āĻļুāĻ•্āϰāĻŦাāϰ, ā§§ āĻĄিāϏেāĻŽ্āĻŦāϰ, ⧍ā§Ļā§§ā§­

3580 (13)

প্রিয়ার চোখে জল

পর্বঃ ২৭

লেখকঃ সাইদা ইসলাম বকুল

সন্ধ্যার পর আকাশ আর সুজন ফিরে এল। মিতু ড্রইংরুমে বসে সুমির সাথে খেলছিল। সুজনকে দেখে দৌড়ে গেল। সুজন মিতুকে কোলে তুলে নিল। মিতু বললো, তুমি আমাকে রেখে কোথায় গিয়েছিলে বাবা?  সুজন বললো, অনেক দিন পর দেশে এসেছি তো তাই একটু ঘুরে দেখে এলাম। আর তো কখনো দেখতে পাবো না,তাই শেষবারের মত নিজের জন্মভূমি দেখে যাচ্ছি। আকাশ রেগে বললো, আবার সেই শেষ শব্দটা তুই উচ্চারণ করলি!  সুজন বললো, সরি। মিতু বললো, জানো বাবা আন্টি আমাকে অনেক আদর করে। সুজন বললো,যাক তাহলে আর আমার কোন চিন্তা নেই। আকাশ বললো, তোর কথার মানে কি?  সুজন বললো,কথাটা এজন্য বললাম, আমরা যে কদিন এখানে আছি মিতুকে নিয়ে আমাকে চিন্তা করতে হবে না। ওর দায়িত্ব ভাবী পালন করবে। কি ভাবী, পারবেন তো?  সুমি হেসে বললো, অবশ্যই পারবো। আপনি ওকে নিয়ে চিন্তা করবেন না। যতদিন আছেন, বন্ধুর সাথে ঘুরে বেড়াবেন। সুজন মিতুকে এমনভাবে জড়িয়ে ধরলো, মনে হচ্ছে ওকে রেখে দূরে কোথাও চলে যাচ্ছে। আকাশ বললো, আর দুদিন পর নীলার বিয়ে। আমার সাথে তোকেও অনেক কাজ করতে হবে। সুজন বললো,সেটা তোকে আর বলতে হবে না। আমার বোনের বিয়েতে আমি কাজ না করলে, কে করবে?  আকাশ আর সুজন হেসে উঠলো।

নীলার বিয়ের আয়োজন শুরু হয়ে গেছে। দূর থেকে আত্মীয় - স্বজন আসতে শুরু করেছে। জয়ের মায়ের ইচ্ছা অনুযায়ী বিয়ের সব আয়োজন বাড়িতেই হচ্ছে। তাই বাড়ির গেট সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। পুরো বাড়িতে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। গ্রামের দু'জন মুরুব্বি খালার সাথে গল্প করছে আর পান খাচ্ছে। প্রিয়া অনেকদিন পর পানের ঘ্রাণ পেল। পানের ঘ্রাণ প্রিয়ার অনেক ভালোলাগে। প্রিয়ার আরো ভালোলাগে ধানের ঘ্রাণ। প্রিয়া যখন ধান ক্ষেতের পাশ দিয়ে হেঁটে যেত, তখন ধানের ঘ্রাণ অনুভব করতো। যখন নদীর ধারে বসে থাকতো, তখনও এক ধরণের ঘ্রাণ অনুভব করতো। সেইসব ঘ্রাণ প্রিয়ার মনকে আনন্দিত করতো। প্রিয়া জানে না আর কখনো গাঁয়ের মেঠোপথ ধরে হাঁটতে পারবে কি না। পালতোলা নৌকা নিয়ে মাঝি গান গেয়ে যায়, সেই সুর কখনো শুনতে পাবে কিনা। সুমির ডাক শুনে প্রিয়া দৌড়ে গেল। প্রিয়া এতদিন পর সবার সাথে মন খুলে হাসছে। সব মেহমানদের সাথে কথা বলছে। আজ প্রিয়ার মনে কোন জড়তা নেই। নীলার বিয়ের সব খুশি যেন প্রিয়ার। সুমি চা বানিয়ে দিল, প্রিয়া নিয়ে গেল। খালা এসে সুমির পাশে দাঁড়ালো। জানিস সুমি, আমি প্রিয়াকে নিয়ে ভয়ে ছিলাম, ভেবেছিলাম মেয়েটি মনে মনে অনেক কষ্ট পেয়েছে। মন খারাপ করে বসে থাকবে। কিন্তু আজ ওকে হাসিখুশি দেখে আমার মনটা শান্ত হয়ে গেছে। সুমি বললো, খালা প্রিয়ার মনে কষ্ট ঠিকই আছে, তবে কাউকে বুঝতে দেয় না। ওর অনেক ধৈর্য। ওর ভেতরে অনেক অশান্তি, তবুও মনকে শান্ত রাখার চেষ্টা করে। ওর সাথে আমার পরিচয় খুব বেশি দিনের নয়, তবুও আমি ওকে বুঝতে পারি। তবে ওকে আমি বেশি দিন কষ্টের মধ্যে থাকতে দেব না। খুব তাড়াতাড়ি আমি ওকে ভালো একটা ছেলের হাতে তুলে দেব। যে ওকে বুঝবে, ওকে সম্মান করবে, ওকে ভালোবাসবে। আমি নীলার মত প্রিয়াকেও ধুমধাম করে বিয়ে দেব, যাতে ওর কোন কষ্ট না থাকে।

সন্ধ্যার পর পুরো বাড়ির লাইট জ্বলে উঠলো। এত সুন্দর আলো প্রিয়া কখনো দেখেনি। তাই এত ঝলমলে আলো দেখে প্রিয়ার মন খুশিতে নেচে উঠলো। মানুষের বয়স যাই হোক, তবুও মাঝে মাঝে সে শিশু হয়ে যায়। প্রিয়া দৌড়ে ছাদে উঠে এল। পুরো ছাদের আলো খুশি মনে দেখতে লাগলো। ছোট ছোট লাইট গুলো হাত দিয়ে ধরে দেখলো। নিচের দিকে তাকালো, গেটের ভেতর তাবু টাঙনো হয়েছে রান্না করার জন্য। আর ছাদের উপর খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে । এই রাতের অন্ধকারে আলো ঝলমলে বাড়িটা প্রিয়ার কাছে স্বপ্নপুরী মনে হচ্ছে। আর প্রিয়া সেই স্বপ্নপুরীর মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে। ভাগ্য মানুষকে কখন কোথায় নিয়ে দাঁড় করায়, তা কেউ বলতে পারে না। কাল নীলার বিয়ে হয়ে যাবে জয়ের সাথে । সবাই খুশি, প্রিয়াও খুশি। তবে হঠাৎ করে মনের কোথায় যেন একটু কষ্ট অনুভব হলো। চোখের কোণে পানি জমে উঠলো। প্রিয়া তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছলো। কিন্তু তাতে যেন কষ্ট আরো বেড়ে গেল। প্রিয়া বুঝতে পারলো এখানে একা দাঁড়িয়ে থাকলে কষ্ট তাকে আরো ঘিরে ধরবে। তাই সে তাড়াতাড়ি নিচে নেমে এলো। সবার সামনে আসতেই কষ্ট ওর কাছ থেকে অনেক দূরে চলে গেল।
আকাশ আর সুজন বাজার করা নিয়ে ব্যস্ত। রাত দেড়টা পর্যন্ত চললো। সবাই আনন্দ ফুর্তি করছে। নীলার দুই মামাতো বোন এসেছে খুলনা থেকে। নীলা ওদের নিয়েই সময় কাটালো। একসময় সবাই ঘুমিয়ে পড়লো। কিন্তু প্রিয়ার কেন জানি ঘুম আসছে না। এপাশ ওপাশ ফিরছে। প্রিয়ার কাছে রাতটা অনেক বড় মনে হচ্ছে। আসলে সময় যখন কাটতে চায় না, তখন সময়টাকে অনেক লম্বা মনে হয়। তারপরও রাত এক সময় শেষ হয়েই যায়।
সকাল ছয়টার মধ্যেই সবাই ঘুম থেকে উঠে পড়লো । পুরো বাড়ি চঞ্চল হয়ে উঠলো। বিশেষ করে মিতুর চেঁচামেচি, আর ওর দৌড়ঝাঁপ দেখে সবাই আনন্দিত। সুমি তো আরো বেশি খুশি। যতক্ষণ সময় পায় শুধু মিতুর দিকেই তাকিয়ে থাকে। যেন মিতুকে দেখার সাধ মেটে না। হয়তো ওকে দেখে মায়ের মনটা বারবার কেঁদে উঠে। সুমি আর প্রিয়া সবাইকে নাস্তা দিতে হিমশিম খাচ্ছে। বাইরে বাবুর্চি এসেছে, তাদেরকে ও নাস্তা দিয়ে এসেছে। এত ব্যস্ততা তবুও ভালো লাগছে। মানুষের মনে যখন আনন্দ থাকে, তখন ক্লান্তি তাকে স্পর্শ করতে পারে না। সুমি নীলার দিকে তাকিয়ে ভাবলো, আমার বিশ্বাস হচ্ছে না, নীলার আজ বিয়ে, এই কথা সুমি যতই ভাবছে, ততই আনন্দিত হচ্ছে। নীলাও খুব খুশি। মেহমান যারা আসছে, তাদের সাথে মন খুলে হাসছে। নীলার এই হাসি দেখার জন্য সুমি কত দিন অপেক্ষা করেছে। যত বেলা বাড়ছে, মেহমান ততই আসছে। কতগুলো মেয়ে এসেই নীলাকে জড়িয়ে ধরে হাসতে লাগলো। মেয়েগুলোকে দেখে প্রিয়া একটু দূরে সরে গেল। কারণ তারা খুব সুন্দর আর খুব স্মার্ট। ওদের সামনে যেতে প্রিয়ার লজ্জা লাগলো। ওরা নীলাকে বউ সাজানোর জন্য বিউটি পার্লার নিয়ে গেল। সুমি প্রিয়াকে বলেছিল যাবার জন্য। কিন্তু এত কাজ ফেলে প্রিয়া যেতে রাজী হয়নি। ওর এই দায়িত্ববোধ দেখে খালা খুব খুশি হল। নিচে রান্না হচ্ছে। আকাশ আর সুজন সেখানে দাঁড়িয়ে আছে, সব কিছু ঠিকঠাক মত হচ্ছে।

বেলা দুইটার দিকে বরপক্ষ এলো। বরপক্ষ আসাতে বাড়ির আনন্দ দ্বিগুণ হয়ে গেল। মেহমানরা যে যেভাবে পারছে জয়কে দেখছে। বর দেখে সবাই খুশি। আর সবার খুশি দেখে আকাশ আর সুমিও খুশি। আকাশের বুকটা আনন্দে ভরে উঠলো।, রযাকে নিয়ে এত চিন্তা করেছে, যার কথা ভেবে এত কেঁদেছে, তার সেই আদরের বোনের আজ বিয়ে!  প্রিয়ার খুব ইচ্ছে হল জয়কে বরের সাজে কেমন লাগছে তা দেখার জন্য। তাই নিজেকে আড়াল করে জয়কে একনজর দেখলো। সবাই ঠিকই বলেছে, জয়কে খুব সুন্দর লাগছে। নীলাকে পরীর মত লাগছে। প্রিয়া ঠিকই শুনেছে,  বিউটি পার্লার মানুষকে অর্ধেক পাল্টে দেয়। নীলাকে দেখে সবাই খুশি। নীলাও খুশি। এই পরিবারকে প্রিয়া এতটুকু খুশি দান করতে পেরেছে, এজন্য প্রিয়াও খুশি। এত খুশির মাঝেও প্রিয়ার বুকের কোথায় যেন একফোঁটা শূন্যতা অনুভব হয়। হঠাৎ করে নিজেকে খুব একা মনে হল। তাই প্রিয়া নিজের রুমে চলে গেল। রাতে ঘুম হয়নি, তাই মাথাটা ঝিমঝিম করছে। প্রিয়া শুয়ে পড়লো। বাইরে সবাই নীলার বিয়ের আনন্দে মেতে উঠেছে। কেউ খাচ্ছে, কেউ মনের আনন্দে গান গাইছে, কেউ নাচছে, কেউ জয়ের সাথে মজা করছে। এই বাড়ির আনন্দ আশেপাশের সবাই উপভোগ করছে। একজনের আনন্দ দেখে অন্যজন আনন্দিত হবে, এটাই তো মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা। যে ভালোবাসার কারণে জগত -সংসার টিকে আছে।
একসময় বিয়ের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়ে গেল। এবার বিদায়ের পালা। সুমি লক্ষ্য করলো, নীলা চারদিকে তাকিয়ে কাকে খুঁজেছে। সুমি ইশারায় জিজ্ঞেস করলো, নীলা প্রিয়ার ঘরের দিকে ইশারা করলো। সুমি লক্ষ্য করলো প্রিয়া নেই। এতক্ষণ ব্যস্ততার জন্য প্রিয়ার কথা মনেই ছিল না। সুমি নীলাকে নিয়ে প্রিয়ার রুমে গেল। প্রিয়া ঘুমিয়ে আছে। নীলা প্রিয়ার গায়ে হাত রাখলো। সাথে সাথে প্রিয়ার ঘুম ভেঙে গেল।প্রিয়া উঠে বসলো। সুমি বললো,নীলাকে বিদায় না দিয়েই ঘুমিয়ে পড়েছো?  প্রিয়া বললো, আপু কাল রাতে ভালো ঘুম হয়নি, তাই কখন ঘুমিয়ে পড়েছি বলতে পারবো না। নীলা প্রিয়াকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। প্রিয়া বললো, তুমি একটুও কাঁদবে না। তুমি যদি কাঁদো তাহলে তোমার সাথে আমি আর কখনো কথা বলবো না। প্রিয়া নীলার চোখের পানি মুছে দিল। তুমি তো আমাদের পাশেই আছো। যখন ইচ্ছে হবে আমাদের দেখতে পাবে, কথা বলতে পারবে। আপু আমি ঠিক বলিনি?  সুমি বললো, হ্যাঁ ঠিকই বলেছো। প্রিয়া বললো, আমি চাই আমাদের সবার আদরের নীলা হাসিমুখে শশুরবাড়ি যাক। তুমি দেখ, আমি যখন শ্বশুরবাড়ি যাবো তখন একটুও কাঁদবো না। নীলা একটু হাসলো। প্রিয়া ওকে বুকে জড়িয়ে ধরলো। আমি মন থেকে দোয়া করি, তুমি সুখে থাকো। তারপর সবাই মিলে হাসিমুখে নীলাকে বিদায় জানালো। বিয়ে হলো মানুষের জীবনের নতুন অধ্যায়। সবাই সে জীবনে সুখী হতে চায়। তারপরও সুখ দুঃখ মিলেই তো মানুষের জীবন।

প্রিয়ার চোখে জল

পর্বঃ২৮

লেখকঃসাইদা ইসলাম বকুল

রাত নয়টার মধ্যে সব মেহমান চলে গেল। শুধু যারা গ্রাম থেকে এসেছে তারা রয়ে গেছে। সকাল বেলা তারাও চলে যাবে। নীলা চলে যাবার পর পুরো বাড়ি নীরব হয়ে গেছে। সুমি মিতুকে খুঁজতে খালার কাছে গেল। গিয়ে দেখে মিতু ঘুমিয়ে পড়েছে। খালা বললো, আজ সারাদিন দৌড়ঝাপ বেশি করেছে তো, তাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছে। সুমি বললো, মিতু আপনাকে খুব আপন করে নিয়েছে। খালা বললো, হ্যাঁ মা, তুই ঠিকই বলেছিস। সারাক্ষণ দাদু দাদু বলে ডাকে। শুনে আমার মনটা আনন্দে ভরে যায়। যদি কিরণ বিয়ে করতো, আর ওর একটা বাচ্চা থাকতো,, তাহলে তো আমাকে এভাবে দাদু দাদু বলে ডাকতো। আমি তার সাথে খেলতাম, নিজেকে আর একা মনে হতো না। জানি না আমি বেঁচে থাকতে সেই দিন দেখতে পাব কিনা। এই বলে খালা দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ফেললো। প্রিয়া এতক্ষণ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। খালার দীর্ঘ নিঃশ্বাস যেন প্রিয়ার বুকে এসে লাগলো। কেন জানি ওই দুঃখী মহিলার জন্য প্রিয়ার অনেক মায়া লাগে। খালার মাঝে প্রিয়া তার মায়ের ছবি দেখতে পায়। প্রিয়া তার মাকে দেখেনি, কিন্তু প্রিয়া ভাবে মা বেঁচে থাকলে হয়তো এমনই হতো। প্রিয়া জানে না, তার ছেলের মনে কি দুঃখ, কিন্তু তার ছেলে খুব স্বার্থপর। সে তার নিজের দুঃখ দেখে, তার মায়ের দুঃখ দেখেও না, বোঝেও না।প্রিয়া সেখান থেকে চলে এলো। সুমি বললো, খালা মন খারাপ করবেন না। সময়ের সাথে কত কিছু বদলে যায়। দেখবেন কিরণের মন এক সময় বদলে যাবে,, আর তারপর সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। এবার চলুন, খেয়ে নেবেন। প্রিয়া বারান্দায় এসে দাঁড়ালো  মনটা কেমন জানি খুব বেশি খারাপ লাগছে। অনেকক্ষণ যদি কাঁদতে পারতো তাহলে হয়তো মনটা কিছুটা হালকা হত। কিন্তু ইচ্ছা করলেও প্রিয়া কাঁদতে পারবে না। তাহলে সবাই ভাববে, জয়ের জন্য কাঁদছে। এমন সময় সুজন এসে পাশে দাঁড়ালো। প্রিয়াকে বললো, আমি জানি তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু কাউকে তা বুঝতে দিচ্ছো না। হাসি দিয়ে হয়তো দুঃখকে আড়াল করা যায়, কিন্তু ঢেকে রাখা যায় না। মানসিক কষ্টের চেয়ে বড় কষ্ট আর নেই। তবে তুমি যা করলে, তার জন্য সবাই তোমার কথা সবসময় মনে রাখবে। প্রিয়া বললো, ভাইয়া বিশ্বাস করুন, আমার কোন কষ্ট হচ্ছে না। জীবনে ছোটখাট দুঃখ কষ্ট তো থাকবেই, সব কিছু উপেক্ষা করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। তাছাড়া আমার পাশে আপনারা সবাই আছেন। আমার আর দুঃখ কীসের, বলেন?  জীবনে যা কখনো কল্পনাও করিনি, আর আমি সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি। এর চেয়ে বড় পাওয়া আমার জন্য আর কি হতে পারে, বলেন?  সুজন বললো, যাক তোমার কথা শুনে কিছুটা শান্তি পেলাম। চল সবাই খাবার টেবিলে বসে আছে। সুজন আর প্রিয়া এসে বসলো। সুজন এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো। মিতু ঘুমিয়ে পড়েছে ভাই। সুজন বললো,ভাবী মিতুকে লালন পালন করতে গিয়ে বুঝেছি একজন মা কত কষ্ট করে তার সন্তানকে বড় করে। মিতু যখন একটু একটু বুঝতে শুরু করলো, তখন শুধু মা মা বলে ঢাকতো। আমি অনেক আদর ভালোবাসা দিয়েও ওর মুখ থেকে মায়ের নাম ভুলাতে পারিনি। তারপর থেকে মিথ্যা  বলা শুরু করলাম। ভেবেছিলাম যখন একটু বড় হবে, তখন সত্যটা ওর কাছে বলে দেব। ভাবী আপনিই বলেন, এছাড়া আমার আর করার কি ছিল?  সুমি বললো, ভাই আপনি যা করেছেন ঠিকই করেছেন। কিন্তু আর কতদিন এই সত্য লুকিয়ে রাখবেন?  এখন বললে ও সেই সত্যটা মেনে নিয়েই আস্তে আস্তে বড় হবে। সুজন অল্প খেয়েই হাত ধুয়ে ফেললো। আকাশ বললো,কিরে তোর কি খাওয়া শেষ?  আমি, আসার থেকেই লক্ষ্য করছি, তোর খাওয়ার প্রতি অনীহা। এতটুকু খেলে, তুই বেঁচে থাকবি কি করে?  তোর চোখের নিচেও কেমন কালি পড়ে গেছে, শরীর দুর্বল হয়ে পড়েছে। সুজন বললো, আকাশ, নীলার বিয়ের ঝামেলায় কথাটা তোদের বলা হয়নি। আমাকে খুব তাড়াতাড়ি লন্ডন ফিরে যেতে হবে। সময় খুব কম আমার হাতে। আকাশ বললো,এত বছর পর এসেছিস, আর কিছুদিন থেকে যা। আবার কবে না কবে আসবি।
বন্ধু আমার আর আসা হবে না, এটাই আমার শেষ যাত্রা। আকাশ আমি বলেছিলাম না, যে যাওয়ার আগে ভাবীকে একটা উপহার দিয়ে যাবো। সেই উপহার হলো মিতু। আমি মিতুকে তোদের কাছে রেখে যেতে চাই। তোরা ওকে লালন পালন করতে পারবি না বন্ধু?
এটা আবার কি ধরণের কথা সুজন!
আকাশ, আমার কথার উত্তর দে। তবে যা বলবি ভেবে চিন্তে বলবি।
মিতুকে লালন পালন করা তো কঠিন কিছু নয়, অবশ্যই পারবো। কিন্তু তুই এই কথা বলছিস কেন?
আকাশ আমি মিতুকে চিরদিনের জন্য তোদের কাছে রেখে যাবো। আর কখনো ওকে ফিরিয়ে নিতে আসবো না। ভাবী, মিতুকে আপনাদের দিয়ে দিলাম। আপনারা ওর বাবা মা হয়ে থাকবেন। সবাই অবাক হয়ে সুজনের দিকে তাকিয়ে রইলো। সুজন তুই কি বলছিস, বুঝতে পারছিস?  সব কিছু নিয়ে মজা করা ঠিক নয়।
আকাশ, আমি যদি এই কথাটা মজা করে বলতে পারতাম, তাহলে নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করতাম!  আমার বুকের ধনকে একা রেখে যেতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে!  আকাশ, আমি আর মাত্র ক'টা দিন এই পৃথিবীর বুকে বেঁচে আছি। সুজনের এই কথা শুনে সবাই চমকে গেল। সবাই খাবার রেখে উঠে দাঁড়ালো। আকাশ সুজনকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললো, সুজন তুই এসব কি আবোল তাবোল বলছিস?  তুই কি পাগল হয়ে গেছিস!

প্রিয়ার চোখে জল

পর্বঃ ২৯

লেখকঃ সাইদা ইসলাম বকুল

বন্ধু,পাগল হলে তো ভালই হতো। তবুও তো এই পৃথিবীর বুকে বেঁচে থাকতাম। দুই বছর আগে আমার ক্যান্সার ধরা পড়ে। অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি, অনেক টাকা -পয়সা খরচ করেছি, বেঁচে থাকার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। কিন্তু ডাক্তাররা বললো আর বেশিদিন সময় নেই। আমিও ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম, আমার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। তখন থেকেই মিতুকে নিয়ে ভাবতে থাকলাম। ওকে কার কাছে রেখে যাবো। কে ওকে আমার মত করে ভালোবাসবে, মানুষ করবে। দুই বোন আছে, তারা তাদের সংসার নিয়ে ব্যস্ত। ওরা ওদের সন্তানকে দেখবে, না আমার সন্তানকে দেখবে?  আমার মাথা খারাপ হয়ে গেল। হঠাৎ করে মনে হল তোর আর ভাবীর কথা।আনন্দে বুকটা আমার ভরে গেল। কারণ আমি জানি তোদের কাছে আমার মিতুর কোন অযত্ন হবে না। তোরা ওকে সত্যিকারের ভালোবাসা দিবি। তখন থেকেই মিতুর কাছে বলা শুরু করলাম যে,তোর মা বাংলাদেশে আছে। ভেবেছিলাম আর দুই তিন বছর পর মিতুকে সত্যটা বলে দেবো। কিন্তু যখন দেখলাম, আমার আয়ু আর বেশি দিন নেই, তখন মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম যে,আমার মিথ্যা ওর জীবনে সত্য হয়ে থাক। তাতেই ওর সুখ আর শান্তি।
তুই কেন আমার সাথে এই শেষ দেখা করতে এলি!  তুই আমার কাছে না আসতি, আমাকে কিছু না বলতি, তবুও ভালো হত। তুই মরে গেলেও জানতে পারতাম না। ভাবতাম বেঁচে আছিস, ভালো আছিস, আর মিতুকে আমরা এভাবে পেতে চাইনি।
একদিকে শূন্যতা, আর আরেক দিকে পূর্ণতা আছে বলেই তো মানুষ সব কিছু ভুলে বেঁচে থাকে। আমি থাকবো না, কিন্তু মিতুর মাঝেই তো আমি তোদের কাছে বেঁচে থাকবো। মিতুর চোখের দিকে তাকালে ভাববি, আমি তোর দিকে চেয়ে আছি।
কিন্তু মিতু এখন একটু একটু বুঝতে শিখেছে, ও জানে তুই ওর বাবা। ওকি আমাকে বাবা হিসেবে গ্রহণ করবে?

করবে, আমি এখান থেকে চলে যাবার পর মিতু আমাকে কখনো খুঁজবেও না,আর আমার জন্য কাঁদবেও না।
এ কি করে সম্ভব, সন্তান তার বাবার জন্য কাঁদবে না!
আকাশ মিতু আমার সন্তান। আমি ওর মন বুঝি, ওকে কখন কি বলতে হবে তা আমি ভালোভাবেই জানি। মিতু খুব অভিমানী মেয়ে, ও মিথ্যা একদম সহ্য করতে পারে না। আর আমি সেই মিথ্যা বলে ওর কাছ থেকে চিরদিনের জন্য বিদায় নেবো। শুধু একটা অনুরোধ, আমি তোর সামনে মিতুকে যা বলবো, তুই তার কোন প্রতিবাদ করবি না। আমার মেয়ের সুন্দর ভবিষ্যৎ এর জন্য আমাকে যদি একশো মিথ্যা কথা বলতে হয়, তাও আমি বলবো।
সুজন, তুই যখন জেনেই ফেলেছিস যে, তোর মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এসেছে। তখন আর লন্ডন গিয়ে লাভ কি, ওখানে তো তোর কেউ নেই।
কে বললো লন্ডনে আমার কেউ নেই?  আকাশ, আমার স্ত্রী লন্ডনের মাটিতে একা একা শুয়ে আছে। আমি আসার আগে ওর কবরের পাশে জায়গা ঠিক করে এসেছি। ও নিষ্ঠুরের মত আমাকে একা রেখে চলে গেছে!  কিন্তু মৃত্যুর পর আমি ওর পাশাপাশি থাকতে চাই।
কিন্তু তোর এই অবস্থায় কে তোকে দেখাশুনা করবে?
ওখানে এক বাঙালি পরিবার আমার পাশেই থাকে। ওনারা আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছে। ওরা আমাকে আপন ভাইয়ের মত দেখে। বাঙালির আর কিছু না থাক, বুক ভরা ভালোবাসা আছে। আমার মৃত্যুর পর ওরাই আমার দাফনের ব্যবস্থা করবে। হয়তো মাঝে  মাঝে আমার জন্য দু'ফোটা চোখের পানিও ফেলবে। তবে তোদের প্রতি একটা বিশেষ অনুরোধ, মিতুর সামনে কখনো চোখের পানি ফেলবি না। মিতু কান্না একদম সহ্য করতে পারে না। যদি কখনো তোদের চোখের পানি দেখে, তখনই ও আমাকে খুঁজবে। আমি চাই না, আমি চলে যাবার পর মিতু আমাকে খঁজুক।
এই বলে সুজন তার রুমে চলে গেল। প্রিয়া আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না। নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে কাঁদতে লাগলো। এতদিন ভাবতো সব দুঃখ শুধু প্রিয়ার জীবনে। সুমি খালাকে বুকে জড়িয়ে কাঁদতে লাগলো। আকাশ যেন পাথর হয়ে গেল। সোফায় হেলান দিয়ে বসে পড়লো। তার ভাইয়ের মত বন্ধু তাকে ছেড়ে চিরবিদায় নিচ্ছে, এটা মানতে আকাশের খুব কষ্ট হচ্ছে। এত বছরের সম্পর্ক, এত মায়া, এত স্মৃতি, তার উপর শেষ উপহার হিসেবে মিতুকে দিয়ে যাচ্ছে। এত কষ্ট আকাশ কি করে সহ্য করবে!  যখনই মিতুকে বুকে জড়িয়ে নেবে, তখনই তো সুজনের কথা মনে পড়বে। মিতুকে পাওয়া আকাশের জন্য অনেক বড় ভাগ্যের ব্যাপার। কিন্ত সুজনকে হারানোর কষ্টও তো কম বড় নয়। আকাশ চোখ বুঁজে রইলো। সুমি বুঝতে পারলো আকাশ কিছুক্ষণ একা থাকতে চায়। তাই খালাকে নিয়ে চলে গেল রুমে।
আকাশ চোখ বুঁজে কতক্ষণ বসেছিল বলতে পারছে না। চোখ মেলে বুঝতে পারলো চারদিক নীরব হয়ে গেছে। হয়তো সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। আকাশ উঠে দাঁড়ালো। ধীর পায়ে হেঁটে নিজের রুমের দিকে যেতে লাগলো। হঠাৎ থমকে দাঁড়ালো। পেছন ফিরে সুজনের রুমের দিকে গেল। আজ আকাশ সুজনের পাশে ঘুমাবে। প্রিয় বন্ধুর দেখা আর কখনো পাবে না!  যদি সুজন অসুস্থ হয়েও লন্ডনে পড়ে থাকতো, তবুও গিয়ে দেখে আসতে পারতাম। কিন্তু মানুষ মরে গেলে আমাদের চোখের সামনে কবরের মাঝে থাকে। তবুও আমরা তার সাথে দেখাও করতে পারিনা, আর কথাও বলতে পারি না। আকাশ সুজনের রুমে গিয়ে দেখে সুজন রুমে নেই। আকাশ ভয় পেয়ে গেল। এত রাতে সুজন কোথায় গেল?  আকাশ পুরো বাড়ি খুঁজলো, সুজন কোথাও নেই। হঠাৎ করে মনে হলো বারান্দায় দেখা হয়নি। দৌড়ে গিয়ে দেখে সুজন ইজি চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছে, চোখ বুঁজে একা একা বলছে।

তুমি কে?
আমি একটা রক্তপিণ্ড,
তুমি কোথায় ছিলে?
আমি ছিলাম পানি আর রক্ত মিশ্রিত একটা পাত্রে।
তুমি এখন কোথায় আছো? 
আমি এখন আছি এই পৃথিবীর বুকে।
এখানে এসে তুমি কি দেখেছো?
আমি দেখেছি আলো,বাতাস,আকাশের তারা, ভোরের সূর্য,আর রাতের অন্ধকার।
এখানে এসে তোমার কার কার সাথে দেখা হয়েছে?
আমার দেখা হয়েছে বাবা -মা,ভাই-বোন, আত্মীয় -স্বজন, বন্ধু -বান্ধব আর অসংখ্য অপরিচিত মানুষের সাথে।
এখানে এসে তুমি কি পেলে? 
আমি পেলাম আদর ভালোবাসা সুখ দুঃখ আর অবহেলা ঘৃণা।
এখানে এসে তুমি কি কি হারালে?
আমি হারালাম মমতাময়ী মাকে, জন্মদাতা পিতাকে আর প্রাণের প্রিয় স্ত্রীকে।
এরপর তুমি কোথায় ফিরে যাবে? 
তা তো জানি না, হয়তো অন্য কোন জগতে যার সম্বন্ধে আমার কোন ধারণা নেই।

সুজনের এই কবিতা শুনে আকাশ আর ঠিক  থাকতে পারলো না। কেঁদে উঠলো শিশুর মত। আকাশের কান্না শুনে সুজন লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। আকাশকে জড়িয়ে ধরে নিজেও কিছুক্ষণ কাঁদলো। তারপর আকাশ সুজনকে নিয়ে  বিছানায় এসে বসলো। অনেক কথা বলার ইচ্ছে, বলা না বলা অনেক কথা। কিন্তু কোন কথাই মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না। সুজন শুয়ে পড়লো। আকাশ সুজনের বুকে হাত রেখে শুয়ে পড়লো। আকাশ অনুভব করতে পারলো সুজনের বুকের ভেতরে কাঁপছে। হয়তো ভেতরে কান্নার স্রোত বয়ে যাচ্ছে। সুজন আকাশের কাছে, তবুও মনে হচ্ছে সুজন হাজার মাইলদূরে। আকাশ সুজনের চোখের পানি মুছে দিল। তারপর এক সময় দুই বন্ধু ঘুমিয়ে পড়লো। দুঃখের শেষ হোক আর না হোক, কিন্তু রাত একসময় শেষ হয়েই যায়। ভোরের আলোর সাথে যেমন অন্ধকার মুছে যায়, তেমনি যদি মানুষের জীবনের দুঃখ -কষ্টগুলোও মুছে যেত তাহলে অনেক ভালো হত।

āĻ•োāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāχ:

āĻāĻ•āϟি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āϟ āĻ•āϰুāύ