হঠাৎ আপু আমাকে বলতেছে, চাচী কেমন আছে রে?
আমিঃ- কোন চাচী?
আপুঃ- আজিজুল ভাইয়ার আম্মা...
আমিঃ- অহ। অনেক বছর হলো আমি তাদের বাসায় যাই না।
আপুঃ চল, আজ দিন টা ভালো, চাচীকে( দূর সম্পর্কের চাচী) দেখে আসি।
আজিজুল ভাইয়া আপু দেখে বলেন, কে এটা, মারজিয়া?
আপু:- হুম ভাইয়া আমি।
চাচীর রুমে ঢুকে আপু চাচীকে জড়িয়ে ধরে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলল,চাচী, আপনি কেমন আছেন? আপনার এই অবস্থা কেন? ঠিক মতো কি খাওয়া দাওয়া করেন না?
চাচীঃ- মা, যখন শরীর টা ভালো লাগে তখন রান্না করি। আর যখন শরীর টা অসুস্থ থাকে রান্না করি না... চিড়া মুড়ি খেয়ে এক কোনায় পড়ে থাকি।
আপুঃ- এসব কি বললেন চাচী? আপনার সাত ছেলের বউ থাকতে আপনার খাওয়ার কষ্ট করতে হয়?
আপু কথা শেষ করার আগেই চাচী উচ্চ স্বরে আপুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে, মা, একটা ছেলেও আমার খবর নেয় না। আমি ভাত খাইছি কিনা,আমার ঔষধ লাগব কিনা? কোন খবর নেয় না।
আপুও কান্না করতেছে... তখন আপু আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল, তুই তখন অনেক ছোট। আমি দেখছি, চাচী কত কষ্ট করে তার ছেলেদের লালনপালন করসে। একটা প্লেট -এর ভাত চাচা অর্ধেক খেতেন আর অর্ধেক চাচীর জন্য রাখতেন। কিন্তু চাচী ঐ ভাত টা খাইতেন না রেখে দিতেন বাচ্চাদের জন্য ছেলেদের জন্য। যাতে তাদের ভাতের অভাব না হয়। একটা পুরুষের মতো কাজ করত খেতে খামারে। এই যে এত জায়গায় সম্পত্তি দেখতেছোস সব চাচী আর চাচা অনেক কষ্ট করে গড়ছে। রাতেও ঘুমাইত না কোন না কোন বাড়তি কাজ করত। আর সেই ভাইয়ারা বড় হয়ে নাকি চাচী গায়ে হাত তুলত। এখন বিয়ে করে যার যার মত থাকে।
তাদের কান্না দেঁখে আমি আর ঐ রুমে থাকতে পারলাম না। বারিন্দায় গিয়ে চোখ মুছতে মুছতে ভাবতেছি,
অনেকে টাকা আর অপরূপা স্ত্রীর রূপে মুগ্ধ হয়ে ভুলে যায় জনমদরদী মা- বাবাকে। বর্তমান সময়টা হলো বিপর্যয় ও বিশৃঙ্খলার যুগ। লজ্জা -শরম যেন সমাজ হতে চির বিদায় নিয়েছে। এ ধরার বুকে আগমনের মাধ্যমেই হলো মাতা -পিতা। পৃথিবীর সকল সুখ ও প্রশান্তি মহান আল্লাহ একজন সন্তানের জন্য পুঞ্জিভূত করে রেখেছেন তার মায়ের কোলে। একজন পিতার সন্তানের সুখ- স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম ও নিরলস সাধনা করে যান অকুণ্ঠ চিত্তে। কিন্তু পিতা -মাতা ও শ্বশুর -শাশুড়ীর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন এক কল্পনাতীত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, বরং উল্টা তাদেরকে নানা রকম কষ্ট দেয়া হয়। সাধারণত দেখা যায়,মেয়েরা তাদের বৃদ্ধ মাকে এমনভাবে ধমক দেয়, মনে হয় সে যেন একজন গৃহপরিচারিকা ও সেবিকা। অনেক সময় ছেলেরা তার বৃদ্ধ মাকে বা বাবাকে হাত দিয়ে আঘাত করতেও দেখা যায়। অথচ আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, মাতা -পিতা থেকে ভুলেও যদি কোন শক্ত কথা বের হয়, তদুপরি তাদের নিকট উহ শব্দটি পর্যন্ত উচ্চারণ করবে না। পার্থিব জীবনের জীবনের সামান্য ভোগ বিলাসের মোহে পড়ে বাবা মাকে ভুলে যায়, রেখে আসে বৃদ্ধাশ্রমে।
হযরত আবূ হোরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ঐ ব্যক্তির নাম ধুলায় ধুসরিত হোক, ঐ ব্যক্তির নাম ধুলায় ধুসরিত হোক, ঐ ব্যক্তির নাম ধুলায় হোক(এটি এক প্রকারের বদ -দোয়া)। জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল, কোন ব্যক্তির নাম? উত্তর দিলেন,ঐ ব্যক্তি যে পিতা -মাতাকে বার্ধক্য অবস্থায় পেয়েও জান্নাতে প্রবেশাধিকার লাভ করতে পারল না। (মুসলিম)[মেশকাত-পৃঃ ৪১৮]
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেছেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাঃ) কে জিজ্ঞাস করলাম কোন কাজটা আল্লাহর নিকট বেশী প্রিয়? ( অন্য রেওয়াতে কোন কাজটা উত্তম। তিনি (সাঃ) বললেন,সময় মত নামায আদায় করা। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তারপর কোনটা? হুযুর (সাঃ) বললেন, মাতা -পিতার সাথে সদ্ব্যবহার করা। আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম, তারপর কোনটা? হুযুর (সাঃ) বললেনঃ আল্লাহর পথে জিহাদ করা। [হাদীসটি বুখারী, মুসলিম, তিরযিমী,নাসায়ী বর্ণনা করেছেন ]
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, একদা ব্যক্তি রাসূল (সাঃ) এর নিকটে এসে জিহাদ করার অনুমতি চাইল। রাসূল (সাঃ) এরশাদ করলেন, তোমার মাতা -পিতা জীবিত আছেন কি? সে বলল হ্যাঁ, জীবিত আছে, রাসূল (সাঃ) বললেন-তাদের মধ্যেই জিহাদ কর। (অর্থাৎ তাদের খেদমত লেগে থাক। তাদের খেদমতের জন্য যেই মেহনত, চেষ্টা ও অর্থ ব্যায় করবে তাও এক প্রকার জিহাদ।) অন্য এক বর্ণনায় আছে, রসূল( সাঃ) এরশাদ করলেন- ফিরে যাও এবং মা -বাবার সাথে সদাচরণ কর। এটা তোমার জন্য জেহাদ। (মেশকাত-৩১৩)
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেন, মা -বাবার সাথে সদাচরণকারী সন্তান যখন তাঁদের প্রতি ভক্তির নজরে তাকায় তখন আল্লাহ তার প্রতিটি সুনজরের বিনিময়ে একটি কবুলিয়ত হজ্জের সাওয়াব লিখে দেন। সাহাবীগণ আরজ করলেন, প্রতিদিন যদি একশতবার তাকায় (তা হলে কি এই প্রতিদানই) রাসূল (সাঃ) এরশাদ করলেন -হ্যাঁ আল্লাহ অতি মহান (কাউকে কিছু দিতে চাইলে দিতে পারেন, এতে বাধা দিবার মত কেউ নেই) এবং তিনি অত্যন্ত পবিত্র (তাঁর প্রতি কোন বিষয়ে লোকসান বা কম এর চিন্তা করা জায়েজ নাই)[মেশকাত-৪২২]
হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, হুযুর (সাঃ) এরশাদ করেছেন, "যে ব্যক্তি তার পিতার দিকে কড়া দৃষ্টিতে দেখলো সে তার পিতার সাথে সদাচরণ করল না। "( দূররে মনসুর ৪র্থ খণ্ড -১৭১ পৃঃ)
[এই হাদীসে জানা গেল মা -বাবার দিকে কড়া দৃষ্টিতে দেখাও তাদেরকে কষ্ট দেওয়ার মধ্যে গণ্য। ]
" হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, হুযূর (সাঃ) এরশাদ করেছেন কাবীরা গুনাহ হলো -
(১) আল্লাহর সাথে শিরক করা।
(২) মাতা-পিতার নাফরমানি করা।
(৩) কোন মানুষকে হত্যা করা।(যাকে হত্যা করা শরীয়াত অনুযায়ী বৈধ নহে)।
(৪)মিথ্যা কসম করা।
[ কবীরা গুনাহ অনেক। তার মধ্যে এই হাদীসে সর্ব শ্রেষ্ঠ কবীরা গুনাহ গুলি উল্লেখ করা হয়েছে। হাদীসে শিরকে পরই পিতা মাতার সাথে নাফরমানির বিষয় উল্লেখ্য করেছেন।
পিতা -মাতাকে কোন ধরনের কষ্ট দেওয়া, কথায় কাজে তাঁদের অন্তরকে ব্যথিত করা, আদেশ অমান্য করা, প্রয়োজন সত্তেও তাঁদের জন্য খরচ না করা। এ সবই উকূকের মধ্যে গণ্য।
মহান আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় বস্তুর মধ্যে ঠিক সময়মত নামায আদায় করার পরই পিতা মাতার সাথে সদাচরণের কথা বলা হয়েছে।
ঠিক তখন চাচীর রুম থেকে এক মহিলার স্বর শুনতে পেলাম, মারজিয়া জানস, আজিজুল তার বউয়ের কথা শুনে ওর জায়গায় সব বউয়ের নামে করে দিসে। নতুন জায়গায় কিনে বিরাট বিল্ডিং তোলছে। বউ টা কিমুন, একটাবার শাশুড়ি টার কথা মনে করল না। এই মাটির ঘরেই রেখে গেল।
আমি চাচীর ঘরে ঢুকে বলি, ঐ বউ কি করছে? আপনারা কিছুতে কিছু হলে বউয়ের উপর দোষ দেন কেন? এটা সম্পূর্ণ ভাইয়ার দোষ। তিনি খবর নেন না কেন?
আপুঃ তুই চুপ থাক। চিল্লাস কেন? শুধু আজিজুল ভাইয়া কি সব ভাইয়ারা এক রকম হলো কেমনে?
Collected
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ