------------------------অবুঝ ভালবাসা-------------------------
-------------------১৩তম পর্ব-----------------
সকালে ওরা দুজন ব্যাগ নিয়ে বাস স্ট্যান্ডে যাওয়ার জন্য বের হয়ে যায়। রাস্তায় হঠাৎ রাহুলের একদিকে নজর চলে গেলো। অভিকে বলল,
-অভি ঐদিকে দেখ।
অভি তাকিয়ে দেখলো কিছুটা দূরে একটা লোককে ঘিরে ৫জন লোক দাঁড়িয়ে আছে। দেখেই বুঝে গেলো লোকগুলো হাইজ্যাকার। অভি তাকানোর পর রাহুল আবার বলে,
-লোকটার মনে হয় সাহায্যের প্রয়োজন।
-অবশ্যই সাহায্যের প্রয়োজন। তাড়াতাড়ি চল।
দ্রুত পা চালিয়ে ওরা ঐখানে পৌঁছে যায়। ওদের দেখে লোকগুলো কপাল কুঁচকে তাকালো। অভি বলে,
-এইযে ভাইয়েরা কি করছেন এখানে?
ওদের একজন রেগে উঠে বলে,
-এই কেরে তোরা! আমাদের কাজে বাঁধা দিতে এসেছিস।
-ওহ কাজ করছেন বুঝি! আমরা আবার ভাবলাম আকাম করছেন কিনা। তা আপনাদের কাজটা কী? ওহ বুঝতে পেরেছি, উনার টাকাগুলো নিজের মনে করে নিয়ে নেয়াই বুঝি আপনাদের কাজ?
এইবার লোকটি নাইফ বের করে চোখের সামনে নাড়তে নাড়তে বলে,
-এই চান্দু এত কথা বলিস কেন, যা ভাগ এখান থেকে।
এইবার রাহুল বলে,
-আরে ভাই কোথায় বেশি কথা বললাম। কথা এখনো শুরুই করিনি। বলছিলাম কি, আপনাদের কাজটা কিন্তু খারাপ না। এইসব বড়লোকরা এমনিতে টাকা দান করার ক্ষেত্রে কিপটে হয়। ওদের টাকা এইভাবে কেড়ে নেয়াই উচিৎ। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এইসব কাজ করতে হয় সন্ধ্যার পর, অন্ধকারে।দিনের আলোতে নয়। এটাই হচ্ছে এই কাজের নিয়ম।
তখন অভি যোগ করে,
-আর তোমরা সেই নিয়ম না মেনেই কাজ শুরু করে দিলে?
-এই তোরা কি বলতে চাস ভেঙ্গে বলতো। আমাদের পক্ষে না বিপক্ষে কথা বলছিস সেটাই বুঝতে পারছি না।
অভি বলে,
-এক কথায় শুনতে চাস?
-হাঁ
-ভালো চাসতো এখান থেকে চুপচাপ চলে যা।
-কি বললি!! ঐ হাঁ করে কি দেখছিস সবাই? এই দুইটাকে বুঝিয়ে দে আমরা কি।
বলা মাত্র সবাই অস্ত্র সহ ওদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। শুরু হল তুমুল মারামারি। মারামারির এক পর্যায়ে নাইফের আঘাত লেগে অভির হাত কেটে রক্ত পড়তে থাকে। তখন রাহুলের রাগ আরো বেড়ে গেলো। এলোপাথাড়ি পিটাইতে শুরু করে। ওর কাছে হার মেনে একসময় হাইজ্যাকাররা পালিয়ে গেলো। অভি এক হাত দিয়ে অন্য হাতের কাটা স্থান ধরে রক্ত আটকাতে চেষ্টা চালাচ্ছে। তবু রক্ত পড়া বন্ধ হচ্ছে না। বেশ খানিকটা কেটে গেছে। রাহুল কাছে এসে তাড়াতাড়ি করে রুমাল দিয়ে বেঁধে দেয়। তখন লোকটিও কাছে এসে বলে,
-আমার জন্য তোমরা কেন ওদের সাথে এইভাবে মারামারি করতে গেলে বাবারা।
তখন অভি বলে,
-আমার আব্বু সবসময় বলেন, তুমি কাউকে সাহায্য করলে আল্লাহ নিজে তোমাকে সাহায্য করবেন। তাই কাউকে সাহায্য করতে গেলে মনে করবে তুমি নিজে নিজেকে সাহায্য করছো।
-কিন্তু এখন যদি তোমাদের কিছু হয়ে যেত! ওরাতো আমার কাছে শুধু মাত্র টাকাটাই চায়। দিয়েই দিতাম টাকাগুলো। কি হবে আমার এত টাকা দিয়ে এইযে আমার এত এত টাকা, কিন্তু আজ আমার কোনো কাজেই আসছে না এইগুলো।
এইবার প্রশ্ন করে রাহুল,
-কেন আঙ্কেল?
-সব উপরওয়ালার খেলা। এখন চলো তোমাকে ডাক্তার দেখাতে হবে। আমার গাড়িতে উঠো।
আঘাতটা বেশ গুরুতর। এখনো রক্ত পড়ছে। তাই ডাক্তারের কাছে যেতেই হবে। না বলার উপায় নেই তাই ওরা আর কথা বাড়ালো না। নীরবে গাড়িতে উঠলো।ডাক্তার ক্ষতস্থানে ঔষধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিলেন। তখন পিছনে একজন নারী কণ্ঠ শুনতে পায় অভি রাহুল। বুঝতে পারে তাদের সাথের লোকটিকে উদ্দেশ্য করেই বলছেন....
-তোমার আসতে এত দেরি হল কেন? ফোনে সেই কখন বললে বেরিয়ে পড়েছ। পথে কোনো সমস্যা হয়নি তো?
-হাঁ পথে আমাকে একদল হাইজ্যাকার পেয়ে যায়। ওরাই আমাকে সাহায্য করেছে।
অভি রাহুলকে দেখিয়ে তিনি বলেন। তখন তারা ডাক্তারের দিকে তাকানো ছিল। এইবার দুজনে একসাথে পিছনে ফিরে তাকায়। মুহূর্তে তাদের মুখে হাসি ফুটে উঠে। চোখের কোণে সুখের জল জমা হয়। কারণ ঐ মহিলাটিই অনামিকার মা আফরোজা চৌধুরী। তারা অনামিকার বাবা শিহাব চৌধুরীকে সাহায্য করেছে। ওরা দুজন একসাথেই বলে উঠে, "আন্টি আপনি!!!"
ওদেরকে দেখে তিনি ভূত দেখার মতো চমকে উঠলেন। তাঁর চোখের কোণেও মুহূর্তের মধ্যে জল জমে গেলো। তবে সেটা সুখের না দুঃখের কিছু বুঝা গেলো না। উনার স্ত্রীকে আন্টি ডাকায় শিহাব চৌধুরী বেশ অবাক হলেন। স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
-তুমি চিনো নাকি?
উনি কোনো ভাবে বললেন,
-ওরাই হচ্ছে অভি রাহুল।
কথাটি শুনে এইবার শিহাব চৌধুরীর সাথে ডাক্তারও অবাক হয়ে গেলো। এতক্ষণ ওদের দেখলেও এই পরিচয় পাওয়ার পর যেন আবার নতুন করে দেখতে হল। ওদের দিকে এইভাবে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে অভি রাহুল বোকা হয়ে যায়। বুঝতে পারে না ওরা, তাদের পরিচয় পেয়ে এত অবাক হওয়ার কি আছে?
হয়তো আফরোজা চৌধুরী ওদের গল্প করেছেন ফিরে এসে। কিন্তু তাই বলে এত অবাক হতে হবে কেন? মনের মধ্যে এইসব প্রশ্ন থাকলেও আপাতত এইসব কিছু জিজ্ঞেস করলো না। অনামিকার কথা জানতে চাইলো রাহুল।
অনামিকার কথা বলতেই স্বামী স্ত্রী দুজনে একসাথে কেঁদে ফেলেন। অভি রাহুল এইবার বুঝতে পারে অনামিকার কিছু একটা হয়েছে। এইজন্য আফরোজা চৌধুরী হাসপাতালে ছিলেন। উনারা দুজন কিছু বলতে পারছিলেন না তাই ডাক্তার বলেন,
-আমার সাথে আসো।
নীরবে সবাই ডাক্তারের পিছু নেয়।একটা রুমের জানালার কাছে দাঁড়িয়ে ডাক্তার বলেন,
-ঐযে অনামিকা।
অভি রাহুল কাচের জানালা দিয়ে রুমের ভিতর দৃষ্টি ফেলতেই চমকে উঠলো। হাসপাতালের বেডে অনামিকা মৃত মানুষের মতো পড়ে আছে। তার শরীরে নানান ধরনের তার বসানো। পাশে কম্পিউটারের মতো যন্ত্রে কিসব লেখা ভাসছে। কি হয়েছে অনামিকার! মাত্র ৭দিন আগেই যে মানুষটাকে সম্পূর্ণ সুস্থ দেখেছিল হঠাৎ করে তার কি এমন হল! ঢাকায় ফেরার পথে কি এক্সিডেন্ট করলো! এক্সিডেন্ট করলে এতদিনে সুস্থ হবে না কেন, তাছাড়া আফরোজা চৌধুরীর কিছুই হল না! তবে কি অনামিকা সুইসাইড করার চেষ্টা করেছিল নাকি? কোনো যুক্তিই কাজে লাগছে না অভি রাহুলের। অভি কাঁপা কাঁপা স্বরে বলে,
-ওর কি হয়েছে আন্টি?
-চলো কোথাও বসে সবকিছু বলছি।
তারপর সবাই গিয়ে একটা জায়গায় বসে। বসার পর আফরোজা চৌধুরী কথা শুরু করেন,
-আচ্ছা তোমরা হঠাৎ করে আমাদের না জানিয়ে রাঙ্গামাটি থেকে চলে গিয়েছিলে কেন?
-ঐদিন হঠাৎ করেই আম্মু অসুস্থ হয়ে পড়েন। আব্বু ফোন করে রাতের বাসেই ফিরতে বলেন। তখন রাত ছিল তাই আর আপনাদের সাথে দেখা করতে পারিনি। তবে ব্যাপারটা জানিয়ে একটা কাগজে লিখে রিসিভসনের খলিল ভাইকে দিয়ে গিয়েছিলাম। আমার মোবাইল নাম্বারও ছিল সেখানে। কিন্তু ভাগ্যটা আমাদের সাথে ছিল না। সকালে উনার অন্য জায়গায় কাজ ছিল বলে হোটেলে বিকেলে এসে জানতে পারেন আপনারা সকালেই চলে গেছেন।ঢাকা শহরে কভে এলে! আর এসেছ যখন তবে আমাদের বাসায় যাওনি কেন?
-আপনাদের বাসার খুঁজেই ঢাকা আসা। কিন্তু আপনার দেয়া ঠিকানাটা হারিয়ে ফেলেছি। গত দুইদিন আপনাদের খুঁজে বেরিয়েছি। তারপরে বুঝতে পারলাম ঢাকা শহরে ঠিকানা ছাড়া কাউকে খোঁজে পাওয়া সম্ভব না, তাই আজকে চলে যাচ্ছিলাম। এখন বলেন কি হয়েছিল?
আফরোজা চৌধুরী বলতে শুরু করেন--- "যে রাতে তোমরা চলে গিয়েছিলে সেই রাতেই আমরাও ঠিক করি পরেরদিন চলে যাবো। তাই পরেরদিন সকালে সবকিছু গাড়িতে নেয়ার পর তোমাদের থেকে বিদায় নিতে গেলাম.....
-আম্মু দরজা লক করা। বেল বাজিয়েও তো কাজ হল না।
-মনে হয় ঘুরতে চলে গেছে।
-তাহলে এখন কি করবে?
-কি আর করার আছে। এতদিন একসাথে ঘুরে বেড়ালাম আর চলে যাওয়ার সময় ওদের সাথে দেখা হল না এতদিন সাথে ঘুরলাম অথচ মোবাইল নাম্বার রাখা হল না।
তারপর রিসিভসনে গিয়ে বলেন,
-৫৮ নাম্বার রুমের ওরা বাইরে থেকে ফিরলে জানিয়ে দিও যে আমরা চলে গেছি। এতদিন একসাথে ঘুরলাম অথচ যাওয়ার সময় দেখা হল না। ওরা মনে হয় বাইরে ঘুরতে বেরিয়েছে।
-ম্যাডাম আপনি হয়তো ভুল করছেন। ঐ রুমের ছেলে দুইজন কাল রাতেই চলে গেছেন।
-বলেন কি! ওদের নাম অভি ও রাহুল?
-জ্বী ম্যাডাম,উনারা দুই বন্ধু ছিলেন।
কথাটি শুনে আফরোজা চৌধুরী বেশ অবাক হলেন। হঠাৎ করেই চলে গেলো! একবার বলেও গেলো না। অনামিকা অবশ্য তেমন অবাক হল না। কারণ তার মনে হচ্ছে কাল যে সে রাহুলকে ফিরিয়ে দিয়েছে এইজন্য খুব কষ্ট পেয়েছে আর তার কাছ থেকে দূরে পালিয়েছে। অনামিকা মনে মনে বলে, "আমায় ক্ষমা করে দিও রাহুল। অভি তার বন্ধুত্বের জন্য তার ভালবাসা বিসর্জন দিতে পারলেও আমি পারিনি আমার ভালবাসার মানুষটিকে ভুলে তোমার হাত ধরতে।
অনামিকারা যখন বাসায় পৌঁছে তখন বিকেল ৪টা বাজে। অনামিকার বাবা শিহাব চৌধুরী ওরা বাসায় পৌঁছানোর আগেই বাসায় চলে আসেন। অনেকদিন পর আদরের মেয়েকে দেখবেন তাই অফিস ফেলে বাসায় এসে ওর জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। এই কয়টা দিন তার খুব কষ্টে গেছে। অফিসে কাজের ব্যস্ততায় কেটে যায় সময়। তবে বাসায় ফিরে মেয়েকে দেখতে না পেয়ে মন খারাপ হত।
অনামিকা গাড়ি থেকে নেমেই তার বাবাকে দেখা মাত্রই দৌড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে। এই কান্না কি শুধু বাবাকে এতদিন দেখতে না পাওয়ার জন্য! এতক্ষণ ধরে যে সে মনের মধ্যে কষ্ট ধরে রেখেছিল, শুধু গাড়িতে ওর মা ছিলেন বলে কান্না করতে পারেনি। এখন সুযোগ পেয়ে ওর মনের সকল কষ্ট যেন ওর চোখের জলে ভাসিয়ে দিবে।
-তুমি কেমন আছো আব্বু।
-তোকে ছাড়া ভালো থাকি কি করে বল! কিন্তু তোর এই অবস্থা কেন! খাওয়াদাওয়া করিসনি একদম, তাই না?
-আমি ঠিক আছি আব্বু।
-কিছুই ঠিক নেই। মুখটা একেবারে শুকিয়ে গেছে। চোখের নিচে কালো দাগ দেখা যাচ্ছে, ঠিকমতো ঘুমাতেও পারিসনি।
-হঠাৎ অচেনা জায়গায় গেছি, তাই ভালো ঘুম হয়নি।
এই পর্যায়ে আফরোজা চৌধুরী বলেন,
-মেয়ের প্রতি তোমার এই ভালবাসা দেখে আমার মাঝেমাঝে খুব ভয় হয়।
-একটাই মাত্র মেয়ে আমার। ওকে ভালবাসবো না তো কাকে ভালবাসবো! আর কিসের ভয় হয় তোমার?
-অনামিকাকে বিয়ে দেয়ার পর কিভাবে থাকবে এটা ভেবে।
অনামিকা বলে,
-আম্মু আমি কখনো বিয়ে করবো না। সারাজীবন তোমাদের কাছে থাকবো।
শিহাব চৌধুরী বলেন,
-তা কি হয়রে মা! জীবনে একবার না একবার বিয়ে করতেই হয়। তবে তুই চিন্তা করিস না। দরকার হলে কাউকে ঘরজামাই করে রেখে দিবো। তবু তোকে দূরে যেতে দিবো না।
-আব্বু আমি বলেছি না কোনোদিন বিয়ে করবো না।
রাগ দেখিয়ে চলে যায় তার রুমে। আর তার বাবা মা তার এই রাগ দেখে হেসে ফেলেন।সন্ধ্যার পর অনামিকা তার রুমে শুয়ে আছে। ওর খুব মাথা ব্যথা শুরু হইছে। তবু তেমন পাত্তা দিলো না। এইরকম প্রায় হয়ে থাকে। কিছুক্ষণ পরেই ঠিক হয়ে যাবে। শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলো অভি রাহুলের কথা। এখন সে অভির প্রতিটি রহস্যময় কথার মানে বুঝতে পারে। কিন্তু একটি বিষয় সে এখনো বুঝতে পারলো না। প্রেম নামের বস্তুটি কি করে তার মধ্যে প্রভাব বিস্তার করলো! সে কখন অভির প্রেমে পড়লো! আর কেনই বা এত ভালবাসলো? ওরা কিছু না বলেই কেন চলে গেলো! হয়তো রাহুল কষ্ট পেয়েছে অনেক। তাই তার থেকে দূরে চলে গেছে। অনামিকা আফসোস করে, "রাহুল কেন তুমি আমাকে বুঝতে চেষ্টা করলে না! তুমি চাইলে বন্ধু হয়ে সবসময় তোমার পাশে থাকতাম।"
অনামিকা বুঝতে পারছে আজকের মাথা ব্যথা ছাড়ার কোনো লক্ষণ নেই। উল্টো বাড়তেই লাগলো। কিছুক্ষণের মধ্যে সেটা অসহ্যকর হয়ে গেলো। সে শুয়া থেকে উঠে দাঁড়ালো। তারপর তার মায়ের রুমের দিকে যেতে লাগলো। তাকে দেখে তার মা বলেন,
-অনামিকা কি হয়েছে তোর? তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন?
অনামিকা কিছুই বলতে পারেনা। মাথা ঘুরে মেঝেতে পড়ে যায়। আফরোজা চৌধুরী চিৎকার দিয়ে ছুটে আসেন। ফোন করে এ্যাম্বুলেন্স আনা হল। অজ্ঞান অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেয়া হল। শিহাব চৌধুরী খবর পেয়ে ছুটে যান হাসপাতালে।
হাসপাতালে নেয়ার পর ডাক্তার আকরাম অনামিকাকে প্রাথমিক পরীক্ষা করেন। তারপর কিছু টেস্ট লিখে দেন। এইগুলা করতে হবে। তারপর তিনি তার চেম্বারে চলে যান। তার পিছুপিছু অনামিকার মা-বাবাও যান। ডাক্তারের মলিন মুখ দেখে তারা ভয় পেয়ে যান।
শিহাব চৌধুরী বলেন,
-ডাক্তার কী হয়েছে অনামিকার?
-টেস্টগুলো না করিয়ে বলা যাচ্ছে না। তবে এতটুকু বলতে পারছি গত কয়দিন অনামিকা খুব বেশি মানুষিক চাপের মধ্যে ছিল।
-এইসব কি বলছ ডাক্তার? অনামিকা সবসময় হাসিখুশি থাকে। খুবই প্রাণবন্ত একটি মেয়ে। সে কিসের মানুষিক চাপে থাকবে! তাছাড়া সে গত কিছুদিন রাঙ্গামাটি ছিল।
-তোমাদের ফ্যামিলি ডাক্তার হিসেবে সবকিছু জানি বলেই আমি এত অবাক হচ্ছি। কি নিয়ে ওর এত মানুষিক চাপ ছিল! আচ্ছা ভাবী আপনি বলেন তো গত কয়দিন অনামিকাকে কেমন দেখেছেন?
-রাঙ্গামাটিতে যাওয়ার পর থেকে ওর অনেক পরিবর্তন এসেছে। আগের মতো এত কথা বলে না। সবসময় নীরব থেকে কিছু একটা যেন ভাবতে থাকে। আমি ভাবলাম হয়তো বড় হচ্ছে বলে আগের মতো এত কথা বলে না।
(চলবে)........................
অাগামী ল্পঃ অবুঝ ভালবাসা
~~~~13তম পর্ব
সকালে ওরা দুজন ব্যাগ নিয়ে বাস স্ট্যান্ডে যাওয়ার জন্য বের হয়ে যায়। রাস্তায় হঠাৎ রাহুলের একদিকে নজর চলে গেলো। অভিকে বলল,
-অভি ঐদিকে দেখ।
অভি তাকিয়ে দেখলো কিছুটা দূরে একটা লোককে ঘিরে ৫জন লোক দাঁড়িয়ে আছে। দেখেই বুঝে গেলো লোকগুলো হাইজ্যাকার। অভি তাকানোর পর রাহুল আবার বলে,
-লোকটার মনে হয় সাহায্যের প্রয়োজন।
-অবশ্যই সাহায্যের প্রয়োজন। তাড়াতাড়ি চল।
দ্রুত পা চালিয়ে ওরা ঐখানে পৌঁছে যায়। ওদের দেখে লোকগুলো কপাল কুঁচকে তাকালো। অভি বলে,
-এইযে ভাইয়েরা কি করছেন এখানে?
ওদের একজন রেগে উঠে বলে,
-এই কেরে তোরা! আমাদের কাজে বাঁধা দিতে এসেছিস।
-ওহ কাজ করছেন বুঝি! আমরা আবার ভাবলাম আকাম করছেন কিনা। তা আপনাদের কাজটা কী? ওহ বুঝতে পেরেছি, উনার টাকাগুলো নিজের মনে করে নিয়ে নেয়াই বুঝি আপনাদের কাজ?
এইবার লোকটি নাইফ বের করে চোখের সামনে নাড়তে নাড়তে বলে,
-এই চান্দু এত কথা বলিস কেন, যা ভাগ এখান থেকে।
এইবার রাহুল বলে,
-আরে ভাই কোথায় বেশি কথা বললাম। কথা এখনো শুরুই করিনি। বলছিলাম কি, আপনাদের কাজটা কিন্তু খারাপ না। এইসব বড়লোকরা এমনিতে টাকা দান করার ক্ষেত্রে কিপটে হয়। ওদের টাকা এইভাবে কেড়ে নেয়াই উচিৎ। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এইসব কাজ করতে হয় সন্ধ্যার পর, অন্ধকারে।দিনের আলোতে নয়। এটাই হচ্ছে এই কাজের নিয়ম।
তখন অভি যোগ করে,
-আর তোমরা সেই নিয়ম না মেনেই কাজ শুরু করে দিলে?
-এই তোরা কি বলতে চাস ভেঙ্গে বলতো। আমাদের পক্ষে না বিপক্ষে কথা বলছিস সেটাই বুঝতে পারছি না।
অভি বলে,
-এক কথায় শুনতে চাস?
-হাঁ
-ভালো চাসতো এখান থেকে চুপচাপ চলে যা।
-কি বললি!! ঐ হাঁ করে কি দেখছিস সবাই? এই দুইটাকে বুঝিয়ে দে আমরা কি।
বলা মাত্র সবাই অস্ত্র সহ ওদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। শুরু হল তুমুল মারামারি। মারামারির এক পর্যায়ে নাইফের আঘাত লেগে অভির হাত কেটে রক্ত পড়তে থাকে। তখন রাহুলের রাগ আরো বেড়ে গেলো। এলোপাথাড়ি পিটাইতে শুরু করে। ওর কাছে হার মেনে একসময় হাইজ্যাকাররা পালিয়ে গেলো। অভি এক হাত দিয়ে অন্য হাতের কাটা স্থান ধরে রক্ত আটকাতে চেষ্টা চালাচ্ছে। তবু রক্ত পড়া বন্ধ হচ্ছে না। বেশ খানিকটা কেটে গেছে। রাহুল কাছে এসে তাড়াতাড়ি করে রুমাল দিয়ে বেঁধে দেয়। তখন লোকটিও কাছে এসে বলে,
-আমার জন্য তোমরা কেন ওদের সাথে এইভাবে মারামারি করতে গেলে বাবারা।
তখন অভি বলে,
-আমার আব্বু সবসময় বলেন, তুমি কাউকে সাহায্য করলে আল্লাহ নিজে তোমাকে সাহায্য করবেন। তাই কাউকে সাহায্য করতে গেলে মনে করবে তুমি নিজে নিজেকে সাহায্য করছো।
-কিন্তু এখন যদি তোমাদের কিছু হয়ে যেত! ওরাতো আমার কাছে শুধু মাত্র টাকাটাই চায়। দিয়েই দিতাম টাকাগুলো। কি হবে আমার এত টাকা দিয়ে এইযে আমার এত এত টাকা, কিন্তু আজ আমার কোনো কাজেই আসছে না এইগুলো।
এইবার প্রশ্ন করে রাহুল,
-কেন আঙ্কেল?
-সব উপরওয়ালার খেলা। এখন চলো তোমাকে ডাক্তার দেখাতে হবে। আমার গাড়িতে উঠো।
আঘাতটা বেশ গুরুতর। এখনো রক্ত পড়ছে। তাই ডাক্তারের কাছে যেতেই হবে। না বলার উপায় নেই তাই ওরা আর কথা বাড়ালো না। নীরবে গাড়িতে উঠলো।ডাক্তার ক্ষতস্থানে ঔষধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিলেন। তখন পিছনে একজন নারী কণ্ঠ শুনতে পায় অভি রাহুল। বুঝতে পারে তাদের সাথের লোকটিকে উদ্দেশ্য করেই বলছেন....
-তোমার আসতে এত দেরি হল কেন? ফোনে সেই কখন বললে বেরিয়ে পড়েছ। পথে কোনো সমস্যা হয়নি তো?
-হাঁ পথে আমাকে একদল হাইজ্যাকার পেয়ে যায়। ওরাই আমাকে সাহায্য করেছে।
অভি রাহুলকে দেখিয়ে তিনি বলেন। তখন তারা ডাক্তারের দিকে তাকানো ছিল। এইবার দুজনে একসাথে পিছনে ফিরে তাকায়। মুহূর্তে তাদের মুখে হাসি ফুটে উঠে। চোখের কোণে সুখের জল জমা হয়। কারণ ঐ মহিলাটিই অনামিকার মা আফরোজা চৌধুরী। তারা অনামিকার বাবা শিহাব চৌধুরীকে সাহায্য করেছে। ওরা দুজন একসাথেই বলে উঠে, "আন্টি আপনি!!!"
ওদেরকে দেখে তিনি ভূত দেখার মতো চমকে উঠলেন। তাঁর চোখের কোণেও মুহূর্তের মধ্যে জল জমে গেলো। তবে সেটা সুখের না দুঃখের কিছু বুঝা গেলো না। উনার স্ত্রীকে আন্টি ডাকায় শিহাব চৌধুরী বেশ অবাক হলেন। স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
-তুমি চিনো নাকি?
উনি কোনো ভাবে বললেন,
-ওরাই হচ্ছে অভি রাহুল।
কথাটি শুনে এইবার শিহাব চৌধুরীর সাথে ডাক্তারও অবাক হয়ে গেলো। এতক্ষণ ওদের দেখলেও এই পরিচয় পাওয়ার পর যেন আবার নতুন করে দেখতে হল। ওদের দিকে এইভাবে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে অভি রাহুল বোকা হয়ে যায়। বুঝতে পারে না ওরা, তাদের পরিচয় পেয়ে এত অবাক হওয়ার কি আছে?
হয়তো আফরোজা চৌধুরী ওদের গল্প করেছেন ফিরে এসে। কিন্তু তাই বলে এত অবাক হতে হবে কেন? মনের মধ্যে এইসব প্রশ্ন থাকলেও আপাতত এইসব কিছু জিজ্ঞেস করলো না। অনামিকার কথা জানতে চাইলো রাহুল।
অনামিকার কথা বলতেই স্বামী স্ত্রী দুজনে একসাথে কেঁদে ফেলেন। অভি রাহুল এইবার বুঝতে পারে অনামিকার কিছু একটা হয়েছে। এইজন্য আফরোজা চৌধুরী হাসপাতালে ছিলেন। উনারা দুজন কিছু বলতে পারছিলেন না তাই ডাক্তার বলেন,
-আমার সাথে আসো।
নীরবে সবাই ডাক্তারের পিছু নেয়।একটা রুমের জানালার কাছে দাঁড়িয়ে ডাক্তার বলেন,
-ঐযে অনামিকা।
অভি রাহুল কাচের জানালা দিয়ে রুমের ভিতর দৃষ্টি ফেলতেই চমকে উঠলো। হাসপাতালের বেডে অনামিকা মৃত মানুষের মতো পড়ে আছে। তার শরীরে নানান ধরনের তার বসানো। পাশে কম্পিউটারের মতো যন্ত্রে কিসব লেখা ভাসছে। কি হয়েছে অনামিকার! মাত্র ৭দিন আগেই যে মানুষটাকে সম্পূর্ণ সুস্থ দেখেছিল হঠাৎ করে তার কি এমন হল! ঢাকায় ফেরার পথে কি এক্সিডেন্ট করলো! এক্সিডেন্ট করলে এতদিনে সুস্থ হবে না কেন, তাছাড়া আফরোজা চৌধুরীর কিছুই হল না! তবে কি অনামিকা সুইসাইড করার চেষ্টা করেছিল নাকি? কোনো যুক্তিই কাজে লাগছে না অভি রাহুলের। অভি কাঁপা কাঁপা স্বরে বলে,
-ওর কি হয়েছে আন্টি?
-চলো কোথাও বসে সবকিছু বলছি।
তারপর সবাই গিয়ে একটা জায়গায় বসে। বসার পর আফরোজা চৌধুরী কথা শুরু করেন,
-আচ্ছা তোমরা হঠাৎ করে আমাদের না জানিয়ে রাঙ্গামাটি থেকে চলে গিয়েছিলে কেন?
-ঐদিন হঠাৎ করেই আম্মু অসুস্থ হয়ে পড়েন। আব্বু ফোন করে রাতের বাসেই ফিরতে বলেন। তখন রাত ছিল তাই আর আপনাদের সাথে দেখা করতে পারিনি। তবে ব্যাপারটা জানিয়ে একটা কাগজে লিখে রিসিভসনের খলিল ভাইকে দিয়ে গিয়েছিলাম। আমার মোবাইল নাম্বারও ছিল সেখানে। কিন্তু ভাগ্যটা আমাদের সাথে ছিল না। সকালে উনার অন্য জায়গায় কাজ ছিল বলে হোটেলে বিকেলে এসে জানতে পারেন আপনারা সকালেই চলে গেছেন।ঢাকা শহরে কভে এলে! আর এসেছ যখন তবে আমাদের বাসায় যাওনি কেন?
-আপনাদের বাসার খুঁজেই ঢাকা আসা। কিন্তু আপনার দেয়া ঠিকানাটা হারিয়ে ফেলেছি। গত দুইদিন আপনাদের খুঁজে বেরিয়েছি। তারপরে বুঝতে পারলাম ঢাকা শহরে ঠিকানা ছাড়া কাউকে খোঁজে পাওয়া সম্ভব না, তাই আজকে চলে যাচ্ছিলাম। এখন বলেন কি হয়েছিল?
আফরোজা চৌধুরী বলতে শুরু করেন--- "যে রাতে তোমরা চলে গিয়েছিলে সেই রাতেই আমরাও ঠিক করি পরেরদিন চলে যাবো। তাই পরেরদিন সকালে সবকিছু গাড়িতে নেয়ার পর তোমাদের থেকে বিদায় নিতে গেলাম.....
-আম্মু দরজা লক করা। বেল বাজিয়েও তো কাজ হল না।
-মনে হয় ঘুরতে চলে গেছে।
-তাহলে এখন কি করবে?
-কি আর করার আছে। এতদিন একসাথে ঘুরে বেড়ালাম আর চলে যাওয়ার সময় ওদের সাথে দেখা হল না এতদিন সাথে ঘুরলাম অথচ মোবাইল নাম্বার রাখা হল না।
তারপর রিসিভসনে গিয়ে বলেন,
-৫৮ নাম্বার রুমের ওরা বাইরে থেকে ফিরলে জানিয়ে দিও যে আমরা চলে গেছি। এতদিন একসাথে ঘুরলাম অথচ যাওয়ার সময় দেখা হল না। ওরা মনে হয় বাইরে ঘুরতে বেরিয়েছে।
-ম্যাডাম আপনি হয়তো ভুল করছেন। ঐ রুমের ছেলে দুইজন কাল রাতেই চলে গেছেন।
-বলেন কি! ওদের নাম অভি ও রাহুল?
-জ্বী ম্যাডাম,উনারা দুই বন্ধু ছিলেন।
কথাটি শুনে আফরোজা চৌধুরী বেশ অবাক হলেন। হঠাৎ করেই চলে গেলো! একবার বলেও গেলো না। অনামিকা অবশ্য তেমন অবাক হল না। কারণ তার মনে হচ্ছে কাল যে সে রাহুলকে ফিরিয়ে দিয়েছে এইজন্য খুব কষ্ট পেয়েছে আর তার কাছ থেকে দূরে পালিয়েছে। অনামিকা মনে মনে বলে, "আমায় ক্ষমা করে দিও রাহুল। অভি তার বন্ধুত্বের জন্য তার ভালবাসা বিসর্জন দিতে পারলেও আমি পারিনি আমার ভালবাসার মানুষটিকে ভুলে তোমার হাত ধরতে।
অনামিকারা যখন বাসায় পৌঁছে তখন বিকেল ৪টা বাজে। অনামিকার বাবা শিহাব চৌধুরী ওরা বাসায় পৌঁছানোর আগেই বাসায় চলে আসেন। অনেকদিন পর আদরের মেয়েকে দেখবেন তাই অফিস ফেলে বাসায় এসে ওর জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। এই কয়টা দিন তার খুব কষ্টে গেছে। অফিসে কাজের ব্যস্ততায় কেটে যায় সময়। তবে বাসায় ফিরে মেয়েকে দেখতে না পেয়ে মন খারাপ হত।
অনামিকা গাড়ি থেকে নেমেই তার বাবাকে দেখা মাত্রই দৌড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে। এই কান্না কি শুধু বাবাকে এতদিন দেখতে না পাওয়ার জন্য! এতক্ষণ ধরে যে সে মনের মধ্যে কষ্ট ধরে রেখেছিল, শুধু গাড়িতে ওর মা ছিলেন বলে কান্না করতে পারেনি। এখন সুযোগ পেয়ে ওর মনের সকল কষ্ট যেন ওর চোখের জলে ভাসিয়ে দিবে।
-তুমি কেমন আছো আব্বু।
-তোকে ছাড়া ভালো থাকি কি করে বল! কিন্তু তোর এই অবস্থা কেন! খাওয়াদাওয়া করিসনি একদম, তাই না?
-আমি ঠিক আছি আব্বু।
-কিছুই ঠিক নেই। মুখটা একেবারে শুকিয়ে গেছে। চোখের নিচে কালো দাগ দেখা যাচ্ছে, ঠিকমতো ঘুমাতেও পারিসনি।
-হঠাৎ অচেনা জায়গায় গেছি, তাই ভালো ঘুম হয়নি।
এই পর্যায়ে আফরোজা চৌধুরী বলেন,
-মেয়ের প্রতি তোমার এই ভালবাসা দেখে আমার মাঝেমাঝে খুব ভয় হয়।
-একটাই মাত্র মেয়ে আমার। ওকে ভালবাসবো না তো কাকে ভালবাসবো! আর কিসের ভয় হয় তোমার?
-অনামিকাকে বিয়ে দেয়ার পর কিভাবে থাকবে এটা ভেবে।
অনামিকা বলে,
-আম্মু আমি কখনো বিয়ে করবো না। সারাজীবন তোমাদের কাছে থাকবো।
শিহাব চৌধুরী বলেন,
-তা কি হয়রে মা! জীবনে একবার না একবার বিয়ে করতেই হয়। তবে তুই চিন্তা করিস না। দরকার হলে কাউকে ঘরজামাই করে রেখে দিবো। তবু তোকে দূরে যেতে দিবো না।
-আব্বু আমি বলেছি না কোনোদিন বিয়ে করবো না।
রাগ দেখিয়ে চলে যায় তার রুমে। আর তার বাবা মা তার এই রাগ দেখে হেসে ফেলেন।সন্ধ্যার পর অনামিকা তার রুমে শুয়ে আছে। ওর খুব মাথা ব্যথা শুরু হইছে। তবু তেমন পাত্তা দিলো না। এইরকম প্রায় হয়ে থাকে। কিছুক্ষণ পরেই ঠিক হয়ে যাবে। শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলো অভি রাহুলের কথা। এখন সে অভির প্রতিটি রহস্যময় কথার মানে বুঝতে পারে। কিন্তু একটি বিষয় সে এখনো বুঝতে পারলো না। প্রেম নামের বস্তুটি কি করে তার মধ্যে প্রভাব বিস্তার করলো! সে কখন অভির প্রেমে পড়লো! আর কেনই বা এত ভালবাসলো? ওরা কিছু না বলেই কেন চলে গেলো! হয়তো রাহুল কষ্ট পেয়েছে অনেক। তাই তার থেকে দূরে চলে গেছে। অনামিকা আফসোস করে, "রাহুল কেন তুমি আমাকে বুঝতে চেষ্টা করলে না! তুমি চাইলে বন্ধু হয়ে সবসময় তোমার পাশে থাকতাম।"
অনামিকা বুঝতে পারছে আজকের মাথা ব্যথা ছাড়ার কোনো লক্ষণ নেই। উল্টো বাড়তেই লাগলো। কিছুক্ষণের মধ্যে সেটা অসহ্যকর হয়ে গেলো। সে শুয়া থেকে উঠে দাঁড়ালো। তারপর তার মায়ের রুমের দিকে যেতে লাগলো। তাকে দেখে তার মা বলেন,
-অনামিকা কি হয়েছে তোর? তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন?
অনামিকা কিছুই বলতে পারেনা। মাথা ঘুরে মেঝেতে পড়ে যায়। আফরোজা চৌধুরী চিৎকার দিয়ে ছুটে আসেন। ফোন করে এ্যাম্বুলেন্স আনা হল। অজ্ঞান অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেয়া হল। শিহাব চৌধুরী খবর পেয়ে ছুটে যান হাসপাতালে।
হাসপাতালে নেয়ার পর ডাক্তার আকরাম অনামিকাকে প্রাথমিক পরীক্ষা করেন। তারপর কিছু টেস্ট লিখে দেন। এইগুলা করতে হবে। তারপর তিনি তার চেম্বারে চলে যান। তার পিছুপিছু অনামিকার মা-বাবাও যান। ডাক্তারের মলিন মুখ দেখে তারা ভয় পেয়ে যান।
শিহাব চৌধুরী বলেন,
-ডাক্তার কী হয়েছে অনামিকার?
-টেস্টগুলো না করিয়ে বলা যাচ্ছে না। তবে এতটুকু বলতে পারছি গত কয়দিন অনামিকা খুব বেশি মানুষিক চাপের মধ্যে ছিল।
-এইসব কি বলছ ডাক্তার? অনামিকা সবসময় হাসিখুশি থাকে। খুবই প্রাণবন্ত একটি মেয়ে। সে কিসের মানুষিক চাপে থাকবে! তাছাড়া সে গত কিছুদিন রাঙ্গামাটি ছিল।
-তোমাদের ফ্যামিলি ডাক্তার হিসেবে সবকিছু জানি বলেই আমি এত অবাক হচ্ছি। কি নিয়ে ওর এত মানুষিক চাপ ছিল! আচ্ছা ভাবী আপনি বলেন তো গত কয়দিন অনামিকাকে কেমন দেখেছেন?
-রাঙ্গামাটিতে যাওয়ার পর থেকে ওর অনেক পরিবর্তন এসেছে। আগের মতো এত কথা বলে না। সবসময় নীরব থেকে কিছু একটা যেন ভাবতে থাকে। আমি ভাবলাম হয়তো বড় হচ্ছে বলে আগের মতো এত কথা বলে না।
(চলবে)........................
------------------------অবুঝ ভালবাসা-------------------------
-------------------((শেষ পর্ব))-----------------
জ্ঞান ফেরার পর অনামিকা দেখতে পায় তার বাবা মা তার দুপাশে বসে আছেন। তাদের দুজনের মুখ মলিন। সে বুঝতে পারে অজ্ঞান অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। তাকে চোখ খুলতে দেখে তার বাবা বলেন,
-এখন কেমন লাগছে তোর?
-বেশ ভালোই।
তিনি মেয়ের মাথায় হাত ভুলিয়ে দিতে লাগলেন। তারপর কমল স্বরে বলেন,
-আচ্ছা বলতো তুই তোর এই পঁচা বাবাকে কতটা ভালবাসিস?
-তুমি পঁচা হবে কেন আব্বু! কে তোমাকে পঁচা বলে, শুধু একবার তার নাম বলো।
-কেউ বলেনি, হয়তো তুই মনে মনে আমাকে পঁচা ভাবিস.....
উনি কথা শেষ করতে পারেন না। তার আগেই অনামিকা বলে উঠে,
-না আব্বু,তোমাকে আমি পঁচা মনে করতে পারি না। আমি তোমাকে অনেক অনেক বেশি ভালবাসি।
-তাহলে আমার কাছ থেকে অনেককিছুই লুকাচ্ছিস কেন? পঁচা বাবা মনে না করলে আমায় সবকিছু জানাতিস।
-আমি আবার কি লুকাইলাম?
-তোর ডাক্তার আঙ্কেল বলল,তুই নাকি খুব মানুষিক চাপে ছিলি! রাঙ্গামাটি ঘুরতে গিয়ে কেন তুই মানুষিক চাপে থাকবি! তোর কি হয়েছে বলতো মা।
-আমার কিছুই হয়নি আব্বু, তোমরা অনেক ভালবাসো তো তাই শুধু শুধু চিন্তা করছো।
-তবে কি তোর ডাক্তার আঙ্কেল মিথ্যে বলেছে!
এই পর্যায়ে ওর মা কথা বলেন,
-ডাক্তার মিথ্যে বলেনি। অনামিকা কিছু লুকাইবি না,আমি দেখেছি তুই সবসময় চুপ থেকে কিছু চিন্তা করতে। আমি তখন বিষয়টি এতটা সিরিয়াস ভাবে দেখিনি। বল মা কি হয়েছে তোর?
এতকিছু বলার পরও অনামিকা চুপ। কিছুই বলে না। এইবার তিনি আন্দাজ করে বলেন,
-তুই যদি অভি রাহুলের মধ্যে কাউকে পছন্দ করে থাকিস তবে আমাদের বলতে পারিস।
একথা শুনে হঠাৎ করেই অনামিকা কেঁদে ফেলে। তার কান্না দেখে তার মা বুঝে নিলেন এখানেই সমস্যা হয়েছে।
-কাকে ভালবাসিস?
-অভিকে।
-বলেছিস?
-না।
-না কেন! না বললে সে জানবে কি করে?
-অভি সব জানে আম্মু। আর আমি জানি অভিও আমাকে অনেক ভালবাসে।
-তাহলে সমস্যা কোথায়! কিছুই তো বুঝতে পারছি না।
-রাহুল আমাকে ভালবাসে, আর এইজন্য অভি তার বন্ধুর কথা ভেবে নিজের ভালবাসা প্রকাশ করেনি।
এতক্ষণ ধরে এই অভি রাহুলের কথা শুনে শিহাব চৌধুরী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেন কে এই অভি রাহুল! আফরোজা চৌধুরী সবকথা খুলে বলেন। তখনো অনামিকা কান্না করে যাচ্ছে।
আফরোজা চৌধুরী আবার বলেন,
-তুই তো রাহুলকে সবকিছু খুলে বলতে পারতি!
-কি করে বলতাম! একটা ছেলে আমাকে ভালবাসে। তার ভালবাসার কথা জানাতে এসেছে। তখন আমি কি করে তাকে বলবো, আমি তাকে নয়,তার বন্ধুকে ভালবাসি!
শিহাব চৌধুরী মেয়েকে শান্ত করতে বলেন,
-তুই কান্না থামা মা। আগে তুই সুস্থ হয়ে নে। তারপর তোকে নিয়ে আমি নিজে সিলেট যাবো ওদের খোঁজে বের করে সবকিছু ঠিক করে দিতে।অনামিকা বুঝতেই পারে এটা সান্তনা বাণী মাত্র।
পরেরদিন বিকেলবেলা অনামিকার টেস্টগুলোর রিপোর্ট ডাক্তার হাতে পেলেন। তারপর সেগুলো তিনি বেশ কয়েকবার ভালো করে দেখলেন। পরে অনামিকার মা বাবাকে তার চেম্বারে ডাকেন।
-আমি তোমাদের ফ্যামিলি সম্পর্কে সবকিছুই জানি। তোমরা দুজন অনামিকাকে কতটা ভালবাসো তাও জানি। তাই ভেবে পাচ্ছি না কথাটি তোমাদের কিভাবে জানাই।।
ডাক্তারের এমন কথা শুনলে যেকেউ ভয় পেয়ে যেতে বাধ্য। ওদের দুজনের মুখ শুকিয়ে গেলো ভয়ে।
-কি হয়েছে আমার মেয়ের! বলো ডাক্তার?
-অনামিকার ব্রেইন টিউমার।
ডাক্তারের কথাটি শুনে তাদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। দুজনেই একসাথে বলে উঠে।
-কি বললে ডাক্তার!! অনামিকার ব্রেইন টিউমার?
-হ্যাঁ।
-তুমি ভুল দেখেছো ডাক্তার। আবার ভালো করে দেখো। আমার মেয়ের এমন ভয়ঙ্কর অসুখ হতেই পারে না।
-ভুল হলেই আমি খুশি হতাম মিটার চৌধুরী। এটা আমিও মেনে নিতে পারছি না। প্রথমে দেখে আমি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারিনি। পরে আরো কয়েকবার ভালো করে দেখেছি।
ওরা দুজন কান্না শুরু করে দিয়েছেন এরমধ্যেই। ডাক্তার আবার বলেন,
-অনামিকার মাঝে রোগটা অনেক আগে থেকেই বাসা বেঁধেছে। ধীরে ধীরে সেটা অনামিকাকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ব্রেইন টিউমার হলে শুরুর দিকে কয়েকটা লক্ষণ দেখা দেয়। যেমন তীব্র মাথা ব্যথা, চোখে ঝাপসা দেখা,শরীরে দুর্বলতা এইরকম কিছু লক্ষণ আছে। অনামিকার মাঝে এইগুলা কি কখনো লক্ষণ করোনি এতদিনে?
-অনামিকা কখনো বলেনি এইরকম কিছু। তবে রাঙ্গামাটিতে বেশ কয়বার বলেছিল ওর মাথা ব্যথা করছে। ঔষধ নেয়ার কথা বললে সে মানা করতো। আমি ভেবেছি হয়তো রৌদ্রে ঘুরাঘুরি করার জন্য এমন হত।
ডাক্তার আকরাম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন,
-অনামিকার সময় একদম শেষের দিকে চলে এসেছে।
-এটার কি কোনো উন্নত চিকিৎসা নেই ডাক্তার?
-অসুখটার শুরুর দিকে ধরা পড়লে চিকিৎসা করে সুস্থ করা যেতো। এখন আর মেডিকেল সায়ন্সের কিছুই করার নেই। তবে তোমরা চাইলে সান্তনা হিসেবে বিদেশে নিয়ে যেতে পারো। কিন্তু বাঁচানোর সম্ভাবনা অতি সামান্য। বলতে গেলে ১% চান্স আছে।
-তাও আমি অনামিকাকে বিদেশে নিয়েই চিকিৎসা করাবো। খোদা চায় তো এই ১% চান্স ১০০% হয়ে যেতে পারে। ডাক্তার তুমি সব কাগজপত্র ঠিক করো।
-না আব্বু আমি কোথাও যাবো না।
দরজার পাশে দাঁড়িয়ে কথাটি বলে অনামিকা। ওর কথা শুনে সবাই চমকে উঠেন। অনামিকা রুমের ভিতরে এসে আবার বলে,
-আমি তোমাদের সবকথা শুনেছি। আমার সময় শেষ হয়ে গেছে। এই পৃথিবীকে এখন বিদায় জানাতে হবে।
-একদম উল্টাপাল্টা কথা বলবি না, বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করলে তুই আবার আগের মতো সুস্থ হয়ে উঠবি।
-আমি যাবো বলেছি মানে যাবো না। আমি ভালো ভাবেই বুঝতে পারছি আর মাত্র কয়টা দিন বাঁচবো। আর এই কয়দিন আমি এখানেই থাকতে চাই।
তখন আফরোজা চৌধুরী বলেন,
-দেখ মা, তোকে তো আমরা একা একা বিদেশ পাঠাচ্ছি না। তোর সাথে সবসময় আমরা দুজন থাকবো। তবে তোর বিদেশ যেতে অসুবিধা কোথায়?
-অসুবিধা আছে আম্মু।
-অসুবিধাটা কি সেটাই জানতে চাইলাম। বল কি অসুবিধা?
-বিদেশে গেলে অভির সাথে আর দেখা হবে না। মরার আগে আমি একবার হলেও তাকে দেখতে চাই।
-এখানে থাকলেই কি দেখা হবে? কোথায় থাকে জানিনা। সিলেট গিয়ে তাকে কোথায় খুঁজবো? অনেক সময় লাগবে খুঁজতে গেলে।
-আমার মনে হচ্ছে অভি আসবে। অবশ্যই আসবে সে। মরার আগে সে একবারের জন্য হলেও আমাকে দেখা দিবে।
ওর মা এই কথা শুনে রেগে যান।-এটা শুধুই তোর মনের ইচ্ছে। কিন্তু এইরকম কিছুই হবে না। তুই নিজেই বললি অভি তার বন্ধুর জন্য ভালবাসা প্রকাশ করেনি। তাহলে সে এখানে আসবে কেন?
আফরোজা চৌধুরী অনামিকার এই অন্যায় আবদারে রেগে গেলেও শিহাব চৌধুরী ভালবাসার সহিত বুঝানোর চেষ্টা করেন।
-অনামিকা মা আমার। তোকে আগেও বলেছি এখন আবারো বলছি, আমি আর তুই একসাথে সিলেট গিয়ে অভিকে খুঁজে বের করবো। তার আগে তোকে সুস্থ হয়ে উঠতে হবে। তুই বিদেশে যেতে আর মানা করিস না।
-বিদেশ থেকে আমি সুস্থ হয়ে আসবো না আব্বু। বিদেশ থেকে আসবে আমার অতৃপ্ত আত্মার লাশ। অভিকে শেষ বারের মতো দেখতে না পাওয়ার অতৃপ্তি নিয়ে মরতে হবে আমাকে।
-দেখ মা, তুই আমাদের একমাত্র সন্তান। তুই ছাড়া আর কি আছে আমাদের? তোর যদি কিছু হয়ে যায় তবে আমাদের কি হবে একবার ভেবে দেখেছিস? একটা ছেলের জন্য তুই তোর বাবা মাকে কষ্টের সাগরে ডুবাতে চাস?
-উপর থেকে একজন ঠিক করেই ফেলেছেন আমাকে তোমাদের কাছ থেকে কেড়ে তার কাছে নিয়ে যাবে। এখন পৃথিবীর এমন কোনো চিকিৎসালয় নেই যেখানে নিয়ে গেলে আমি ভালো হয়ে যাবো। তারচেয়ে বরং আমার শেষ ইচ্ছেটা পূরণ হতে দাও আব্বু। ছোটবেলা থেকে আমার প্রতিটি চাওয়া তুমি পূরণ করেছো। তোমার কাছে এটাই আমার শেষ চাওয়া,পূরণ করবে না?
সবকিছু বলে থামলেন আফরোজা চৌধুরী। তার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে। অভি রাহুল ও চোখের অশ্রু সামলাতে পারলো না। শিহাব চৌধুরী বলেন,
-আমরা অনামিকাকে কতভাবে বুঝিয়েছি। কিছুতেই রাজি করাতে পারলাম না।
ডাক্তার আকরাম যোগ করেন,
-কাল রাতে হঠাৎ করেই কোমায় চলে গেছে। হয়তো সেখান থেকে আর ফিরে আসবে না।
সব শুনার পর অভি চোখ মুছে মনে মনে বলে, "আল্লাহ একি করলে তুমি! আমি বারবার তোমার কাছে চেয়েছি যেন অনামিকাকে খুঁজে পাই। কিন্তু এইভাবে তাকে দেখতে চাইনি। এরচেয়ে ওর সাথে দেখা না হওয়াটাই ভালো ছিল। একদিন তাকে খুঁজে পাবো, এই আশায় বাকী জীবন অপেক্ষা করে যেতাম। এখন এই আশাটাই শেষ করে দিলে! আমি আর কিসের আশায় বেঁচে থাকবো?
এমন সময় একজন নার্স এসে জানায় অনামিকা কোমা থেকে বেরিয়েছে। কথাটি শুনে সবাই পাগলের মতো দৌড় শুরু করে দেয়। অভি দরজার সামনে দাঁড়াতেই অনামিকার চোখে চোখ পড়ে। অনামিকা দরজার দিকেই তাকিয়ে ছিল এতক্ষণ। দুজনার চোখেই অশ্রু খেলা করছে। অভি ধীরে ধীরে ওর দিকে এগিয়ে গেলো। কাছে গিয়ে মেঝেতে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে। দুহাত দিয়ে অনামিকার ডান হাতটি ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
-সর্যি অনামিকা, আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও। অনেক কষ্ট দিয়েছি তোমাকে।
-তোমার প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই। আমার মৃত্যুর আগে একটাই ইচ্ছে ছিল, তোমাকে একটি বারের জন্য দেখবো। তুমি এখানে এসে আমার সেই ইচ্ছে পূরণ করেছ সেজন্য তোমাকে ধন্যবাদ জানাই। তোমাকে শেষবারের মতো দেখার জন্য এবং তোমার সাথে শেষ কথা বলার জন্যই হয়তো আল্লাহু আমাকে শেষ মুহূর্তের জন্য কোমা থেকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। তাঁর দয়ার কোনো তুলনাই হয় না। আর রাহুল তোমায় অনেক কষ্ট দিয়েছি। পারলে আমায় ক্ষমা করে দিও। তোমাদের এই বন্ধুত্ব যেন সবসময় এইরকম থাকে দোয়া করি।
রাহুল বলে,
-দোষ আমার ছিল অনামিকা, আমিই কিছু না জেনে না বুঝে তোমাদের দুজনের মাঝে দেয়াল হয়ে ছিলাম।
-থাক এই শেষ সময়ে এসে এইসব কথা বলে সময় নষ্ট না করি।
অভি বলে,
-কিছুই হবে না তোমার। তুমি আমাদের সবাইকে ছেড়ে এইভাবে চলে যেতে পারো না। বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করালে তুমি অবশ্যই ভালো হয়ে যাবে।-আমার আর সময় নেই অভি। আমার ডাক পড়েছে,আমাকে যেতেই হবে। তবে এই মৃত্যুর সময় এসে নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে। ভালবাসার মানুষগুলোর সামনেই, তাদের দেখতে দেখতে মারা যাবো। আমি জানি তোমরা সবাই আমাকে কতটা ভালবাসো। আব্বু,আম্মু,রাহুল সবাই চোখের সামনেই। তোমার হাত ধরে এই পৃথিবীতে শেষ নিশ্বাস ফেলবো। এইরকম ভাগ্য কয়জনের হয়?
জানো অভি, এই কয়দিন আমি বারবার আল্লাহতালার কাছে একটা প্রার্থনাই করেছি। মৃত্যুর পরেও যেন তোমাকে মনে রাখতে পারি। ঐ জগতে গিয়েও যেন তোমায় ভালবাসতে পারি। এই পৃথিবীতে তোমাকে পেয়েছি মাত্র কিছুদিনের জন্য,সেখানে যেন অনন্তকালের জন্য পাই। আমি আগেই চলে যাচ্ছি ঐ জগতে। তোমার জন্য অপেক্ষায় থাকবো বলে।
অভি কান্না থামাতে পারছে না। কোনোভাবে ভাঙ্গা গলায় বলে,
-তুমি এইভাবে বলোনা প্লিজ,আমাদের কাঁদিয়ে তুমি যেতে পারো না।
-অভি তোমার না বলা কথাটি, মৃত্যুর আগে একটা বার বলবে না? শুনার জন্য যে আমার কান দুটি চাতক পাখির মতো অপেক্ষায় আছে।
-সেই প্রথম দিন, প্রথম দেখাতেই তোমাকে ভালবেসেছিলাম। কিন্তু কখনো বলতে পারিনি। এখন চিৎকার করে তোমাকে বলতে বলতে ইচ্ছে করছে-- আমি তোমাকে ভালবাসি অনামিকা। অনেক বেশিই ভালবাসি তোমাকে।
-আমিও তোমাকে অনেক ভালবাসি অভি......
অভির হাত ধরা অবস্থায় অনামিকা মারা যায়। মুহূর্তের মধ্যেই পুরো ঘর নীরব, নিস্তব্ধ হয়ে গেলো। এই পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণীকে একদিন মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। সবাইকে এই দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে পরপাড়ে যেতে হবে। এই কথাটি সবাই জানে, তবুও মানুষ আপনজনের কোনো মৃত্যুকে স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিতে পারেনা। আর এই মৃত্যুটা তো মেনে নেয়ার মতোও না। এত অল্প বয়সে দুনিয়া ছেড়ে, ভালবাসার মানুষদের ছেড়ে চলে যেতে হল! যে ফুল এখনো ভালো করে ফোঁটে উঠতে পারেনি সেটাই কিনা চিরদিনের জন্য ঝরে গেলো!
এইভাবে একদিন সবাইকে চলে যেতে হবে। সবার মৃত্যু হবে। কিন্তু অবুঝ ভালবাসা গুলোর মৃত্যু নেই।
~~~~~★সমাপ্ত★~~~~~
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ