________আমার বিয়ে_________
লেখক: ShoheL Rana
__________পর্ব:-১১____________
বাসায় এসে আমরা আবারও আগের মতো হয়ে গেলাম। দা-কুমড়ো সম্পর্কটা কোথায় যাবে? একরাতে আমি বেডে শুইলাম, সাবরিনা এসে বলল:
--কি ব্যাপার? আমার জায়গায় কেন তুমি?"
আমি একটু নড়েচড়ে শুয়ে বললাম:
--বহুদিন সোফায় শুইছি,, আজ থেকে তুমি থাকবে সোফায়, আমি বেডে.....
--না, তা হবেনা। তুমি সোফায় থাকবে, আমি থাকতে পারবনা।
--থাকতে না পারলে বাথরুমে চলে যাও....
--তুমি যাও....." বলে সে আমার পাশে শুয়ে পড়ল। তারপর নাক ডাকা শুরু করল। আমি বিরক্ত হয়ে বললাম:
--এভাবে নাক ডাকলে ঘুমাব কেমনে?"
--সোফায় যাও,, তাহলে আর নাক ডাকবনা।"
আমি তার গলাটা হালকা করে চেপে ধরে বললাম:
--তুই এতো দাজ্জাল হলি কেমনে?"
সে হাসতে হাসতে বলল:
--যাও, যাও, সোফায় যাও বাবু....."
বাধ্য হয়ে সোফায় ঘুমাতে হলো আবার।
.
সকালে সাবরিনার ধাক্কায় ঘুম ভাঙলো। আমি চোখ মেলে জিজ্ঞেস করলাম:
--কি হয়েছে?"
সে প্রশ্ন করলো:
--এভাবে ঘুমের মধ্যে হাসতেছ কেন?"
--আরে বলোনা, তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছিলাম একটা।
--ও রিয়েলি, তো কি স্বপ্ন দেখলা?"
বিদ্রূপমার্কা এক হাসি দিয়ে বললাম:
--স্বপ্নে দেখলাম তোমার মাথা ন্যাড়া করে ফুটবল মাঠ বানায়ছি।"
--কি বললা তুমি?" বলেই সে বালিশটা নিয়ে আমার মুখে মারতে লাগল।
আমি তার হাতটা ধরে বললাম:
--মারতেছ কেন? স্বপ্নে এরকম দেখলে আমি কি করব?
--তুমি স্বপ্নে এরকম দেখনি, তুমি মিথ্যে বলছো।
--আরে কি আজব! মিথ্যে বলব কেন? এখন কিভাবে যে প্রমাণ দিই? ঠিক আছে এবার থেকে ঘুমানোর আগে ফোনে ভিডিও চালু করে ঘুমাব.."
--মজা নিচ্ছ?
--না, সিরিয়াসলি......
--তোমাকে আমি খুন করব......"
--যাও, নাস্তা নিয়ে এসো, আমি ফ্রেশ হয়ে আসতেছি....."
--নিজের নাস্তা নিজে গিয়ে খাও....." বলেই রাগ করে চলে গেলো। মনে মনে বললাম, রাতের স্বপ্নটা যদি সত্যি করতে পারতাম, যদি ওর মাথাটা সত্যি সত্যি ন্যাড়া করে দিতে পারতাম!
***
নাস্তা করে বের হতে যাব, হঠাৎ দেখলাম আমার বন্ধু জয় বাসায় আসল। কিছুদিন আগে বিদেশ থেকে ফিরেছে সে। আমার বিয়েতে উপস্থিত থাকতে পারেনি বলে তার অনেক আফসোস। এখন এসেছে আমার বউকে দেখতে।
আমি সাবরিনাকে ডেকে আনলাম রুমে। সে মাথায় ঘোমটা দিয়ে এলো জয়ের সামনে। আমি জয়কে বললাম:
--দোস্ত, এটা আমার লক্ষী বউ, এরকম বউ আর পৃথিবীতে নেই। অনলি এক পিস লক্ষী বউ।"
জয় হেসে বলল:
--তাই নাকি? তো লক্ষী ভাবি ঘোমটাটা একটু সরান....."
সাবরিনা ঘোমটা সরাল।
--মাশাল্লাহ! মাশাল্লাহ!" বলে জয় হেসে উঠল। আমার দিকে তাকিয়ে বলল:
--দোস্ত, তোর কপাল ভালো এমন সুন্দরী বউ পেয়েছিস।"
সাবরিনা হঠাৎ বলে উঠল:
--হ্যা ভাইয়া, উনাকে একটু বলুন, উনি তো সেই কথা মানতেই চাননা....."
--কেন ভাবী?"
--আর বলিয়েননা, আপনার বন্ধুটার মনে হয় আরো মেয়ে বন্ধু আছে, আমার দিকে তেমন খেয়ালই রাখেনা।"
--ইস, রানা তুই এটা অন্যায় করতেছিস ভাবীর সাথে।
--হ্যা ভাইয়া, কিছু বলুন আপনার বন্ধুকে......"
এবার আমি মুখ খুললাম:
--মহামান্য আদালত, এটা আমার বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ মিথ্যে বানোয়াট তথ্য, আমার মনে হয় বাদীপক্ষ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতেছে, নিজের দোষগুলো আমার উপর চাপাচ্ছে।"
জয় বলল:
--সমস্ত সাক্ষ্য প্রমাণ বিবেচনা করে আদালত এই সিদ্ধান্ত নিল যে, দুইপক্ষকে আরো কাছাকাছি আসতে হবে, আরো ঘনিষ্ঠ হতে হবে, পরস্পরকে ভালোবাসতে হবে। অন্যথায় গরম জলে ডুবানো হবে......"
তার কথা শেষ হতেই আমরা একসাথে হেসে উঠলাম তিনজন....."
এরপর আরো কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে জয় বেরিয়ে গেল।
(চলবে..
________আমার বিয়ে_________
লেখক: ShoheL Rana
__________পর্ব:-১২____________
এরপর মাঝেমাঝে জয় আমাদের বাসায় আসতো। সাবরিনার সাথে তার একটা সম্পর্ক হয়ে যায়। ওটা আমার চোখে ভালো লাগেনি। সাবরিনা জয়ের সাথে ফোনে কথা বলতো, এ নিয়ে একদিন তার সাথে ঝগড়া হয় আমার। ওর গায়ে সেদিন হাত তুলেছিলাম আমি। ও সেদিন অনেক কান্না করে। সারাদিন মন খারাপ করে শুয়েছিল রুমে। আমার সাথে বা কারো সাথে কথা বলেনি। খাবারও খাইনি। রাতে তার জন্য খাবার নিয়ে আসলাম আমি রুমে। খাবারগুলো ওর সামনে রেখে বললাম:
--খেয়ে নাও......"
ও চুপচাপ খাবারের দিকে চেয়ে থাকল। খেলনা.....
আমি আর জোর করলামনা, ওর ইচ্ছে হলে খাবে, ইচ্ছে না হলে খাবেনা। আমি সোফায় ঘুমিয়ে পড়লাম।
পরদিন সকালে উঠে দেখলাম খাবারগুলো একইভাবে আছে। আর ও কাঁপতেছে। ওর গায়ে হাত দিয়ে দেখলাম জ্বর এসেছে। আমি ফোন করে তখন ডাক্তার ডাকলাম একজন।
ডাক্তার আসার পর ওকে চেপআপ করল। তারপর ওষুধ লিখে দিল। আমি ওষুধগুলো এনে ওকে খাওয়ালাম।
তখন মা এসে বলল:
--রানা, তোকে তোর বাবা ডাকছে......"
আমি গেলাম বাবার সামনে। বাবা আমাকে বলল:
--রানা, সত্যি করে বলতো বাবা, তুই কি বিয়ের পর সুখী হয়েছিস?"
--কেন বলতো বাবা?"
--তোর মা বলল তোরা নাকি একইরুমে আলাদা থাকিস?"
বাবার কথা শেষ হতেই আমি মায়ের দিকে তাকালাম। মা মুখ নিচু করে ফেলল। তারপর আমি বাবার দিকে তাকিয়ে বললাম:
--বাবা আমি সুখী না, আমাদের মাঝে স্বামীস্ত্রীর কোনো সম্পর্ক নেই। আমার মনে হয় আমরা আলাদা হয়ে গেলে ভালো হবে।"
আমার কথা শুনে বাবা মা দু'জনেই চমকে তাকালো আমার দিকে। আমি মুখ নিচু করে ফেললাম। বাবা কিছুক্ষণ পর বলল:
--ঠিক আছে, আমি একটু ভেবে দেখি। তুই যা......"
আমি চলে এলাম রুমে। সাবরিনা চুপচাপ জানালার পাশে বসে বাইরে তাকিয়েছিল। তাকে এভাবে থাকতে দিয়ে আমি বের হয়ে গেলাম বাইরে। একজন উকিলের সাথে কথা বলতে হবে ডিভোর্সের ব্যাপারে।
***
কয়েকদিন কেটে গেল। একদিন বিকেলবেলা আমি বাহির থেকে ফিরলাম বাসায়। সারাদিন বাহিরে ছিলাম। এতদিন সাবরিনার সাথে আমার তেমন কথা হয়নি। সারাদিন ও মুখ গুমড়ো করে বসে থাকত।
বাহির থেকে আমাকে ফিরতে দেখে সেদিন সাবরিনা আসল আমার কাছে। সেদিন তাকে একটু খুশি খুশি লাগছিল। মনে হয় আমাকে কিছু বলতে চাই। আমি রুমে এসে শার্ট খুললাম। ও আমার কাছ থেকে শার্টটা নিয়ে রেখে দিল। তারপর হাসিমুখে বলল:
--রানা, আমি তোমাকে একটা কথা বলতে চাই......"
আমি বললাম:
--আমিও কিছু কথা বলতে চাই তোমাকে.....একটা গুড নিউজ আছে তোমার জন্য।
--ঠিক আছে বলো, কি গুড নিউজ?
--আগে তুমি বলতে চাইছ বলো?
--না, আগে আমি তোমার গুড নিউজটা শুনতে চাই, তারপর আমার কথা বলব....."
--বেশ....." বলে আমি ডিভোর্সের কাগজটা ওর হাতে ধরায় দিলাম। ও অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল:
--কি এটা?"
--তোমার মুক্তি। ডিভোর্স পেপার। আমি সাইন করে দিছি, এবার তুমি সাইন করে দাও....."
আমার কথা শুনে সাবরিনার মুখটা হঠাৎ মলিন হয়ে যায়। মুখের হাসিটা মিলিয়ে যায়। নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ আমার মুখের দিকে। তারপর অস্ফুটে শব্দ করল:
--ও...."
--নিশ্চয় খুব খুশি হয়েছ?" জিজ্ঞেস করলাম আমি।
ও করুণকণ্ঠে জবাব দিল:
--হ্যা, হয়েছি তো, খুব খুশি হয়েছি।"
--এবার তুমি কি কথা বলবে বলেছিলে যেন? বলো.....
--না থাক, তার আর দরকার নেই......
--ওকে...আর তুমি সাইনটা করে দিও। তারপর চিরমুক্তি পাবে।
--হুমমম, মুক্তি পাবো....." বলার সময় ওর গলাটা কেঁপে উঠল।
আমি আর কিছু না বলে সোফায় শুয়ে পড়লাম। আর ও জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে একদৃষ্টিতে বাইরে তাকিয়ে থাকল। ডিভোর্সের কাগজটা তার হাতেই ছিল। ওকে এভাবে থাকতে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম আমি।
***
ঘুম থেকে উঠতে উঠতে রাত ৯ টা বেজে গেল। ততক্ষণে সাবরিনা তার সব জিনিস গুছিয়ে নিয়েছে। আমাকে জাগতে দেখে সে উঠে দাঁড়ালো। আমি সোফা থেকে নেমে বললাম:
--রেডি হয়ে গেছ?"
সে বলল:
--হুমমম.... ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিছি।"
--এখনই চলে যাবে?"
--হুমমম..... কি করব এখানে আর। আমার তো আর অধিকার নেই এ বাড়িতে।" বড় করুণ শুনালো সাবরিনার কণ্ঠ। কিছুক্ষণ পর সে আবার বলল:
--আমাকে একটু পৌঁছে দিয়ে আসবে আমার বাড়িতে?"
--ওকে, আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।" বলেই আমি বাথরুমে গেলাম ফ্রেশ হতে। আর সে আমার বাবা-মা, আর দাদুর কাছ থেকে বিদায় নিল। বাথরুম থেকেই আমি তার কান্নাজড়িত কণ্ঠ শুনতে পেলাম। হঠাৎ সে এভাবে ভেঙে পড়বে বুঝতে পারনি।
বাথরুম থেকে এসে আমিও রেডি হলাম ওকে বাসায় দিয়ে আসার জন্য। তারপর বের হলাম ওকে নিয়ে। ওর লাগেজটা গাড়িতে তুললাম। ও আমার দাদুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদল কিছুক্ষণ। দাদুর চোখেও জল দেখতে পেলাম। দাদুর হাতে তখন ছাতাটা ছিলনা। অথচ ঐ ছাতাটা সবসময় থাকত দাদুর কাছে। এখন নেই। বুঝলাম দাদুরও অনেক কষ্ট হচ্ছে। এ বাড়িতে সাবরিনাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে আমার দাদু।
সাবরিনা গাড়িতে উঠার আগে শেষবারের মতো একবার তাকালো আমাদের বাড়ির দিকে। চেয়ে চেয়ে দেখল প্রত্যেককে। তারপর চোখমুছে উঠে বসল গাড়ির পেছনের সিটে। আগে যতোবার আমরা গাড়ি করে বের হয়েছি, ও বসেছিল সামনের সিটে, আমার পাশে, আজ বসেছে পেছনে। অধিকার জিনিসটা বোধহয় এরকমই। কয়েক ঘণ্টা আগেও আমার সবকিছুর উপর ওর অধিকার ছিল। ডিভোর্স পেপারে সাইন করার পর সব অধিকার শেষ।
.
সাবরিনার দিকে একবার তাকিয়ে ড্রাইভিং সিটে উঠে বসলাম আমি। তারপর গাড়ি ছেড়ে দিলাম। গাড়ির আয়নাতে ওর চেহারা ভেসে উঠল। দেখলাম ও একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বাইরে। চোখদুটো তার অশ্রুসিক্ত। সে তো মুক্তি চেয়েছে আমার কাছ থেকে। আমি মুক্তি দিয়েছি। তবে এই চোখের জলের কি কারণ হতে পারে? বিয়ের পর থেকে একদিনও আমি তার কাছ থেকে স্বামীর অধিকার পাইনি, তাহলে আজ যখন একেবারেই নিজেকে স্বামীর অধিকার থেকে গুটিয়ে নিলাম, ওর চোখে শ্রাবণ ধারার মতো জল এল কেন? মেয়েদের রহস্য বুঝা বড় কঠিন।
.
সারটা পথ চুপচাপ বাইরে তাকিয়েছিল সাবরিনা। আমার সাথে একটা কথাও বলেনি সে। গাড়ি ওদের বাসার কাছাকাছি পৌছার আগমুহূর্তে সে হঠাৎ আমাকে প্রশ্ন করল:
--তুমি কি আরেকটা বিয়ে করবে?"
আমি জবাব দিলাম:
--নাহ, বিয়ে করে আর ঝামেলায় জড়াতে চাইনা। তুমি কি করবে বলে ভেবছ?"
কিছুক্ষণ চুপ থেকে সে জবাব দিল:
--দেশের বাইরে চলে যাব ভাবছি......
--ওহ......"
তারপর আবারও চুপ থাকলল সে। গাড়ি ওদের বাসার সমনে যখন থামলাম, তখন কিসের যেন টান অনুভব করলাম ওর প্রতি। আমি জানিনা এটা কিসের টান। ও লাগেজটা নিয়ে নেমে পড়ল গাড়ি থেকে। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল:
--কষ্ট দিলাম তোমায়। এবার তুমি চলে যেতে পারো।
--ওকে, ভালো থেকো।" বলে আমি গাড়ি ঘুরালাম আমার বাড়ির রাস্তায়। ভিউ মিররে দেখলাম, ও একই জায়গায় দাঁড়িয়ে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার চলে যাওয়ার দিকে...... একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চুপচাপ গাড়ি চালাতে লাগলাম আমি......
(চলবে......)
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ