>>>>>>আমার বিয়ে<<<<<
.
__________পর্ব:-০১____________
বাইরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। এই বৃষ্টির সময় লেপ মুড়ি দিয়ে ঘুমালে অনেক ভালো ঘুম হবে। কিন্তু কিছুতেই বাসায় যেতে পারছিনা ভিজে ভিজে। হঠাৎ এভাবে বৃষ্টি আসবে জানলে আগে থেকেই ছাতা নিয়ে বের হতাম। প্রকৃতি আমার সাথে আজকাল প্রতিনিয়তই গুঁটিবাজি করে। আমি ছাতা নিয়ে বের হলে, বৃষ্টি থেমে যায়, মেঘমুক্ত আকাশে তখন কা কা করে উড়ে বেড়ায় কাক, কয়েকটা আবার মলত্যাগ করতেও ছাড়েনা। মনে হয় আমাকে দেখলেই ওদের পেটে চাপ ধরে। বজ্জাত কাক!
আবার যেদিন আমি ছাতা নিয়ে বের হবোনা, সেদিন ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি পড়বে। যেন আমাকে উপহাস করার জন্য। তাই ভাবছি এখন থেকে একটা ছাতা রাখব সবসময় আমার দাদুর মতো। ঝড় হোক বা না হোক, আমার দাদুর বগলে সবসময় একটা খানদানি ছাতা থাকে। আজীবন ধরে ঐ একটায় ছাতা দাদুর। মনে হয় তার পূর্বপুরুষের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া ছাতাটা। মানুষ তার নবজাতক শিশুকেও এভাবে যত্ন করেনা, দাদু যেভাবে তার ছাতাটাকে যত্ন করে। একদিন দাদুকে মজা করে জিজ্ঞেস করেছিলাম:
--দাদু, তোমার এই ছাতার বয়স অনুমানিক কয়শ বছর হবে?"
দাদু আর মনে করতে পারেনা।
.
আজ দাদুর ছাতাটা পেলে মন্দ হতোনা। কিন্তু দাদু নিজের ছাতাটা কাউকে ধরতে দেয়না। আমার আবার নিজের ছাতা নেই। ছাতা জিনিসটাই একটা প্যারা। কম বৃষটিতে আমি ছাতা নিয়ে বের হয়না। খুব বেশি বৃষ্টি হলে অন্যের ছাতা নিই। একবার একজনের ছাতা নিলে তো, আরেকবার আরেকজনের ছাতা নিয়ে বের হয়। ভুল করে একদিন দাদুর ছাতা নিয়ে বের হয়েছিলাম। তা নিয়ে কি কান্ড!
বাসায় যখন ফিরলাম ছাতা নিয়ে, সদর দরজায় আটকা পড়লাম আমি। দরজার সামনেই একটা চেয়ারে রুক্ষমূর্তিতে বসেছিল দাদু। আমাকে ফিরতে দেখেই দাদু প্রথমে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল ছাতার দিকে। তারপর কটমট দৃষ্টিতে তাকালো আমার দিকে। যেন আমাকে গিলে খাবে। দাদুর এই অবস্থা দেখেই আমি বুঝতে পারি মূল কারণটা কি? তাড়াতাড়ি ছাতাটা বন্ধ করে দাদুর কোলে তুলে দিলাম ছাতাটা। ছাতা থেকে তখন পানি ঝরছিল, দাদুর কাপড় ভিজে যায় তখন। দাদু চিল্লায় উঠল হঠাৎ:
--এই কি করছিস হারামজাদা...."
আমি তাড়াতাড়ি দাদুর কোল থেকে ভেজা ছাতাটা নিয়ে বললাম:
--দুঃখিত দাদু, দুঃখিত। বুঝতে পারিনি ছাতাটা ভেজা..."
--কি? তুই বৃষ্টিতে আমার ছাতা মাথার উপর দিয়ে আসছিস, আর জানিসনা ছাতা ভেজা?
--জানি দাদু, তোমার রুক্ষমূর্তি দেখে ভুলে গেছি..... দাঁড়াও, চুলোর পাশে গিয়ে এক্ষুণি শুকিয়ে আনছি ছাতাটা।"
দাদু আমার কাছ থেকে ছাতাটা কেড়ে নিয়ে বলল:
--তোকে কিছু করতে হবেনা।"
আমি কোনো উত্তর না দিয়ে নিরবে সটকে পড়লাম ওখান থেকে। মনে মনে বললাম, বাঁচা গেল। দাদু সেবার আমার উপর রাগ করে দু'বেলা ভাত খাইনি। তবে গভীর রাতে দাদু ক্ষুধার জালায় থাকতে না পেরে চুরি করে খাবার খেয়েছিল, সে কথা আমি এখনও কাউকে বলিনি।
এরপর থেকে দাদুর ছাতা আর নিইনা। বাড়ির কেউ ভয়ে ছুয়েও দেখেনা দাদুর ছাতা।
***
বৃষ্টি একটু একটু থামতেই হাটা দিলাম বাসার দিকে। জোরে পা চালিয়ে ১০ মিনিটেই পৌঁছলাম বাসায়। মাথাটা ভিজে গেলো। মাথার চুল থেকে পানি ঝেড়ে দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকতে যাব, তখন ধাক্কা খেলাম ঘটক চাচার সাথে। উনি আমাদের পারিবারিক ঘটক। নাম মকবুল। ঝড়, বৃষ্টি, তুফান, ভূমিকম্পে পৃথিবী উল্টে যেতে পারে, কিন্তু এই লোকটার ঘটকালি থামবেনা। নির্দিষ্ট টাইমে ঘটকালি চালিয়ে যাবেন। আমার বাবার বিয়েসহ, আমার সব চাচা, ফুফুদের ঘটকালি করেন এই মকবুল চাচা। এখন আবার কার বিয়ের ঘটকালি করতে এই ঝড়-বাদলের দিনে বাসায় হানা দিয়েছেন কে জানে। বাসায় তো কারো বিয়ের বয়স হয়নি। আমি তো নিতান্তই বাচ্চা ছেলে। নাক টিপলে দুধ বের হবে এখনও।
.
আমাকে দেখে ঘটক চাচা দাঁত বের করে হাসলেন। হাসার সময় উনার উপরের পাটির দাঁত থেকে আলগা দাঁতটা খুলে পড়ে গেল ফ্লোরে। দাঁতটা ছাড়া উনাকে হনুমানের কার্বন কপি বলে মনে হলো। উনি ফ্লোর থেকে দাঁতটা তুলতে তুলতে বললেন:
--মাশাল্লাহ! মাশাল্লাহ! এমন সুদর্শন ছেলেকে মেয়ে বিয়ে দেবেনা কে? যেমন লম্বা, তেমনি সুন্দর...."
একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম:
--চাচা, আপনি কার বিয়ের কথা বলছেন?"
ঘটকচাচা দাঁতটা ফুঁ দিয়ে ঝেড়ে জায়গামতো শক্ত করে লাগিয়ে দিলেন। তারপর আবার হে হে করে হেসে উঠে বললেন:
--কার আবার? তোমার বিয়ে...... তোমার বিয়ের খবর দিতেই তো এলাম। অনেক বড় খানদানি পরিবারের মেয়ে। আহা! দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। কাল সবাই দেখতে যাব পাত্রীকে। রেডি থেকো তুমি...."
বলতে বলতে ঘটক চাচা ছাতা খুলে বেরিয়ে গেলেন বাইরে। আমি হা করে তাকিয়ে তাকলাম সেদিকে। আমার বিয়ের জন্য ঘটকালি চলতেছে, অথচ আমি জানিনা? এ কেমন বিচার?
.
৩৮০ ডিগ্রী রাগ নিয়ে পেছনে ঘুরতে যাব, তখন বাবা মা আমার হাতে একটা মেয়ের ছবি তুলে দিয়ে বলল:
--মেয়েটা পছন্দ হয়ছে কিনা দেখ...."
ইচ্ছে ছিল বাবা-মার উপর ঘূর্ণিঝড় মোরার মতো হামলা করি, কিন্তু পরক্ষণে মেয়ের ছবি দেখে চুপসে গেলাম। ঘূর্ণিঝড় মোরার লঘুচাপটা নিম্নমুখী হতে লাগল বুকের ভেতর। বিয়ে যখন করতেই হবে, তখন এই মেয়েটা মন্দ কি?
--বাবা, আমরা কবে যাচ্ছি মেয়ে দেখতে?"
--কাল যাচ্ছি। তোর জন্য পাঞ্জাবি কেনা আছে, ওটা পরবি কাল।"
মা আমার কান টেনে ইয়ার্কি করে বলল:
--কি? আর তর সইছেনা বুঝি??"
--উফ মা, ছাড়ো তো। জোর করছ বলেই তো রাজি হলাম বিয়ে করতে।
--এই হতচ্ছাড়া ছেলে, তোকে কখন জোর করলাম? ছবি দেখার সাথে সাথেই তো রাজি হয়ে গেলি।"
--তোমরা মনে মনে জোর করছ আমাকে...." বলেই আর দাঁড়ালামনা আমি। ভেতরের রুমে চলে গেলাম। পেছন থেকে বাবা-মার অট্টহাসি শুনা গেলো।
***
পরদিন মেঘমুক্ত আকাশে রোদের হাতছানি দেখে মনে মনে ভাবলাম, শুভ কাজে যাচ্ছি বলেই আজ বৃষ্টির দেখা মিলছেনা। তবুও সাথে একটা ছাতা রাখতে হবে। কারণ প্রকৃতি যেভাবে আমার সাথে গুঁটিবাজি করে, তাতে আমার সাথে ছাতা থাকলে আর বৃষ্টি নামবেনা একদম।
.
দাদু তার খানদানি ছাতা নিয়ে রেডি হয়ে বসে আছে পাত্রী দেখতে যাওয়ার জন্য। এমনভাবে সেজেছে দাদু, যেন তার জন্যই পাত্রী দেখতে যাচ্ছি আমরা।
দাদুর হাতে ছাতা দেখে আমার বাবা বলল:
--বাবা, তুমি এই ছাতা নিয়ে পাত্রী দেখতে যাবে? আমাদের একটা মান সম্মানের ব্যাপার আছে। তাছাড়া এখন বৃষ্টি হচ্ছেনা যে, তোমাকে সাথে ছাতা নিয়ে যেতে হবে।"
বাবার কথা শুনে দাদুর সিদ্ধান্তে কোনো ফাটল ধরলনা। উনি যাবেন, এবং সাথে তার খানদানি ছাতাটাও নিয়ে যাবেন। হাজার জনে হাজার কথা বললেও উনার সিদ্ধান্ত অটুট থাকবে।
.
দাদু ছাতা নিছে তাই বাবা রেগে গেছে, এখন যদি আমিও ছাতা নিই তাহলে বাবা ফায়ার হয়ে যাবে। তাই বাধ্য হয়ে ছাতা নিলামনা। মনে মনে প্রার্থনা করলাম বৃষ্টি যেন না আসে।
.
নির্দিষ্ট টাইমে ঘটক চাচা আসল। এসেই তিনি দাঁত বের করে হাসলেন। আমাকে দেখে বললেন
--বাহ! যেন রাজপুত্র! এমন ছেলে দেখে তো ওরা আজকেই বিয়ে দিতে চাইবে।"
আমিও হেসে দিয়ে বললাম:
চাচা, আপনি আগে মাটি থেকে দাঁতটা তুলুন। আপনার দাঁত পড়ে গেছে মাটিতে।"
ঘটক চাচা একবার দাঁতের পাটিতে হাত দিয়ে বললেন:
--ওহ, খেয়াল করিনি দাঁতটা পড়ে গেছে।" তারপর আবার হেসে উঠে দাঁতটা তুলে নিয়ে জায়গা মতো লাগিয়ে দিলেন।
আমি বললাম:
--চাচা, বারবার যখন দাঁতটা পড়ে যাচ্ছে, এক কাজ করুন, আমার কাছে "সুপার গ্লু" আছে, ওটা দিয়ে দাঁতটা লাগিয়ে দিন।"
ঘটক চাচা হেসে উঠে বললেন:
--বাবাজি, তুমিও না ভালো মজা করতে পার। চল, গাড়িতে উঠো। দেরি হয়ে যাচ্ছে..."
.
সবাই গাড়িতে উঠলাম। ড্রাইভিং সিটে বসলাম আমি। তারপর স্টার্ট দিলাম গাড়ি ফিউচার শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে.......
Next.....part.....
>>>>>আমার বিয়ে<<<<<
.
__________পর্ব:-০২____________
ঘটক চাচা পথ দেখিয়ে আমাদের একটা বাড়িতে নিয়ে এলেন। তিনতলা বিশিষ্ট একটা বাড়ি। সম্ভবত নতুন বানায়ছে বাড়িটা। কে জানে বৈধ অর্থে নাকি অবৈধ অর্থে বানায়ছে বাড়িটা। বর্তমানে যে হারে অবৈধ অর্থে বাড়ি নির্মাণ হচ্ছে, তাতে মনের মধ্যে সন্দেহ আসাটা স্বাভাবিক।
.
যাইহোক, বাড়ি বৈধ হোক বা অবৈধ হোক, তাতে আমার কি? বিয়েটা বৈধভাবে হলেই হবে। কিন্তু যাকে বিয়ে করব, তাকে দেখার জন্য যে এতক্ষণ ওয়েট করতে হবে, আগে জানলে আসার সময় ফার্মেসি থেকে কোমর ব্যথার ওষুধ কিনে নিয়ে আসতাম।
অনেক্ষণ ধরে বসে থাকতে থাকতে কোমর ব্যথা হয়ে গেছে। তবুও পাত্রীকে দেখতে দিচ্ছেনা এরা। মনে মনে বিরক্ত হয়ে ঘটক চাচাকে একটা চিমটি দিলাম। ইশারায় বুঝিয়ে দিলাম, আমি এতোটা সংযমী না.....
ঘটক চাচা দাঁত বের করে হাসলেন। তারপর পাত্রীর বাবাকে বললেন:
--ইমতিয়াজ ভাই, এবার তাহলে আপনার মেয়েটাকে নিয়ে আসুন....."
পাত্রীর বাবা তখন ভেতরে কার উদ্দেশ্যে যেন হাক ছাড়ল:
--কই? আমার মামনিটাকে এবার নিয়ে আসো....."
.
পাত্রী আসতে আসতে তবুও আরো ১০ মিনিট লেগে গেল। সাজতে, মেক-আপ করতে এদের জন্য এক্সট্রা আরো ৩ ঘন্টা টাইম লাগে। মেয়েদের জন্য দিনে রাতে ২৭ ঘন্টা হলেই ভালো হতো!
.
পাত্রী আমার সামনে বসার পর থেকে আমি রীতিমতো ঘামতে শুরু করেছি। নিজেকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করতে লাগলাম। কাঁপা কাঁপা হাত দুটো বাড়িয়ে দিলাম পাত্রীর ঘোমটাটা আলগা করার জন্য। সাথে সাথে বাম পাশ থেকে দাদু আমাকে ছাতার গুঁতো মারল। আমি দাদুর দিকে তাকাতেই দাদু বলল:
--উহু.... আগে মুরব্বী দেখবে...., তারপর বাকিরা।" কথাটি বলেই দাদু ছাতাটা বগলে নিয়ে পাত্রীর ঘোমটা আলগা করল। দাদু সাথে সাথে বলে উঠল:
--মাশাল্লাহ, মাশাল্লাহ। নাম কি তোমার দাদুভাই?"
--সাবরিনা...." নিচের দিকে তাকিয়ে জবাব দিল পাত্রী।
--বাহ! চেহারার মতো নামটাও খুব সুন্দর। বয়স থাকলে আমিই বিয়ে করতাম।" বলেই দাদু জোরে হেসে উঠল। সাথেসাথে বাকিরাও হেসে উঠল। শালার বুড়ো, নাতির হবু বউ এর দিকে নজর দিস? দাঁড়া, দেখাচ্ছি মজা।
দাদুর বগল থেকে ধীরে ধীরে ছাতাটা টেনে নিলাম। তারপর সোফার পেছেনে রেখে দিলাম।
দাদু ঠেরও পাইনি তার ছাতা নিয়ে ফেলেছি। দাদু আবার আমার হবু বউকে জিজ্ঞেস করল:
--কি দাদুভাই, পছন্দ হয়নি আমাকে? বয়স থাকলে আমাকে বিয়ে করতেনা?"
সাবরিনা নিচের দিকে তাকিয়েই জবাব দিল:
--এখনও তো আপনার কচি বয়স, এখনও বিয়ে করতে রাজি আছি।"
ওর কথা শুনে দাদু আবার জোরে হেসে উঠল। শালার বুড়ো! রোমান্টিক হচ্ছিস। এদিকে আমি চটপট করতেছি একটু কথা বলার জন্য। আর থাকতে না পেরে বললাম:
--দাদু, তোমার ছাতা কোথায়?"
দাদুর হঠাৎ হুশ হলো। আরে তাইতো, ছাতা কোথায়? দাদুর কাছে পৃথিবী একদিকে, তার ছাতা আরেকদিকে। তাড়াতাড়ি উঠে চিৎকার করল:
--আমার ছাতা কোথায়?"
দাদুর কথায় কান না দিয়ে আমি সাবরিনাকে বললাম:
--একটু বাইরে যাবেন আমার সাথে?"
সাবরিনা তাকালো তার বাবার দিকে। উনি হেসে জবাব দিলেন:
--যাও, মা...."
সাবরিনাকে নিয়ে বের হবার সময় পেছনে ফিরে দাদুকে বললাম:
--দাদু, ছাতাটা সোফার নিছে। আমি নিজ হাতে যত্ন করে রাখছি। তুমি টেনশন নিওনা।"
আমার কথা শুনে সবাই হেসে উঠল। আমি সাবরিনাকে নিয়ে বের হয়ে আসলাম বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে। একটা গাছের নিচে এসে দাঁড়ালাম আমরা। মুখ নিচু করে ছিল সে। আমি তাকে কি বলব বুঝতেছিনা। আমতা আমতা করে বললম:
--এক্সকিউজ মি, একটু তাকাবেন আমার দিকে?"
সাবরিনা আমার দিকে তাকিয়ে বলল:
--জি বলেন..."
--ইয়ে...মানে...কি বলব? আপনার নাম কি?"
--কেন? দাদুকে বলেছি, শুনেননি?"
--না মানে আপনার পুরো নাম...."
--সাবরিনা ইমতিয়াজ.... "
--খুব সুন্দর নাম। আমার নাম রানা।"
--জানি আমি..."
--ওহ...তারপরও বললাম আর কি...
--হুমম..."
তারপর কিছুক্ষণ বিরতি। আসলে কি বলব মাথায় আসছিলনা।
কিছুক্ষণ পর বললাম:
--আপনি খুব সুন্দর।
--জানি...."
--আচ্ছা....ঠিক আছে।"
আবারও দু'জন চুপচাপ থাকলাম। এবার সাবরিনা বলল:
--বৃষ্টি আসতে পারে, চলুন...."
আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, আকাশ মেঘলা হয়ে আছে। অথচ আমরা পাত্রী দেখতে আসার সময় আকাশে মেঘের চিহ্নটুকু ছিলনা। বুঝলাম, প্রকৃতি গুঁটিবাজি করতেছে। মন খারাপ করে বললাম:
--চলুন....."
মাঝপথেই বৃষ্টি নামল। আমরা দু'জন দৌঁড় দিলাম বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে। হঠাৎ আমার মাথায় আসল, সাবরিনার মুখটা একটু দেখতে হবে। কারণ অনেকেই মেক-আপ নিয়ে সুন্দরী হয়। আমার কপালেও যদি সেরকম একটা জোটে, তাহলে বাকিটা জীবন বন্ধুদের টিটকারি শুনতে হবে। এগুলো আমি শুনতে পারবনা।
--সাবরিনা, একটু দাঁড়ান....." থমকে দাড়িয়ে বললাম আমি।
আমার ডাক শুনে সেও দাঁড়িয়ে পড়ল। আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল:
--কি বলেন?"
আমি তার মুখের দিকে তাকালাম। বৃষ্টির জলে তার মেক-আপ ধুয়ে গেছ। বেরিয়ে আসল তার আসল রূপ। মেক-আপ ছাড়া মেয়েটাকে আরো বেশি সুন্দর লাগে। তারমানে বন্ধুরা আর বলতে পারবেনা, তোর বউ একটা মেক-আপ সুন্দরী।"
--না, কিছুনা.... এমনিই দাঁড়াতে বললাম। চলুন....." বলেই আবার দৌড়াতে শুরু করলাম দু'জন।
.
বাসায় আসতে আসতে পুরো ভিজে গেলাম। সাবরিনা ভেতর থেকে একটা তোয়ালে এনে দিল আমাকে। আমি মাথাটা মুছে ভেজা কাপড়ে বসলাম ঘটক চাচার পাশে। আমার হবু শ্বশুর আমার অবস্থা দেখে বললেন:
--একেবারেই তো ভিজে গেছ, দাঁড়াও আমি তোমার জন্য জামার ব্যবস্থা করছি।" বলেই উনি ভেতরে চলে গেলেন।
একটুপর ফিরে এলেন উনার একটা লুঙ্গী আর গেঞ্জি নিয়ে। আড়ালে গিয়ে আমি ওগুলো পরলাম, আর নিজের ভেজা কাপড়গুলো শুকাতে দিলাম।
.
কাপড় চেঞ্জ করে এসে আবার বসলাম ঘটক চাচার পাশে। বসতে বসতে বললাম:
--দাদুর ছাতাটা সাথে নিয়ে গেলে আজ ভিজতে হতোনা।"
আমার কথা শুনে দাদু ছাতাটাকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিল। রেগেমেগে তাকাল আমার দিকে। এমনিতেই দাদু ভালো, কিন্তু ছাতা নিয়ে কেউ কিছু বললে তার মেজাজ বিগড়ে যায়।
দাদুকে এভাবে তাকাতে দেখে বললাম:
এভাবে তাকিয়ে আছ কেন? তোমার ঐ তালি দেওয়া ছাতা নিয়ে তো বের হয়নি।"
দাদু বলল:
--ওরে, ছাতাকে সম্মান দিয়ে কথা বল.... এই ছাতা বয়সে তোর চাইতে অনেক বড়।"
দাদুর কথা শুনে সবাই একসাথে হেসে উঠলাম আমরা।
.
লাঞ্চের সময় আমাদের ডাক পড়ল খাবার টেবিলে। অনেক কিছু আয়োজন করেছে এরা আমাদের জন্য। দাদুকে বসালাম আমার পাশে। নিজ হাতে তুলে দিলাম খাবার দাদুর প্লেটে। তার কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বললাম:
--দাদু, আমার শ্বশুর বাড়িতে যতখুশি খাও। বিনিময়ে একদিন তোমার ছাতাটা...."
কথাটা শেষ করতে পারলামনা। দাদু কিছুক্ষণ রাগ নিয়ে তাকিয়ে থাকল আমার দিকে।
আমি আবার বললাম:
--না, না, ঠিক আছে। ছাতা লাগবেনা। আমার শ্বশুর বাড়ির খাবার সবার জন্য উন্মুক্ত।
.
তারপর সবাই খেতে শুরু করলাম। ঘটক চাচাকে দেখলাম গ্রাসের পর গ্রাস খাবার তুলতে মুখে। অথচ খেতে বসার আগে, এতো আয়োজন দেখে তিনি আমার শ্বশুরকে বলেছিলেন:
--এতোকিছুর কি দরকার ছিল, আমরা তো খেতে আসিনি।"
তার মহানবাক্যটাকে মিথ্যে করে দিয়ে তিনি একটানা তিনপ্লেট খাবার সাবাড় করে উঠলেন। খেয়েদেয়ে দেখলেন, উনার সামনের দাঁতটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা।
আমি বললাম:
--চাচা, খাবারের সাথে মনে হয় দাঁতটাও খেয়ে ফেলেছেন........
Next...part....
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ