গল্পঃ- সারপ্রাইজ
সকাল বেলা মাকে ফোন দিয়ে
ভালো মন্দ কিছু বলার আগেই, মা
আমাকে যে খবর টি জানালেন, তা
হচ্ছে সুমির নাকি এক্সিডেন্ট হয়েছে,
সে এখন মৃত্যু আর জীবনের লড়াই করছে
মাদারীপুর সদর হাসপাতালে। সুমির
সাথে আমার পরিচয় বৌছি খেলার
মাধ্যমে। শহরের মাটিতেই বড় হয়েছি,
গ্রামে বছরে কিংবা যুগে যাওয়া হত।
তাও কয়েক দিনের জন্য। সাতার
জানতাম না বলে পুকুরে নামতে বেশ
ভয় লাগতো। আমার ছোট ভাই সোহেল
খুব সাতারু ছিলো, তার সাথে সবকিছুর
বাহাদুরী করতে পারলেও, সাতার
নিয়ে কোন কথা বলতাম না।
সকালে ঘুম থেকে উঠে গোসল করতে
গেলাম। পুকুর পাড়ে বসে দাত মাজতে
মাজতে গ্রামের ছেলেমেয়ে গুলোর
স্কুলে যাবার দৃশ্য দেখতেছিলাম।
বাহারী রংয়ের ফ্রোক, থ্রিপিস,
ছেলেদের রংচাটা গায়ের সার্ট তার
উপর মাথায় শর্ষে তেলের চাট। সুর্যের
ঝিরিঝিরি রোদ মাথায় পড়তেই চিক
চিক করে উঠছে চুলগুলো। আমার দেখা
শ্রেষ্ঠ দৃশ্য ছিলো। গায়ের
ছেলেমেয়ে গুলো খুবই সাধারন হয়,
তারা মডেলিং করতে জানেনা,
কথার মায়া আর চোখের কাজল এদের
সম্পদ কাউকে আকৃষ্ট করার জন্য। পেছন
থেকে আমাকে কে যেন ধাক্কা
দিলো, আমি সোজা পুকুরে পড়ে
গেলাম, খুব ভয় পেয়েছিলাম, "মা, ওমা,
মাগো আমারে বাচাও" বলে
পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছিলাম, কারন
আমি সাতার জানিনা। ভয় পাওয়াটা
সাধারন বেপার।
মা বাবা ঘর থেকে ছুটে আসলেন,
তারা আমাকে দেখে হাসতে
লাগলেন, সাথে পুরো বাড়ীর মানুষ,
রাস্তার উপর দিয়ে যাওয়া,
ছেলেমেয়েগুলো আমার দিকে
তাকিয়ে হাসতেছিলো। আমি তখন
নিজেকে আবিষ্কার করলাম আমি হাটু
পানিতে দাঁড়িয়ে রয়েছি। চৈত্র
মাসের মাটি ফাটা গরম এখন সময় তে
পুকুরে পানি থাকেনা বললেই চলে।
আমি নাকি এই হাটু পানিতে পড়ে
গিয়ে, এমন চিৎকার করলাম। নিজের
কাছে খুব লজ্জাবোধ লাগতে লাগলো।
ধাক্কাটি আমার ছোট ভাই সোহেল
দিয়েছিলো, তাকে পরে সায়েস্তা
করা যাবে আগে লজ্জা থেকে
বাচতে হবে। মাথা নিচু করে উঠে
আসতেছিলাম, "ওমা কি দামড়া
পোলা, এই পানিতে ভয় পাইয়া
গেলো" রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে সুমি
কথাটি বলল।
আমি ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলাম,
লজ্জায় আমার চোখের কোনে পানি
জমে গেলো, কিন্তু সবাই তা হাসি
ঠাট্টায় নিচ্ছে। সুমি কথাটি বলে
মুখে ওড়না চেপে হাসতে লাগলো।
কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে
মাথার পেছনে বেলী করা চুলের গুটি
এক ঝটকায় বুকের উপর নিয়ে আসলো।
তার মুখ তো দেখতে পারিনি ঠিকমত
কিন্তু তার কোমড় অবধি লম্বা রেশমী
চুল, কাজল বাকা নয়নে ঘায়েল
হয়েছিলো আমার মন।
আমার রাগের আবির্ভাব দেখে বাবা
মা সহ সবাই কেটে পড়লেন। আমি ঊঠে
আসতে সোহেল আমার কাছে এসে
দাড়ালো। তাকে কথা বলার সুযোগ
দিলাম না, ঠাস করে এক চড় বসিয়ে
দিলাম। শরীরে যত শক্তি ছিলো, এক
বিন্দু সঞ্চয় করিনি। চড়ের শব্দ এত বেশী
ছিলো যে মা ছুটে আসলেন, ততক্ষনে
সোহেল মাটিতে পড়ে গেছে, ঠোট
ফেটে রক্ত বের হয়ে আসছে।
তখনো আমার মাথায় সুমির কথাটি
ঘুরতেছিলো, যতবারই সুমির উপর রাগ
করতে যাবো ততবারই তার কাজল নয়ন
আমার রাগকে পানি করে দিয়েছে।
মা খুব ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে চড় বসিয়ে
দিলেন, কোন কথা বললাম না, এক
নাগারে অনেকগুলো গালী আমার
নসিবে খেলা হয়ে গেছে। দামড়া,
বাদাইম্মা, এত জোরে কি ছোট
ভাইরে কেউ মারে। রাগে ফুস ফুস
করতে ছিলাম, শুধু বললাম, হ্যা সব দোষ
তো আমার তোমার পোলা যা করছে
তাতো চোখে দেখবে না। গজ গজ করে
সোজা রুমে চলে গেলাম। আর মা
বাবাকে দিয়ে সোহেল কে
ডাক্তারের কাছে পাঠালো।
সোহেল স্কুলে যায়নি, রাগ করে।
স্কুলের খাবার সময়তে ঘরের দরজার
সামনে এসে কে যেন সোহেল কে
ডাকতে ছিলো,
-- সোহেল, কই তুই আজকে স্কুলে
গেলিনা কেন?
কয়েকবার ডাকলো, সোহেল চাচীর
ঘরে বসে আছে। আমি যে ঘরে থাকবো
সে নাকি সে ঘরে থাকবে না। তাই
বাধ্য হয়ে আমি উত্তর দিলাম,
০- সোহেল ঘরে নাই, চাচীর ঘরে
দেখেন।
-- আপনি কে?
০- আমি তার বড় ভাই।
-- সকালের দামড়া পোলাডা?
কথাটি শুনে রাগে যেন শরীর ফেটে
যায়। ছুটে আসলাম তাকে যথাযোগ্য
উত্তর দিতে ততক্ষনে সে চাচীর ঘরে
চলে গেলো। চাচীর ঘরের সামনে
দাঁড়িয়ে রয়েছি উত্তর দিবো বলে।
সোহেল কে নিয়ে সুমি বের হয়ে
আসলো, পুরো মুখে ওড়না দিয়ে ঢাকা।
হিজাবের মত করে সুন্দর ভংগিমায়
নিজেকে আড়াল করেছে শুধু তার লম্বা
কেশ আর কাজল নয়ন দেখা যাচ্ছে। তার
কাজল লম্বা সরু নয়ন থেকে হার্টবিট
বাড়তে লাগলো। ক্রমশে নিজের
দুর্বলতা অনুভব করলাম, তার তেছরি নয়ন
বান যে কোন পুরুষকে হত্যা করার জন্য
যথেষ্ট। সোহেল আমাকে দেখে ভয়ে
সুমির পিছনে গিয়ে দাড়ালো।
০- সুমি ঐ আজরাইল কে বল আমার
সামনে থেকে যেতে। সোহেল সুমির
পিছনে দাঁড়িয়ে কথাটি বলল।
সুমি চোখ গরম দেখালো আমায়, তার
চোখের মায়া যেন দ্বিগুন বেড়ে
গেলো। কোন কবি যেন বলেছিলো,
নারী কাদলে আর রাগলে অনেক
মায়াবতী হয়ে উঠে। তার ব্যতিক্রম
সুমি ছিলোনা।
০- এইভাবে মানুষ মানুষরে মারে
নাকি, তাও আবার আপন ভাইরে।
কোমরে হাত দিয়ে চোখ রাগিয়ে
সুমি কথাটি বললো।
-- আমি এত জোরে মারতে চাইনি।
লেগে গেছে। স্যরি ভাই আর মারবো
না তোকে।
কথাটি বলে আমি ঘরের দিকে আসতে
লাগলাম। মা পিছনে দাঁড়িয়ে
ছিলো, আমার দিকে এমনভাবে
তাকালো, যেন আমি কয়েকটা খুন করে
রক্তমাখা শরীর নিয়ে পালিয়ে
এসেছি।
-- সারাদিন আমরা সবাই বললাম তোর
ভাইকে নিয়ে আয়, আমাদের কথা
শুনলিনা, আর সুমি কিছু না বলতেই
ভাইকে মানানো শুরু হয়ে গেলো।
কাহিনী কি? মা যখন আমাকে একের
পর এক প্রশ্নের সামনে ফেলতেছিলেন
তার সংগী দিতে আমার দাদী এসে
বলতে লাগলেন।
-- আরে বউমা বুঝোনা কেন? পোলা বড়
হইছে না, মাইয়াগো সামনে তো
ভেজা বিড়াল সাজবোই। এই যৌবন
কালে তোমার শশুর এ এমন ছিলো। পুরা
গ্রামে রাগ দেখাইয়া বেড়াইতো, আর
আমার সামনে আসলে এমন ভাব নিতো
রাগ কি তা জানেই না। একেবারে
তোমার বাবা ফটিক চোরারমত হইছে।
০- ঐ বুড়ি তোমারে নাক গলাইতে
কইছি।
আমার কথার উত্তর সুমি দিলো। আপনি
তো অনেক বেয়াদব, বড়দের সামনে
এইভাবে কথা বলেন, একদম পিটাইয়া
তেতুল গাছে বাইন্ধা রাখমু। এইটা
গ্রাম শহর না বুঝছেন বাবু সাহেব। তার
কথার উত্তর দেবার শক্তি তো দূরে থাক,
বুকের সাহসটাই সঞ্চয় করতে পারছিলাম
না। অনেক মেয়ে দেখেছি তার মত
তেছরি নয়নবানের কাছে আমার সব
অর্জন করা রুপসী মেয়েদের খাতা বন্ধ
হয়ে গেলো। কথা না বাড়িয়ে চলে
আসলাম। পিছনে একবার তাকিয়ে
দেখলাম, সবাই মুচকি হাসিতে বিভর।
তাদের হাসিতে আমার গা জলে যায়।
কিন্তু সুমির মায়াবী কথা আর
কাজলনয়নে বার বার রাগগুলো হেরে
যেতে লাগলো।
।
২
।
স্কুল মাঠে আমি সুমন আর রফিক বসে
সিগারেট খাচ্ছিলাম। অভ্যাস টা শহর
থেকেই বাধিয়েছি। সবার আড়ালে
খেতেই এই স্কুল মাঠের কোনায়
অবস্থান নিয়েছি। মনের সুখে একটি
ডিজে গান লাগিয়ে সিগারেট ফুঁকে
যাচ্ছিলাম। এরই মধ্যে স্কুল মাঠ দিয়ে
আড়া আড়ি বয়ে যাওয়া শর্ষে
ক্ষেতের মধ্য দিয়ে কেউ আসতেছে।
যে আসে আসুক আমার কি তাতে, আমরা
সিগারেটই ফুকে যাচ্ছিলাম। কয়েকজন
মেয়ে মিলে একটি দল আমাদের
সামনে এসে দাঁড়ালো। সবাই বোরকা
পড়া ছিলো, তাই দেখেও না দেখার
ভান করলাম। কিন্তু তাদের মধ্যে একটি
মেয়ে কোমরে হাত দিয়ে আমার
দিকে তাকিয়েছিলো। মাথা উপরে
তুলতেই সে বলতে লাগলো,
০- এই ছাইপাঁশ খাওয়া হচ্ছে, তো আর
কি গুন আছে আপনার মধ্যে একটু জানতে
পারি। মেয়েটির চোখের লম্বা কাজল
দিয়ে চিনতে ভুল হলোনা, মেয়েটি
সুমি, কিন্তু এত সুদ্ধভাষায় সুমি কথা
বলবে ভাবতে পারছিলাম না।
তারপরেও বললাম।
-- তা জেনে আপনার কি?
০- ঐ দামড়া পোলা, একদম মাইরা
ফালামু, তর্ক করলে। এত রাগান্বিত
ভাবে এভাবে কথা সুমি ছাড়া আর কে
বলবে, এবার হচকচিয়ে গেলাম,
কলিজার পানি সব শুকিয়েই গেলো।
যত্রতত্র সিগারেট ফেলে দিয়ে
সোজা হয়ে দাড়ালাম। ততক্ষনে সুমন
আর রফিক উলটে পালটে দৌড় দিয়ে
আমাকে নয়না কাজল জল্লাদিনীর
কাছে একা ফেলে গেলো। একেই
বলে বন্ধু, যারা এভাবে ফেলে চলে
যায়। মনে মনে সালাদের চৌদ্দগুষ্টি
উদ্ধার করে চলছি, এরই মধ্যে ধমকের সুরে,
-- বলেন না কেন? আর কি কি খাওয়া
হয়।
০-আর কিছু খাইনা, সিগারেট তো
রফিক জোর করে খাওয়ালো। বন্ধু বলে
না করতে পারেনি।
-- বন্ধু যা বলবে তাই করতে হবে।
০- আপনি আমাকে কেন একা বকতেছেন,
রফিক সুমন কেও বলেন।
০- রফিক তো আমার ভাই তাকে তো
বাসায় গিয়ে ধরবো।
-- কি? রফিক আপনার ভাই।
০- আজকে বাসায় আসুন সবার সামনে
হেস্তনেস্ত করবো। কথাটি বলে চলে
যেতে লাগলো, আমি দৌড় দিয়ে তার
হাত ধরলাম,
০- আচ্ছা কিছু নিয়ে দিয়ে কি
রফাদফা করা যায়না?
-- আপনি কি আমাকে ঘুষ দিতে
চাচ্ছেন।
০- তেমন না আবার সেরকম কিছুই যদি
আপনার মর্জি হয়।
এক ঝাটকায় আমার হাত ছাড়িয়ে
"বাসায় আসেন আজকে" কথাটি বলে
হুরহুর করে চলে গেলো। সুমি চলে
যাবার পর সুমন আর রফিক ফিরে আসলো,
"আরে দোস্ত মেয়েটা কে ছিলো,
আমরা পেশাব করতে গেলাম, সেখান
থেকে শুনলাম অনেক ধমক টমক দিলো
তোকে, চিনিস নাকি মেয়েটাকে?"
রফিকের কথা শুনে নিজের মাথা কচু
গাছের সাথে পিটিয়ে ফাটাই
ফেলতে ইচ্ছে করতেছিলো, কত বড়
নাটকবাজ পোলা। চারিদিকে
তাকিয়ে একটি ধইঞ্চা পেলাম তা
উঠিয়ে উড়াধুরা মারতে লাগলাম, সে
দৌড় দিলো তাকে সেভাবেই দৌড়ে
দৌড়ে মারতে লাগলাম। একদম বাড়ির
ভিটা পর্যন্ত তাকে পিটাইতে
পিটাইতে আসছি। সামনেই সুমি পড়ে
গেলো তাকে দেখে ধইঞ্চা ফেলে
দিয়ে উলটো পথে শিষ মারতে মারতে
আসতে লাগলাম সে পেছন থেকে ডাক
দিতেই, লে বাবা এইবার বাইচ্চা
দেখা কথাটি বলে এক দৌড়, একদম
বাড়ির মধ্যে এসে দরজা বন্ধ করে দম
ছাড়লাম।
।
৩
।
শুক্রবার ছিলো, সকাল বেলাতেই
বাসার সামনে কেচরমেচর শব্দে ঘুম
ভেংগে গেলো। যখন থেকে গ্রামে
আসছি শান্তি আর চোখে দেখিনাই,
না ঘুমে শান্তি জেগে শান্তি, না
ঘরে না বাহিরে। ঘরে থাকলে
মায়ের ভয়, আর বাহিরে কাজল
নয়নধারী সুমির। ঘরের থেকে
রেগেমেগে থেকে বের হলাম, এক
ঝুটি ছেলেমেয়ে উঠানকে খেলার
মাঠ বানিয়েছে,দরজার সামনে
দাঁড়িয়ে চিৎকার দিলাম, আরে
তোরা কি ঘুমাইতে দিবিনা?
০- কে রে গোয়ালের গরুর মত হাকাই
উঠলো, সকাল ১০ টা বাজে এখন কিসের
ঘুম। কথাটি কানে আসলে ঘর থেকে
বের হলাম কে বলছে তা দেখতে। কে
রে? কে বলছে গরু আমাকে। ওড়না
দিয়ে মুখ ঢেকে সুমি সামনে আসলো
তাকে দেখে ভদ্র ছেলের মত ফিরে
যেতে লাগলাম, "ঐ ঐ দাড়ান, আমি
ডাকছি কি হইছে?" সুমির কথায়
দাঁড়িয়ে গেলাম, মুখ ঘুরিয়ে তার
দিকে তাকালাম,
০- আরে না, আমি তো মাকে বলতে
আসছিলাম এত বেলা হয়েছে আমাকে
ডাক দেয়নি কেন? এরই মধ্যে মা ফুসফুস
করতে করতে রান্নাঘর থেকে বের হয়ে
আসলো
-- কি বললি তুই, একটু আগে ডেকে
আসলাম, তখন তো আমাকে বললি,
আরেকবার ডাক দিলে শহরে চলে
যাবি, আর এখন এই কথা কেন বলিস।
মায়ের কথা শুনে আর কিছু বললাম, না।
সুমি বেশ রাগ হয়ে আমাকে বললো
০- এখানে বসে থাকবেন সবাই খেলবে,
চেঁচাবে সব দেখবেন। এই সোহেল তোর
নবাব ভাইয়ের জন্য চেয়ার নিয়ে আয়।
সোহেল চেয়ার এনে দিলে আমি
সেটায় বসলাম, অপর প্রান্ত থেকে
দাদী পান ছেঁচতে ছেচতে বললেন,
-- মরদ মাইনসের যত বাহাদুরী নারীর
সামনে আসলেই শেষ। কথাটি এমন
ভাবে শরীরে লাগলো, যেন কাটা
ঘায়ে লবন ছিটা।
০- ঐ বুড়ি তুমি আগুনে ঘি দিওনা তো,
সুমি আমার দিকে যেভাবে
তাকালো, মনে হচ্ছে এখনি বজ্রপাত
হয়ে আমার মাথায় পড়বে, সুমির থেকে
বাচতে দাদীর কাছে গিয়ে, দাদী
দাও পান আমি ছেঁচে দিতেছি। সুমি
আর কিছু বললো না, আমি যেন হাফ
ছেড়ে বাচলাম।
তাদের খেলা দেখতেছিলাম, আমি
সামনে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস
করলাম, কিসের খেলা এটা,
০- বৌছি। গোল দাগের মধ্যে যে
দাঁড়িয়ে থাকে সে হচ্ছে বৌ। ছেলে
পক্ষরা বউ নিয়ে যেতে পারলে তারা
জিতবে, আর মেয়ে পক্ষরা তাদের
বাধা দিবে।
-- আপনি বউ হলে খেলার মধ্যে হোক আর
বাস্তবে আমি উঠিয়েই নিয়ে যেতাম।
কথাটি বলে একদম বেয়াক্কেল হয়ে
গেলাম, কি থেকে কি বলে ফেললাম
বুঝতে পারলাম না। সুমির মুখখানা
আমি এখনো দেখিনাই, শুধু তার
মায়াভরা শাসন, রেশমী চুল, আর কাজল
নয়নেই আমি তাকে ভালোবেসে
ফেলেছিলাম, তা হারে হারে টের
পাচ্ছি। দাদী আমার কথা শুনে আর
পাশ কাটাতে দেয়নি।
০- কত বড় মরদ হইছোস আজকে প্রমান হোক,
সুমিরে যদি তুই এই ডাংগার তো নিয়া
যাইতে পারোস, তাইলে সুমির লগে
তোর বিয়া আমিই দিমু। না পারলে
কানাবুড়ির সাথে বিয়া দিমু। দাদীর
কথা সবাই শুনে জমা হয়ে গেলো, আজ
খেলার মাধ্যমে বঊ ঠিক করা হবে।
কিন্তু আমার জানা ছিলো না
আজকের এই খেলা আমার জীবনের এত
বড় এক সিদ্ধান্তে উপনীত হবে। এরইমধ্যে
সুমির মা চলে আসলো, এই প্রথম আমি
তার মাকে দেখলাম, লম্বাচওড়া
মাঝারী গঠনের এক সুশ্রী মহিলা। সেও
মত দিলো এই খেলায়। এই প্রথম আমি
সুমির চোখে লজ্জা দেখলাম, তার
কণ্ঠস্বর নিচু হয়ে গেলো। চোখের
কাজলনয়ন এর ধাজে ধাজে লজ্জাবতী
গুঞ্জন করতেছিলো। কি মায়া চোখে
কি আদর তার বুলিয়ে মুখ দেখে লাভ
নেই, তার নয়নপানে তাকিয়েই
জীবনের ভালোবাসা সব উজার করে
দিতে পারবো।
আমি খেলার জন্য প্রস্তুত হলাম, একদল
মেয়েপক্ষ আর এক দল ছেলে পক্ষ ভাগ
হলো। সুমি বৌছির কোঠায় দাঁড়িয়ে
আছে মুখে ওড়না পেঁচিয়ে। খেলার
নিয়ম এক দমে মেয়েকে উঠিয়ে নিয়ে
আসতে হবে, যদি মেয়ে পক্ষের ঘরে দম
শেষ হয়ে যায় তাহলে হেরে যাবো।
আর তারা আমাকে বাধা দিবে
মেয়ে আনতে। সাত দম দেওয়া হবে
মেয়েকে নিয়ে আসার জন্য।
প্রথম দমে, কুত কুত কুত কুত, করে মেয়েকে
আনতে গেলাম সুমির হাত ধরে টান
দিয়ে তাকে ঘর থেকে বের করার
চেষ্টা করলাম, কিন্তু পারলাম না, সে
আসতে চায়না, অপর দিকে সবাই
আমাকে ধরে ফেললো। আমি এক
ঝাটকা দিয়ে তাদের সবার হাত
থেকে ছুটে ছেলে পক্ষের দাগে চলে
আসলাম। আর বড় বড় নিশ্বাস ফেলতে
লাগলাম।
দ্বিতীয় দমেও পারলাম না।
তৃতীয়তেও ব্যর্থ।
এবার বুদ্ধি আটলাম মেয়েকে আড়
পাজোর কোলে তুলেই নিয়ে আসবে।
টানলে যেহেতূ আসেনা। তাই করতে
হবে। দম নিলাম, কুত কুত কুত কুত করে
মেয়ের সামনে গেলাম, তার সামনে
দাঁড়িয়ে এক হাত পিছনে দিয়ে
আরেক হাত পায়ের নড়লি পর্যন্ত রেখে
তাকে আরপাজো কোলে তুললাম।
যারা আমাকে ধরতে আসতে ছিলো,
সুমির পা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে তাদের
ফেরাতে ফেরাতে সুমিকে নিয়ে
বরপক্ষের ঘরে আসতে ধপাস করে পড়ে
গেলাম। সুমির উপরে আমি পড়লাম,
একেবারে সুমির নিশ্বাস এর
কাছাকাছি আমার নিশ্বাস গিয়ে
আটকে গেলো। আমি বড় বড় নিশ্বাস
নিতে লাগলাম, সুমিও নিশ্বাস
নিচ্ছে। এই প্রথম কারো নিশ্বাসের
বাতাসে আমি শান্তি পেলাম্ তার
চোখের নজরে নিজেকে ডুবিয়ে
নিলাম। দাদী বলে উঠলো,
০- আরে নির্লজ্জ উঠ ওর উপর থেকে,
বিয়ে এখনো হয়নাই, তোদের।
কথাটিতে বড় লজ্জা পেয়ে গেলাম,
আমি আর সুমি যত্রযত্র করে উঠে পড়লাম।
সুমি এক বিন্দু না দাঁড়িয়ে বাসায়
চলে গেলো। সবাই হাসাহাসি করতে
লাগলো, পুরো গ্রাম রটে গেছে আজ
বৌছি খেলায় বিয়ে হবে। আমি
দাঁড়িয়েছিলাম মা হাসিমুখে এসে
বললো,
-- যাক অবশেষে আমার ছেলে
বিয়েতে রাজী হলো। যে মেয়েকে
তুই বিয়ে করবিনা বলে না করে
দিয়েছিলি, সেই মেয়ে আর কেউনা,
আমাদের সুমি। বড্ড লক্ষী মেয়ে, যার
ঘরে যাবে সুখের শেষ থাকবেনা।
মায়ের কথা শুনে আমি ৪ মাস পিছনে
চলে গেলাম।
০- বাবা সুমি নামের এক মেয়ে
দেখেছি তোর সাথে অনেক
মানাবে। তাছাড়া সুমি রুপেগুনে
একদম অনন্য। তুই যদি রাজী হইস তাহলে
বিয়ে করিয়ে আমি শান্তিমত মরতে
চাই।
-- ধুর মা আমি এখন বিয়ে টিয়ে করবো
না। তাছাড়া গ্রাম্য মেয়ে আর কত
গুনবতী হবে। আমাকে আবার বিয়ের
কথা বললে আর গ্রামেই আসবো না।
যে মেয়েকে না দেখে আমি না করে
দিয়েছিলাম সেই মেয়ের শুধু চোখের
তেছড়ি নয়নে পাগল হয়ে আজ বিয়ে
করতে যাচ্ছি আজো মেয়েটিকে
আমার দেখাই হলোনা।
দুই পরিবার খুব আনন্দ ফুর্তি করে আমাদের
বিয়ে দিলো। আর সুমি সোহেলের
স্কুলে পড়তো না, এসব কিছু আমার
মায়ের দুষ্টু বুদ্ধি ছিলো, সে
নাজিমুদ্দিন কলেজে স্নাতকের
ছাত্রী ছিলো। আমার মা চাইতো সুমি
নামের মেয়েটিই যেন আমার বউ হয়।
সুমি ঘরের মধ্যে বধু সেজে বসে আছে
আজ আমি সুমিকে দেখতে পাবো,
নয়নভরে দেখবো প্রানের সুমিকে।
ঘরের মধ্যে ঢুকে দরজার খিল লাগিয়ে
দিলাম, আস্তে আস্তে সুমির কাছে
গিয়ে বসলাম, সুমির ঘোমটা তুলতে
চাইলাম সে বাধা দিয়ে বললো, "না
দেখে কি ভালোবাসা যায়না? "
০- তোমার তেছড়ি নয়নের প্রেমে
পড়েছি, সেই নয়ন দেখেই আজীবন
কাটিয়ে দিতে পারবো, মুখ না
দেখাও নয়ন তো দেখতে দেও।
সুমি আমার হাত টেনে তার ঘোমটায়
ধরিয়ে দিয়ে "নাও গো স্বজনী দেখে
নাও তোমার প্রানের কাজলনয়ন "
আমি ধীরে ধীরে তার ঘোমটা
উঠালাম, তার মুখখানা দেখতে
পেলাম। ঘোমটা হাতে ধরেই কতক্ষন
তার রুপের মুখখানা দেখেছি জানা
নেই। এ যে হুর জান্নাতী হুর। মায়াবী
মুখ, কাজল নয়ন, লম্বা রেশমী চুল, নাকের
ডগায় গোপালের মত এক নথফুল কপালে
টিকলি, হাতে বালা, কানে ঝুমকা
পায়ে তাহার নুপুর। এমনো মায়াবী
নারী বিধাতা আমার বাম বুকের
পাজর দিয়ে বানিয়েছেন আল্লাহর
দরবারে লাখ লাখ শুকরিয়া জানিয়ে।
আলহামদুলিল্লাহ বলে তার কপালে
একটি চুমু দিলাম। প্রেম কবে শুরু
হয়েছিলো জানিনা, কিন্তু সুখের শেষ
ছিলোনা আমার আর সুমির
ভালোবাসায়। সুমি একটা কথা বলি
০- বলেন
-- আই লাভ ইউ।
সুমি লজ্জা নিয়ে ইশ.. বলে আমার বুকে
মুখ লুকিয়ে নিলো। আমি পরম যত্নে
ভালোবাসার আদুরী হাতে তাকে
জরিয়ে ধরলাম।
।
৪
।
এরই মধ্যে বাস মাদারীপুর বাস্ট্যান্ডের
সামনে এসে হাজির হলো। সুমির কথা
ভাবতে ভাবতে সময় কখন ফুরিয়ে
আসলো টেরও পেলাম না।
মাদারীপুর সদর হাসপাতালের ভিতরে
গিয়ে সবাই কে পেলাম। আমাকে
দেখে সবাই আরো গম্ভীর হয়ে গেলো,
বাবা মা সহ সবাই উপস্থিত রয়েছে
সবার মুখ গম্ভীর। আমি মায়ের কাছে
ছুটে গেলাম,
০- মা কি হয়েছে সুমির, কিছু হয়নি
তো। ওর কিছু হলে আমি বাচবো না।
মা আমাকে হাতের ইশারায় ভেতরে
যেতে বললেন। সুমি বিছানায় শুয়ে
আছে। আমি গিয়ে সুমির কপালে হাত
বুলাতেই সুমি জেগে উঠলো।
০- কি হয়েছে তোমার, আমার প্রান
তো বের হয়ে গিয়েছিলো। এখন
শান্তি পেলাম তোমাকে দেখে। সুমি
আমাকে ইশারায় ডাকলো তার মুখের
কাছে কানটি নিয়ে গেলাম, সে
আমার কানে যা বলল তা শোনার জন্য
পৃথিবীর সকল পুরুষ অপেক্ষা করে, "তুমি
বাবা হয়েছো।" মুহুর্তেই আনন্দের
জোয়ার বয়ে গেলো, সত্যি বলছো
তুমি? কথাটি এত জোরে বললাম যে
সবাই ভেতরে চলে আসলো, আমি
সুমিকে জড়িয়ে ধরে তার কপালে
গালে লাগাতার চুমু দিতে লাগলাম।
এরই মধ্যে দাদী বলে উঠলেন "আরে
বেহায়া এটা হাসপাতাল" কথাটি
শুনে লজ্জায় পড়ে গেলাম। সবাই দেখে
ফেললো যে, সুমি গায়ের চাদর দিয়ে
মুখ ঢেকে নিলো। আমি দাদীর দিকে
ফিরে তাকালাম, দাদীর কোলে এক
ছোট্ট শিশু যে গতকাল রাতে এই
পৃথিবীতে এসেছে। আমি দাদীর কাছ
থেকে আমার মেয়ে শিশুটিকে
কোলে নিয়ে একনাগারে কয়েক
হাজার চুমু দেওয়ার পর এক্সিডেন্ট এর
কথা মনে পড়লো, মাকে জিজ্ঞেস
করতে সে সুমিকে দেখিয়ে দিলো।
এটা সুমির নাটক ছিলো, আমাকে
সারপ্রাইজ দেবার জন্য। প্রথমে মা
নাটক করে আমাকে সুমি উপহার
দিয়েছিলো, আজ সুমি নাটক করে
বাবা হবার সুযোগ দিলো। এমন মিষ্টি
নাটক যেন সবার ভাগ্যে জোটে।
এই তো আমার ছোট্ট ভালোবাসার
ফুলঝুরি সংসারের গল্প। যে সংসারে
সবাই শুধু ভালোবাসা আর সুখ দিয়ে
যায়। রাগ অভিমান অভাব যাই থাকুক
না কেন ভালোবাসার কমতি নেই।
।
লেখা: Tashriq Intehab
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ