প্রিয়ার চোখে জল
পর্বঃ ১৯
লেখকঃ সাইদা ইসলাম বকুল
রাত বারোটা বেজে গেছে। সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু প্রিয়ার চোখে ঘুম আসছে না। ড্রইংরুমে এসে দাঁড়ালো, তারপর রান্নাঘরের দিকে গেল,রান্নাঘরের সাথে ছোট একটা রুম, সেখানে বুয়া থাকে। প্রিয়া দরজা ফাঁক করে দেখলো, বুয়া ঘুমিয়ে পড়েছে। সারাদিন কাজ করে রাতে শোয়ার পরপরই ঘুম এসে যায়। পরিশ্রম যদিও কষ্টের, তবুও পরিশ্রম মানুষের শরীরকে সতেজ রাখে। তা না হলে মানুষ বেঁচে থাকা পর্যন্ত কাজ করতে পারতো না। প্রিয়া দরজার কাছ থেকে সরে এল। জয় এর বাসা থেকে আসার পর সুমি প্রিয়াকে বললো,কাল সকালে জয় আসবে তোমাকে দেখার জন্য। তখন থেকেই প্রিয়ার মনটা অস্থির হয়ে আছে। জয়কে মনে মনে কতভাবে কল্পনা করছে, কত রুপে ভাবছে। একজন অদেখা মানুষকে আমরা কতভাবে কল্পনা করি। হঠাৎ করে প্রিয়ার জীবনে এত কিছু ঘটে যাচ্ছে যে,সব কিছু স্বপ্নের মত লাগছে। অনেকক্ষণ স্বপ্ন দেখার পর ঘুম থেকে জেগে উঠলে যেমন লাগে, প্রিয়ার ঠিক তেমন লাগছে। ঘুম আসছে না, স্থির হয়ে কোথাও বসতে ইচ্ছে করছে না। বারান্দায় দাঁড়িয়ে আজ আকাশের তারাগুলোকেও দেখতে ইচ্ছে করছে না। হঠাৎ কি মনে করে নীলার রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। পর্দা টাঙানো,তবুও মনে হচ্ছে অন্ধকার ঘরে কোথাও সামান্য আলো জ্বলছে। প্রিয়া পর্দা ফাঁক করে দেখলো নীলা টেবিলের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। সামান্য আলোয় টেবিল বাতি জ্বলছে। প্রিয়া ঘরে ঢুকলো। নীলার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। নীলা কি কবিতা লেখে! সাদা কাগজে সুন্দর করে লেখা কবিতা প্রিয়া মনে মনে পড়তে লাগলো......
" "প্রকৃতি ""
যদি কখনো ক্লান্ত হয়ে পড়,
তবে গাছের ছায়ার নিচে আশ্রয় নিও।
যদি কখনো বিষণ্ণ হয়ে পড়,
তবে ফুলের কাছে গিয়ে সুবাস নিও।
যদি কখনো একা মনে হয়,
তবে খোলা আকাশের নীচে গিয়ে দাঁড়াবে।
কারণ আকাশের ওই বিশালতার মাঝে
মানুষ তার একাকীত্বকে ভুলে থাকতে পারে।
যদি কখনো পিপাসায় কাতর হয়ে পড়,
তবে সাগরের কাছে গিয়ে তৃষ্ণা মেটাবে।
তবুও মানুষের কাছে মিছে ভালোবাসা আশা করো না, কারণ মানুষ ভালোবাসার বিনিময়ে
কিছু আশা করে,কিন্তু প্রকৃতি তা করে না।
মানুষ ভালোবেসে কিছু পেতে চায়,
আর প্রকৃতি তার ভালোবাসা সবটুকু
মানুষের মাঝে বিলিয়ে দেয়।
কবিতাটা পড়ে প্রিয়া নীলার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। ঘুমিয়ে থাকলে মানুষের মুখটা শিশুর মত দেখায়, কিন্তু নীলার মুখটা এমন দেখাচ্ছে কেন? চোখ দেখে মনে হচ্ছে নীলা অনেক কেঁদেছে। নীলার কি আজ কোন কারণে মন খারাপ? আর এই কবিতা! এটা কি শুধুই কবিতা? নাকি নীলার মনের আকাশে জমে থাকা এক টুকরো মেঘ? সুমি যখন জয় এর কথা বললো,তখন তো ও খুশি ছিল। তারপর হঠাৎ করে এমন কি হলো যে ও কেঁদেছে? ওর কষ্টটা যদি জানতে পারতাম! আমি নিজেই তো এই বাড়িতে আশ্রিতা। অবশ্য ওরা আমাকে যতটা আদর ভালোবাসা দিয়েছে তা আমি কোনদিন পাইনি। যদি কখনো এমন সুযোগ আসতো, যে আমি এই বাড়ির কারো জন্য কিছু করতে পারতাম, তাহলে নিজেকে খুব বেশি ভাগ্যবতী মনে করতাম। প্রিয়া একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে নীরবে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে দুঃখ -কষ্ট আছে। কেউ তার দুঃখটাকে প্রকাশ করে,আর কেউ নিজের ভেতর লুকিয়ে রাখে। নীলার জন্য প্রিয়ার খুব কষ্ট হচ্ছে।ওর না বলা কষ্টগুলো ওর বোবা ভাষায় ফুটে উঠে। প্রিয়ার বুকের ভেতরটা হাহাকার করে উঠলো। রাতের দুঃখ-কষ্ট গুলো দিনের আলোয় কোথায় মিলিয়ে যায়, প্রিয়া তা বুঝতে পারে না। রাতের নীলাকে সকালের নীলার সাথে মেলাতে পারছে না। প্রিয়া ঘুম থেকে উঠার পর নীলার দিকে তাকাচ্ছে। চোখে মুখে কোন বিষণ্ণতার ছাপ নেই। এটা কি নীলার আসল হাসি, না কি নকল হাসি? বুঝতে পারছে না। সুমির সাথে নীলা শাড়ী পছন্দ করছে প্রিয়ার জন্য।কিছুক্ষণ পর জয় আসবে,তাই সুমি তার সব শাড়ী বের করেছে, কোনটা পড়লে প্রিয়াকে সুন্দর লাগবে, তাই দেখছে। প্রিয়া খাটের এক কোণে বসে আছে। নীলা একটা গোলাপি রঙের শাড়ি দেখিয়ে দিল সুমিকে। সুমি বললো,ঠিক আছে এটাই পড়বে প্রিয়া। সুমি আপন বোন এর মতই মন থেকে চাইছে জয় প্রিয়াকে পছন্দ করুক। অসহায় মেয়েটার বিয়ে হয়ে যাক,কারো ভাগ্য কেউ ছিনিয়ে নিতে পারে না। ওর ভাগ্যে যা আছে তাই হবে,আমি তো উছিলামাত্র। সুমি হাসি মুখে প্রিয়াকে শাড়ি পরিয়ে, সুন্দর করে সাজিয়ে দিলো। নীলা আর সুমি অবাক হয়ে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। খুব সুন্দর লাগছে প্রিয়াকে। সুমি মনে মনে বললো,প্রিয়াকে জয় পছন্দ করবেই, প্রিয়া আসলেই সুন্দর। কিন্তু সেই সুন্দর এতদিন ঢাকা পড়েছিল, ওর মামীর সংসারে এত পরিশ্রম আর মানসিক অশান্তির কারণে। বুয়া হাসি মুখে দৌড়ে এল। সুমিকে বললো,আফা জয় বাই আইছে, ছাদের উপর গেছে। সুমি বললো, প্রিয়া তুমি ছাদে যাও। প্রিয়া ভয় পেয়ে গেল। সুমি বুঝতে পেরে বললো, ভয় পাবার কিছু নেই। জয় আসার আগেই বলেছে ও ছাদে তোমাকে দেখবে। আমাদের সামনে কথা বলতে লজ্জা পাবে তো, তাই ছাদে তোমার সাথে কথা বলবে। জয় খুব ভালো ছেলে, যাও লজ্জা করো না। যা জিজ্ঞেস করবে সুন্দর করে তার উত্তর দেবে। প্রিয়া মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। সুমি প্রিয়াকে সিঁড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিল। প্রিয়ার ভয়ে হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে আসছে। আস্তে আস্তে সিঁড়ি বেয়ে উঠছে, আর বুক শুকিয়ে যাচ্ছে। অচেনা অজানা একজন পুরুষ মানুষের সাথে একা কথা বলবে, তার সামনে দাঁড়াবে! প্রিয়া গ্রামে দেখেছে ছেলে - মেয়েকে দেখতে এলে, কত ধরণের প্রশ্ন করে, হাঁটা দেখে, চুল দেখে, আর কত কি! জয় কি সে রকম কিছু করবে! এটা সেটা ভাবতে ভাবতে প্রিয়া ছাদে উঠে এল। জয় ফুল গাছের সামনে দাঁড়িয়ে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে। এক সাথে এত ফুল, জয় দেখে অনেক লাল গোলাপের মাঝে একটামাত্র সাদা গোলাপের গাছ। জয় নিচু হয়ে সেই সাদা গোলাপের ঘ্রাণ নিল। প্রিয়া তা দেখে মনে মনে হাসলো, হঠাৎ করে জয় পেছনে ফিরে তাকালো, দেখলো একটা মেয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। জয় ভাবলো, এই তাহলে প্রিয়া। জয় অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, আর মনে মনে মাকে ধন্যবাদ জানালো। সত্যি প্রিয়া অনেক সুন্দর। দেখতে যেমন সুন্দর, নামটাও তেমন সুন্দর! আসলে প্রিয়া প্রিয়ার মতোই। জয় প্রিয়ার সামনে এসে দাঁড়ালো। প্রিয়া জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়ালো। জয় প্রিয়ার অবস্থা বুঝতে পারলো। তাই রসিকতা করে বললো,আমি আপনাদের বাড়িতে মেহমান এসেছি, বাড়িতে মেহমান এলে তাদের সাথে ফ্রিভাবে কথা বলতে হয়। তা না হলে মেহমান অপমান বোধ করে। প্রিয়া কি বলবে বুঝতে পারলো না। জয় এর দিকে একবার তাকিয়ে মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিল। দেখলো ছাদের এক কোণায় চেয়ার টেবিল রাখা। প্রিয়া বুঝতে পারলো ওদের বসার জন্য এগুলো রাখা হয়েছে। প্রিয়া আস্তে করে জয়কে বসতে বললো। কিন্তু লজ্জায় জয় এর দিকে তাকাতে পারছে না। প্রিয়ার লজ্জা ভাঙাবার জন্য জয় বললো, আপনাকে আমার মা পছন্দ করেছেন, জানতাম আমার মায়ের পছন্দ কখনো খারাপ হয় না। আর আজ আমারও আপনাকে পছন্দ হয়েছে। আমাকে আপনার কেমন লেগেছে, তা ভেবেচিন্তে জানিয়ে দিলে হবে। আমি বুঝতে পেরেছি আমার সামনে বসে থাকতে আপনার লজ্জা লাগছে, আমি সুমি আপুর সাথে দেখা করে চলে যাবো। প্রিয়া সোজা হয়ে বসলো। জয়কে বললো, আপনি কি আমার উপর রাগ করে চলে যাচ্ছেন? জয় হেসে বললো,আপনার উপর রাগ করার মত বোকামি আমি কখনো করবো না। জয় উঠে দাঁড়ালো। প্রিয়াও উঠে দাঁড়ালো। জয় আবারও বললো, প্রিয়া আপনাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে। আপনার মতামতের আশায় রইলাম। এই বলে জয় চলে গেল। প্রিয়া স্থির হয়ে দাঁড়িয়েই রইলো। আর মনে মনে ভাবলো, জয় সত্যি খুব ভালো ছেলে। দেখতেও সুদর্শন, এত সুখ সইবে? এমন সময় নীলা এলো হাসিমুখে প্রিয়ার সামনে দাঁড়ালো। কিন্তু সে হাসিতে কতটা কষ্ট মেশানো তা কেবল নীলাই জানে। প্রিয়া বুঝার চেষ্টা করছে, কিন্তু পারছে না। হঠাৎ করে নীলা প্রিয়ার হাত দুটো এমনভাবে চেপে ধরলো, মনে হল প্রিয়াকে কিছু সপে দিচ্ছে। তারপর ফুল গাছের সামনে গিয়ে সাদা গোলাপ ফুলটা ছিঁড়ে ফেললো। প্রিয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। নীলা এত সুন্দর ফুলটা এমনভাবে ছিঁড়ে ফেললো, যে ফুলকে ও সন্তানের মত ভালোবাসে। সেই ফুল এভাবে ছিঁড়ে ফেললো! নীলা সাদা গোলাপটা প্রিয়ার হাতে দিল। প্রিয়া অবাক দৃষ্টিতে নীলার দিকে তাকিয়ে রইলো। নীলা একটা কাগজ প্রিয়ার হাতে দিলো। নীলা তো কথা বলতে পারে না, তাই ওর মনের কথা গুলো চিঠিতে লিখে এনেছে, নীলা হাসিমুখে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো, প্রিয়া চিঠিটা পড়তে লাগলো।
প্রিয়ার চোখে জল
পর্বঃ ২০
লেখকঃ সাইদা ইসলাম বকুল
প্রিয়া,
তুমি তো আমার বন্ধু, তাই আমার প্রিয় ফুলটা তোমায় উপহার দিলাম,তোমার আগামী দিনগুলো এই ফুলের মত সুন্দর আর সুবাসিত হোক। তোমার জীবনের এই সুন্দর মুহূর্তের জন্য আমার এই উপহার। সব মানুষই ফুলকে ভালোবাসে, এই ফুলটা তুমি জয়কে দেবে,দেখবে জয় খুব খুশি হবে। ফুল হল ভালোবাসার প্রতীক, আর আমি চাই সেই ভালোবাসার ছোঁয়ায় তোমাদের জীবন সুন্দর হয়ে উঠুক। প্রিয়া ভালোবাসার অনেক শক্তি, আমি চাই সেই ভালোবাসার শক্তি তোমার চারপাশে ঘিরে থাক, যাতে আর কোন দুঃখ - কষ্ট তোমার জীবনে প্রবেশ করতে না পারে। আমার শুভ কামনা রইলো তোমার প্রতি, ইতি....
চিঠি পড়া শেষ করে প্রিয়া নীলার দিকে তাকালো, নীলা সেই হাসিমুখেই তাকিয়ে আছে। প্রিয়া সবটুকু বুঝতে না পারলেও, এতটুকু বুঝতে পারলো যে,নীলার জীবনে যে ভালোবাসা জন্মেছে, সে ভালোবাসার ফুল এখনো ফোটেনি, যা ওর বুকের ভেতরে হাহাকার করে। প্রিয়া নীলাকে বুকে জড়িয়ে ধরলো। জয়কে নিয়ে এতক্ষণ যে ভাবনা, যে অনুভূতি ছিল, তা কোথায় যেন হারিয়ে গেল। নীলার কষ্ট দেখে প্রিয়ারও কষ্ট হচ্ছে। একজনের কষ্ট দেখে আরেকজন কষ্ট পাবে, এটাই তো মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা।
জয় আর সুমি ড্রইংরুমে বসে কথা বলছে। বুয়া নাস্তা নিয়ে এল। সুমি শরবত আর মিষ্টি দিল জয় এর সামনে। নীলা আর প্রিয়া ছাদ থেকে নেমে এলো। প্রিয়া মাথা নিচু করে তার রুমে চলে গেল। রুমে বসেই জয় এর কথার আওয়াজ শুনতে পেল। জয় এর কথা বলার ধরণটাও অনেক সুন্দর। জয় এর সাথে কি সত্যি সত্যি আমার বিয়ে হবে! ভাবতেই প্রিয়ার মনটা আনন্দে ভরে গেল। এত সুন্দর একটা ছেলে প্রিয়ার জীবনে আসবে। প্রিয়া তা কখনো কল্পনা করতেও সাহস পায়নি। হয়তো সুখ -দুঃখ এমনই, যে ভাবে তার জীবনে কখনো সুখ আসবে না, সে হঠাৎ করে সুখের সন্ধান পেয়ে যায়। আর যে ভাবে তার জীবনে এত সুখ এত দুঃখ বুঝি তার দরজার সামনে ও আসবে না। কিন্তু এমন এক সময় আসে, সে দুঃখের সাগরে ভাসতে থাকে। মানুষের জীবনটাই এমন। প্রিয়া খুশিতে উঠে দাঁড়ালো। ভাবলো,দরজার ফাঁক দিয়ে জয়কে দেখবে। মাত্র তো একনজর দেখেছে, এবার মন ভরে দেখবে। নীলার দেয়া ফুলটা এখনো প্রিয়ার হাতে। ভাবছে যাওয়ার সময় দেবে, ফুলটা পেয়ে জয় নিশ্চই খুব খুশি হবে। প্রিয়া দরজা ফাঁক করে জয়কে দেখতে লাগলো। জয় এর হাসি অসম্ভব সুন্দর। প্রিয়া এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। হঠাৎ করে প্রিয়া দেখলো, নীলা ড্রাইনিংরুমে এক কোণে পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে জয় এর দিকে তাকিয়ে আছে। আর দু'চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। প্রিয়া স্তব্ধ হয়ে গেল। নীলার এই বোবা কান্নার অর্থ কি! নীলা কেন, জয় এর দিকে তাকিয়ে এভাবে কাঁদছে। নীলা কি ভাবছে, যদি জয় এর মত কোন ছেলে সামনে এসে দাঁড়িয়ে হাত দুটো ধরে বলতো, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসবো, মৃত্যুর আগপর্যন্ত তোমার হাত দুটো আমি এভাবেই ধরে রাখবো। কখনো তোমাকে কষ্ট দেব না। নাকি অন্য কিছু।প্রিয়ার বুকের ভেতর কেমন যেন ব্যথা অনুভব করলো। প্রিয়া আর ভাবতে পারছে না। দরজা বন্ধ করে খাটের উপর গিয়ে বসে পড়লো। মাথার উপর ফ্যান ঘুরছে, তবুও প্রিয়া ঘামছে কেন।প্রিয়ার বুকের ব্যথা কার জন্য, জয় না নীলার জন্য। প্রিয়া এক গ্লাস পানি খেল। নিজেকে সহজ করার চেষ্টা করছে। কিন্তু নীলার চোখের পানি প্রিয়ার মনকে আরো জটিল করে তুলছে। প্রিয়া বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। নীলার বিষণ্ণতা, নীলার কান্না নিয়ে অনেক প্রশ্ন মনে ঘুরপাক খাচ্ছে, যার কোন উত্তরই প্রিয়ার জানা নেই।
জয় এর মোবাইল বেজে উঠলো, জয় কথা বলছে, সুমি পাশে বসে আছে। সুমির চোখ হঠাৎ করে নীলার দিকে গেল। কিন্তু নীলার সেদিকে খেয়াল নেই। নীলার সবটুকু খেয়াল জয় এর দিকে। যেই চাহনির ভাষা বুঝতে সুমির একটুও দেরি হল না। সুমি যেন বড় ধরণের একটা ধাক্কা খেল। মুখের হাসি মিলিয়ে গেল। জয় কথা শেষ করে উঠে দাঁড়ালো। আপু আমাকে এখন যেতে হবে,আর প্রিয়াকে বলবেন, ওকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে। আর ওর কি মতামত তা আমাদের জানিয়ে দেবেন। আমি আসি আপু। সুমি একটু হেসে জয়কে বিদায় দিল
, জয় চলে গেল,সুমি নিজের রুমে গিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লো। কলিংবেল বেজে উঠলো। কিন্তু সুমি উঠলো না। বুয়া দরজা খুলে দিলো। আকাশ এলো। রুমে ঢুকে দেখে সুমি শুয়ে আছে। আকাশ পাশে বসে সুমিকে বললো, আমি ভাবলাম জয় আছে। তাই তাড়াতাড়ি চলে এলাম, এসে দেখি চলে গেছে। তা কি বলে গেলো, জয়ের প্রিয়াকে পছন্দ হয়েছে? কি ব্যাপার সুমি তুমি কথা বলছো না কেন? সুমি উঠে বসলো। আকাশ সুমিকে সোজা করে বসালো, তারপর চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো, কি হয়েছে বল?
আকাশ নীলা জয়কে ভালোবাসে।
সুমি তুমি এসব কি বলছো!
আমি ঠিকই বলছি আকাশ, নীলা মনে মনে জয়কে ভালোবাসে। আজ এতটা বছর ধরে ওকে আমি লালন -পালন করছি। চোখের ভাষায় ওর না বলা কথা সব আমি বুঝতে পারি। আজ আমি ওর চোখের পানি দেখেছি, তাই নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারছি না।
চুপ করো সুমি, যা হবার নয়, তা ভেবে কষ্ট পেয়ে কি লাভ বলো? এসব ভাবলে শুধু কষ্টই বাড়বে। নীলা জয়কে ভালোবাসে না, আর কখনো বাসবেও না। স্বার্থের এই দুনিয়ায় বোবা মেয়ের ভালোবাসার কি দাম আছে বল! নীলা যেমন নীরবে জয়কে ভালোবেসেছে, তেমনি নীরবেই ওর ভালোবাসাকে দাফন করতে হবে। চৌধুরী পরিবার কখনো বোবা মেয়েকে বউ হিসেবে মেনে নেবে না। আর আমরাও তাদের এই কথা বলতে পারবো না। তাহলে ওনারা আমাদের স্বার্থপর ভাববে। তাছাড়া ওনারা প্রিয়াকে পছন্দ করেছে! জয় এর বিয়ে প্রিয়ার সাথে হবে। প্রিয়াকে তুমি বোন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছো। এখন প্রিয়া আর নীলা দু'জনেই তোমার কাছে সমান। আমরা যখন মন থেকে একটা অসহায় মেয়ের দায়িত্ব নিয়েছি, তখন আমাদের দায়িত্ব হাসিমুখে প্রিয়াকে জয় এর হাতে তুলে দেয়া। আমাদের এমন কিছু করা উচিৎ নয়, যাতে প্রিয়া কষ্ট পায়।একজনকে আশ্রয় দিয়ে তাকে কষ্ট দেয়া ঠিক নয়। আমি জানি নীলার জন্য তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে, কারণ তুমি ওকে সন্তানের মত লালন -পালন করেছো। আমারও কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু আমাদের করার কিছু নেই। আমরা তো ইচ্ছে করলেই ভাগ্যকে বদলাতে পারি না। তাই আমাদের উচিৎ ভাগ্যকে মেনে নেয়া।
প্রিয়া এতক্ষণ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সব শুনলো। অবশ্য প্রিয়া ওদের কথা শুনতে আসেনি, সুমিকে তার শাড়ি ফিরিয়ে দিতে এসেছিল। সব শুনে প্রিয়া পাথর হয়ে গেল। ভেতর থেকে সুমির কান্নার আওয়াজ শুনতে পেল। সেই চাপাকান্নার শব্দ যে শুনবে, তারই বুকের ভেতর হাহাকার করে উঠবে। সুমির কান্না শুনে প্রিয়ার খুব কষ্ট হল।যারা এত আদর ভালোবাসা দিয়ে প্রিয়াকে এই বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছে, তারা আজ দুঃখের পাহাড় এর উপর দাঁড়িয়ে আছে। আর নীলা,ওর মনে তো আরো বেশি কষ্ট। এবার বুঝতে পারলো প্রিয়া, নীলা হাত চেপে জয়কে ওর হাতে সপে দিয়েছে, এখন কি করবে প্রিয়া? এই মুহূর্তে কি করা উচিৎ, কিছুই বুঝতে পারলো না। সুমির রুমের সামনে থেকে ধীরপায়ে চলে যাচ্ছে প্রিয়া। পেছনে ফেলে যাচ্ছে তার স্বপ্ন আর খুশি। সব কিছু কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে, মাথাটা ঝিমঝিম করছে। অনেক ভাবনা প্রিয়ার চারপাশে এসে ঘুরপাক খাচ্ছে। যারা প্রিয়ার জীবনে আলো দিয়েছে, তাদের জীবনে অন্ধকার নেমে এসেছে। যারা এত আদর দিয়েছে, বোন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, প্রিয়ার বিয়ের দায়িত্ব নিয়েছে, তাদের কষ্টে রেখে প্রিয়া কি করে সুখে থাকবে? প্রিয়া জানে না তার জায়গায় অন্য কোন মেয়ে হলে কি করতো, কিন্তু প্রিয়া তাদের দুঃখে রেখে সে সুখি হতে পারবে না। প্রিয়া অসহায়, কিন্তু স্বার্থপর নয়। প্রিয়া এই পরিবার থেকে যতটুকু ভালোবাসা পেয়েছে, ততটুকু ভালোবাসা সবার মাঝে বিলিয়ে দিতে চায়। কিন্তু কিভাবে দেবে তা বুঝতে পারছে না।
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ