āĻļুāĻ•্āϰāĻŦাāϰ, ā§§ āĻĄিāϏেāĻŽ্āĻŦāϰ, ⧍ā§Ļā§§ā§­

3580 (12)

প্রিয়ার চোখে জল

পর্বঃ ২৪

লেখকঃ সাইদা ইসলাম বকুল

আমি জীবনে কারো কাছ থেকে কিছু পাইনি, অনেক আশা নিয়ে আপনার কাছে একটা আবদার করেছিলাম। আপনি তা পূরণ করেছেন, একথা আমি কখনো ভুলতে পারবো না। জয় আপনাদের বুঝাতে পারবো না যে আজ এই মুহূর্তে আমি কতটা খুশি। নীলাকে আপনি বিয়ে করতে রাজি হয়েছেন, এরচেয়ে বড় খুশি আমার জন্য কি হতে পারে! খালা,আকাশ, সুমি,নীলা সবাই ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে, কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না। আকাশ প্রিয়ার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো,প্রিয়া তুমি এসব কি বলছো,আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না! খালাম্মা বললো,জয় তোমাকে পছন্দ করেছে, বিয়ে তোমার হওয়ার কথা। আমরা হাসিমুখে এই বিয়েতে মত দিয়েছি, কিন্তু এসব কি হচ্ছে। চৌধুরী সাহেব বললো,আকাশ আমরা ভেবেছিলাম প্রিয়াকে পুত্রবধূ করে ঘরে তুলে নেব। কাল সন্ধ্যায় যখন জয় প্রিয়ার সাথে দেখা করতে এল, তখন প্রিয়া জয়কে নীলার কথা বলেছে। জয়কে বোঝাতে সক্ষম হয়েছে যে, নীলা ওকে কতটা ভালোবাসে। তোমাদের কষ্ট ও অনুভব করতে পেরেছে। তাই নিজের সুখকে নীলার হাতে তুলে দেয়ার জন্য ও আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। আর আমরা ওর সেই চেষ্টা সফল করেছি। যেটা তোমরা করতে পারোনি, সেটা প্রিয়া পেরেছে। এই পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ তার নিজের স্বার্থ আগে দেখে, কিন্তু এই মেয়ে তোমাদের স্বার্থ আগে দেখেছে। হয়তো তোমরা এই কারণে বলোনি, যদি আমরা না বলি, প্রথম জয়ও রাজি হয়নি। পরে প্রিয়া ওকে অনেক বুঝিয়েছে। তারপর জয় আমাদের বললো, আমরা অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিলাম যে, নীলাকেই আমরা পুত্রবধূ করে ঘরে তুলে আনবো। প্রিয়া যদি এত বড় ত্যাগ স্বীকার করতে পারে, তবে আমরা পারবো না কেন?  প্রিয়া তুমি জয়কে বলেছো যে, মানুষের জীবন তো একভাবে কেটেই যায়, কে আর কতদিন বেঁচে থাকে। তবে তার কর্মের মাঝে মানুষ অনেকদিন বেঁচে থাকে। তুমি ঠিকই বলেছো প্রিয়া, আমি এক পিতা হয়ে তোমাকে দোয়া করলাম, জীবনে সুখি হও। সুমি বললো, নীলার কথা আমরা জেনেছি মাত্র তিনদিন আগে, আমরা চাইনি আপনারা আমাদের স্বার্থপর ভাবেন। কিন্তু আমরা তো এই কথা  প্রিয়াকে বলিনি, কারণ আমরা চাইনি ওর স্বপ্ন ভেঙে যাক। জয়ের মা বললো, এই কথাটা যেভাবেই হোক প্রিয়া জেনেছে। তাই তো ও জয়কে বলেছে। সুমি বললো, কিন্তু খালাম্মা নীলা তো কথা বলতে পারে না। আমি জানি আপনারা মহৎ মনের মানুষ, কিন্তু আপনাদের আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশি?  চৌধুরী সাহেব বললো, ও নিয়ে তোমরা চিন্তা করো না, কে কি ভাবলো তা ভেবে জীবন চলে না। আজ যদি আমাদের ঘরে এমন একজন বোবা মেয়ে থাকতো, তাহলে কি আমরা ওকে বিয়ে দিতাম না?  অন্যকে কিছু বলার আগে যদি আমরা সব কিছু নিজেদের দিয়ে বিচার করি, তাহলে কোন সমস্যাই থাকে না। সুমি বললো, কিন্তু প্রিয়ার কি হবে?  জয়ের মা বললো, যে অন্যের সুখ চিন্তা করে, সে নিজেও সুখী হয়। প্রিয়া দেখতে সুন্দর, শান্ত স্বভাবের, বুদ্ধিমতী ওর জন্য পাত্রের অভাব হবে না। আকাশ চৌধুরী সাহেবের হাত ধরে বললো, আপনারা আমার অসহায় বোনটাকে পুত্রবধূ  হিসেবে স্বীকার করেছেন, আমার যে কি খুশি লাগছে, আপনাদের বোঝাতে পারবো না!  কি বলে যে আমি আপনাদের ধন্যবাদ জানাবো। চৌধুরী সাহেব বললো, ধন্যবাদ জানানোর কোন দরকার নেই, কতদিন আর বেঁচে থাকবো,হেসে-খেলে সবাই মিলে জীবনটা পার করে দেবো, কি বল গিন্নী! 
নীলার মুখের ভাষা নেই তাতে কি হয়েছে, আমাদের সবার ভাষাই ওর ভাষা। আর আমি ঠিক করেছি এই মাসের পনের তারিখে বিয়ে হবে। তোমরা কি বল? আকাশ বললো,আপনি যা বলবেন তাই হবে, আপনার মতই আমার মত।

সবাই খুশি। সুমি সবাইকে মিষ্টি মুখ করালো। তারপর জয় নীলার সামনে এসে বললো,আমি ভাগ্যবান যে,তুমি আমাকে এতটা বছর ধরে একা ভালোবেসেছো। আমার জন্য এত সুন্দর ফুলের বাগান সাজিয়েছো। আমি মন থেকে তোমার ভালোবাসা গ্রহণ করেছি। আজ থেকে নিজেকে আর কখনো একা আর অসহায় ভাববে না। এই জয় তোমার পাশে বেঁচে থাকা পর্যন্ত থাকবে, কথা দিলাম।
নীলা হাসলো, জয় আর তার বাবা -মা হাসিমুখে বিদায় নিল। সুমি প্রিয়াকে জড়িয়ে ধরে বললো, আমি যা দান করেছি তার বিনিময়ে এত বড় প্রতিদান আশা করিনি। আকাশ প্রিয়াকে বললো,আমরা তোমার জন্য যা করেছি, তার ঋণ শোধ করতে পারতে। কিন্তু তুমি যা করলে, তার ঋণ আমরা কি দিয়ে শোধ করবো বলো!  নিজের সুখকে এভাবে বিলিয়ে দেয়া ঠিক নয়।তাতে শুধু দুঃখই বাড়ে। আমরা সত্যিই চাইনি তুমি এভাবে কষ্টকে বরণ করে নাও।প্রিয়া বললো,ভাইয়া আপনারাই তো আমাকে বোন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। আর আমি যা করেছি, আমার ছোট বোন এর সুখের জন্য করেছি। সুমি বললো, প্রিয়া মুখে যতই হাসো,আমি জানি তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে। প্রিয়া বললো,আপু বিশ্বাস করেন, আমার একটুও কষ্ট হচ্ছে না, বরং খুশি লাগছে। আমি যে নীলার মুখে হাসি ফোটাতে পারবো, তা কখনো ভাবিনি। আপু আপনি মন খারাপ করবেন না, আমি তো আপনার কাছেই থাকবো। জয়ের চেয়েও বেশি সুন্দর ছেলের সাথে আমার বিয়ে দেবেন। তখন দেখবেন, নীলা আমার বরকে দেখে হিংসা করবে, ঠিক বলেছি না আপু?  সুমি প্রিয়াকে বুকে জড়িয়ে ধরলো। আকাশ বললো,তুমি ঠিকই বলেছো প্রিয়া। আমি চাই আমার দুই বোনেই সুখে থাকুক। মৃত্যুর আগপর্যন্ত আমি তোমার প্রতি বড় ভাইয়ের দায়িত্ব পালন করে যাবো। নীলা প্রিয়ার বুকে মাথা রাখলো।খালা বললো,প্রিয়া অনেক বড় কাজ করেছে। আমাদের অনেক বড় একটা চিন্তা থেকে মুক্ত করেছে। আসলে এই পৃথিবীতে কত ধরণের মানুষ আছে, কখন কে কাজে আসে তা কেউ বলতে পারে না। এজন্য মানুষকে কখনো অবহেলা করতে হয় না। আল্লাহর শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ। মানুষকে যে ভালোবাসবে, আল্লাহ তাকে ভালোবাসবে। আকাশ তুমি অযথা ভেবো না, প্রিয়ার জন্য ছেলের অভাব হবে না। আকাশ বললো, ঠিকই বলেছেন খালাম্মা, যা হবার তাতো হয়েই গেছে। এখন প্রিয়ার জন্য যা করার দরকার তাই করবো। আকাশ প্রিয়ার মাথায় হাত রেখে চলে গেলো। প্রিয়া বুঝে নিলো এটা তার বড় ভাইয়ের দোয়া। প্রিয়া সেখান থেকে হাসিমুখে চলে এলো। বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়ে গেছে। আকাশের বুকে লক্ষ লক্ষ তারা কেমন মিটিমিটি জ্বলছে। প্রিয়ার জীবনে শত দুঃখের মাঝে একটুকরো সুখ মিটিমিটি হাসছে। প্রিয়া তো আজ খুব খুশি। কিন্তু ভেতরের মানুষটা নীরবে কাঁদছে কেন?  প্রিয়া নিজেকে নিজে সান্ত্বনা দিয়ে বললো, কাঁদিস না, ত্যাগের মাঝে তো অনেক সুখ থাকে। যাকে নিয়ে জীবনে প্রথম স্বপ্ন দেখেছি, সে আজ আমার কাছ থেকে অনেক দূরে। তবুও আমার কোন কষ্ট হচ্ছে না । জানি না আমার ভাগ্যে কি আছে। আর কেউ কখনো জয়ের মত আমার পাশে এসে দাঁড়াবে কি না। তবুও কেন জানি না পাওয়ার মাঝেও পূর্ণতা খুঁজে পাচ্ছি। এটা কি আমার সুখ, না দুঃখ বুঝতে পারছি না। প্রিয়া হেসে আকাশের দিকে তাকালো।

প্রিয়ার চোখে জল

পর্বঃ ২৫

লেখকঃসাইদা ইসলাম বকুল

রাত দশটা বাজে আকাশের বাড়ির সামনে এসে কালো রঙের একটা গাড়ি থামলো। গাড়ি থেকে নেমে এলো সাত বছরের একটা মেয়ে, আর ওর বাবা সুজন। মেয়েটির নাম মিতু। সুজন আকাশের ছোট বেলার বন্ধু। স্কুলজীবন থেকে শুরু করে এখনো তারা দুজন প্রাণের বন্ধু। তবে কর্মজীবনে প্রবেশ করার পর দূরত্ব কিছুটা বেড়েছে। তবে মনের টান একটুও কমেনি। সেই টানেই লন্ডন থেকে বন্ধুর কাছে ছুটে এসেছে। মিতু বাড়ির দিকে তাকিয়ে বললো, বাবা এটা কার বাড়ি?

এটা তোমার মায়ের বাড়ি। এই বাড়িতেই তোমার মা থাকেন। তাই তো তোমাকে আমি এদেশে নিয়ে এসেছি।

সত্যি বলছো বাবা, এটা আমার মায়ের বাড়ি?  আমি আমার মাকে দেখবো কি মজা! 
আচ্ছা মিতু আমি যদি তোমাকে তোমার মায়ের কাছে রেখে চলে যাই, তাহলে কেমন হবে?
খুব পঁচা হবে। তুমি আর মা, দু'জনেই আমার কাছে থাকবে। তুমি আমাকে ফেলে কখনো কোথাও যাবে না। বুঝতে পেরেছো বাবা? 
হ্যাঁ মা বুঝতে পেরেছি।
সুজন মিতুকে জড়িয়ে ধরলো। চোখের কোণে পানি জমে গেল। আবার তাড়াতাড়ি চোখ মুছলো। কারণ মিতু চোখে পানি দেখলে শতটা প্রশ্ন করবে। সুজন গেটের সামনে দাঁড়ালো। দারোয়ান গেট খুলে দিল। সুজন সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলো। কিন্তু মিতুকে নিয়ে উপরে উঠতে খুব কষ্ট হচ্ছে। এতটুকু মেয়ে, তার উপর স্বাস্থ্য অতটা ভালো নয়, তবুও সুজনের কষ্ট হচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর উপরে উঠে এল। কলিংবেল টিপলো। সুমি দরজা খুলে দিল। সুজনকে দেখে সুমি হাঁ করে তাকিয়ে রইলো। সুজন হাসি মুখে  বললো, ভাবী কেমন আছেন?  সুমি অবাক হয়ে  বললো, সুজন ভাই আপনি  আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন!  আমি কি স্বপ্ন দেখছি, না বাস্তবে দাঁড়িয়ে আছেন। সুজন বললো, ভাবী আমি এই মূহূর্তে আপনার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। সুমি খুশিতে চিৎকার দিয়ে উঠলো। সবাই দৌড়ে এল।আকাশ সুজনকে দেখে খুশিতে বুকে জড়িয়ে নিল। সুজন তুই বাংলাদেশে কবে এসেছিস, আমাকে ফোন করিসনি কেন? আমি আমার চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছি না, যে তুই আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছিস। সুজন বললো, আমাকে শুধু চোখে পড়েছে, আর আমার মাকে তোর নজরে পড়ছে না? আকাশ মিতুকে কোলে নিয়ে আদর করলো। সুমি আকাশ এর কোল থেকে মিতুকে নিয়ে ভেতরে গেল। আকাশ সুজনের হাত ধরে সোফায় বসালো। আকাশ বললো, তোর মেয়েকে এত তাড়াতাড়ি দেখতে পাব ভাবতেও পারিনি!  সুমি আদরে আদরে মিতুকে পুরো মুখ ভরে দিল।তা দেখে সুজন মনে মনে খুব খুশি হল। খালা সুজনকে বললো,অনেকদিন পর তোমাকে দেখলাম। খুব ভালো লাগছে। নীলাকে সুজন ছোট বোন এর মত কাছে টেনে বসালো। আর প্রিয়া ওর রুমে বসে আছে। প্রিয়া এই বাড়ির কোন মেহমান এর সামনে আসে না। কারণ প্রিয়া চায় না ওর দিকে কেউ করুণার দৃষ্টিতে তাকাক। আকাশ বললো, আজ আমার জীবনের সবচেয়ে  খুশির দিন। তুই জানিস সুজন আজ নীলার বিয়ে ঠিক হয়েছে!  আর এখন তুই এলি। সুজন বললো, সত্যি বলছিস আকাশ? আমার আদরের ছোট বোনের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে?  শুনে খুব খুশি হলাম! তা ছেলে কোথায় থাকে, কি করে?  আকাশ সুজনকে সব খুলে বললো। সুজন বললো, প্রিয়া  কোথায়?  সুমি প্রিয়াকে তার রুম থেকে নিয়ে এল। সুজন প্রিয়ার সামনে এসে দাঁড়ালো।তারপর মাথায় হাত রেখে বললো, বোন তুমি নীলার জন্য যা করেছো তার জন্য ধন্যবাদ দিয়ে তোমাকে ছোট করবো না। তবে মন থেকে দোয়া করি, তুমি সবসময় সুখে থাকো, ভালো থাকো। প্রিয়া বললো,ভাইয়া আপনাদের সবার মুখের হাসিই তো আমার সুখ। মিতু এসে সুজনকে বললো, বাবা তুমি না বলেছো, এই বাড়িতে আমার মা থাকে?  কোথায় আমার মা?  মিতুর এই কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে সুজনের দিকে তাকিয়ে রইলো। সুজন সহজ ভাবে মিতুকে বললো, হ্যাঁ আমি তো ঠিকই বলেছি।। তোমার মা এই বাড়িতেই থাকে। তবে আমি তোমার মায়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো না। আমি দেখতে চাই তুমি নিজে থেকে তোমার মাকে চিনতে পারো কিনা। এটা তোমার জন্য একটা পরীক্ষা।
বাবা তুমি না খুব বোকা মানুষ।
কেন মা,আমি আবার এমন কি করলাম, যাতে তোমার মনে হল আমি বোকা মানুষ?
আমি তো মাকে কখনো দেখেনি, তাহলে কি করে চিনবো আমার মাকে! 
মিতু তুমি তো খুব ভালো ছাত্রী। সবসময় পরীক্ষায় পাশ করো।
বাবা মাকে দেখার জন্যও আমাকে পরীক্ষা দিতে হবে? 
হ্যাঁ মা, যাতে তোমার মা বুঝতে পারে তার মেয়ে কত বুদ্ধিমান। তবে এই পরীক্ষার জন্য আমি তোমাকে সাতদিন সময় দিলাম। তবে একটা শর্ত আছে, তুমি কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করতে পারবে না, নিজে থেকে অনুমান করে নিতে হবে।
ঠিক আছে বাবা।

প্রিয়ার চোখে জল

পর্বঃ ২৬

লেখকঃ সাইদা ইসলাম বকুল

ঠিক আছে বাবা।
এই বলে মিতু সোফায় বসে সবার দিকে তাকাতে লাগলো। আকাশ উঠে দাঁড়ালো। সুমি আকাশের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে সুজনের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। সুজন বুঝতে পারলো সুমি আর আকাশ ওকে কি জিজ্ঞেস করবে। তাই বললো, ভাবী, অনেক দূর থেকে এসেছি। আমি এখন খেয়ে বিশ্রাম নেবো। আপনাদের কথার উত্তর কাল সকালে দেব,প্লিজ ভাবী। কেউ আর কিছু বললো না। সুমি বুয়াকে বললো, টেবিলে খাবার দেয়ার জন্য। সুজন হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে এলো। তবে আকাশ লক্ষ্য করলো সুজনকে কেমন যেন দুর্বল দুর্বল লাগছে। আকাশ কিছু না বলে চুপচাপ সোফায় বসে রইলো। সুমি খাবার বেড়ে দিচ্ছে, সুজন খাচ্ছে। আর প্রিয়া মিতুকে খাইয়ে দিচ্ছে। খাওয়া শেষে সুজনকে গেস্টরুমে নিয়ে গেল। সুজন আকাশের দিকে একবার তাকিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। আকাশ বুঝতে পারলো সুজন বড় ধরণের কোন বিপদে পড়েছে। আকাশ কিছু না বলে লাইট নিভিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো। সুমি মিতুকে নিজের কাছে নিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিল। মিতু ঘুমিয়ে পড়েছে। সুমি মিতুর মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবলো, আমার যদি এমন একটা মেয়ে থাকতো, তাহলে এভাবেই আমার পাশে ঘুমাতো। আকাশ এসে বিছানায় বসে পড়লো, মুখে চিন্তার ছাপ। সুমি বললো,তুমি অত চিন্তা করো না। সকাল হোক, সুজন ভাইয়ের মুখ থেকে সব কথা শোনার পর যা করার করো। রাত অনেক হয়েছে, এবার শুয়ে পড়।আজ আমরা দু'জন মিতুকে নিয়ে ঘুমাবো। তুমি শুয়ে পড়, আমি নীলাকে দেখে আসছি। সুমি বেরিয়ে গেল। আকাশ শুয়ে মিতুর দিকে তাকিয়ে রইলো । আর ভাবলো, মিতু আজ পর্যন্ত ওর মাকে দেখেনি। কোথায় ওর মা?  সুজন কিছু না বলে ঘুমিয়ে গেল। কিন্তু ওর কথা না শোনা পর্যন্ত যে আমি শান্তি পাচ্ছি না। এতটুকু মেয়ে আজ পর্যন্ত তা মাকে দেখেনি!  সুজন কেন বললো এই বাড়িতে ওর মা থাকে, এতটুকু মেয়েকে কেন ও মিছে আশা দিয়ে এত দূর নিয়ে এসেছে?  যাক সকাল হোক তারপর সব জানা যাবে। আকাশ মিতুকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো। মনে মনে ভাবলো আজ যদি আমার একটা সন্তান থাকতো!  তবে আমি ওকে এভাবে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে থাকতাম। আকাশ একটা নিঃশ্বাস ফেলে চোখ বুঁজে রইলো।

সুমি ভোরে উঠে সুজন আর মিতুর জন্য নাস্তা তৈরি করলো। আকাশ ডাইনিংটেবিলে বসে সুজন এর জন্য অপেক্ষা করছে। সুজন হাত মুখ ধুয়ে এল। সুমি নাস্তা দিল। আকাশ আর সুজন নাস্তা খাচ্ছে। দু'জনেই চুপচাপ। সুমি মিতুকে নিজের হাতে খাইয়ে দিলো। তারপর নীলাকে বললো, মিতুকে নিয়ে ছাদের উপর থেকে ঘুরে আসতে। নীলা মিতুকে নিয়ে ছাদে চলে গেল। সুজন আর আকাশ এর নাস্তা খাওয়া শেষ। ওরা দু'জন ড্রইংরুমে বসলো। সুমি এসে আকাশের পাশে বসলো। খালা আর প্রিয়া এলো। সবাই সুজনের কথা শুনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। আকাশ বললো,তুই মিতুকে কেন মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে এখানে নিয়ে এসেছিস?  এতটুকু মেয়ের সাথে কেন ছলনা করছিস?  তোর স্ত্রীকে সাথে নিয়ে এলি না কেন?  ফোনে আমাকে বলেছিস তোর স্ত্রী খুব ভালো। তোরা বিবাহিত জীবনে অনেক সুখী। তাহলে আজ তাকে ফেলে একা এলি কেন?  তোদের মধ্যে কি কোন সমস্যা হয়েছে?

না আকাশ, ও যতদিন ছিল, ততদিন আমাকে শুধু ভালোবাসাই দিয়ে গেছে।
দিয়ে গেছে মানে!  তোদের কি ডিভোর্স হয়ে গেছে?
না।
তাহলে ও তো ভালো ছিল।
তাহলে কি সে অন্য কোথাও চলে গেছে তোকে ছেড়ে?  সুজন চুপ করে না থেকে আমাকে বল, কী হয়েছে? 
হ্যাঁ আকাশ, ও আমার সাথে রাগ করে চিরদিনের মত চলে গেছে। আমি লন্ডনে যাবার পর ওর সাথে আমার পরিচয় হয়। খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের বন্ধুত্ব হয়ে যায়। তারপর ওর পরিবারের মত নিয়ে আমাদের বিয়ে হয়। খুব সুখে কাটছিল আমাদের জীবন। বিয়ের এক বছর পর মিতু ওর গর্ভে এল। সন্তান এর কথা জানতে পেরে ও আরো বেশি খুশি। ওর এত খুশি দেখে আমিও খুশি। সন্তানকে নিয়ে ওর কত স্বপ্ন, কত ভাবনা!  সেই সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে ও মারা গেলো!  আমাকে একা রেখে ও চিরদিনের জন্য এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেল।
সুজনের এই কথা শুনে সবার চোখে পানি এসে গেল। প্রিয়ার বুকের ভেতরটা হাহাকার করে উঠলো। সুমি চোখের পানি মুছলো। আকাশ বললো, তুই তো আমাকে কখনো বলিসনি যে তোর স্ত্রী মারা গেছে!  যখনই ফোন করেছি, বলেছিস সব ঠিক আছে। মাঝে মাঝে মিতুর কথা বলেছিস। এত বড় একটা কথা তুই আমার কাছে গোপন রেখেছিস! 
কি করে বলবো আমার স্ত্রী মারা গেছে!  আমার প্রতি মুহুর্তে মনে হয়েছে, ও আমার আশেপাশেই আছে। আমি সবসময় ওর অস্তিত্ব অনুভব করেছি। তাকে আমি কি করে মৃত বলি বল?  ও আমার কাছে এখনো জীবিত। ও চলে যাবার পর মিতুই ছিল আমার সব, তাকে নিয়েই আমি বেঁচে থাকতে চেয়েছিলাম।
চেয়েছিলাম মানে?
আকাশ আজই সব কথা বলে ফেললে কাল বলবো কি? আমি তোর এখানে কিছুদিন থাকবো।
কিছুদিন কেন, তুই সারাজীবন থাক আমার কাছে। আমার কোন অসুবিধা হবে না। তুই নিজের প্রতি এত অবহেলা করছিস কেন? আয়নায় নিজের চেহারা দেখেছিস?  কেউ দেখলে ভাববে তুই রোগী মানুষ, তুই ছাড়া তো এখন মিতুর আর কেউ নেই। তুই ঠিক না থাকলে, ওকে বড় করবি কি করে?  যা ঘটে গেছে তা বদলাতে পারবি না। সামনে যা ঘটবে, তার প্রতি খেয়াল রাখ। মনটাকে শান্ত রাখ, নিজের প্রতি যত্নশীল হ।
মনটাকে শান্ত কবেই করেছি, এতটুকু থেকে মিতুকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছি। কখনো ওকে ওর মায়ের অভাব বুঝতে দেইনি। তবুও শুধু মা মা করে।
মায়ের সাথে যে সন্তানের নাড়ীর টান, মাকে তো খুঁজবেই। তাই বলে মিথ্যা সান্ত্বনা দিয়ে কি লাভ?  তাতে কষ্ট শুধু বাড়বেই।
এই মিথ্যার মাঝে যে ওর জন্য একটা সত্য অপেক্ষা করছে। তাই এই মিথ্যাটা ওর কাছে বলতে আমার কোন কষ্ট হচ্ছে না। আমার তো সময় কম। তাড়াতাড়ি আমাকে ফিরে যেতে হবে। তবে যাওয়ার আগে ভাবীকে একটা উপহার দিয়ে যাবো।
তুই আমার বউকে কি উপহার দিবি?
সেটা যাওয়ার আগে বলবো। আগে বললে তো মজাটাই শেষ হয়ে গেল। তুই সারাটা জীবন শুধু আমার সাথে মজাই করে গেলি।
এইবারই তোর সাথে আমি শেষ মজাটা করে যাবো, বন্ধু।
সুজন তুই আসার পর থেকে আমি লক্ষ্য করছি, তুই সব কথার সাথে শেষ শব্দটা উচ্চারণ করছিস, ব্যাপারটা কি বলতো?  তুই যাওয়ার পর কি আমার সাথে আর কোন যোগাযোগ করবি না?
আর কখনো দেখাও হবে না, আর কথাও হবে না।
আমি এমন কি করলাম, যে তুই আমার সাথে আর কখনো সম্পর্ক রাখবি না? 
আকাশ, রাগ করিস না,তোর সাথে মজা করলাম।
এমন মজা আর কখনো করবি না!  চল আমার সাথে, বাইরে থেকে ঘুরে আসলে তোর মনটা ভালো হয়ে যাবে।
আকাশ আর সুজন উঠে দাঁড়ালো।সুজন বললো, ভাবী মিতুকে রেখে গেলাম। সুমি বললো, আপনি নিশ্চিন্তে যান ভাই, মিতুর দিকে আমি খেয়াল রাখবো। আকাশ আর সুজন  ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। খালা বললো,মিতুর জন্য আমার খুব কষ্ট হচ্ছে, ও এখনো জানে না ওর গর্ভধারিণী মা এই দুনিয়ার বুকে নেই। আর সুজনের মুখের দিকে তাকালেও মায়া হয়। সুমি বললো, ঠিকই বলেছেন খালা, বাইরে থেকে বোঝা যায় না যে, মানুষের মনে কত কষ্ট, কত বড় শূন্যতা নিয়েও মানুষ বেঁচে থাকে। প্রিয়া উঠে চলে যেতে চাইলে খালা হাত ধরে বসালো। প্রিয়া মন খারাপ করো না, দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে। নীলা মিতুকে নিয়ে ঘরে ঢুকলো। মিতু দৌড়ে সুমির কোলে উঠলো। সুমির মনটা জুড়িয়ে গেল। মনে মনে ভাবলো, আজ যদি আমার একটা সন্তান থাকতো!  তাহলে ও এভাবে আমার কোলে চড়ে বসে থাকতো। মিতু বললো, আমার বাবা কোথায়?  সুমি বললো, তোমার চাচ্চুর সাথে বাইরে গেছে। দুই বন্ধু মিলে ঘুরবে,অনেক গল্প করবে। মিতু বললো, আমাকে নিয়ে গেল না কেন?  আমিও ঘুরবো। সুমি বললো, তুমি তো ছাদে ছিলে, তাই তোমাকে নিয়ে যায় নি। তবে তুমি একদম মন খারাপ করো না। আজ সারাদিন আমি তোমার সাথে খেলবো। মিতু খুশি হয়ে বললো, কি মজা!  সুমি বললো, তার আগে চল তোমাকে গোসল করিয়ে দেই। সুমি মিতুকে কোলে নিয়ে চলে গেল। খালা তাই দেখে হাসলো। আর বললো, মিতুকে সুমির কোলে অনেক সুন্দর লাগছে, মনে হচ্ছে ওরই মেয়ে।

āĻ•োāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāχ:

āĻāĻ•āϟি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āϟ āĻ•āϰুāύ