প্রিয়ার চোখে জল
পর্বঃ ২১
লেখকঃ সাইদা ইসলাম বকুল
সুমির চাপাকান্না, আর নীলার কষ্ট প্রিয়ার সহ্য হচ্ছে না। প্রিয়া মেঝেতে বসে পড়লো। তারপর কি মনে করে উঠে দাঁড়ালো। রুম থেকে বেরিয়ে সুমির রুমে গেল। কিন্তু সুমি রুমে নেই। প্রিয়া এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো। সুমি বারান্দায় ইজিচেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছে। প্রিয়া সুমির সামনে এসে দাঁড়ালো। সুমির মনটা অনেক খারাপ। তবে প্রিয়াকে দেখে কিছুটা সহজ হবার চেষ্টা করলো। একটু হাসলো। প্রিয়া বুঝতে পারলো, সুমি ওকে দেখে জোর করে হাসার চেষ্টা করছে। প্রিয়া সুমির পায়ের কাছে বসে, সুমির কোলে মাথা রাখলো, প্রিয়ার এই আচরণে সুমি অবাক হয়ে গেল। সুমি বললো, প্রিয়া তোমার কি মনটা খারাপ লাগছে?
না আপু আপনারা থাকতে কি আমার মন খারাপ হতে পারে? অনেক দিন ধরে ইচ্ছে করছিল কারো কোলে মাথা রাখতে। কিন্তু তেমন কাউকে পাইনি, আজ আপনার কোলে মাথা রেখে মনে একটু শান্তি পাচ্ছি। একজন সন্তানের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা হচ্ছে তার মায়ের কোল। মায়ের কোলের পরশ তো পাইনি, তাই মনের ভেতর একটা শূন্যতা ছিল, আজ তা পূরণ হলো।
প্রিয়া মায়ের শূন্যতা কেউ পূরণ করতে পারেনা, আর আমরা তো তোমার জন্য তেমন কিছু করিনি।
আপু এতটা বছরে যতটুকু আদর ভালোবাসা পাইনি, আপনার কাছে তা পেয়েছি। অসহায় একটা মেয়েকে রাস্তা থেকে তুলে এনে বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছেন। বোন পরিচয় দিয়ে বিয়ে দিতে চাইছেন, এত বড় ঋণ আমি কি দিয়ে শোধ করবো আপু,আমি যে নিঃস্ব একজন মানুষ।
প্রিয়া এ ধরণের কথা আর কখনো বলবে না। আমাদের কোন ঋণ তোমাকে শোধ করতে হবে না। আর কিছুদিন পর তোমার বিয়ে হয়ে যাবে, আমি চাই তুমি হাসিমুখে এই বাড়ি থেকে বিদায় নাও।বিয়ের আগে সব মেয়ের মনই খারাপ থাকে, অনেক চিন্তা মনের ভেতর কাজ করে। নতুন মানুষ, নতুন জায়গা, নতুন সংসার কেমন হবে, সবার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে কি না, সবার মন জয় করতে পারবে কি না, স্বামী নামের মানুষটি তার মনের মত হবে কি না, আর কত কিছু। কিন্তু বিয়ের পর আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যায়,তোমার বেলায়ও তাই হবে। চিন্তা না করে মনটাকে ফ্রেশ রাখো।
আপু যদি কিছু মনে না করেন, তাহলে একটা কথা বলবো?
কি বল, বল আমার কাছে,যে কোন কথা তুমি নির্ভয়ে বলতে পারো।
আপু আমি একটু জয় এর সাথে কথা বলবো, আপনি ওনাকে আসতে বলবেন?
অবশ্যই বলবো, কথা বললেই একজন আরেকজনকে বুঝতে পারবে।
সুমি উঠে গিয়ে জয় এর সাথে কথা বললো। তারপর প্রিয়াকে বললো, জয় সন্ধ্যায় আসছে, তোমার সাথে দেখা করতে। প্রিয়া একটু হেসে সুমির কাছ থেকে চলে এলো। সুমি দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ফেললো। প্রিয়া রান্না ঘরে এল। বুয়া কাজ করছে। প্রিয়াকে দেখে বললো, আফা আপনের কিছু লাগবে?
না বুয়া আমার কিছু লাগবে না। আপনার কোন কাজ বাকি আছে? আমাকে বলুন সারাক্ষণ শুয়ে - বসে থাকতে ভালোলাগে না। কাজ করলে সময় কাটে, আর মনও ভালো লাগে।
আফা দুইদিন পর যহন শুশুরবাড়ি যাইবেন, তহন তো সারাক্ষণ ব্যস্তই থাকবেন। সংসারের বড় বউ। সব ঝামেলা তো আপনের উপরই থাকবো। মাইয়া মাইনষের জীবনডাই ভাঙা গড়ার খেলা। আর এই ভাঙা -গড়ার মাঝেই সুখ খুঁইজা নিতে অয়। আমি মন থেকা দোয়া করি, আপনে সংসার জীবনে সুখি হোন।
বুয়া কাজ করতে লাগলো। প্রিয়া দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলো জয় এর কথা। সন্ধ্যার পর জয় আসবে। প্রিয়া যখন জয় এর মুখোমুখি দাঁড়াবে, তখন কি জয়কে তার মনের কথাগুলো বলতে পারবে? জয় কি ওর কথার অর্থ বুঝতে পারবে? নাকি ভুল বুঝবে। কি করবে প্রিয়া কিছুই বুঝতে পারছে না। যাই হোক জয়কে সব কথা বলতেই হবে, তারপর কি হবে জানা নেই।
সন্ধ্যার পর জয় এলো। নীলা দরজা খুলে দিল। জয়কে দেখে নীলা চলে গেল। নীলা এভাবে চলে গেল কেন,জয় বুঝতে পারলো না। ওকে তো সেই ছোট থাকতে দেখছে, জয়কে দেখে লজ্জা পাবার কি আছে। অবশ্য নীলা এখন বড় হয়েছে, মেয়েরা বড় হলে নাকি লজ্জাবতী হয়ে যায়। জয় নিজেই হাসলো।সুমি এল। আরে ভাই তুমি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছো কেন? ভেতরে এস। জয় ভেতরে এল। সুমি বললো, প্রিয়া ছাদের উপর আছে, যাও ভাই। জয় লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে সুমির সামনে থেকে চলে গেল। সুমি নীলার রুমে গেল। অন্ধকার রুমে মাথা নিচু করে বসে আছে নীলা। সুমি লাইট জ্বেলে দিল। আলো দেখে নীলা মাথা তুলে তাকালো। সুমিকে দেখে এমন ভাব করলো যেন কিছুই হয়নি। উঠে দাঁড়ালো। সুমিকে ইশারায় বললো কি হয়েছে? সুমি বললো, বাইরে সন্ধ্যা হয়ে গেছে, আর তুই অন্ধকার রুমে বসে আছিস! তোর কি কোন কারণে মন খারাপ? নীলা ইশারায় বললো,না। তারপর একটু হেসে সুমিকে জড়িয়ে ধরলো। সুমি নীলাকে বুঝতে দিল না ওর কষ্টের কারণ জানে, আর নীলাও ওর চোখের পানি সুমির কাছ থেকে আড়াল করে রাখলো।
প্রিয়া ছাদের উপর দাঁড়িয়ে সন্ধ্যার আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। প্রিয়ার ধারণা আকাশের দিকে তাকালে মনের জড়তা দূর হয়, মনে সাহস বৃদ্ধি পায়। কারণ জয় এর সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলতে প্রিয়ার আজ অনেক সাহসের দরকা।সিঁড়িতে পায়ের আওয়াজ শোনা গেল। আওয়াজ শোনার সাথে সাথে প্রিয়ার বুকের ভেতর কাঁপতে লাগলো। জয় যত উপরে উঠছে, প্রিয়ার বুকের কাঁপুনি তত বাড়ছে। প্রিয়া নিজেই নিজেকে সান্ত্বনা দিল, শান্ত হ প্রিয়া, তোকে আজ ভয় পেলে চলবে না। বুকে সাহস রাখ, সাহস না থাকলে জয়কে এতগুলো কথা বলবো কি করে। প্রিয়া চোখ মেলে তাকালো। ততক্ষণে জয় এসে প্রিয়ার সামনে দাঁড়িয়েছে। ছাদের এক কোণায় লাইট জ্বলছে, সেই আলোয় জয়কে দেখলো প্রিয়া। সকালে জয় শার্ট -প্যান্ট পড়েছিল। আর এখন পায়জামা পাঞ্জাবি পড়ে এসেছে। সকালের চেয়ে এখন জয়কে আরো বেশি সুন্দর লাগছে। প্রিয়া মাথা নিচু করে ফুল গাছের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। প্রিয়া এই মুহূর্তে তার স্বপ্ন বিসর্জন দিতে যাচ্ছে। সফল হবে কি না জানে না। প্রিয়া সৃষ্টিকর্তার কাছে মনোবল কামনা করছে, যাতে জয়ের সাথে কথা বলার সময় তার ঠোঁট না কাঁপে। সে দুর্বল হয়ে না পড়ে। প্রিয়া মন শান্ত রাখার জন্য ফুলগুলোর দিকে তাকালো। ফুল গাছ গুলোও কেমন শান্ত হয়ে আছে, নাকি ওদের অবস্থাও প্রিয়ার মতই কি হয় দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। জয় প্রিয়ার পেছনে এসে দাঁড়িয়ে বললো, আপনি আমাকে আসতে বলেছেন শুনে আমার খুব ভালো লেগেছে। হয়তো আমাকে আপনার পছন্দ হয়েছে, তাই আমার সাথে কথা বলতে চেয়েছেন। সত্যি কথা বলতে কি, সকালে আপনাকে দেখার পর থেকে আমার মনটাও খুব অস্থির হয়ে ছিল, আপনাকে দেখার জন্য। জানি না এটা ভালোবাসা কি না। এবার আপনি বলুন, আপনার কথা শুনার জন্য আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।
জয়, আপনি খুব ভালো এবং খুব সুন্দর একটা ছেলে। আপনাকে যে কোন মেয়েই পছন্দ করবে। আর আপনাকে স্বামী হিসেবে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। আজ আপনি আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন বলে নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে। জয় আপনাকে আমি খুব জরুরী একটা কথা বলার জন্য ডেকেছি। জানি না আমার কথা গুলো আপনি কিভাবে নেবেন। তবুও কথা গুলো আমাকে বলতে হবে, এই পৃথিবীতে অনেক কিছুই খুব সহজে পাওয়া যায়। কিন্তু সত্যিকারের ভালোবাসা পাওয়া খুবই কঠিন। তবে এমন একজন আছে, যে আপনাকে সত্যি সত্যি ভালোবাসে, যে ভালোবাসায় কোন খাদ নেই। যে বিন্দু বিন্দু করে ভালোবেসে আপনার জন্য, ভালোবাসার পাহাড় গড়েছে, যার প্রতিটি সকাল হয় আপনার কথা মনে করে, যার সারাটা দিন যায় আপনার কথা ভেবে,যে রাতে ঘুমায় আপনার ছবি বুকে নিয়ে। এবার আপনিই বলুন তার এই ভালোবাসার কি কোন মূল্য নেই।
প্রিয়া আপনি এসব কি বলছেন, কে আমাকে এতটা ভালোবাসে, যার কথা আমি জানি না।
এই পৃথিবীর বুকে সবার কথা কি সবাই জানে! কত কথা, কত ঘটনা অজানা রয়ে যায়। সময়ের চাপে কত সত্য চাপা পড়ে যায়, না বলা কত কথা। কত ব্যথা নিয়ে মানুষ এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়। জয়, আপনি তো ফুলকে ভালোবাসেন, যদি এত গুলো ফুল আপনার নামে ফোটে, তাহলে আপনি কি সেই ভালোবাসার মূল্য দেবেন না?
প্রিয়া আপনি কি বলছেন এসব, আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না। আপনাকে আমার পছন্দ হয়েছে। কাল বাবা-মা বিয়ের দিন ঠিক করতে আসবেন। আর আজ আপনি আমাকে এসব বলছেন কেন, কে আমাকে ভালোবাসে, আমি কি তাকে চিনি?
হ্যাঁ,আপনি তাকে খুব ভালোভাবেই চেনেন। নীলা,নীলা আপনাকে মনে প্রাণে ভালোবাসে।
প্রিয়ার এই কথা শুনার পর জয় যেন আকাশ থেকে পড়লো। নিঃশ্বাস যেন বুকের কোথায় আটকে গেছে। চোখ বন্ধ করে স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করলো। তারপর প্রিয়ার সামনে এসে দাঁড়ালো। প্রিয়া শান্তভাবে জয় এর দিকে তাকিয়ে রইলো। জয় কি বলবে বুঝতে পারছে না। কিছুক্ষণ পর বললো,শুনুন প্রিয়া, কেউ যদি আমাকে মনে মনে ভালোবেসে থাকে, তাতে আমার কি করার আছে! একজন আরেকজনকে ভালোবাসতেই পারে, তাই বলে কি সব ভালোবাসা স্বীকৃতি পায়? পায় না। নীলা আমাকে ভালোবাসে, কিন্তু আমি তো কখনো ওর দিকে ওভাবে তাকাইনি! আর তাছাড়া...
তাছাড়া কি, ও বোবা কথা বলতে পারে না! এই তো বলবেন, মুখের ভাষাই কি সব? যারা বোবা, তাদের কি বিয়ে হচ্ছে না? তারা কি সংসার সন্তান নিয়ে এই সমাজে বসবাস করছে না! নীলা প্রতিটি নিঃশ্বাস ফেলে আপনার নামে, আপনাকে ও কতটা ভালোবাসে তার সাক্ষী এই ফুল গাছ গুলো। ওর সব কথা ও এই গাছের সাথে বলে। মানুষের প্রাণশক্তি আছে বলে মানুষ ছোট থেকে বড় হয়, আর গাছেরও প্রাণশক্তি আছে বলে ছোট একটা চারা থেকে ধীরে ধীরে বড় হয়। তফাৎ হল মানুষ কথা বলতে পারে, আর গাছগুলো কথা বলতে পারে না। যদি এই গাছ গুলো কথা বলতে পারতো, তাহলে আপনি শুনতে পেতেন নীলা আপনাকে কতটা ভালোবাসে। ওর না বলা কথাগুলো ওর চোখের ভাষায় ফুটে উঠে। আপনি যদি ওর চোখের দিকে ভালোভাবে তাকান, তাহলে ওর ভালোবাসা অনুভব করতে পারবেন। ও আপনাকে সরাসরি দেখতে লজ্জা পায়, তাই প্রতিদিন ওর রুমের আলো নিভিয়ে ও আপনাকে দেখে। ওটাই ওর সান্ত্বনা। জয় মানুষ আর কতদিন বেঁচে থাকে, জীবন তো একভাবে চলেই যায়। তারপরও মানুষ কিছু কিছু কর্মের জন্য চিরদিন সবার মাঝে বেঁচে থাকে। আপনি যদি আজ এই অসহায় মেয়েটার প্রতি ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দেন, তাহলে ওর ভাই - ভাবী, আত্মীয় -স্বজন সব সময় আপনার প্রতি শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে তাকাবে। আপনাকে ভালোবাসবে, আর যে অনেক মানুষের ভালোবাসা পায়, তার জীবনই তো সার্থক। এই পৃথিবীর বুকে অনেক মানুষ আছে,কিন্তু মহৎ মানুষ ক'জন আছে বলুন? নীলাকে যারা বিয়ে করতে আসে তারা কেউ নীলাকে ভালোবেসে বিয়ে করতে চায় না, নীলার অর্থকে ভালোবাসে। এই ঘুণে ধরা সমাজ, আর স্বার্থের কষাঘাতে কত জীবন ধুঁকে ধুঁকে শেষ হয়ে যায়।
নীলা দেখতে সুন্দর, শিক্ষিত, ধনী, বংশ ভালো, তবুও অসহায়। কারণ ও কথা বলতে পারে না, ও জানে আপনার সাথে আমার বিয়ের কথা ঠিক হচ্ছে। তবুও নীলা সবার সামনে হাসছে, আর নীরবে চোখের পানি ফেলছে।
প্রিয়া আপনি আপনার কথা ভাবছেন না কেন? নিজের সুখ অন্যকে দান করতে চাইছেন।
জয় দান করার মধ্যে যে কি সুখ, তা আপনিও বুঝবেন, যদি আপনার বুক ভরা ভালোবাসা নীলাকে দান করেন।
প্রিয়া আপনি ব্যাপারটা যত সহজ ভাবছেন, ব্যাপারটা অত সহজ নয়। আমার পরিবার এই সিদ্ধান্ত কখনো মেনে নেবে না, অযথা ঝামেলার সৃষ্টি হবে।
আপনার মা অনেক ভালো মানুষ, সে মানুষকে মানুষ হিসেবেই মূল্যায়ন করে। তাই তো আমি অসহায় জেনে ও আমাকে পুত্রবধূ হিসেবে গ্রহণ করতে চেয়েছেন। আপনি তো সেই বিশাল মনের মায়ের সন্তান। আপনি যদি আপনার মা-বাবাকে বুঝিয়ে বলেন, ওনারা অবশ্যই বুঝবে। বাবা -মায়ের কাছে সব সন্তানই সমান। সন্তানের দুঃখ -কষ্ট, বাবা-মা না বুঝলে কে বুঝবে?
ধরুন আমার কথা মেনে নিল, কিন্তু আপনার কি হবে?
আমার জন্য চিন্তা করবেন না। আপনার মত যদি কেউ কখনো পছন্দ করে, তখন তার ঘরে বউ হয়ে চলে যাবো। আপনি শুধু আমার এই কথাটা রাখার চেষ্টা করুন।
আর যদি কেউ এই বিয়েতে রাজী না হয়, তখন কি আপনি আমাকে বিয়ে করবেন?
তখন কি করবো জানি না, তবে আমার মন বলছে নীলাকে সবাই গ্রহণ করবে। তবে আপনাকে শক্ত থাকতে হবে। আমি এই কথা বলছি না যে,সবাইকে জোর করে রাজী করাতে হবে। কারণ জোর করে সব কিছু হয় না। ভালোবাসা দিয়েই ভালোবাসাকে জয় করতে হয়। আপনার উপর কেন জানি আমার অনেক ভরসা। আপনার নামই যে জয়।
জয় আর কোন কথা বললো না। মাথা নিচু করে চলে যেতে লাগলো। প্রিয়া বুঝতে পারলো জয়ের মনটা ভেঙে গেছে। ওর খুব কষ্ট হচ্ছে। জয় থমকে দাঁড়ালো, পেছন ফিরে প্রিয়ার দিকে তাকালো, প্রিয়া ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। প্রিয়া একটু হাসলো। জয় সেই হাসির অর্থ বুঝতে পারলো। জয় মনে মনে বললো, প্রিয়া কেন নিজে কষ্ট পাচ্ছে। আর আমাকে এই কঠিন পরীক্ষায় ফেললো। সকাল থেকে এই পর্যন্ত আপনাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখে ফেলেছি। আজ পর্যন্ত কোন নারী আমার কাছে কোন কিছু আবদার করেনি। আর আপনি যখন নিজের ইচ্ছেয় আমার কাছে আবদার করেছেন, তা রাখার জন্য চেষ্টা করবো। তবে আপনার জন্য আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। জয় আবার প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে চলে গেল। প্রিয়া আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না, বসে পড়লো। জয়কে না বলে প্রিয়ার যে অনেক কষ্ট হচ্ছে। সুখ আসার আগেই তাকে বিদায় জানাচ্ছে। কি হবে তা নিজেও জানে না। প্রিয়া এই কাজে নিজেকে আর সামলাতে পারলো না। মুখে হাত চেপে প্রিয়া কাঁদতে লাগলো, হয়তো এই কান্নাই তার সারাজীবনের সঙ্গী।
প্রিয়ার চোখে জল
পর্বঃ ২২
লেখকঃ সাইদা ইসলাম বকুল
জয় শুয়ে আছে, কিন্তু ঘুম আসছে না। ঘড়ি দেখলো, রাত দেড়টা। অনেক চিন্তায় নাকি মানুষের ঘুম নষ্ট হয়ে যায়। জয় আজ নিজেকে দিয়ে বুঝতে পারলো। বাবা মাকে নীলার কথা বলার পর থেকেই জয় এর এই অবস্থা। বাবা-মা নীলার কথা শুনে কিছুই বলেনি। হয়তো সকালে বলবে। তাদের মতামত কি হবে জয় জানে না। প্রিয়ার অনুরোধ রাখতে গিয়ে জয় বাবা-মাকে নীলার কথা বলে ঠিক করেছে, না ভুল করেছে বুঝতে পারছে না। বারবার প্রিয়ার কথা মনে পড়ছে, প্রিয়া সত্যিই উদার মনের মানুষ। তা না হলে নিজের সামনে এসে দাঁড়ানো ভাগ্যকে কেউ অন্যের হাতে দান করতে চায়? জয়ও মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে, বাবা -মা রাজী হলে নীলাকে সে বিয়ে করবে। প্রিয়া যদি পারে, তবে সে পারবে না কেন? জয় নীলার কথা যত ভাবছে ততই অবাক হচ্ছে। যাকে এতটা ভালোবাসে তার সামনে কখনো এসে দাঁড়ায়নি, যতবার আমার সাথে দেখা হয়েছে ততবারই পালিয়ে গিয়েছে। যদি কখনো ছাদে দেখা হয়েছে নিজেকে আড়াল করে রেখেছে। আর সেই নীলা চুপিচুপি আমাকে দেখেছে। একদিকে প্রিয়া, যাকে প্রথম দেখার পর থেকেই ভালোবেসে ফেলেছি, আর অন্যদিকে নীলা, যে এতটা বছর নীরবে আমাকে ভালোবেসেছে। আমি কাকে বেছে নেবো, যাকে আমি ভালোবেসেছি, না যে আমাকে ভালোবেসেছে।উফ আর ভাবতে পারছি না! জীবনে কখনো এমন দিন আসবে ভাবতে পারিনি। আমি আর কিছু ভাববো না। বাবা-মা যা বলবে আমি তাই করবো। জয় চোখ বুজে রইলো। যদি ঘুম আসতো তাহলে ভালো হত। ঘুমিয়ে গেলে আমার অস্থিরতা কমে যেত। না ঘুম আসছে না। জয় উঠে বসলো। টিভির সামনে বসে আবার উঠে এল। গান শুনলে মনে হয় ভালো লাগতো। কিন্তু এত রাতে গান শুনলে অন্যের অসুবিধা হবে,তাই একটা গল্পের বই নিয়ে বসলো। কিছুক্ষণ পড়ার পর মনে হল ঘুম আসছে। জয় বই রেখে লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়লো, এক সময় ঘুমিয়ে পড়লো।
চৌধুরী সাহেব বলেছে তারা বিকেলে আসবে। তাই সুমি খুব ব্যস্ত। আজ প্রিয়ার বিয়ের দিন ঠিক করতে আসবে। কাল জয় যাবার পর প্রিয়ার মনটাও অস্থির হয়ে আছে। সুমি বুঝতে পারলো বিয়ের আগে মেয়েদের মনের অবস্থা এমনই হয়। সুমির বাবা-মা মারা গেছে অনেক দিন আগে। তবে এক খালা আছে, সুমি তার ভালোমন্দ সব খালাকে বলে। তাই প্রিয়ার সব কথাও বলেছে, শুনে খালা খুশি হয়েছে। সুমি এত বড় একটা কাজ করতে যাচ্ছে, একা সাহস পাচ্ছে না। তাই খালাকে আসতে বলেছে। খালা এই ঢাকা শহরেই থাকে। খালুজান মারা গেছে পাঁচ বছর। তার একমাত্র ছেলে কিরণ পড়া শেষ করে বাবার ব্যবসা দেখাশুনা করছে। খালা আসছে, তাই সুমির মনটা ভালো। পাশে একজন মুরব্বি থাকলে মনোবল বাড়ে। কিন্তু খালার তো এতক্ষণে চলে আসার কথা, এখনো আসছে না কেন? সুমি মোবাইল হাতে নিলো ফোন করার জন্য,এমন সময় নিচে গাড়ির আওয়াজ শোনা গেল। সুমি দরজা খুলে দাঁড়ালো। খালা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে এল। সুমি তাকে সালাম করে খুশিতে জড়িয়ে ধরলো। তারপর ড্রইংরুমে এনে বসালো। খালার গলার আওয়াজ শুনে নীলা দৌড়ে এল। খালা নীলাকে আদর করে পাশে বসালো। বুয়া শরবত নিয়ে এসে খালাকে দিল। প্রিয়া এসে খালাকে সালাম করলো। খালা মাথায় হাত দিয়ে দোয়া করে দিলো। প্রিয়াকে দেখে মনে মনে বললো, মেয়েটা তো খুব সুন্দরি। সুমি বললো, খালা আপনাকে দেখে আমার খুব ভালো লাগছে। খালা বললো, তোরা তো মাঝে মাঝে বেড়াতে যেতে পারিস। আসলে মানুষ ধীরে ধীরে কেমন যেন একঘেয়ে হয়ে যাচ্ছে। সহজে কারো বাসায় কেউ যায় না। এক সাথে বসে মন খুলে কথা বলে না,মন খুলে হাসতেও মনে হয় ভুলে যাচ্ছে। সবাই কেমন যেন একা একা থাকতে ভালোবাসে।
ঠিকই বলেছেন খালা, কিরণ কেমন আছে?
ওর অবস্থা আগের মতই কোন পরিবর্তন নেই। যতক্ষণ অফিসে থাকে, ততক্ষণ সবার সাথে কথা বলে, হাসিখুশি থাকে। আর বাসায় আসার পর খেয়েদেয়ে চুপচাপ নিজের রুমে থাকে। মাঝে মাঝে বিকেলে ছাদে উঠে, তারপর টিভির সামনে বসবে। সাড়ে দশটা এগারোটার দিকে উঠে খেয়ে শুয়ে পড়বে। প্রয়োজন ছাড়া আমার সাথে কথা বলে না। ওর এই আচরণের জন্য অনেক বন্ধু এখন ওর সাথে কথা বলে না। একমাত্র সন্তানকে নিয়ে অনেক আশা ভরসা ছিল আমার, মনে হয় সব শেষ।
খালা এভাবে বলবেন না। আমি বুঝতে পারি না ও সামান্য একটা ঘটনাকে এত সিরিয়াস ভাবে কেন নিল? ও শিক্ষিত ছেলে,, অথচ এটা বুঝতে চায় না যে,একজনের দোষে সবাইকে দোষী ভাবা ঠিক নয়। তাতে ও নিজেও কষ্ট পাচ্ছে, আর সবাইকে কষ্ট দিচ্ছে।
সামান্য একজন মেয়ের জন্য ও সব মেয়েকে দোষী ভাবে। অনেকে বলছে ওকে বিয়ে করিয়ে দিতে। স্ত্রীর আদর ভালোবাসা পেলে নাকি ওর মন থেকে ভুল ধারণা, ঘৃণা, সন্দেহ, সব দূর হয়ে যাবে।
খালা কথাটা কিন্তু মন্দ বলেনি, চলুন আমরা সবাই মিলে ওকে বিয়ে করিয়ে দেই।
সুমি, আমি ওর মা,আমিও চাই আমার সন্তান সংসারী হোক, হাসি খুশি থাক। আমরা না হয় জোর করে বিয়ে করিয়ে দিলাম। কিন্তু পরে যদি ওর মনের পরিবর্তন না হয়? তাহলে ওই মেয়েটার কি অবস্থা হবে ভেবে দেখেছিস? জোর করে হাত পা -বাঁধা যায়, মন বাঁধা যায় না। আর জোর করে কখনো সংসার হয় না, তাতে অশান্তি আরো বাড়ে তুই বল, আমি কি করে একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করি?
খালা কিরণ তো ভালো হয়ে যেতে পারে।
হয়তো, কিন্তু কোন মেয়ে কি সব জেনেশুনে এই প্রস্তাব মেনে নেবে? মানুষ অসুস্থ হলে তাকে চিকিৎসা করালে ভালো হয়। কিন্তু একজন সুস্থ্য মানুষ যদি অসুস্থ মানুষের মতো আচরণ করে, তাকে কি দিয়ে ভালো করবো বলো? তাছাড়া এমন শান্ত আর ধৈর্যশীল মেয়ের বড়ই অভাব। আমি অনেক চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি, এখন ওকে ওর ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিয়েছি। ওর কথা থাক, এবার তোদের কথা বল, বরপক্ষ কখন আসবে?
বিকেলে।
তোরা একটা অসহায় মেয়েকে আশ্রয় দিয়েছিস, তাকে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছিস, আমি খুব খুশি হয়েছি? যে অসহায় মানুষের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়, সৃষ্টিকর্তা তার প্রতি রহমত বর্ষণ করেন।
খালা চলেন, কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেন। আমি তাড়াতাড়ি রান্না শেষ করছি। আকাশ আবার এসে পড়বে।
খালাকে নিয়ে সুমি ভেতরে চলে গেল। নীলাও উঠে গেল। প্রিয়া ভাবলো, সামান্য একটা ঘটনা মানুষের জীবন পালটে দেয়। কিরণের জীবনে হয়তো এমন কিছু ঘটেছে যে কারণে সে সবার কাছ থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখে। কিন্তু এটা তো কোন সমাধান নয়। কিরণের কথা ভাবতে গিয়ে জয় এর কথা মনে পড়েছে প্রিয়ার। জয় কি ওর বাবা মাকে নীলার কথা বলেছে? সুমি আপু বললো ওনারা বিকেলে আসছে। ওনারা কি প্রিয়ার জন্য আসছে? জয় এর সাথে কথা বলতে পারলে ভালো হত। ভয় আর অস্থিরতা প্রিয়ার মনকে দুর্বল করে তুললো। প্রিয়া মনে মনে প্রার্থনা করলো, হে খোদা, আমি ওই বোবা মেয়েটার মুখে হাসি দেখতে চাই। আমার তো কোন কিছু করার ক্ষমতা নেই। তোমার দিকে চেয়ে রইলাম, তুমি রহম করো, যাতে ওরা নীলাকে বউ হিসেবে গ্রহণ করতে রাজী হয়। প্রিয়া সোফায় হেলান দিয়ে বসে রইলো।
প্রিয়ার চোখে জল
পর্বঃ ২৩
লেখকঃ সাইদা ইসলাম বকুল
দুপুরে খাওয়ার পর সুমি কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়। কিন্তু আজ সুমির কোন বিশ্রাম নেই। একটু পর মেহমান আসবে তাই নিয়ে ব্যস্ত। কত রকমের নাস্তা তৈরি করেছে। আকাশ আর খালা বসে কথা বলছে। সুমি প্রিয়াকে শাড়ি আর গহনা দিয়েছে পরার জন্য, নীলা এলো প্রিয়ার কাছে, নীলাকে দেখে প্রিয়া খুশি হল।নীলা ইশারায় বললো শাড়ী পরতে। প্রিয়া নীলার হাত ধরে পাশে বসলো। সুমি এলো প্রিয়াকে এভাবে বসে থাকতে দেখে বললো,কি ব্যাপার প্রিয়া, তুমি এখনো তৈরি হওনি? একটু পর ওনারা চলে আসবে, তাড়াতাড়ি করো। প্রিয়া বললো, আপু আমার একটা আবদার আছে, আজ নীলাকে শাড়ী পরে সাজতে হবে। নীলা সাথে সাথে মাথা নেড়ে না করলো। সুমি অবাক হয়ে বললো,প্রিয়া,নীলা আজ শাড়ি পরবে কেন? প্রিয়া বললো,আপু আমার খুব দেখতে ইচ্ছে করছে যে নীলাকে শাড়িতে কেমন লাগে। আপু আমার এই ইচ্ছাটা পুরণ করবেন না? সুমি বললো,ঠিক আছে। নীলা মাথা নেড়ে উঠলো। সুমি চোখের ইশারায় হ্যাঁ বললো। নীলা আর কিছু বললো না। তারপর প্রিয়াকে বললো, তোমরা তৈরি হয়ে নাও, আমি যাচ্ছি। সুমি চলে গেল। প্রিয়া নীলাকে একটা শাড়ি দিয়ে বললো তুমি এটা পর, তোমাকে সুন্দর লাগবে। আমি চাই তোমাকে আজ অনেক সুন্দর লাগুক, যাতে সবাই তোমার দিকে তাকিয়ে থাকে। নীলা কিছু বুঝতে না পেরে অবুঝ শিশুর মত প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। প্রিয়া হাসলো, আর মনে মনে বললো, নীলা আজ যাতে আমার ইচ্ছা পূরণ হয়। বুয়া এসে নীলার দিকে তাকিয়ে বললো, হায় আল্লা নীলা আফারে চেনাই যাইতাছে না, মাশাল্লা অনেক সুন্দর লাগতাছে, যাই কন আফা, বাঙালি মাইয়াগো শাড়িতেই বালা লাগে। আপনেগো দুই জনরেই খুব সুন্দর লাগতাছে।
কলিংবেল বেজে উঠলো বুয়া দৌড়ে চলে গেল। লোকজনের আওয়াজ শোনা গেল। প্রিয়া বুঝতে পারলো ওনারা এসেছেন। সুমি এলো, নীলার দিকে তাকিয়ে রইলো। নীলাকে এই সাজে দেখে বুকের ভেতরটা হাহাকার করে উঠলো। অনেক কষ্টে চোখের পানি আটকালো। কারণ নীলা ওর চোখের পানি দেখলে কষ্ট পাবে। প্রিয়া বললো,আপু নীলাকে কেমন লাগছে? সুমি চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। মনে মনে ভাবলো নীলাকে খুব সুন্দর লাগছে, মনে হচ্ছে নতুন বউ। আজ যদি নীলার বিয়ের কথা পাকা হত, তাহলে আমার চেয়ে খুশি আর কেউ হতো না। সুমিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নীলা লজ্জা পেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। প্রিয়া বললো, আপু আপনি কি কিছু ভাবছেন? সুমি বললো, নীলাকে এত সুন্দর করে সাজানোর জন্য তোমাকে ধন্যবাদ। জানি না ওকে এই সাজে আর কখনো দেখতে পাবো কিনা। প্রিয়া সুমির হাত চেপে ধরে বললো, আপু এই কথা আর কখনো বলবেন না। আমি তো মনে প্রাণে চাই, নীলা সবসময় এইভাবেই থাকুক। কখন কার মনের আশা পূরণ হয়ে যায়, তা কেউ বলতে পারে না। প্রিয়ার এই কথার অর্থ সুমি বুঝতে পারলো না। কিছু বলার আগেই আকাশের ডাক শোনা গেল। সুমি চলে গেল। ওনারা কি বলতে এসেছেন এই কথা প্রিয়া যত ভাবছে, ততই বুক শুকিয়ে আসছে।
জয় তার মায়ের পাশে বসে আছে। চৌধুরী সাহেব, আকাশ আর খালা এক সোফায় বসেছে। আকাশ সুমিকে বললো, প্রিয়াকে নিয়ে আসতে, সুমি চলে গেল। নীলা আর প্রিয়া বসে ছিল। নীলা বারবার শাড়ি খুলে ফেলতে চাইছে । কিন্তু প্রিয়া বাধা দিল। সুমি এসে তা দেখলো। সুমিকে দেখে দু'জন দাঁড়ালো। সুমি প্রিয়াকে বললো, আমার সাথে ড্রইংরুমে এস, ওনারা তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। প্রিয়া বললো, আপু আমার একা যেতে লজ্জা লাগছে, নীলাও আমার সাথে আসবে। নীলা সাথে সাথে মাথা নেড়ে না বললো। সুমি নীলার মনের অবস্থা বুঝতে পারলো। তাই প্রিয়াকে বললো, লজ্জা পাবার কি আছে,আমি তো আছি। প্রিয়া নীলার হাত ধরে বললো নীলা না গেলে আমি যাবো না আপু। সুমি বুঝতে পারলো না, কাকে কি বলবে। দু'জনের চোখের দিকে তাকালো। সুমি কিছু বলার আগেই প্রিয়া নীলার হাত ধরে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। সুমিও পেছন পেছন গেল। ড্রইংরুমে সবাই বসে আছে। প্রিয়া নীলার হাত ধরেই সবার সামনে এলো। ব্যাপারটা জয় বুঝতে পেরে বাবা -মায়ের দিকে তাকালো। বাবা -মা হাসিমুখে দু'জনকে বসতে বললো, নীলা আর প্রিয়া এক সোফায় বসলো। সুমি এসে ওদের পিছনে দাঁড়ালো। নীলা বারবার হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু প্রিয়া ওর হাত আকঁড়ে ধরে আছে। চৌধুরী আর মিসেস চৌধুরী প্রিয়ার দিকে একবার তাকিয়ে নীলার দিকে তাকালো। জয় সকাল থেকে এখন পর্যন্ত বাবা -মাকে জিজ্ঞেস করার সাহস পায়নি যে, ওনারা কি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাই জয়ও বুঝতে পারছে না, বাবা -মা কার হাতে আংটি পরাবে। প্রিয়া জয় এর দিকে দুই তিনবার তাকালো। জয় বুঝতে পারছে প্রিয়া ওর কাছে কি জানতে চাইছে। জয় যখন পরীক্ষা দিত, তখন ওর হাত-পা ভয়ে কেমন যেন ঠান্ডা হয়ে যেতো, বারবার বুক শুকিয়ে যেত। আজ এই মুহূর্তে জয় এর সে রকম লাগছে। আর প্রিয়ার অবস্থা তো আরো খারাপ। বাবা -মা যদি প্রিয়ার হাতে আংটি পরিয়ে দেয় তাহলে কি হবে! এমন সময় জয় এর মা উঠে দাঁড়ালো,হাতে আংটি। প্রিয়ার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। ভদ্রমহিলা নীলার পাশে এসে বসলো। নীলার হাতটা টেনে নিলো। আকাশ আর সুমি দু'জন দু'জনের দিকে তাকালো। জয়ের মা নীলার হাতে আংটি পরিয়ে দিল। নীলা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। ইচ্ছে করলো হাতটা সরিয়ে নেবে, কিন্তু পারলো না। কেন পারলো না, নীলা নিজেও জানে না। আকাশ আর খালা উঠে দাঁড়ালো। সুমি এসে সামনে দাঁড়ালো, নীলার হাতে আংটি দেখে খুশিতে প্রিয়ার চোখে পানি এসে গেল। সুমির মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। আকাশ বললো,খালাম্মা আপনি একি করলেন? ভুল করে নীলার হাতে আংটি পরিয়ে দিয়েছেন! আংটি তো প্রিয়াকে পরাবেন। চৌধুরী সাহেব বললো, আকাশ আংটি যার হাতে পরানো দরকার তার হাতেই পরানো হয়েছে। নীলা দাঁড়িয়ে গেল। আকাশ বললো,কিন্তু খালাম্মা তো প্রিয়াকে পছন্দ করেছে। সুমি বললো, হ্যাঁ আপনারা প্রিয়াকে পছন্দ করেছেন। প্রিয়া জয় এর সামনে গিয়ে বললো, আমার অনুরোধটুকু রাখার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ