে যারা অন্যের সুখ এর জন্য নিজের সুখ বিসর্জন দেয়। আপনি যাকে ভালোবেসেছিলেন, সে আপনার ভালোবাসার মূল্য দেয়নি, তাই বলে কি সবাই খারাপ?  একজনের জন্য সবাইকে দোষী ভাবা ঠিক নয়। দোষ আর গুণ মিলিয়েই তো মানুষ। নারী যেমন কাঁদাতে পারে,তেমনি নারী আবার হাসাতেও পারে। নারী যেমন দূরে ঠেলে দেয়, আবার কাছেও টেনে নেয়। নারী যেমন চঞ্চল, আর তেমনি শান্ত। নারী কতটা ত্যাগ করতে পারে, আর কতটা ভালোবাসতে পারে, আপনি তা জানেন না। আপনি যাকে ভালোবেসেছেন, সে ছিল ছলনাময়ী। কিন্তু মমতাময়ী নারীর রুপ যেদিন আপনি দেখবেন, সেদিন আপনার ভুল ধারণা ভেঙে যাবে। জানি না আপনার কাছে কখনো স্ত্রীর মর্যাদা পাবো কিনা। আমি যতদিন এই ধরণীর বুকে বেঁচে থাকবো, ততদিন আপনিই আমার স্বামী হয়ে থাকবেন। প্রিয়া শাড়ির আঁচল দিয়ে ছবিটা মুছে টেবিলে রেখে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

āĻ•োāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāχ:

āĻāĻ•āϟি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āϟ āĻ•āϰুāύ